মনের পিঞ্জরে পর্ব-৪৩+৪৪

0
835

#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_43

—ইশু…..ইশু……
ফাজিল মেয়ে কোথায় পালিয়েছিস তুই?সামনে আয় একবার।থাপ্পড় মেরে তোর কাধের সব ভূত তাড়াবো আমি।

জিদানের চেচামেচি সুনে ইশরা দরজার বাহির থেকে হালকা একটু পর্দা সরিয়ে মাথাটা একটু বের করে উকি দিয়ে বলল…….

—এই যে মিষ্টার খান।এটা ভদ্র লোকের বাড়ি।তাই ইশু ইশু করে ষাড় এর মত চেচানো বন্ধ করুন।হুহ…..

জিদান দরজার দিকে তেড়ে যেতে নিয়েও থেমে গিয়ে রাগি গলায় বলল…….

—দরজার বাহিরে না দাড়িয়ে থেকে ভিতরে আয়।কানের নিচে দুটো দিয়ে তোকে ভদ্রতা দেখাচ্ছি।বেয়াদব মেয়ে আমাকে ভদ্রতা শিখাতে আসছে।এতোই যখন ভদ্রতা জানিস তাহলে আমার কাবাডের সকল জামা-কাপড় এলোমেলো করেছিস কেন?আমার রুম এমন গরুঘর বানিয়েছিস কেন?

ইশরা অরেকটু মাথা বের করে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে অবাক হওয়ার ভান করে বলল……

—হায় আল্লাহ্…..এটা মানুষের রুম না ডাস্টবিন।ভাইয়া তুমি বাচ্চাদের মত রুমের এমন তেরোটা বাজিয়ে রেখেছো কেন?

জিদান ইশরার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলল……

—নাটক করিস আমার সাথে?দু’চারটা থাপ্পড় গালে পরলেই তোর সকল নাটক ছুটে যাবে।

—আমি কি করলাম😱

—বেয়াদব মেয়ে এসব যে তুই করেছিস তা আমার ভালো করেই জানা আছে।

ইশরা ভেঙচি কেটে বলল…..

—যা করেছি বেশ করেছি।তুই আমাকে চকলেট কিনে দিবি বলে চকলেট কিনে দিসনি কেন?কবের থেকে বলছি আমাকে একটা গুলুমুলু টেডি কিনে দিতে তাও দিস নি।ফকিরা সবার জন‍্য সবটা কেনার সময় তোর কাছে টাকা হয় আমার জন‍্য কিছু কিনতে গেলেই ওর টাকা নাই হয়ে যায়।তাই আমি নিজের টাকা দিয়েই চকলেট, চিপস কিনে খেয়ে সেগুলোর পেকেট এই রুমে সুন্দর করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রেখেছি তোকে দেখানোর জন‍্য।

—ভালোয় ভালোয় পুরো রুম তাড়াতাড়ি পরিষ্কার কর ইশু।তা না হলে হাত আর দাত কোনটাই তোর আস্ত থাকবে না।

—আমার অতো ঠেকা পরেনি।হুহ…..

জিদান ইশরার দিকে তেড়ে যেতে নিলেই ইশরা ভৌ দৌড়।

জিদান ইশরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রাগে গজ গজ করে ইশরাকে বকতে লাগল।

পুরন কথা মনে পরতেই ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠল জিদানের।ইশরার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ইশরার মাথায় হাত বুলিয়ে বিরবির করে বলল……

—পাগলী একটা।ছোট থেকে তো কম জ্বালাসনি।নতুন করে নতুন ভাবে এখন আবার জ্বালানো শুরু করেছিস।ব‍্যপার না তোর সব জ্বালাতন সহ‍্য করার ধয‍্য আল্লাহ্ আমাকে দিয়েছে।আল্লাহ্ এর দরবারে লক্ষ কুটি শুকরিয়া।যেভাবেই হোক আল্লাহ্ যে তোকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে এটাই অনেক।

