#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:১০
#তামান্না_শাহরিন_শশী
কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।
অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
রাত পর্যন্ত বাসার অবস্থা থমথমেই ছিলো। আর উচ্ছ্বাস সন্ধ্যার পরেই বাহিরে গিয়েছিলো। রোদসী বিছানায় সুয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে ছিলো। দরজায় নক হতেই সে উঠে দরজা খুললে মিসেস বিপাশা বেগমকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে। রোদসী একটু আশ্চর্য হয় তাকে এই রুমের সামনে দেখে। মিসেস বিপাশা বেগম সাধারণত রোদসীর সাথে কথা বলে না এতো তবে হঠাৎ এই ঘরে আসায় রোদসী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“আপনি? হঠাৎ এখানে! কিছু বলবেন?”
“হ্যাঁ। অনেক কিছু তো বলতেই চাই। শুনবে তো? আচ্ছা সরো আগে আমাকে ঘরে আসতে দেও। সরো।”
বলেই রোদসীর পাশ দিয়ে রুমে ঢুকে বিছানায় যেয়ে বসে। তারপর সারা রুমে চোখ ঘুরিয়ে এনে আবারও রোদসীর দিকে চোখ নিবদ্ধ করে। রোদসী মিসেস বিপাশা বেগমের কর্মকাণ্ড দেখছিলো। মিসেস বিপাশা বেগম বলতে শুরু করলেন,
“বুঝলে রোদসী। এতোদিন পর কাজের কাজ করলে তুমি একটা।”
“মানে?” রোদসী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে!
“এই যে প্রতিবাদ করলে। তা যাইহোক বলো তো আমারা পা গ ল কে পা গ ল বললে তো পাগল ক্ষেপে যায়। আর পাগল কি স্বীকার করে সে পাগল? তাই নয় কি?”
“হ্যাঁ। সে তো রাগ করবেই।”
“একদম ঠিক। তুমি ঠিক ধরতে পেরেছো।”
“মানে?”
“আজকে উচ্ছ্বাসের আচারন দেখেছো? বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছে। দেখেছো তোমার সাথে সে কি ব্যবহারটা করেছে? তাই আমি বলি কি পালিয়ে যাও। আমি সত্যি বলছি। ওর দাদি চাচীরা এ কথা তোমার থেকে লুকিয়েছে যে ও পা গ ল। ওর মা ন ষি ক সমস্যা আছে। তবে আমি তোমার সাথে অন্যায় করতে পারলাম না বাবা। তাই সত্যিটা তোমাকে জানালাম। এখন তুমি কি করবে তোমার ব্যাপার। নিজের বুঝ পা গ লে ও বোঝে। তাই বলছি কথা শোনো। আর যদি বলো আমি জানলাম কই থেকে তাহলে বলি ওর যখন ছোটো তখন আমি রাশেদকে বিয়ে করি। আর তার আগে থেকে ওকে চিনি। তাই ওর সব কিছুই আমি জানি। অজানা কোনো কিছুই নেই। এখন তুমি বোঝো কি করবে। তোমার প্রতি মায়া লেগেছে তাই উপকার করলাম দেখো কি করবে। আর হ্যাঁ আমি যে এগুলো বলছি কাউকে বলো না আবার।
রোদসী এতক্ষণ বিপাশা বেগমের কথা শুনছিলো। তার কথা শেষ হতেই রোদসী জিজ্ঞেস করলো “সে কি করবে?” বিপাশা বেগম জানায়, “পালিয়ে যাও। যেখানে উচ্ছ্বাস খুজে পাবে না।”
“আমি যেখানেই যাই না কেনো ও আমাকে আকাশ- পাতাল ভেদ করে হলেও খুজে বের করবে। কোথায় যাবো আমি?”
“আরে আমি আছি কি করতে? সত্যি জানালাম। সাহায্য করবো না? এত অকৃতজ্ঞ হওয়া উচিত না। তাই আমিও পারলাম না। দেখি আমি একটা ব্যবস্থা করি। আর উচ্ছ্বাস কোথায়?”
