#মনাকাশে_ধ্রুবতারা_বেশে
#ইসরাত_জাহান_দ্যুতি
২.
“ও কি শায়াফ?” বিস্মিত হয়ে বিড়বিড়িয়ে উঠল বাশার সাহেব।
সবার দৃষ্টিই সিঁড়িতে৷ বাশার সাহেবের প্রশ্ন শুনতে পেলেও উত্তর দেওয়ার মতো মুখ নেই শাফিউলের। সকলের অভিব্যক্তি দেখে হাসিমুখর সিরাজ কাজীকে দেখাল বিভ্রান্ত—সিঁড়ি বেঁয়ে আসা ছেলেটিই কি শাফিউল হকের ছেলে? প্রশ্নটা তার মনে আসতে না আসতেই শারফান এসে বসে পড়ল বাবার মুখোমুখি রাখা সোফায়‚ “ভেরি ভেরি স্যরি‚ সিনিয়রস। ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে গেল।” বাশার সাহেবকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাত নেড়ে বলল‚ “হেই আঙ্কেল‚ হাও আর ইউ?”
“আলহামদুলিল্লাহ।” বিস্ময় ঘোর কাটিয়ে উঠে বাশার সাহেব ওকে আগাপাছতলা দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করল‚ “তোমার কী অবস্থা? ঠিকঠাক আছ তো?”
“আর বোলেন না‚ আঙ্কেল”‚ সোফায় গা এলিয়ে বসতে বসতে বলতে উদ্যত হলো শারফান‚ “গতকাল রাতে মানিক মিয়ার পুতের পুতকে রামচো** মারতে গিয়ে আমার হাত-পায়ের অবস্থা খারাপ।”
কিন্তু তার আগেই তড়িঘড়ি করে শাফিউল বলে উঠলেন‚ “ছোটোখাটো একটা অ্যাক্সিডেন্ট করে কাল রাতে বাড়ি ফিরেছে। হাতে-পায়ে খারাপভাবে ইনজুরড হয়েছে। ব্যথায় জ্বর-টর লেগে বিচ্ছিরি অবস্থা ছেলেটার। দেখুন না প্যান্টটা পর্যন্ত পরতে পারেনি! এমনিতেই ও শীতকাতুরে। তার ওপর এত জ্বর যে কমফোর্টারই গায়ে জড়িয়ে চলে এসেছে৷ ছেলেটা আমার আর বড়ো হলো না… হা হা হা!”
ভাইয়ের সঙ্গে সুর দিয়ে হা হা করে হেসে উঠলেন শাকিবুলও৷ সেই সাথে শারফানকে মনে মনে গালিও দিলেন‚ “সত্যবাদী যুধিষ্ঠির বাচ্চা আবার নিজের মস্তানগিরি কেচ্ছা শোনাতে গেছে গর্বের সাথে!”
“আহারে কী বলেন! ওকে তাহলে খামোখা নিচে ডাকলেন কেন?” কপট চিন্তিত ভাব দেখিয়ে বাশার সাহেব বলল শারফানকে‚ “ঘরে গিয়ে রেস্ট নাও‚ শায়াফ। কষ্ট দিলাম তোমাকে।”
“কোনো কষ্ট না‚ আঙ্কেল।” সিরাজ কাজীর দিকে চেয়ে গদগদ হয়ে বলল সে‚ “আমার আইকন এসেছেন আমার সঙ্গে দেখা করতে! কী যে সৌভাগ্য আমার!”
এতক্ষণ সিরাজ কাজী চোখ-মুখ কুঁচকে অদ্ভুত প্রাণী দর্শন করার মতো মুখভঙ্গিতে শারফানকে দেখে যাচ্ছিলেন। ওর অপরিপাটি অবস্থা আর পরনে লুঙ্গি‚ কম্বল দেখে এখানে বসে থাকার মানসিকতায় চলে গিয়েছিল তার৷ কিন্তু শারফানের বলা ‘আইকন’ শব্দটার জোরে বিরক্তি আর বিতৃষ্ণা তার গায়েব হয়ে গেল যেন। মুচকি হাসলেন। শারফানের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ জাগল তার। সবে ঠোঁট ফাঁক হলো তার আর অমনি শারফান বলে বসল‚ “স্যারের সাথে আজ কথা না বলতে পারলে তো আমার খাওয়া‚ বাথরুম‚ সব বন্ধ হয়ে যাবে। আমি কী করে ঘরে গিয়ে রেস্ট নিই বলেন?”
