মনের কোণে পর্ব-৩৪+৩৫

0
299

#মনের_কোণে🥀
#আফনান_লারা
#পর্ব_৩৪
.
নাবিল হাত ছেড়ে দিয়ে রান্নাঘর থেকে চলে এসেছে।লিখি তখন ফোন নিয়ে আসিফকে কল করে ফিসফিস করে বললো মশলা আরও ঢালতে।

নাবিল সোফায় বসলোনা আসিফের ভয়ে।সে সোজা রুমে চলে গেছে।এদিকে আসিফ তো লিখির কথা শুনার পর তাকে কাজে লেগে পড়তেই হবে।
সে নাবিলের পিছু রুমে চলে আসলো।নাবিল ওকে দেখে বিরক্ত হয়েছে কিন্তু বুঝতে দেয়নি।
আসিফ লুডুর কোর্ট নিয়ে নাবিলের পাশে বসে লিখিকেও ডাক দিয়েছে।লিখিও মৌমাছির মতন এসে হাজির।দুইটা টিমে খেলবে তারা।
এখন আর একজন তো পাওয়া যাবেনা।তাই লিখি বললো সে আসিফের টিমে।নাবিল একা এক টিমে।
নাবিল গাল ফুলিয়ে শেষে রাজিও হলো।
লিখি আর আসিফ মিলে ওর পিছু নিলো।হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শুরু হয়ে গেছে।
লিখি মনে করেছে নাবিলকে আসিফকে দিয়ে হারিয়ে মনমত জেলাস করাবে।কিন্তু পাশা উল্টে শেষে নাবিল জিতে গেলো।
লিখি আশ্চর্য হয়ে গেছে নাবিলের জেতা দেখে।আসিফ চোরের মতন বারবার ওকে দেখছিল বকুনির ভয়ে।নাবিল খাটে হেলান দিয়ে বসে বললো,’কেমন দিলাম শালাবাবু? ‘!

‘আপনি তো লুডু তে একবারে পাকা খেলোয়াড়’

‘তোমার বোনও তোমায় বাঁচাতে পারেনি’

‘লিখি চলো আমরা দুজন খেলি।নাবিল ভাইয়াকে নেয়া যাবেনা,উনি ভাল খেলেন।’

‘এ কেমন কথা আসিফ?চলো এবার আমি আর তুমি এক টিম আর লিখি এক টিম’

পরিস্থিতি সামলাতে লিখি উঠে বললো,’লাগবেনা খেলার।আমি একা কেন খেলতে যাবো?’
——-
অনাবিলদের এখনও আসার নাম নেই।
পথ অনেক দীর্ঘ।তারা ক্লান্ত হয়ে কারেই ঘুমিয়ে পড়েছে শেষে।এখনও দু তিন ঘন্টা বাকি।
রাত তখন এগারোটা বাজে।ডিনার শেষে সবাই শুতেও চলে গেছে।লিখি শাড়ী পরে ঘুমাতে পারেনা।কিন্তু এখন তো ঘুমানোর সময়।নাবিলের বাবা আসতে অনেক দেরি।তাই মন খারাপ করে সে বিছানার কোণায় বসেছিল গালে হাত দিয়ে।নাবিল বালিশ জড়িয়ে চোখ বুজে রেখেছে।
লিখি কখনও মশা তাড়াচ্ছে হাত দিয়ে তো কখনও হাত চুলকাচ্ছে। তার নড়াচড়া টের পেয়ে নাবিল কপাল থেকে হাত সরিয়ে বললো,’ঘুুমাবেনা?নাকি আসিফ ভাইকে মনে পড়ছে?’

‘জ্বলে?’

‘একটুও না।আমি কি তোমাকে লাভ করি নাকি যে জ্বলবে?’

