ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-৩০ এবং শেষ পর্ব

0
406

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
অন্তিম পর্ব
মৌমো তিতলী

কেটে গেছে দুইটা মাস। সাহিত্য এখন পুরোপুরি সুস্থ। প্রেস মিডিয়ার লোকেরা এসেছে সাহিত্যের সাথে কথা বলতে। সোহরাব সাহিত্য মির্জা একজন দায়িত্বশীল এমপি। তার কিভাবে গুলি লাগলো,সে বেপারে তাদের প্রশ্ন। তার কোন শত্রুর হাত আছে কিনা। আবার একই সময়ে প্রাক্তন এমপি আমজাদ তালুকদার খুন হয়েছে তাই এই বিষয়ে তাদের সন্দেহ রয়েছে। বর্তমান এমপি এবং প্রাক্তন এমপির মাঝেই কোন কিছু ঘটেছিলো কিনা। সাহিত্য ধীরে সুস্থে মিডিয়ার লোকদের জবাব দেয়,,,

:-প্রাক্তন এমপি আমজাদ তালুকদার বিভিন্ন অনৈতিক, অপরাধমূলক কাজের সাথে যুক্ত ছিলো। তেমনি বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি মুলক কাজ, অর্থ আত্মসাত,নারী পাচার, নারীদের দিয়ে অনৈতিক ব্যবসা করানো এমন বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কাজ সাথে যুক্ত ছিলো আমজাদ তালুকদার এবং তার ছেলে আফনান তালুকদার।
এমনই কিছু মেয়েদের পাচার করার খবর শুনে সাহিত্য সেটা আটকাতে গিয়েছিলো। মেয়েগুলোকে বাঁচাতে পারলেও আমজাদ তালুকদারের রিভলবার থেকে গুলি লাগে সাহিত্যর। ঘটনাস্থলে ধরা পড়ার ভয়ে বিষ পান করে আত্মহত্যা করে আমজাদ তালুকদারের ছেলে আফনান তালুকদার। এবং আমজাদ তালুকদারকে পরিস্থিতির খাতিরে মরতে হয়েছে। প্রমাণ হিসেবে আমজাদ তালুকদারের রিভলবার আইনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। যেখানে প্রমাণ হয়েছে ওই রিভলবার থেকেই সাহিত্যের গুলি লেগেছে। এবং রিভলবারেও আমজাদ তালুকদারের হাতের ছাপ পাওয়া গেছে।

প্রত্যেকটা নিউজ চ্যানেলে তরুণ এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জার জয়জয়কার করে নিউজ প্রচার করা হচ্ছে। এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জা তার দায়িত্ব পালনে জীবন বাজি রেখেও পিছুপা হননি। তরুণ এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জা নিজে গুলি লেগে আহত হয়েও অনেকগুলো মেয়েদের জীবন পাচার হওয়া থেকে বাঁচালেন। এমনি রংচং মাখিয়ে নিউজ প্রচার করছে পেপারাজী রা।

মির্জা ম্যানসনের লিভিং রুমে অবস্থিত সকলে মিটিমিটি হাসছে সাহিত্যের উপস্থিত বুদ্ধি দেখে। আজ সকলে সুহাদের বাড়িতে যাবে সাহিত্য আর সুহাসিনীর বিয়ের বেপারে কথা বলতে। তারই তোড়জোড় চলছে মির্জা মেনসনে।

মিডিয়ার লোকদের বিদায় জানিয়ে সাহিত্য নিজের রুমে আসে। বন্ধুরা অনেকক্ষণ ধরে ফোন করে কংগ্রাচুলেট করছে সাহিত্যকে। সব থেকে বেশি জ্বালাচ্ছে অরুদ্ধ আর তিয়াশ। মৃদু হাসে সাহিত্য। আসলেই বন্ধু গুলো ওর জীবনে অনেক মূল্যবান। একেকজন তার জীবনের এক একটা অংশ যেন। গর্ব হয় সাহিত্যের এমন বন্ধুদের পেয়ে।

নিজের রুমে এসে আগে শাওয়ার নেয় সাহিত্য। ওয়াশরুম থেকে চুল মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ায়।
হুট করেই মনে পড়ে সুহার কথা। আজ তাদের বিয়ের ডেট ফাইনাল করা হবে। অদ্ভুত অনুভূতিতে ছেয়ে যায় সাহিত্যের সমস্ত কায়া। হৃদয়ে সুখ সুখ লাগে। আর মাত্র কিছুদিন। তার পরেই তার হৃদয়হরণী পদ্মফুল তার কাছে থাকবে। তার পাশে থাকবে। তার এই শূন্য ঘরে পূর্ণতা নিয়ে আসবে তার প্রেয়সী।
ইসসস!! শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নামে সাহিত্যের। ঠোঁট কামড়ে হাসে সাহিত্য। ভাবে,,,

_আর কিছু দিন পর তার আদরের পদ্মফুল তার বউ হবে। তাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে তাকে মন ভরে আদর করতে পারবে।তাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে পারবে,রোজ ঘুম থেকে উঠে তার স্নিগ্ধ ফুলের মুখটা দেখতে পারবে। আহঃ জান
আই জাস্ট লাভ ইউ বেইবি। আমি কামিং সুন জান। ফোনটা হাতে নিয়ে কল করে সুহার নাম্বারে। দু’বার রিং হয়ে কেটে যায়। তৃতীয় বার রিং হতেই রিসিভ হয় তা।

:- হ্যালো!

