ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-২৯

0
285

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব,,,২৯
মৌমো তিতলী

সাহিত্যের চিৎকারে মির্জা ম্যানশনের সবাই হুড়মুড় করে বেরিয়ে এলো বাইরে। অরুদ্ধ, সিফাত দৌড়ে এলো সাহিত্যের দিকে।
সাহিত্য অরুদ্ধ কে দেখেই চেঁচিয়ে বললো,,,

:- অরুদ্ধ গাড়ি বের কর!! হারিয়াপ!!

অরুদ্ধ কিছু না বুঝে বললো,,

:- সাহিত্য এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো? সুহা কোথায়? আর গাড়ি কেনো বের করতে বলছিস?

সাহিত্য অরুদ্ধের কথা অগ্রাহ্য করে পার্কিংয়ের দিকে ছোটে। লাফ দিয়ে জিপে ওঠে‌। অরুদ্ধ,সিফাতও উঠে বসে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরোতে বেরোতেই বলে,,,

:- আমজাদ তালুকদারের লোকেরা সুহাকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ আগেই। আমারই সামনে থেকে। আমাদের যে করেই হোক ওদেরকে ধরতে হবে অরুদ্ধ।

সুহাকে তুলে নিয়ে গেছে শুনেই আঁতকে ওঠে অরুদ্ধ আর সিফাত। অরুদ্ধ বলে,,

:- কি বলছিস তুই এসব? তুলে নিয়ে গেছে মানে?

:- হ্যাঁ অরুদ্ধ। আমি নিজের চোখে আমজাদ তালুকদারের পালতু কুত্তা শফিক কে ফুলের মুখ চেপে ধরে গাড়িতে তুলতে দেখেছি। আমার ফুল আহত! অরুদ্ধ! কোথায় নিয়ে গেলো ওরা আমার ফুলকে?
বুকের মাঝে হাতুড়ি পেটা করছে সাহিত্যের। গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে রাখা দু হাত থর থর করে কাঁপছে।
অরুদ্ধ বুঝতে পারে বন্ধুর মনের অবস্থা।
গাড়ি থামাতে বলে সাহিত্য কে। বলে,,

:- সাহিত্য তুই গাড়ি থামা। তুই সরে আয়। আমি চালাচ্ছি। তোর মনের অবস্থা এখন স্টেবল নয়। তারপর দেখা যাবে কোন একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুহাসিনীর কাছে পৌঁছাতে হবে।

সাহিত্যও খেয়াল করলো তার শরীর অসম্ভব ভাবে কাঁপছে। অরুদ্ধের কথা যুক্তিযুক্ত মনে হয়। রাস্তার এক পাশে গাড়ি থামিয়ে সরে আসে ড্রাইভিং সিট থেকে। অরুদ্ধ গিয়ে বসে সেখানে। সাহিত্য কয়েকজন সোর্সের কাছে ফোন করে। কয়েকটা ফোন নাম্বার দিয়ে ট্র্যাক করতে বলে।
সুহাকে নিয়ে শফিকের গাড়ি অনেক আগেই দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেছে।
এখন ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করা ছাড়া কোন উপায় নেই। সুহার ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। মেয়েটা ফোন নিয়ে এসেছিলো কিনা মনে করতে পারলো না সাহিত্য।
রেগে গাড়িতে জোরে থাবা দেয় সে। নিজের করা কাজে এখন নিজেরই রাগ হচ্ছে। কি দরকার ছিল এত রাগ দেখানোর! কি দরকার ছিল তার পদ্মফুলকে কষ্ট দেয়ার! এভাবে তাকে কষ্ট না দিলে তো তার ফুল বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতো না। আর না আমজাদ তালুকদারের লোকেরা তাকে তুলে নিয়ে যেতে পারতো।
না জানি তার ফুল কি অবস্থায় আছে। এমনিতেই আহত মেয়েটা। প্রানের স্বস্তি মেলে না সাহিত্যর। অসম্ভব অস্থিরতা ঘিরে ধরেছে তাকে। প্রেয়সী কে হারানোর ভয়ে অন্তর আত্মা কেঁপে কেঁপে উঠছে তার।

একজন সোর্স ফোন করে জানায় আমজাদ তালুকদারের ছেলে আফনানের ফোন ট্র্যাক করা গেছে। শহর থেকে দুলে কোন এক পরিত্যাক্ত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে দেখাচ্ছে লোকেশনটা। সাহিত্যের বুঝতে বাকি থাকে না,, এখানেই নিয়ে গেছে তার পদ্মফুলকে। অরুদ্ধকে জানায় সবটা। অরুদ্ধও যথাসম্ভব দ্রুত ড্রাইভ করতে থাকে।

