মনের গহিনে পর্ব-১৭

0
369

#মনের_গহিনে (১৭)
Sarika Islam(mim)

ইয়াদ প্রায় দশটায় বাড়ি ফিরলো।সবার খাওয়া শেষ আমি টেবিলে বসে ছিলাম দরজার দিকে তাকিয়ে ইয়াদের অপেক্ষায়।ইয়াদ আসায় দ্রুত পায়ে তার সামনে হাজির।ইয়াদ আমাকে দেখে হাল্কা হাসলো।আমি ইয়াদের হাসিকে ইগ্নোর করে ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-কোথায় ছিলেন এতক্ষন?লেট হলো কেন?

ইয়াদ মেকি হাসলো।ফারাহর কোমর জরিয়ে ধরলো।কিছুটা কাছে এসে নরম করে বলল,
-এখন সব হিসাব দিতে হবে বুঝি?
-হুম,
-আজ একটু বেশি কাজ ছিল।
-আংকেল যে চলে আসলো?

ইয়াদ আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই পেছনে আম্মাকে দেখে ইয়াদ এক ঝাটকায় ছেড়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।সুহানা বেগম পানি নিতে এসেছিলেন ছেলেকে দেখে এগিয়ে গেলেন।
-এখন এসেছিস?যা খেয়ে নে।
-জি আম্মা।

ইয়াদ ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিল।

আমি বিছানা ঝাড়ছি আর আড়চোখে ইয়াদকে দেখছি।ইয়াদ সোফায় পায়ের উপর পা তুলে লেপটপে ডুবে আছে।সারাদিন পর আসলো একটু আমার সাথে কথা বলবে তা না আবার ডুবে আছে কাজের মধ্যে হুহ।ভেংচি কাটলো ফারাহ।
হুট করেই নীলাপুর কথা মনে হলো একটু জিজ্ঞেস করেই নেই নাহয় আমার মাথায় সবসময় এইসবই ঘুরবে।ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-নীলাপুর সাথে দেখা হয়েছিল?

আস্তে করে বললাম আবার নজর ফিরিয়ে নিলাম।কিছু কি মনে করবে আবার?মাইন্ড করবে নাতো?যদি কিছু ভাবে উফফ!!

ইয়াদ লেপটপ থেকে মুখ তুলে ফারাহর দিকে তাকিয়ে বলল,
-কিছু বললে?

আমি আর একটু গলার স্বর উঠিয়ে বললাম,
-নীলাপুর সাথে কথা হয়েছিল?

হঠাৎ নীলার কথা শুনে হচকচিয়ে গেল ইয়াদ।আমতাতে লাগলো কি বলবে এখন?নীলা বলে দিয়েছে?পরক্ষণেই ভাবলো লুকানোর কি হলো যা হয়েছে সব সামনে থাকবে সব সত্যি বলবে সেতো আর খারাপ কিছু করেনি।ইয়াদ বলল,
-হুম।দেখা হয়েছিল নীলা ডেকেছিল।

আমার কলিজা কামড় দিয়ে উঠলো।ইয়াদ তাহলে সত্যিই নীলাপুর সাথে দেখা করেছিল?নীলাপু সত্যি বলেছেন তাহলে।মনটা খারাপ হয়ে গেল।
ইয়াদ ফারাহর গোমড়া মুখ দেখে উঠে তার সামনে গেল।ফারাহর হাত ধরে চোখেচোখ রেখে বলল,
-নীলা বলছিল কেন পালিয়েছে।

আমি ভ্রু কুচকে ইয়াদের দিকে পুর্ন দৃষ্টি রেখে বললাম,
-কি বলল?
-বলেছে তুমি নাকি ইচ্ছে করে পালিয়েছো।

ইয়াদের কথা শুনে আমার মিজাজ গরম হয়ে গেল।মিথ্যে বলারও একটা লিমিট থাকে এতটা নিচে নেমে যাবে নীলাপু আমার ভাবনার বাহিরে ছিল।
-আর কি বলল?
-কিছু না বাদ দাও ওইসব।আমি তোমাকে পরিপূর্ণ রুপে বিশ্বাস করি।

বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আমিও ইয়াদের বুকে মাথা রখলাম।এমন জীবনসঙ্গী পাওয়া সত্যিই খুব ভাগ্যের।কয়জন মানুষ তার জীবনসঙ্গীকে এতটা বিশ্বাস করেন যতটা ইয়াদ আমাকে করেছেন।আর অবশ্য নীলাপুর কথাটা পুরোই অবিশ্বাস্য ছিল শুনেই সবাই বুঝবেন হুহ!!!

