#মনের_গহিনে (১৫)
Sarika Islam(mim)
কলেজের গেটের বাইরে আমি ইমা দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলাম সেখানে নীলাপু এসে হাজির।তাকে দেখে প্রচুর রাগ হলো পরেই নিজেকে ঠিক করে তার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।নীলাপু চোখে সানগ্লাস পরে কিছুটা ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।এইভাবেই তাকে দেখে মিজাজ বিগড়ে যাচ্ছে আবার উপর দিয়ে ভাব নেওয়া হচ্ছে।গম্ভির গলায় বললাম।
-কি হয়েছে?আজো এইখানে কি তোমার?
নীলাপু চোখ থেকে সানগ্লাসটি খুলে হাতে নিল।আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-চল এইখানে সব কথা হবে না।
-এইখানেই বলো যা বলার।
নীলাপু কিছু শুরু করবে তার আগেই গাড়ির হর্ন বাজলো আবার রিকশার ঘন্টি বাজে।প্রচুর ভিড়ভাট্টা এইখানে মোটেও সম্ভব না কোন কথা বলা।আমি ইমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নীলাপুর সাথে গেলাম।একটা রেস্টুরেন্ট এর ভিতরে একটা টেবিলে বসলাম।নীলাপু দুটো কোল্ড কফি অর্ডার দিল।আমার তার আদিখ্যেতা একটুও দেখতে ইচ্ছে করছে না।সোজাসাপটা তাকে বললাম,
-এমন আদিখ্যেতা না দেখিয়ে সোজাভাবে বলো আবার কি বলতে চাও।
-তোদের এত তাড়া থাকে কেন সব সময়?
মেকি হেসে বলল।আমি ভ্রু কুচকে নীলাপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
-তোরা বলতে?কার কার কথা বলছো?
-সেকি ইয়াদ তোকে বলেনি?
ইয়াদের প্রশংগ নীলাপুর মুখ থেকে শুনে কপাল আরো কুচকে এলো।এইবার আমার শুনার আগ্রহ আরো বেড়েছে।
-কি বলার ছিল ইয়াদের?
-এইটাই যে আমাদের দেখা হয়েছিল।আমি ওকে আমার পালিয়ে যাওয়ার কারন বলেছি।
-আর উনি বিশ্বাস করে নিলেন?
নীলাপু মাথা ঝাকালো।যে হ্যাঁ তিনি বিশ্বাস করেছেন।আমি অবাকের উপর অবাক হচ্ছি ইয়াদ বিশ্বাস করে নিল?নীলাপুর সাথে দেখাও হয়েছে তার?আমাকে একটা বার বলল না?ইয়াদ আমাকে অবিশ্বাস করেন?ইয়াদের প্রতি প্রচুর অভিমান জমা হলো মনের গহিনে।
কোল্ড কফি আসতেই নীলাপু স্ট্রতে মুখ দিল।খুব রিলেক্সে বসলো।আমার মিজাজ এতটাই খারাপ হচ্ছে যে এইখানে বসে তার ঢং দেখা মোটেও শোভা পায় না কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে দেখতে হচ্ছে।বিরক্তি মুখশ্রী নিয়ে বললাম,
-কি বলার দ্রুত বলো কাজ আছে।তোমার মতো তো বেকার ঘুরি না।
-পিঞ্চ মারছিস?মার মার।
হাল্কা হেসে বলল।কফিটা অর্ধেক শেষ করে আমার দিকে নজর দিয়ে বলল,
-তুই আম্মাকে বলেছিস কেন ব্যাপারটা?
নীলাপুর কথায় হাল্কা হাসলাম।সে এত্ত এত্ত কান্ড রটাবে আর আমি চুপচাপ সহ্য করে বসে থাকবো নাকি?আম্মাকে তো বলারই ছিল।
-কেন আম্মাকে বলাটা কি ভুল হয়েছে?
নীলাপু কোন উওর করলো না।আমি আবার বললাম,
-আসলে আমার বিয়ের দিনই বলা উচিত ছিল তোমার কান্ডগুলো কিন্তু আমি না বলে নিজের জীবন সংকটে ফেলেছি তোমার জন্য।আর সেই তুমিই?
মেকি হাসলাম।বড় বোন নাকি মায়ের পরের স্থান পায় সব জায়গায় সাপোর্ট করে সব সিচুয়েশন হেন্ডেল করে।আর আমার বড় বোন আমাকে সব সিচুয়েশনে ধা*ক্কা মেরে ফালিয়ে দেয় আরো ইচ্ছে করে আমাকে ফাসায়।ভেবেই হাল্কা হাসলাম।নীলাপু মুহুর্তেই রেগে গেল।
-বেশি বকছিস কিন্তু তুই?পেকেছিস বেশি?
