#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_22
পুরো আকাশ আজ মেঘে ঢাকা।মেঘগুলো আকাশ জুড়ে ছোটাছুটি করছে। হয়তো যে কোন সময় বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে।
ব্যালকনির এক কোনে হাটুতে মুখ গুজে বসে রয়েছে ইশফা।সান এর অমন অবস্থা দেখে কিছুক্ষনের জন্য সে পুরো থমকে গিয়েছিলো।আশেপাশে কি হচ্ছিল কিছুই তার মাথায় ঢুকছিলো না।সে ফ্যালফ্যাল নয়নে শুধু সানের নিথর দেহটার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
কাধে কারো হাতের স্পর্স পেয়ে ইশফা মাথা উচু করল।ইশফার চোখ প্রচণ্ড রকম লাল হয়ে রয়েছে।ইশফা যখন প্রচণ্ড রেগে যাগ অথবা প্রচণ্ড কান্না করে তখনই তার চোখ এমন লাল হয়ে যায়।রুমের আলো ব্যালকনিতে পরছে সেই আলোতে ইশরা, ইশফার চোখ দেখে থমকে গেলো।কাধ থেকে হাত সরিয়ে মিনমিনে বলল……
—এখানে কি করছিস?বৃষ্টি নামবে তো।ভিতরে আয় ভিজে যাবি।
ইশফা আকাশের দিকে মুখ করে নরম গলায় বলল…….
—আকাশে অনেক মেঘ জমেছে নারে।
ইশরা ছোট করে বলল……
—হুম।
—যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে তাই নারে?
ইশরা,ইশফার চেহারার দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে থেকে আবারো ছোট করে বলল…..
—হুম।
ইশফা আকাশের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে আবারো বলে উঠল…..
—আকাশেল মেঘ তো বর্ষন দ্বারা কেটে যায়।কিন্তু মনের মধ্যে যে মেঘ জমে তা কাটে কিভাবে?
ইশরা এবার ইশফার পাশে বসে ইশফার মাথায় হাত রেখে নরম গলায় বলল…
—কি হয়েছে আমার বোইনার?আমার বোইনা তো অনেক স্টং।তাকে তো এভাবে দূর্রবল দের মত কথায় মানায় না।
বোনের আদুরে মাখা কথা শুনে ইশফা ফ্যালফ্যাল নয়নে ইশরার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ইশরাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেদে উঠল।জড়ানো গলায় বলল…..
—আমি খুব পাষাণ রে ইরু আমি খুব পাষাণ।আজ আমার জন্য একজন লোক হাসপাতালে বেডে পরে আছে।আর দেখ আমি!আমি কি সুন্দর গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরছি।আমি খুব খারাপ রে ইরু আমি খুব খারাপ।
ইশরা,ইশফার কথা শুনে থমকে গেলো।ইশফাকে কি বলে সান্ত্বনা দিবে তা তার জানা নেই।
💦💦💦💦💦💦
নিশ্চই রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে। আর শয়তান আগুনের তৈরি।
মানুষকে ধংসের মুখের দিকে ধাবিত করার আরেকটি বড় কারন হল রাগ।মানুষের রাগ করটা স্বাভাবিক।কিন্তু কথায় আছে না “অতিরিক্ত” কোন কিছুই ভালো না।তেমনি অতিরিক্ত রাগ করাটাও ক্ষতিকর।মানুষ যখন প্রচণ্ড পরিমানের রেগে যায় তখন তার হিতাহিত জ্ঞান-বুদ্ধি সব লোপ পায়।আশেপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে কোন দিকেই তার খেয়াল থাকে না। তখন সে নিজেই তার নিজের মধ্যে থাকে না।তখন তার কথা,আচারন দ্বারা অনেকেই বড় ধরনের আঘাত পেয়ে থাকে।