:- কি করছিলি এতোক্ষণ? ফোন ধরছিলি না কেন?

সাহিত্যের গলা পেয়ে ফোনের দিকে তাকায় সুহা। হ্যাঁ তার এমপি সাহেবই কল করেছে। ওড়নার মুড়োয় গলার ঘাম মুছে আবারো ফোনটা কানে ধরে সুহা। ওপাশ থেকে আবার একই প্রশ্ন ভেসে আসে।জবাব দেয় সুহা,,,

:- মায়ের সাথে কিচেনে ছিলাম। ঘরে আসতে আসতে কেটে গেছে ফোন। সরি!

হাসে সাহিত্য।বলে,,,

:- সরি বলতে হবে না জান! এতো তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। আন্টিকে বল ধীরে সুস্থে সবকিছু করতে।

সাহিত্যের আদরমাখা কন্ঠে লজ্জায় লাল নীল হয় সুহা। এই লোকটার সাথে কথা বলতে গেলেই সুহার অবস্থা নাজুক হয়। এতো আদর করে কথা বলে যে তার এমপি সাহেব।সুহা মিন মিন করে বলে,,,

:- কখন বের হবেন আপনারা??

:- আসবো জান। এইতো রেডি হচ্ছি। ১ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাবো। তুই এখন আর কোন কাজ করতে যাসনা। গোসল করে নিবি এখনি। মনে থাকবে?

:- হুম! রাখছি তবে।

বাঁধা দেয় সাহিত্য,,,

:- রাখছি মানে?? লাস্ট সেন্টেন্স টা কে বলবে??

লজ্জায় আরো মিইয়ে যায় মেয়েটা। এতো লজ্জা দেয় কেনো এই মানুষটা!! সুহা নিজেকে সামলে কন্ঠ একেবারে খাদে এনে মিনমিন করে বলে,,

:- ভা.. ভালোবাসি এমপি সাহেব!!

অন্তরে প্রশান্তির বাতাস বয় সাহিত্যের। ঠোঁট চেপে হেসে দেয়,,,নিজেও বলে,,,

:- ভালোবাসি আমার পদ্মফুল। ভালোবাসি জান।
ফোন রাখে সাহিত্য। এতো লজ্জা পায় তার দুষ্টু প্রেয়সী। মেয়েটা তার কাছে এলে লজ্জা পাওয়ার সময় দেবে না তার এমপি সাহেব। নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিবে মেয়েটাকে।

নিজেকে পরিপাটি করে,রেডি হয়ে নিচে নামে সাহিত্য।সকলেই রেডি হয়ে নিচে অপেক্ষা করছিলো সাহিত্যের জন্য। সাহিত্য আসলেই সবাই বেরিয়ে পড়ে মোতালেব হোসেনের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

___________

মোতালেব হোসেন সহধর্মিনীকে এটা ওটা গোছাতে সাহায্য করে। মির্জা পরিবারের সকলে আসছে যে। মোতালেব হোসেনের মুখে প্রশান্তির হাসি। তাহিরা বেগম তা খেয়াল করে বলেন,,

:- কি ব্যাপার তোমার মুখে যে আজ হাসি সরছেই না।!

ঠোট প্রশস্ত হয় মোতালেব হোসেনের। তিনি হেসে জবাব দেন,,,

:- তুমি ভাবতে পারছো সুহার আম্মা! আমাদের মেয়েটার নাকি বিয়ে হবে! সেদিনের সেই ছোট্ট সুহাসিনী কত বড় হয়ে গেছে চোখের পলকে। আজ তার বিয়ের দিন পাকা হবে।

স্বামীর কথা শুনে খুশি হওয়ার পাশাপাশি বুকের মধ্যে মুচড়ে ওঠে তাহিরা বেগমের। মেয়েটা তাদের বড্ড আদরের। বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে চলে গেলে, বাড়িটা বড্ড ফাঁকা হয়ে যাবে যে।
স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে মনের কথা বুঝতে পারেন মোতালেব হোসেন। স্ত্রীকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলেন,,

:-কি চিন্তা করছো সুহার আম্মা? মেয়েটা আমাদের রাজ কপাল নিয়ে জন্মেছে। যে বাড়িতে যাচ্ছে সে বাড়িতে প্রত্যেকটা মানুষ ওকে মাথায় করে রাখবে। সে প্রমাণ তো আমরা পেয়েছি বলো? মেয়েটা আমাদের ভালো থাকবে। সাহিত্য ওকে সারা জীবন ভালোবেসে আগলে রাখবে। এর থেকে বড় সুখের আর কি আছে আমাদের বলতো?? কষ্ট পেয়ো না। মেয়ের সুখেই তো আমাদের সুখ।

