মন পলাশ পর্ব-০৩

0
65

#মন_পলাশ ( তৃতীয় পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
<৫>
যাইহোক, এরপর এক দুটো মাস কেটে গেছে চোখের পলকে। অফিস, কাজের চাপ, সংসারের দায়িত্ব সব মিলিয়ে সৌমীর দিনটা যে কিভাবে কেটে যায় রোজ, ও বুঝতেই পারে না! এই সময় বার বারই বাবার কথা খুব মনে পড়ে। ওই মানুষটা যতদিন বেঁচে ছিল যেন আগলে রাখতো সব কিছু থেকে ওদের। নিজের মাথায় সব চিন্তা নিয়ে হাসি মুখে থাকতো মা আর সৌমীর সামনে। আজকাল ওই হাসি মুখটার কথা খুব মনে পড়ে। যাইহোক, এই ভাবনার ভিড়েই সেই শুক্রবার বাড়ি ফিরেছিল। কিন্তু সৌমী বাড়ি ফিরতেই মা বলে উঠলো,
——–” জানিস, রুক্মিণী কাল ওদের বাড়িতে আমাদের দুপুরে খেতে বলেছে। কি মুশকিল বল তো? এত বড়োলোকের বাড়িতে এইভাবে যেতেও তো কেমন লাগে! কিন্তু মানুষটা এত ভালো যে মুখের ওপর না ও বলতে পারলাম না! ”
কথাটায় সৌমী কেমন আঁতকে উঠে বললো,
——–” কি! ওই ভয়ঙ্কর লোকটার বাড়িতে যেতে হবে! অসম্ভব। সারা সপ্তাহ অর্জুন স্যারের হুম্বি তুম্বি সহ্য করি, এরপর কাল ছুটির দিনেও ওই লোকটার মুখোমুখি হতে হবে! ”
কথাটায় নন্দিনী বুঝিয়ে বললো,
———” এইভাবে বলতে নেই মা। ওরা আমাদের কত উপকার করেছে বল তো? আর আমি নন্দিনীর মুখে শুনেছি, ওর ছেলে বাইরে থেকে ভীষণ রাগি কঠিন, কিন্তু মনটা খুব ভালো। আসলে ছেলেটার বাবা মারা যাওয়ার পর অনেক ছোট বয়স থেকে ব্যাবসা সামলাচ্ছে তো! তাই পরিস্থিতির চাপে এরকম হয়ে গেছে। ”
এই কথায় সৌমী নিজের মনেই বলে উঠলো,
———” সে যে কারণেই এরকম হোক, কিন্তু আসলে ভীষণ রাগি আর দাম্ভিক।রুক্মিণী কাকিমা আর তার ছেলের মধ্যে কোন মিল নেই। মা, তুমি প্লিজ কোনভাবে কাটিয়ে দিতে পারবে না কালকের নেমন্তন্নটা? প্লিজ। আমি সত্যিই ওনার বাড়ি যেতে চাই না। ”
কথাটায় নন্দিনী এবার বুঝিয়ে বললো মেয়েকে,
———-” দ্যাখ মা, এরকম করা যায় না। রুক্মিণী আমাদের বিপদের দিনে যেভাবে পাশে থেকেছে, এরপর ওর মুখের ওপর না আমি কিছুতেই করতে পারবো না। একটু বোঝার চেষ্টা কর। ”
ভীষণ কাতর স্বরে কথাগুলো বলেছিল নন্দিনী। এইসব শুনে সৌমী আর হ্যাঁ না কিছুই বলতে পারেনি। মায়ের মুখের ওপর কথা আসে না ঠিক আসলে। অজ্ঞতা, যেতেই হবে ওই রাগি স্যারের বাড়ি।

