#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ০৪
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
চিন্তায় আমার মাথা ঘুরতে লাগলো। অবশ্য আমি কখনো এতো চিন্তা করি না। তবে আজ আমি বিশাল চিন্তিত। কারন একটা দিনে আমার সাথে এতো কিছু হয়ে যাবে আমি কখনো চিন্তা করতে পারি নাই। একটা অন্য দুনিয়ায় চলে আসবো এটাও কখনো চিন্তা করি নাই। সন্ধা হওয়ার পথে। আমার খুব ক্ষুধাও লেগেছে। এখন মনে পরেছে সেই কাল থেকে তেমন কিছুই খাওয়া হয় নি আমার। চিন্তায় আমার খাওয়ার কথা মনেই ছিলো না। আবার এনা আমার শরীর থেকে রক্ত চুষে খেয়েছে, তাই আমার মাথা বার বার ঘুরাচ্ছে। এনা ক্লাসে যাওয়ার সময় বলেছিলো এখানের ক্যান্টিনে আমাদের খাবারের ব্যবস্থা হবে রোজ। তাহলে আমার এখন ক্যান্টিনের দিকে যাওয়া দরকার। ক্ষুদায় আমার দম বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে৷ হঠাৎই দরজায় কেউ নক দিলো।
.
–কে?(আমি চমকে?)
.
–আমি এনা।(এনা)
.
–ও এনা। তুমি। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।(আমি)
.
–একদম ভিতু তো তুমি। আমার মনে পরেছে তুমি দুপুরে কিছু খাও নি। তাই এখন এক সাথে খাবার খাওয়ার জন্য তোমাকে ডাকতে এলাম।(এনা)
.
–ওও। আচ্ছা দাড়াও আমি আমার শার্টটা চেন্জ করি।(আমি)
।।।
।।।
আমি আমার ব্যাগ থেকে একটা টিশার্ট বের করলাম এবং আমার সকালের ইউনিফর্মের শার্ট খুলে টিশার্টটা পরলাম। এনা লজ্জিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
.
–তোমার পিঠে এই দাগগুলো কিসের?(এনা)
.
–ও এইগুলো তেমন কিছু না। এটা আমার পিঠে ছোট থেকেই।(আমি)
.
–আমি শুনেছি যাদের শরীরে এরকম দাগ থাকে তারা কিছু স্পেশাল ম্যাজিক পাওয়ার এর ক্ষমতাশালী হয়।(এনা)
.
–ম্যাজিক পাওয়ার?(আমি)
.
–হ্যা। আচ্ছা বাদ দাও চলো আমরা ক্যান্টিনের দিকে যায়।(এনা আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো)
।।।।।
।।।।।
এনার সাথে ক্যান্টিনে গিয়ে এক সাথে খেয়ে নিলাম। তারপর লাইব্রেরী থেকে এই দুনিয়া সম্পর্কে জানার জন্য কিছু বই নিয়ে আমার রুমে আসলাম। আমার জায়গাটা তেমন খারাপ লাগছে না। মাথার মধ্যে আসলেই অনেক প্রশ্ন আসছে। কে আমি? কি আমার পরিচয়? আমি কি? আমার আনা বই গুলো আমি টেবিলে রেখে পড়তে লাগলাম। এই দুনিয়ার নিয়ম কানুন এক এক করে পড়তে লাগলাম। সব কিছু জানা যাবে না। তারপরও হালকা ধারনা ঠিকই হবে আমার। বাকিটুকু এনার থেকে শুনে নিয়ে যাবা। দুটো বই শেষ করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো।
।।
হঠাৎ এনার কথা মনে পরলো। মেয়েটার সাথে একদিনেই আমার অনেক ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেছে। জানি না কতদিন টিকবে আমাদের ভালোবাসা। আমি আমার জানালা খুললাম। আজ পূর্নিমা রাত । পুরো আকাশ ভরা তারা। বিশাল রুটির মতো একটা উজ্জল চাঁদ দেখা যাচ্ছে আকাশে। অনেক রাত হয়ে গেছে। ঘুম পাচ্ছিলো জানালা আটকিয়ে আমি ঘুমাতে যাবো তখনি হঠাৎ করে দূর থেকে একটা আলো জ্বলতে জ্বলতে আমার দিকে আসতে লাগলো। এরকম সাদা আলো দেখে ভয় লাগলো। হয়তো কেউ দূর থেকে আমাকে হামলা করেছে। আমি জানালা আটকিয়ে দিলাম। আটকিয়ে বিছানার নিচে চলে আসলাম। ভাবলাম জানালা ভেঙে আলোটা চলে আসবে। কিন্তু না দেওয়ালের মধ্য দিয়েই আলোটা বেরিয়ে আসলো। পুরো একটা ফুটবলের মতো গোল একটা জিনিস থেকে আলো বের হচ্ছে। খালি চোখে তাকিয়ে থাকা যায়না জিনিসটার দিকে। হঠাৎ জিনিসটা থেকে কথা বের হলো,
.