অতিরিক্ত রাগের কারনে যে শুধু অন্যদের কে কষ্ট দেয়া হয় তা কিন্তু নয়। অতিরিক্ত রেগে যাওয়ার কারনে মানুষের ব্রেনে চাপ পরে।তখন তাদের হার্ট অ্যাটাক,স্ট্রোক সহ আরো নানান রোগের ঝুকি থাকে।
(আমি কোন ডাঃ না।গুগুল বাবাজি থেকে, বই পড়ে একটু ডাক্তারি কথাবার্তা বলেছি।কোন কিছু ভুল বললে ক্ষমাপ্রার্থী)
হসপাতালের সাদা ধবধবে বেডের উপর শুয়ে রয়েছে সান।হাতে তার ক্যানুলা লাগানো।কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সান এর উজ্জ্বল ফর্সা মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।সান এর পাশেই একটা টুলের মধ্যে বসে মিসেস শিকদার নিরবে চোখের পানি ফেলেছে আর আল্লাহ্ কে ডাকছে।তার হাসিখুশি, রাগি, বদমেজাজি ছেলেটাকে সে এভাবে মেনে নিতে পারছে না।
তার থেকে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে ছেলের মুখের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে রয়েছে মিঃশিকদার।মনে মনে সে প্রচন্ড অনুতপ্ত হচ্ছে।ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় । আজ ছেলের এই অবস্থার জন্য সেই দায়ী।ছেলের ফ্যাকাসে মুখের দিকে তাকাতেই তার ভীতরটা ভেঙে চুড়ে যাচ্ছে।
সান এর কেবিনের বাহিরে মনমরা হয়ে বসে রয়েছে নিরব।সানকে তখন ঐ অবস্থায় দেখে নিরব পুরো পাগলের মত আচারন শুরু করেছিল।যাকে সে বন্ধুর থেকে আপন ভাবে,রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও মনের সম্পর্ক যার সাথে গভীর তাকে সে ঐ অবস্থায় কিছুতেই দেখতে পারছিলো না।কিভাবে যে সে সানকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে তা একমাত্র সেই জানে।ফোনের আওয়াজ শুনে নিরব পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে এল…….
—ভাইয়া কেমন আছে?
নিরব চেয়ারের সাথে গা এলিয়ে দিয়ে বলল……
— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।
—আর তুমি?
নিরব কিছু না বলে চুপ করে রইল।নিরব এর নিরবতা মধ্যেই অপর পাশ থেকে আবার ভেসে এল……..
—নিজেকে শক্ত রাখো।এতো ভেঙে পরো না প্লিজ।
নিরব ধরা গলায় বলল……..
—পারছি না আমি নিজেকে শক্ত রাখতে।ওকে আমি এই অবস্থায় দেখতে পারছি না।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে খুব।
কখাগুলো বলতে বলতে নিরব এর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল।
কিছুক্ষন দুজনের মধ্যে নিরবতা চলার পর অপর পাশ থেকে ভেসে এল…….
—দাদুকে ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি।সিনথিকে কিছুতেই মানাতে পারছিনা।তুমি একটু কথা বলবে?
—আচ্ছা দাও।
সিনথিয়া ফোন হাতে নিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলল……
—ভা-ইয়া কে-মন আছে?ভাইয়াকে নিয়ে কবে বাসায় ফিরবে?