-তুমিই পাকিয়েছ।সব তুমিই করেছ আমার জীবনটা পুরোপুরি নষ্ট করার দায়ভার তোমার।
নীলা আরো রেগে গেল সব দোষ তাকেই দেওয়া হচ্ছে।হাল্কা উচু গলায় বলল।
-তুই না করতি বিয়ে কেন মহান হতে গিয়ে বিয়ে করেছিস?
-মহান?ভুল বলছো তুমি আমি আমার পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে বিয়ে করেছি।আর তুমি সব উজার করে পালিয়েছিলে ভুলে যেওনা।
-সব ঠেকা তো তুই নিয়ে বসেছিস সবাইকে বাচানোর।
সজোড়ে টেবিলের মধ্যে একটা বা*ড়ি দিয়ে বলল,
-আমাকে বারবার পালানোর কথা স্মরন করিয়ে দেওয়ার কিছুই নেই ফারাহ।
-গলা নামিয়ে কথা বলো আমিও উচু গলায় কথা বলতে পারি।
বলেই উঠে যেতে নিলে আবার পিছে ফিরে তাকালাম।তার দিকে আংগুল তুলে বললাম,
-আমার ইয়াদের দিক থেকে নজর সরিয়ে নাও।নাহয় সেই নজর আমি তুলে ফেলবো।
খুব শক্ত গলায় কথাগুলো বলে বেরিয়ে গেলাম।চোখ জলজল করছে পানি এখুনি টুপ করে পরবে।কখনো নীলাপুর সাথে এইভাবে কথা বলিনি।আজ বলতে গিয়ে অনেকটাই কষ্ট লেগেছে কিন্তু এইটা তার প্রাপ্য ছিল।সব দোষ এখন আমার হবে নাকি?সব দোষ তার ছিল আর তারিই থাকবে।
আখিজোরা মুছে রিকশা করে বাড়ি চলে আসলাম।
নীলা কোল্ড কফির গ্লাসটা সজোরে ছুড়ে মারলো মাটিতে।ঝনঝন করে ভেংগে গেল রেস্টুরেন্টের সব মানুষের নজর পরলো এইদিকে।ম্যানেজার এসে হাজির সব স্টাফরা দেখছে।নীলা বিল পে করে সাথে গ্লাসের ফাইন দিয়ে বেরিয়ে পরলো।
————-
ইয়াদ অফিসে বসে বসে কাল রাতে আব্বার বলা কথাগুলো আওড়াচ্ছে।আব্বা ঠিকি বলেছেন কোন ডিসিশন নেওয়ার আগে ফারাহকে জিজ্ঞেস করা উচিত তাকে সবটা বলা উচিত।হুটহাট আমার নেওয়া কোন ডিসিশন মোটেও ঠিক না।আজিই ফারাহর সাথে কথা বলতে হবে এইভেবে ইয়াদ রিলেক্স হলো।
রাহাত এসে হাজির ইয়াদের কেবিনে।বন্ধুকে চিন্তিত দেখে চেয়ার টেনে বসলো।ইয়াদ কুশল বিনিময় করে কফি আনতে বলল।রাহাত মুখটা গম্ভির করে বলল,
-বিয়ে করলে কি আসলেই লাইফ তেজপাতা?
রাহাতের মুখে এমন আজব বানী শুনে ভ্রু কুচকালো ইয়াদ।এক ভ্রু উঠিয়ে বলল,
-কেন?কি হয়েছে?
-এইযে তোকে যখনি দেখি তুই টেনশনে থাকিস।না হয় খারাপ মুডে থাকিস।
ইয়াদ মেকি হাসলো।চোখের চশমা খুলে টেবিলে রাখলো রাহাতের গম্ভির মুখখানা দেখে হাসিটা একটু প্রসারিত করে বলল,
-বিয়ে করলে লাইফ আরো হ্যাপিনেসে ভরে যায়।লাইফে বাচার আরেকটা উদ্দেশ্য হয়।জীবনটাকে ফিল করার আরেকটা দিক।
একটু থেমে আবার বলল।
-কিন্তু নীলার মতো মেয়ে যদি থাকে জীবনে তাহলে শিওর জীবন তেজপাতা।
দুজনেই হেসে উঠলো।
———–
বিকেলে সোনিয়ার কাছে গেলাম মেয়েটাকে কাল মুখের উপর না করে দিয়েছি তাই হয়তো রাগ করেছে আজ দেখিইনি ওকে।সোনিয়ার রুমের দরজায় নক করলাম।ভিতরে ঢুকে কাউকেই দেখতে পেলাম না বারান্দা থেকে হাসির শব্দ পাচ্ছি সেখানে উকি মারতেই দেখলাম সোনিয়া কার সাথে যেন ভিডিও কলে কথা বলছে হেসে হেসে।আমাকে দেখেই দ্রুত কল কেটে পিছে ফিরে তাকালো।জোরপুর্বক হাসি দিয়ে বলল,
-ভাবী তুমি?
