#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ২৬
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
কুয়ান আমাদেরকে নিয়ে যেতে লাগলো প্রাসাদের ভিতরে। প্রাসাদটা একটা বিশাল গাছের মধ্যে বানানো। দেওয়াল দিয়ে গাছের জড় এবং পাতা দেখা যাচ্ছে। আর বিশেষ করে যখন আমরা বেলকনিতে নেমেছিলাম তখনি বুঝতে পেরেছিলাম গাছটা কত বড়। পুরো আলফাইমের অর্ধেক জুড়ে রয়েছে এই গাছ। গাছটা উচ্চতায় তেমন বড় না হলেও চারিদিকে এটির শাখাপ্রশাখা অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়েছে। আর সকল লাইট এল্ফসদের বাসা এই গাছের শাখার উপরেই বানাতে হয়। যারা মাটিতে থাকে তারা এল্ফসদের মধ্যে সবচেয়ে নিচু বর্নের। মিনিস্টার কুয়ান আমাদের সোজা নিয়ে গেলেন রাজ দরবারে। যেখানে আলফাইমের রানী বসে আছে। তার নাম আলিয়ানা আলফাইম। আমাকে দেখার পর সম্মান জানালো আমাকে। রানী দেখতে যে এতো সুন্দর হবে আমি আগে জানতাম না। এল্ফসরা এমনিতেই সব দুনিয়ার মধ্যে সুন্দর হয়। তাদের সৌন্দর্যের কথা আমি পৃথিবীতে থাকতেও বিভিন্ন কার্টুনে দেখেছি। কিন্তু প্রথম একজন এল্ফস নারী তাউ আবার তাদের রানীকে দেখে আমার মাথা ভার হয়ে গেলো। তারপরও কন্ট্রোল করলাম নিজের মাথাকে৷ রানীর বয়স অনেক হবে সেটা তাকে দেখে কখনো ভাবা যাবে না। শুধু যদি লম্বা কান ঢেকে রাখা হয় তাহলে তাকে ১৮ বছরের মানুষ মনে হবে৷ সে যাইহোক ডেভিল কিং হয়ে একজন মেয়েকে ফ্লার্ট করতে পারি না। তাউ আবার একজন রানীকে৷ অবশ্য আমি পৃথিবীতে থাকতে কারো সাথে তেমন কথায় বলতাম না। সবাই আমাকে আলাদা ভাবতো, অনেক নির্যাতন ও করেছে। কিন্তু মনস্টার ওয়ার্ল্ডে আসার পর থেকে কেনো জানি আমার চরিত্র আস্তে আস্তে পাল্টে গেছে। লোচার্ট একাডেমীতে থাকতে, আমার সিল করা ক্ষমতার সাথে আমার আলাদা একটা মন মাইন্ড দুটোই আমার মধ্যে প্রবেশ করেছে, সোজা কথায় বলতে গেলে আমার মধ্যে এখন দুটো সত্ত্বা আছে। এক হলো এন্জেল সত্ত্বা যেটা আমি ছোট থেকেই। আর আরেকটা হলো ডেভিল সত্ত্বা। আমি ভয়ে আছি, একদিন আমার ডেভিল সত্ত্বা আমার পুরো শরীরের উপরে কন্ট্রোল করে নিবে। আর সেটা হলে আমি নিজে এখন যেটা ভাবছি সেটা ভাবতে পারবো না। আমার মধ্যে সব খারাপ ভাবনা চলে আসবে তখন। মোটকথা আমি এখনকার থেকে সম্পূর্ন উল্টো একজন হয়ে যাবো। সে যায় হোক রানীর সাথে আমার কথা হতে লাগলো,
.
–ডেভিল কিং আপনাকে স্বাগতম আলফাইমে। আমি আলিয়ানা আলফাইম। আমি পুরো আলফাইমের রানী।(আলিয়ানা)
.
–ধন্যবাদ রানী আলিয়ানা আলফাইম।(আমি)
.
–আপনি আমাকে রানী আলিয়ানা ডাকতে পারেন।(রানী)
.
–ঠিক আছে। প্রথমবার আলফাইমে আসলাম। আলফাইমের সৌন্দর্য দেখে আমি মুগ্ধ।(আমি)
.
–আপনি আপনার ইচ্ছা মতো ঘুরেন কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু শুধু আলফাইমের সৌন্দর্য আপনাকে এখানে এনেছে সেটা আমার মনে হচ্ছে না।(রানী)
.
–হ্যা ঠিক ধরেছেন।(আমি)
.
–তো বলুন কিসের জন্য এসেছেন?(রানী)
.
–আপনি হয়তো শুনেছেন লোকি এজগার্ড দখল করেছে। আর সে বিশাল বাহিনীও জোগাড় করেছে থরকে মেরে ফেলার জন্য।আর আপনি জানেন ওডিন তার ঘুম থেকে ফিরলে রাজার সিংহাসন থেকে নেমে থরকে রাজা বানাবে। থর মিওনির এর অযোগ্য হওয়ায় এখন লোকি এজগার্ডের সিংহাসন দখল করেছে। লোকি শুধু এজগার্ড নিয়ে বসে নেই, সে চাচ্ছে পুরো এগারো দুনিয়া তার মুঠোই থাকুক।(আমি)
.
–ব্যাপারটা বুঝেছি। আপনি এসেছেন আমাদের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে।(রানী)
.
–হ্যা। আমি মাত্র ডেভিল কিং হয়েছি। তার উপর এখনি যদি আমি আমার ক্ষমতা গুলোর পুরো ব্যবহার করি তাহলে আমার ডেভিল সাইড আমাকে গ্রাস করে ফেলবে। তখন বলা যায় না লোকির মতো আমি নিজেও বাকি দশ দুনিয়ার উপরে যুদ্ধ ঘোষনা করতে পারি। তাই এখন আপনারা আমাদের সাহায্য করুন লোকির বিরুদ্ধে লড়তে। বলা তো যায় না পরের যুদ্ধ আপনাদের সাথে হতে পারে লোকির।(আমি)
.
–দেখুন আমরা কখনো কারো কাছে মাথা নত করি নি। আর কেউ আমাদের সাথে যুদ্ধ করতে চাইলে আমরা পিছনে ফিরবো না। আপনি হয়তো জানেন আমরা আজ পর্যন্ত কোনো যুদ্ধে হারি নি।(মিনিস্টার)
.