— আলহামদুলিল্লাহ্ সান ভালো আছে।ডাঃঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে।সকালে কিছু টেষ্ট করে তারপরে মনে হয় ছেড়ে দিবে।তুমি টেনশন করো না।
—ভাইয়া আমাকে একটু নিয়ে যাবে?আম্মু, পাপা আমাকে না নিয়েই চলে গেছে।আমি সত্যি বলছি ভাই এর সাথে একটুও দুষ্টুমি করবো না।আমি ভালো মেয়ের মত ভাইকে দেখে চলে আসবো।প্লিজ নিরব ভাইয়া নিয়ে যাও না।
কথাগুলো বলতে বলতে সিনথিয়া আবার ফুপিয়ে কেদে উঠল।
নিরব সান্ত্বনার সুরে বলল……
—আরে তুমি বোকা মেয়ের মত কাদছো কেন?সান একদম ঠিক আছে।তুমি তো জানোই ওর আরেকবারও অতিরিক্ত রাগ করার কারনে এমন অবস্থা হয়েছিল।ডাঃ বলেছে দু’তিন দিন রেষ্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।ঠিক হলে তুমি ওর মাথায় গোবর পানি ঢেলে দিও।শুনেছি মাথায় গোবর পানি ঢাললে নাকি রাগ কমে।আফসোস কেন যে আন্টি ওকে ছোটবেলায় গোবরে চুবায়নি।(আফসোসের সুরে)
নিরবের কথা শুনে সিনথিয়া কান্নারত অবস্থায় হেসে দিয়ে বলল……
—হয়েছে ভাইয়া আর কমেডি করতে হবে না।ভাইয়ার খবরা-খবর দিও।আর নিজের খেয়াল রেখো।আল্লাহ্ হাফেজ।
—তুমি ও নিজের আর দাদুর খেয়ার রেখ।একদম টেনশন করবে না।আমরা আছি এখানে।রাখছি।
নিরব ফোন কেটে দিয়ে বড় করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো।সিনথিয়াকে যতই সে সান্ত্বনা দেয় না কেন সান ঠিক হওয়ার আগে সান এর সাথে কথা না বলে সে কিছুতেই টেনশন মুক্ত হতে পারবে না।
💦💦💦💦💦💦
ইশরা চুপচাপ জিদানের সামনে বসে পড়ছে।জিদান পড়ানোর ফাকে ফাকে অনেক্ষন ধরে লক্ষ করছে ইশরা প্রতিদিনের চেয়ে আজ একটু বেশিই চুপচাপ সাথে চেহারাটাও মলিন হয়ে আছে।জিদান নরম গলায় বলল…..
—ইশু তুই কি অসুস্থ?চেহারা এমন মলিন হয়ে রয়েছে কেন?
ইশরা কাঠ কাঠ গলায় বলল…..
—আমি ঠিক আছি স্যার।
—তুই ঠিক আছি বললি আর আমি বিশ্বাস করে নেব।কি হয়েছে বল আমায়।
—বলছি তো স্যার আমি ঠিক আছি।কিছুই হয়নি আমার।
—কাল থেকে বুচির ফোন বন্ধ কেন?
—যার ফোন তাকেই জিগ্যেস করুন ফোন বন্ধ করে রেখেছে কেন।
—ওর ফোনটা যদি খোলা থাকতো তাহলে আর তোকে জিগ্যেস করতাম।কিছু তো একটা হয়েছে।তা না হলে বুচি কখনো এমন ফোন বন্ধ করে রাখে না।
জিদানের কথা শুনে ইশরা চুপ করে রইল।কোন উওর দিল না।
💦💦💦💦💦💦
ইশফা ব্যালকনিতে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।মাঝরাতে ঘুম ভাঙার পর কিছুতেই ইশফার ঘুম আসছিলো না।তাই সে ব্যালকানিতে বসে তারা ভরা আকাশ দেখছে।সাথে মনে মনে নানান কথা ভাবছে।
ফোনের শব্দে ইশফা ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এল।নাম্বার টা দেখে তার বুঝতে বাকি রইলো না ফোনটা কে করেছে।এই পযর্ন্ত ইশফা একশর উপরে নাম্বার ব্লক করেছে।তার পরেও এই লোকের ফোন দেয়া থামে না।ইশফা বিরক্ত হয়ে এখন নাম্বার ব্লক করা বাদ দিয়ে দিয়েছে।ইশফা এতো অপমান করে এতো কথা শোনায় তার পরেও বেহায়ার মত এই লোক ফোন দিতেই থাকে।ইশফা আজ কল না কেটে ইচ্ছে মত ঝাড়ি দেবার জন্য ফোন রিসিভ করল।অপর পাশ থেকে কিছু বলার আগেই ইশফা বলল…..
—ঐ তোর কি বিন্দু পরিমান লজ্জা নাই।এমন নিলজ্জর মত কেন ফোন দিস।তোর বোনরে যদি কেউ ফোন দিয়ে বিরক্ত করে তাহলে তোর কেমন লাগত।নিলজ্জ,তিতা বেহায়া।তুই শুধু সামনে আয় তোরে আমি খুন করুম।তার পরে না হয় জেল খাটুম।আর……
ইশফার কথার মাঝেই অপর পাশ থেকে ভেসে এল…….