তাহিরা বেগম স্বামীর কথায় স্মিত হাসেন। নিজেকে সামলে নিয়ে শাড়ির আঁচলে আলগোছে চোখ মোছেন। সবকিছু রেডি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দুজনে।
ছোট্ট সুহান এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে। আজ তার বোনের বিয়ে ঠিক হবে, সেই খুশিতেই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে সুহান।

***********
প্রায় এক ঘন্টা 10 মিনিট বাদে মির্জা পরিবার এসে পৌঁছায় সুহাদের বাড়িতে। মোতালেব হোসেন এবং তাহিরা বেগম তাদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আরশি শাশুড়ি এবং তাহিরা বেগমকে বলে সুহার কাছে চলে আসে।
সুহার রুমে এসে সুহা আর নিপাকে দেখতে পাই আরশি। সুহাকে একটা লাল রঙের জামদানী শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে নিপা। অসম্ভব সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। আরশি গিয়ে সুহাকে জড়িয়ে ধরে। অভিনন্দন জানায় নতুন জীবনের জন্য। হেসে বলে,,,

:- বাহ সুহাসিনী তোমাকে কি সুন্দর লাগছে দেখতে!! আজ তো মনে হয় আমার দেবর মশাই অজ্ঞানই হয়ে যাবে।

আরশির ইয়ার্কি করা কথায় লজ্জায় রক্তিম হয় সুহার মুখ। তা দেখে মিটিমিটি হাসে আরশি আর নিপা।

কিছুক্ষণ বাদেই সুহাকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে যেতে ডাক পড়ে। আরশি আর নিপা সুহাকে নিয়ে আসে সকলের সামনে।

সাহিত্য অপলকে তাকিয়ে আছে তার পদ্মফুলের দিকে। অনুভব করে তার হৃদস্পন্দন বেড়েছে দ্বিগুণ। আড়ালে ঢোক গেলে সাহিত্য। মেয়েটাকে আজ এতো সর্বনাশী, বিধ্বংসী লাগছে কেন?? লাল শাড়িতে তার রুপের রানি প্রেয়সীকে দেখে চোখ সরাতে ব্যর্থ এমপি সাহেব।

ছেলেকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কনুই দিয়ে খোঁচা মারেন আহাদ মির্জা। ফিসফিস করে বলেন,,,

:- চোখ নামা বাপ!! এই বয়সে আমাকে নির্লজ্জ এমপির বাপ বানাস না।
বাবার কথায় সাহিত্য একটুও লজ্জা না পেয়ে বাবার মতো করেই ফিসফিস করে বলে,,

:- আমি আমার বউকে দেখছি তোমার এত জ্বলছে কেন?? আমি কি তোমার বউকে দেখছি নাকি??

আহাদ মির্জা মনে মনে কপাল চাপড়ান। নির্লজ্জ এমপির বাপ তিনি হয়েই বসেছেন। নতুন করে আর কি হবেন। অগত্যা ঘট হয়ে বসে থাকলেন তিনি।

আয়েশা সিদ্দিকা ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করে। সেখান থেকে একটা হিরের আংটি নিয়ে পরিয়ে দেন সুহার হাতের সাহাদাত আঙ্গুলে। আস্তে করে বলেন,, অনামিকা টা আমার ছেলের জন্য রেখে দিলাম। লজ্জায় আরো মুখ নত হয় সুহার। আহাদ মির্জা একটা স্বর্নের চেইন পরিয়ে দেয় সুহাকে। আরশিও সাহিত্যের বড় ভাইয়ের হয়ে দুটো সোনার বালা পরিয়ে দেয় সুহার হাতে। মেহরাবের ফিরতে এখনো একমাস বাকি।

এক সপ্তাহ পরেই সাহিত্য আর সুহাসিনীর বিয়ের দিন ঠিক করতে বলে সাহিত্য। এর বেশি সময় দিতে রাজি নয় সে। বিয়ে যখন করতেই হবে শুভ কাজে দেরি করতে একেবারেই নারাজ এমপি সাহেব। সরাসরি এভাবে সবার মাঝে প্রস্তাব রাখে সাহিত্য। সাহিত্যের নির্লজ্জ কথাবার্তায় লজ্জায় কুঁকড়ে যায় সুহাসিনী। সবাই মিটিমিটি হাসতে থাকে। সবদিক থেকে আলাপ-আলোচনা করে সাহিত্যর প্রস্তাবই গ্রহণ করে সকলে। এক সপ্তাহ পরেই বিয়ে সাহিত্য এবং সুহাসিনীর।

__________

💛আজ সাহিত্য সুহাসিনীর গায়ে হলুদ 💛

মির্জা বাড়িতে সকলেই খুবই ব্যস্ত। এরই মাঝে নিজের রুমে বিছানায় প্রেগনেন্সি কিট হাতে থম মেরে বসে আছে আরশি। মেহরাব বাড়িতে নেই দুই মাস সাত দিন হতে চললো। মেহরাব যাওয়ার পরেই পরপর দুই মাসেই পিরিয়ড মিস গেছে আরশির। তাছাড়া কয়েকদিনের দুর্বলতার কারণে ঠিক এরকম কোন কিছুই আশঙ্কা করেছিলো আরশি।
প্রেগনেন্সি কিটে জ্বলজ্বল করছে টু পিংক লাইন। অর্থাৎ প্রিয়তম স্বামী মেহরাবের সন্তানের মা হতে চলেছে আরশি।
অতি খুশি আর উত্তেজনা থম মেরে আছে মেয়েটা। সবার আগে খবরটা কাকে দেবে? সেটাই ভেবে পেল না সে। আস্তে আস্তে উঠে গিয়ে শাশুড়িকে খুঁজতে থাকে আরশি।