–মিনিস্টার আপনি চুপ থাকেন। ডেভিল কিং আমরা এজগার্ডকে সম্মান করি। আমাদের প্রত্যেক যুদ্ধে তারা আমাদের সহায়তা করেছে। এখন আমরা এজগার্ডের বিরুদ্ধে লড়তে পারবো না।(রানী)
.
–আমি আপনাদের এজগার্ডের বিরুদ্ধে লড়তে বলছি না। লোকির সাথে ম্যালিকিত হাত মিলিয়েছে। আপনি হয়তো জানেন সে কে?(আমি)
.
–ডার্ক এল্ফসদের রাজা।(রানী)
.
–হ্যা। ম্যালিকিত দুই লক্ষের একটা সৈন্য দিয়েছে লোকিকে। অবশ্য ম্যালিকিত এই যুদ্ধে অংশ নিবে না। সে হয়তো নতুন কোনো জিনিস নিয়ে ভেবে যাচ্ছে।(আমি)
.
–এটাও শুনেছি।(রানী)
.
–আমি জানি আলফাইম দুনিয়ার সাথে স্যয়ারতালফাইম এর যুদ্ধ মাঝে মাঝেই লাগে। আর ম্যালিকিত হয়তো লোকির এই সঙ্গকে আলফাইমকে ধ্বংস করতে কাজে লাগাবে।(আমি)
.
–তে আপনি আমাদের কি করতে বলছেন?(রানী)
.
–লোকির বাকি সৈন্য আমি দেখে নিবো। শুধু আপনারা আমাদের কিছু সেনা দিয়ে ডার্ক এল্ফসদের হারিয়ে দিবেন।(আমি)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি যখন কষ্ট করে আমাদের কাছে এসেছেন, তাই এই একবারই আমরা আপনার সাহায্য করবো। আমাদের সেনা ডার্ক এল্ফসদের হারাবে। এর থেকে বেশী কিছু আমরা করতে পারবো না।(রানী)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে।(আমি)
.
–আপনি যখন এখানে এসেছেন। একটু রেস্ট করুন। আলফাইমের সৌন্দর্য ভোগ করুন।(রানী)
.
–না বেশী সুন্দর জিনিস বেশীক্ষন দেখলে আমার আবার সেটাকে নিজের করে নিতে মন চাই এখন। যেমন আপনি সুন্দর, তেমন আপনার আলফাইম। তাই এখানে আমার বেশীক্ষন থাকা ঠিক হবে না।(আমি)
।।।।
।।।।
আমার কথা শুনে রানী কিছুটা লজ্জা পেলো। রাজারা রানীদের সৌন্দর্যের তারিফ তো করেই এটা অস্বাভাবিক নয়। বাট আমারটা অন্য রকম ছিলো। এটাও আমি নিজে বলতে চাই নি। কেনো জানি মুখ থেকে বের হয়ে গেলো। যায়হোক এল্ফস নারী লজ্জা পেলে পুরো লাল হয়ে যায় তাদের মুখ। আর তাদের সেই লাল মুখটা দেখতে অনেক কিউট লাগে। এবার আমি টেলিপোর্টেশন স্পেল ব্যবহার করলাম। সোজা চলে আসলাম আন্ডারওয়ার্ল্ডে। আমার সিংহাসনে এসে বসলাম। আমার চার জেনারেল আমার সামনেই দাড়িয়ে আছে।
.
–মাই কিং গড অফ থান্ডারকে প্রাসাদে নিয়ে এসেছি। সে একটু বিশ্রাম করছে। একটু পরেই সে আপনার সামনে চলে আসবে।(লুসেফার)
.
–ওয়েল ডান লুসেফার এবং অর্নিজ।(আমি)
.
–মাই কিং কিছু মনে করবেন না তবে একটা কথা বলতাম আপানাকে?(কর্ডিজ)
.
–জ্বী বলো।(আমি)
.
–আমরা সেখানে গিয়েছিলাম মূলত ড্রিম কুইনকে ট্রিট করার জন্য হিলার খুজতে। কিন্তু আমরা সেটাই করতে ভুলে গেছি।(কর্ডিজ)
.
–ও হ্যা। আসলেই তো।(আমি)
।।।
।।।
এমনিতেই এল্ফস রানীকে দেখে আমি স্বপ্নের রানীর কথা ভুলো গিয়েছিলাম। তাইতো হিলার এর কথা আমার মনেই নেই। যায়হোক আবার যেতে হবে সেখানে। কিন্তু তার আগে আমি বুঝতে পেরেছি আমার শরীরের ভিতরে সমস্যা হচ্ছে। টেলিপোর্টেশন স্পেল ব্যবহার করার ফলে আমার ডেভিল সাইড আমাকে হ্রাস করার চেষ্টা করছে। মূলত আমার এন্জেল সাইডের জন্য আমি ফ্রেস মাইন্ডের একজন ছেলে৷ কিন্তু ডেভিল সাইডটা সেটার পুরো উল্টা। যদি আমার দুটো আলাদা সাইড না হতো তাহলে এমন সমস্যা হতো না। কিন্তু যেহেতু আমার ডান সাইড এন্জেল, আর বামটা ডেভিলের তাই দুটো সাইডই আমার পুরো বডি চাচ্ছে, যেহেতু আমার এন্জেল সাইড ছোট থেকেই আমার পুরো বডি দখল করে রেখে দিয়েছিলো, তাই হঠাৎ করে ডেভিল সাইড এখন নিজেই আমার পুরো বডি নিয়ে নিতে চাচ্ছে। সেটা এন্জেল সাইডকেও এখন কন্ট্রোল করতে শুরু করেছে। আমাকে খুব শীঘ্রই আমার সমস্ত ক্ষমতা কন্ট্রোলে করতে হবে। বেশী স্পেল কিংবা ম্যাজিক পাওয়ার যদি আমি এখন ব্যবহার করি তাহলে সেটা আমার ডেভিল সাইডকে আরো শক্তিশালী করে দিবে। দুটো সাইড নিউটলে রাখতে চাইলে আমাকে এন্জেল পাওয়ার ব্যবহার করা ও শিখতে হবে। কিন্তু সেটা এন্জেলদের দুনিয়াতে না গেলে আমি শিখতে পারবো না। সে যাইহোক আমার কিছু কিছু ভাবনা এখন আগের থেকে চেন্জ হয়ে যাচ্ছে সেটা আমি বুঝতে পারছি। মাথাও অনেক ব্যথা হয় একটা স্পেল ব্যবহার করলে।
.
–মাই কিং আপনি আদেশ করুন। আমি আলফাইমে গিয়ে একজন হিলার নিয়ে আসি।(কর্ডিজ)
.