—আস্তে বাঘীনী আস্তে।এতো হাইপার হলে চলে বল।একটু দম নিয়ে তার পরে কথা বল।আর তাছাড়া এতো প্রশ্ন একসাথে করলে আমি উওর কিভাবে দেব।এসব রাখো এতো রাতে তুমি ব্যালকনিতে কি করছো সেটা আগে বল।
ইশফা আশেপাশে তাকিয়ে বলল……
—আপনি কি করে জানলেন আমি ব্যালকানিতে?আপনি কি ব্যালকনিতে সি সি কেমেরা লাগিয়েছেন?
— আসতাগফিরুল্লাহ।তুমি আমাকে এমন ভাবো?
—তয় আর তোরে কেমন ভাবুম।তুই কি সাধু নাকি।
—এটা কিন্তু ঠিক না।একবার আপনি বলছো তো একবার তুই।সব বাদ দিয়ে তুমি করে বল তাহলেই তো হয়।
—তোর তুমির গুষ্টি কিলাই।তোরে বলুম তুমি ঐ আশায় ঘুম হারাম করিস না।
—তাহলে কাকে বলবে তোমার ঐ সান কে?
সান এর কথা শুনে ইশফা কোন কথা না বলে চুপ করে থেকে লাইন কেটে দিল।না চাইতেও চোখ দিয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পরল।
💦💦💦💦💦💦
১দিন পরঃ
ইশফা ভার্সিটিতে যাবার জন্য রাস্তায় রিকশার জন্য দাড়িয়ে রয়েছে।হঠাৎ একটা গাড়ি এসে ইশফার সামনে থামল।গাড়ির কাচ নামিয়ে ভিতর থেকে একজন লোক গম্ভীর গলায় বলল……
—গাড়িতে উঠ।
ইশফা লোকটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল……
—আপনি এখানে? (কোন আয়া🙄)
#চলবে,
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_23
ইশফা ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রাস্তায় রিকশার জন্য দাড়িয়ে রয়েছে।হঠাৎ একটা গাড়ি এসে ইশফার সামনে থামক।গাড়ির কাচ নামিয়ে ভিতর থেকে একজন লোক গম্ভীর গলায় বলল……
—গাড়িতে উঠ।
ইশফা লোকটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল……
—আপনি এখানে?
—কেন অন্য কাউকে আশা করছিলে?ডিস্টাব করলাম নাতো?
সান এর ত্যাড়া কথা শুনে ইশফা কোন কথা না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।ইশফাকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সান আবারো গম্ভীর গলায় বলল……
—গাড়িতে উঠ।
ইশফা এবারো কোন কথা না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে রইল।ইশফাকে চুপ করে থাকতে দেখে সান রাগি গলায় বলল……
—তুমি নিজের ইচ্ছায় উঠবে? না আমি অন্য ভাবে তোমাকে গাড়িতে উঠাবো?
ইশফা সান এর দিকে তাকিয়ে বলল……
—মানে!
—মানে খুব সিম্পল নিজের ইচ্ছায় গাড়িতে না উঠতে জোর করে গাড়িতে তুলবো।
সান এর সান্ত গলার থ্রেড শুনে ইশফা আশেপাশে চোখ বুলিয়ে মিনমিনে গলায় বলল….
—দেখুন এটা……
আর কিছু বলার আগেই সান ইশফার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল……
—চুপচাপ গাড়িতে উঠ।আর একটা কথা বললে আমি ভুলে যাব এটা রাস্তা।
💦💦💦💦💦💦
সকাল বেলা মায়ের ডাকা-ডাকিতে ঘুম ভেঙে গেল ইশরার।ইশরা চোখ বন্ধ করে ঘুমঘুম কন্ঠে বলে উঠল……..
—কি হয়েছে এতো ডাকছো কেন?
—ক’টা বাজে খবর আছে তোর?কলেজে যাবি না?
