ভেতরে বাহিরে পর্ব-১৯

0
825

#ভেতরে_বাহিরে
পর্ব:১৯
লেখিকা: #রুবাইদা_হৃদি

‘ তুমি কাঁপছো কেন?’ আবেশ ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো। মাধুর্য ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে আবেশের একটু আগের বলা কথা শোনে। তবে মাত্র বলা কথা শোনে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল,

‘ ক..কই কাঁপছি !’

‘ কথা বলার সময় ও কাঁপছো।কাঁপাকাঁপি বন্ধ করে দ্রুত বিছানা ছেড়ে ওঠো।’

‘ কেন ! আমি এখন ঘুমাবো আমার ঘুম পাচ্ছে। লাগবে না কোনো সারপ্রাইজ।’

আবেশ আরো ঝুঁকে গেলো মাধুর্যের দিকে। চোখে চোখ রেখে বলল,

‘ তোমার জীবন সংক্রান্ত সারপ্রাইজ । সেটা তুমি না চাইলেও আমি দিবো।’

আবেশের কথায় কেমন ঘোর লেগে যাচ্ছে মাধুর্যের। প্রতিটা কথা বলার সময় আবেশ ফোঁসফোঁস করে শ্বাস ছাড়ছে। বাইরে থেকে আসা হাওয়ার তোড়ে কড়া পারফিউমের সৌরভ নাকে লাগছে মাধুর্যের । আবেশের এতো কাছাকাছি আসাতে মাধুর্য নিজের খেই হারিয়েছে ৷ তার হৃৎপিন্ড দ্রিমদ্রিম আওয়াজ তুলছে৷ আবেশের কোনো ভাবান্তত নেই৷ সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাধুর্যের কেঁপে ওঠা চোখের দিকে,দোল খাওয়া চুলের দিকে ৷ মাধুর্যের গলা কাঁপছে৷ সে উপায় খুজছে কী ভাবে আবেশের সামনে থেকে সরে যাওয়া যায় ৷ আবেশের দৃষ্টিতে কেমন যে মাদকতা মেশানো! ঘোর লেগে যাচ্ছে মাধুর্যের৷
আবেশের ইচ্ছা হচ্ছে,মাধুর্যকে ছুঁয়ে দিতে ৷ তবে সে নিজের অনুভূতি দূরে ঠেলে দিয়ে ভাবলো,

‘ আজ মাধবীলতার চোখে অস্বস্তি,একদিন আসবে যেদিন এই চোখে থাকবে হাজার ভালোবাসার প্রজাপতি৷ যার ভেতরে বাহিরে সবটা জুড়ে থাকবো আমি শুধুই আমি৷’

‘ আ.আমি ওয়াশরুমে যাবো৷’ মাধুর্যের মিনমিনে কথা শুনে কপাল কুঞ্চিত করে আবেশ বলল,

‘ যাও ধরে রেখেছে কে!’

‘ আপনি৷’

মাধুর্য নীচু গলায় জবাব দিলো৷ আবেশ সামনে থেকে না সরেই বলল,

‘ আমি তোমাকে ছুঁয়েছি ? আমি কি তোমার হাত ধরে রেখেছি?’ আবেশ গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো ৷ মাধুর্য নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বোকার মতো মাথা দুইদিকে হেলিয়ে বলল,

‘ না তো৷ ‘

‘ তাহলে বললে কেন,আমি ধরে রেখেছি! ‘

‘ আমি কখন বললাম৷ ‘

মাধুর্যের কথা শুনে হাসি পাচ্ছে আবেশের৷ সেই ছোট বেলার মতো তোতলানোর স্বভাব এখনো যায় নি তার ৷ মাধুর্যের ভেতরে বাচ্চাসুলভ এক খোলস আছে৷ যা ঢাকা পড়ে গিয়েছে অতল গহব্বরে৷ আবেশ হেয়ালি করে বলল,

‘ তুমি’ই তো বলেছো৷ আমি না’কী তোমায় ধরে রেখেছি ৷’

‘ আমি ওইভাবে বলি নি ৷’ মাধুর্য কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলো৷ আবেশ পাশে রাখা হাত গুলো মাধুর্যের হাতের উপর রাখতেই মাধুর্য কুঞ্চিত হয়ে উঠলো ৷ শিরশির করে উঠলো তার শরীর৷ দম যেন আটকে আটকে আসতে চাইছে তার৷ আবেশ হাত আলতো ভাবে তার হাতের উপর রেখেই বলল,

