ভালোবাসি তাই ২ পর্ব-১৩

0
499

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ১৩
#তানিশা সুলতানা

করলা সিদ্ধ করে টুকরো টুকরো করে কেঁটে কয়েক টুকরো মাংসের পিছ দিয়ে সিদ্ধ করে যে পানি বের হয়েছে সেই পানি দিয়ে বিশ্ব বিখ্যাত করলার চিকেন সুপ বানিয়েছে তানহা। এটা স্পেশালি অভির জন্য। আর নিজের জন্য গরম গরম ভাতের সাথে মুরগির মাংস।
করলার জুস বানানোর কারণ হচ্ছে অভি বাজার থেকে করলা পেঁয়াজ আর মুরগীর মাংস এসেছে। সাথে আদা জিরা লবঙ্গ তেজপাতা সব ধরনের মসলাও এনেছে।

খাবার টেবিল নেই তাই তানহা ফ্লোরে খাবার সাজিয়ে রাখে। একটা মাদুর এনেছিলো অভি মাদুর বিছিয়ে নেয়। দুজন বসবে বলে।
ফ্রেশ হয়ে প্লেটে খাবার সার্ভ করে তানহা অভিকে ডাকে।

অভি সবে ঘর ঝাড়ু দিয়ে একটু জিরতে বসেছিলো। ভীষণ খিদে পেয়েছে। আর চার পাঁচ দিন ধরে ভালো মতো খাওয়া হয় না। গরম মসলার কড়া ঘ্রানটা অভির নাকের কাছে বারি খাচ্ছে। এতে খিধেটা আরও বেরে গেছে।
তানহার ডাক শুনতেই তরিঘরি করে হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে যায় অভি।

অভি বসতেই তানহা অভির সামনে করলার সুপ টা রাখে।
“এটাই খেতে হবে। আলু না এনে করলা আনার শাস্তি এটা।
মুখে খাবার পুরে বলে তানহা।
অভি এক পলক তানহার দিকে তাকিয়ে বাটি ধরে চুমুক দেয়। এক চুমুকেই পুরো সুপটা শেষ। তানহা মুখে খাবার দিয়ে ছিলো। অভির কান্ড দেখে আর চিবতে পারে না। হা করে তাকিয়ে থাকে অভির দিকে।

অভি বাটিটা রেখে ঢেকুর তুলে
” তোমার হাতে জাদু আছে। জানো আগে কতো বার মাকে বলেছি এভাবে সুপ বানিয়ে দিতে কিন্তু মা কখনোই দেয় নি। ইয়াম্মি
তুমি যতদিন এখানে থাকবে ততদিন এই সুটা বানিয়ে খাওয়াবে আমাকে।
অভি মিষ্টি হেসে বলে।
তানহা এখনো হা করে আছে।
“মুখে মশা ঢুকবে তো
অভি তানহার থুতনিতে চাপ দিয়ে মুখ বন্ধ করিয়ে দিয়ে বলে।
তানহা না চিবিয়েই খাবারটা গিলে নেয়।
” কি করে খেলেন? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে তানহা।
“প্রথমে বাটিটা ধরেছি দেন দুই ঠোঁটের মাঝ খানে নিয়ে তারপর শুধু গিলেছি।
অভি বর্ননা দিয়ে দেয়।
” তুমি খাও আমি ঘুমতে গেলাম। পেট ভরে গেছে।
অভি চলে যায়।
তানহা অভির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
“এতোদিনে সব কনফিউশান দুর হলো। কেনো ওনার মুখ দিয়ে মিষ্টি কথা বের হয় না? কারণ ওনার রক্তে করলা মিশে আছে তাই। করলার বংশধর।

তানহা নিজের খাওয়ায় মন দেয়।
খাওয়া শেষে বেসিন থালাবাসন রেখে রুমে আসে তানহা। অভি ফোনে গেমস খেলছে। তানহা অভির পাশে গিয়ে বসে। অভির গা ঘেসে বসে।
” কি হয়েছে?
অভি তানহার দিকে না তাকিয়েই বলে
“কিছুই না।
তানহা মুচকি হেসে বলে।
” তাহলে গা ঘেসে বসছো কেনো?
“আপনার গায়ে কি তেলাপোকার দোকান আছে না কি যে গা ঘেসে বসা যাবে না।
পাল্টা বলে তানহা।
অভি আর কিছু বলে না চুপচাপ থাকে। এর সাথে কথায় পারা যাবে না।
” একটা কথা বলুন তো?
“কিহহহহ?
” আমি মেয়ো হিসেবে কেমন?
অভি ফোনটা রেখে তানহার দিকে তাকায়। তানহা নিজের চুল ঠিক করছে।
“মোটামুটি
অভি বালিশ কোলে নিয়ে বলে।
” আমি মেয়ে হিসেবে যেমন তেমন কিন্তু গার্লফ্রেন্ড হিসেবে খুব কেয়ারিং ”
ভাব নিয়ে বলে তানহা।
“আই নো
কাললে প্রথম আলো খবরের কাগজে তোমার একটা ছবি দিয়ে নিচে বড় বড় করে লিখে দেবো ” এই মেয়েটি মেয়ে হিসেবে যেমন তেমন কিন্তু গার্লফ্রেন্ড হিসেবে খুব কেয়ারিং ” একটা বফ লাগবে এর।
ঠিক আছে?
তানহা গাল ফুলায়।
“আর কথা বলবো না আপনার সাথে?
অভিকে পেছন ঘুরে বসে বলে তানহা।

” ও মা কেনো?