–এতো বছর পর আমি আমার শরীরের সন্ধান পেলাম তাহলে।(গোল আলকিত বলটা কথা বলতে লাগলো)
.
–কে তুমি? আর এখানে কি করছো?(আমি ভয়ে বল্লাম)
.
–ও তাহলে ভয় পাইয়ে দিয়েছি তোমাকে? আচ্ছা একটা মানুষের রূপেই কথা বলি।(বলেই বলটা একটা মানুষের রূপ নিলো কিন্তু এখনো আলো বের হচ্ছে তার শরীর থেকে)
.
–আমার প্রশ্নের উত্তর দাও আগে?(আমি টেবিলে থাকা স্কেলটা হাতে নিয়ে বলতে লাগলাম)
.
–ও তাহলে আমার শরীর এতোটা দুর্বল হবে ভাবি নি কখনো। হ্যা অবশ্য আমি নাই বলেই এতো দুর্বল। শুনো তাহলে আমার নাম জ্যাকসন ব্রিট। লংস্টারের রাজা জ্যাসন এর সুযোগ্য সন্তান।(একটু হেসে বললো)
.
–তুমি জ্যাকসন তাহলে আমি এখানে তোমার জায়গায় কি করছি?(আমি)
.
–কারন আমি ভূত আমি তো মনস্টারদের সাথে থাকলে ভয় পাবে তারা।
.
–কি? তুমি ভূ-ভূ-ভতততত?(আমি পেয়ে)
.
–আমি জানতাম তুমি একটা গাধায় হবে। আমার এতো সুন্দর শরীর তোমার মতো গাধার কাছে থাকলে যা হয়।
.
–আমার শরীর তোমার মানে?(আমি ভয়ে কেদে দিলাম)
.
–আহারে ছোট বাচ্চা কাদে না থাক। সহজ কথায় আসি। আমি তোমার শরীরের একটা অংশ। আমি তোমার সকল ক্ষমতা এবং তোমার মনস্টার ফর্ম ধারন করি। একটা কথা বলতে গেলে আমি ছাড়া তুমি একটা সাধারন মানুষ।
.
–এটা কিভাবে সম্ভব আমার শরীরের একটা অংশ যে আমার ক্ষমতা ধারন করে সে জীবিত হতে পারে কিভাবে?(আমি)
.
–এটা সেই বুড়ো দাড়ী ওয়ালার দোষ। তোমার জন্মের পরেই তোমার শরীর থেকে আমাকে আলাদা করে জীবিত করেছে।
.
–দাড়ী ওয়ালা লোক মানে?(আমি)
.
–দেখো এইসব কিছুর উত্তর দেওয়ার মতো সময় আমার নেই। দেরী করলে আমি কোনোদিন আমার শরীর পাবো না। তুমি চুপ করে দাড়াও আমি ঢুকে পরি তোমার শরীরে।
.