———–

সকালে,
আজ নীলাকে দেখতে আসবে ফ্রান্সের ছেলে বিয়ে করে নাকি নিয়ে যাবে।নিশি বেগম এক দিক দিয়ে খুশি আবার দুঃখও লাগছে।তার মেয়ে চলে যাবে দূরে সে একাই রয়ে যাবে আবার ভাবলো ফারাহর জীবনটা ভালো হবে।
ছেলে দেখেও বেশ পছন্দ হয়েছে দিন তারিখ ঠিক করলো পরের সপ্তাহে বিয়ে করে নিবে।

নীলা নিজের রুমে গেল ড্রেসাপ চেঞ্জ করে বিছানায় বসলো।বিয়ে করে নিবে?আম্মার কথায় তো বিয়ের জন্য রাজি হলাম এখন শিওর তো?নীলা নিজেকে নিজে বিশ্বাস করতে পারছে না সে আসলেই রাজী হয়ে গিয়েছে।ইয়াদের কথাও মনে নাড়া দিয়ে উঠছে।নিশি বেগম মেয়ের রুমে এসে বসলো।নীলাকে জড়িয়ে ধরলো।
-তুই সত্যিই আমার মন খুশি করে দিয়েছিস নীলা।

নীলা খুশি হলো এই প্রথম এত কাহিনির পরও আম্মা তকে জড়িয়ে ধরেছে।সুন্দর ভাবে একটু কথা বলেছে।মনে মনে নীলা এখন নিজের করা কাজে খুশি।যেহেতু মা খুশি হয়েছেন সেহেতু সেও খুশি।

নিশি বেগম ফারাহকে ফোন করলো খুশির সংবাদ মেয়েকে সবার আগে জানাবে।ফারাহ নাস্তা খাচ্ছিল মায়ের ফোন দেখে রিসিভ করলো।
-ফারাহ নীলার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়ে গেছে।

ফারাহ হলকে খাবার আটকে গেল।কেশে উঠলো ইয়াদ জলদি ফারাহকে পানি পান করালো।পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
-কি হয়েছে?

ফারাহ আম্মাকে অবাক হয়ে উওর করলো।
-সত্যি বলছো?রাজী হয়ে গেল?
-হ্যা আমিও বিশ্বাস করছিলাম না পরে সত্যিই রাজী হয়েছে।
– আলহামদুলিল্লাহ।

ফারাহ আর নিশি বেগম কথোপকথন শেষ করলো।সুহানা বেগম নাস্তা শেষ করে উঠে পরলেন।সোনিয়া নাস্তার টেবিলেই আসলেন না আজকে কেও তাকে ফোর্সও করলেন না।রাসেল শেখ ফারাহকে খুশি দেখে বলল,
-ফারাহ কি হয়েছে?এত্ত খুশি খুশি লাগছে?

এক চিলতে হাসি দিয়ে বলল।ফারাহ রাসেল শেখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট প্রসারিত করে বলল,
-নীলাপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।

ইয়াদ ফারাহ দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।রাসেল শেখ উঠে চলে গেলেন কিছুই বললেন না।ফারাহর সেদিকে কোন খেয়াল নেই নীলাপুর বিয়ে ঠিকে এটাই বড় কথা।তার ইয়াদের থেকে চোখ সরেছে এইটাই বড়।
ইয়াদ নিজের নজর ফিরিয়ে বলল,
-ওহহ ভালো তো।

আমি ইয়াদের দিকে তাকালাম।কেমন মলিন মুখে বলল সে কি মোটেও চাননি নাকি?তার মনেতো আবার নীলাপুর জন্য কিছু নেই তো?অজানা কারনে বুক মোচর দিয়ে উঠলো ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-আপনি খুশি নয়?

ইয়াদ আমার দিকে তাকিয়ে জোরপুর্বক একটা হাসি দিয়ে বলল,
-হুম হুম।

উঠে চলে গেল অফিসের জন্য।আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল সে খুশি নয়?আমি তো খুব খুশি নীলাপু আমাদের জীবন থেকে বিদায় হচ্ছেন।কিন্তু আদো কি ইয়াদ খুশি?