__________

শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় চোখ খোলে সুহা। নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে যেন,, শ্বাস নিতে এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো ঠাহর করতে আসেপাশে তাকিয়ে সে কোথায় আছে বোঝার চেষ্টা করলো। কিছুক্ষণে নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে শিউরে উঠলো সুহাসিনী। আস্তে আস্তে মনে করার চেষ্টা করলো কি ঘটেছে তার সাথে।
সে এমপি সাহেবের কথায় কষ্ট পেয়ে মির্জা ম্যানশন থেকে বেরিয়ে রাস্তায় আনমনে হেটে আসছিলো। কিছু দূর আসতেই হঠাৎ মনে হলো কেউ পেছন থেকে মুখে কিছু একটা চেপে ধরলো। ছোটার জন্য ছটফট করেও লাভ হয়নি। হুট করে চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে এলো। তারপর আর কিছু মনে নেই।
এখন চোখ খুলে নিজেকে মৃত্যুর দোর গোড়ায় আবিস্কার করে সুহা।
পেছনে হাত দুটো মুচড়ে বাঁধা। মুখটাও বাঁধা। গলায় ফাঁস দিয়ে শক্তপক্ত কোন রশিতে ঝুলন্ত অবস্থায় আছে সে। পায়ের কাছে কিছুর একটা ঠাঁই মিলছে। সেটাও খুব ভালো ভাবে নাগাল পাচ্ছে না সুহা। কোনরকম আঙ্গুলে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে সুহাসিনী। তাও হাত মুখ বাঁধা থাকায় নিজের ব্যালেন্স রাখতে কষ্ট হচ্ছে। এদিকে ওদিকে হেলে পড়ছে, তখনই গলায় ফাঁস আটকে যাচ্ছে আর তাতেই শ্বাস আটকে আসছে সুহার।
একটু এদিক ওদিক হলেই পায়ের কাছে অবস্থিত বস্তুটা সরে যেতে পারে। তাহলেই সাক্ষাৎ মৃত্যু।

সুহা চোখ বুজে নেয়। চোখের সামনে এক এক করে ভেসে ওঠে প্রিয় মানুষদের মুখগুলো। বাবা-মা,ছোট ভাই সুহান,,নিপা,, আর,,আর তার পাষাণ প্রিয়তম যে কিনা কিছু ঘন্টা আগেই জানিয়েছিলো সে আর সুহার মুখ দেখতে চাই না।
হৃদয়ে অবস্থান করা একমাত্র প্রিয় পুরুষ টার বলা বিষাক্ত কথা গুলো মনে পড়তেই চোখের কোণ থেকে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। সুহা আনমনে বিড়বিড় করে,,,

:- আপনাকে আর এই বেইমান মেয়েটার মুখ দেখতে হবে না এমপি সাহেব। আর দেখতে হবে না। কন্ঠ ধরে আসে সুহাসিনীর।
অভিমানী মনে মুখে এক কথা বললেও বেহায়া মন তার এমপি সাহেব কে দেখার তৃষ্ণায় ছটফট করছে। সে কি মরে যাবে এখনই? এমপি সাহেব তো জানতেও পারবে না তার বেইমান তকমা দেয়া ফুল, কারো ষড়যন্ত্রের পায়ে পিষ্ঠ হয়ে ঝরে যাচ্ছে। বুক ফেটে কান্না আসে সুহার।

সেই মুহূর্তেই রুমের দরজা খুলে প্রবেশ করে কয়েকজন। সুহা চোখ ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করে লোকগুলোকে। কিন্তু এদের কাউকেই সে চেনে না।
মনে প্রশ্ন জাগে কারা এরা? এরা কি তার এমপি সাহেবের শত্রু? এমপি সাহেবের ওপরে প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই তাকে তুলে এনেছে? সুহার সাথে তো এদের কোন শত্রুতা নেই।

সুহার প্রশ্নবিদ্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে ব্যঙ্গ করে বলে ওঠে আমজাদ তালুকদার,,,

:- আরে দেখ! ছোকড়া এমপির মাশুকা চোখ খুলেছে।তা মামুনি কেমন লাগছে তোমার নিজেকে ফাঁসির কাষ্ঠে দেখে??