‘ তাহলে কীভাবে বলেছিলে,মাধবীলতা ! ‘

মাধবীলতা ডাকটা যেন মাধুর্যের হুশ ফেরালো ৷ মনে পড়লো সেদিন রাতের কথা যেদিন রাতে আবেশ তার না দেওয়া চিঠির কথা বলেছিলো ৷ আবেশ রেগে যখন তাকে বলেছিলো,

‘ তুমি মিথ্যাবাদী মাধুর্য! যার কোনো ক্ষমা নেই৷ সেই সাথে তুমি জঘন্য চরিত্রের অধিকারী ৷ অতোটুকু বয়সে প্রেমিক বানিয়েছিলে তার সাথে মেলামেশা করেছো ৷ তাকেই না’কী বিয়ে করবে৷ আমাকে তোমার ভয় লাগে কারণ শহরে যারা থাকে তাদের চরিত্রে সমস্যা থাকে ৷ তোমার নাম ধরে উচ্চারণ করতেও আমার মুখে আটকায়৷’

যদিও এরপর আবেশ নিজের মতো সব বুঝে তাকে বিশ্বাস করে নিয়েছে৷ কিন্তু কিছু কথা আর অপমান এতো সহজে ছুড়ে ফেলা যায়! না যায় না! মাধুর্যের মনে গভীর ভাবে দাগ কেটেছে সেইসব কথা৷ মাধুর্য হুট করেই হিংস্র হয়ে উঠলো ৷ নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো আবেশের হাতের নীচে থেকে ৷ আবেশের বুকের উপর ধাক্কা দিয়ে বলল,

‘ আমার নাম ধরে উচ্চারণ করতে আপনার মুখে আটকায়,আবেশ! সেই কথা কী ভুলে গেছেন? আমি বলছি,আপনি আমার সামনে থাকলে আমার অসহ্য লাগে,বিরক্ত লাগে ৷ সবকিছু মনে পড়ে যায়৷ তাদের ও আমি ছাড়বো না যারা আমার জীবন বিষাক্ত করেছে ৷ যারা আমায় ভুল বুঝে ঘৃণা করেছে৷’

বলেই মাধুর্য চলে যায় আবেশের সামনে থেকে৷ আবেশ স্তব্ধ,নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছে৷ তবে তার ভালো লাগছে মাধুর্যের স্পৃহা দেখে৷ যার মনে এখন ভয় নেই আছে ভালো ভাবে বেঁচে থাকার আগ্রহ ৷ তবে আবেশের বুকের ভেতরে কেমন অস্থিরতা কাজ করছে ৷ মাধুর্য তার কথায় যে অনেক আঘাত পেয়েছে সে ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে৷ সেও তো নিরুপায় ছিলো,সেটা কেন মাধুর্য বুঝতে পারছে না!

___________

ঘড়িতে সকাল ০৯ঃ২২৷ আকাশ আজ উজ্জ্বল৷ মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসের সাথে ৷ রোদের সাথে মিষ্টি বাতাস বাইরে প্রবাহিত হচ্ছে ৷ মাহফুজা বাড়ির সব পর্দা টেনে দিলেন৷ সাথে সাথেই একঝাঁক উড়ো বাতাস হামলে পড়লো এহসান বাড়ির দুয়ারে ৷
মাধুর্য এসে দাঁড়ালো মাহফুজার ঠিক পেছনে৷ আলতো স্বরে ডেকে বলল,

‘ নাবিহা আপু ঘুম থেকে উঠেছে? ‘

‘ নাবিহা কখন এসেছে!’

মাহফুজা অবাক হয়ে বললেন৷ মাধুর্য মাহফুজার থেকে বেশি অবাক হলো ৷ মাধুর্য অবাকের সুরে বলল,

‘ কাল এসেছে! নাবিহা আপু রাতভর কান্না করে সেই আওয়াজ কী তোমাদের কাছে পৌছায় না,আম্মু’মা৷’

মাহফুজা চমকে তাকালো৷ তার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো বিষাদের শ্বাস ৷ বিষাদমাখা গলায় বলল,

‘ পৌছায়৷ তবে আমার মেয়েটা উন্মাদ হয়ে গেছে৷ একা থাকে,একা বাঁচে৷ তার ধারণা আমরা তাকে করুণা করছি ৷ আমাদের কাছে আসে না৷ আমাদের বাড়িতে আসলেও তার রুমে নিজেকে বন্ধ করে রাখে৷ মাহমুদের সাথেও কথা বলে না বেশি৷’

‘ তোমরা গা ছাড়া ভাব করে কেন আছো! আপুকে হাসিখুশি রাখো ৷ একটা সন্তান কী সব?’

