ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-১৯+২০

0
316

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব,,,১৯
মৌমো তিতলী

সন্ধ্যা ৬টা।এক ঘন্টা হতে চললো সুহা এসেছে মির্জা ম্যানশনে। ড্রয়িং রুমে বসে আছে সে। এক ঘন্টায় সাহিত্য কে কোথাও চোখে পড়েনি। হয়তো বাড়িতে নেই। এমপি মহাশয়,,বাড়িতে থাকার কথাও নয়। তবে একটা ব্যাপার ভীষণ ভাবাচ্ছে সুহা কে। আয়েশা আন্টি তাকে কেনো আনলো বাড়িতে? বিয়ের এখনো এক সপ্তাহ বাকি। তা ছাড়া এই বাড়িতে এসে সুহার একটু অস্বস্তি হচ্ছে। আসার সময় এরকমটা লাগেনি। কিন্তু এখানে আসার পর নীলিমা তাকে দেখে এক প্রকার রেগে মেগে ওপরে গিয়ে নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। বেপার টায় বেশ অপমানিত বোধ করে সুহা। মেয়েটার তার সাথে কিসের সমস্যা?? বুঝলো না সাহিত্যের সরল প্রেয়সী।
ভাবনার মাঝেই আয়েশা সিদ্দিকা এলেন। হাতে এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত।বেশ গরম পড়েছে আজকাল।সুহার হাতে শরবতের গ্লাসটা দিয়ে পাশে বসলেন তিনি। ইশারা করলেন শরবতটা খাওয়ায় জন্য।
সুহা এক চুমুকে অর্ধেকটা শেষ করে সামনের টেবিলে গ্লাসটা নামিয়ে রাখে।
আয়েশা সিদ্দিকা সুহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,,

:- নীলিমার ব্যবহারে কিছু মনে করবে না কেমন? মেয়েটা একটু বিগড়েছে। এই বাড়িতে নিজের মতো করে থাকবে। কেউ তোমাকে কিচ্ছু বলবে না। ওপরে সাহিত্যের রুমের পাশের রুম টায় তোমার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কখনো কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে বা সাহিত্য কে বলবে কেমন?

সুহা ভদ্র মেয়ের মতো মাথা নেড়ে জবাব দেয়। আয়েশা সিদ্দিকা একজন সার্ভেন্ট কে ঢেকে সুহাকে উপরে নিয়ে গিয়ে তার রুমটা দেখিয়ে দিতে বললেন।
সুহা আন্টির কথা মতো উপরে চলে যায়। নিজের রুমে ঢুকতে গিয়ে পাশের রুমের দিকে তাকায়।আগের বার মেহরাবের জন্মদিনের রাতে একবার যাওয়া হয়েছিলো সাহিত্যের রুমে। সুহা সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিজের বরাদ্দকৃত রুমে প্রবেশ করে। রুমটা বেশ বড়। সব ভারি আসবাব দিয়ে সাজানো। রুমের সবকিছু তাঁর নিজ নিজ আভিজাত্য ছড়াচ্ছে। বিছানাটাও বেশ পরিপাটি করে গোছানো। পাশে একটা বড় বেলকনিও আছে। সুহা সেদিকে যায়। বেলকনিতে গিয়ে সুহা বেশ অবাক হয় । সাহিত্যের রুমের ব্যালকনি আর এই রুমটার ব্যালকনি একেবারে পাশাপাশি। খুব সহজেই টপকে ওপাশে যাওয়া যাবে। বারান্দাটা বেশ খোলামেলা ।কিছু দেশি-বিদেশি ছোট ছোট ফুলের গাছও আছে টবে। একটা ছোট্ট টেবিল আর বসার জন্য একটা ছোট সোফাও আছে। বেশ ভালো লাগলো জায়গাটা সুহার। রুমে এসে লাগেজ থেকে একটা পিস কালারের সুতি ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় সুহা। ফ্রেশ হয়ে রুমে আসে। বাড়িতে নিজের বয়সি কেউ না থাকায় বেশ বোরিং লাগছে সুহার। হঠাৎই এই মনে প্রিয় পুরুষের খেয়াল আসে।সে কি জানে সুহা তাদের বাড়িতে এসেছে?? তাকে দেখলে কি চমকে যাবে এমপি সাহেব?? মুচকি হাসে সুহা। মাথায় খোরাফাতি আইডিয়া আসে! ভাবে সাহিত্য বাড়িতে আসার আগে তার রুমে একটা ট্যুর দেয়া যাক।