ওহ্ আপনাদের তো বলাই হয়নি আল্লাহর মেহবানীতে সকলের দোয়ায় ইশরার আজ ১৮ দিন ধরে জ্ঞান ফিরেছে।ইশরার কিছুটা রেসপন্স করার কারনে ডাঃ এর কথা মত ইশরাকে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে এডমিট করা হয়েছিলো।জ্ঞান ফেরার পর দুদিন পযর্ন্ত ইশরা কারো সাথেই কোন কথা বলেনি।তারপর থেকে শুরু হয় ইশরার পাগলামো।প্রথম প্রথম সবাইকে চিনতে না পারলেও আস্তে আস্তে সবাইকেই চিনতে পেরেছে।জ্ঞান ফেরার পর ইশরাকে সব ধরনের চেকাপ করার পর ডাঃ জানিয়েছে, ইশরা মেমরি লস না হলেও মাথায় আঘাত পাওয়ার কারনে মানসিক সমস‍্যা হয়ে গেছে।ট্রিটমেন্ট এর উপর থাকলে,মাথায় কোন চাপ না পরলে আস্তে আস্তে সেটাও সেরে যাবে।

💦💦💦💦💦💦

অফিসে কাজের চাপের কারনে সান এর বাসায় ফিরতে একটু বেশিই দেড়ি হয়ে গেছে।ক্লান্ত শরীর নিয়ে নিজের রুমে ঢুকে লাইট অন করে ডানে বামে না তাকিয়ে কাবাড থেকে নিজের কাপড় নিয়ে সোজা ওয়াসরুমে চলে গেলো।কিছুক্ষনের মধ‍্যে ফ্রেস হয়ে এসে বেডে বসতে না বসতেই সিনথিয়া খাবার নিয়ে হাজির হয়ে বলল…..

—খবরদার ভাইয়া না খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করবি না।আমি খাবার নিয়ে এসেছি।

সান ঘাড় ঘুড়িয়ে সিনথিয়াকে দেখে কাপালে ভাজ ফেলে বলল……

—তুই!এতো রাতে খাবার নিয়ে এসেছিস? তাও আবার আমার রুমে?

—কোন সন্দেহ আছে?

—সন্দেহ মানে?ঘোর সন্দেহ আছে।যে মেয়ে ১০টা বাজতেই ঘুমের দেশে চলে যায় সে আজ দেড়টা বাজে আমার রুমে দাড়িয়ে আছে তা আবার খাবার নিয়ে।আমার তো মনে হচ্ছে তোর বেস ধরে কোন পেত্নী আমার রুমে এসেছে আমার ঘাড় মটকাটে।

সিনথিয়া খাবারের ট্রেটা বেডে রেখে হাই তুলতে তুলতে বলল…..

—ঘাড় মটকাতে চাইলেও পারবো না।কেননা তোর কিছু হলে আমার বেচারী ভাবি কষ্ট পাবে।

—কি বুঝাতে চাইছিস তুই? ভাবি কষ্ট পাবে দেখে তুই আমাকে ছেড়ে দিচ্ছিস?

—দেখ ভাইয়া শুধু শুধু ঝগড়া করার চেষ্টা করিস না।এখন বিন্দু পরিমান ও ঝগড়ার মুডে নেই।অনেক ঘুমে ধরেছে।

—ঘুমে ধরেছে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে থাক। না করেছে কে।আর যাওয়ার আগে এগুলো নিয়ে যা।

সিনথিয়া রাগি গলায় বলল…..

—নেওয়ার জন‍্যই কি সাধের ঘুম বাদ দিয়ে কষ্ট করে এগুলো এখানে নিয়ে এসেছি।

—এনেছিস কেন আমি আনতে বলেছি?

—তুই বলিসনি কিন্তু ভাবি বলেছে।ভাবি তোর দায়িত্ব আমার উপর দিয়েছে।তাই তো এসব করছি।তা না হলে কে করতো এসব।হুহ….

সান একটা কুশন নিয়ে আরাম করে বসে বলল……

—তা কি দায়িত্ব দিয়েছি শুনি।

সিনথিয়া বিরক্ত হয়ে বলল…..

—তোর মাথা।এখন তাড়াতাড়ি খেয়ে আমায় উদ্ধার কর।আমি ঘুমাবো।

—তুই গিয়ে ঘুমিয়ে থাক আমি খেয়ে নিচ্ছি।

—জ্বি না তা হবে না।তুই তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ কর তোর খাওয়া হলেই আমি যাব।

সান আর কথা না বাড়িয়ে খাবারে হাত দিলো।নিজে খাওয়ার সাথে সাথে সিনথিয়ার মুখেও জোর করে কয়েক বার খাবার তুলে দিল।গপাগপ কোন মত খাওয়া শেষ করেই সান বিছানায় গা এলিয়ে দিল।শরীর ক্লান্ত থাকায় মুহূর্তের মধ‍্যে ঘুমের দেশে চলে গেলো।

💦💦💦💦💦💦

বেডে সাথে হেলান দিয়ে বসে ইশরার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিদান ঘুমিয়ে পরেছিল।মুখের মধ‍্যে পানির ঝাপটা লাগায় জিদান ধরফর করে উঠে বসল।জিদান সামনে তাকাতেই দেখে ইশরা কোমরে হাত দিয়ে রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।জিদান ইশরার দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলল…….