সেদিন তবে অর্জুনের মুখ গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল মায়ের মুখে নন্দিনী আর সৌমীর আসার গল্প শুনে। ও বেশ বিরক্ত হয়েই বলেছিল,
———-” মা, তুমি জানো না আমি এরকম অফিসের স্টাফদের বাড়িতে আসা একদম পছন্দ করি না। আমার একটা পারসোনাল স্পেস আছে। তুমি আমাকে না জিজ্ঞেস করে ওদের ইনভাইট করে দিলে এইভাবে! ”
এই কথায় নন্দিনী এবার ভীষণ রেগেই বলেছিল,
———-” দিন দিন এরকম কমপ্লিকেটেড হয়ে যাচ্ছিস কেন বল তো? আর অফিসের স্টাফ মানেটা কি! সৌমী আমার ছোটবেলার বন্ধুর একমাত্র মেয়ে। তাদের আমি একদিন খেতে ডাকতে পারবো না বাড়িতে! ”
এটা শুনে অর্জুন আর কথা না বাড়ালেও মনে মনে মোটেও মানতে পারছিল না ঠিক। ওর মতে সবার সাথে একটা মাপা দূরত্ব রেখে মেশা উচিত। কাউকেই বেশি মন থেকে কাছে টানলেই সে কখন মাথায় চড়ে বসবে ঠিক নেই। আর লোকজন তো সুযোগ সন্ধানী। ওর জীবনের ঘটনাগুলো ভাবলেই এই কথাগুলো আরো বেশি করে মনে হয়, আর মনে হয় নিজেকে একটা কঠিন আবরণের মধ্যে ঢেকে রাখতে।

যাইহোক, এই এলোমেলো চিন্তার ভিড়েই পরেরদিন সকালে সৌমী আর নন্দিনী এসেছিল রুক্মিণীদের বাড়ি। রুক্মিণী তো ভীষণ খুশি বন্ধুকে কাছে পেয়ে। যদিও অর্জুন একবারও দেখা করতে আসেনি ওদের সঙ্গে সকাল থেকে। নিজের স্টাডি রুমে বসে কাজই করে যাচ্ছিল এক মনে। তবে এতে মনে মনে বেশ নিশ্চিন্ত হয়েছিল সৌমী। ওই লোকটার থেকে যত দূরে থাকা যায়, ততই ভালো। তবে ভাবনাটা ঠিক মিললো না যখন লাঞ্চ টেবিলে অবশেষে অর্জুন এল কাজ ছেড়ে। নন্দিনী এই সময় আলতো স্বরে জিজ্ঞেস করেছিল ওকে,
——–” ভালো আছো বাবা? তোমার মায়ের মুখে তোমার কথা অনেক শুনেছি। ”
এই কথায় অর্জুন খুব অল্প শব্দে উত্তর দিয়েছিল,
——–” হ্যাঁ ভালো। ”
আসলে ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল নন্দিনী আর সৌমীর এই বাড়ি আসাটা ও একেবারে পছন্দ করছে না, তাই কেমন গম্ভীর মুখে চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। না কারোর সাথে কোন কথা বলছে, না সামান্য ভদ্রতা করে একটু হাসছে! সৌমীর এই সময় নিজেরই এত অস্বস্তি হচ্ছিল যে মনে হচ্ছিল উঠে চলে আসে। যাইহোক, এরপর খাওয়া শেষে তো সৌমী নিজে থেকেই বলে উঠেছিল রুক্মিণীকে,
———-” কাকিমা, আজ তাহলে আমরা আসি। খুব ভালো সময় কাটলো। ”
এই কথায় রুক্মিণী বেশ জোর দেখিয়ে বলেছিল,
———” আসি কি রে! বিকেলের চা না খাইয়ে আমি তোদের কোথাও ছাড়ছি না। একদিন পেয়েছি আমি আমার বন্ধুকে। এখনো অনেক গল্প বাকি। ”
এই কথায় সৌমী খেয়াল করেছিল অর্জুনের একটা দীর্ঘশ্বাস আপনাআপনি চলে এসেছে। ওর মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। এটা দেখে সৌমীর সত্যিই কেমন খারাপ লাগছিল ভিতর থেকে।