খাওয়ার সঙ্গে বাথরুম কথাটা শোনা মাত্রই চেহারাটা আবার কুঁচকে ফেললেন সিরাজ কাজী। ওদিকে দাঁতে দাঁত চেপে‚ চোখ বন্ধ করে মেজাজ ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন শাফিউল। কী যে এক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে তা দেখে বাশার সাহেবের হাঁসফাঁস লাগতে শুরু করল। শারফানের প্রতি আসলে তার মেয়ে প্রচণ্ড আগ্রহী। অবশ্য তিনিও সন্তুষ্ট শারফানের ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তা দেখে৷ কিন্তু আসল কারণই হচ্ছে তার ডিভোর্সি মেয়েটা। ওই মেয়েকে তিন তিনবার বিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ একটা সংসারও ধরে রাখতে পারেনি। দেখা যায় ডিভোর্সটাও হয় মেয়ের দোষেই। তাই শারফানকে দেখার পর আর জানার পর মেয়ের কথামতো ওকে ঘর জামাই করার মনোবাসনা জাগে। তবে মেয়ের বয়স বেশি শারফানের থেকে৷ এ নিয়ে শুরুতে একটু দ্বিধা ছিল তার। কিন্তু আজ-কাল তাদের মতো ধনী শ্রেণীর মাঝে এসব বিষয় বিশেষ কিছু না। তাই সমস্ত দ্বিধা কাটিয়ে উঠে শারফানকে আরও ওপরে তোলার জন্য সিরাজ কাজীর মতো যশস্বী ব্যক্তিকে কতভাবে বুঝিয়ে সেই ঢাকা থেকে ফরিদপুর টেনে আনলেন। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও যদি জানতেন শারফান ঘরের বাইরে যতখানি আকর্ষণীয় ব্যক্তিরূপের ঘরের ভেতরে ততটাই খবিশ প্রকৃতির!
“শায়াফ‚ তোমার মনে হয় সত্যিই রেস্ট নেওয়া দরকার।” বললেন স্বয়ং সিরাজ সাহেবই গুরুগম্ভীর স্বরে।
“আপনার সঙ্গে মাত্র পাঁচটা মিনিট কথা বলার সুযোগ চাই‚ স্যার। প্লিজ”‚ অনুরোধ কণ্ঠ। এমনকি চেহারাতেও সরলতা প্রকাশ পেল শারফানের।
“আচ্ছা বলো”‚ বিরক্ত সিরাজ কাজী মেকি হাসলেন।
ব্যাবসাতে ঢোকার পর কত ছেলেমানুষি চিন্তা নিয়ে ব্যাবসাতে ঢুকেছিল সেসব গল্প শোনাতে থাকল শারফান। গল্পের মাঝ পর্যায়ে এসে শুরু করল আবার বেফাঁস কথাবার্তা। তবে তা নিজের সম্পর্কে নয়‚ বাপ-চাচার সম্পর্কে। কোম্পানিটা ডুবতে বসেছিল তাদের কী কী ভুলের কারণে সেসবের ফিরিস্তির পর শুরু করল নিজের প্রশংসা—ডুবতে বসা কোম্পানিকে সে কীভাবে‚ কোন কৌশল অবলম্বন করে উদ্ধার করেছে। আর সেসব কৌশলগুলো সে অনুসরণ করেছে সিরাজ কাজীর বহু পুরোনো প্রেরণামূলক বক্তব্য শুনে শুনেই।
কয়েক মুহূর্তের মাঝে আবার ভুলে গেলেন সিরাজ কাজী তিনি অত্যন্ত বিরক্ত ছিলেন শারফানের ওপর। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনে গেলেন উপস্থিত বুদ্ধি দ্বারা সাজানো তার ব্যাপারে শারফানের সমস্ত মিথ্যা গল্পগুলো। এমনকি বাশার সাহেবও মুখে হাসি টানলেন ‚ধীরে ধীরে সন্তুষ্ট হতে থাকলেন। কিন্তু এই শীতে ঘাম ছুটে গেল শাকিবুল সাহেবের৷ নিজেদের বদনাম এভাবে কোনোদিন কারও থেকে শোনেননি। লজ্জায় ছুটে পালাতে ইচ্ছা করছে তার। শাফিউল সাহেবও ভেতরে ভেতরে দারুণ বিব্রত আর লজ্জিত। কিন্তু চেহারাটা নির্বিকার রাখতে এবং চুপচাপ থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ‚ তিনি খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করছেন ছেলের প্রতিশোধ পর্ব চলছে এই মুহূর্তে। শেয়ার চাওয়া নিয়ে গত দুটো মাসে ছেলেকে যে পরিমাণ কথা শুনিয়েছেন ‚ বকাঝকা আর অপমান করেছেন। তার পাই টু পাই হিসাব রেখেছে ছেলে৷ এখন সেসবের শোধ তুলবে শারফান ভীষণ রয়ে সয়ে আরাম করে। কিন্তু তিনি ছেলের আর কোনো কাজে অবাক না হলেও অবাক হন কেবল এই দেখে যে‚ তাকে অপদস্থ করার জন্য ছেলেটা নিজেকে খারাপ বা অসামাজিক প্রকাশ করতে এক বিন্দু ভাবে না!