লিখি তখনই চট করে নাবিলের দিকে ফিরে গালে হাত রেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,’তবে তাই হোক।আপনি থাকেন আমি একটু আসিফের সাথে ভেলপুরি খেয়ে আসি।আপনি আসতে পারবেননা,আসলে ভাবলো জেলাস হচ্ছেন’

নাবিল পড়লো বিপাকে।লিখি ওর সামনে দিয়ে ডেং ডেং করে চলে গেছে ওকে কথার জালে ফাঁসিয়ে।না পারছে আসিফের সাথে ওকে যেতে দিতে আর না পারছে নিজে সহ যেতে।লিখি ফোন বের করে আসিফকে কল করতে করতে বাসা থেকে বেরিয়ে গেটের পাশে দাঁড়ালো।

আসিফ গভীর ঘুমে ছিল।ফোন বেজে যাচ্ছে তার কোনো খবর নেই।

একবার তো চোখ মেলে কলটাই কেটে দিলো।এরপর আবারও কল আসায় বাধ্য হয়ে উঠে বসে কলটা রিসিভ করেছে।

‘কই তুমি?কল ধরছিলেনা ক্যান?এত জলদি তোমার মতন টিনেজ ঘুমায়?বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে’

‘আরে আমি তো বারোটার দিকে উঠে গেমস খেলবো তাই একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছিলাম আগেই।কি বলবে বলো’

‘বের হও বাসা থেকে।আমিও বের হয়েছি।আমরা ভেলপুরি খেতে যাবো’

‘কিহ?এত রাতে?

‘হ্যাঁ,জলদি আসো’

‘পাবা?’

‘না পেলেও আসো।হুদাই হাঁটবো,তাও আসো ‘
—–
আসিফ ঠিক আছে বলে কলটা রাখলো।তারপর চোখ ডলতে ডলতে বের ও হয়েছে।লিখি বারবার পেছনে তাকাচ্ছিল।তার কেন যেন মনে হয় নাবিল ঠিক আসবে।
কিন্তু এতক্ষণেও যখন সে আসলো না তখন লিখি নিশ্চিত হলো এই ভেবে যে আজ আর নাবিল আসবেনা।সে জেলাস না হয়ত।
আসিফ ঘুমের ঘোরে এলোমেলো হয়ে বাসা থেকে বের হতেই লিখিকে দেখলো।তারপর ওকে নিয়ে সামনের দিকে চললো।
আসিফের কথা মতন ভেলপুরি পাওয়া গেলোনা তবে সরষে ভাজা মুড়ির ঝালমুড়ি পাওয়া গেলো।
লিখি ঝালমুড়ি হাতে যেইনা ডান পাশে তাকিয়েছে তখনই তার মনে হলো কেউ ছিল ওখানে।পরে কোথাও কাউকে না দেখে নিজের মনের ভুল মনে করে আসিফের দিকে ফিরে দাঁড়ালো আবার।
আসিফের একটা কল আসায় সে টাকা দিয়ে একটু দূরে গেছে কথা বলতে বলতে।
লিখি একা দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছিল কিন্তু মনে শান্তি পাচ্ছিল না।তার বারবার মনে হয় নাবিল আছে এখানে।তাই অন্ধকারের ঐ জায়গাটার দিকে এগোলো দেখবে বলে।
গাছটার কাছে এসে দাঁড়াতেই সে একটা ছেলের দেখা পেলো তবে ওটা নাবিল না,অন্য কেউ।তাও নেশাখোরের মতন লাগে।
লিখি ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেছে কিন্তু ছেলেটা হঠাৎ ওর হাত চেপে ধরে বললো,’চল আমার সাথে,তোকে জাহান্নাম দেখাবো’

কথাটা শুনে লিখির ভয় আরও বেড়ে গেছে।হাত ছাড়াতে ছাড়াতে আসিফকে ডাক দিলো কয়েকবার।আসিফ তখন অনেকদূরে।সে লিখির ডাক শুনেনি।মনযোগ দিয়ে ফোনে কথা বলছিল।

লিখি হাত ছাড়াতে ছাড়াতে নিচে বসে গেছে তাও ছেলেটা ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে রোডের পাশে পড়ে থাকা একটা নির্জন জায়গার দিকে।
তখন লিখিকে আরও জোরে টান দিবে সেসময়ে নাবিল এসে হাত আটকালো ওর।চোখ বড় করে এক ধাক্কা দিয়ে ফেললো ছেলেটাকে।লিখি নিচে বসে হাত ধরে দেখছে।জোরাজুরিতে ওর হাত ছড়ে গেছে।নাবিল ওকে এমন অবস্থায় দেখে তুলে দাঁড় করিয়ে বললো,’কই তোমার আসিফ?বাঁচাতে আসলোনা?’