সোহা কিছু বলার জন্য ছটফট করে। মুখ থেকে উমমমম উমমমম শব্দ বের হয়। তা দেখে আমজাদ তালুকদার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। হঠাৎই মুখ শক্ত করে বলে,,,

:- দুঃখিত বাছা! এখানে তোর কোন মতামত জানানোর অপশন নেই। খুব অহংকার না তোর বাপ মোতালেব হোসেনের? আমার একমাত্র ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠালাম, সেটা কিনা পায়ে ঠেলে দিলো? ভালই ভালই বলেছিলাম কিন্তু তোর বাপে সেটা গ্রহণ করেনি। এখন তুই হয় আমার ছেলেকে বিয়ে করবি, নয়তো এই ফাঁসিতে ঝুলে জীবন দিবি। যেটাই করিস তাতেই আমার লাভ। আমার ছেলেকে বিয়ে করলে আমার প্ল্যান সাক্সেসফুল হবে। আর যদি তুই ফাঁসিতে ঝুলে মরিস, তাহলে ওই ছোকরা এমপির ডানা ভাঙবে। মুখ থুবড়ে পড়বে মাটিতে। খুব উড়ছে সে আজকাল।

সুহা ছটফট করতে থাকে। এতক্ষণে সুহা বুঝতে পেরেছে এই লোকটাই সেই জঘন্য আমজাদ তালুকদার। সে তো তার এমপি সাহেব কে অনেকবার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। সে কিছুতেই এই জঘন্য লোকটার ছেলেকে বিয়ে করবে না।

সুহা চোখ ঘুরিয়ে আমজাদ তালুকদারের পাশে দাঁড়ানো ছেলেটার দিকে তাকায়। ছেলেটা কেমন ললুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সুহার দিকে। যেন চোখ দিয়েই পা থেকে মাথা অব্দি স্ক্যান করছে সুহাসিনীকে। ছেলেটার দৃষ্টি দেখেই গা গুলিয়ে ওঠে সুহার‌। ভীষণ অসহায় লাগে নিজেকে। মনে মনে বলে,,
_ আপনি কোথায় এমপি সাহেব!! দেখুন আপনার ফুলের দিকে কুনজর দিচ্ছে এই জঘন্য ছেলেটা। আপনার ফুল মরে যাবে তবুও এই ছেলেটাকে বিয়ে করতে রাজি হবে না।

আফনান ছেলেটার মাথায় মাঝেমধ্যে সমস্যা দেখা দিলেও ছেলেটা জঘন্য রকমের নারী সঙ্গের সাথে জড়িত। বরং যখন তার মাথায় সমস্যা দেখা দেয় তখনই এর প্রবণতাটা বেশি দেখা যায়। যৌন বিকৃত মস্তিষ্কের ছেলে আফনান। চরিত্রহীন পিতার চরিত্রহীন ছেলে। তাকে কোন পশুর সাথে তুলনা করলেও ভুল হবে না। অসংখ্য নারীর সাথে সম্পর্ক তার। এমনকি রেড লাইট এরিয়াতে আফনানকে চেনে না এমন কোন মানুষ নেই। এই যেন যেন সেখানকার প্রধান কাস্টমার। জঘন্য চরিত্রের মাঝে কোন ভালো সিটে ফোঁটা নেই যেনো।
এক পা দু পা করে সুহার সামনে গিয়ে দাঁড়াই আফনান।হাত বাড়িয়ে সুহার কোমরের ভাঁজে ছুঁয়ে দেয়। চোখ দুটো চকচক করছে তার।
এদিকে আফনানের বিষাক্ত ছোঁয়ায় গা গুলিয়ে উঠছে সুহার। হাত দুটো বাঁধা থাকায় অসহায়ের মতো শুধু ছটফট করছে। চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে অবিরত।
আফনানের হাত সুহার কোমর ছেড়ে উপরের দিকে উঠছে,সেটা অনুভব করতেই মুখ দিয়ে ব্যার্থ চিৎকার করছে সুহা। আফনানের এই জঘন্য বিষাক্ত ছোঁয়া গুলো সে কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না ঘৃনা হচ্ছে সুহার। উপায় না পেয়ে এক পা তুলে আফনানের বুক বরাবর দুর্বল লাথি মারে সুহা।
তাতেই যেনো রেগে যায় আফনান। এগিয়ে এসে দুহাতে সুহার কোমর খামচে ধরতে নিতেই কারো প্রচন্ড বেগে লাথিতে ছিটকে গিয়ে পড়ে দুরে।

স্বয়ং এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জা কে দেখে ঘরে উপস্থিত সকলের চক্ষু চড়ক গাছ। সাহিত্য আবারো আফনানের কলার ধরে টেনে তুলে প্রচন্ড রকমের কয়েকটা ঘুসি মারে নাকো বরাবর।
আমজাদ তালুকদার যেন হিংস্র রূপ ধারণ করে সাহিত্য কে দেখে। সে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে সুহার পায়ের কাছের ড্রামটা আঁকড়ে ধরে হিসহিসে গলায় বলে,,,,

:- ওখানেই থেমে যা সাহিত্য। নয় তো এই মুহূর্তেই তোর চোখের সামনেই তোর মাশুকার মৃত্যু হবে।