অর্থাৎ এই যে বেশে শারফান আজ উপস্থিত হয়েছে অতিথিদের সামনে‚ ওর এ হঠকারিতাসূচক কাজ আজই প্রথম নয়। যখনই সে শাফিউল সাহেবের প্রতি ক্ষিপ্ত থাকে তখনই সে এমন ধরনের কাণ্ড করে বসে যা দ্বারা বাপের নাক কাটা পড়ে অতিথি সমাজে বা জনসম্মুখে।
শৈশব থেকেই অত্যন্ত বেপরোয়া‚ বেয়াদব আর সেই সাথে ভয়ঙ্কর রাগের দুর্নাম বয়ে বেড়ানো এই ছেলেটাকে বহুবার বহুভাবে ভালো মানুষ বানানোর চেষ্টা করেছেন শাফিউল হক। কিন্তু তিনি ব্যর্থ।
“বাশার‚ একটা কথাও দেখি বাড়াবাড়ি বলেননি। হি ইজ দ্য অনলি মেডিসিন দ্যাট ক্যান কিপ দ্য হক কোম্পানি স্টেবল।” শারফানের ভূয়সী প্রশংসায় কতক্ষণ মেতে থাকলেন সিরাজ কাজী। তারপর হাসতে হাসতে শাফিউলকে বললেন‚ “আপনি একটা চিজ বানিয়েছেন‚ শাফিউল সাহেব। হ্যাঁ‚ একটু অদ্ভুতই বটে আপনার ছেলে। কিন্তু খোঁজ নিলে দেখা যাবে পৃথিবীতে যত মহান প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন বা আছেন‚ তারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে অদ্ভুত‚ মানুষকে চমক লাগানো বৈশিষ্টের৷”
“ঠিক ঠিক”‚ ঘাড় নেড়ে হাসতে হাসতে সহমত জানাল বাশার সাহেব। শাকিবুলও যোগ দিলেন তাদের সাথে। তাই বাধ্য হয়ে শাফিউলও কৃত্রিম হাসি মুখে টানলেন।
“স্যার”‚ তেরছাভাবে হেসে বাঁ হাতের তালু ডান হাতের বৃদ্ধা আঙুলে ঘষতে ঘষতে শারফান বলল‚ “আপনার মতো জেম নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেন না ট্যালেন্ট কখনো ধনী-গরিব‚ কালো-ফরসা‚ সোশ্যাল-আনসোশ্যাল দ্বারা প্রকাশ পায়?”
“অবশ্যই না। গোবরে পদ্ম ফোটে কথাটা তো আর এমনি এমনি আসেনি।”
“এক্সাক্টলি!” বলেই নিজের থাইয়ের ওপর জোরে চাপড় মেরে বসল শারফান। এমন ধরনের একটা মন্তব্যই সে সিরাজ কাজীর মুখ থেকে বের করতে চাইছিল। কোনা চোখে দেখে নিলো সে বাপটাকে। শাফিউলের চোখ-মুখ কঠিন হয়ে উঠেছে দেখে খুশিতে ইচ্ছা করল ওর এখনই সোফার ওপর গড়াগড়ি দিয়ে হাসতে৷ নিজেকে পদ্ম আর বাপকে গোবর প্রমাণের মনোবাসনা ওর অনেক দিনের ছিল কিনা! বাপের দিকে চেয়ে চিবুকের দাড়িগুলো টানতে টানতে সিরাজ সাহেবকে বলল‚ “আসল কথা হচ্ছে ক্যালিবার আর চতুর বুদ্ধির মজুদ থাকতে হবে‚ স্যার। সেটা আমার লুঙ্গির তল থেকেই আসুক আর প্যান্টের তল থেকে।”
হাস্যরত সিরাজ কাজী মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিতে থাকার মাঝে শারফানের শেষ কথায় সহসা থতমত খেয়ে গেলেন। কিন্তু বাশার সাহেব এবার আর অপ্রস্তুত হলেন না। উপরন্তু ফিক করে হেসে ফেলাটা কোনোরকমে ঠেকালেন। তিনি কিছুটা বুঝে গেছেন শারফানের কথাবার্তার ধরন আর এতটুকু সময়ের মাঝেই ওর কথাবার্তার ধারার সাথে মানিয়েও নিয়েছেন। তবে মানিয়ে নিতে না পারা সিরাজ কাজীর বিব্রত হওয়া মুখটা দেখে শারফান এক গাল হেসে দিয়ে বলল‚ “জায়গাটা ম্যাটার করে না‚ স্যার। থাকাটা ম্যাটার করে।”
***
ভিড়িয়ে রাখা দরজায় দুবার টোকা দিতেই ভেতর থেকে শারফানের আওয়াজ এলো‚ “ঢুকে পড়ো।”