গুটি গুটি পায়ে সাহিত্যের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সুহা। লক করা নেই। শুধু সিটকিনিটা লাগানো। আস্তে করে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে সুহা। দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই মিষ্টি একটা ঘ্রাণ এসে নাকে ধাক্কা খায়। ঘ্রাণটা অতি পরিচিত সুহার। এমপি সাহেব আশেপাশে থাকলেই ঘ্রাণটা মোহময় হয়ে ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। সুহা লম্বা শ্বাস নেয় ।প্রিয়তমের ঘ্রানটা নিজের ভেতরের টেনে নেয়ার চেষ্টা।
পুরো রুমে চোখ বুলায় সুহা। বেডের ওপরে ওয়াল জুড়ে সাহিত্যের একটা বড় ছবি লাগানো। আসেপাশে কিছু পেইন্টিং। বেডের পাশে ছোট্ট টেবিল টায় ফ্লাওয়ার ভাসে আর্টিফিশিয়াল চেরি ফুল শোভা পাচ্ছে। সেখানেও একটা ছবি ফ্রেম করে রাখা। তবে ছবিটা দেখে বেশ কৌতূহল হলো সুহার মনে। এগিয়ে গিয়ে বেডের ওপর বসলো। হাত বাড়িয়ে ছবির ফ্রেমটা হাতে নিয়ে দেখলো শুধু মাত্র একটা মেয়ের চোখের ছবি। ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে কোন গুণী শিল্পীর হাতে আঁকা নিখুঁত শিল্পকলা। তবে চোখ দুটো সুহার বেশ পরিচিত লাগলো। ডান চোখের পাশে একটা ছোট্ট তিল চক্ষু গোচর হতেই আলগোছে সুহার হাত নিজের চোখের ডান পাশে গিয়ে ঠেকলো। হুট করেই দাঁড়িয়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো সুহা। নিজের চোখ দুটো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো। ছবির চোখ আর তার চোখ সম্পূর্ণ একই রকম, এমনকি চোখের পাশের ছোট্ট তিনটাও। ব্যাপারটা বুঝতে সময় লাগে না সুহার। লজ্জায় রক্তিম হয় মুখ। ছবিটা যথাযথ জায়গায় রেখে বেডের ওপর বসে সুহা। সামনের দেয়ালে টানানো সাহিত্যের ছবিটার দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,,

:- ভালোবাসি এমপি সাহেব ।খুব ভালোবাসি। সুহা বিভোর হয়ে তাকিয়ে থাকে সাহিত্যর ছবির দিকে। হুট করে ভীষণ ঘুম পাচ্ছে সুহার। সাহিত্যর ছবির দিকে তাকিয়ে আনমনে কথা বলতে বলতে যে ঘুমিয়ে পড়ে মেয়েটা,খেয়াল থাকে না তার। সাহিত্যর বিছানায় বালিশ আঁকড়ে ধরে বেঘরে ঘুমিয়ে পড়ে মেয়েটা।