লিখি চুপ হয়ে ছিল।ঐ ছেলেটা এতটাই নেশা করেছিল যে ধাক্কা খেয়ে জঙ্গলে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে।আসিফ ফোনের কথা শেষ করে মাত্র আসলো এদিকে।
‘আরে নাবিল ভাইয়া যে।লিখি তো বলছিল আপনি আসবেনই না’

‘এত বড় ছেলে থাকতে যখন লিখির নিরাপত্তা থাকেনা তখন তো তার হাসবেন্ডকেই আসতে হয়’

‘কেন?কি হলো আবার?’

লিখি মুখ গোমড়া করে যেতে যেেত বললো,’কিছু হয়নি,তুমি যাও’

নাবিল ইশারা করে পড়ে থাকা ছেলেটাকে দেখিয়ে লিখির পিছু পিছু চলে গেছে।লিখি রাগে আর হাতের ব্যাথায় দ্রুত হাঁটছে।নাবিল ও চেয়েও দ্রুত হেঁটে পথ আটকে বললো,’আমি না আসলে কি হতো?’

‘কি হতো!আমি চলে যেতাম ঐ ছেলের সাথে।’

‘দেখি হাত দেখি’

লিখি হাত ছাড়িয়ে চলে গেলো।নাবিল ভাবছে তার আবার কি দোষ।রুমে এসে লিখি আগে শাড়ীটা বদলে সেলোয়ার সুট পরে ধপ করে শুয়ে পড়েছে কোনো কথা না বলেই।নাবিল সারা বাসা খুঁজে ফার্স্ট এইড বক্স খুঁজে বের করে লিখির পাশে এসে বসে ওর হাত ধরলো মলম লাগাবে বলে।লিখি তখনও জেগে ছিল, নাবিল ওর হাত ধরে মলম লাগাচ্ছে তা টের পেয়েও সে কোনো রিয়েকশান দেখায়নি।নাবিল মলম লাগাতে লাগাতে বললো,’দেখো হাত ধরেছি মলম লাগাতে,আবার বলবানা যে হাত ধরা মানে ভালবাসি’

লিখি হাত সরিয়ে রাগী স্বরে বললো,’তবে ওখানে গেলেন কেন?তার মানে আপনি জেলাস?’

‘সেটা ভেবে যদি তুমি খুশি হও তবে তা ভেবে নাও।তবে আমি তোমার কথা ভেবেই পিছু নিয়েছিলাম।এর বেশি কিছুনা।আমার কাছে তোমার সেফটি আগে’

‘আসিফ দিতে পারতোনা?ও তো ছেলে’

‘ছেলে হলেও রেসপন্সবিলিটি বলে একটা ব্যাপার আছে।সে ছোট বলে তার মাঝে এখনও এসব হয়নি,কিন্তু আমার হয়েছে।আমার কাছে তোমার প্রতি একটা দায়িত্ব আছে, কারণ তুমি আমার স্ত্রী। একা রাতে কাজিনের সাথে বেরিয়েছো আমাকে জেলাস ফিল করাতে কিন্তু রাতে কত বিপদ থাকে তা জানো?’

‘আপনি স্বীকার কেন করেন না?আমাকে বাদ দিয়ে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করার ইচ্ছা আছে নাকি আপনার?’

‘একজনকে বিয়ে করে তার পরিবার রাজি করাতে হুলুস্থুল কান্ড বাধিয়েছে, আমি আরেকটা বিয়ে করার সময় পাবো কই?’

লিখি মাথা নিচু করে বালিশের সাথে লাগিয়ে বললো,’যান,স্বীকার করতে হবেনা।আমি বুঝতে পেরেছি আপনি আমায় ভালবাসেননা।যেটা দরকার শুধু সেটাই করেন,এর বেশি কিছু করেননা।আমি কেবল দায়িত্ব ‘

নাবিল বক্স নিয়ে চলে গেছিলো।কিছু আর বলেনি।সম্পর্কের মাঝে টানাপোড়ন পড়লে একজনকে মেনে নিতে হয়।নিজ থেকে এগোতে হয়।নাবিলের মনে হলো তার সেটা করা উচিত।
বক্সটা রেখে বিছানায় এসে শোয়ার আগে লিখির গায়ে চাদর টেনে দিলো সে।তারপর ওর মাথায় হাত রেখে বললো,’আই এম সরি’

লিখি তো অবাক।যেন আকাশ থেকে পড়লো।লাফ দিয়ে উঠে বসে বললো,’কিসের জন্য সরি?’