আয়েশা সিদ্দিকা সেই সময় রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে কাজের লোকেদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। আরশিকে দুর্বল পায়ে হেটে আসতে দেখে সেদিকে এগিয়ে গেলেন আয়েশা সিদ্দিকা। মেয়েটার মুখটা একটু শুকনো শুকনো লাগছেনা?? আয়েশা সিদ্দিকা আরশিকে দুহাতে জড়িয়ে কাছে এনে বললেন,,,

:- কি হয়েছে বড় বৌমা?? মুখটা এমন শুকনো লাগছে! শরীর খারাপ তোমার?? দেখো এত কাজের মধ্যে তোমার দিকে একটু নজর দিতে পারিনি! ছেলেটা আমার বাড়িতে নেই, সেই সুযোগে নিজের শরীরের ওপরে অবহেলা করছো তুমি??

শাশুড়ির কথা শুনে হেসে ফেলে আরশি। বলে ,,,

:-আম্মা আপনি চিন্তা করবেন না। আমি ঠিক আছি। তবে আপনাকে একটা কথা জানানোর ছিলো ।

বড় বৌমার কথায় আয়েশা সিদ্দিকার কপালে ভাঁজ পড়ে। চিন্তিত গলায় বলেন,,

:-কি হয়েছে বড় বৌমা?
আরশি শাশুড়িকে টেনে এক পাশে নিয়ে গিয়ে হাতের মুঠোয় ধরা প্রেগনেন্সি কিটটা সামনে মেলে ধরে।

আয়েশা সিদ্দিকা কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে খুশিতে চিৎকার করে আরশিকে জড়িয়ে ধরে বলেন ,,

:-সত্যি নাকি বৌমা?? আমি তাহলে দাদী হাতে চলেছি?? আমার বড় খোকা বাবা হতে চলেছে?

মাথা নাড়ে আরশি। আয়েশা সিদ্দিকা দৌড়ে লিভিং রুমে গিয়ে সবাইকে ডাকেন। আহাদ মির্জা, সাহিত্য, অরুদ্ধ, তিয়াশ সিফাত, বাড়ির অন্যান্য কর্মচারীরা সকলেই উপস্থিত রয়েছে সেখানে। আয়েশা সিদ্দিকা সকলকে খুশির খবরটা জানিয়ে দেন। ডাবল খুশিতে মির্জা বাড়ি ঝলমল করে ওঠে আহাদ মির্জা বড় বৌমাকে অনেক দোয়া আশীর্বাদ দেন। সাহিত্যও ভীষণ খুশি চাচু হওয়ার খবরে। মন থেকে দোয়া করে বড় ভাইয়া এবং ভাবীর জন্য। আয়েশা সিদ্দিকা সাথে সাথে আরশিকে জানিয়ে দেন,,

_ এখন থেকে কোন কাজ করা চলবে না আরশির। নিজের খেয়াল রাখতে হবে সব সময়। বড় খোকা শুনলে কতটা খুশি হবে সেই এক্সাইটমেন্টেই গদগদ আয়েশা সিদ্দিকা । এক নিমিষেই যেন কয়েক বছর বয়স কমে গেছে তার। খুশিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।

আরশি দুচোখ ভরে দেখে নিজের ভরা সুখের সংসার। অতি খুশিতে চোখের কোনে জল জমে মেয়েটার। মনে মনে প্রিয়তম স্বামীর অভাব অনুভব করে। আনমনে বিড়বিড় করে বলে,, আপনি কবে ফিরবেন স্যার? আপনাকে বড্ড মিস করছি আমি আর আপনার সন্তান। আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি ফিরে আসুন! আপনাকে যে অনেক ধন্যবাদ দেয়ার আছে। এত সুখের একটা সংসার উপহার দেয়ার জন্য!

______
সন্ধ্যায় সাহিত্যের বন্ধুরা সবাই মিলে হলুদের তত্ত্ব নিয়ে যায় সুহাদের বাড়িতে। সুহাদের বাড়িতেও হলুদের রমরমা আয়োজন। মোতালেব হোসেন একমাত্র মেয়ের বিয়ের কোন কমতিই রাখছেন না।

সুহা হলুদের সাজে নিজের ঘরেই বসে আছে।অপেক্ষা করছে নিপার জন্য । নিপা নিজে এসে তাকে নিয়ে যাবে বলে গেছে। মেয়েটা অনেক খাটছে প্রিয় বান্ধবীর বিয়েতে।