সেদিন তবে বিকেলের দিকে একটা ঘটনা ঘটলো। রুক্মিণীর কথা বলতে বলতে হঠাৎ খুব শরীর খারাপ। মাথা ঘুরে সেন্স চলে যাওয়ার মতন অবস্থা। অর্জুন সেই সময় স্টাডিতে ছিল। কিন্তু ওর ড্রইং রুমে আসার আগেই সৌমী রান্নাঘর থেকে কিছুটা চিনি এনে রুক্মিণীর মুখে দিয়ে দিয়েছিল। আসলে ও শুনেছিল আগে রুক্মিণীর কাছে যে ওর হাই সুগার। আর এরকম হঠাৎ শরীর খারাপ সাধারণত সুগার ফল করেই হয়। কথাটা ভেবেই সৌমী রুক্মিণীকে চিনি খাইয়েছিল। কিন্তু স্টাডি থেকে এসে যখন এই কথাটা অর্জুনের কানে পৌঁছেছিল , ও তো রেগে আগুন। ভীষণ চিৎকার করেই বলে উঠেছিল ও সৌমীকে,
———–” তোমার সাহস কি করে হলো আমার মা কে এইভাবে চিনি খাইয়ে দেয়ার! আর ইউ ম্যাড! আমার মায়ের হাই সুগার। তুমি তার মধ্যে কিছু না জেনে না বুঝে মাকে চিনি খাইয়ে দিলে! এরপর যদি আমার মায়ের কোন ক্ষতি হয়, আই উইল নট স্পেয়ার ইউ…”
এই কথায় নন্দিনী নিজের মেয়ের হয়ে বলে উঠেছিল কিছুটা শান্ত গলায়,
———-” তোমার মায়ের কিছু হবে না বাবা। সৌমীর বাবারও হাই সুগার ছিল, আর মাঝে মাঝে এরকম সুগার ফল হতো। তখন কিছুটা চিনি খাইয়ে দিলেই ঠিক হয়ে যেত। ”
এটা শুনে অর্জুন আরো রেগে ভীষণ তীক্ষ্ণ স্বরে বলে উঠেছিল,
———–” প্লিজ.. আমি আপনার সাথে কোন কথা বলতে চাই না এই নিয়ে। আর আপনি আর আপনার মেয়ে কি ডাক্তার? সব বুঝে গেছেন? ”
এই কথায় সৌমীর ধৈর্য্য হঠাৎ ভেঙে গেল। ওর মায়ের সাথে লোকটা এই গলায় কথা বলছে! ভেবেই সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো এই প্রথম,
———” স্যার আপনি আমার মায়ের সাথে এইভাবে কি করে কথা বলছেন? যা বলার আমাকে বলুন। আমার মায়ের সাথে একদম এরকম ব্যবহার করতে আসবেন না। ”
এই কথায় অর্জুনের পারদ চড়ে গেছিল। ওরই অফিসের এমপ্লই ওকে ধমকাচ্ছে! তাও এত বড় একটা ভুল করে! কথাটা ভেবেই অর্জুন বলে উঠলো,
———-” গেট আউট.. আমারই বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমার সাথেই গলা তুলে কথা বলছো! এতটা সাহস হয় কি করে তোমার? জাস্ট লিভ রাইট নাও.. ”
এই কথায় অপমানটা যেন চরম সীমায় গিয়ে পৌঁছলো। সৌমী এবার আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে বললো মাকে,
———” চলো এখান থেকে। আর না। গরীব হতে পারি, কিন্তু সামান্য হলেও মান সম্মান আমাদেরও আছে। ”
কথাগুলো বলেই মায়ের হাত ধরে বেরিয়ে এসেছিল সৌমী সেদিন অর্জুনদের বাড়ি থেকে। রুক্মিণী সেই মুহূর্তে সবটা বুঝতে পারলেও ওর শরীর এতটা খারাপ লাগছিল যে অর্জুনকে থামাতে পারেনি কোনভাবেই। তবে কিছুক্ষণ বাদে ওর শরীরটা আস্তে আস্তে ঠিক হয়েছিল। অর্জুন তার মধ্যে বাড়িতে ডাক্তার ডেকে ফেলেছে। কিন্তু ডাক্তার এসে রুক্মিণীকে দেখে শান্ত গলায় বলেছিল,
———” সুগার ফল করেছিল। এখন উনি ঠিকই আছেন। নিশ্চয়ই কেউ বুদ্ধি করে চিনি খাইয়ে দিয়েছেন! এই জন্য আমরা সাজেস্ট করি সুগারের পেশেন্টের সাথে সব সময় একটা চিনির ছোট্ট কৌটো ক্যারি করা উচিত। কখন কোথায় সুগার ফল করে শরীর খারাপ হয়ে গেল! ”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেছিলেন উনি। রুক্মিণী কথাটা শুনে একটা দীর্ঘ্যশ্বাস ফেলে তাকিয়েছিল অর্জুনের দিকে। ভীষণ খারাপ লাগছিল আজ ছেলের ব্যবহারের জন্য। অর্জুনেরও কেমন চোখ দুটো নেমে গেছিল নিচে। আজ কি একটু বেশি মাথা গরম করে ফেললো! আর একটু ভেবে কথাগুলো বলা উচিত ছিল! কথাটা মনে মনে ভাবছিল, তখনই মা বলে উঠলো,
———” একটা দিন আমি আমার বন্ধু আর তার মেয়েকে বাড়িতে ডেকেছিলাম। ওরা কিন্তু নিজে যেচে পড়ে আসেনি। আমি বলেছিলাম বলে এসেছিল। কিন্তু তুই আজ যা ব্যবহার করলি ওদের সাথে! আমি যে এরপর নন্দিনীর সামনে কি করে যাবো, ভেবে পাচ্ছি না। সত্যিই কি আমি তোকে এই শিক্ষা দিয়েছিলাম? এতটা অহংকার চলে এলো তোর মধ্যে! আর আজ যদি সৌমী আমাকে বুদ্ধি করে চিনি না খাওয়াতো, তাহলে আমার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেত। ”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেছিল রুক্মিণী। অর্জুন এইসব কথা শুনে ক্লান্ত স্বরে বলেছিল,
———” মা, অ্যাম সরি.. এখন এটা নিয়ে এত ভেবো না তুমি। রেস্ট নাও। ”
এই কথায় রুক্মিণী সাথে সাথেই বলেছিল,
———-” সরি আমাকে না বলে যাদের বলা উচিত তাদের গিয়ে বল। অপমানটা আসলে তুই আজ নন্দিনী আর সৌমীর শুধু করিসনি। আমারও করেছিস। আর কিছু বলার নেই আমার। ”