–এই দাড়াও দাড়াও।(আমি)
।।।
।।।
আমি স্কেল হাতে নিয়ে নিজেকে বাচানোর চেষ্টা করতে গেলাম কিন্তু জিনিসটা আমার শরীরের ভিতরে চলে গেলো। আমার মাথা আসতে আসতে ঘুরতে লাগলো। আমার মনে হচ্ছিলো আমি আমার শরীর হারিয়ে ফেলেছি। সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে আমি ফ্লোরে পরে গেলাম।
।।
সকালে আমার ঘুম ভাঙলো। আমি ফ্লোরে পরে আছি। হাত দিয়ে চোখ মুছতে লাগলাম। হঠাৎ নজরে পরলো আমার পুরো হাত ভরেই কেমন একটা দাগ দাগ হয়ে গেছে৷ দেখে পিঠের দাগের মতোই মনে হচ্ছে। জানি না এটা কিসের দাগ কিন্তু আমার মনে হচ্ছে কালকের ঔ আজব জিনিসটার জন্যই হয়েছে। আমি ফ্রেস হয়ে নিলাম। সকালের খাবার দরজার সামনে রেখে যাবে শুনেছি তাই দরজা খুলে খাবার নিয়ে আসলাম। খাবার খেয়ে রেডী হয়ে ক্যাম্পাসের দিকে রওনা হলাম। ক্লাসে গিয়ে বসে পরলাম। এনা ভিতরেই ছিলো।
.
–কেমন লাগলো বই?(এনা)
.
–ভালোই। অনেক কিছু জানতে পারলাম।(আমি)
.
–ও তোমাকে আমার এক বান্ধুবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দি। ওর নাম জেসিকা।(একটা মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললো)
.
–হাই।(আমি)
.
–হাই আমি জেসিকা। তুমি আমাকে জেসি বলে ডাকতে পারো।(জেসি)
.
–ওকে জেসি। আমি জ্যাকসন ব্রিট। তুমি চাইলে আমাকে হৃদয় বলে ডাকতে পারো।(আমি)
.
–জ্যাকসন ব্রিট?(অবাক হয়ে জেসি আমার দিকে তাকিয়ে রইলো)
.
–আমার নাম শুনে অবাক হওয়ার কি আছে?(আমি)
.
–তুমি একজন Classified মনস্টার তোমার নাম পুরো ক্যাম্পাস জানে। তাই হয়তো অবাক হয়েছে ও।(এনা)
.
–না। আচ্ছা হৃদয় যদি তুমি মাউন্ড না করো আমি কি তোমার হাতটা দেখতে পারি?(জেসি)
.
–হাত আমার হাত দেখবে কেনো?(আমি)
.
–না শুধু একটা জিনিস কনফার্ম করার জন্য।(জেসি)
.
–ওকে।(আমি)
।।।
।।।
আমি আমার হাত আগালাম জেসিকার দিকে। ও আমার বাম হাতের তালুর পাশে ওর ডান হাত রাখলো। হঠাৎ দুই হাতের সব রেখা গুলো জ্বলতে থাকলো।
.
–কি হচ্ছে এসব?(আমি)
.
–আমি তোমার সাথে একটু আলাদা কথা বলতে চাই।(জেসি)
.
–আমার সাথে আলাদা?(আমি আমার আশে পাশে তাকালাম। সবাই যে রকম ছিলো সেরকমই দাড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে কেউ সময় আটকে দিয়েছে)
.
–অবাক হওয়ার কিছু নেই। সময় এবং জায়গা এই দুটোকে আমি কন্ট্রোল করতে পারি।(জেসি)
.
–কে তুমি?(আমি)
.
–আমি তোমার যমজ বোন হৃদয়।(জেসি)
.
–কি আমার যমজ বোন!(আমি অবাক হয়ে জেসিকে বললাম)
.
–হ্যা। আমি তোমার আপন যমজ বোন।(জেসি)
.
–এটা কিভাবে সম্ভব? আমার তো এসব বিষয়ে কিছুই মনে পরছে না।(আমি)
.
–হ্যা পরবে না। কারন আম্মা তোমার স্মৃতি সব মুছে দিয়েছিলো।(জেসি)
.
–মুছে দিয়েছিলো? কিন্তু কেনো?(আমি)
.
–আমি এখনো সব জানি না। তবে দাদাভাই আমাকে বলেছে আমি নিজে যতটুকু জানি সেটা তোমাকে বলতে।(জেসি)
.
–তো কি জানো তুমি বলো আমাকে?(আমি)
.