এমন সময় রুমের লাইট চলে যায়। হুট করে লোডশেডিং হওয়ায় কপাল কুঁচকে যায় সুহার। ব্যালকনি থেকে আলোর আবছা রশ্মি ভেসে আসছে তার রুমে। সুহা উঁকি দিয়ে দেখে আশেপাশে প্রত্যেকটা বাড়িতেই আলো জ্বলছে, শুধু তাদের বাড়িতেই অন্ধকার। ব্যাপারটায় বেশ অদ্ভুত লাগে সুহার কাছে। ব্যালকনি থেকে রুমে ঢুকতে গিয়েই অনুভব করে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে তার রুমে। আতঙ্কে ঢোক দিলে সুহা। চিৎকার করতে নিলেই কেউ একজন এসে কোমর জড়িয়ে ধরে মুখ চেপে ধরে তার। অজ্ঞাত ব্যক্তির স্পর্শে শিউরে ওঠে সুহা।
একে তো রুমে অন্ধকার। তার উপরে কোন পুরুষ মানুষ এত নিবিড় ভাবে তাকে জড়িয়ে ধরেছে। ভাবতেই কেঁপে ওঠে সে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই মনে হয় অজ্ঞাত ব্যক্তির থেকে যে স্মেলটা আসছে সেটা তার ভীষণ পরিচিত। লোকটা মুখ চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে সুহার। তবুও সুহা নাক টেনে শ্বাস নেয়। এবার অজ্ঞাত ব্যক্তির থেকে আসা স্মেলটা চিনতে পারে সুহা। মুহুর্তেই তার ছটফটানি বন্ধ হয়ে যায়। সুহা স্থির হয়ে দাঁড়াতেই মুখ থেকে হাত সরাই সাহিত্য।
পরপর দম নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে সুহা। কপোট রাগ দেখিয়ে বলে,,,

:- এভাবে কেউ মুখ চেপে ধরে?? অন্ধকারে ভয় পেয়েছি না?? এক মিনিট এই লোডশেডিং হওয়ার ব্যাপারটা আপনার কারসাজি তাইনা??

সাহিত্য হেসে সুহা কে আরও নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,,,

:- হ্যাঁ তোহ!!!

:- তো মানে?? আপনি এখানে কি করছেন ?? আজ না আমাদের গায়ে হলুদ? আপনি কি করে এলেন এখানে??

সাহিত্য সুহাকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে ফিসফিস করে বলে,,,

:- জানি তো আজ আমাদের গায়ে হলুদ!! সেই জন্যই তো আজ আমি এখানে। আমার আগে আমার পদ্মফুলকে কেউ হলুদ ছোঁয়াতে পারবে নাকি?? তোর এমপি সাহেব সেটা হতে দেবে ভেবেছিস??

:-আপনি…..

সাহিত্য আর কিছু বলতে দেয় না সুহাসিনীকে। ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে বলে,,

:-শশশ! কোন কথা নয় আগে আমি যেটা করতে এসেছি, সেটা করতে দে।

বলেই পাঞ্জাবির পকেট থেকে ছোট্ট একটা প্লাস্টিকের প্যাকেট বের করে তা থেকে কিছুটা হলুদ বের করে, আলতো হাতে সুহার গালে ছুঁইয়ে দেয়। আবেশে চোখ বন্ধ করে সুহা। নিজেও কিছুটা হলুদ সাহিত্যের গালে ছোঁয়াতে নিলে মাথা পেছনে সরিয়ে নেয় সাহিত্য। কপাল কুঁচকে সাহিত্যের দিকে তাকায় সুহা। সাহিত্য দুহাতে সুহার কোমর জড়িয়ে আরো কাছে টেনে আনে। তারপর আস্তে আস্তে নিজের গাল আলতো করে সুহার হলুদ মাখা গালে ছুঁইয়ে দেয়।
সাহিত্যের গালের ট্রিম করা খোঁচা খোঁচা দাড়ির ছোঁয়ায় শিউরে ওঠে সুহা। সাহিত্যের বুকের কাছে পাঞ্জাবি খামচে ধরে। সাহিত্য সুহার কপালে কপাল ঠেকিয়ে ধীরস্বরে বলে,,

:- আই লাভ ইউ সুহাসিনী। কপালে অধর ছুঁয়ে দেয় মেয়েটার।
আবেশে চোখ বন্ধ সুহার। ব্যালকনি থেকে আসা মৃদু আলোয় প্রেয়সীকে দুচোখ ভরে দেখে সাহিত্য। হলুদের সাজে যেন অপ্সরী মেয়েটা। গোলাপ রজনীগন্ধার গহনায় আরো মহোনীয় লাগছে তাকে। ঘন পাপড়ির আবরণে ঢাকা তার পদ্মফুলের দুচোখ। তিরতি্র করে কাঁপতে থাকা গোলাপী ঠোঁট দুটো চম্বুকের মতো আকর্ষণ করছে সাহিত্য কে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে না সাহিত্য। প্রেয়সীর অধর নিজ দখলে নিয়ে নেয় চোখের পলকে।

__________

❤️আজ সাহিত্য সুহাসিনীর বিয়ে❤️

মির্জা ম্যানসনে বিয়ের ধুম। প্রেস মিডিয়াতেও ব্রেকিং নিউজ প্রচার করা হচ্ছে। বিয়ে করছেন তরুণ এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জা। ফুলে ফুলে মোড়ানো পুরো মির্জা ম্যানশন।