আমজাদ তালুকদারের কথা কানে আসতেই সেদিকে তাকাই সাহিত্য। সুহাসিনী এর অবস্থান দেখেই পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাই তার।
আসলে সে এই ঘরে ঢুকেই আফনানকে সুহার শরীর ছুঁতে দেখেই রেগে আফনান কে মারতে শুরু করে দিয়েছে। সুহা সেখানে কি অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে তাকানোর সময় পায়নি। এই মুহূর্তে সুহা কে গলায় ফাঁস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আফনানের কলার ধরে রাখা হাতটা আলগা হয়ে আসে।
আফনান সাহিত্যর থেকে হাত ঝাড়া দিয়ে ছুটে এসে নিজের কলার ঠিকঠাক করতে থাকে। বাপের করা কাজে সে ভীষণ খুশি। এইবার বুঝিয়ে দেবে এই ছোকড়া এমপিকে আফনান কি জিনিস।

সাহিত্য আমজাদ তালুকদারকে উদ্দেশ্য করে বলে,,

:- খবরদার তালুকদার! সুহার যদি এতোটুকুও ক্ষতি হয়, তাহলে তোর ছেলে সহ আজ তোকে আমি এই মাটিতে পুতে দেবো আমি।

সাহিত্যর কথায় অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে আমজাদ তালুকদার। হাসতে হাসতে বলে,,,

:- তোর কি মনে হয়, সেটা তুই চাইলেই করতে পারবি? ওখান থেকে তুই এক পা বাড়ালেই আমি এই ড্রামটা এখান থেকে সরিয়ে দেবো। তারপর তোর চোখের সামনেই ছটফট করে মরবে তোর প্রেমিকা।

সাহিত্য আবারো হুংকার দিয়ে বলে,,

:- একদম এটা করার সাহস করিস না তালুকদার। কি চাই তোর? তোর যা চাই আমি সবকিছু তোকে দিয়ে দেবো। তুই চাইলে আমি রাজনীতি থেকে সরে যাবো। এমপি পদ থেকে ইস্তফা দেবো। তবুও সুহাকে ছেড়ে দে। সুহার যদি কোন ক্ষতি হয়, তাহলে তোর আঞ্জাম কিন্তু ভালো হবে না। আমি আবারও বলছি।

আমজাদ তালুকদার ক্রুর হেসে বলে,,,

:-এইতো সোজা পথে এসেছিস। আমার যা চাই সেটা তো আমি আদায় করে নেবো। আর তুই কি রাজনীতি থেকে সরে যাবি, এমপি পদ থেকে ইস্তফা দিবি, তোর মতো কাল সাপকে আমি বিশ্বাস করিনা। আমি জানি এখন তুই তোর প্রেমিকাকে বাঁচানোর জন্য এ কথা বলছিস। কিন্তু তুই কতটা ধুরন্ধর সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। ধূর্ত শিয়ালের মতো চালবাজ তুই।
আমার তোর রাজনীতিও চাই না, তোর এমপি পদও চায় না। আমি চাই তোর মৃত্যু। একমাত্র তোর মৃত্যুই তোর প্রেমিকার জীবন বাঁচাবে।

আমজাদ তালুকদারের কথা শুনে সুহা সাহিত্যের দিকে তাকিয়ে ছটফট করে ওঠে। দুপাশে মাথা নাড়িয়ে প্রাণপণে বোঝানোর চেষ্টা করে,,

:- না না না !!এরকমটা যেন সাহিত্য কখনো না করে। আকুল হয়ে কাঁদতে থাকে সুহা।
সাহিত্যর বুকটা ভেঙে যাচ্ছে। তার পদ্মফুলকে এভাবে অসহায় হয়ে কাঁদতে দেখে তার হৃদয় ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। কত কষ্টই না পাচ্ছে মেয়েটা। পায়ের কাছের ড্রামটার দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতরে মুছড়ে ওঠে সাহিত্যের। পায়ের কাছে অজস্র রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে। আর এই আঘাতটুকু তারই দেয়া। ছলছল চোখে সুহার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় সাহিত্য। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দৃঢ় কন্ঠে বলে,,,

:- আমি রাজি! তোর কথামতো আমি মরতে রাজি আছি। তবুও সুহাসিনীকে ছেড়ে দে।
সাহিত্যর কথা শুনে আরো অসহায় হয়ে ছটফট করে সুহা। দুচোখ অশ্রুতে ভেসে যাচ্ছে মেয়েটার।
সাহিত্য অনড় শক্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। সুহা যেন মৃত্যু যন্ত্রণা এখনই অনুভব করছে। তার জীবনের বিনিময়ে চোখের সামনে তার এমপি সাহেবের মৃত্যু সে কিছুতেই দেখতে পারবেনা। কিছুতেই না। মনে মনে ভাবে,,
_ সত্যিই যদি এমপি সাহেব তাকে বাঁচানোর জন্য জীবন দিতে উদ্যত হয়!! তাহলে সেও ইচ্ছাকৃতভাবে এই ফাঁসিতেই ঝুলে পড়বে। তার এমপি সাহেবকে ছাড়া বেঁচে থাকা কিছুতেই সম্ভব নয় সুহার পক্ষে।