–সব ঝামেলা শুরু হয় আমাদের জন্মের এক মাস পর থেকে। লংস্টার রাজ্যের একটা নিয়ম আছে। রাজার সবচেয়ে শক্তিশালী ছেলেটাই পরের রাজা হতে পারবে৷ তখন দাদাভাই রাজ সিংহাসনে ছিলো। আমাদের বাবা আর তার দুই ভাইয়ের মধ্যে আমাদের বাবাই পরের রাজা হওয়ার যোগ্য ছিলেন। কিন্তু বাবা তোমাকে নিয়ে ভয় পাচ্ছিলো।(জেসি)
.
–আমাকে নিয়ে ভয় পাচ্ছিলো মানে?(আমি)
.
–তোমার জন্মের পর থেকেই তুমি অনেক দুর্বল ছিলে। সবাই ভেবেছিলো হয়তো আস্তে আস্তে তোমার ক্ষমতা গুলো তুমি পাবে কিন্তু না তুমি একজন সাধারন মানুষের মতো ছিলে। আর তখনি বাবার কি জানি হয়ে গেলো। বাবা সন্দেহ করতে লাগলো আম্মার উপরে। তিনি বলতে শুরু করলেন এই বাচ্চা একটা অভিশাপ তার কাছে। আর দিন যখন আরো কয়েকটা গেলো বাবা রাজা হয়ে গেলেন। কিন্তু রাজা হয়েই বাবা পুরো পাল্টে গেলেন। যে বাবাকে আমরা চিন্তাম সে আর সে ছিলো না। রাজা হওয়ার পরের দিনই তিনি দাদাকে জেলে আটকে দিলেন। এবং এর বিরুদ্ধে যে বলেছে সবাইকে মেরে ফেলেছে। তোমাকে মারার হুকুম ও তিনি দিয়েছিলেন। তখন আম্মা আমাকে দাদাভাইয়ের কাছে রেখে দিয়ে তোমাকে নিয়ে পালিয়ে আসে।(জেসি)
.
–….(জেসির কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে এমনি এমনি পানি পড়তে লাগলো)
.
–তার দুইদিন পর আম্মার মৃত শরীর নিয়ে কিছু সৈন্যরা রাজ দরবারে আসে। তারা তোমাকে খুজে পাই নি। রাজ্যের অবস্থা খারাপ দেখে দাদাভাই আমাকেও একটা নিরাপদ জায়গায় পাঠিয়ে দেই। দাদাভাইয়ের থেকে শেষ চিঠিতে যখন জানতে পারলাম তুমিও এই কলেজে পড়তে আসবে সেটা শুনে আমি কত খুশি হয়েছি জানো?(জেসি)
.
–একটা বাবা হয়ে তিনি কিভাবে পারলেন এটা করতে?
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ০৫
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
যতই সময় যাচ্ছে আমার মন আস্তে আস্তে শক্ত হচ্ছে। মনের মধ্যে এক অজানা রাগ কাজ করে সব সময়। আমি জেসির বলা সব কথা শুনে চুপ করে আছি।
.
–তুমি ঠিক আছো হৃদয়? না এই হৃদয় নামটা আমার দ্বারা হবে না। আমি তোমাকে জ্যাক বলে ডাকবো।(জেসি)
.
–ওকে বলো সমস্যা নাই।(আমি আমার চোখের পানি মুছে)
.
–নিজের ছোট বোনকে কি এতোদিন পর দেখেও জরিয়ে ধরতে মন চাচ্ছে না?(জেসি)
.
–আমার মায়া লাগছে ঠিকই। কষ্টও হচ্ছে। কিন্তু বোনের জন্য মায়া দেখানো ভুলে গেছি অনেক আগে থেকে।(আমি)
.
–সেটা কেনো?(জেসি)
.
–বাদ দাও এসব। আগে বলো আমরা কি রকম মনস্টার?(আমি)
.
–আমরা হচ্ছি Half Demon মানে আমাদের শরীরে মানুষ আর Demon দুই এর রক্ত।(জেসি)
.
–আমাদের আম্মা কি তাহলে মানুষ ছিলো?(আমি)
.
–সেটা আমি জানি না। তবে দাদা বলেছে আমাদের পূর্বপুরুষের সবাই হাফ demon ছিলো।(জেসি)
.
–তাহলে আমাদের মনস্টার রূপ তো বিশাল হবে।(আমি)
.