আরশি নিজের রুমে তৈরি হচ্ছিলো। এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন আদরে জড়িয়ে ধরলো। পেটের ওপর কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শে শিউরে ওঠে আরশি। চোখ তুলে তাকায় সামনের ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়। মেহরাব কে তার ঘাড়ে মুখ গুজে থাকতে দেখে অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেছে আরশি। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে বাঁধা দেয় মেহরাব।
আরশি কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞাসা করে,,,

:-আপনি কখন এলেন মেহরাব? আপনার তো আরো কিছুদিন পরে আসার কথা ছিলো।

আরশির ঘাড় থেকে মুখ তুলে আরশিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বুকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে মেহরাব। বলে,,,

:- আমার একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে, আর তার উপরে এমন একটা খুশির সংবাদ শুনে আমি কি করে দূরে থাকি বলো??

লজ্জায় লাল হয়ে আরশি। মেহরাব দুচোখ ভরে দেখে সহধর্মিনীর সেই লজ্জা রাঙা রূপ। পরপর কপালে অধর ছুঁইয়ে আরশির ঠোঁট দুটোও নিজের দখলে নিয়ে নেয় মেহরাব। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে আবেশে জড়িয়ে ধরে বলে,,,

:- ধন্যবাদ আমাকে বাবা হওয়ার এতোটা খুশি উপহার দেয়ার জন্য!! অনেক ধন্যবাদ তোমাকে আমার জীবনে এসে জীবনটা পরিপূর্ণ করার জন্য আরশি।

আরশিও মেহেরাবকে জড়িয়ে ধরে বলে,,

:-আপনাকেও ধন্যবাদ! আমাকে এত সুখ আর সুখের সংসার উপহার দেয়ার জন্য। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসা বিনিময় করে নেয় নিজেদের মধ্যে।

________

খুবই জাঁকজমক এবং নির্বিঘ্নে সাহিত্য আর সুহাসিনীর বিয়েটা হয়ে যায়।
কাজী সাহেব কবুল বলতে বললে, সাহিত্য এতটুকুও সময় নেয় না কবুল বলতে। এটা নিয়েও বন্ধুরা সবাই হাসাহাসি করে লেগপুল করতে ছাড়ে না সাহিত্যকে।
সুহাসিনী কে কবুল বলতে বললে, সেও ধীরেসুস্তে নিজেকে ধাতস্থ করে তিন কবুলের মাধ্যমে তার এমপি সাহেবের নামে চিরতরের নিজেকে আবদ্ধ করে নেয়।
মুহূর্তেই “আলহামদুলিল্লাহ” শব্দে মুখরিত হয় জায়গাটা।

এবারেও বিয়ে, বিদায় সবকিছু শেষ হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। নতুন বউকে নিয়ে মীর্জা মেনসনে পৌঁছাতে হয় রাত।
বিয়ের সমস্ত রিচুয়াল মেনে বধূবরণ করে নেন আয়েশা সিদ্দিকা। বিয়ের নিয়মকানুন সবকিছু শেষ করে আরশি সুহাসিনীকে সাহিত্যর ঘরে বসিয়ে দিয়ে আসে।

পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে অবাক হয় সুহা। এর আগে যতবার সাহিত্যের ঘরে এসেছে, ততবারই শুধু সাদা রঙই চোখে পড়েছে তার। কিন্তু আজ সম্পূর্ণ ঘরটা সাদা আর হালকা গোলাপি রঙে সেজেছে। পুরো ঘরটা সাদা গোলাপি পদ্মফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। ফ্লাওয়ার ভাসে কিছু সাদা রজনীগন্ধা ফুলও আছে। সেখান থেকে সুন্দর স্মেল পুরো ঘরটাকে মুখরিত করে রেখেছে। ঘরের কোনায় কোনায় বিভিন্ন রঙিন মোমবাতি ঝিকিমিকি করে জ্বলছে।
সুহা ঘুরে ঘুরে পুরো ঘর টাক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে। এমন সময় দরজা বন্ধ করার শব্দে কেঁপে ওঠে সুহা। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পায় দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে তার দিকেই অপলকে তাকিয়ে আছে সাহিত্য। দারুন লজ্জা,ভয়, আর উত্তেজনায় জবুথবু হয়ে আছে সুহা। অস্ফুট স্বরে সালাম দেয় সাহিত্য কে। সাহিত্য সালামের জবাব দিয়ে সুহার দিকে তাকিয়ে থেকেই এগিয়ে আসে সুহাসিনীর দিকে।