আমজাদ তালুকদার একজনকে ইশারা করলে সে একটা ছোট্ট কাঁচের শিশি এনে আমজাদ তালুকদারের হাতে দেয়। আমজাদ তালুকদার শিশিটা সাহিত্যর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,,,

:-এখনই এই মুহূর্তে এই বিষ পান করে তুই নিজের জীবন বিসর্জন দিবি। তুই মরলেই তোর প্রেমিকাকে ছেড়ে দেবো।

সাহিত্য হাত বাড়িয়ে আমজাদ তালুকদারের হাত থেকে শিশিটা নেয়। তারপর বলে,,

:-আমি মরলে তুই সুহাসিনীকে ছেড়ে দিবি তার কি গ্যারান্টি আছে?? তুই যেমন আমাকে বিশ্বাস করিস না, তেমন আমিও তোকে সিকি পরিমাণও বিশ্বাস করি না। দরকার হলে তুই আমাকে বেঁধে রাখ। তবুও আগে সুহাসিনীকে এখান থেকে নিরাপদে বের হতে দে। তারপর তুই যেটা বলবি আমি সেটাই করবো।

আমজাদ তালুকদার বাঁকা হেসে বলে,,,

:- আমাকে বিশ্বাস করা ছাড়া তোর দ্বিতীয় কোন রাস্তা নেই। তোকে মরতেই হবে। আমি তো বলছি তোর প্রেমিকাকে ছেড়ে দেবো। আর যদি চালাকি করার চেষ্টা করিস, তাহলে এখনই…… বলেই সুহার পায়ের কাছ থেকে ড্রাম টা সরিয়ে নেয় আমজাদ তালুকদার।
শূন্যে ঝুলতে থাকে সুহা। ফাঁস আটকে ছটফট করতে থাকে সুহা।
সাহিত্য হুংকার দিয়ে আমজাদ তালুকদারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে নিলেই পেছন থেকে ঝাপটে ধরে আফনান।
আমজাদ তালুকদার আবারও সুহার পায়ের কাছে ড্রামটা সোজা করে দাঁড় করিয়ে দেয়। পায়ের কাছে ঠাঁই পেয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে হাঁপাতে থাকে সুহা।

সাহিত্য অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় তার পদ্মফুলের দিকে। নিজের হৃদয়হরনী চক্ষু শীতলকারীনি প্রেয়সিকে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখে হৃদয় ভেঙেচুরে তছনছ হয় প্রেমিক পুরুষের। বুকে যেন কেউ অজস্র ধারালো ছুরি চালিয়ে যাচ্ছে। অসহনীয় ব্যথায় বিষিয়ে যায় শরীর।

এদিকে বাবার করা ব্ল্যাকমেইল দেখে হু হা করে হাসতে থাকে আফনান। আফনানের হাসি দেখে সেদিকে তাকাই সাহিত্য। দেখতে পায় হাসতে হাসতেও আফনান কেমন ললুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সুহাসিনী দিকে। সাহিত্য বেশ বুঝতে পারে, সে যদি আমজাদ তালুকদারের কথামতো এই বিষ পান করে নেয়, জীবন দিয়ে দেয়, তবুও আমজাদ তালুকদারের এই চরিত্রহীন ছেলে তার পদ্মফুলকে বাঁচতে দেবে না। মুহূর্তেই সাহিত্যর মাথাটা টগবগিয়ে ফুটে ওঠে। রাগে থরথর করে কেঁপে ওঠে তার সমস্ত কায়া।

চোখের পলকে আফনানের গলা বাঁ হাতে চেপে ধরে ডান হাতে শিশিটার মুখ খুলে আফনানের গলায় পুরোটা বিষ ঢেলে দেয় সাহিত্য। তারপর মুখটা চেপে ধরে রাখে।

এদিকে সাহিত্যর হঠাৎ করা কাজে হতভম্ব সকলে। আফনান নিজেও কিছু করার সময় পাইনা।তার আগেই বিষ চালান হয়ে যায় তার পেটে। বিষের জ্বালায় ছটফট করতে থাকে আফনান।
চোখের সামনে ছেলেকে বিষ পান করে ছটফট করতে দেখে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে আমজাদ তালুকদার। রাগের চোটে চিৎকার দিয়ে লাথি মেরে সরিয়ে দেয় সুহাসিনীর পায়ের কাছের ড্রামটা। আবারো ফাঁসিতে ঝুলে ছটফট করতে থাকে সুহা।
সেদিকে খেয়াল হতেই আফনানকে ছেড়ে সুহার দিকে দৌড়ে যায় সাহিত্য। কিন্তু সুহার কাছে পৌঁছানোর আগেই আমজাদ তালুকদার এসে বাধা দেয়। দুজনের হাতাহাতি শুরু হয়। এত কিছুর মাঝেও সাহিত্যের নজর তার পদ্ম ফুলের দিকে।
ফাঁসিতে ঝুলে ছটফট করছে সুহা। চোখ দুটো যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসবে এখনই। চোখের প্রত্যেকটা রক্তনালি ভেসে উঠে ভয়ংকর দেখাছে তাকে। মুখ দিয়ে অদ্ভুত শব্দ বের হচ্ছে। জিভ বেরিয়ে আসতে চাইছে মুখ থেকে।