রোদসী এক কথায় জবাব দেয় “জানিনা”।
——-
এদিকে রুহির আর উদয়ের মধ্যে চলছে মিষ্টি আলাপ।
রুহি কখনো কল্পনাও করেনি উদয় তার জন্য তার বাসায় সামনে আসবে। আচ্ছা উদয়ের সাথে ঝগরা করলে কেমন হয়। এখনও কি উদয় তাকে এই মেয়ে, ঝগড়ুটে আখ্যায়িত করবে। এসব ভেবে হাসলো রুহি। তারপর কানে ফোন ধরে বললো,
“অস্ত।”
“উমমম। উদয়।”
“না আপনি অস্ত।”
উদয় কিছুক্ষণ চুপ রইলো। সে রুহির শ য় তা নি ধরতে পেরেছে। রুহি যে ঝগরা করতে চাচ্ছে তা বুঝে বললো,
“এই মেয়ে।”
ওমনি রুহির মুখ কালো হয়ে গেলো। রুহি কপট রাগ নিয়ে বলে,
“এই যে মিস্টার উদয় না অস্ত। আমার নাম রুহি। ওকে?”
“ওকে!”
এটা বলেই উদয় উচ্চশব্দে হেসে উঠলো। আর রুহি তা শুনে মুচকি হাসলো।
———
আমি যদি পালিয়ে যাই যাবো কোথায়? কার কাছে যাবো? যদি উচ্ছ্বাসের কাছে আবারও ধরা পড়ি? তাহলে সেই শাস্তি হবে চরম কঠিন। এমনিতেই উচ্ছ্বাস তাকে সন্দেহ করে যে রোদসী তাকে রেখে পালিয়ে যাবে। তার মাথা কাজ করছে না সে কি করবে না করবে। এসব ভাবনার মাঝেই একটা শক্তপোক্ত পুরুষালী হাত রোদসীকে পিছন দিক থেকে জরিয়ে ধরলো রোদসী চমকে উঠলো। তা দেখে উচ্ছ্বাস হেসে রোদসীর কাধে মাথা রেখে ঠান্ডা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“এত গভীর মনোযোগ দিয়ে কি ভাবছিলে পাখি?”
রোদসী একটু থতমত খেয়ে বলে,
“কই কিছু না তো!”
“আসলোই কিছু না তো?”
“হু”
উচ্ছ্বাস কিছুক্ষণ চুপ রইলো আর রোদসী মিসেস বিপাশা বেগমের কথা ভাবতে লাগলো। এরি মধ্যে উচ্ছ্বাস তাকে কোলে তুলে নিলো। রোদসী হকচকিয়ে উচ্ছ্বাসের শার্ট খামচে ধরে। তা দেখে উচ্ছ্বাস হেসে বলে,
“তুমি কি যেনো ভাবছিলে তাই তুমি ভয় পেলে। বলো তো কি ভাবছিলে।”
এই বলেই রোদসীকে বিছানায় নামিয়ে নিজের শার্টের বোতাম খুলতে উদ্যত হয়। রোদসী কিছু না বলে উচ্ছ্বাস দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আর তা দেখে উচ্ছ্বাস হাসে। রোদসী কিছু বলতেই যাবে তখনই উচ্ছ্বাস রোদসীর উষ্ঠ নিজের আয়ত্বে করে নেয়। রোদসীকে যখন ছাড়ে তখন রোদসী হাপিয়ে উঠে বড় বড় শ্বাস নিয়ে আবারও মুখ খুলতে যাবে তখন আবারও উচ্ছ্বাস রোদসীর ঠোঁট আকরে ধরে। তার হাত বিচরণ করে রোদসীর পুরো শরীরে। ধীরে ধীরে উচ্ছ্বাসের ঠোঁট নিচে নামে। রোদসীর মনে হয় সে পাগল হয়ে যাচ্ছে। এই উচ্ছ্বাসকে সে চেনে না। কেমন অদ্ভুত ভাবে আজকে পাগলামি করছে। রোদসীর চোখের কার্নিশ থেকে চোখের জল গরিয়ে পড়ে।
——