‘আমি তোমায় বুঝতে পারিনি তাই’

‘তো এখন বুঝেছেন?’

‘হুম’

‘কি বুঝেছেন?’

‘যে তুমি ঘাঁড়ত্যাড়া’

চলবে♥

#মনের_কোণে🥀
#আফনান_লারা
#পর্ব_৩৫
.
লিখির কাছে কথাটা হজম হলোনা।নাবিলের মুখের দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকার পর ওর মাথায় একটা বাড়ি বসিয়ে দিয়ে সে মুখ ঘুরে শুয়ে পড়েছে।নাবিল মাথা মুছে বললো,’মজা করছি।আমি আসলেই তোমায় বুঝি।বালিশের তলা চেক করো’

লিখি গোসসায় বালিশের তলায় হাত রাখলো।
ওমা কিসের যেন খচখচ আওয়াজ করছে।একটা চকলেট সেখানে।চকলেট বুঝতে পেরে লিখি হাত সরিয়ে মুখটা আবারও ফুলিয়ে রাখলো।নাবিল এবার বললো ল্যাম্প শ্যাডের পাশে তাকাতে।লিখি সেখানে তাকিয়ে দেখলো আরও দুটো চকলেট ওখানে।এবারও সে মুখ ফুলিয়ে চুপ করে আছে, নাবিল এবার ওর হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বললো,’আরও লাগবে চকলেট?’

‘না।আপনি হয়ত জানেননা,চকলেট আমার পছন্দ না’

নাবিল জিভে কামড় দিয়ে বললো,’সত্যি?’

‘হ্যাঁ,আমি চকলেট পছন্দ করিনা’

এত শত আয়োজন সব কিছুতে পানি ঢেলে গেলো।নাবিল ভেবেছিল চকলেট দেখলে হয়ত ওর মন গলবে।কিন্তু এ তো উল্টা হলো।
মেয়েরা চকলেট অপছন্দ করে?’

লিখি বুঝি নাবিলের মনের কথা বুঝে গেলো।সে তখনই বলে উঠলো,’কেন?সবার চকলেট প্রিয় হতে হবে?’

‘আপনি ভাল,আপনার চকলেট প্রিয় না।তাও রেগে যাইয়েন না দয়া করে,আপনার রাগ কাটাতে আমার রফাদফা হয়ে যায়।’
——
অনাবিল আর সামিয়া নাহিদকে নিয়ে লিখিদের বাসার সামনে এসে উপস্থিত হয়েছেন।রাত দুইটা বাজে এখন।এত দেরি হলো তাদের!!পথে জ্যাম থাকায় দেরিটা দিগুণ বেড়েছে।
গেটের বাইরে ছিল দারোয়ান অন্যজন।এর নাম আজম।আজম ঘুম ঘুম চোখে মশা মারছিল।কারের আওয়াজ পেয়ে সজাগ হয়ে উঠে গেট খুলে দিয়েছে সে।সাদা রঙের ঝকঝকে গাড়ীটা ভেতরে প্রবেশ করলো।রুহুল আমিনের বাড়িতে সবসময় যত কার আসতো তার মধ্যে এটা সব চাইতে সুন্দর কার ছিল।
আজম সালাম দিয়ে ভেতরে যেতে বললো তাদের। অনাবিল গাড়ী থেকে নেমে মাথা ঘুরিয়ে গোটা বাড়িটা দেখছে একবার পরোক করে।
যতটা ভেবেছিল তার চেয়ে বিশাল বাড়ি।দেখে হাসি ফুটলো তার।সামিয়া হাই তুলে বললো,’আমার একটু রেস্ট দরকার।অনেক টায়ার্ড’

তখন অনাবিল পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললেন,’এখন তো আলোচনা শুরু করছিনা।ডিনারটা সেরে ঘুমিয়ে পড়বো।
কিন্তু বাড়ির কারোর তো কোনো আয়োজন দেখছিনা।আমাদের কেউ কি রিসিভ করবেনা?’