সাহিত্য কে এগিয়ে আসতে দেখে নড়েচড়ে দাঁড়ায় সুহা। চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু সাহিত্য সুহাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যায়। হতভম্ব হয়ে সুহা। এটা কি হলো??
সুহাও পেছনে তাকিয়ে সাহিত্য কে দেখে। আলমারি থেকে কিছু একটা বের করে সুহাসিনীর দিকে এগিয়ে আসে সাহিত্য। একটা মোটা ইনভেলাপ এগিয়ে দেয় সুহার দিকে। জানায় এটা তার দেনমোহরের টাকা। সুহাও সেটা নিয়ে আবারো আলমারিতে তুলে রাখে। সাহিত্য সুহাকে চেঞ্জ করে নিতে বলে। সুহা একটা পাতলা সাদা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। সুহা ওয়াশরুমে ঢুকে যেতেই লম্বা করে শ্বাস নেয় সাহিত্য। এতক্ষণে দম আটকে দাঁড়িয়ে ছিলো ছেলেটা। লম্বা করে শ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,,,

:-কন্ট্রোল!! কন্ট্রোল ইওর সেল্ফ সাহিত্য!! মেয়েটা এখন তোর। কিছুটা সময় কন্ট্রোল কর নিজেকে।

কিছুক্ষণ পর সুহা বেরিয়ে আসে ওয়াশরুম থেকে। ততক্ষণে সাহিত্যও চেঞ্জ করে নিয়েছে।
সুহার দিকে তাকাতেই চোখ বড়বড় হয়ে যায় সাহিত্যের। এই নাকি সে কন্ট্রোল করছিলো নিজেকে। শেষ করে দিলো! মেয়েটা তাকে একেবারে শেষ করেই ছাড়লো! সাদা পাতলা শাড়িটা সুহার ভেজা শরীরে আঁটসাঁট হয়ে লেপ্টে আছে। সুহার দেহের প্রতিটা ভাঁজ সাহিত্যের চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে আছে। ঢোক গেলে সাহিত্য। সুহার কোমর ছড়ানো কোঁকড়ানো চুল গুলো দিয়ে টুপ টুপ করে জল ঝরে পড়ছে মেঝেতে। সাহিত্য ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। শরীরের প্রতিটি কোষে পুরুষালী অনুভূতিতে ছেয়ে যায় এমপি সাহেবের। শিউরে ওঠে সাহিত্যে।

সাহিত্য এক পা দু পা করে এগিয়ে যায় সুহাসিনীর দিকে। হুট করেই হ্যাঁচকা টানে কাছে নিয়ে আসে‌ সুহাকে।
আচমকা টানে সাহিত্যের বুকের উপর আছড়ে পড়ে সুহা। আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে সাহিত্যকে। সুহা অনুভব করে সাহিত্যর পুরো শরীর থরথর কাঁপছে। নতুন এক চাহিদা উন্মাদনা সাহিত্যর চোখ জুড়ে অনুভব করে সুহাসিনী। শরীরে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায় তার। সাহিত্যকে আঁকড়ে ধরে সুহা। সুহার স্পর্শে আরো এলোমেলো হয় সাহিত্য। সুহা কে নিজের সাথে আটকে ধরে ঠোঁটে ঠোট ডুবিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে বিভোর হয় প্রিয়সীর অধরের ভাঁজে। আবেশে শুষে নিতে থাকে সকল তৃষ্ণা।
অনেকক্ষণ পরে সুহার ঠোঁট ছাড়ে সাহিত্য। নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে পিচের কন্ঠে বলে,,,

:- আই ওয়ান্ট ইউ ফুল!! আই ওয়ান্ট ইউ ফুললি!!

সাহিত্যের আবদারে অদ্ভুত অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয় সুহা। ঢোক গেলে সুহা। সাহিত্যের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় নেশাক্ত দুটো চোখ।সাহিত্যের উত্তেজনায় নিভু নিভু দৃষ্টিতে এলোমেলো হয় সুহা। হালাল প্রিয়তমর অধিকার, চাহিদা ,উন্মাদনা বোঝে সুহাসিনী। তবুও গলা দিয়ে শব্দ বের হতে চাই না যেন। মুখ ফুটে কিছু বলতে নিতেই বাঁধা দেয় সাহিত্য। অস্থির কন্ঠে অস্ফুট স্বরে বলে,,,

:- প্লিজ!! না করিস না জান!!

সুহা আর কিছু না বলে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে তার প্রিয়তম স্বামী সাহিত্য কে। সাহিত্যও সুহার সম্মতি বুঝে নেয়। এক ঝটকায় সুহাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় সুহাকে। নিজেও সুহার ওপরেই শুয়ে পড়ে। আবারো ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। আস্তে আস্তে গভীর হয় সাহিত্যের স্পর্শ। হারিয়ে যেতে থাকে তার ফুলের শরীরের প্রতিটি ভাঁজে। উন্মাদ হয় প্রেয়সীর প্রেম সমুদ্রে ডুবে।