সাহিত্য চিৎকার করে বলে,,,

:- ভয় পাসনা পদ্মফুল!! তোর এমপি সাহেব তোকে ঠিক বাঁচিয়ে নেবে।একটু ধৈর্য ধর আমার ফুল। শ্বাস ছেড়ে দিস না জান!! একটুখানি সময় দে আমাকে। আমায় ছেড়ে যাস না জান।
সুহার দুচোখে অশ্রুর বন্যা বয়ে যায়। আস্তে আস্তে নিস্তেজ হতে থাকে শরীর।
সাহিত্য প্রচন্ড বেগে আমজাদ তালুকদার এর পেট বরাবর লাথি দেয়। লাথির চোটে ঘরের এক কোণে ছিটকে গিয়ে পড়ে আমজাদ তালুকদার।
সেই সুযোগেই সাহিত্য গিয়ে শুহার পায়ের নিচে দাঁড়িয়ে সুহার পা দুটো তার কাঁধে ঠাই করে দেয়। বুজে আসা চক্ষু অতি কষ্টে খুলে সুহা ‌‌। অসম্ভব জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে সুহাসিনী। কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না তার শ্বাস নেয়ার সময়।
আমজাদ তালুকদার উঠে দাঁড়িয়ে রুমের এক কোণে অবস্থিত টেবিলের ড্রয়ার থেকে রিভলবার বের করে সাহিত্যর পা বরাবর শুট করে দেয়। বাম পায়ের হাঁটুর নিচ বরাবর ভেদ করে বেরিয়ে যায় গুলি। এক পায়ে গুলি লাগার ফলে চোখ মুখ খিচে কিছুটা বেঁকে যায় সাহিত্য। আবারো সুহা ছটফট করতে থাকে। পায়ে গুলি লাগার ফলে অসহ্য যন্ত্রণা হয়। সাহিত্য না পারছে সোজা হয়ে দাঁড়াতে, আবার না পারছে সুহাকে সামলাতে।

সেই মুহূর্তেই হুড়মুড় করে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে অরুদ্ধ আর সিফাত। তারা এতক্ষন বাইরের লোকেদের সাথে মোকাবেলা করছিলো। কোনমতে সাহিত্যকে ভেতরে ঢোকার রাস্তা করে দিয়ে বাইরেরটা সামলাচ্ছিলো দুজন।

অরুদ্ধ আমজাদ তালুকদার কে ঝাপটে ধরে পেটে একের পর এক ঘুসি মারতে থাকে। ঘুসির চোটে হাত থেকে রিভলবার ছুটে যাই আমজাদ তালুকদারের।
সিফাত দৌড়ে এসে আগলে ধরে সাহিত্য আর সুহাকে। সিফাতের সাহায্যে সুহাকে নামাতে সক্ষম হয় সাহিত্য। এদিকে বাম পা থেকে অধিক হারে রক্তপাত হচ্ছে। পা টা অবশ হয়ে আসছে সাহিত্যর। সিফাত নিজের গায়ের শার্ট খুলে সাহিত্যর পা বেধে দেয়। সাহিত্য সুহাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে আছে। সুহা প্রায় অচেতন।
সাহিত্য এক হাতে সুহার মুখে হালকা চাপড় দিয়ে ডাকে ,,,

:-এই ফুল!! এই জান চোখ খুলে তাকা!! একবার আমার দিকে তাকা না সোনা। এই পদ্মফুল!! একবার এমপি সাহেব বলে ডাকা আমায়।

নিভু নিভু দৃষ্টিতে চোখ খুলে তাকায় সুহা। বিড়বিড় করে কিছু বলার চেষ্টা করে। সাহিত্য সহার মুখটা কানের কাছে ধরে শোনার চেষ্টা করে। অস্ফুট সরে ভেসে আসে,,

:-ভালোবাসি সাহিত্য!! এ পর্যায়ে জ্ঞান হারায় সুহা।

এতক্ষণে আটকে রাখা শ্বাস নেয় সাহিত্য। চোখের জল ছেড়ে দেয় সুহাকে বুকে জড়িয়ে। তার প্রাণভোমরা পদ্মফুলকে মৃত্যু দুয়ার থেকে ফেরাতে পেরে চিৎকার দিয়ে বলে,,,