ইশরা মাথার উপর বালিশ চেপে ধরে বলল……
—কলেজ বন্ধ।
মা ইশরার মাথা থেকে বালিশ সরিয়ে তেজি গলায় বলল……
—কলেজ বন্ধ!কিসের বন্ধ কলেজ?
ইশরা ফট করে চোখ খুলে তোতলাতে তোতলাতে বলল……
—ঐ তো….ঐ তো……
—কোন বাহানা পাচ্ছো না তাই না?
ইশরা মায়ের কথায় উওর না দিয়ে মাথা চেপে ধরে বলল…..
—মা আমার মাথাটা ভীষণ ব্যাথা করছে।মাথার ব্যাথায় ভুল বলে ফেলেছি।আসলে কলেজ বন্ধ না।আমি আজ কলেজে যাবো না।ভীষণ মাথা ব্যাথা করছে।(অভিনয় করে)
মা চোখ রাঙিয়ে ইশরার দিকে তাকিয়ে সান্ত ভাবে বলল……
—চুপচাপ কথা না বাড়িয়ে কলেজের জন্য রেডি হও।দিনদিন বড় হচ্ছ আর তোমার বাদরামী বেড়ে যাচ্ছে।এখনও ছোটবেলার মত কলেজ বন্ধ করার জন্য বাহানা খোজ।লজ্জা করে না তোমার এই বয়সে এসব করতে?
মায়ের বকা খেয়ে ইশরা গাল ফুলিয়ে মিনমিনে গলায় বলল……
—এখন রেডি হয়ে কলেজে পৌচ্ছাতে দেড়ি হয়ে যাবে।আজ বরং…….
ইশরাকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে মা রাগি গলায় বলল……
—আমি তোমার আর একটা কথাও শুনবো না।
—মা দেড়ি হয়ে যাবে তো।(আদুরে সুরে)
মা ধমক দিয়ে বলল…..
—হোক দেড়ি।তার পরেও যেতে হবে।
—মা আ……
মা চোখ রাঙিয়ে বলল……
—আবার।
মায়ের ধমক খেয়ে ইশরা মুখটা ছোট করে বেড থেকে নেমে ফ্রেস হতে চলে গেল।
💦💦💦💦💦💦
আপন মনে গাড়ি চালাচ্ছে সান।তার পাশে বসে ইশফা আড়চোখে সানকে পর্যবেক্ষণ করছে আর উসুখুসু করছে।
তখন ইশফা সান এর ধমক খেয়ে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসেছে।অবশ্য ঐ সব ধমককে ইশফা গায়ে মাখে না।সান অসুস্থ এই অবস্থায় ত্যাড়ামি করলে যদি সান আবার রেগে যায়।তাই সে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসেছে।সান কে ইশফা যতটুকুই চিনে তাতে ইশফা এতটুকু জেনেছে যে সান কোন খারাপ ছেলে নয়।
ইশফা কাচুমাচু করতে করতে সানকে জিগ্যেস করল…….
—কোথায় যাচ্ছি?
সান ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল……
—কাজি অফিসে।
ইশফা সান এর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল…..
—কিহহহ?মজা করছেন আপনি আমার সাথে?
—তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমার সাথে মজা করছি?
ইশফা কিছু না বলে চুপ করে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইল।ইশফা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মিনমিন করে বলল……
—কেমন আছেন?
সান ত্যাড়া ভাবে উওর দিল……
—আমাকে দেখে বুঝতে পারছো না আমি কেমন আছি?ওহ্ তুমি তো আবার হার্টলেস মানুষ।বুঝবে কিভাবে(তাসিল্যর সুরে)
সান এর কথা সুনে ইশফার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।নিচের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলল…..
—এই অসুস্থ শরীরে আপনার বাসা থেকে বের হওয়া ঠিক হয়নি।
সান আবারো তাসিল্যর সুরে বলল…..
—বাহ তুমি আবার আমার কথাও ভাবো?
ইশফা আর কিছু না বলে চুপ করে বসে রইল।সান ও আর কথা বাড়ালো না।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর সান বলল……
—তুশিকে একটা কল দাও।
হঠাৎ সান এর কথায় ইশফা কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল……
—তুশিকে কল দিয়ে কি হবে?