–না সেটার দরকার নাই। আলফাইম আমাদেরকে ভয় পাচ্ছে। তুমি গেলে ব্যাপারটা আরো খারাপ হতে পারে। আমি যাবো।(আমি)
.
–কিন্তু মাই কিং, আপনি মাত্র ডেভিল কিং হয়েছেন। এখনি এতো স্পেল ব্যবহার করা ঠিক হবে না। আপনার কিছুদিন রেস্ট নেওয়া দরকার।(লুসেফার)
.
–না কোনো সমস্যা হবে না আমার।(আমি)
।।।
।।।
আমি সবার কথা উপেক্ষা করে আবার আলফাইমে টেলিপোর্ট হলাম। এবার আমি টেলিপোর্ট হওয়ার সময় রানীর কথা ভাবলাম। আর আমি ঠিক রানীর সামনে টেলিপোর্ট হলাম। আগের বার টেলিপোর্ট হওয়ার পর একটা জিনিস আমি খেয়াল করেছি। আমি এনাকে ভেবে স্পেল ব্যবহার করেছিলাম। আর আমি ঠিক এনার সামনেই টেলিপোর্ট হয়েছিলাম। যার পর আমি বুঝতে পেরেছি আমার এই স্পেলটা অন্য সবার থেকে আলাদা। এটার মাধ্যমে আমি যাকে ভাববো ঠিক স্পেলের সাহায্যে তার সামনে যেতে পারবো।
।।।
।।।
হঠাৎ আমার টেলিপোর্ট হওয়ার ফলে রানী চমকিয়ে গেলো। রানী এমনিতেই তার দুই গালে হাত দিয়ে তার রুমে আয়না দেখছিলেন। জানি না কি ভাবছিলেন। তবে মনে হয় আমার প্রশংসাটা তার ভালো লেগেছিলো,
.
–এভাবে হুট করে একজন রানীর রুমে আসার সাহস পেলেন কোথায়?(রানী)
.
–আমি কি জানি আপনি রুমে একা থাকবেন? আমি তো আমার স্পেল ব্যবহার করলাম। কিন্তু স্পেলও বেশ আজব দেখলেন তো। আপনি যেখানে ঠিক সেখানেই নিয়ে আসলো আমাকে।(আমি)
.
–আমি কি এখন নিজের আসল রং দেখাতে আসছেন? ভুলে যেয়েন না আমি আলফাইমের রানী। যদি আমার শরীরে একটা স্পর্শও করেন তাহলে সেটা ভালো হবে না।(রানী)
.
–ভুল বুঝতেছেন। আপনি আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী নারী হলেও আপনি আমার টাইপের না। তাই ভয় পাবেন না। আমি কিছুই করবো না। আমি ফেরত আসতাম না৷ তবে কারন আছে একটা আসার।(আমি)
.
–কি কারন?(রানী)
.
–স্বপ্নের দুনিয়ার রানী লুসি দ্যা ফেইরীকে লোকি অনেক গুরুতর আহত করেছে। আমাদের আন্ডারওয়ার্ল্ডের হিলার তার চিকিৎসা কিছুতেই করতে পারছে না। দুই তিন দিনের বেশী এভাবে চিকিৎসা না পেলে সে বাচবে না।(আমি)
.
–এটা তো আমি জানতাম না। লোকি তাহলে স্বপ্নের দুনিয়াতেও গিয়ে আক্রমন করেছে। বিষয়টা কম করে নেওয়া যাবে না।(রানী)
.
–হ্যা এখন আলফাইম থেকে আমার একজন হিলার প্রয়োজন যে ড্রিম কুইনকে হিল করতে পারবে।(আমি)
.
–ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি আপনার সাথে?(রানী)
.
–আপনি যাবেন কেনো? একজন হিলার পাঠালেই তো হয়?(আমি)
.
–কেনো আপনার কি মনে হয় না আমি হিল করতে পারবো না তাকে?(রানী)
.
–না না সেটা না। আপনি পারবেন সমস্যা নাই।(আমি)
.
–ওকে চলুন তাহলে।(রানী)
।।।।।।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ২৭
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
আমি আলফাইমের রানীকে নিয়ে সোজা টেলিপোর্ট হয়ে চলে আসলাম আন্ডারওয়ার্ল্ডে। রানী হয়তো আন্ডারওয়ার্ল্ডে আসে নি কখনো, তাই প্রাসাদটা অবাক হয়ে দেখছে। আলফাইমের প্রাসাদটা আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর একটা প্রাসাদ। যদি তাদের মতো করে আমরাও আমাদের প্রাসাদটা সাজাতে পারতাম তাহলে হয়তো ভালো হতো। যাইহোক আমি আলিয়ানাকে নিয়ে সোজা ড্রিম কুইনের কাছে গেলাম। আলিয়ানা লুসিকে দেখার পরই তার কাছে চলে গেলো। তাকে ম্যাজিক দিয়ে চিকিৎসা করতে লাগলো, যেটাকে ম্যাজিকের ভাষায় হিল বলে। আর যারা ম্যাজিক দিয়ে চিকিৎসা করতে পারে তাদের হিলার বলে।
.
–আমি যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে।(আলিয়ানা)
.
–কি হয়েছে? রানী আলিয়ানাা।(আমি)
.
–ড্রিম কুইনের ক্ষমতা মূলত তার দুনিয়ার থেকেই আসে। যত মানুষ সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখবে তার ক্ষমতা ততই বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু লোকির আক্রমনে হতো কোনোভাবে স্বপ্নের দুনিয়ায় বন্ধি করা সকল খারাপ স্বপ্ন খাঁচা ভেঙে বের হয়ে গেছে। এখন পৃথিবীর সকল মানুষেরা খারাপ স্বপ্ন দেখছে এক এক করে।(আলিয়ানা)
.
–আর তাতে রানী লুসির নিজের শরীরের হিল করার ক্ষমতা অনেক কমে গেছে।(আমি)
.
–হ্যা। আমার ম্যাজিকেও তার কিছুই হবে না। কিন্তু আমি একজনকে জানি যে রানী লুসির সাহায্য করতে পারবে।(আলিয়ানা)
.
–কে সে?(আমি)
.
–হ্যাভেন এর প্রিন্সেস আফরিয়েল।(আলিয়ানা)
.
–কিং মাইকেল এর কন্যা?(আমি)
.
–হ্যা। পুরো এগারো দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হিলার সে। এমন কোনো মারাত্মক আঘাত নেই যেটা সে ঠিক করতে পারে না।(আলিয়ানা)
.
–ঠিক আছে তার সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবো?(আমি)
.
