মনের গহিনে পর্ব-১৯

0
410

#মনের_গহিনে (১৯)
Sarika Islam(mim)

ইয়াদ ফারাহর হাতে ফোন ধরিয়ে কমরায় চলে গেলেন।ফারাহ আম্মার সাথে কথা বলছিলেন হুট করেই ইয়াদ এইভাবে হাতে ফোন রেখেই চলে যাওয়ায় সেইদিকে ফিরে তাকালো।বুঝতে পারলো না হয়েছেটাকি?ফোন অন করে রাহুলের মেসেজ দেখে সিন করলো।

‘জান কতদিন ধরে তোমার সাথে কথা হয়না।আই রিয়েলি মিস ইউ।’

মেসেজ পরে ফারাহ আর কোন রিপ্লেই করলো না।সোনিয়ার জন্য রেখে দিল।

ইয়াদ সারা রুম জুড়ে পাইচারি করছেন।ফারাহ সত্যি এমনটা করতে পারলো তার সাথে সে মেনে নিতেই পারছেন না।ইয়াদের খুব রাগও লাগছে আবার বিশ্বাসও করতে কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু যা সে দেখেছে তা কিভাবে বিশ্বাস না করবে।

আমি রুমের মধ্যে প্রবেশ করলাম ইয়াদ এক সাইডে বসে আছেন চুপচাপ।তার দিকে তাকিয়ে তার মতিগতি বুঝতে চাইলাম কিন্তু আমি ব্যর্থ মোটেও বুঝে উঠতে পারিনা আমি তাকে।আলমারি থেকে নিজের জন্য একটা জামা নিয়ে ওয়াশ্রুমের দিকে এগুলাম।ঘুরে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-আপনার জন্য জামা বের করবো?

ইয়াদ ফারাহর কথায় ফারাহ দিকে তাকালো।শান্ত চাহনিতে বলল,
-এইখানে আমার জামা পাবা কোথায়?

ইয়াদের কথায় দেখলাম আমি তো আমার বাসায় আসলেই কোথায় পাবো।হাল্কা হাসলাম নিজের বেকুবিতে।ইয়াদ পুনরায় বলল,
-কোন খেয়ালে ডুবে থাকো সারাদিন?খেয়ালি থাকে না।

ইয়াদের কথাটা শুনে আমার হাসি মিলে গেল।কেমন যেন ঠেকলো তার কথায় কিন্তু তাও হাল্কা হাসির চেষ্টা করে বললাম,
-আরে ভুলে গিয়েছিলাম।

ওয়াশ্রুমে চলে গেল ফারাহ।ড্রেসিংটেবিলের উপরে পরে থাকা ফারাহর মোবাইলের দিকে বারেবারে নজর পরছে ইয়াদের।একটু কি দেখে চেক করবে নাকি?নাহ নাহ অন্যের ফোন এইভাবে ঘেটে দেখা মোটেও ভালো কাজ নয়।অন্য কোথায় সে আমার বউ।উঠেও আবার বসে পরে।শেষে উঠে দাড়ালো ফারাহর ফোন হাতে নিল।লক স্ক্রিনে ফারাহর হাস্যজ্বল ছবি দেখে মুচকি হাসলো।ফোনে কোন লক ছিলনা তাই খুলেই ফেলল।মেসেজ বক্স ওপেন করতে যেয়েও দ্বিধা করছে ঠিক করছে নাকি?

অবশেষে ওপেন করেই নিল।সর্ব প্রথমেই R ফর রুবেলের মেসেজ।ইয়াদ মেসেজ পরতে লাগলো এক এক করে।প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তাদের কথোপকথন চলছে।দেখে ইয়াদের বেশ রাগ হলো আবার একেক ধরনের রসকস ওয়ালা কথা দেখে পুরোই মিজাজ বিগরে গেল।ভালোবাসার মতো নানান ধরনের আলাপ করেছেন তারা।ওয়াশ্রুমের দরজার আওয়াজ শুনতেই ইয়াদ চট জলদি ফোন রেখে দূরে গিয়ে দাড়ালো।

———–

ইয়াদ হঠাৎ করেই কেমন যেন করছে দেখে ভ্রু কুচকে তাকালাম তার দিকে।আমার দিকে একটু তাকাচ্ছে আবার ঘুরিয়ে নিচ্ছে আমি বুঝে উঠতে পারছি না তার ভিতরে কি চলছে!!ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বারান্দায় গেলাম শাড়ি মেলতে।ইয়াদকে উসখুস করতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম,
-কি হয়েছে আপনার?কিছু কি হয়েছে?