“ঝগড়া লাগছে আপনার সাথে?
নাক ফুলিয়ে বলে তানহা।
” কখন?
“এখন। আর কথা নাই
বলে উঠে যায় তানহা। অভি হদফ ছেড়ে আবার ফোন নিয়ে বসে।

তানহা অন্য রুমে চলে আসে। আকাশে বড় একটা চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোতে চারপাশ আলোকিত হয়ে গেছে। এই বেলকানিটা খুব সুন্দর তবু আরও সুন্দর হতো যদি কিছু ফুলগাছ থাকতো। ফুলগাছ ছাড়া বেলকনি কিছুটা চিনি ছাড়া চায়ের মতো।

এই বেলকনি থেকে পাশের ফ্লাটের বেলকনির দুরত্ব কয়েক ইঞ্চির। হাত বাড়ালেই আনায়েশে পাশের বেলকনি থেকে অনেক কিছু নিয়ে আসা যাবে। আপাতত পাশের বেলকনিতে অনেক গুলো ফুলের টবের আছে। গোলাপ গাঁধা বেলি ঘাস হাজারি গোলাপ ফুলের গাছ আছে। বেলকানিতে আবার ৩০ ভল্ডের একটা লাল বাতি লাগানো আছে।
আবার একটা খালি টবও আছে। তানহা খুব সাবধানে টব টা আনে। কালো গোলাপ তানহার বরাবরই খুব পছন্দের। তাই কালো গোলাপ গাছ থেকে কলি সহ একটা ডাল ভেঙে নেয়। আর কিছু ঘাসফুলের ডাল ভেঙে নিয়ে রুমে চলে আসে।
এগুলো অভির বেলকনিতে রোপন করবে। এখানে লাগালে তো অনায়াসে ধরা খেয়ে যায়।
খুব যত্ন সহকারে ফুল ছাগ লাগিয়ে তাতে পানি দিয়ে অভির বেলকনির একপাশে রেখে দেয়।

তারপর হাত ঝেড়ে বিশ্ব জয়ের হাসি দেয় তানহা। কতো ইজিলি চুরি করে ফেললো। কেউ টেরও পেলো না।

” একদিন তুই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চোর হবি তানহা। সবাই তোকে বাহবা দেবে।
নিজের পিঠ নিজে চাপকে বলে তানহা।

ফোনটা হাতে নিয়ে জীম ধরে বসে আছে স্মৃতি। চোখ দিয়ে না পানি পড়ছে আর না চোখের পলক ফেলছে। কেমন একটা শূন্যে ভাসছে মনে হচ্ছে। স্বপ্ন আর বাস্তবতার সাথে তাল মেলাতে পারছে না।
কিছুখন আগে আবির কল করেছিলো। “কাল বিকেল চারটায় শিশু পার্কে দেখা করো” বলেই ফোন কেটে দিয়েছে।
কেনো দেখা করতে বললো? এটাই মাথায় ঘুরছে স্মৃতির। যদি বলে আমি তানহা কে ভালোবাসি ওকেই বিয়ে করতে চাই। তুমি আমাদের মাঝখান থেকে সরে যাও। এটা বললে স্মৃতি কি করে নিজেকে সামলাবে? কি রে বাঁচবে? কি করে সারাজীবন চোখের সামনে তানহার সাথে ওকে ভালো থাকতে দেখবে স্মৃতি? কি করবে?

আবার ডুকরে কেঁদে ওঠে।
“ভালোই তো ছিলাম আমি। আবার কেনো আসলেন? পৃথিবীতে এতো মেয়ে থাকতে আমার বোনই কেনো? এটা কেনো হচ্ছে আমার সাথে?
বালিশ দিয়ে মুখ চাপা দিয়ে কাঁদতে থাকে স্মৃতি। যাতে শব্দ কেউ শুনতে না পায়।

অভি খালাবাসন মেজে এসে ছোট চৌকিতে শুয়ে পরে। এক রুমেই বসিয়েছে খাট আর চৌকি। তানহা আবার একা ঘুমতে ভয় পায় তাই।
তানহাও এসে খাটে শুয়ে পরে অভির দিকে মুখ ঘুরিয়ে।
” আপনি মুভি দেখেন না তাই না?
অভি দেয়ালের দিলে মুখ করে মাথার ওপর হাত দিয়ে গলা ওবদি লেপ টেনে শুয়ে আছে।
“নাহহহ
তবে আমি সিনেমা দেখি। বাপ্পা রাজ সাবান আলমগীর অমিত হাসান ওদের।
তানহা ফোঁস করে নিশ্বাস ছাড়ে।
” এই জন্যই আপনি নিরামিষ।
“নিরামিষ কি?
অভি তানহা র দিকে তাকিয়ে বলে।
” আমার মাথা। দাঁতে দাঁত চেপে বলে তানহা।
“এখন থেকে কাবির সিং, সালমান খান, শাহরুখ খান, কালির বউ দীপিকা এদের মুভি দেখবেন।
” কেনো দেখবো? আমার তো বাপ্পারাজের ছবিই ভালো লাগে।
“রোমাঞ্চ শেখার জন্য দেখবেন। দশ দিন সময় দিলাম এর মধ্যে রোমাঞ্চ কতো প্রকার ও কি কি? আমাকে লিখে দিবেন।
অভি কাশতে কাশতে লেপ দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে।
” এই মেয়েটা কবে জানি আমার হার্ট এ্যটার্ক করিয়ে দেবে।
তানহা একটা ভেংচি কাটে
“নেকা ষষ্ঠী

চলবে