রোদসী সুয়ে আছে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আর উচ্ছ্বাস রোদসীর বুকের ওপর মাথা রেখে গভীর ঘুমে তলিয়ে। আহা কি শান্তির ঘুম। রোদসী সিলিং থেকে চোখ নামিয়ে উচ্ছ্বাসের দিকে তাকালো তারপর চোখ সরিয়ে আয়নায় তাকালো। আচ্ছা তারা কি আর পাঁচটা সুন্দর সম্পর্কের মতো হতে পারে না? আচ্ছা উচ্ছ্বাস কি আসলেই অসুস্থ? তাহলে ওকে ডাক্তার দেখাবো নাকি নাকি সে নিজেই পালিয়ে যাবে? ও কি আদোও সুস্থ হবে? নাকি সব সময় এমন পা গ লা মি ই করে বেড়াবে। এসব ভাবতে ভাবতেই চোখ বন্ধ করলো। কখন যে ঘুমিয়ে গেলো টেরই পেলো না।
——
“তোমাকে আমি যে ঠিকানা
দেব সেই ঠিকানায় চলে যাবে।”
“কিন্তু যা বুঝলাম মাহাদী অসুস্থ আর আমি পালিয়ে যাবার পর যদি ও আমাকে পেলে ভয়ংকর কিছু ঘটিয়ে ফেলবে।”
মিসেস বিপাশা বেগম বিরক্তবোধ করেন। সে নাকমুখ কুচকে বলে,
“শোনো মেয়ে তোমাকে সাহায্য করেছি কারণ তোমাকে আমার দেখতে মায়া লাগে। আমি নিজের হাতে তোমার জীবন নষ্ট করতে পারি না। তাই সত্যি বলেছি। তারওপরে কোথায় যাবে থাকবে সেই ব্যবস্থাও করে দিয়েছি তারপরও যদি তোমার মনে হয় উচ্ছ্বাসের সাথে থেকে নিজেও পাগল হবে। তাহলে আমি আর কি করতে পারি?”
রোদসী কিছু না বলে নিজের রুমে চলে আসলো।
——–
আজকে সারাটাদিন রোদসী ভাবতে ভাবতে চলে গেলো তাই রোদসীর মনে সময় কত দ্রুত চলে গেলো খেয়ালই হলো না। রাতে মিসেস বিপাশা বেগমের রুমে সামনে দাড়িয়ে ছিলো রোদসী তার মধ্যে দোটানা কাজ করছে। তার কি পালানো উচিত নাকি থাকবে। যদি পালায়ও তাহলে যদি উচ্ছ্বাস তাকে পায় তাহলে ভয়ংকর কিছু করে বসবে। কি শাস্তি দিবে সে ভেবেও পাচ্ছে না। এই ভেবে সে ঘুরে রুমে যাবার জন্য পা বাড়ায় ঠিক তখনই বিপাশা বেগম দরজা খুললেন। রোদসী পিছনে ফিরে তাকায়। মিসেস বিপাশা বেগম এখানে রোদসীকে দেখে অবাক হয়। সে ভেবেছিলো তার দেয়া বুদ্ধি কাজ হবে না। তবে রাতের মধ্যেই যে রোদসী হাজির হবে তা ছিলো তার অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে। সে রোদসীকে দেখে হাসলো। তারপর বলল সে বাহিরে কেনো ঘরে এসে বসতে। রোদসী আশেপাশে তাকিয়ে ঘরে যেয়ে বসে। তারপর সে একটু চুপ থেকে মুখ খোলে।
“আপনি যা বলেছেলন তা সারাদিন ভাবলাম। আসলেই মাহাদীর চিকিৎসার প্রয়োজন তবে আমি আর এভাবে নিতে পারছিলা। দিনে দিনে ওর পাগলামি বেড়েই চলেছে। আর চলবেও তাই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
বিপাশা বেগম রোদসীর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো। রোদসীর হাব ভাবে বোঝা যাচ্ছে সে সিরিয়াস। যদি সে না যায় তাহলে বিপাশা বেগমের প্লান কাজ করবে না। সে মুখ কালো করে তখনও রোদসীর মুখের দিকে তাকিয়ে তার হাবভাব বোঝার চেষ্টা করছিলো। কিছু বুঝতে না পেরে বিপাশা বেগম জিজ্ঞেস করে,
“কি সিদ্ধান্ত?”
“পালাবো।”
বিপাশা বেগম চমকে উঠলো। সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
“কি বললে?”
“পালাবো।”
“তুমি কি আসলেই পালাবে? মানে তোমাকে দেখে আমি ভেবেছি তুমি থেকে যাবে তাহলে? বুঝে শুনে বলছো তো?”