‘ তুই বুঝবি না মাধুর্য! যা খেয়ে নে৷ আবেশ তোকে নিয়ে কোথাও একটা যাবে, বলল৷’

মাহফুজা বলে চলে যেতে চাইলে মাধুর্য হাত ধরে ফেলে বলল,

‘ নাবিহা আপুকে কেন বুঝাতে চাও না তোমরা! কেউ তার সাথে কেন মেশো না? এই সময়ে তোমরা পাশে না থাকলে সে যে আরো ভেঙ্গে যাবে৷’

‘ আমি একজন মা হিসেবে সন্তানকে আগলে রাখতে পারি নি৷সেই কষ্ট থেকেই আমার সাথে কথা বলে না আমার মেয়েটা৷’

‘ আগলে রাখতে পারো নি!’মাধুর্য প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে বলল৷ মাহফুজা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,

‘ আমাদের সমাজ নির্ধারিত নিয়ম আছে মাধুর্য! সেই নিয়ম অনুসারে সমাজের মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়৷ একজন মেয়ের বিয়ে হয়ে যাবার পর সন্তান জন্মদানে অক্ষম হলে সমাজ তাকে অপবিত্র বলে ৷ মাহমুদের বাড়ি থেকে যখন বাচ্চা চাই বলে ওদের চাপ দেয় তখুনি নাবিহা জানতে পারে সে কখনো মা হতে পারবে না৷ আমার মেয়েটা এতো বড় শাস্তি কী’জন্য পেয়েছে আমি জানি না! ডাক্তার বলে কী যেন সমস্যা আছে নাবিহার ৷ এরপরেই মাহমুদের মা ছেলের বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে।নাবিহাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় ৷ কারণ তার বংশধর চাই৷ যে মেয়ে তার বংশ রক্ষার জন্য কাউকে আনতে পারবে না তাকে বাড়িতে রেখে কী হবে! নাবিহাকে যখন বাড়ি থেকে বের করে দেয় আমি আর তোর আঙ্কেল নিরুপায় ছিলাম ৷ কারণ আমরা মেয়ের মা ৷ মেয়ের পরিবারের কথা চলবে না ৷ তোমার মেয়ে সন্তান দিতে পারবে না তাই তোমাদের মানতে হবে সব৷ আমরা যখন প্রতিবাদ করতে গেলাম এইটা বলে দিলো সবাই৷ তখন তোর আঙ্কেল সবেমাত্র ব্যাবসায় হাত দিয়েছে৷ টাকার অভাব ছিলো সব সময় ! মেয়েকে চাইলেও বাঁচাতে পারি নি সমাজের মানুষের তোপের মুখে থেকে ৷ সবাই যখন ওকে কথা শোনাতো আমরা তখন মুখ বুজে সব সহ্য করতাম ৷ মাহমুদের মা এর মাঝেই আবারোছেলের বিয়ে দিবে বলে উঠেপড়ে লাগে তবে মাহমুদ কখনো নাবিহাকে ছেড়ে দেয় নি! আমরা ছেড়ে দিয়েছিলাম ওকে৷ কিন্তু সে ছাড়ে নি৷ আমাদের থেকে ভরসা না পেয়েই মেয়েটা গুটিয়ে গিয়েছে ৷ যখন সব হলো তখন আমি আমার মেয়েটাকে হারিয়েছি ৷ আমি আমার পাপের শাস্তি পাচ্ছি মাধু ৷ তোকে যদি আরো ভালো ভাবে খুজতাম তাহলে পেয়ে যেতাম৷ মেহরুনের সম্পদ দিয়ে সুখের সাম্রাজ্য গড়লেও হারিয়েছি নাবিহার সুখ তুই হারিয়েছিস তোর জীবনের অনেক গুলো বছর ৷’