—কল দিতে বলেছি দাও।কিপটামো করো না।আমি পরে টাকা ভরে দিব।তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসতে গিয়ে ফোন সাথে নিতে ভুলে গেছি।তাই তোমাকে কল দিতে বলছি।
সান এর কথা শুনে ইশফা অবাক হয়ে বলল……
—এখানের কিপটামোর কি হল?আর আপনি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছেন মানে?
—তোমার কি মনে হয় এই শরীর নিয়ে আম্মু আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে দিয়েছে?
ইশফা মনে মনে সানকে বকতে বকতে বলল……
—সব কথাই ত্যাড়া ভাবে বলছে।অসুস্থ দেখে বেচে গেলেন।নাইলে আমিও দেখিয়ে দিতাম ত্যাড়ামো কাকে বলে।
—কি হল।চুপ করে বসে আছো কেন?তুশিকে কল দাও।
ইশফা তুশির নাম্বারে কল দিয়ে ফোনটা সানের হাতে দিল।সান গাড়ি এক সাইডে থামিয়ে তুশির সাথে কথা বলে একটা ঠিকানা দিয়ে তুশিকে সেখানে যেতে বলল।কথা শেষ করে সান ফোনটা ইশফার হাতে দেবার আগেই ইশফার ফোনটা বেজে উঠল।স্কিনে ‘মি’ লেখাটা দেখেই সান এর চেহারার রং পাল্টে গেল।সান ফোনের দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল…….
—তোমার ফোন।
ইশফা ফোনটা হাতে নিয়ে কল কেটে দিয়ে দিল। ইশফাকে কল কাটতে দেখে সান গম্ভীর গলায় বলল…….
—কল কাটলে কেন?
—কল রিসিভ করার প্রয়োজন মনে করেনি তাই কেটে দিয়েছি।
ইশফা আর কিছু বলার আগেই আবার ফোনটা বেজে উঠল। ইশফা দ্বিতীয় বার কল কাটার আগেই সান ইশফার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে দাতে দাত চেপে বলল…….
—আমার সামনে কথা বলতে সমস্যা হবে?গাড়ি থেকে নেমে যাব?
—সমস্যা হবে কেন?
—তাহলে কল কাটছো কেন?
সান এর রাগি গলার কথা শুনে ইশফা অবাক হয়ে বলল…..
— আমি বুঝতে পারছি না সামান্য একটা কল রিসিভ করা নিয়ে আপনি এতো রাগ করছেন কেন?
সান,ইশফা কথার উওর না দিয়ে কলটা রিসিভ করে লাউডে দিতেই অপর পাশ থেকে ইশরার কাদো কাদো কন্ঠে ভেসে এল……
—বোইনা আমার কালো হিজাব পাচ্ছি না।কোথায় রেখেছিস? পিন কই? হিজাব বাধার সময় কি পিন গিলেছিস?আর তুই আমার ব্যাগ গুছিয়ে দিয়ে যাস নি কেন শয়তান মহিলা।তোর জন্য মায়ের মুখে কতোগুলো বকা শুনলাম।
ইশফা এক পলক সান এর দিকে তাকিয়ে তাড়া দিয়ে বলল……
—ইরু ফোন রাখ।পরে কথা বলছি।
—পরে না তুই এখন বল।
—বলছিনা এখন ফোন রাখ পরে কথা হবে।
—ঢং করে ফোন রাখ ফোন রাখ করতাছোস কে।নিজে রাখতে পারোস না।এক মিনিট তুই এতো সুন্দর করে কথা বলতাছোস ক্যান?কার আবার তেরোটা বাজাইতাছোস?তোরে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি কারো তেরোটা বাজানোর আগেই তুমি সাধু সাজো।
ইশফা দাতে দাত চেপে বলল…..