শাফিউল সাহেব গাম্ভীর্যের সঙ্গে ঘরে ঢুকলেন৷ কিন্তু ঢুকেই পড়লেন বিব্রতকর অবস্থায়। লাল শর্টসের ওপর সাদা পাঞ্জাবি পরে ছেলে আয়নার সামনে সটান দাঁড়িয়ে আছে—বোতাম লাগাচ্ছে পাঞ্জাবির৷ ওকে আপাদমস্তক দেখে কী যে বিরক্ত হলেন তিনি! পাজামাটা পরার পরই না হয় ভেতরে আসতে বলত খচ্চরটা! এগিয়ে গিয়ে ঘরের জানালা বরাবর দাঁড়ালেন ছেলের দিকে পেছন ঘুরে‚ “নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ফরিদপুরেই থাকতে হবে তোকে তোর চাচার সঙ্গে। এবার খাটতে হবে খুব আর জায়গামতো টাকা কাজে লাগাতে হবে।”
বাঁকা বা তেরছা কোনো জবাবই না শুনতে পেয়ে শাফিউল সাহেবের কপালে ভাঁজ পড়ল৷ বদমাশটা কি কথার মধ্যেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল? চকিতে ঘাড় ফেরালেন। দেখলেন‚ চোখ-মুখ শক্ত করে ছেলে পাঞ্জাবির চেইন বোতামের সঙ্গে মারামারি করছে৷ ওগুলো সোনার। ক্লাস এইট থেকে ছেলে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল বলে চাচা শাকিবুল এই সোনার চেইন বোতাম উপহার দিয়েছিলেন ভাতিজাকে। কিন্তু আজকের আগে এটা কখনো কোনো কোট বা পাঞ্জাবির সাথে ওকে পরতে দেখেননি। আজ পরছে তবে কোন উদ্দেশে? একটু ভাবতেই উদ্দেশ্যটা বুঝতে সময় লাগল না শাফিউলের। আজ রাতে শেয়ারের অংশ লিখে দেওয়া হবে ওকে। তাহলে ছেলে আজ খুশি বিধায় সাজগোজের তোড়জোড় চলছে! কিন্তু যেভাবে টানাটানি করে চেইনের গিঁট ছাড়ানোর চেষ্টা করে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে‚ তাতে এখনই মেজাজ হারাবে বদরাগীটা। তারপর চোখের পলকে চেইনটা একটানে ছিঁড়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেলবে৷ তার আগেই তিনি এগিয়ে গেলেন শারফানের কাছে। “আমাকে দেখতে দাও”‚ গম্ভীর স্বরে বলে চেইনের গিঁট খুলতে থাকলেন। খুব বেশিক্ষণ লাগল না খুলতে৷ বোতামগুলো লাগিয়ে দিতে দিতে উপদেশের সঙ্গে ছেলেকে বললেন‚ “এত অধৈর্য আর বদরাগী হলে যা অর্জন করছ তা কিন্তু এক নিমেষে হারিয়ে যেতে সময় লাগবে না৷ ধৈর্য বাড়াও আর রাগ কমাও।”
ভার মুখে বোতাম লাগানো দেখার ফাঁকে ফাঁকে চোখ তুলে বাবাকেও দেখছিল শারফান। এই মানুষটার কাছে জীবনে বহু মার খেয়েছে সে নানান অন্যায় আর দুষ্টমির জন্য। এতটাই খেয়েছে যে শেষ কবে ওকে আদর করেছেন শাফিউল‚ তা সে ভুলেই গেছে৷ সেসব মারধোরের কথা অবশ্য মনে রাখেনি সে৷ সে মূলত কোনো কিছুই বেশিদিন মনে জমা রাখতে পারে না। কিন্তু গত দুই মাস ধরে করা বাবার অপমানজনক কথাবার্তা ওকে খুব খেপিয়ে দিয়েছে৷ যেটা এখন অবধি মন থেকে সরাতে পারেনি।