কথাগুলো ভীষণ অভিমান নিয়ে বলেছিল রুক্মিণী। তারপর চলে গিয়েছিল নিজের ঘরে।

কিন্তু অর্জুন বুঝেছিল নিজের ভুলটা। আর সত্যিই খারাপ লাগছিল বেশ নিজের ব্যবহারের জন্য। ও সত্যিই খুব বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে আজ।
<৬>
” আমি জানতাম ওই বাড়ি গেলেই এরকম কিছু একটা হবে। ওই মিস্টার অর্জুন এইটুকুও জানে না বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়! উনি আজ তোমার সাথে যেভাবে কথা বললেন, এরপর ইচ্ছে করছে চাকরিটা ছেড়ে দিই। নেহাত উপায় নেই তাই। ”
কথাগুলো কেমন রাগের মাথায় নিজের মনেই বলে উঠেছিল সৌমী। কিন্তু এই কথায় নন্দিনী ঠান্ডা মাথায়ই বলে উঠেছিল,
———” এত ভাবিস না ওইসব কথা নিয়ে। হয়তো ছেলেটার মাথার ঠিক ছিল না মা কে ওই অবস্থায় দেখে! তাই ওইভাবে বলে ফেলেছে। কিন্তু আমি রুক্মিণীর মুখে শুনেছি, অর্জুন মনের দিক থেকে না কি খুব ভালো। ”
এই কথায় সৌমী তির্যক হেসে উত্তর দিয়েছিল,
———-” ভালো! আমি জানি কত ভালো। রোজ তো দেখি অফিসে। মুখটা তো সব সময় এত গম্ভীর করে রাখে যে একটা কোন কথা বলার জন্য লোকজন দশবার ভাববে! তারপর মাঝে মাঝেই মেজাজ সপ্তমে। তখন যে সামনে থাকবে সে শেষ।”