–সেটার জন্য আমাদের হ্যাভেন যেতে হবে। কিং মাইকেল কখনো প্রিন্সেসকে প্রাসাদের বাইরে যেতে দেয় না।(আলিয়ানা)
.
–ঠিক আছে তাহলে আমরা হ্যাভেন যাচ্ছি। অনেক ইচ্ছা ছিলো নিজের মায়ের আসল জন্মস্থানকে নিজ চোখে দেখা।(আমি)
.
–আপনার মা এন্জেল ছিলো?(আলিয়ানা)
.
–হ্যা।(আমি)
.
–সেটা কিভাবে হয়? একজন ডেভিল কিং এন্জেলের ছেলে। এটা কখনো শুনি নি।(আলিয়ানা)
.
–হুমমম এটা অবাক করার বিষয়। কিন্তু আমার ডানা সেটার প্রমান।(আমি)
।।।
।।।
আমি আমার ডানা মেলে দিলাম। ডান পাশের সাদা ডানা দেখে অনেক অবাক হলো রানী আলিয়ানা।
.
–জানি না আপনি কি, কিন্তু ডেভিল কিং যে এন্জেল আর ডেভিল দুটোর পাওয়ার বহন করবে এটা আমি আগে কখনো শুনি নি। কিন্তু এটা শুনেছিলাম নতুন ডেভিল কিং সবচেয়ে আলাদা হবে।(আলিয়ানা)
.
–ওওওও।(আমি)
.
–আপনার আম্মা কে ছিলো?(আলিয়ানা)
.
–তার নাম ছিলো এন্জিলা জেনিফার, হ্যাভেনে তার নাম এন্জিলা গোন্জি ফ্যারাডে।(আমি)
.
–কি? তিনি তো….
.
–হ্যা তিনি মাইকেল ফ্যারাডের বোন ছিলো।(আমি)
.
–এখন বুঝেছি। রাজকীয় এন্জেল ব্লাড তোমার শরীরে থাকার ফলে হয়তো তোমার দুই সাইড আলাদা হয়েছে।(আলিয়ানা)
.
–আমি এখনো জানি না কেনো আমি এন্জেলের ক্ষমতা পেয়েছি। যদি দুজন বাবা মা এন্জেল না হয়, সব সময় মেয়ে এন্জেলের ক্ষমতা পায় আর ছেলে বাবার ক্ষমতা পায়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সেটা বিপরীত হলো কেনো আমি এখনো সেটার প্রশ্ন পাই নি।(আমি)
.
–আচ্ছা তাহলে আমাদের হ্যাভেনে কোনো সমস্যা হবে না বলে আমার মনে হয়। আমি তাহলে টেলিপোর্ট করছি সেখানে।(আলিয়ানা)
.
–এই কাজটা আমার উপরে ছেড়ে দিন। টেলিপোর্ট হয়ে শুধু লাভ আছে? ভ্রমনেই আসল মজা।(আমি)
.
–আপনি পাগল হয়েছেন? হ্যাভেন এখান থেকে কত আলোকবর্ষ দূরে সেটাও তো ঠিকমতো কেউ জানে না। আর আপনি সেখানে ভ্রমন করে কিভাবে যাবেন?(আলিয়ানা)
.
–লিম্বো ডাইমেনশন তো চিনেন?(আমি)
.
–হ্যা। এগারো দুনিয়ার মাঝামাঝি জায়গা সেটা। আর লিম্বো ডাইমেনশন দিয়েই দশ হাজার বছর পূর্বে যাতায়াত হতো এক দুনিয়া থেকে আরেক দুনিয়াতে।(আলিয়ানা)
.
–আমরাও সেটা করবো।(আমি)
.
–আপনি নতুন ডেভিল কিং হয়েছেন তাই হয়তো কিছু ঠিক মতো জানেন না। লিম্বো ডাইমেনশন দিয়ে যাতায়াত করার জন্য ডাইমেনশন কাটার ব্লেড দরকার ছিলো আগে। যেটা এখন এগারো দুনিয়ার মধ্যে খুব গোপন জায়গায় রাখা হয়েছে। এমনকি আমাদের আলফাইমের যে ব্লেড ছিলো সেটা এখন আমাদের গ্রেট ট্রি(বিশাল গাছ) এর ভিতরে।(আলিয়ানা)
.
–আমাকে এই তলোয়ারটা কিং মাইকেল দিয়েছিলো, আমি এটাকে খুব নরমাল একটা তলোয়ার ভাবতাম। কিন্তু আন্ডারওয়ার্ল্ডে আসার পর থেকে এটার সম্পর্কে পুরোটা জানতে পেরেছি।(আমি এক্সোনিয়া হাতে নিয়ে)
.
–এটা তো এক্সোনিয়া। মনস্টাররা এখন এটা নাম দিয়েছে মনস্টার কাটিং ব্লেড। কিন্তু এটা ডাইমেনশন কাটতে পারে এমন একটা ব্লেড। আর এটা কয়েক হাজার বছর যাবৎ হ্যাভেনে পরে ছিলো।(আলিয়ানা)
.
–হ্যা। তাহলে চলুন যাওয়া যাক একটা লম্বা সফরে।(আমি)
।।।।
।।।।
আলিয়ানা আর না বললো না। ভিরুদার জন্য আলাদা একটা রুম ঠিক করা হয়েছে। সেখানে সে বিশ্রাম নিচ্ছিলো। আমি স্বপ্নের রানীকে কোলে নিয়ে নিলাম। জানি কিছুটা লজ্জাজনক বিষয়। কখনো কোনো মেয়েকে কোলে নেই নি। আর এনা দেখলে তো হয়তো মেরেই ফেলবে। তারপরও আমি কাউকে আমার রাজ্যে মরতে দিতে চাই না। আমরা তিনজন টেলিপোর্ট হয়ে ভিরুর কাছে চলে আসলাম। সে বিশ্রাম এখনো ঘুমে আছে। আমি গিয়ে আস্তে করে একটা কামড় দিয়ে দিলাম ওর একটা পায়ে। সাথে সাথে চমকে উঠলো। কিছুটা ব্লাড ও খেয়ে নিলাম আমি সেই সাথে,
.
–কেমন ডেভিল কিং আপনি আমি বুঝতেছিনা। আপনার কাছে ভ্যাম্পায়ার এর পাওয়ারও আছে?(আলিয়ানা)
.
–এসব কথা না জিজ্ঞেস করায় ভালো। পরিচয় করিয়ে দি এ হলো ভিরু, মানে ইগড্রাসিল।(আমি)
.