—কি হয়েছে ইশু?এভাবে বসে রয়েছো কেন?

ইশরা গাল ফুলিয়ে বলল……

—সারাদিন কোথায় ছিলে তুমি?

—আমি তো কলেজে ছিলাম।ভুলে গেছো সকালে না আমি তোমাকে বলে গেলাম।

ইশরা মাথা চুলকিয়ে বলল……

—বলেছিলে হয়ত মনে নাই।

জিদান ইশরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল…..

—তুমি না ঘুমিয়ে ছিলে উঠলে কেন?

ইশরা কিছু না বলে ঠোট উল্টিয়ে বসে রইল।

ইশরাকে চুপ করে থাকতে দেখে জিদান পুনরায় বলল……

—এভাবেই বসে থাকবে?ঘুমাবে না?

ইশরা মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে না বলল।যার মানে সে ঘুমাবে না।জিদান কিছু না বলে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল।কেননা একবার যখন ইশরা বলেছে সে ঘুমাবে না তাহলে আর কোনমতেই সে ঘুমাবে না।এখন তাকে দ্বিতীয় বার ঘুমানোর কথা বললেই তার পাগলামী শুরু করে দিবে।তাই জিদান কোন কথা না বাড়িয়ে নিজের ঘুম বাদ দিয়ে ইশরার আবদার পূরন করার জন‍্য বসে রইল।

ইশরার সাথে ভালো ভাবে কথা বললে তার মন মত সব কাজ করলে ইশরা পুরো সাভাবিক আচারন করে।কিন্তু তার কথার একটু হেরফের হলেই তার পাগলামো শুরু হয়ে যায়।তখন ইশরা আর ইশরার মধ‍্যে থাকে না।কি থেকে কি করে ফেলে সে নিজেও জানে না।তাই বাড়ির সবাই ইশরার মন মত চলার চেষ্টা করে।

#চলবে,

#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_44(#স্পেশাল)

সান অফিসে নিজের কেবিনে চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রয়েছে।সামনেই টেবিলে উপর কাজের কয়েকটি ফাইল পরে রয়েছে।কিন্তু সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই।খেয়াল করেও কোন লাভ নেই কেননা কাজের দিকে সে কিছুতেই মন বসাতে পারছে না।কাজেই বা মন বসাবে কি করে?সে তো ভিতরে ভিতরে ইশফার উপর প্রচন্ড রেগে রয়েছে।তার রাগ করার কারন হল,আজ সান এর বার্থডে।কাল রাতে ইশফার সাথে কথা বলার সময় সান ভেবেছিলো ইশফা তাকে কল এ রেখেই সবার আগে উইস করবে।কিন্তু সান এর সেই আশায় পানি ঢেলে ইশফা ১২টা বাজার কয়েক মিনিট আগেই কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়।সান পুনরায় কল ব‍্যাক না করে ইশফার ফোনের আশায় অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে পরে।সকালে ঘুম ভাঙতেই সান প্রথমে ফোন চেক করে দেখে নেয় ইশফা রাতে ফোন দিয়েছে কিনা।ফোন ধরতেই সান নিরাস হয়ে যায়। কেননা ইশফার নাম্বার থেকে না কোন কল আর নাই বা কোন মেসেজে এসেছে।সান রাগ করে ফোন বেডে ছুড়ে ফেলে ফ্রেস হতে চলে যায়।সারাদিনও রাগ করে সান আর ইশফাকে একবারের জন‍্যও কল করেনি আর না ইশফা সানকে কল করেছে।

দরজায় নক হতেই সান সোজা হয়ে বসে বলল……

—কামিং।

সাথে সাথে একজন পিয়ন ভিতরে ঢুকে ভনিতা ছাড়াই বলল…….

—বড় স‍্যার খরব পাঠিয়েছে ফাইলগুলো সব কমম্পিট হয়েছে কিনা।

সান একটা চাপা নিশ্বাস ফেলে বলল…..