সন্ধ্যার সাড়ে সাতটা নাগাদ বাসায় ফিরে সাহিত্য। সারাদিন পার্টি অফিসের বিভিন্ন কাজ সেরে ভিষন ক্লান্ত লাগছে তার। রুমে গিয়ে আগে গোসল করবে, তারপর খাওয়া!এমনটাই প্ল্যান এমপি সাহেবের। নিজের রুমে সামনে গিয়ে দরজা খোলা দেখে বেশ অবাক হয় সাহিত্য। তার পারমিশন ছাড়া এ বাড়িতে কেউ তার রুমে ঢোকে না ।তাহলে দরজাটা চাপানো কেনো ?? ভাবলো হয়তো সেই খুলে রেখে গেছিলো ।খুব বেশি না ভেবেই রুমে ঢুকে পড়ে সাহিত্য।অন্ধকারাচ্ছন্ন রুম।লাইট জ্বালিয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই থমকে যায় সাহিত্য। বুকটা ধড়াস ধড়াস করে ওঠে। উফফফ!! মেয়েটার শান্তিতে থাকতে দিল না। সব সময় চোখের সামনে প্রকট হওয়া কি জরুরী?? কয়েকবার পলক ঝাপটে তাকায় ছেলেটা। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না সাহিত্য। চোখ দুহাতে ভালো করে কচলে আবার তাকায়। সত্যিই তার রুমে শুয়ে আছে তার সুহাসিনী।
নিজের ভুল ভাঙতেই আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় বিছানার দিকে। বিছানায় এলোমেলো হয়ে ঘুমাচ্ছে সুহা। শরীরে ওড়নার হদিস নেই। গলায় জড়িয়ে আছে সেটা। প্লাজু পায়ের কিছু টা ওপরে উঠে গিয়ে ফর্সা পা দুটো দৃশ্যমান। বেসামাল হয় অবাধ্য মনটা। সন্তর্পণে ঢোক গেলে সাহিত্য। এগিয়ে যায় সুহার কাছে।প্লাজু টেনে পা ঢেকে দেয়।ওড়না টেনে দেয় বুকে। এসির বাতাসে ঠান্ডায় হালকা কুঁকড়ে আছে সুহা। পাতলা চাদর টেনে সুহার শরীরটাকে ঢেকে দেয় সাহিত্য। তারপর ঝুঁকে রয় সুহার মুখের ওপর। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে তার বক্ষ দখলকারিনী কে। কবে আসবে সেই দিন যখন পার্মানেন্টলি তার পদ্মফুল তার সাথে সাথে এই রুমেরও দখলদারিনী হবে। কেমন বাচ্চাদের মতো করে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা। নিঃশব্দে হাসে সাহিত্য। চোখ পড়ে সুহার ফোলা ফোলা ঠোঁটের ওপর। গলা শুকিয়ে কাঠ কাঠ অবস্থা। হাতের বুড়ো আঙ্গুল দ্বারা আলতো করে স্লাইড করে সেথায়। ঘোর লেগে আসে যেন। নিভু নিভু হয় চোখ জোড়া‌। আলতো করে অধর ছোঁয়ায় কপালে, দু চোখের পাতায়, সবশেষে প্রেয়সির কোমল ঠোঁটে।
আহ! আমার আদর,,আমার হৃদয়হরণী।

সুহাকে না ডেকে আলমারি থেকে একটা ট্রাউজার আর টিশার্ট নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে যায় সাহিত্য। এই মুহূর্তে গোসল করা প্রয়োজন। তবে সে এখন একটুও ক্লান্তি অনুভব করছে না। কোথায় পালালো তার সব ক্লান্তি?? তার আদরের মুখ দেখেই সব ক্লান্তি এক নিমিষেই পালিয়েছে যেন!! বাড়িতে এসেই যে এত বড় একটা সারপ্রাইজ তার জন্য অপেক্ষা করছিলো, কোন ধারনাই ছিল না সাহিত্যের ।তবে বুঝতে পারে তার প্রেয়সির এই বাড়িতে অবস্থানের পেছনে তার মায়ের অবদান আছে। প্রশান্তিতে হাসি খেলে যাই তার মুখে। মা বুঝি তখন এটার আভাসই দিয়েছিলো!!

ফ্ল্যাশব্যাক
*************

সকালে নীলিমার কফি নিয়ে যাওয়ার পর যখন সাহিত্য রাগারাগি করেছিলো, তখন আয়েশা সিদ্দিকা ছেলেকে ঠান্ডা হতে বলে ।সকালে স্বামীর সাথে হওয়া সব কথা সাহিত্যর সাথে শেয়ার করেন তিনি। সবটা শুনে সাহিত্য ভীষণ রেগে যায়। তবে সামলে নেন আয়েশা সিদ্দিকা। তিনি ছেলেকে আশ্বাস দিয়ে বলেন,, তার মাথায় জব্বর একটা প্ল্যান এসেছে। সাহিত্যকে বলে ,,

:-তুই শুধু দেখতে থাক আব্বা !আমি কি করি। ওই নীলিমার এই বাড়ির বউ হওয়ার সাধ আমি ঘুচিয়ে দেবো । সাথে তোর বাবার মাথার ভূতও উত্রে দেবো।তুই কোন চিন্তা করিস না আব্বা। তোর মা থাকতে নীলিমার সাথে তোর বিয়ে কখনোই হবে না। বিয়ে যদি হয় তোর ফুলের সাথেই হবে।
তুই এবার দেখতে থাক আমি কি করি।

মায়ের বলা তখনকার কথা মনে পড়ে সাহিত্যর। না তাদের সাথে থেকে থেকে মায়ের মাথায় বুদ্ধি খুলছে। খেলা এবার জমবে আহাদ মির্জার সাথে। তার পিঠ পিছে তার সর্বনাশ করার প্ল্যান করছে তার বাবা ।কিন্তু তার বাবা এটা জানে না ছেলে তার মাথার দশ হাত উপর দিয়ে যায়।

ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এসে সুহাকে আস্তে করে কোলে তুলে পা বাড়ায় সুহা রুমের দিকে। রুমে গিয়ে শুইয়ে দেয় তাকে। গায়ে চাদর টেনে দিয়ে কপালে অধর ছুঁয়ে দেয়। রুমের ডিম লাইট জ্বালিয়ে, দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে ফিরে আসে নিজের রুমে। নিজের বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে পড়ে সাহিত্য। বালিশে মাথা রাখতেই মিষ্টি একটা গন্ধ নাকে ঠেকে। বিভোর হয়ে রয় সাহিত্য। প্রিয়সীর শরীরের মিষ্টি গন্ধ যেন জড়িয়ে আছে তার বিছানা জুড়ে। পুরুষালী অনুভূতিতে অসাড় হয়ে আসে সাহিত্যের শরীর। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখা দায় হয়ে পড়ে। মাথা ঝাঁকিয়ে মাইন্ড ডাইভার্ট করার চেষ্টা করে সাহিত্য। ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে কিছু কাজ এগিয়ে রাখা দরকার। ফোনটা বের করে অরুদ্ধকে কল লাগায়। পরবর্তী কাজ নিয়ে কিছু ডিসকাশন করার আছে।

চলবে,,,,

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব,,,,২০
মৌমো তিতলী

রাত ১০ টা। আয়েশা সিদ্দিকার ডাকে ঘুম ভাঙ্গে সুহার। চোখ মেলে চারদিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে সে কোথায় আছে। আস্তে আস্তে স্বরণে আসে সে এখন মির্জা ম্যানশনে। কিন্তু অবাক হলো সুহা। সে তো এমপি সাহেবের রুমে ছিলো!! এমপি সাহেবের ছবি দেখছিলো বসে..তারপর…. কিছুই মনে পড়ে না সুহার। সে এই রুমে কখন এলো? নাকি সে নিজেই এসেছে!!

সুহাকে থম মেরে বসে থাকতে দেখে মাথায় হাত রেখে ডাকে আয়েশা সিদ্দিকা।

:- সুহা মা। চলো খাবে না রাতে? সন্ধ্যায় যে ঘুমিয়ে গেলে। না খেয়ে সারা রাত কাটাবে নাকি? সাহিত্য অপেক্ষা করছে চলো!!

সাহিত্যের নাম শুনতেই বুকের ভেতর কেমন একটা অনুভুত হয় সুহার। শরীরের তাপ বাড়লো কি মেয়ের? আয়েশা সিদ্দিকাকে উদ্দেশ্য করে আস্তে করে বলে,,

:- আপনি যান আন্টি!! আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।

আয়েশা সিদ্দিকা মিষ্টি হেসে আচ্ছা বলে নিচে চলে যান।

সুহা ফ্রেস হয়ে নিচে নামে। সবাই খেতে বসেছে।সুহার উপস্থিতি অনুভব করে সাহিত্য ঘার ঘুরিয়ে তাকায়। ঘুমানোর ফলে চোখ,মুখ,ঠোঁট ফুলে আছে মেয়েটার। সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে হুট করে সামনে পানি ভর্তি গ্লাসটা উঠিয়ে ঢকঢক করে পুরোটাই খেয়ে শেষ করে সাহিত্য। মেয়েটা তাকে সব সময় বেসামাল করতে প্রস্তুত যেন।
সুহা এগিয়ে এসে দেখলো সবাই বসেছে। শুধু সাহিত্যের পাশে একটা চেয়ার খালি। সুহা মির্জা পরিবারের সবার সামনে সাহিত্যের পাশে বসতে একটু ইতস্তত বোধ করে,, লজ্জা পাচ্ছে মেয়েটা। আড়চোখে এমপি সাহেবের দিকে তাকায় সুহা। সাহিত্য সুহার দিকেই তাকিয়ে ছিলো আগে থেকেই। চোখাচোখি হলো দুজনার। সুহা অপ্রস্তুত হয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। সাহিত্য তার বোকা রানিকে পর্যবেক্ষণ করছে!! নিশ্চয় সবার সামনে তার পাশে বসতে লজ্জা পাচ্ছে মেয়েটা। কিন্তু এটা বুঝছে না যে, মা আর বড় ভাই ছাড়া বাড়ির কেউ এখনো তাদের ব্যাপারে কিছুই জানে না। তাই সাহিত্যের পাশে বসা নিয়ে কেউ কিছুই ভাববে না। ব্যাপারটা নরমালই নেবে সবাই।সাহিত্য আবারও সুহার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বসতে। সুহা বসতেই নিবে তখনই কোথা থেকে নীলিমায় এসে হুড়মুড় করে বসে পড়ে সাহিত্যর পাশে খালি চেয়ারটায় তারপর ন্যাকামো করে সুহার দিকে তাকিয়ে বলে,,