–এ ইগড্রাসিল। এটা তো ছোট একটা ড্রাগনের বাচ্চা। বিশেষ করে ইগড্রাসিলের বাচ্চা হবে।(রানী হাসতে হাসতে বললো)
.
–আমি কোনো বাচ্চা না। আমার নাম ভি রু দা। দ্যা গ্রেট ফায়ার ড্রাগন ইগড্রাসিল।(ইগড্রাসিল নিজের ফুল ফর্মে চলে আসলো)
.
–আমি অবাক হবো না। ডেভিল কিং এর কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী একটা ড্রাগন পার্টনার থাকবে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু কখনো চিন্তা করি নি রক্ত খাওয়ার জন্য থাকবে।(হাসতে হাসতে বললো আলিয়ানা)
.
–না। আমি সব ধরনের রক্তই খেতে পারি শুধু নিজেরটা বাদে। এমনকি মানুষ বাদে রোজ রোজ নতুন জীবিত বস্তুর রক্তও ট্রাই করছি। একজন এল্ফসের রক্ত একবার খেয়ে দেখার দরকার।(আমি)
.
–আপনি কিন্তু আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন।(আলিয়ানা)
.
–ভয় পাওয়ার দরকার নেই। শুধু খেয়াল রাখবেন আমার সামনে শরীর থেকে রক্ত বের না হয় যেনো। রক্ত দেখলে আবার হুশ থাকে না আমার।(আমি)
.
–ঠিক আছে।(আলিয়ানা)
.
–কোথাও যাবে জ্যাকসন?(ভিরু)
.
–হ্যা। হ্যাভেন যাবো লিম্বো ডাইমেনশন দিয়ে। আর তুমি হবে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।(আমি)
.
–ঠিক আছে। যেটা তুমি বলবে।(ভিরু)
।।।
।।।
আমরা তিনজন ভিরুর পিঠে উঠলাম। এরপর আমি আমার হাতে এক্সোনিয়া নিলাম। লিম্বো ডাইমেনশন দিয়ে যাতায়াত অনেক কঠিন ছিলো। অনেকটা লোকাল ট্রেনের মতো। মাত্র এগারো রাজ্যের কাছে এগারোটা ব্লেড ছিলো যেটা দিয়ে এক দুনিয়া থেকে অন্য দুনিয়াতে সবাই যাতায়াত করতো। বিশেষ করে সাধারন মানুষগন কখনো এটা করতে পারে নি। একটা দুনিয়ার গুরুত্বপূর্ন লোকেরাই তখন যাতায়াত করতে পারতো। কিন্তু টেলিপোর্টেশন স্পেল তৈরী হওয়ার পর থেকে সেই ব্লেড গুলোকে গোপনে রাখা হয়। সেই ব্লেড গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ন ছিলো। আর সেটার একটা এই এক্সোনিয়া। মূলত এক দুনিয়া থেকে আরেক দুনিয়াতে আমাদের যেতে হলে প্রথমেই লিম্বো ডাইমেনশনে যেতে হবে। এখন এই লিম্বো ডাইমেনশন হলো একটা নিরপেক্ষ জায়গা। যেখানে সময়ের কোনো মূল্য নেই। সেখানে কেউ যদি এক বছরও থেকে আসে তাহলে এখানে ফিরলে সময়ের কোনো পরিবর্তন হবে না। যে সময়ে গিয়েছিলো সেই সময়েই ফিরবে আবার।
।।।
।।।
আমি দেওয়াল বরাবর একটা ডাইমেনশন কাট দিলাম। এটা একটা স্পেল যার দ্বারা এক ডাইমেনশন কেটে আরেকটায় যাওয়া যায়। মূলত এটা যেকোনো জায়গায় দেওয়া যায়। একটা পোর্টালের মতো জিনিস সামনে হলো। ভিরু সেটার মধ্যে আমাদের নিয়ে ঝাপ দিলো। আবার শক্তিশালী টেলিপোর্ট স্পেল থাকলে সেটার সাহায্যেও সহজেই টেলিপোর্ট হয়ে এখানে আসা যায়। কিন্তু আমি টেলিপোর্ট স্পেল আপাতোতো ব্যবহার করবো না। জানি আমার মন আস্তে আস্তে পাল্টে যাচ্ছে। মনের মধ্যে খারাপ সব চিন্তা ভাবনা আসতে লাগলো। খুব কষ্টে আমি সামলে রাখছি। আমার ডেভিল সাইড বার বার আমার পুরো শরীরকে গ্রাস করে ফেলতে চাচ্ছে শুধু।
.
–আমি কখনো লিম্বো ডাইমেনশনে আসি নি। এটা যে এমন হবে আমি আগে কখনো ভাবি নি।(আলিয়ানা)
.
–হুমমম। এখানে থাকা মানে মহাকাশে থাকে। এখানে কোনো গ্রাভিটি নেই। সবাই এখানে বেশীক্ষন থাকতে পারে না। বিশেষ করে কোনো মানুষ তো এখানে থাকতে পারবেই না। এখানে কোনো অক্সিজেন নেই। আমাদের এখানে থাকার জন্য আমাদের নিজের ম্যাজিক পাওয়ার ব্যবহার করতে হয়। আর নিজের ম্যাজিক পাওয়ার শেষ হলে আমরাও শেষ।(আমি)
.
–আমি যেমনটা ভেবেছিলাম মোটেও এটা সেরকম নয়। এখানে তো যতদূর দেখি কিছুই দেখতে পাই না।(আলিয়ানা)
.
–আমি বলে রাখি এখানেও অনেক কিছু আছে। কিন্তু সেগুলো খুজতে খুজতে আমাদের হয়তো একশ দুইশ বছর লাগতে পারে। তাই সেগুলো না খোজাই ভালো। আমি আরেকটা কাট দিচ্ছি। তারপর আমরা হ্যাভেনে চলে যাবো।(আমি)
.
–না আরেকটু ঘুরে দেখি কিছু দেখতে পাই কিনা।(আলিয়ানা)
.
–ড্রিম কুইন তো বেহুশ হয়ে রয়েছে। এভাবে যদি দুজন ঘুরে বেরায় তাহলে তো মনে হবে আমরা দুজন ডেট করছি।(আমি)
.
–সেটা কিভাবে হয়। আমি কেনো আপনাকে ডেট করতে যাবো?(লাল হয়ে আলিয়ানা বললো)
.