“হ্যা। আমি সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিয়েছি। কিন্তু আমার তো যাওয়ার কোনো জায়গা নেই তাই আপনি বললেন জায়গা ম্যানেজ করেছেন। সেই ঠিকানাটা দিন। আর আমাকে কিছু টাকা দিন। আমি আজকে রাতেই বের হবো। আপনি রাতে আমাকে সদর দরজা খুলে দিবেন। এইটুকুই সাহায্য আপাতত করেন আমায়। আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।”
মিসেস বিপাশা বেগম মনে মনে হাসলো। তাহলে পাখি ফাঁদে পা দিয়েছে। এবার শুধু রাশি ধরে টান দেয়ার পালা। এবার যা করবে বা হবে সব মিসেস বিপাশা বেগমের হাতে। এই বলেই সে রহস্য হাসলো।
“আচ্ছা তা নাহয় করবো। যদি উচ্ছ্বাস বুঝে যায়?”
“না ও বুঝবে না। যা করার আজকেই করতে হবে। আপনি সব রেডি রাখুন। আমি রুমে যাই। মাহাদী রুমে এসে আমাকে না পেলে আবারো তামাশা করবে।”
এই বলেই রোদসী রুমের দিকে যেয়ে উদ্যত হয়।
রুমে এসে দেখে রুমে কেউ নেই, ওয়াসরুম থেকে পানির আওয়াজ আসছে। রোদসী একটু স্বস্তি পেলো। এখন প্লান অনুযায়ী কাজ করতে হবে। প্রথমে এক গ্লাস পানি নিয়ে তাতে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে বেডের পাশেই রাখলো। নতুন একটা শিফন জর্জেটের লালশাড়ি পড়লো। যখন আয়নার সামনে দাড়িয়ে রোদসী চুলে চিরুনি চালাচ্ছিলো তখন ওয়াসরুমের দরজা খোলার আওয়াজ হয় তবুও রোদসী ফিরে তাকায় না। ওয়াসরুম থেকে বের হয়েই উচ্ছ্বাসের নজর যায় আয়নার সামনে দাড়ানো রমনীর উপর। সে কিছুক্ষন মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে। সে ওভাবেই এগিয়ে এসে রোদসীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। ঠান্ডা হাতে ছোঁয়া পেয়ে রোদসী একটু কেপে ওঠে উচ্ছ্বাস তা দেখে হেসে আরো গভীর হয়ে সে রোদসীর ঘাড়ে মুখ ডোবায়।
চলবে……..
#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:১১
#তামান্না_শাহরিন_শশী
কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।
অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ঠান্ডা হাতে ছোঁয়া পেয়ে রোদসী একটু কেঁপে ওঠে উচ্ছ্বাস তা দেখে হেসে আরো গভীর হয়ে রোদসীর ঘাড়ে মুখ ডোবায়। নিরবতা শেষে উচ্ছ্বাস ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,
“জানো আজকে তোমাকে কত সুন্দর লাগছে? মনে হচ্ছে চোখ ফেরাতে পারছি না। চোখ সরালেই তুমি উধাও হয়ে যাবে।”
রোদসীর ভিতর এই কথা শুনে নড়বড়ে হতে লাগলো। আয়নায় নিজের চোখের দিকে তাকায় রোদসী তারপর নিজের কাছে প্রশ্ন করে। আসলেই পালানো টা কি উচিত হবে? উচ্ছ্বাস এবার ঘাড় থেকে মুখ উঠিয়ে আয়নায় তাকালো রোদসীর দিকে তবে রোদসীর এমন আনমনা ভাব উচ্ছ্বাসের ভালো লাগলো না। তাই রোদসীকে ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে রোদসীর মুখ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো। কিছুক্ষন চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি কি কোনো কারনে ডিস্টার্ব?”
রোদসী কোনো জাবাব না দিয়ে উচ্ছ্বাসকে অবাক করে দিয়ে উচ্ছ্বাসকে জড়িয়ে ধরে। এতো অবাক উচ্ছ্বাস আগে কখনো হয় নি। রোদসী সাধারণত এমন কাছে কখনোই আসে না। হাতে গোনা দুই কি একবার এসেছে। তাহলে রোদসীর কি মন খারাপ? এদিকে রোদসীর মনে চলছে দ্বিধাদ্বন্দ্বের পাহাড়। সে ঠিক কি সিদ্ধান্ত নিবে সে এখনো ঠিক করতে পারে নি। মস্তিষ্ক বলে চলে যা, মন বলে থেকে যা। ও তোকে অনেক ভালোবাসে। রোদসী কি করবে বুঝতে না পেরে কান্না করে দেয়। ওর হঠাৎ এমন কান্না করায় উচ্ছ্বাস হকচকিয়ে উঠে রোদসীর মুখ ধরে নিজের সামনে এনে জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে তোমার? কেউ কিছু বলেছে? আমি কি কোনো ভুল করেছি? কি হয়েছে আমাকে বলো?”