ওমনি আজমের ডাকে রুহুল আমিন এবং তার স্ত্রী সালাম দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এগিয়ে এসেছেন ওদের কাছে।অনাবিল মুগ্ধ হলেন তাতেৃ
রুহুক আমিন তো প্রতি লাইনে বেয়াই দশবার বলতেছেন।বেয়াই বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলতেছেন।অনাবিলকে কিছু বলতেই দিচ্ছেন না।
লিখি আর নাবিল ঘুমাচ্ছে।ওদের আর জাগালেন না কেউ।ডাইনিং সাজিয়ে ফেললেন সুন্দর সুন্দর খাবারের আইটেম দিয়ে।
অনাবিল ফ্রেশ হয়ে এসে বসতেই রুহুল আমিন নিজে মাংসের পিস ওনার পাতে দিয়ে বললেন খেতে।
তখনও পান চিবোচ্ছিলেন তিনি।অথচ তার সুন্দর ব্যবহারে অনাবিলের চোখে এই দোষ ধরাই পড়েনি।খেতে খেতে তিনি বললেন,’নাবিল কোথায়?’

লিখির মা তখন বলেছেন তারা ঘুমে।যদি তিনি বলেন তো জাগিয়ে দেবেন।তিনি সাথে সাথে মানা করলেন,সকালে কথা বলবেন বলে।
নাহিদ ঘুমে।তাকে রুমে শুইয়ে দিয়ে এসে সামিয়া আর অনাবিল ডিনারটা সেরেছে।রুহুল আমিন সোফায় বসে পান সাধলেন ওনাদের।তার পানের ঘ্রানে জনাব অনাবিল পাগল হয়ে বলে দিলেন তিনিও এক খিলি খাবেন।
সামিয়া তো আশ্চর্য হয়ে গেছে।হা করে এক মিনিট চেয়ে থেকে বললো,’তুমি পান খাবে?আর ইউ সিওর?’

‘কি সুন্দর ঘ্রাণ দেখেছো??তুমি খাবে?’

সামিয়া নাক ছিঁটকে নাহিদের কাছে চলে গেছে।অনাবিল আয়েশে পান মুখে দিয়ে চোখ বুজলো।কি সুন্দর স্বাদ!!!
রুহুল আমিন তা দেখে খিলখিল করে হাসছেন।ওনাকে দেখে প্রথমে মনে হয়েছিল জীবনে পান খাননি,সেই লোক কিনা বরিশালে এসে এই বাসায় ঢুকে পান মুখে দিলো।ভাবা যায়!!

অনাবিল পান খেতে খেতে রুমে চলে গেছেন।নাবিল দরজা ফাঁক করে সব দেখছিল এতক্ষণ।জনাব অনাবিলকে রুহুল আমিনের সাথে এভাবে মিলে যেতে দেখে সে দারুণ খুশি হলো।পেছনে তাকালো লিখিকে সুখবরটা দেবে বলে,কিন্তু সে তখন ঘুমাচ্ছিল।কথাটা শুনলে সে খুব খুশি হবে ভেবে নাবিল কাছে এসে ওকে জাগানোর জন্য কয়েকবার করে ডাকলো।লিখি ওঠেনি।কিছু সময় আগেই চোখ লেগে গেছে তার।তাই এখন আর উঠতে পারছেনা।
নাবিল আর জোর করেনি।সে ও পাশে এসে শুয়ে পড়েছে।
——
সকালে নাবিলের মায়ের ডাক শুনে লিখি লাফ দিয়ে উঠে বসলো।ভেবেছে স্বপ্ন দেখছে।পরে দরজায় নক হবার আওয়াজ পেয়ে তাড়াহুড়া করে চোখ ডলে উঠতে গিয়ে ধপ করে পড়ে গেলো আবার।নাবিল ওর ওড়না মুঠো করে ধরে ঘুমায়।লিখি অনেক চেষ্টা করেও ওড়নাটা ছাড়াতে পারেনি, ওদিকে সামিয়া জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে।শেষে বাধ্য হয়ে লিখি বললো,’আন্টি একটু দাঁড়ান,উনি ওড়না ছাড়ছেননা।’