–মজা করলাম। কিছু মনে করবেন না। এখানে বেশীক্ষন ঘুরলে তেমন সবাই ভাবতে পারে, তাই চলে যাওয়ায় ভালো।(আমি)
।।।
।।।
আমি আরেকটা ডাইমেনশন কাট দিলাম। এবার সোজা আরেকটা পোর্টাল গিয়ে সোজা হ্যাভেনের দরজায় খুললো। হ্যাভেন হেডালিফ(মনস্টার দুনিয়া) এর সবচেয়ে কাছের দুনিয়া ছিলো। কিন্তু ডেভিল আর এন্জেলদের শত্রুতার জন্য দুটো দুনিয়ার মধ্যে এখন কতো দূরত্ব হয়ে গেছে সেটা কেউ জানে না। আমাদের দুই দুনিয়ার উপরে একটা অভিশাপ রয়েছে। আমরা যত যুদ্ধ করবো একে অপরের সাথে ততই আমাদের দূরত্ব বারতে থাকবে। জানি না এন্জেলরা এখন আমাকে কি হিসাবে দেখবে তাদের দুনিয়াতে আসার জন্য।।
।।।
।।।
হ্যাভেন বেশ সুন্দর একটা জায়গা। পুরো সাদা মেঘের উপরে একটা বিশাল রাজ্য তাদের। আর এটাই হ্যাভেনের একটা রাজ্য। তার রাজা হলো আমার মামা মাইকেল। জানি না আমার প্রবেশ থাকবে কিনা ভিতরে। কিন্তু যায়হোক আমি হার মানবো না। হ্যাভেনের সাথে যুদ্ধ হলেও আমাকে রানী লুসিকে সুস্হ করতে হবে। যদি দরকার পরে তাহলে মামাতো বোনকে অপহরন করে নিয়ে আসবো। হ্যা এখন যখন ভাবলাম বিষয়টা খারাপ না। এমনি পৃথিবীতে তো অপহরন করলে কিডন্যাপাররা টাকা চায় অনেক, আমি কিন্তু মামার থেকে তার সিংহাসন চাইতে পারবো। তারপর এই পুরো হ্যাভেন ও আমার মুঠোই হবে। কথাগুলো ভাবতে লাগলাম আর শয়তানি একটা হাসি দিলাম।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ২৮
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
আমরা হ্যাভেনের গেটে দাড়িয়ে আছি। জানি না আমাদের ভিতরে এন্ট্রি হবে কিনা। কিন্তু এটুকু জানি এন্জেলরা আমাকে দেখলে আমার উপরে ঠিকই আক্রমন করবে। পুরো এগারো দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সৈন্য হলো হ্যাভেনের। তারা ডেভিলদের মোট সৈন্যের দ্বিগুন। এবং এক একজন এন্জেল সেনা দুজন ডেভিল সেনাকে হারাতে সক্ষম। তারপরও প্রত্যেকবার এন্জেল আর ডেভিলদের যুদ্ধ শেষ হতে পারে না। প্রত্যেক যুদ্ধ শেষের দিকে গেলেই এজগার্ড সেই যুদ্ধ বন্ধ করে দেই। তা নাহলে এই পর্যন্ত ডেভিলরা প্রায় প্রত্যেকবারই হারতো। এমন নয় যে ডেভিলদের সৈন্য সংখ্যা কম। পূর্বে সমস্যা হতো মনস্টার ওয়ার্ল্ডে থাকা মানুষ এবং অন্যান্য মনস্টার দেরকে নিয়ে। তারা কোনো মতে ডেভিল কিং এর সাহায্য করতে চাইতো না। এতে করে ডেভিলদের সৈন্য সংখ্যা দুর্বল থাকতো। আর হ্যা একটা কথা বলে রাখি একটা সময় ছিলো যখন মানুষ আর মনস্টার এক সাথে মনস্টার দুনিয়াতে থাকতো। তাদের অধিকাংশই পুরানো সব ডেভিল কিং দের হাতে মারা গেছে। আর যারা বেঁচে পৃথিবীতে গিয়েছিলো তাদের মেমোরীও ডেভিল কিং বদলে দিয়েছিলো যাতে তারা কখনো এই দুনিয়ার বিষয়ে মনে না করতে পারে। অবশ্য ডেভিল কিং দের আরেকটা ক্ষমতা হচ্ছে মেমোরী নিয়ন্ত্রন করা। তবে স্পেলটার জন্য আমি এখনো প্রস্তুত না। এটা অনেক শক্তিশালী স্পেল। এটা ব্যবহার করে আমি যে কারো মনে নকল মেমোরী দিয়ে দিতে পারবো, এমন কি তাদের মেমোরী নিজেও দেখতে পারবো৷ তবে সেটার জন্য এখনো সময় আছে। ভিরু ছোট হয়ে এবার আমার ঘাড়ে এসে বসলো। আর আমি আমার ডানা বারোটা মেলে দিলাম। রানী আলিয়ানা হাওয়ার মধ্যে ম্যাজিকের মাধ্যমে উড়তে লাগলো।
।।।
।।।
আমরা হ্যাভেনের দরজার কাছে গিয়ে নামলাম। জায়গাটা মেঘের বানানো। এখান থেকে এমন মনে হচ্ছে নিচে নামলেই আমরা মানুষের কিংবা মনস্টার দুনিয়া দেখতে পাবো, কিন্তু আসলে সেরকম না। নিচে নামলে আমরা মহাকাশের জিরো গ্রাভিটিতে আটকে যাবো। আমি গেটটা দেখতে লাগলাম। বিশাল আকারের গেট। মনে হচ্ছে কোনো দৈত্যের বাসার গেট এটা৷ আমার মনে হচ্ছে এন্জেলরা একসময় মনে হয় বিশালাকার ছিলো তাই তাদের গেট এতো বিশাল হবে। দরজা আস্তে আস্তে খুলতে লাগলো, আমি ভাবলাম কেউ কথা বলবে কিন্তু সেটা না করে তারা আমাদের দিকে তীর ছুরতে লাগলো। তীরগুলো আলোর গতিতে আমার দিকে আসতে লাগলো। সাধারন ম্যাজিক তীরের থেকে এটা কয়েকগুন বেশী ফাস্ট। এন্জেলরা কখনো ডেভিলদের ছাড়া কারো সাথে যুদ্ধে যায় না। কিন্তু এগারো দুনিয়ার মধ্যে কেউই কখনো এন্জেলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে সাহস পায় নি। কারন তাদের সেনা একদম আলাদা।
।।।
।।।
আমি আমার আল্ট্রা স্পিড মোডে চলে গেলাম। এবার তীর গুলো খুব আস্তে আস্তে আমার দিকে আগাতে লাগলো। আমি সেগুলো খুব সহজেই অবহেলা করে ঠিকমতো উঠে দাড়ালাম। আমার পাশে থাকা আলিয়ানা তার চারদিক দিয়ে একটা গোল ম্যাজিকাল ঢালের মতো বানালো। সেটা ভেদ করে তীর যেতে পারে নি। এবারও থামলো না। প্রথমে তো মনে হয় একশোর মতো তীর ছুড়েছিলো আমাদের দিকে, কিন্তু এবার হাজার হাজার তীর আমাদের দিকে আসতে লাগলো,
.