-হুম।তোমাকে দেখতে আসলাম।
-ওহহ।
মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে বারবার।আমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলাম,
-বিজি থাকলে চলে যাই?
যেতে নিলে সোনিয়া আটকে নেয়।
-সেকি নাহ নাহ বসো।
আমাকে বিছানায় বসিয়ে নিজে আমার পাশে বসল।হাত কচলাচ্ছে কেমন নার্ভাস লাগছে ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেন ও কিছুতে ধরা পরে গেছে।আমি সন্দেহজনক আখিজোরা নিক্ষেপ করলাম সোনিয়ার দিকে।
-কিছু লুকাচ্ছো?
সোনিয়া হাল্কা হেসে উঠলো আবার হাসি মলিন হয়ে গেল।হুট করেই আমার হাত ধরে ফেলল,
-তোমাকে অনেক দিন ধরে বলবো বলবো ভেবে বলাই হয়নি।
আমি হাল্কা হেসে জিজ্ঞেস করলাম,
-কি?
-আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।
আমি হেসে উঠলাম।সোনিয়া হয়তো এই মুহুর্তে আমার হাসা মোটেও আশা করেনি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।এতে এইভাবে লজ্জার কি আছে মেয়েটা এখনো বাচ্চাই রয়ে গেল।
-ভাবী হাসছো যে?
-তোমার কান্ড দেখে।
সোনিয়া কিঞ্চিৎ হাসলো।
-আসলে ওর সাথেই মিট করাতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম তোমাকে।আম্মু আর ভাইকে বলো না প্লিজ!!
অনুরোধ স্বরুপ বলল।আমি ওর হাতের উপর নিজের হাত রেখে বললাম,
-কেন?তাদের বললে তো তোমাকে ওর সাথে বিয়ের ব্যবস্থাটাও করে দিবে তাই না?
-হুম ঠিক আছে।কিন্তু ভাইয়া অনেক বকাঝকা করবেন। প্লিজ প্লিজ!!
আমিও মাথা ঝাকালাম যে এখন বলবো না।সোনিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরলো খুশিতে।আমাকে দেখাতে লাগলো তার বয়ফ্রেন্ড রাহুলকে।বেশ হেন্ডসাম তাদের কলেজ এর সেই ছেলে কিভাবে কি শুরু হয়েছে কত দিন চলছে পুরো প্রেম কাহিনি শুনাতে ব্যস্ত।
————-
নীলা বাড়ি এসে আম্মার কাছে গেল।নিশি বেগম বিছানায় পা ফেলে তসবি গুনছিলেন মেয়েকে এই সময় তার কামরায় দেখে অবাক হয়ে তাকালেন।নীলা মুখটা মলিন করে মায়ের কাছে বসলো।
-আম্মা আমি কি খুব খারাপ?
হঠাৎ নীলার মুখ থেকে এমন কথা শুনে নিশি বেগম চমকে উঠলেন অবাক নয়নে মেয়ের দিকে তাকালেন।কি হলো আজ তার এমন আজব কথা বলছে কেন?তসবি সাউড টেবিলে রেখে মেয়েকে কাছে ডাকলো।হুট করে নীলা নিশি বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্নাজুড়ে দিল।নিশি বেগম প্রচুর অবাক হলেন।নীলা তাকে জড়িয়ে ধরে না কয়েক বছর হলো এমনকি ঠিকভাবে কথাও বলে না আজ কি হলো?
-আম্মা আমি সবার জীবন নষ্ট করি তাই আমার জীবন নষ্ট হয়ে আছে।
নিশি বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
-কি হয়েছে তোর?আমাকে বল আমি তো আছিই।
-আম্মা আমি অনেক খারাপ তাই না?আমার ছোট বোনকে কত কষ্ট দিয়েছি।সে আজ আমার সাথে উচু গলায় কথা বলেছে।
নিশি বেগম মেয়েকে জড়িয়ে শান্তনা দিল।
চলবে,,
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।)