এটা শুনে সামিয়া লজ্জা পেয়ে চলে গেলো ওখান থেকে।কথাটা নাবিলও শুনে চোখ মেলে ওড়না ছেড়ে বসে গেলো।লিখি স্বাভাবিক ভাবে ওড়না নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই নাবিল বললো,’আর একবার ভুলভাল কথা বললে কানের নিচে একটা দিব।সবসময় উল্টা পাল্টা কথা বলো তুমি ‘
‘কিসের উল্টা পাল্টা বললাম?আপনি এদিকে ওড়না ছাড়ছেন না,ওদিকে শাশুড়ি মা পারছেননা দরজা ভেঙ্গে ফেলছেন।আমাকে তো এটাই বলতে হতো’

‘আমি ঘুমের ঘোরে ধরেছি,ইচ্ছে করে ধরেছি নাকি?তুমি যেভাবে বললে, ইজ্জত বলে আর কিছু থাকলোনা।’

লিখি বিড়বিড় করতে করতে ওয়াশরুমে চলে গেলো।নাবিল গিয়ে আগে দরজা খুললো।মা নেই।বের হলে মুখ ধুয়ে তারপর যেতে হবে।মায়ের আবার অনিয়ম পছন্দ না।
দরজাটা সে আবার লাগানো ধরতেই নাহিদ এসে আটকে বললো’কেমন আছো ভাইয়া?’

নাবিল খুশি হয়ে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,’ভালো।তোমার কি খবর?’

‘এদের ফ্রিজে চকলেট কেক দেখেছি।আমাকে এক পিস নিয়ে দাও’

‘দেবো।একটু অপেক্ষা করো’

‘বাবি কোথায়?’

‘বাবি না ভাবী।তোমার ভাবী ওয়াশরুমে।’

‘এটা তো ভাবীদের বাড়ি,তাহলে তোমায় কেন বলছি? ভাবী আসলে তিনি নিয়ে দিবেন’

‘ঠিক’

নাবিল কিছু বলার আগেই দূর থেকে তোয়ালে উড়ে এসে তার আর নাহিদের মুখের ওপর পড়লো।লিখি কোমড়ে হাত দিয়ে বেরিয়ে বললো,’আমার ওয়াশরুমে নিজের টিশার্ট ওমন ঝুলিয়ে রেখেছেন কেন?আর একটুর জন্য হার্ট এটাক হয়ে যেতো।মনে হচ্ছিল ভূতের মতন,ঝুলছে’

কথাগুলো বলতে বলতে বের হয়ে এসে লিখি হঠাৎ নাহিদকে দেখে জিভে কামড় দিয়ে বললো,’ও এখানে?সরি সরি’

নাবিল তোয়ালে সরিয়ে বললো,’আর বাকি আছে বাবার সামনে তোমার উল্টা পাল্টা কথা বলার।মুখ সংযত রাখো।একবার মায়ের সামনে তো একবার নাহিদের সামনে’

‘আপনার বাবাকে বলবো শ্বশুর আব্বা আমাকে কোলে নেন
হিহিহি’

লিখি হাসতে হাসতে তোয়ালে গুছাতে গিয়ে দেখলো দরজার ওপারে জনাব অনাবিল দাঁড়িয়ে আছেন।ওনাকে দেখে সে এমন লজ্জা পেলো আর ভয় পেলো,এক ছুটে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেছে।নাবিল ওর দৌড় দেখে সেও ওদিকে তাকিয়ে বাবাকে দেখে নাহিদকে নিচে নামিয়ে রোবটের মতন দাঁড়িয়ে পড়েছে।

‘নাহিদ আসো আমরা বাইরে দেখতে যাব’

নাবিল থতমত খেয়ে বললো,’বাবা ও ছোটমানুষ তো তাই মজা করে বলেছে।তুমি রাগ করোনা’

‘এত মজা ভাল না,দুষ্টামি কম করতে বলিও।বংশদর যদি ওর মতন হয় তাহলে আর আমায় বাসায় থাকতে হবেনা।বাগানে বসবাস করতে হবে।এই স্বভাব যেন ওদের না থাকে সেই প্রার্থনা করি’
——
লিখি ওয়াশরুমের দরজা ফাঁক করে দেখার চেষ্টা করছিলো নাবিলের বাবা চলে গেছেন কিনা ওমনি সামনে নাবিলের চোখ জোড়া দেখে ভয় পেয়ে দরজা আবার লাগানো ধরতেই নাবিল আটকে বললো,’সকাল সকাল এত লজ্জা দিছো আমায়, আজ তোমার রেহায় নাই’
চলবে♥