–জ্যাকসন আমি কি কিছু করবো?(ভিরু)
.
–না এরা হয়তো জানে না এরা কার উপরে হামলা করছে। যখন দেখতে পারবে কাকে আক্রমন করছে তখন নিজ থেকেই আমার সামনে এসে কুর্নিশ করবে।(আমি হাসতে হাসতে বলতে লাগলাম)
.
–হঠাৎ তোমার কি হলো? এমন আজব ফিলিং তো আগে কখনো দেখি নি।(ভিরু)
.
–এটাই তো ডেভিল কিং দের আসল রূপ। তারা বাইরে ভালো হওয়ার চেষ্টা করবে, কিন্তু ভিতরে তারা একদম অন্ধকার।(আলিয়ানা)
.
–ব্যাপারটা মোটেও ভালোর দিকে যাচ্ছে না। রানী আলিয়ানা আপনি রানী লুসিকে সাথে নিন।(ভিরু)
।।।
।।।
ভিরু হয়তো বুঝতে পারলো আমি কি করবো, তাই আলিয়ানা আমার হাত থেকে লুসিকে নিলো, এবং ভিরু তাদের নিয়ে অনেক দূরে উড়ে গেলো। আমার দিকে যে তীর গুলো আসতে লাগলো আমি সেগুলোকে আমার ডানা বের করে এক ঝাপটায় তাদের দিকে উল্টো পাঠিয়ে দিলাম। তাতে তাদের অনেক সেনা গুরুতর নিহত হলো। কিন্তু আমার রাগ অনেক বেরে যাচ্ছে। আমি আমার মাইন্ডকে কেনো জানি কন্ট্রোল করতে পারছি না। আমার ডান পাশের সাদা ডানার অনেকটা অংশ কালো হয়ে গেলো। এবং বাম পাশের ডানা গুলো অনেক বড় হয়ে গেলো, আমার দিকে আবারো তারা তীর ছুড়তে লাগলো, যেহেতু আমি ডেভিল কিং, আর তারা শুধু এই দরজার গার্ড সৈনিক তাই কেউ আমার কাছে আসছে না লড়তে। দূর থেকে আমার দিকে তীর ছুরছে। কিন্তু আমার চারিদিক দিয়ে একটা কালো ছায়া ঘিরে ধরেছে আমাকে, যেটা সব তীরের পাওয়ারগুলোকে খেয়ে ফেলছে। আর সেই পাওয়ারগুলো আমার শরীরে মধ্যে পৌছে দিচ্ছে। আমি হ্যাভেনের মতো সুন্দর জায়গাকে ধ্বংস করতে চাই না, তাই ছোট একটা ব্লাক ম্যাজিক বল বানালাম যেটার আসল নাম “ব্লাক হোল”। এই স্পেলটার কাজ হলো এটা যেখানে ফেলবো সেই জায়গায় একটা গোল টেলিপোর্টেশনের মতো কাজ করবে। কিন্তু সমস্যা হলো সেটার ভিতর দিয়ে কেউ নিজের ইচ্ছায় যাতায়াত করবে না। বরং সেটা সবাইকে তার ভিতরে নেওয়ার জন্য টানবে। আর সেই টান একটা শক্তিশালী ঘূর্নিঝড়ের থেকেও একশোগুন শক্তিশালী হবে। আমি আমার স্পেলটা পড়লাম। এবং আমার হাতে একটা ছোট কালো বলের মতো কিছু একটা আসলো। আমি সেটাকে ছুড়ে মারলাম গেটের ভিতরে। সাথে সাথে সেখানে একটা টেলিপোর্টেশন হোল খুলে গেলো। আর সেটার ভিতরে শুধু এন্জেলদের নয় বরং আশেপাশের সবকিছু টানতে লাগলো। দেখতে দেখতে আমার চোখের সামনে থেকে গেটের পুরো এলাকা উধাও হয়ে গেলো। আমি কখনো ভাবি নি এটা এতো বেশী ভয়ানক হবে। আমার উদ্দেশ্য ছিলো শুধু আমার উপরে যে সেনাগুলো আক্রমন করেছে তাদের ব্লাক হোলে ফেলা। কিন্তু এন্জেলদের পুরো একটা শহর যে উধাও হয়ে যাবে এটা দেখে অবাক। তারপর ও বুঝতে পারলাম লোকি কেনো আমাকে চাচ্ছে তার কাছে। আমি নিজের ক্ষমতার উপরে একটু অবাক হচ্ছিলাম। নিজেকে অনেকটা সুপারহিরো মনে হচ্ছিলো। কিন্তু এইদিকে কয়েকলক্ষ এন্জেল আকাশ দিয়ে সাদা ডানা নিয়ে উড়ে আসছে আমার দিকে। তারা এদের মতো গার্ড নয়। বরং তারা যুদ্ধে অংশগ্রহন কারী সেনা। তারউপর দুই তিন লক্ষের মতো তো তাদের হবে। তারা সবাই সাদা কাপড় পরে আছে। সাদা কাপড়, আর সাদা ডানায় তাদের দেখে মনে হচ্ছে আকাশ ভরা একঝাক সাদা পাখি আমার দিকে আসছে। মনে হচ্ছে বিষয়টা খারাপ যাচ্ছে। আমি ডেভিল কিং হলেও এতে সৈন্যের সাথে কখনো পেরে উঠতে পারবো না। প্রথমে ভাবলাম তারা আমার উপরে আক্রমন করবে, কিন্তু না একটা মেয়েকে দেখলাম তাদের মধ্য থেকে আমাদের দিকে আসতে,
বয়সে আমার সমান হবে কিনা জানি না। কিন্তু দেখে আমার মতোই মনে হচ্ছে। তার মাথার উপরে মাইকেলের মতো সাদা গোল একটা রিং উড়ছে। এটা সকল এন্জেলদের মাথায় থাকে না। বরং যারা রাজার রক্তের থাকে তাদের মাথায় থাকে এটা। এটা তার মাথায় মানে হয়তো সেই মাইকেলের কন্যা আফরিয়েল।
.