–আমার মনে হয় না। যারা পুরো demon শুধু তারাই বড় হয়। কিন্তু আমাদের এটাই আসল রূপ। আমরা দেখতে মানুষের মতো কিন্তু সব মনস্টারদের থেকে শক্তিশালী। (জেসি)
.
–ওওও।(আমি)
.
–হ্যা আর আমরাই মনস্টার দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মানের বংশের প্রথম গোত্রের।(জেসি)
.
–ওওও।(আমি)
.
–হ্যা। আচ্ছা এসব নিয়ে পরেও আলোচনা করা যাবে। আমি আর সময়টা আটকে রাখতে পারছি না।(জেসি)
।।।
।।।
হঠাৎ আবার সব কিছু আগের মতো হয়ে গেলো। এনা ও কথা বলতে লাগলো।
.
–কি করলি ওর সাথে জেসি? ঔভাবে আলো জ্বললো কেনো তোদের হাত এক সাথে রাখার পর?(এনা)
.
–কারন আমরা দুইজন ভাই বোন।(জেসি)
.
–কি? তাহলে হৃদয় তোর ভাই যার কথা আমাকে এক বার বলেছিলি?(এনা)
.
–হ্যা। ওকে হৃদয় বলবি না ওর নাম জ্যাক।(জেসি)
.
–তুই বলিস ওকে জ্যাক। আমি তো ওকে হৃদয় ই বলবো তাই না হৃদয়?(এনা)
.
–আচ্ছা তোমরা দুজন দুজনকে চিনো কিভাবে?(আমি)
.
–তোমাকে তো বলেছিলাম আমি মানুষের দুনিয়ায় অনেকটা সময় থেকেছিলাম তখনই ওর সাথে পরিচয় হয় আমার।(এনা)
.
–ওওও।(আমি)
।।।
।।।
এনা আমার উপরে পরে আমার গলায় আবার একটা কামড় দিলো। এবার পুরো ক্লাসের জনগন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেরা চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। তাকিয়েই তো থাকবে কারন বিশিষ্ট দুই সুন্দরী মেয়ের সাথে আমি কথা বলতেছি। আবার একজন আমাকে মিষ্টি কামড় দিচ্ছে তাদের মনে তো জ্বলবেই। জেসিকা এনাকে টেনে নিলো আমার গলা থেকে।
.
–কি করছিস তুই? আমার ভাইকে কামড় দিচ্ছিস কেনো?(জেসি)
.
–আমি ভ্যাম্পায়ার ভুলে গেছিস?(এনা)
.
–না ভুলি নি। কিন্তু আমার ভাইকে কামড় দিবি কেনো?(জেসি)
.
–কামড় কেনো আমি কিস দিবো তাতে তোর কোনো সমস্যা?(এনা)
.
–আরেকবার ছুয়েই দেখ না আমার ভাইকে কি করি।(জেসি)
.
–তোমরা দুজন থামবে? স্যার আসবে ক্লাসে।(আমি)
।।।
।।।
জেসি আমার পাশে থাকা একটা সিটে বসলো৷ ক্লাসের সিট গুলো এক একজনের জন্য একটাই।
.
–উনি লংস্টারের অষ্টম ডিউক এর ছোট ভাই।(আমি)
.
–হ্যা আমি জানি। ওনার সাথে আমার কথা হয়েছে একটু আগে।(জেসি)
.
–ও।(আমি)
.
–হ্যা।(জেসি)
।।।।
।।।।
ক্লাস শেষ হওয়ার পর আমরা সোজা ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিলাম। দুপুরের খাবার খেতে হবে। আমি আর জেসি টেবিলে বসলাম আর এনা আমাদের জন্য খাবার আনতে গেলো।
.
–জ্যাক আমি তোমার মধ্য থেকে আজব কিছু ক্ষমতা অনুভব করছি। তাহলে কি তোমার লুকায়িত ক্ষমতা দেখা দিয়েছে?(জেসি)
.
–লুকায়িত ক্ষমতা মানে?(আমি)
.