—তুমি যাও। আমি দেখে নিচ্ছি।

সান এর কথা শুনে পিয়ন আর কিছু না বলেই চলে গেলো।পিয়ন চলে যেতেই সান নিজের রাগটাকে দমানোর জন‍্য বড় বড় কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে সামনে থেকে একটা ফাইল তুলে খুলে নিল।অনেকক্ষন সামনে ফাইল খুলে বসে থাকার পরেও সান কিছুতেই কাজে মন বসাতে পারলো না।তাতেই যেন তার নিভু নিভু করা রাগটা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল।সান নিজের রাগটাকে আর দমাতে না পেরে ইশফাকে কয়েকটা কড়া কথা শোনানোর জন‍্য পাশ থেকে ফোনটা হাতে তুলে নিল। ইশফার নাম্বারে কল করার আগেই তার ফোনটা বেজে উঠল।ফোনের স্কিনে “আন্টি আশ্রম” লেখাটি দেখে সান এর কপালে একটু ভাজ পরে গেলো।কেননা তিনি কখনো সানকে কল দেন না।সান ওই সব সময় তাকে ফোন করে খবরা খবর নিয়ে থাকে।সান ফোন রিসিভ করে সালাম দিতে না দিতেই অপর পাশ থেকে ভেসে এল…..

—বাবা একটা সমস্যা হয়ে গেছে।

তার কথা শুনে সান উওেজিত হয়ে বলল…..

—কি হয়েছে আন্টি?আপনার কথা এমন শোনা যাচ্ছে কেন?

—ফোনে কিছু বলতে পারবো না বাবা। প্লিজ তুমি যত তাড়াতাড়ি পারো এখানে চলে আসো।প্লিজ বাবা মানা করো না।তাড়াতাড়ি চলে আসো।

সান কিছু বলার আগেই ফোনের লাইন কেটে গেলো।কল কেটে যেতেই সান কয়েক বার ঐ নাম্বারে ডায়াল করলো কিন্তু প্রতিবারই ভেসে এল “দুঃখিত কাঙ্খিত নাম্বারটিতে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।” সান এর কাছে আশ্রমের অরেকটা নাম্বার ছিলো।সান দ্রুত ঐ নাম্বারে কল করল।কিন্তু সেই নাম্বারটিও বন্ধ।তাই সান দেড়ি না করে ড্রয়ার থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে তড়িঘড়ি কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো।

💦💦💦💦💦💦

আধা ঘন্টার মধ‍্যেই সান “স্বপ্নের রাজপ্রাসাদে” পৌচ্ছে গেল।গেডের এর পাশে গাড়ি পার্ক করে দ্রুত গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল।ভিতরে প্রবেশ করতেই সান পুরো থ’হয়ে গেলো কেননা ভিতরে খুব সুন্দর করে বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে।সান কিছু বুঝার আগেই ১০/১২জন বাচ্চা হাতে লাল হার্ট সেপ বেলুন নিয়ে সান এর দিকে দৌড়ে আসলো।প্রতি বেলুনের মধ‍্যেই লিখা ছিলো “হ‍্যাপি বার্থডে”।বাচ্চারা এক এক করে সান এর হাতে বেলুন দিতে লাগল আর সানকে উইস করতে লাগল।

সান এখনো ঘোরের মধ‍্যে আছে। ঘোর কাটিয়ে সান বাচ্চাদের উদ্দেশ্য বলল……

—এসব কি হচ্ছে?আন্টি কোথায়?আন্টি ঠিক আছে তো?

বাচ্চাদের থেকে একজন বাচ্চা বলল…..

—সবাই ঠিক আছে ভাইয়া। এখন কথা না বলে আমাদের সাথে চল।

সান কিছু বুঝা বা বলার আগেই সান এর হাত ধরে টেনে তারা সানকে সামনে নিয়ে যেতে লাগল।সান বাচ্চাদের সাথে কিছুটা সামনে যেতেই দেখলো কিছু বাচ্চারা লাল হার্ট সেপ বেলুন হাতে দাড়িয়ে রয়েছে।তাদের হাতের বেলুনের মধ‍্যেই “এই লাভ ইউ” লিখা।তারা সবাই ও এক এক করে সান এর হাতে বেলুন ধরিয়ে দিয়ে সান কে উইস করতে লাগল।সবার বেলুন দেওয়া শেষ হতেই সবাই এক সাথে চেচিয়ে সানকে উইস করল।সান খুশি হয়ে বাচ্চাদের সামনে হাটু গেড়ে বসে বলল…….