:-ইসস!সুহা তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ওহ বসার জায়গা পাওনি বুঝি। তুমি বরং তোমার রুমে গিয়েই বসো। তুমি তো গেস্ট, তোমার খাবারটা না হয় গেস্ট রুমেই খেও।
সুহা ভীষণ অপ্রস্তুত হয়। লজ্জায় কুকড়ে যায় সে। আয়েশা আন্টি তাকে নিজে গিয়ে ডাকলো বলে, নয়তো সে কখনোই আসতো না নিচে।
নীলিমার ইচ্ছাকৃত ন্যাকামি আর কার্যকলাপে রাগে চোয়াল শক্ত হয় সাহিত্যর। মেহরাব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে রেগে যাচ্ছে সাহিত্য। তাছাড়া নীলিমার ব্যবহার মোটেই পছন্দ হয় না মেহরাবের। কটাক্ষ করে জবাব দেয় মেহেরাব,,

:-আচ্ছা সুহা গেস্ট হয়ে যদি আমাদের সাথে বসে খেতে না পারে, তাহলে তুইও তো আমাদের গেস্ট নীলি!! তুই হলি আমার ফুপুর মেয়ে, মানে ফুপাতো বোন।এটা তো তোর বাড়ি নয়। তুই তো এক প্রকার গেস্ট এই বাড়ির। তাহলে তুই কেন এখানে এসে বসলি খেতে??

মেহরাবের জবাবে মুখ থমথমে হয় নীলিমার। ভেতরে ভেতরে ভীষণ রেগে যায়। সুহার প্রতি ক্রোধ আর এক ধাপ বাড়ে। এই বাড়ির সবাই পেয়েছে কি মেয়েটার মধ্য, যে সবাই এত গদগদ হয়ে মাথায় তুলে নাচছে!!অসহ্য একেবারে! সুযোগ পেলেই মেয়েটাকে আচ্ছা করে বুঝিয়ে দেবে।
তবে মুখে সেটা প্রকাশ না করে জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,,

:- কি বলছ মেহেরাব ভাইয়া! আমি আর সুহা কি এক হলাম? এটা আমার মামার বাড়ি। তোমরা আমার আপনজন। আমি গেস্ট কি করে হলাম? কিন্তু সুহার তো এবাড়ির লোকেদের সাথে তেমন কোন সম্পর্ক নেই। মামুর বন্ধুর মেয়ে।আমার সাথে তুমি সুহার তুলনা করছো??

নীলিমার ব্যবহারে খেই হারায় সুহা। এ কেমন ব্যবহার তার সাথে নীলিমার? সেই শুরু থেকেই দেখছে সুহাকে একেবারেই যেন সহ্য করতে পারে না এই মেয়েটা। কিন্তু সে তো কখনো তার সাথে কোন বেয়াদবি করেনি। তাহলে কেন এমন করে সে? ভাবনায় বিভোর হয় মেয়েটা।
রাগে মাথাটা ধপধপ করতে থাকে সাহিত্যের। কপালের রগ ফুলে ওঠে।রাগে আউট অফ কন্ট্রোল হওয়ার আগেই ধুপ করে উঠে দাঁড়ায় সাহিত্য। মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,

মা সুহাকে আমি নিয়ে যাচ্ছি। আমার আর সুহার খাবারটা ঘরে পাঠিয়ে দিও। এখানে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তাতে মানুষ কেন কোন কাক চিলও বসতে পারবে না।