রোদসী কোনো জবাব না দিয়ে আবারও উচ্ছ্বাস কে জড়িয়ে ধরে। যেমন উচ্ছ্বাসের শরীরের মধ্যে এই নরম শরীরটা মিশে যেতে চাচ্ছে। এতো উচ্ছ্বাসের ভালোও লাগলেও আবার চিন্তিত হয়। উচ্ছ্বাস ওভাবে জড়িয়ে ধরে চুপ থেকে রোদসীর মাথায় হাত বুলাতে থাকে। কিছুক্ষন পর কান্না কমে আসলে উচ্ছ্বাস রোদসীকে ডাক দেয়,
“রোদসী।”
সাধারণ উচ্ছ্বাস রোদসীকে এমন করে ডাকে না তবে হঠাৎ এমন ডাকায় আবারো রোদসীর ভয় হয়। উচ্ছ্বাস সব বুঝে যায় নি তো? তবুও নিজেকে সামলে “হু” বলে।
উচ্ছ্বাস কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
“আমার একটা ছোটো রোদসী চাই।”
রোদসী ভরকায় উচ্ছ্বাস হঠাৎ চাওয়া এমন আবদারে। রোদসী কিছু বলার আগেই উচ্ছ্বাস রোদসীকে কোলে তুলে নেয়।
———
আজকে আবিদ উচ্ছ্বাসদের বাসায় এসেছে কিছু কাজে। রাত হয়ে যাওয়ার তাকে আর ফিরতে দেয়া হয় নি। রাতে বারান্দায় আবিদ বৃষ্টিকে পিছনদিক থেকে জড়িয়ে দাড়িয়ে ছিলো। হঠাৎ বৃষ্টি আবিদকে ডেকে ওঠে,
“আবিদ?”
“বলো।”
“আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে কি যেন একটা খারাপ ঘটবে।”
“সেটা কেনো মনে হচ্ছে?”
“জানিনা। তবে মন কেমন জানি করছে।”
“তেমন কিছু না। তুমি এখনো আমরা প্রেম করছি টাইপ ফিল পাচ্ছো তাই ভয় পাচ্ছো।”
এটা বলেই আবিদ হেসে উঠলো। তবে বৃষ্টি মনে স্বস্তি পেলো না। তার মন বলছে কিছু একটা খারাপ হবে। কি সেই খারাপ? কি বিপদ আসতে চলেছে?
——–
মাঝরাতে রোদসী উঠে রেডি হয়। বেডর পাশে চোখ যেতেই দেখে গ্লাসটা এখনো ওভাবেই রয়েছে। রোদসী ওই পানি দিতে ভুলে গেছে। সে ব্যাগ নামালো অবশ্য ব্যাগ আগেই প্যাক করা ছিলো। সে রুম থেকে বের হবার আগে পুরো রুমটায় একবার চোখ বোলায়। ফিরে এসে উচ্ছ্বাসের কপালে একটা চুমু খেয়ে আবারো চুপিচুপি ঘর থেকে বের হয় যায়। রুম থেকে বের হয়ে দেখে সব লাইট অফ করা। তা দেখে রোদসী স্বস্তি পায়। সে দ্রুত সিড়ি দিয়ে নিচে নামে। ড্রইংরুমে মিসেস বিপাশা বেগম ঝিম মেরে বসে আছে। তাকে দেখে রোদসী তার সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। বিপাশা বেগম রোদসীর অপেক্ষাই করছিলো। তাই ওকে দেখে চোখ তুলে তাকায়। তারপর দাঁড়িয়ে আশে পাশে তাকিয়ে দেখে বলে,
“এতো দেড়ি করলে কেনো? কখন থেকে বসে আছি। শোনো,”
এই বলেই তার নজরে যায় রোদসীর চুলের দিকে যার থেকে এখনল টুপটুপ করে পানি পড়ছে।
“বুঝেছি দেড়ি কারণ কি। সে যাইহোক শোনো, এই কাগজে ঠিকানা লিখা আছে এটা আমার দূর সম্পর্কের ভাইয়ের বাড়ি। আমি বলে দিয়েছি তুমি যাবে। আর এই খামে কিছু টাকা আছে কাজে লাগবে তোমার রেখে দেও।
এই বলেই সে কাগজ আর খাম বাড়িয়ে দিলো। তারপর আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে দেখে বলে,