–দাদাভাই আমাকে চিঠিতে বলেছিলো তোমার কাছে এমন কিছু ক্ষমতা ছিলো যেটা এই পুরো মনস্টার রাজ্যকে ধ্বংস করে দিতে পারবে। শুধু এই মনস্টার রাজ্য না বরং এই মানুষের দুনিয়াও ধ্বংস করে দিতে পারবে।(জেসি আসতে করে বললো)
.
–কি আমার কাছে এমন ক্ষমতা ছিলো?(আমি)
.
–হ্যা। কিন্তু তোমার ছোট বেলায় দাদা ভাই তোমার ক্ষমতাকে তোমার শরীর থেকে আলাদা করে একটা স্পেল দিয়ে সিল করে রেখেছিলো।(জেসি)
.
–ওওও।(আমার সাথে হওয়া কালকের কথা আর বললাম না)
.
–কি কথা হচ্ছে দুই ভাই বোনের সাথে?(এনা খাবার এনে বললো)
.
–এতো বছর পর নিজের ভাইকে দেখলে কত কথা বলার থাকে সেটা তুই বুঝবি না।(জেসি)
.
–হয়ছে থাক আর বলতে হবে না।(এনা)
।।।
।।।
দেখতে দেখতে আমাদের তিনজনের মধ্যে খুব ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। আজকের রাতটা পুরো অন্ধকার। বাইরে কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না। কয়েকটা তারা দেখা যাচ্ছে শুধু। আজ এক সপ্তাহ কেটে গেছে এখানে এসেছি। জেসির বলা কথাগুলো এখনো আমার মনে আছে। আমার কাছে নাকি এই দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা আছে, কিন্তু আমি তো কোনো কিছু ফিল করি না। সেদিন সেই অদ্ভূদ গোল আলোর মতো জিনিসটা আমাকে বলেছিলো সে আমার ক্ষমতা ধারন করে, তাকে ছাড়া আমি কিছুই না। আচ্ছা সে তো আমার ভিতরেই আছে তাহলে আমি কোনো রকম ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছি না কেনো। আদৌও কি আমি কিছু করতে পারবো? নাকি শুধু এসব কথার কথা। আচ্ছা বাদ দি নিজেকে নিয়ে ভাবা। আমাকে রক্ষা করার জন্য জেসি আছে। জেসির কাছে সময় এবং জায়গা নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা আছে। ও যে কাউকে বা কোনো জিনিসকে আটকে দিতে পারবে। এবং সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ও সময়কে এক মিনিট পিছনেও নিতে পারে। এছাড়া আছে এনা। এনার সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি ও একটা ভ্যাম্পায়ার। আজকে ওর আসল রূপ দেখলাম। বিকালের দিকে এনাকে নিয়েই বের হয়েছিলাম। আজ ওর সাথে জঙ্গলের দিকে গিয়েছিলাম কিছুটা সময় কাটাতে। জেসি আসার পর ওর সাথে আলাদা সময় কাটানো হয় না। তাই আজ বের হয়েছিলাম। তখনি আমাদের ক্লাসের তিনজন ছেলে আমাদের কাছে চলে আসে,
.
–কি চাও তোমরা?(আমি)
.
–আমরা তোকে চাই। একজন Classified মনস্টার এর মাথার দাম অনেক। আর তাছাড়া এমনিতেও কলেজের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে এখানে, আর কি কিছু লাগে আমাদের।(ছেলে গুলো হেসে)
।।।।
।।।।
পরিস্থিতি সুবিধার ছিলো না। ওরা নিজেদের আসল ফর্মে চলে আসলো। একজন দেখতে পুরো শেয়ালের মতো। একজন দেখতে সাপের মতো, আরেকজন গরিলার মতো। সবারই হাত পা আছে। চোখ গুলো বড় বড়। এই প্রথম আমার চোখে দেখা কোনো মনস্টার। টাও একটা না তিনটা। দুইটা আমার দিকে আসলো আর একটা এনার দিকে। গরিলার মতো দেখতে মনস্টারটা আমাকে তার বড় হাত দিয়ে একটা জোড়ে খুশি দিলো। আমি সোজা গিয়ে একটা গাছের সাথে বারি খেলাম। পুরো শরীর আমার নিস্তেজ হয়ে পরলো। আমি নরাচরার শক্তি পেলাম না। মুখ দিয়ে অনেকটা রক্ত পরলো। তখন দেখলাম দুটো আমার দিকে এগিয়ে আসছিলো। হয়তো মেরে ফেলবে আমায়। কিন্তু সাথে সাথে এনা এসে দুটোকে দিটো লাথি মারলো। দুই লাথিতে দুটো ছয়টা গাছ ভেঙে দূরে গিয়ে পরলো। আমি শুধু এনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। এনার চুল গুলো কালো থেকে পুরো সিলভার হয়ে গেছে। ওর চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। এছাড়াও ওর মুখের দুটো দাত কিছুটা বড় হয়েছে। এনা আমাকে হাত দিয়ে টানতে গেলো কিন্তু আমি তখনি অজ্ঞান হয়ে গেছি। যখন উঠলাম তখন আমি আমার বিছানায়। এনার শরীরে এতোটা শক্তি থাকবে আমি ভাবতে পারি নাই।
।।
এখন জানালা খুলে বসে আসি। হঠাৎ দেখি এনার রুমের জানালা খুললো।
.