মাহফুজা কাঁদছেন ৷ মাধুর্য কাঁদছে না আজ৷ সে ভাবছে,নাবিহার কথা৷ যখন তার পাশে সবার দাঁড়ানো উচিৎ ছিলো তখন সবাই গা ঢাকা দিয়ে ছিলো ৷ নাবিহার পাশে মাহমুদ থাকলেও সব কষ্ট কী সামলে উঠতে পেরেছিলো সে! হয়তো না! এইজন্যই নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে ফেলেছে নাবিহা ৷ সবার জীবনের ভেতরের টানাপোড়েন আটকা পড়ে বাইরের হাসি বা গম্ভীর মুখের আড়ালে ৷ ভেতরে-বাইরে সমান না! কখনো সমানতালে অগ্রসর হয় না৷।

___________

‘ তোমাকে রেডি হতে বলেছিলাম,মাধুর্য৷’

আবেশ রুমে ঢুকেই বলল ৷ মাধুর্য সকালের নাস্তা খেয়ে সবেমাত্র এসেছে ঘরে ৷ এরমাঝে আবেশ কোথাও একটা গিয়েছিলো৷ আবার হুট করেই এসে প্রশ্ন করে বসলো ৷ মাধুর্য নিজের জামাকাপড় গোছাচ্ছিল৷ আবেশের প্রশ্ন শুনে আড়চোখে একবার তাকিয়ে আবারো নিজের কাজে মন দিলো৷ আবেশের মেজাজ খারাপ হচ্ছে ৷ এইদিকে দেরি হয়ে যাচ্ছে আর এই মেয়ে তার কথা কানে তুলছে না ৷ কিছুক্ষণ মাধুর্যের গতিবিধি লক্ষ্য করে ক্ষিপ্র কন্ঠেই বলল,

‘ কী সমস্যা তোমার! বললাম না রেডি হয়ে থাকতে৷’

‘ কোথায় যাবো! ‘ মাধুর্য বারান্দায় যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আবেশ হাত টেনে ধরলো মাধুর্যের ৷ মাধুর্য ক্ষীণ গলায় বলল,

‘ হাত ছাড়ুন ৷ আর আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না৷’

‘ তোমার ডিসিশন আমি জানতে চাই নি ৷’

আবেশ মাধুর্যের হাত শক্ত করে ধরে রেখেই বলল ৷ মাধুর্য উত্তর দিলো না। আবেশ রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ তোমার রেডি হতে হবে না,এমনি চলো৷’

বলেই হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো ৷ মাধুর্য অবাক হয়ে দেখছে ৷ আপাতত সে বাধা দিচ্ছে না! চুপ করেই আবেশের সাথে নীচে নেমে এলো ৷ ইরা তাদেরকে দেখেই জিগ্যেস করল,

‘ কোথায় যাচ্ছো,আবেশ৷’

‘ মাধুর্যের স্বপ্নের একটা ধাপ পূরণ করতে ভাবী৷ কাল তোমায় বলছিলাম তো৷’

আবেশ থেমে দাঁড়িয়ে বলল ৷ ইরা মাধুর্যের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

‘ বেস্ট অফ লাক মাধুর্য ৷ আমার দেবর কিন্তু তোমার সব যত্ন নিচ্ছে৷ একটু বেশি ভালোবাসা কিন্তু আমার দেবরের প্রাপ্য৷’

ইরার বলা কথা শুনে রাশি রাশি লজ্জা ভাব মাধুর্যের মুখে দৃশ্যমান হলো ৷ আবেশকে বাধা দিতে আপাতত একদম ইচ্ছা করছে না তার ৷ আবেশ ইরার থেকে বিদায় নিয়ে মাধুর্যকে নিয়ে বেরিয়ে এলো বাড়ি থেকে ৷
গাড়ির সামনে গিয়ে রোদচশমা চোখে পরে মাধুর্যকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘ গাড়িতে ওঠে বসো ৷ আর একটা কথাও বলবে না৷ আমি কোনো সাউন্ড চাই না৷’

মাধুর্য সত্যি সত্যি মানা করতে চেয়েছিলো৷ তবে আবেশের বলা কথায় মিইয়ে গেলো ৷ সে যতোটা স্ট্রোং থাকতে চাইছে তবে পেরে ওঠছে না৷ এতো সহজে কী সব পারা সম্ভব?