“উচ্ছ্বাস টের পাইনি তো? আর একটা কথা সিম টা ভেঙে ফেলো। নতুন সিম নিও। এখান তারাতারি বেড়িয়ে পড়ো একটু পড়ই ভোরের আলো ফুটবে।”
রোদসী একটু লজ্জাবোধ করলো তবুও নিজেকে সামলে “হু” বলে বের হয়। তারপর দরজার কাছে যেয়ে বলে,
“আপনার দরজা লাগাতে হবে না। আমাকে বাড়িতে না পেয়ে, আবার দরজা লাগানো দেখলে সবাই সন্দেহ করবে যে বাসারই কেউ-ই আমাকে পালাতে সাহায্য করছে। আমি এইসব ঝামেলা চাই না।”
বিপাশা বেগম কাষ্ঠ হাসলো তারপর বললো,
“ঠিক বলেছো। আমার এ ব্যপারটা একদম মাথা থেকে চলেই গেছিলো। ভাগ্যিস তুমি মনে করিয়ে দিলে না হলে কি একটা ভয়ংকর কান্ড হতো। যাক ভালোয় ভালোয় যাও তো।”
রোদসী কিছু না বলে বের হয়ে যায়। আর বিপাশা বেগম দরজায় দাড়িয়ে শয়তানি হাসি দেয়, আর মনে মনে বলে,
“এইবার শুধু যেভাবে প্লান করেছি সেভাবেই চাল দেবো। খালি রানীকে পুরোপুরি হাতে পেয়ে নেই। আহা! এই ভাগ্য নিজে হেটে আমাকে ধরা দিলো বুশ্বাসই হচ্ছে না।”
এসব বলেই হেসে আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে নিজের রুমের দিকে রাওনা হলো। রোদসী রাস্তায় এসে নামতেই ফজরের আযান শুরু হয়। এখান থেকে স্টেশন পর্যন্ত যেতে হবে রোদসীর তাই সে যতদ্রুত সম্ভব শাড়ি ধরে লাগেজ নিয়ে এগুচ্ছে। বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করছে যদি ধরা পরে যায়?
——–
হঠাৎ বিছানার পাশে হাত পড়তেই উচ্ছ্বাস হাত বুলায়। হাতি রেখে দেখে পাশে কেউ নেই। মস্তিষ্ক সচল হতে কেয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। আসল ঘটনা বুঝতে পেরেই উচ্ছ্বাস উঠে বসে আশে পাশে তাকায়। রুমের দরজা হাট করে খোলা। আর বারান্দায় তাকিয়ে দেখে সবে ভোরের আলো ফুটেছে। উচ্ছ্বাস হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকে তারপর দ্রুত উঠে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে রুম থেকে বের হয়ে দেখে সব রুম এখনো অন্ধকার। সে দ্রুত নিচে নেমে দেখে বাড়ির সদর দরজাও খোলা। ঘটনা কি ঘটেছে তা বুঝতে সময় লাগলো না উচ্ছ্বাসের। মনে হলো মাথায় ধপ করে আগুন ধরে গেলো। সে রুমে যেয়ে সর্বপ্রথম রোদসীর নাম্বারে কল দেয়। নাম্বার অফ বলে। এতে আরো রাগ বাড়তে থাকে। তবুও রাগটা নিয়ন্ত্রণ করে রেদোয়ানকে কল দিয়ে। ভোর বেলায় উচ্ছ্বাসের কল পেয়ে হরবরিয়ে উঠে বসে রেদোয়ান। উচ্ছ্বাস শুধু বলে যদি রোদসী তাদের বাসায় যায় তাহলে যেন উচ্ছ্বাস কে ইনফর্ম করে। রেদোয়ানের এই ব্যাপার কিছুই মাথায় ঢোকে না তবুও সে আচ্ছা বলে কল রেখে ভাবনায় পড়ে যায় রোদসী গেলো কোথায়? তাও এতে সকালে!!