—শয়তান,বান্দর,কুত্তা,বিলাই বকা খাওয়ার জন্যই তো এমন করতাছোস।তোর মনের আশা পুরোন করছি এবার ফোন রাখ।আর একটাও কথা বলবি না।
—চেতোস ক্যান।সত্যি কথা ভালো লাগে না।এবার ভালো মানুষের মত ক’ কোনটা কোন জায়গায় রেখেছিস।
ইশফা রাগি গলায় বলল…..
—তোরে আমি ফোন রাখতে কইতাছি।দ্বিতীয় বার কল দিলে তোর খবর আছে। পিঠ,গাল একটাও আস্ত থাকবো না।
—প্যাচাল না পাইরা ক’ কোনটা কই রাখছোস।তাইলেই তো হয়। তাড়াতাড়ি ক’ আমার দেড়ি হইয়া যাইতাছে।না কইলে কিন্তু আমি মায়রে কইয়া দিমু তুই এক পোলার লিগা দু’দিন ধরে দিন রাত চোখে জল নাকের জল ফালাইয়া খাল,বিল,নদী-নালা বানাইছোস।আর দোয়া করছোস পোলাডা যেন তাড়াতাড়ি টপকায়।
ইশফা, ইশরা কথা শুনে সাথে সাথে ফোনটা সানের হাত থেকে কেড়ে নিতে চাইলে সান হাত সরিয়ে ফেলে।ইশফা সানের দিকে তাকাতেই দেখে সান ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ইশরা আর কিছু বলার আগেই ইশফা হালকা চেচিয়ে বলল…..
—ইরু তোর কালো হিজাব আমি বের করে তোর বোরকার সাথে রেখেছি।আর পিন ড্রেসিন টেবিলে খুজে দেখ পেয়ে যাবি।
—এই তো আমার ভালো বোইনা।থ্রেড না দিলে কাজ হয় না।লাভ ইউ বোইনা।
ইশফা দাতে দাত চেপে বলল….
—তুই আমারে বাসায় যাইতে দে তার পরে তোর লাভ ইউ আমি ছুডামু।আর একটা কথা বললে তোর খবর আছে।চুপচাপ কল কাট।
ইশফার থ্রেড খেয়ে ইশরা কাদো কাদো গলায় বলল….
—আমি তো ভালা না ভালো লইয়াই থাইকো।
কথাটা বলে এক মুহূর্ত দেড়ি না কল কেটে দিল।
সান,ইশফার দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল…..
—ফোনে কে ছিলো?
ইশফা ফোনটা ধরে বলল…..
—আমার ছোট বোন।আমার কলিজা।
সান মিটমিট করে হেসে বলল…..
—যাক ভালোই হল তোমাকে সোজা করার লোকের সন্ধান পেয়ে গেলাম।জিজু,শালিকা মিলে ঘাড় ত্যাড়াকে পুরো সোজা করে ফেলবো।
ইশফা সান এর দিকে রাগি চোখে তাকাতেই সান মুচকি হেসে পুনরায় গাড়ি নিয়ে গন্তব্যর দিকে ছুটল।
💦💦💦💦💦💦
গাড়ি এসে এক রেস্টুরেন্টের সামনে থামল।ইশফা গাড়ি থেকে বের হতেই দেখে সামনে নিরব,রিধি সাথে আরেটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে।মেয়েটি ইশফার দিকে এগিয়ে এসে ইশফাকে জড়িয়ে ধরে বলল……
—ভাবিইইই।কেমন আছো তুমি?
ইশফা কোন কথা না বলে থ’ হয়ে দাড়িয়ে রইল।মেয়েটি ইশফাকে ছেড়ে দিয়ে গরগর করে বলতে লাগলো……
—ভাবি তুমি আমাকে চিনতে পারছো না তাই তো?চিনবে কি করে ভাই তো তোমাকে আমার কথা বলেই নি।থাক সমস্যা নেই আমি বলে দিচ্ছি। আমি তোমার একমাত্র ননদ সিনথিয়া।
মেয়েটির কথা শুনে ইশফা অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল।মনে মনে বলতে লাগল…..
—এ দেখি পুরো রিধির কপি।একবার কথা শুরু করলে গরগর করে সব বলতেই থাকে।থামার নাম গন্ধ থাকে না।
#চলবে,