:- ভালোবাসি আমার আদর। ভালোবাসি আমার পদ্মফুল। ভালোবাসি আমার সুহাসিনী। ভালোবাসি , ভালোবাসি , ভালোবাসি।
পরম আবেশে বুকে জড়িয়ে ধরে সুহাসিনীকে।

এদিকে অরুদ্ধ প্রায় ধরাশায়ী করে ফেলেছে আমজাদ তালুকদার কে। সেদিকে তাকিয়ে সাহিত্য সুহাকে সিফাতের দায়িত্বে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। হাটতে নিলে গুলি লাগা পায়ের ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে। তবুও দৃঢ় পায়ে এগিয়ে যাই আমজাদ তালুকদারের দিকে। বুকে থাবা দিয়ে খামচে ধরে দাঁড় করায় আমজাদ তালুকদার কে।
তারপর টেনে হিচড়ে দাঁড় করিয়ে দেয় সুহাকে ঝুলিয়ে রাখা সেই রশির কাছে। এক হাতে রশিটা ধরে আমজাদ তালুকদারের গলায় পরিয়ে দিয়ে এক টানে ঝুলিয়ে দেয় ফাঁসির কাস্টে। ছটফট করতে থাকে আমজাদ তালুকদার। চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসে। গো গো করে গোঙাতে থাকে। এতক্ষন মার খেয়ে দুর্বল শরীর সহজেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে নিস্তেজ হয়ে যায়। আমজাদ তালুকদারের জিভ বেরিয়ে আসে মুখ থেকে। (আই মিন চ্যাপ্টার ক্লোজ)

_________

হসপিটালের করিডারে চিন্তিত মুখে বসে আছে মির্জা পরিবার। সাথে সুহাসিনীর বাবা মা এবং আরশির বাবা-মাও আছেন ।
একপাশের আইসিইউতে ভর্তি আছে সুহাসিনী। আরেকপাশে ওটি চলছে সাহিত্যর।

(এখন যেন আবার আইসিইউ এবং ওটির ফুল মিনিং জিজ্ঞাসা করবেন না)

অরুদ্ধ আর সিফাতের কাছ থেকে ঘটনা সবটাই শুনেছেন সবাই। কতবড় একটা বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে ছেলে মেয়ে দুটো। ভাবতেই শরীরে কাঁটা দিচ্ছে সবার।

একদিন পর
************

সুহা এখন অনেকটাই সুস্থ। ওদিকে সাহিত্য পা থেকে গুলি বের করা হয়েছে। জ্ঞানও ফিরে এসেছে সাহিত্যর।
হসপিটালের দুটো বিলাসবহুল স্পেশাল কেবিনে রাখা হয়েছে সুহাসিনী এবং সাহিত্যকে।
সাহিত্য থমথমে মুখে নিজের কেবিনে বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে বেডে। আয়েশা সিদ্দিকা ছেলের পাশে বসে ভেজা কাপড় দিয়ে ছেলের মুখ, ঘাড় ,গলা মুছে দিচ্ছেন।

এমন সময় সুহাসিনী এর বাবা মোতালেব হোসেন প্রবেশ করেন সাহিত্যর কেবিনে। মোতালেব হোসেনকে দেখে নড়েচড়ে মাথা নিচু করে বসে সাহিত্য। মোতালেব হোসেন এগিয়ে গিয়ে সাহিত্যর কাঁধে হাত রেখে বলেন,,,

:- এখন কেমন লাগছে বাবা??

মোতালেব হোসেনের কথায় ছলছল চোখে তার দিকে তাকাই সাহিত্য। সাহিত্যর মুখ দেখে উপস্থিত সকলেই চিন্তিত হয়। সাহিত্য মোতালেব হোসেনের দুহাত আঁকড়ে ধরে বলে,,,

:- আপনি সেদিন ঠিকই বলেছিলেন আংকেল। আমি সুহাসিনীর্ যোগ্য নই। আমি সুহাসিনীর জীবনে আসলেই কাঁটার মতো। সেটা আমি কাল খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছি। আমার জন্য সুহাসিনী মরতে মরতে বেঁচে গেছে। আমার সাথে থাকলে হয়তো এভাবেই কষ্ট পেতে থাকবে মেয়েটা। আঙ্কেল আপনি সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। আমার হয়তো ফুলের জীবনে হয়তো থাকা ঠিক হবে না।

সাহিত্যর কথা শুনে অরুদ্ধ ,তিয়াশ সিফাত সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এসব কি আবোল তাবোল বলছে সাহিত্য।
মোতালেব হোসেন সাহিত্যর কথা শুনে হেসে বলেন,,,

:- ফুলকে রক্ষা করতে কাটার প্রয়োজন আছে সাহিত্য।

মোতালেব হোসেনের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকাই সাহিত্য।
মোতালেব হোসেন আবারো বলেন,,,