——–
উচ্ছ্বাস বাসার সবাইকে ডাকাডাকি করলে সবাই জানায় কেউ এ ব্যপারে কিছু জানেনা। মিসেস বিপাশা এককোনায় চুপটি করে দাড়িয়ে আছে। সে ভাবেনি এতো তারাতারি উচ্ছ্বাসের ঘুম ভাঙবে। ছেলেটাও হয়েছে বাপের মতো বাপ সারাদিন ঊর্মিলা ঊর্মিলা করতো। এখন ছেলেটা রোদসী রোদসী করে। বিপাশা বেগমের চিন্তা হচ্ছে যদি রোদসী বেশি দূর যেতে না পারে। আর উচ্ছ্বাস ওকে ধরে ফেলে। মেজাজ খারাপ হচ্ছে বিপাশা বেগমের তবুও সে কিছুই জানেনা ভাব নিয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। আবিদ সামনে এসে বললো,
“স্যার, না ভাইয়া। আমাদের উচিত ভাবীকে খোজঁ করার এখনই খোঁজ করলে হয়তো পেতেও পারি। এমনও হতে পারে ভাবী বেশি দূর এখনো যেতে পারেনি।”
উচ্ছ্বাস আবিদের মুখের দিকে তাকায়। উচ্ছ্বাস চোখ লাল হয়ে আছে তা দেখে আবিদ চুপ হয়ে যায়। এদিক মিসেস বিপাশা বেগম বিরক্ত হয়। আবিদকে কে বলছে উচ্ছ্বাস কে এসব বলার যত্তসব। এসব ভেবেই নাক-মুখ কুচকে।
——-
রোদসী মাত্র স্টেশনে এসে নামলো। রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো যার জন্য এতো দেড়ি হলো। স্টেশনে যেয়ে জানতে পারলো পরবর্তী বাস আবার ১২ টায়। এটা শুনে রোদসী মনে মনে ভয় পেলো যদি উচ্ছ্বাস এসে যায়। এতো রিস্ক নিয়ে এতো দূর এসে এখন যদি ধরা পড়ে তাহলে কি হবে তা ভেবেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো। এতোক্ষণে নিশ্চিয়ই রোদসী পালিয়েছে সবাই যেনে গেছে। রোদসী শান্ত করার জন্য চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা নিঃশ্বাস টানলো তারপর আশে পাশে তাকিয়ে একটা দোকানে গেলো সেখান থেকে একটা ঠান্ডা পানির বোতল আর কিছু খাবার নিলো। সাথে একটা সিম কিনলো। সিম একটিভেট করে মিসেস বিপাশা বেগম কে মেসেজ করে দিলো। তারপর স্টেশনের বেঞ্চিতে যেয়ে বসলো। আশেপাশে তাকালো রোদসী, এভাবে একা কখনো কোথাও যাওয়া হয় নি তাই ভয়ভয় করছে। সাথে উচ্ছ্বাসের ভয় তো আছেই। রোদসী একটু ভাবলো রুহিকে কল দিবে পরে আবার ভাবলো যদি উচ্ছ্বাস যেনে যায় এটা ভেবে আবারও চুপ করে বসে গাড়ির অপেক্ষা করতে থাকলো।
——
রুহির নাম্বারে একটা আননোন নাম্বার থেকে দুটো কল এসেছে। এতো চিন্তার মাঝে আননোন কল রিসিভ করার আগ্রহ পেলো না। তৃতীয়বার কল আসতেই কি মনে করে কলটা সে রিসিভ করলো।
“আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?”
…….
“আরে কে? কথা বলছেন না কেনো?”
……
“ভাই আপনার আজাইরা সময় থাকতে পারে। তবে আমার নেই। এক চিন্তায় বাঁচি না। এখন কল দিয়ে চুপ করে বসে আছে। কল রাখেন তে আর কল দিবেন না।”
এই বলেই কল কাটতে নিবে তখনই ওপাশ থেকে একটা মেয়ের রিনরিনে কথার আওয়াজ ভেসে আসলো,
“রুহি!”
“আপু।”
রুহি ভীষণ আবাক হয়। তারপরও কথা বলে,
“আপু কই তুই? তোকে বাসার সবাই খুঁজছে। তোকে না পেয়ে উচ্ছ্বাস ভাইয়ের অবস্থা পাগল প্রায়। কই তুই?”