—ধন‍্যবাদ,ধন‍্যবাদ।অনেক অনেক ধন‍্যবাদ।আই এম সো হ‍্যাপি।তোমরা কি করে জানলে আজ আমার বার্থডে?

বাচ্চারা কোন কথা না বলে একজন পিছন থেকে সান এর চোখ বেধে দিতে লাগলো।সান বাধা দিয়ে বলল……

—আরে আরে কি করছো?চোখ বাধছো কেন?

বাচ্চাটি বিরক্ত হয়ে বলল……

—ভাইয়া আমার কাজে ডিস্টাব করো না তো।আমাকে আমার কাজ করতে দাও।
আমরা না বলার আগে চোখ খুলবে না বলে দিলাম।

সান কিছু না বলে চুপ করে রইল।তারা সান এর হাত থেকে বেলুনগুলো নিয়ে নিল।সানকে দাড় করিয়ে দিয়ে তারা সরে গেল।

কিছুক্ষন পর বাচ্চাদের কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে সান বলল……

—বাচ্চারা কোথায় তোমরা?আর কতক্ষন এভাবে দাড়িয়ে থাকবো?চোখ কি খুলবো?

বাচ্চাদের থেকে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে সান চোখ থেকে কাপড় সরিয়ে তাকাতেই হা হয়ে গেলো।কেননা সকল বাচ্চারা মিলে হার্ট সেপ আকার ধারন করে বেলুন হাতে নিয়ে সানকে ঘিরে দাড়িয়ে রয়েছে।আর সান এর সামনে একজন রমনী হাটু গেড়ে বসে আছে।তার দু ‘হাতে দুটো হার্ট সেপ বেলুন।একটার মধ‍্যে লিখা “হ‍্যাপি বার্থডে”। অপরটিতে লিখা “আই লাভ ইউ”।রমনীটি “আই লাভ ইউ” লিখা বেলুনটি সান এর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে “হ‍্যাপি বার্থডে” লিখা বেলুনটি নিজের মুখের সামনে ধরে রেখেছে।বেলুন দিয়ে মুখ ঢেকে রাখলেও হাতের আংটি টি বলে দিচ্ছে মানুষটা কেন?সব দেখে সান যেন কথা বলার ভাষাই হাড়িয়ে ফেলেছে।সান কি বলবে তার কি বলা উচিত সে কিছুই বুঝতে পারছে না।সান কি স্বপ্ন দেখছে নাকি যা হচ্ছে তা সব বাস্তব তাও সান এর জানা নেই। সানকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রমনীটি মুখ থেকে একটু বেলুনটা সরিয়ে মিনমিনে গলায় বলল…….

—কি হল কথা বলছেন না কেন?আপনি জানেন আমি মুখে কিছু বলতে পারি না।তাই যতটুকু বলেছি ততটুকেই বুঝে নিন।এর বেশি আমি বলতে পারবো না।যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন না। আমার পা ব‍্যাথা করছে তো।

সামনের রমনীটি আর কেউ না ইশফা।ইশফার কথা শুনে সান এর ঠোটের কোনে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠল।সান ইশফার হাত থেকে বেলুনটি নিতেই ইশফা অপর হাতের বেলুনটি সান এর দিকে বাড়িয়ে দিল।সান মুচকি হেসে সেটা হাতে নিয়ে ইশফার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।ইশফা মুচকি হেসে সান এর হাত ধরে উঠে দাড়ালো।ইশফা দাড়াতেই সান অবাক চোখে ইশফার দিকে তাকিয়ে রইল।এতোক্ষন সান ইশফাকে খেয়াল না করলেও এখন সে খুটিয়ে খুটিয়ে ইশফাকে দেখতে লাগলো।কালো শাড়ি,দু’হাত ভর্তি কালো কাচের চুড়ি,মাথায় সুন্দর করে হিজাব বাধা।হালকা মেকআপে সান এর কাছে ইশফাকে পুরো অপ্সরী লাগছে।ইশফা কোন কথা না বলে নিজের শাড়ির আচল দিয়ে সান এর কপালের বিন্দু বিন্দু জমে থাকা ঘাম মুছতে মুছতে বলল……

—ইস একেবারে ঘেমেনেয়ে ফেলেছে।এসি গাড়িতেই তো এসেছেন এতো ঘামলেন কিভাবে?

সান ইশফার কথার উওর না দিয়ে ইশফার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।আজ যেন সান নতুন এক ইশফাকে দেখছে।ইশফার এই নতুন রুপে সানকে পুরোই বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে।

#চলবে,