:- আমি তোমাদের সম্পর্ক কাল রাতেই মেনে নিয়েছিলাম সাহিত্য। সুহা সেই কথাই তোমাকে বলার জন্য বেরিয়েছিলো বাড়ি থেকে। কাল রাতে মেয়েটা নিজেই এসে আমাকে সবটা বলেছিলো। বলেছিলো সে তোমাকে ভালোবাসে। আমাকে বুঝিয়েছিলো এভাবে দূরে সরিয়ে দিয়ে কারো জীবন রক্ষা করা যায় না। আল্লাহ যেখানে যার যেভাবে মৃত্যু লিখে রেখেছেন সেভাবেই তার মৃত্যু হবে। হোক সেটা তোমার শত্রুর হাতে। তবুও সে তোমাকেই চায়। আমি বুঝতে পেরেছিলাম তোমাদের ভালোবাসায় কোনো স্বার্থ নেই, কোন খাদ নেই। তাই আমি সবটা মেনে নিয়েছিলাম সাহিত্য।
আর কাল যা ঘটলো তাতে তো প্রমাণই হয়ে গেলো ,যা কিছুই হয়ে যাক! জীবন দিয়ে হলেও তুমি আমার মেয়েটাকে রক্ষা করবে।
তুমি সুস্থ হয়ে ওঠো। তুমি সুস্থ হয়ে গেলে আমরা সবাই মিলে সুহাকে তোমার হাতে তুলে দেবো বলে ঠিক করেছি।

মোতালেব হোসেনের কথা শুনে সাহিত্যের চোখ থেকে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে । আবারও একবার অনুশোচনায় দগ্ধ হয় বুকের ভেতরে। কাল তার পদ্মফুল কতো খুশি, কতো আনন্দ নিয়েই না তাকে কথাটা জানাতে এসেছিলো। আর সে কিনা ভুল বুঝে তাকে কতটা কষ্ট দিলো। সাহিত্য ধীর স্বরে জিজ্ঞাসা করে,,,

:- সুহাসিনী কেমন আছে আঙ্কেল ??
উপস্থিত সবাই মুখ টিপে হাসে। তাহিরা বেগম মেয়েকে ধরে কেবিনে প্রবেশ করতে করতে বলে,,,

:- সেটা না হয় সুহাসিনীর কাছ থেকেই শুনে নাও তুমি।

সুহাসিনী কে রেখে সকলেই এক এক করে বেরিয়ে যাই কেবিন থেকে। গুটি গুটি পায়ে সুহা এগিয়ে গিয়ে সাহিত্যর পাশে বসে। মুখটা নিচু করে আছে মেয়েটা। সাহিত্য এক হাতে সুহার গাল আলতো করে ধরে উঁচু করে ধরে। সুহার দুচোখ ভর্তি অশ্রু দেখে জিজ্ঞাসা করে,,,

:- কাঁদছিস কেন ফুল?? আমি তো ঠিক আছি । তুই ঠিক আছিস?

সাহিত্যর প্রশ্নে মাথা নাড়িয়ে আরো জোরে ফুঁপিয়ে ওঠে সুহা। কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে যায়। কোনমতে জড়ানো কন্ঠে বলে,,

:- আমার জন্যই আপনার পায়ে গুলি লেগেছে! আমি…

আর কিছু বলতে দেয় না সাহিত্য। সুহার হাত টেনে বসিয়ে দেয় নিজের খুব কাছে। দুহাতে জড়িয়ে নেয় বুকের মাঝে। সাহিত্যর বুকে লেপ্টে যাই সুহা। দুহাতে সাহিত্যকে আঁকড়ে ধরে হু হু করে কেঁদে ওঠে। বিচলিত হয় সাহিত্য। দুহাতে সুহার মুখ আঁকড়ে ধরে বলে,,

:- এই জান! তোকে বলেছি না আমার সামনে এভাবে কাঁদবি না! তোর কান্না আমি সহ্য করতে পারি না। বলেছিলাম না? সুহা কাঁদতে কাঁদতে নাক টেনে বলে,,,

:- ইচ্ছে করে কাঁদিনা তো! এমনি হয়ে যায়।
সুহার কথায় ফিক করে হেসে দেয় সাহিত্য।
তারপর নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকাই সুহাসিনীর দিকে।
এক হাতে সুহাসিনীর কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিয়ে আসে। আরেক হাতে সুহার মুখটা এগিয়ে এনে অধরে অধরে ডুবিয়ে দেয়।
বুকে জমা যন্ত্রণা, কষ্ট সবকিছুর বিসর্জন দিয়ে ধুয়ে মুছে সাফ করে, ভালবাসা দিয়ে ভর্তি করে নেয় দুজনে।

চলবে,,,,,,,,,