———–

বিকেলে আম্মু ফোন করলো নীলাপুর বিয়ের জন্য শপিং করবে কিছুদিন পর যেহেতু বিয়ে হবে তাই শপিং করা এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছে।সুহানা আন্টির কামরায় নক করলাম অবশ্যই তার থেকে পার্মিশন নেওয়া জরুরিয়ত।সুহানা আন্টি শুয়ে ছিলেন দরজা নকে উঠলেন।আমাকে দেখে মুখ কুচকে নিলেন।শক্ত গলায় বললেন,
-কি?

আমি নিচু স্বরে বললাম,
-আম্মু শপিং এর জন্য ডাকছে যাবো?
-যাও এতে আমাকে জিজ্ঞস করার কি??

বলে মুখ ফিরিয়েই শুয়ে পরলেন।আমিও চলে আসলাম।না বলে গেলেও কথা শুনতে হয় আবার বলে গেলেও ভাব বেরে যায়।উফফফ সব শ্বাশুড়িরা সম্ভবত সেমই হয় আল্লাহি জানে।সোনিয়াকেও জিজ্ঞেস করলাম সে যাবে না মুড অফ করে বসে আছেন।মুড অফ করে থাকলেই কি সব সলভ হয় নাকি?

আমি আম্মু নীলাপু আর তুর্য ভাইয়া শপিং মলএ ঢুকলাম।ঘুরে ঘুরে ড্রেস চুস করছি আপুর জন্য লেহেঙ্গা দেখছি কোনটা পছন্দ হয়।একটা দোকানে খয়েরী রঙের শাড়ি দেখে আমার চোখ আটকে গেল।শাড়িটির মধ্যে স্টোনের কাজ করা একটা ডলকে পরিয়ে রেখেছে।বেশ সুন্দর লাগছে চোখ আটকে গেল আমার সেখানে।
সবাই আগে আগে চলে গেল আমি সেখানেই আটকে গেলাম।আমাকে আটকে যেতে দেখে সবাই এগিয়ে আসলো।আমি আম্মুকে হাত দিয়ে ইশারা করে দেখালাম শাড়িটি বেশ চমৎকার দেখতে।কিন্তু নীলাপুর নাকি পছন্দ হলো না এখন বউর পছন্দ না হলে আর কিভাবে নিব!তাই চলে আসতে নিলে তুর্য ভাই আটকায়।আম্মু আর নীলাপু আগে হেটে চলে যায়।
-কি হয়েছে ভাইয়া?

তুর্য ভাইয়ার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম।তুর্য ভাইয়া এক গাল হেসে বলল,
-তোর ভালো লেগেছে তুই নে?
-নাহ নাহ দরকার নেই।

অনেক জোরজবরদস্তি করেও ভাইয়াকে আটকাতে পারলাম না সে কিনে দিক আমায়।
-বিয়ের পর তো তোকে কিছুই দেই নি এইটা রাখ ভায়ের তরফ থেকে।

আমিও আর না করতে পারলাম না নিয়ে নিলাম।হঠাৎ ইয়াদের ফোন আসলো ইয়াদের ফোন দেখে মনটা খুশিতে ভরে গেল।খুশি মনে ফোন ধরলাম।
-হ্যালো?

ইয়াদ অপর পাশ থেকে বলল,
-কোথায় তুমি?
-মার্কেটে কেন?

ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলা।এইভাবে তো ফোন করলে কিজ্ঞেস করে না তাহলে আজ কেন হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো?ইয়াদ অপর পাশ থেকে উত্তর করলো।
-নাহ এভাবেই।কার সাথে?
-আম্মুর সাথে।
-ওহহ।

ইয়াদ ফোন কাটলো।
কিছুক্ষন আরেকটা দোকানের ভিতর ছিলাম সেইখান থেকে নীলাপুর জন্য একটা লেহেঙ্গা আর শাড়ি কিনলাম।ছেলে পক্ষ থেকেও দিবে কিন্তু আম্মু শখ করে কিনে দিয়েছেন।আমার বিয়েতে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু আমার তো ঠিকভাবে বিয়ে হলো না তাই নীলাপুর বিয়েতেই করবে।

মার্কেট থেকে বের হতেই সামনে গাড়িতে হেলান দেওয়া ব্যাক্তিকে দেখে আমার ছোট প্রসারিত হিয়ে অটোমেটিক হাসি ফুটে উঠলো।মনে খুশিতে গার্ডেন গার্ডেন হয়ে গেল।

চলবে,