“থাম, বলছি। আমি পালাচ্ছি। আমি এখন সায়েদাবাদ ১২ টায় বাস।”
রুহি ঘড়ির দিকে তাকালো এখনো ১ঘন্টা বাকি। তারপর জিজ্ঞেস করলো,
“তোর সাথে কে? আর কই যাবি।”
“আমি একাই সাথে কেউ নেই। চট্টগ্রাম যাচ্ছি।”
“মানে? ওখানে কেনো? আর কার কাছে যাচ্ছিস? আর পালাচ্ছিস-ই বা কেন?”
“জানিনা কোথায় যাচ্ছি তবে পালাচ্ছি। রুহি মাহাদী মানষিক ভাবে অসুস্থ। দিনদিন তার সন্দেহ বেড়েই চলেছে। আমি আর নিতে পারছি না। তাই পালাচ্ছি। যাইহোক রাখ। কবে দেখা হয় জানিনা। সাবধানে থাকবি। সবার খেয়াল রাখবি।”
আর ভাইয়ার?
রোদসী চুপ হয়ে গেলো। রুহি হাসলো। ওপর ওপাশ থেকে রোদসী কলটা কেটে দিলো।
রুহি এবার পাশে থাকায়। তার আশে পাশে সবাই বসে ছিলো। সবার মুখে অবাক হবার ছাপ স্পট। উচ্ছ্বাস একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে কাউকে কল দিলো।
—–
হাই আমি শব্দ। এই সিট টা আমার ছেড়ে দিলে ভালো হতো।
রোদসী মুখ তুলে তাকায়। উচ্ছ্বাসের বয়সী একটা ছেলে। মুখ হাসিহাসি করে রোদসীর দিকে তাকিয়ে আছে। রোদসী হঠাৎ ছেলেটাকে এভাবে কথা বলতে দেখে চমকে উঠলো তারপর নিজেকে ধাতস্থ করে সরে জানালার পাশের সিটে যেয়ে বসলো।
শব্দ বসে রোদসীর দিকে তাকিয়ে আবার হাসে। তারপর বলে,
“কোথায় যাবেন?”
“জানি না।”
“জানেন না? গুড তবল এটা তো চট্টগ্রামের বাস।”
“হু”
শব্দ আর কথা না বলে সামনে তাকালো। তারপর পকেট থেকে ফোন বের করে কিছু একটা টাইপ করে কাউকে পাঠালো মনে হলো। ফোন রেখে আবারো রোদসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
“একা যাচ্ছেন?”
“হু”
“একা একটা মেয়ে এতদূর যাচ্ছেন? আবার কৌথায় যাচ্ছেন তাও জানেন না। ইন্টারেস্টিং।”
এবার রোদসী বিরক্তমুখ করে শব্দের দিকে চাইলো। তারপর বললো,
“তাতে আপনার কি? আপনার এতো সমস্যা কি?”
“সমস্যা নেই। তবে আপনাকে দেখে আমার ছোটো বোনের কথা মনে পড়লো।”
এটা বলেই শব্দ চুপ হয়ে গেলো। রোদসী শব্দের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো। কেনো জানি মনে হলো ওই মুখে একটা বেদনার ছাপ। রোদসীর মাথায় আর একটা চিন্তা জেঁকে বসলো। যেখানে যাচ্ছে সেখানে যেতে পারবে তো? যদি উনারা খারাপ লোক হয়। যদি খারাপ কিছু হয় রোদসীর তাহলে নিজেকে মাফ করতে পারবে তো? এসব ভাবতে ভাবেতে চোখ বুঝলো রোদসী। তারপর???
—–
রোদসীর যখন চোখ খুললো তখন নতুন একজায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করলো। বুকটা ধক করে উঠলো। বাসার সবার কথা মনে পড়লো। সবশেষে! সবশেষে উচ্ছ্বাসের কথা মনে পড়লো। তাহলে সে কোথায়? কে এনেছে তাকে এখানে? ওই বাসে পাশের ছিটে বসা ওই ছেলেটা কি যেনে নাম বললো? শাদ্ধ? না শব্দ? কি জানি নাম? হ্যাঁ শব্দ। ওই ছেলেটা তাকে এখানে এনেছে? তাই বুঝি ওভাবে অপরিচিত মেয়ের সাথে সেধে কথা বলছিলো। কি চাই ওর? কেনো আনলো তাকে? আচ্ছা তাকে কি বিক্রি করে দিবে? নাকি পাচার করে দিবে? রোদসী আর ভাবতে পারলো না। সে স্বশব্দে কান্না করে দিলো।
চলবে……
ভুলত্রুটি ক্ষমা মার্জনীয়।