–উঠেছো তাহলে তুমি? আমি খুব চিন্তিত ছিলাম তোমার জন্য।(এনা)
.
–চিন্তা করার কি আছে? আমি ঠিক আছি।(আমি)
.
–আসলে চিন্তা করার ব্যাপার আছে।(এনা হঠাৎ ওর ভ্যাম্পায়ার রূপে উড়ে আমার রুমে আসলো)
.
–কি ব্যাপার?(আমি)
.
–আসলে তোমার শরীর দিয়ে রক্ত বের হয়েছিলো। আর সেই রক্তের গন্ধ শুনে আমি ঠিক থাকতে পারি নাই। আমি তোমার গাড়ে কামড় দিয়েছিলাম।(এনা)
.
–তাতে কি তুমি তো কয়েকবারই করেছো এমন।(আমি)
.
–না তেমন কিছু না। আচ্ছা বাদ দাও এসব কথা। তুমি ঘুমিয়ে পরো।(এনা)
.
–হ্যা ঘুৃমাবো। কিন্তু আমাকে বলো তো তুমি একাই কিভাবে তিনটাকে নক ডাউন করে দিলে?(আমি)
.
–ভ্যাম্পায়ারদের আসল ক্ষমতা মূলত তাদের শারিরীক ক্ষমতা। সব ভ্যাম্পায়াররাই অন্যান্য মনস্টারদের থেকে শক্তিশালী হয়।(এনা)
.
–ওওও।(আমি)
.
–আমি যাচ্ছি আমার রুমে। তোমার বোন দেখলে তো আবার খবর আছে আমাদের।(এনা)
.
–ঠিক আছে।(আমি)
।।।
।।।
এনা যাওয়ার সময় আমার ডান গালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো। আমি ভাবতেও পারি নি এনা এটা করবে। এমনি সময় তো ও আমার ঘাড়ে কামড় কামড় দিয়ে রক্ত চুষে খাই। কিন্তু এবার আমার গালে একটা চুমু দিলো। আমি আমরা দুজন দুজনকেই ভালোবাসি কিন্তু কেউ কাউকে বলি নি এখনো। অনেক রাত হয়েছে তাই ঘুমাতে আসলাম। আজকে কেনো জানি অন্যরকম লাগছে। আগের থেকে নিজের শরীরটা শক্তিশালী মনে হচ্ছে। কিন্তু আমার ভিতরের কোনো ক্ষমতাই আমি ব্যবহার করতে পারি না। কিভাবে কি করতে হয় আমি আদৌও জানি না।
।।।
ঘুমের মধ্যে আবারো স্বপ্নের রাজ্যে ঘুরে বেরাচ্ছিলাম এনাকে নিয়ে। কিন্তু হঠাৎ করেই এনা উধাও হয়ে গেলো। আমার সামনে আবারো সেই মহিলা আসলো। যার পিঠ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।
.
–কে আপনি? আর বার বার আমার স্বপ্নে কেনো আসেন? আর আপনাকে দেখলে আমার পরিচিত কেউ মনে হয় কেনো, যদিও আমি আপনাকে চিনি না।(আমি)
.