‘ গাড়িতে ওঠো! ওকে ফাইন ৷ আমি অন্য ট্রিকস কাজে লাগাচ্ছি৷’

মাধুর্য অবাক হয়ে তাকিয়ে কিছু বলতে নিলেই আবেশ মাধুর্যের একদম কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কোলে তুলতে নেয় ৷ মাধুর্য দু পা পিছিয়ে বলল,

‘ আপনার শক্তি আছে সেটা বারবার প্রমাণ করতে হবে না৷ উঠছি তো৷’

‘ দ্রুত ৷ তোমার জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে৷’

‘ এতো যখন দেরি হচ্ছে আমাকে রেখেই যেতে পারেন৷’ মাধুর্য নীচু গলায় বলল ৷ আবেশ কপাল কুঞ্চিত করে বলল,

‘ কিছু বললে? ‘

মাধুর্য জবাব না দিয়ে উঠে বসলো গাড়িতে ৷ আবেশ হাফ ছেড়ে বাঁচলো ৷ লম্বা একটা শ্বাস টেনে উঠে বসলো মাধুর্যের পাশে ৷ অন্যসব সময় হলে দু একটা ধমক দিতো৷ তবে এখন নিজেকে সংযত করার তীব্র চেষ্টায় আছে সে ৷

__________
গাছের পাতা গুলো ঝরঝর শব্দে কম্পিত হচ্ছে৷ বাতাসের দাপটে শিঁউরে উঠছে প্রকৃতির রূপ৷ সাঁই সাঁই শব্দ আছড়ে পড়ছে গাড়ির কাচে৷ ফুলস্পিডে ড্রাইভ করে চলেছে আবেশ ৷ মাধুর্য কেমন শিঁউরে উঠছে ৷ বিন্দু বিন্দু ঘামের অস্তিত্ব ফুঁটে উঠেছে ফর্সা গালে৷ আবেশ ড্রাইভিং এর ফাঁকে তাকালো মাধুর্যের দিকে৷ মাধুর্যের ঘেমে উঠা মুখ দেখে শাসনের সুরে বলল,

‘ গরম লাগছে সেটা বলতে হয় ৷ না বললে বুঝবো কী করে? নিজের অধিকার,চাওয়া-পাওয়া বলতে শেখো৷’

আবেশের কথা শুনে পাশ ফিরে তাকালো মাধুর্য ৷ আবেশের দৃষ্টি তখন সামনে৷ ডান হাত জানালার কাচ নামানোর জন্য নিয়োজিত ৷ মাধুর্য আবেশের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিললো৷ আবেশের দিকে তাকালে তার কেমন যেন লাগে৷ রাগ হয় আবার অন্য অনুভূতি গ্রাস করে৷ এই অনুভূতি নাম না জানা।

‘ আমাকে দেখা শেষ হলে গাড়ি থেকে নামো৷’

আবেশ গাড়ি পার্ক করে বলল। কখন তারাএসেছে সেটা একদম খেয়াল হয় নি মাধুর্যের৷ তার এহেন কাজে নিজেই অস্বস্তিতে পড়ে গিয়ে সিটবেল না খুলেই নামতে গেলে আবেশ আটকে দিয়ে বলল,

‘ আরে সব ছিড়ে টিড়ে বের হবে না-কি তুমি! সিট বেল তো খুলো আগে৷’

‘ খুল..খুলছি৷’ মাধুর্য অপ্রস্তুত হয়ে জবাব দিলো৷ আবেশ দুইদিকে মাথা ঝাকিয়ে বলল,

‘ কিছু হবে না তোমায় দিয়ে৷ চুপ করে বসো আমি খুলে দিচ্ছি৷’

আবেশ আবারো ঝুঁকে এলো৷ ঠিক সকালে মতো৷ মাধুর্য ভয়ে চোখমুখ খিঁচে পেছনে ঠেস দিয়ে বসলো৷ আবেশ যত্ন করে খুলে দিয়ে বলল,

‘ নামো৷’

মাধুর্য দ্রুত চোখ খুলে নেমে দাঁড়ালো৷ তার কাজে আবেশ হাসছে৷ মাধুর্য নেমে দাঁড়িয়ে একদফা অবাক হলো ৷ মেডিকেল কলেজের সামনে তারা দাঁড়িয়ে আছে ৷ মাধুর্য অবাক হয়ে আবেশের দিকে তাকাতেই আবেশ সামনের দিকে দেখিয়ে এগিয়ে যেতে বলল ৷ মাধুর্য অবাক হচ্ছে৷ আবারো আবেশের দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই আবেশ বলল,

‘ সাইকোলজি নিয়ে পড়ার ইচ্ছা আছে কি-না বলো! যদি ইচ্ছা না হয় তাহলে চলো ফিরে যাই৷’

চলবে……