বোতাম লাগানো শেষে ছেলের দিকে চাইতেই চোখাচোখি হয়ে গেল দুজনের৷ শারফান এক পলের মাঝেই দৃষ্টি সরিয়ে ব্যস্ত হলো চুল নিয়ে৷ কিন্তু এই এক পল সময়েই শাফিউল দেখতে পেলেন ছেলের আয়তাকার কালো চোখে তার প্রতি কঠিন অভিমান। দীর্ঘশ্বাস ফেলে দেখতে থাকলেন ছেলেকে শান্ত চোখে৷ কেন তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন শেয়ার দিতে তাও তো ছেলেকে বলে লাভ নেই। ছোটো থেকেই টাকার প্রতি ছেলের মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা। টাকা কামানো আর একই সাথে টাকা উড়ানোই ছেলের একমাত্র কাজ৷ কোম্পানির মালিক বনে যাওয়ার পর দেখা যাবে যতটা পরিশ্রম করে মুনাফা বাড়াবে সে‚ তার চেয়ে কম পরিশ্রমে টাকা নষ্ট করবে৷ এই আশঙ্কা মিথ্যা নয়৷ কিন্তু কী আর করা! একটাই ছেলে। রাগ‚ ক্ষোভ নিয়ে একবার দেশ ছাড়লে মরার আগেও ওকে আর ফিরিয়ে আনা যাবে না৷
ব্যাকব্রাশ করে হেয়ার ক্রিম লাগানো শেষে শারফান পারফিউমের বোতলটা হাতে নিলো। তবে স্প্রে করার আগে শাফিউল বাধা দিলেন‚ “নামাজে যাচ্ছিস আতর মেখে যা।”
“আতর নাই আমার”‚ থমথমে গলায় জানাল শারফান।
পাঞ্জাবির পকেট থেকে আতরের শিশিটা নিয়ে নিজেই ছেলের পাঞ্জাবিতে মেখে দিলেন শাফিউল৷ ঘ্রাণটা চমৎকার। তাই আপত্তি করল না শারফান৷
“লিফলেট বের হবে কাল। ছেলেপুলে নিয়ে কালকেই নেমে পড়িস কাজে।”
“ফারনাজ কবিরের ফিল্ড কেমন?” ঘড়ি পরতে পরতে জিজ্ঞেস করল শারফান।
“ভালো৷ তোর চাচার থেকেও ভালো বললে ভুল হবে না৷ সাবেক এমপি হিসেবে কবির খোকনের সুনাম আর গত পাঁচ বছর ধরে তার ছেলে ফারনাজের সোশ্যাল এক্টিভিটিজ পাবলিককে ইমপ্রেস করেছে৷ নতুন সরকার‚ নতুন নেতার কাজ দেখতে চায় তারা৷ লড়াইটা এবার হাড্ডাহাড্ডি হবে।” বলা শেষে হাত ঘড়িতে সময় দেখলেন শাফিউল৷ আজ জুম্মা বার৷ সময় দেখা শেষে ছেলেকে বললেন‚ “খুতবা শুনবি না? চল বের হই।”
“সোহানের এলাকার মসজিদে যাব।”
ভ্রু কুঁচকালেন শাফিউল‚ “কেন? তোর এলাকার মসজিদে কী সমস্যা?”
“কোনো সমস্যা নাই”‚ বাঁকা চোখে বাবার দিকে চেয়ে বলল সে‚ “ভাড়া তুলতে যাব।”
“সেন্টু থাকতে তুই কেন ভাড়া তুলবি?” কঠোর গলায় হুঁশিয়ার করার মতো বললেন শাফিউল‚ “বাসা ভাড়ার টাকাগুলো কিন্তু তোর আম্মুর। খবরদার ওই টাকায় হাত বাড়াবি না।”
ঘাড়টা ঘুরিয়ে কয়েক সেকেন্ড বাবার চোখে নির্লিপ্তভাবে তাকিয়ে থাকল সে। তারপর আচমকা হাসি ছাড়াই ঠোঁটদুটো ছড়িয়ে জবাব দিলো‚ “আমার আম্মুই বলেছে আমাকে যেতে।” বলা শেষেই মুখটা পূর্বের মতো ভার করে সরে এলো আয়নার সামনে থেকে।
স্ত্রীর ওপর বেজায় চটলেন শাফিউল। “এই মহিলাই ছোটো থেকে হাতে টাকা দিয়ে দিয়ে ছেলেটাকে আমার বখা বানাল”‚ মনে মনে বউকে বকাবকি করে কড়া চোখে কতক্ষণ দেখলেন শারফানকে। মধ্য বাদামী বর্ণ গায়ে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবিটাই ছেলেকে নজরকাঁড়া সুপুরুষ লাগায় চাউনি কোমল হয়ে এলো তার। দ্রুত চোখ ফেরালেন৷ যদি নজর লেগে যায়? তবুও আরেকবার আড়চোখে দেখলেন। গতকাল জেসমিন বেগম আদর করে বলার পর ছেলে চুল কেটে খানিক ছোটে করেছে আর দাড়ি সামান্য ট্রিম করেছে৷ কিন্তু গোঁফ কামায়নি দেখে খোঁচা মেরে বললেন‚ “খানদানি গোঁফ বানানোর শখ হয়েছে না-কি?”