–আমি তোমার আম্মা জ্যাক।(মহিলা)
.
–আমার আম্মা?(আমি)
.
–জ্যাক। অনেক বড় হয়ে গেছো তুমি।(আম্মা)
.
–আপনি কোথায়। আমাদের কাছে আসছেন না কেনো?(আমি)
.
–আমি তো সব সময় তোমাদের দুই ভাইবোনের কাছেই আছি জ্যাক। শুধু জীবিত নই বলে তোমারা দেখতে পারো না।(আম্মা)
.
–আপনাকে যেই বা যারা হত্যা করেছিলো আমি কথা দিচ্ছি আম্মা সে যেই হোক না কেনো আমি তাকে ছারবো না।(আমি)
.
–জ্যাক, আমার ছেলে। আমি আমার মৃত্যুকে আনন্দে গ্রহন করেছিলাম কারন তোমাকে আমি এই জাহিল মনস্টার দুনিয়া থেকে বের করতে পেরেছিলাম। আমি চাই না তোমার মধ্যে হিংসা, প্রতিশোধ এর চিন্তা থাকুক। আমি চাই তোমার মধ্যে শুধু ভালোবাসা থাকুক।(আম্মা)
.
–কিন্তু ওরা…(আমাকে আম্মা বলতে দিলো না)
.
–খুব তারাতারি একটা কঠিন সময় আসবে। আমি সব সময় তোমার সাথে। শুধু নিজের বোনটার খেয়াল রেখো।(আম্মা বলতে বলতে উধাও হয়ে গেলো)
।।।।
।।।।
আমি ও চিৎকার করে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। উঠে দেখি ভোর হয়ে গেছে। স্বপ্নটা একদম সত্য ছিলো। আমার মাথায় হাত দিয়েছিলো আম্মা। মাথায় এখনো সাদা ছোট টুকরো টুকরো আলোর মতো কিছু একটা রয়ে গেছে। মাথা নারা দিতেই সেটা পুরো ঘরে ছরিয়ে পরে। আমি ফ্রেস হয়ে নিলাম। সকালের নাস্তা শেষ করলাম। তারপর ইউনিফর্ম পরে সোজা ক্লাসের দিকে রওনা হলাম। আজকে সবাই ক্লাসে না গিয়ে ক্যাম্পাসেই দাড়িয়ে আছে। এনা আর জেসিও দাড়িয়ে আছে ক্যাম্পাসে।
.
–কি হলো তোমরা বাইরে দাড়িয়ে আছো কেনো? ক্লাস হবে না আজকে?(আমি)
.
–না, আজকে স্টুডেন্ট সভাপতি কিছু বলবে। আমাদের এখানে দাড়াতে বলছে।(এনা)
.
–ওওও।(আমি)
.
–কি হয়েছে। তোকে অনেক ক্লান্ত দেখা যাচ্ছে আজকে।(জেসি)
.
–কিছুই না। আজকে আম্মাকে স্বপ্নে দেখেছিলাম।(আমি)
.
–কি আম্মা তোর স্বপ্নে এসেছিলো? কেমন দেখতে রে আম্মা?(জেসি)
.
–অনেক সুন্দর। একদম একটা পরীর মতো।(আমি)
.
–কি বললো আম্মা তোকে?(জেসি কৌতহল হয়ে বললে)
.
–তোর খেয়াল রাখতে বলছে।(আমি)
.
–আর কিছু বলে নাই?(জেসি)
.
–না।(আমি)
।।।।
।।।।
আমারা চুপ হয়ে গেলাম, কারন সামনে একটা মাইক নিয়ে ভাষন দিচ্ছে একজন ছেলে।
.
–আমি তোমাদের সভাপতি। আমার নাম হ্যারি অদ্রি। আজকে তোমাদের সবাইকে ডাকা হয়েছে একটা ক্ষতিকর বিষয় নিয়ে তোমাদের জানাতে। কালকে আমাদের কিছু নতুন ছাত্রকে তাদের ক্লাসেরই দুজন খুব খারাপ ভাবে মেরেছে। আমি এখানে এসেছি মিস্টার জ্যাকসন ব্রিট এবং মিসেস এলিনা কোয়াডার্ট এর বিচার করতে।(হ্যারি)
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))