–আপনার ছায়া দেখে মনে হচ্ছে আপনি ডেভিল কিং। বাবা যেটা বলেছিলেন সেটাই সত্য তাহলে। আপনার ডান সাইড আসলেই এন্জেলের।(মেয়েটা)
.
–কে আপনি? আর আক্রমন করতে এসেছেন নিশ্চয়। তাহলে অপেক্ষা করছেন কেনো?(আমি)
.
–আমি আফরিয়েল গোন্জি ফ্যারাডে। থার্ড প্রিন্সেস অফ হ্যাভেন। আমি এখানে আক্রমন করতে আসি নি। প্রথমে ডেভিল কিং এর এখানে আসার কারন জানতে এসেছি। যদি কারনটা খারাপ হয় তাহলে আমার পুরো সেনা আপনার উপরে হামলা করবে এই শহরটা ধ্বংসের কারনে।(আফরিয়েল)
.
–আপনাদের সেনা প্রথমে আমার উপরে হামলা না করলে আমার কিছুই করতো হতো না। শহর ধ্বংসের আসল কারন আপনারা নিজেই।(আমি)
.
–এখানে আসার কারন বলুন। যদি লোকির সাথে লড়তে সাহায্য চাওয়ার জন্য এসে থাকেন তাহলে হ্যাভেন কোনো ভাবে সাহায্য করতে পারবে না।(আফরিয়েল)
.
–আমি এখানে কিছুই করতে আসি নি। শুধু কিং মাইকেলের সাথে কথা বলতে এসেছি। তার থেকে অনেক উত্তর নেওয়া বাকি আমার।(আমি)
.
–বাবা তো আপনাকে অনুমতি দেই নি। তার অনুমতি ছাড়া তার সাথে কথা বলা যাবে না।(আফরিয়েল)
।।।
।।।
মেয়েটা অনেক চালাক। আমি ভেবেছিলাম বোকা হবে। কিন্তু মাইকেলের সাথে আমাকে কথা বলতে দিবে না। বরং আমি পিছনে লক্ষ করছি তার সেনাগুলো আক্রমনের জন্য রেডি হয়ে আছে। শুধু কিছু একটার অপেক্ষায় আছে তারা। আমার মনে হয় না হ্যাভেনে আসার চিন্তাটা সঠিক ছিলো৷ মাইকেলের সাথে কথা বলার ছিলো। আমার আম্মার সম্পর্কে কিছু কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো তাকে, তাই তো হ্যাভেনে আসতে রাজি হয়েছি আমি। আমি ভিরুকে মনে মনে বললাম একটু কাছে আসতে। কারন আমার এখান থেকে পালাতে হবে। এখানে থাকলে হয়তো আমার তাদের মারতে হবে নাহলে তারা আমাকে মেরে ফেলবে। আর মনে হচ্ছে না মাইকেল এখন এখানে আছে। নাহলে আমি এখানে এসেছি সেটা বুঝতে পারতো। যায়হোক মেয়েটা হয়তো জানে মা আমি ওর খালাতো ভাই। না জানায় ভালো, কারন আমার এখান থেকে পালাতে হলে ওকে কিডন্যাপ করতে হবে।
।।।
।।।
আমার সাথে কথা বলতে ছিলো আফরিয়েল। কিন্তু সুযোগ বুঝে তার হাতে থাকা একটা ছোট ধারালো ছুড়ি দিয়ে আমার পেটে আঘাত করলো। আমি মেয়েটাকে চালাক ভেবেছিলাম মাত্রই। কিন্তু এতো বোকা হবে আমি কখনো ভাবি নি। একটা সামান্য আঘাত কখনো ডেভিল কিং কে কিছু করতে পারে না সেটা হয়তো সে জানে না। প্রাসাদ থেকে কখনো বের না হলে যা হয়। আমিও তাকে ফাসানোর সুযোগ পেলাম।
.
–কখনো আপনার গার্ড কম করা উচিত ছিলো না। শত্রু কখনো দয়া দেখাবে না। যেভাবেই হোক আঘাত করবে।(আফরিয়েল)
.
–হুমমম কে জেনো বলেছিলো যুদ্ধে সুন্দরী মেয়েরা অনেক কাজের হয়। কারন তারা তাদের রূপে শত্রুকে মুগ্ধ করে তাদের হত্যা করতে পারে। আজ সেটা যে সত্য বুঝলাম। আপনার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে আমি আমার গার্ড কম করে দিয়েছিলাম। আর সেটার সুযোগ নিয়ে আপনি আমাকে আঘাত করলেন।(আমি)
।।।
।।।
জানি না কেনো কিন্তু আমার মুখ থেকে এমন প্রশংসা শোনার পর এদের মুখ লাল হয়ে যায় কেনো? কোনো মানুষকে এভাবে প্রশংসা করলে হয়তো তারা আমাকে জুতা খুলে মারবে। যাক আমি একটা সুযোগ পেলাম। তাদের সৈন্য এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো। তারা সামনের দিকে আসতে লাগলো। আর আমি এই সুযোগে আফরিয়েল এর হাত ধরে হেচকা টানে আমার বুকের মধ্যে নিয়ে আসলাম। তাকে ঘুরিয়ে বাম হাতে এক্সোনিয়া ধরে তার গলায় ধরলাম। এবার তার সেনারা থেমে গেলো,
.
–আসল কথা বলতে আমি এখানে এসেছিলাম আপনার জন্য। ভেবেছিলাম সব ধ্বংস করেই হয়তো আপনাকে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু না দেখছেন আপনার মনে কতো টান। আপনি সোজা আমার কাছে চলে আসলেন।(আমি)
.
–আমার মনে আপনার জন্য টান থাকবে কেনো? আপনি ডেভিল কিং আপনি আমার শত্রু।(আফরিয়েল)
.
–বেশী কথা বইলেন না। সবাই কিভাবে চুপ করায় জানি না। কিন্তু আমি বলে দিচ্ছি আপনি যে কয়টা কথা বলবেন আমি আপনাকে সে কয়টা কিস দিবো।(আমি)
।।।
।।।
এবার আর কোনো কথা বললো না আফরিয়েল। যাক আমার তাকে দরকার ছিলো শুধু লুসিকে ঠিক করার জন্য। আমার সাথে নিয়ে যায়, পরে মাইকেল ঠিকই আসবে তাকে আমার থেকে ফেরত নিতে। আর তখন মাইকেলের সাথে আমার কথা হবে।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।