কথাটা শুনে হঠাৎ কী ভেবে হেসে উঠল শারফান। গোঁফ পাকাতে পাকাতে বলল বাবাকে‚ “তোমাদের সরকার ইলেকশনে জিতে গেলে বোলো তো ভারতের মতো গোঁফের ভাতা আইন করতে। এ দেশে গোঁফের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে‚ বুঝলে? একটা গোঁফের পেছনে কত পরিশ্রম‚ কত ধৈর্য আর কত আত্মকাহিনি থাকে! সেসব তোমরা জানো না। অবশ্য তোমাদের জানার দৌড়ই বা কতটুকু? জানলে তো এই গোঁফের মর্মই বুঝতে।”
খোঁচা মারার কারণে ছেলে এবার তাকে চটানোর চেষ্টা করছে বুঝতে পেরে ঘর ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন শাফিউল। কাল যথেষ্ট বকাঝকা করেছেন ছেলেটাকে৷ তাই আজ অন্তত কিছু বলতে চান না। কিন্তু বেরিয়ে যাওয়ার সময় দরজায় দাঁড়িয়ে বক্রোক্তিটা না করে পারলেন না “পাজামা রেখেই বেরিয়ে যেয়ো না যেন।”
বিছানার মধ্যে ওয়ালেটটা খুঁজছিল শারফান। বাপের টিটকারি শুনে ওয়ালেট খুঁজতে খুঁজতেই সে উত্তর দিলো‚ “আমার ছাদ ফাঁকা না যে বুদ্ধিসুদ্ধি বাতাসে উড়াল দেবে।”
কথাটা শুনতেই আকস্মিক হাতটা নিজের মাথায় চলে গেল শাফিউল সাহেবের। চাঁদিতে টাক পড়ে গেছে তার অনেক আগেই। ছেলে-মেয়ের আড়ালে বউ তাই আগে ভীষণ আক্ষেপ প্রকাশ করত তার টাকের জন্য। বউয়ের সেসব আক্ষেপ শুনতে মন্দ না লাগলেও ছেলের অপমান মোটেও ভালো লাগল না। রেগেমেগে ধমক দিতে গিয়েও থামলেন। হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলেন শারফানের ঘর ছেড়ে।
***
বেলা ৩ টা। নামাজ শেষে শারফান বসে আছে রাস্তার পাশে বাইক থামিয়ে। পাশেই তিন বন্ধু সোহান‚ সাদ্দাম আর রিপন। ওদের গল্প করার মাঝ পথে সামনের নীল বিল্ডিংয়ের গেট খুলে বেরিয়ে এলো লম্বা-চওড়া‚ ছাগল দাড়িওয়ালা সেন্টু। “ভাই”‚ বলে শারফানকে ডেকে এগিয়ে এলো সে। বিল্ডিংটা ছ তলার। সাড়ে ছয় হাজার করে প্রতিটা ফ্ল্যাটের ভাড়া। টাকাগুলোর হিসাব বুঝিয়ে দিলো সে শারফানকে। জিজ্ঞেস করল‚ “আর কোনো দরকার‚ ভাই?”
“আপাতত না”‚ পকেটে টাকাগুলো পুরে সে বলল‚ “আয় তুই এখন।”
শারফানের বাইকের কাছাকাছিই প্লাস্টিকের বড়ো এক বোল রাখা। বোলটা তুলে নিয়ে সেন্টু নীল বিল্ডিংয়ের পাশের বাড়িটির দিকে এগোলো। যাওয়ার পথে শারফান খেয়াল করল বোলে অনেকগুলো ফুল গাছের চারা। তার মধ্যে জারবেরার চারা পছন্দ হলো ওর। ডেকে উঠল সেন্টুকে পেছন থেকে‚ “ওগুলো কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?”
“এই যে প্রফেসরের বাড়ি‚ ভাই”‚ এক তলার সাদা বাড়িটাকে দেখাল সেন্টু।
“ওই জারবেরা ফুলগাছটা দিয়ে যা।”
“তুই ফুলগাছ নিয়ে কী করবি?” জিজ্ঞেস করল সোহান।
“আমার ব্যালকনিতে রাখব। ভালো লাগছে ফুলগুলো।”
কিন্তু সেন্টুকে দেখাল দ্বিধাগ্রস্ত। তাই আবার বলল শারফান‚ “নিয়ে আসিস না কেন?”
“ভাই”‚ কিছুক্ষণ দোমনা করে সেন্টু জানাল‚ “প্রফেসরের মেয়ের কাছে গাছগুলো বিক্রি করছি।”
“করছিস তো কী হয়েছে?” শারফান বিরক্ত হয়ে বলল‚ “এদিকে আয়। টাকা দিয়ে দিচ্ছি তোকে।”
সেন্টুকে তবুও খুশি দেখাল না। সে এসে চারাটা দিলো মুখ কালো করে। তারপর ঢুকে পড়ল সাদা বাড়ির গেটের ভেতর।
জোহরা খাতুন বারান্দায় বসে বড়ো নাতি সানার চুলে তেল দিচ্ছিলেন৷ বাড়ির গেটে সেন্টুর ডাকাডাকির আওয়াজ পেয়ে সানা ডাকল ছোটো বোনকে‚ “এই মেহা? এদিকে আয় তো। গিয়ে দ্যাখ সেন্টু ভাই চারা নিয়ে আসছে।”
ঘর থেকে বেরিয়ে এলো সপ্তদশী সুশ্রী। ওড়না মাথায় দিতে দিতে বারান্দা পেরিয়ে গিয়ে সদর গেট খুলল সে। সেন্টু তাকে দেখে হাসি মুখে চাড়াগুলোর বোল এগিয়ে দিয়ে বলল‚ “ইয়ে… মেহা‚ জারবেরার চারাটা আমার এক বড়ো ভাই নিয়ে নিছে। তোমাগের পরে আইনা দেই?”