ইয়াদ ফারাহর কথা শুনে সাথে সাথেই বিছানায় বসে পরলো।সে কি বলবে?জিজ্ঞেস করে নিবে?আমতাআমতা করে বলল,
-নাহ নাহ।কিছুই নাহ।

আমি বিছানা ঝারতে লাগলাম আর আড়চোখে ইয়াদকে দেখতে লাগলাম।কেমন টেনশনে দেখাচ্ছে তাকে কিছু তো লুকাচ্ছে আমার কাছ থেকে কিন্তু কি তা জানতেই হবে আমার।কিন্তু কিভাবে জানবো যদি সে নিজেই আমাকে না বলে।

ইয়াদ বারান্দায় চলে গেল এখন তার মাথা পুরোই ব্লক হয়ে আছে।সে কিছু ভাবতে সক্ষম নয়।রাহাতকে ফোন লাগালো।রাহাত ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে খোচা মেরে বলল,
-এত দিন পর তাহলে মনে পরলো আমায়!!

নিচু আওয়াজে ইয়াদ রাহাত বলল।আর রাহাত সিরিয়াস মুডে চলে গেল চিন্তিত হয়ে বলল,
-কি হয়েছে তোর?কিছু কি হয়েছে?

ইয়াদ ঘুরে রুমের দিকে তাকালো।ফারাহ ফোন ঘাটছে মনে হচ্ছে টাইপ করছে কারো সাথে।ইয়াদ দুঃখি আওয়াজে বলল,
-রাহাত নীলার কথা সত্যি হয়েছে।
-মানে?

রাহাত কিছুই বুঝলো না ইয়াদের কথার আগামাথা।ইয়াদ চুপটি করে আছে দেখে রাহাত কিছুটা রাগী আওয়াজে বলল,
-কি হয়েছে বলবি তো আমি কিভাবে জানবো না বললে?

ইয়াদ রনির কথা ভাবতেই চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।হাত মুষ্টি বদ্ধ করে বলল,
-ফারাহ রনির সাথে কথা বলে।আমি নিজে দেখেছি।
-কোথায় দেখলি?
-ওর ফোনে।

ইয়াদ সব কিছু খুলে বলল রাহাতকে।তার দেখা সব কিছু,ঘটে যাওয়া সব ঘটনা।রাহাত আর ইয়াদ কিছুক্ষন চুপ করে রইলো কোন কথাই বলল না।রাহাত নিরবতা ভেংগে বলল,
-তুই একটা বার ফারাহকে জিজ্ঞস তো করে দেখ?
-জিজ্ঞেস করাটাকি ঠিক হবে?
-তোর সন্দেহ থেকে তো এটলিস্ট ঠিকি হবে।

রাহাত ইয়াদ কিছুক্ষন কথা বলে ফোন কাটলো।
ইয়াদ রুমের মধ্যে প্রবেশ করে সোজাসুজি ফারাহর সামনে গিয়ে দাড়ালো।ফারাহ মুখ তুলে ইয়াদের দিকে তাকালো।ভ্রু কুচকে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলো।ইয়াদ এইবার কোন ধরনের ভনিতা না করে সোজাসাপটা জিজ্ঞেস করলো।
-রনির সাথে তোমার কয়দিনের সম্পর্ক?

ইয়াদের মুখ থেকে এমন আজব বানী শুনে ভ্রু কুচকানো আরো তীক্ষ্ণ হলো আমার।
-মানে?
-মানে এখন তুমি বুঝবাও না।

কিছুটা উচু গলায় বলল।ইয়াদ এই প্রথম আমার সাথে উচু গলায় কথা বলল।আমি পুরো অবাক হয়ে গেলাম বসা থেকে উঠে দাড়ালাম।হয়েছেটাকি?
-হয়েছে কি?অযথা চিৎকার করছেন কেন?
-আমি চিৎকার করছি না আমি মোটেও চিৎকার করছি না।

অবাক নয়নে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে তার হাত ধরলাম।ইয়াদ এক ঝাটকায় হাত ছাড়িয়ে দিলেন।আমি আরো অবাক হলাম ইয়াদের করা অহেতুক কাজে।কি করেছি আমি?কি হয়েছে?খুলে তো বলছেও না?ইয়াদের বিহেভিয়ারে আমার চোখ ছলছল করতে লাগলো।
-ইয়াদ কি হয়েছে খুলে বলুন আমায়?

ইয়াদ রাগের পরিমান আরো বেড়ে গেল।সব কিছু করে এখন না জানার ভান ধরা হচ্ছে।রাগে ইয়াদের কপালের রগ ফুলে উঠলো।চোয়াল শক্ত করে ফারাহর বাহু ধরে বলল,
-জামাই থাকতে অন্য পুরুষের সাথে কিসের কথা?