__________

৮ বছর পর
************

আজ সোহরাব সাহিত্য মির্জা শিক্ষা মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন। চারিদিকে প্রেস মিডিয়ার লোকেরা নিউজ কভার করতে ব্যস্ত। মঞ্চে আসন গ্রহণ করে বসে আছেন অন্যান্য এমপি, মন্ত্রী সদস্যরা। সকলের সামনের দিকে বসে আছে সোহরাব সাহিত্য মির্জা। সাদা পাজামা পাঞ্জাবী আর ওপরে ব্লু কালারের কোট পরিধান করেছে সাহিত্য। ছত্রিশ বছর বয়সেও যেন নিজের সৌন্দর্য এতটুকুও কমেনি সাহিত্যর। তার ডান পাশে পরপর দুটো চেয়ারে বসে আছে বর্তমান সময়কার দুজন এমপি, তিয়াশ হালদার এবং সিফাত শেখ। তারাও বিয়ে করেছে। তিয়াশ বিয়ে করেছে আরশির বান্ধবী লাবণ্যকে। বর্তমান এক ছেলে আর এক মেয়ের পিতা তিয়াশ।আর সিফাত পরবর্তীতে পারিবারিকভাবে বিয়ে করে রুপা নামের একটা মেয়েকে। বর্তমান তার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা। সাহিত্যর বাম পাশের চেয়ারে সম্পূর্ণ সাহিত্যর মত ড্রেসাপে বসে আছে, আট বছর বয়সি একটা ফুটফুটে সুদর্শন ছেলে। দেখতে পুরোটাই আরশির মুখের আদল হলেও স্বভাবে সম্পূর্ণ সাহিত্য মির্জার কার্বনকপি। হ্যাঁ ছেলেটা আরশির আর মেহেরাবের একমাত্র ছেলে তন্ময় তূর্ণ মির্জা। চাচ্চুর একমাত্র আদরের ভাইপো! যার রাজনীতিতে রয়েছে প্রবল ঝোঁক। এই বয়সেই তাকে সকল মিটিং এবং সমাজ সেবামূলক কাজে মন্ত্রী চাচ্চুর পাশে দেখা যায়। জনগণ তাকে নিয়ে ভীষণ আশাবাদী। মির্জা পরিবারের পরবর্তী যোগ্য রাজনৈতিক নেতা যে তন্ময় পূর্ণ মির্জা, তার সন্দেহের অবকাশ থাকে না কারো।

সামনে উপস্থিত দর্শক সারিতে সকলের সামনের সারিতে বসে আছেন পুরো মির্জা পরিবার। আহাদ মির্জা আয়েশা সিদ্দিকার বয়স বেড়েছেন। আয়েশা সিদ্দিকার পাশের চেয়ারে দু বছরের কন্যা ফিয়ানা মির্জা তুশি কে কোলে নিয়ে বসে আছে সুহাসিনী। সোহরাব সাহিত্য মির্জার সেই ছোট্ট পদ্মফুল সুহাসিনী এখন পূর্ণাঙ্গ নারী, এক কন্যা সন্তানের মা। তার পাশেই বসে আছে মেহরাব আর আরশি। তাদের ডান দিকের চেয়ারে বসে আছে অরুদ্ধ এবং তার সহধর্মিনী নিপা। নিপার কোলে তিন বছরের ছেলে সন্তান।নাম আবরণ। চার বছর আগেই তাদের বিয়ে হয়েছে। অরুদ্ধ বর্তমান একজন সফল বিজনেসম্যান।

সকলেই মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে শিক্ষা মন্ত্রী সোহরাব সাহিত্য মির্জা এবং পাশে বসা তন্ময় তূর্ণ মির্জার দিকে। চাচা ভাইপো যেন মঞ্চ আলোকিত করে বসে আছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সোহরাব সাহিত্য মির্জা শিক্ষা মন্ত্রী হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করে।
চারিদিকে জয় ধ্বনি হাততালিতে মুখরিত হয়।

সাহিত্যর নজর দর্শক সারীতে উপস্থিত তার পরিবারের দিকে। আজ সে যা এবং যতটুকু হতে পেরেছে সম্পূর্ণটাই তার পরিবারের সাপোর্ট, ভালবাসা আর জনগণের আস্থার কারণে। তার চোখ যায় প্রিয়তমা স্ত্রী তার পদ্মফুলের দিকে। মেয়েটার মাঝে এখন সেই বাচ্চা সুলভ সুহাকে আজকাল দেখা যায় না। শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বশীল সহধর্মিনী সে। বরং সুহাসিনীর সেই বাচ্চামো ভাবটা এখন তার ছোট্ট মেয়ে ফিয়ানা মির্জা তুশির মধ্য দেখতে পাই সাহিত্য।

দু বছরের ফিয়ানা মঞ্চে দাঁড়ানো বাবার দিকে তাকিয়ে দুহাত বাড়িয়ে দাঁত বের করে হাসছে আর বাবা বাবা বলে ডাকছে। সাহিত্য মুখে প্রশান্তির হাসি নিয়ে তাকিয়ে থাকে তার কন্যার দিকে।মেয়েটা দেখতে একেবারেই সাহিত্যের মতো হয়েছে। সুহাসিনী ও মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে প্রিয়তম স্বামীর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঠোঁটে তার অনাবিল হাসি।

সাহিত্য চোখ ঘুরিয়ে তাকায় তার পুরো পরিবারের দিকে। এখানেই তার শান্তি এখানেই তার সমস্ত সুখ নিহিত। শিক্ষামন্ত্রীর শপথের সাথে সাথে তার এই পরিবারকে নিয়ে সে সুখে শান্তিতে বাকি জীবন পার করে দেয়ার শপথ গ্রহণ করে।

সমাপ্ত………..