বলেই সুহার হাত ধরে গটগট করে উপরে চলে যাই সাহিত্য।

ঘটনার আকর্ষিকতায় হতভম্ব আহাদ মির্জা। ছোট ছেলের যা মেজাজ তাতে নীলিমা যদি এ ধরনের ব্যবহার করে যায়, তাহলে বিয়ের ব্যাপারে ছেলেকে কখনোই মানাতে পারবেন না তিনি। তাছাড়া সুহার প্রতি সাহিত্যের একটা স্ট্রং পজেসিভনেস খেয়াল করেছেন তিনি। তার ধারণা যদি সঠিক হয় তাহলে ব্যাপারটা মোটেও ভালো হবে না তার জন্য। চিন্তিত হয় আহাদ মির্জা।
নীলিমা যেন ভেতরে ভেতরে রাগে থরথর করে কাঁপছে। ক্রোধে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলার নজির আছে নীলিমার। রাগের মাথায় সে যা ইচ্ছে করতে পারে। সুহার প্রতি যে সাহিত্যের আলাদা কোন একটা টান আছে সেটা ঠিক বুঝেছে সেদিন পার্টিতে সাহিত্যের সুহার জন্য রিয়্যাক্ট করতে দেখে। সুহা কে তো সে কিছুতেই ছেড়ে দেবে না। সাহিত্য আর তার মাঝখানে যেই আসার চেষ্টা করবে তাকেই উপড়ে ফেলে দেবে নীলিমা। রাগে খাবার মুখে দিয়ে চিবাতে থাকে যেন খাবার নয় সুহা কে চিবাচ্ছে সে।

রাতের খাবারটা সাহিত্যের সাথে তার রুমেই খেয়ে নেয় সুহা। এত কাহিনীর পর খেতে চায়নি মেয়েটা। কিন্তু তার এমপি সাহেবের দু’শ কেজির এক ধমকে খেয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।

**********

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নিচে এসে এদিক ওদিক তাকায় সুহা ‌। কিচেন থেকে টুংটাং আওয়াজ আসছে। সেদিকে গিয়ে দেখতে পাই আয়েশা সিদ্দিকা সকালের নাস্তা বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চুলার উপরে ফুটছে গরম কফি। সুহা কে দেখে হাত ধরে কাছে টেনে নেন আয়েশা সিদ্দিকা। মিষ্টি হেসে বলেন,,

:- এত তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেল?? নিচে আসতে গেলে কেন এখন??

সুহা হেসে জবাব দেয়,,

:- আমার সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠায় অভ্যেস আন্টি।আমি তো রোজই সকাল সকাল উঠে ফ্রেশ হয়ে, নামাজ পড়ে মাকে রান্নার কাজে সাহায্য করি।
আপনাকেও একটু সাহায্য করি আন্টি! কি বানাবেন বলুনতো?
সুহার কথায় ভিষণ খুশি হন তিনি। কি দারুন লক্ষি মেয়েটা। হেসে বলেন,,

:- সে বাড়িতে করেছো কাজ। এখন আন্টির কাছে কোন কাজ করতে হবে না। সামান্য একটু কাজ আমি সামলে নেবো।

:- কিন্তু আন্টি এভাবে শুয়ে বসে থাকতে আমার ভালো লাগেনা। কিছু একটা দিন আমি করি ।
আয়েশা সিদ্দিকা কিছুক্ষণ ভাবলেন, তারপর মিষ্টি হেসে মগে কফি ঢেলে সুহার হাতে দিয়ে বললেন,,

:- আপাতত এটা সাহিত্যর ঘরে দিয়ে এসো। আর তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলো!!

সুহা চোখ বড় বড় করে আয়েশা সিদ্দিকার দিকে তাকায়। অস্ফুট স্বরে বলে,,

:- আমি??

:- হ্যাঁ তুমি। যাও।
আর এইটুকুই তো শুধু রুটি আর আলুর তরকারী…… কথাটা শেষ করার আগেই আয়েশা সিদ্দিকার মাথায় একটি দুষ্টু বুদ্ধি খেলে যায়। সুহাকে তাড়াতাড়ি ঠেলে পাঠিয়ে দিয়ে প্ল্যান অনুযায়ী কাজে নেমে পড়ে আয়েশা সিদ্দিকা । তিনিও মেহরাব আর সোহরাব সাহিত্য মির্জার মা,আহাদ মির্জার অর্ধাঙ্গিনী। তার স্বামী যদি বুনো ওল হন, দেখিয়ে দেবেন তিনিও বাঘা তেতুল।

আয়েশা সিদ্দিকা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে সোজা চলে যান নীলিমার ঘরে। নীলিমার কখনো নটা দশটার আগে সকাল হয় না।নীলিমাকে কাঁচা ঘুম থেকে ডেকে তুলে আনেন তিনি।
সোজা রান্নাঘরে এনে দাঁড় করিয়ে দেন তারপর মুখে হাসি ফুটিয়ে বলেন,,,

:- নীলি আজকের সকালের নাস্তা টা তুমিই বানাও বুঝলে!! সাহিত্যটা কিন্তু রুটি আলুর তরকারি খেতে খুব পছন্দ করে।সেটা তো তুমি জানোই। আজকের নাস্তা টা তুমি না হয় নিজের হাতে বানিয়ে সার্ভ করো। তাহলে দেখবে সাহিত্য ভিষণ খুশি হবে।

নীলিমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে সকাল সকাল তাকে এখন নাস্তা বানাতে হবে সে তো জীবনে কখনো রান্নাঘরেই পা দেয়নি। নিজের সুন্দর মেনিকিউর করা হাতের নখের দিকে করুণ চোখে তাকায় নীলিমা। কালই মেনিকিওর,নেইল পেইন্ট করিয়েছে সে আর এখন কিনা এই হাত দিয়ে ময়দা মাখতে হবে!! বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে আসে তার। কিন্তু কিছু বলতেও পারছে না।সাহিত্য যদি খুশি হয় সে রান্না করলে, তাহলে একটু চেষ্টা করাই যায়।

মুখে জোর করে হাসি ফুটিয়ে ময়দার বোলে হাত ডুবাই নীলিমা। তাকে একরকম উৎসাহিত করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসেন আয়েশা সিদ্দিকা। বাইরে এসেই মুখ চেপে হাসতে হাসতে সোফায় বসে পড়েন তিনি।

:- খুব শখ না এ বাড়ির ছোট ছেলের বউ হওয়ার। বোঝো ঠেলা এবার।

এদিকে রান্নাঘরে রুটি বানাতে গিয়ে আটা ময়দা মেখে একরকম যুদ্ধ করছে নীলিমা।

_________

সুহা কফি হাতে সাহিত্যের রুমে যায়। গিয়ে দেখে সাহিত্য উপুড় হয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। কোমর পর্যন্ত পাতলা চাদর দিয়ে ঢাকা। ফর্সা পিঠটা উন্মুক্ত। মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। সাহিত্যের এমন এলোমেলো রুপে শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে সুহার। প্রেমিকের এইরূপে নাকি এসির ঠান্ডা বাতাসে গায়ে কাঁটা দিলো বুঝতে পারে না এমপি সাহেবের বোকা প্রেয়সী।

বেডের পাশে টেবিলটাই কফির মগটা আস্তে করে নামিয়ে রাখে। সাহিত্যর ঘুমন্ত মুখের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে সুহা।
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে তার প্রাণের পুরুষকে। অদ্ভুত একটা ইচ্ছে মনে জেঁকে বসে সুহার।একটু ছুঁয়ে দিতে প্রবল ইচ্ছে জাগে মনে। হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেয় সাহিত্যের প্রশস্ত কপাল,ভ্রু, নাক,তারপর ঠোঁটে এসে আটকে যায় মেয়েটা। মনে পড়ে সেদিনের নৌকায় কাঁটানো মুহুর্তে গুলো। লজ্জায় ঠোঁটজোড়া তিরতির করে কাঁপতে থাকে সুহার। আবারো গভীর আবেশে চোখ রাগে প্রেমিক পুরুষের মুখের দিকে। একরকম ঘোরের মাঝেই সাহিত্যের প্রশস্ত কপালে অধর ছোঁয়ায় সুহা।
মুহুর্তেই ফট করে চোখ মেলে তাকায় সাহিত্য। সুহার অধর তখনও সাহিত্যের কপাল ছুঁয়ে। সাহিত্যকে চোখ মেলে তাকাতে দেখে নিজের চোখ বড় বড় হয়ে যায় সুহার। দ্রুত সরে আসতে নিলেই কোমরে হ্যাচকা টানে সুহাকে নিজের দিকে টেনে নেয় সাহিত্য। ঠোঁটে তার বাঁকা হাসি।
এদিকে লজ্জায় জুবুথুবু অবস্থা সুহার। ইসসস কি করলো সে? অসভ্য পাজী এমপি সাহেব জেগে ছিলো সেটা বুঝতেও পারলো না সে? এতো বোকা কেন সে!! এখন কি বলবে সে এমপি সাহেব কে??
সাহিত্য সুহার লজ্জা রাঙ্গা মুখের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,,

:- আমার ঘুমের সুযোগ নিচ্ছিলি??

থতমত খেয়ে আমতা আমতা করে সুহা। সাহিত্য মনে মনে ভিষণ হাসিতে ফেটে পড়ে। তার বোকা ফুলের এই বোকা বোকা রুপটা যে তার বড্ড মায়াবী লাগে। একদম টসটসে রসালো। টুপ করে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।
:- কিরে বল ?কি করছিলি তুই?

:- আমি কিছু করিনি । আপনি সত্যিই জেগে ছিলেন?