ইয়াদ এত জোরে আমার বাহু ধরেছে ব্যথায় কুকড়ে উঠলাম আমি।ইয়াদের থেকে নিজের বাহু ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলাম।কিন্তু ইয়াদ ছাড়ছে না আরো জোরে ধরছে।আমার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরল।
-ইয়াদ লাগছে আমার ছাড়ুন।

ইয়াদ ফারাহর চোখে পানি দেখে ছেড়ে দূরে দাড়ালো।রাগের বশে সে অজান্তেই ফারাহকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।এখন নিজের উপর রাগ লাগছে।কিন্তু ফারাহ যে তাকে কষ্ট দিয়েছে?এইটা সে কিভাবে মেনে নিবে?

আমি ইয়াদের কাছে গিয়ে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম।
-কি হয়েছে আমাকে খুলে বলুন নাহয় আমি বুঝবো কি করে সমস্যা কি?

ইয়াদ ফারাহকে সাইড কাটিয়ে বিছানায় পরে থাকা ফারাহর ফোন হাতে নিল।মেসেজ বক্স ওপেন করে R ফর রুবেলের মেসেজ দেখালো।মেসেজের দিকে আংগুল দিয়ে বলল,
-এইসব কি?কি চলে তোমার?

আমি অবাক হয়ে গেলাম।ইয়াদের দিকে তাকিয়ে চোখের জল মুছে বললাম,
-আপনি আমার ফোন চেক করেন?
-বিষয়টা চেক করার নয় বিষয়টি হলো তুমি অন্য পুরুষের সাথে রোমাঞ্চকর কথা বলো স্বামী থাকতে।

আমি বরাবরই অবাক হচ্ছি ইয়াদের বলা কথায় আর করা কাজে।তাকে কখনো এই রুপে দেখবো ভাবতেও পারিনি আমি।এইটা তার বোনের ভালোবাসা যেটা সে আমার নামে চালিয়ে দিচ্ছে।কিন্তু সোনিয়া বলতে না করেছে এখন না বলেও পারলাম না ইয়াদ আমার চরিত্রের উপর আংগুল তুলে দিয়েছে আমি আর একটুও চুপ থাকতে পারলাম না।
-এইটা আমার কোন আশিক এন অল নয় এইটা আপনার বোনের বিএফ।

ইয়াদ নিজের বোনের নামে শুনে রাগ আরো রেগে গেল।খানিকটা চিৎকার করে হাত উপরে তুলল মারার জন্য।কিন্তু মাঝপথেই থেমে গেল।ফারাহ ভাবেনি এমন কিছুটা হবে।ইয়াদ তাকে মারার জন্য হাত উচু করবে।হাত নামিয়ে আংগুল তুলে শক্ত গলায় বলল,
-ফারদার আমার বোনের নামে এইসব বলবে না।

আমার মিজাজ এইবার পুরো গরম হয়ে গেল।নিজে যা বলবে তাই হবে নাকি?সত্যি কি মিথ্যে কি যাচায় বাছাই করবে না নাকি?সব নিজের থেকেই ভেবে নিবে?আমিও রাগের বশে উচু গলায় বললাম,
–R ফর রনি নয় R ফর রুবেল।আপনার বোনের প্রেমিক আপনার আম্মা ফোন ভেংগে দেওয়ায় আমার ফোন দিগে চেটিং হয়েছে তাদের।আর আমার কথা বিশ্বাস না হলে নিজে গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখেন।

কান্না করে দিলাম বলতে বলতে।চোখ বেয়ে অনবরত পানি পরতে লাগলো।নিজের রুম থেকে বের হতে গিয়েও ফিরে এলাম ইয়াদের হাত থেকে নিজের ফোন ছিনিয়ে নিয়ে বললাম,
-অন্যের উপর অপবাদ দেওয়ার আগে সবটা জেনে তারপর বলবেন।

চোখের পানি মুছে রুম ত্যাগ করলো ফারাহ।ইয়াদ বিছানায় ধপ করে বসে পরলো ফারাহর বলা প্রত্যেকটা কথা তার মাথায় ঘুরঘুর করছে।সে কি ভুল কিছু করে ফেলল?আসলেই কি ফারাহর বলা কথাগুলো ঠিক?এখন মাথা পুরোই ঘুরে আছে কিছুই ভাবতে পারছে না পুরো মাথা ধরে গেছে।মাথা ধরে বসে আছে ইয়াদ।

ফারাহ আম্মার রুমে গিয়ে তার পাশেই ঘুমিয়ে পরলো।আম্মা ঘুমিয়ে ছিলেন আর জাগালেন না।কাত হয়ে শুয়ে চোখের জল ফেলতে লাগলো।ইয়াদ তাকে ভুল বুজেছে?তাকে একটু বিশ্বাস করতে পারলো না ইয়াদ?একটু ক্লিয়ার করতে পারতো সবকিছু কিন্তু নাহ সে তার মতো করেই ভেবে নিল?প্রচুর কষ্ট হচ্ছে মনের গহিনে।ইয়াদ তাকে ভুল বুঝলো এইভেবেই তার অনেক দুঃখ লাগছে।

চলবে,
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।)