চোখা দৃষ্টিতে মেহা সেন্টুর দিকে চেয়ে থেকে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল‚ “আপু‚ তোর ফেব্রেট জারবেরা গাছ সেন্টু ভাই তার কোন বড়ো ভাইকে দিয়ে দিয়েছে।”
ভড়কে গেল সেন্টু মেহার নালিশ শুনে। অপ্রতিভ হয়ে বলল‚ “আরে এই যে শাফিউল কাকার পোলা দাঁড়ায় আছে এইখানে। আসার পথে রাইখা দিছে। না করছিলাম কিন্তু শুনল না।”
“আমি কিছু জানি না। যার চারা তাকে কৈফিয়ত দেন”‚ বলে বোলটা নিয়ে মেহা বাসার ভেতর চলে এলো। সানাকে বলল সেন্টুর বলা কথাগুলো৷
সানা রেগে গেল‚ “তুই সেন্টুকে বল আজ এক্ষুনি আমার জারবেরার চারা দিতে হবে৷ নয়ত একটা চারাও নেব না আমি।” শীত আসলেই জারবেরার চাড়ায় ছোটো বাগানটা ভরিয়ে তোলে সানা৷ কিন্তু এবারের শীতে তেমন পায়নি চাড়া। এটাই প্রথম ছিল। তাই কোনো ছাড় দিতে রাজি নয় সে।
“আমি পারব না”‚ ঘরের দিকে যেতে যেতে বলে গেল মেহা‚ “ম্যাথ রেখে তোর চারা ফারা নিয়ে আসছি। তুই গিয়ে বল।”
সত্যি সত্যিই সানা উঠে পড়ল। জোহরা খাতুন বলে উঠলেন‚ “ওই ছেড়ি বয়। এহনো শ্যাষ হয় নাই ত্যাল দিয়া।”
“এসে নিচ্ছি।” হাঁটা দিলো সানা গেটের দিকে৷ সেন্টু কাঁচুমাচু মুখ বানিয়ে তখনো দাঁড়িয়ে ছিল৷ সানাকে দেখে মাফ চাওয়ার আগেই সানা কঠোর সুরে বলল‚ “যাকে দিয়েছেন তার থেকেই হয় ফেরত এনে দেবেন চারা। আর নয়ত আজকে সন্ধ্যার ভেতর আরেকটা দেবেন আমাকে।”
“জারবেরার চারা আপাতত শ্যাষ‚ আপু।”
“তাহলে আমার চারা আমাকে ফেরত এনে দেন। আমি দাঁড়িয়ে আছে এখানেই।”
অসহায় দেখাল সেন্টুকে। শারফানের কাছ থেকে চাড়া ফেরত আনার সাহস তার নেই। আবার সানার ছোটো বোন মেহাকে সে মনে মনে খু্ব পছন্দ করে৷ বড়ো বোনকে অসন্তুষ্ট করে কি ছোটো বোনের মন পাবে সে? এই ভয়েই শারফানকে পাওয়া ভয় দূর হয়ে গেল তারা। “আচ্ছা। আপনি দাঁড়ান‚ আপু।” বলে সে চলে গেল শারফানের কাছে।
সানা গেটের বাইরে গলা বাড়িয়ে একটু দেখতে চাইলো ওর চাড়া নিয়ে নেওয়া ব্যক্তিটিকে। সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত বাইকে বসা শারফানের এক হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। আর ওর সিটের পিছে রাখা জারবেরার চাড়া। ওকে দেখতে পেল ঠিকই। কিন্তু পেছন থেকে। তাতেই মনটা হোঁচট খেল সানার। ড্যাবডেবিয়ে কিছুক্ষণ শারফানকে দেখে গেল সে। পর মুহূর্তেই ওর খেয়ালে এলো‚ “ইসরে! আমি তো মিঙ্গেল হয়ে গেছি‚ শালী।” চোখদুটোকে তাই শাসন করল দ্রুত। শারফানের পাশেই দাঁড়ানো এলাকার ছেলে সোহানকে দেখে সে বুঝল‚ বাইকের ছেলেটা তবে সোহানের বন্ধু।
“ভাই‚ চারা তো ফেরত চাইতেছে আপু।” জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে সঙ্কুচিত স্বরে বলল সেন্টু।
সিগারেটটা শারফান সবেই ঠোঁটের ফাঁকে নিতে গিয়েছিল। “আপু কে?” সেন্টুর কথা শুনে ওর পৌরুষপূর্ণ প্রচণ্ড ভারী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল।
“প্রফেসরের বড়ো মেয়ে।”
“প্রফেসর কে?”