:- না প্রথমে জেগে ছিলাম না।নামাজের পর আবার ঘুমিয়েছিলাম ।কিন্তু আমার ঘুম বড্ড পাতলা। তুই আমার রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথেই আমার ঘুম ভেঙেছে।

:- তাহলে উঠলেন না কেন ?এভাবে ঘুমের ভান করে পড়েছিলেন? আপনি তো খুব খারাপ!

:- যাব্বাবা!! আমি ঘুম থেকে উঠলাম না শুয়ে থাকলাম সেটা আমার ব্যাপার। তুই আমার রুমে ঢুকে আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আমার ইজ্জত নিয়ে কেন ছিনিমিনি খেললি তুই??এখন আমি এই মুখ কাকে দেখাবো?

সুহান হা করে তাকিয়ে আছে সাহিত্যের দিকে। সে সাহিত্যর ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে??

সাহিত্য সুহাকে টেনে নিজের বুকের ওপরে ফেলে। তারপর কোমর জড়িয়ে ধরে বলে,,

:- বেশ তো!! তুই আমার ঘুমের সুযোগে যা যা করেছিস এখন আমি সেগুলো করে তোকে ফেরত দেবো!!

সাহিত্যের কথা শুনে সুহা ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে ।কিন্তু তার একরত্তি দেহ খানা আটকে পড়ে রই সাহিত্য বিশাল বক্ষে তার পেশিবহুল বাহুর খাঁচায়।

*********

সকালের নাস্তার টেবিলে বসে সবার চক্ষু ছানাবড়া। আহাদ মির্জা রুটির বোল থেকে একটা রুটি উঁচু করে চোখের সামনে মেলে ধরে। এটা রুটি নাকি কোন দেশের ম্যাপ সেটা ঠিক বুঝতে পারছেন না তিনি। জায়গায় জায়গায় পুড়ে কালো হয়ে উঠে গেছে। তাছাড়া রুটিটা এমন শক্ত যে ছেঁড়া যাবে না বরং ভাঙতে হবে। আজ হঠাৎ খাবারের করুণ দশা দেখে নিজের অর্ধাঙ্গিনী দিক অবাক হয়ে তাকাই আহাদ মির্জা। চোখে মুখে তার হাজারটা প্রশ্ন।

আয়েশা সিদ্দিকা বাকা হেঁসে স্বামীর দিকে ঝুঁকে গিয়ে ফিসফিস করে বলেন,,

:- আমার দিকে কেন তাকাচ্ছো?? এটা তোমার হবু বউমা রান্না করেছে।.
:-হোয়াট? চাপা চিৎকার করে উঠে আহাদ মির্জা। কি বলছ তুমি এসব? নীলিমা কে দিয়ে তুমি রান্না করিয়েছো? ও কখনো রান্নাঘরে ঢুকেছে?

আয়েশা সিদ্দিকা স্বামীর দিকে রাগী চোখে তাকান। স্ত্রীর চোখের চাহনি দেখে দমে যান তিনি।
আয়েশা সিদ্দিকার দাঁতের দাঁত চেপে বলেন,,

:- কেনো?কিছুদিন পরে সে বাড়ির বউ হবে, আর রান্নাঘর সামলাতে পারবে না কেন? তাছাড়া কয়েকদিন পরে তো তাকেই সাহিত্যের জন্য সব করতে হবে। তাহলে এখন থেকেই না হয় করুক।

আহাদ মির্জা বুঝতে পারলেন তার স্ত্রী তার কথায় তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে ।নিজের কথাই নিজেই যেন ফেঁসে গেছেন তিনি। এখন ক্ষুধা পেটে খাবার আর জুটবে বলে মনে হয় না। স্ত্রী যে তার বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন সেটা ঠিক বুঝতে পারলেন তিনি। করুণ চোখে তাকিয়ে থাকেন।
আয়েশা সিদ্দিকা উঠে গিয়ে স্বামীর সামনে শাড়ির আঁচল ঝাড়া দিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে গুনগুন করতে করতে উপরে চলে যান। আহাদ মির্জা হতভম্ব।স্ত্রীর এমন ব্যবহার মোটেই আশা করেন নি তিনি। তিনি এখন আসন্ন ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। আর কি কি দেখতে হবে ভাবতে কাঁটা দিয়ে ওঠে আহাদ মির্জা। মনে মনে ভাবেন যেমন ছেলেরা তার তেমন মা। এখন এদের বিরুদ্ধে কিভাবে কি করবেন ভাবতে পারেন না তিনি। সন্তর্পনে ঢোক গিলতে থাকেন।

চলবে,,,,