“আরে রাজেন্দ্র কলেজের প্রিন্সিপালের কথা বলতেছে”‚ সোহান জানাল শারফানকে। “তুই ভালো চিনবি না।”
“চেনার দরকারও নাই আপাতত।” সেন্টুর দিকে চেয়ে শারফান বলল‚ “তোর আপুকে গিয়ে বল কাল আমার বাড্ডে। তাই ফুলগাছটা তোর আপুর থেকে আমার বাড্ডে গিফট্ হিসেবে নিয়ে নিয়েছি‚ ঠিক আছে?”
সমস্বরে হেসে উঠল শারফানের বন্ধু তিনজন। “বছরে কয়বার বাড্ডে আসে তোর?” হাসতে হাসতে বলল সাদ্দাম।
গেটের ভেতর দাঁড়িয়ে সানা শারফানদের ঠাট্টা‚ মজা শুনে বেজায় চটে গেল। তবে এর মাঝেও আরেকবার হোঁচট খেল সে শারফানের কণ্ঠস্বরে‚ “এত দারুণ ম্যানলি‚ চেস্ট ভয়েজ পোলার!” বিড়বিড়িয়ে আফসোসও প্রকাশ করল‚ “এই ভয়েজটা পান্থর হলেও তো হত!” আহারে‚ আবারও ভুলে যাচ্ছে সে বর্তমান প্রেমিকওয়ালা নারী।
শারফানের বন্ধুদের হাসি এখনো চলছে দেখে খুব অপমানিত বোধ করল সানা। রাস্তার ওপাশেই হলো মসজিদ। মসজিদের প্রাঙ্গণে বেশ কিছু ফুলগাছ লাগানো হয়েছিল গত বছর। কিন্তু পরিচর্যার অভাবে সব মরে গেছে। টিকে আছে কেবল একটা পানচেটিয়া পাতাবাহার। সেই গাছটার গায়ে এই মুহূর্তে একটা কালো কুকুর এক ঠ্যাং উঁচু করে মূত্রত্যাগ করছে। তা দেখতে পেয়েই সানা গলা তুলে ডেকে উঠল সেন্টুকে‚ “সেন্টু ভাই? ওনার বার্থডে গিফট্ হিসেবে মসজিদের কাছের ওই পাতাবাহার গাছটা দিলাম। আমার জারবেরা চারাটা ফিরিয়ে আনুন এবার।”
মুহূর্তেই সবার দৃষ্টি চলে গেল প্রথমে গেটের দিকে। সানার কথা শেষে তারপর গেল পাতাবাহার গাছটির দিকে। সেই গাছে কুকুরকে প্রস্রাব করতে দেখে প্রথমে সেন্টুই হেসে ফেলল। তারপর আবারও একযোগে শারফানের বন্ধুগুলো হাসতে থাকল। ওদের হাসি শুনে গেটের ভেতর দাঁড়িয়ে সানাও মুচকি মুচকি হাসল। হাসি সহজে থামল না কারও৷ কিন্তু রিপন সবাইকে থামিয়ে শারফানকে বলল‚ “তোর বাড্ডের সেরা গিফট্ মনে হয় ওইটাই।” বলেই আবারও হাসল ওরা।
সবার হাসাহাসিকে পাত্তা না দিয়ে শারফান ঘাড় ঘুরিয়ে চুপচাপ কেবল তাকিয় রইল সানার গেটের দিকে। ওর ভাবমূর্তি লক্ষ করে বন্ধুরা হাসি ভুলে চিন্তায় পড়ল এবার। এই বদমেজাজি ছেলে রাগের বশে মুখের লাগাম ছুটিয়ে দেয়৷ মেয়েটিকে আবার কী বলে বসে কে জানে! বেশি চিন্তা হতে থাকল সোহানের৷ সৈয়দ মোস্তফা এলাকার অত্যন্ত সম্মানিত একজন ব্যক্তি। তার মেয়েকে উলটাপালটা কিছু বলে বসলে এলাকার মানুষজন শারফানকে চেপে ধরবে একদম। ওকে মাথা গরম না করার জন্য সে কিছু বলবে সেই মুহূর্তেই শারফান চারাটা এগিয়ে দিয়ে অবিশ্বাস্য শীতল সুরে বলে দিলো সেন্টুকে‚ “নিয়ে যা।” দৃষ্টি তার আটকে রইল তখনো গেটেই।
“তুই পরে কিছু বলবি না তো আবার?” অবাক হয়ে সোহান আশঙ্কাটুকু প্রকাশ করল। তখন তাকে আরও অবাক করে দিয়ে শারফান বলে উঠল‚ “এত মাসুম‚ সুন্দর কণ্ঠের মালিক কে? নাম কী ওর?”
“সানার কথা জিজ্ঞেস করছিস?”
“সানা!” মৃদুস্বরে উচ্চারণ করল শারফান।
“হুঁ‚ সানা। সানা ফারহিন।”
চলবে।
#IsratJahanDyuti