কথাগুলো শুনে নন্দিনী আর কি উত্তর দেবে ভেবে পেল না। আসলে ওই বাড়ি থেকে আসার পর থেকেই মেয়েটার মাথা গরম হয়ে আছে। কিছুতেই আজকের ঘটনাটা ভুলতে পারছে না। এইসব চিন্তার ভিড়েই নন্দিনী বলে উঠেছিল,
——–” ঠিক আছে ঠিক আছে। এখন এইসব ছাড়। ঘড়িতে দ্যাখ কটা বাজে! দশটা। কাল তো আবার অফিস আছে। আমি খাবার দিচ্ছি। খেয়ে নে। ”

কথাটা বলেই নন্দিনী রান্নাঘরে গিয়েছিল। সেই সময়েই হঠাৎ দরজায় কলিং বেল! সৌমী ড্রইং রুমে বসে বেশ অবাক হয়েছিল! এত রাতে হঠাৎ কে এলো! কথাটা ভেবেই আনমনে গিয়ে দরজা খুলেছিল সেদিন, কিন্তু সামনের মানুষটাকে দেখে থমকে গেছিল যেন। অর্জুন! এত রাতে ওদের বাড়িতে কি করছে! কথাটা ভাবতেই অর্জুন বলে উঠলো,
———-” ভিতরে আসতে পারি? ”
এই কথায় সৌমী এই মুহূর্তে কোন উত্তর না দিয়ে গম্ভীর মুখে দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো। অর্জুন এবার আলতো পায়ে ড্রইং রুমে এসে খেয়াল করলো নন্দিনী এতক্ষণে রান্নাঘর থেকে এসে হাজির। ও তো এই সময় অর্জুনকে দেখে বেশ অবাক হয়েছিল! রুক্মিণীর শরীর ঠিক আছে তো! চিন্তাটা মাথায় আসতেই বলে উঠেছিল,
———–” তুমি এত রাতে! তোমার মা ঠিক আছে তো? ”
এই কথায় অর্জুন শান্ত স্বরেই বলেছিল,
———–” না না কাকিমা। মা ঠিক আছে একদম। আসলে ডাক্তার দেখে বললো সৌমী ঠিক সময়ে চিনি খাইয়ে দিয়েছিল বলেই মা ঠিক আছে। ”
এই কথায় নন্দিনী যেন নিশ্চিন্ত হয়েছিল। কিন্তু অর্জুন খেয়াল করেছিল উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা সৌমীর মুখটা আজ ভীষণ গম্ভীর। তবে অর্জুন আর সময় নষ্ট না করে বলে উঠেছিল আলতো স্বরে,
———–” আমি এখানে এসেছি সরি বলতে। আজ আসলে মা কে ওই অবস্থায় দেখে আমার মাথার ঠিক ছিল না! আই অ্যাম রিয়েলি সরি কাকিমা, আমি আপনার সাথেও খুব রুডলি কথা বলেছি। প্লিজ আজকের কথাগুলো মনে রাখবেন না। ”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেছিল অর্জুন। নন্দিনী এই কথায় সাথে সাথেই বলেছিল,
———-” না না বাবা, সরি বলার দরকার নেই। আমি বুঝেছি মা কে নিয়ে তোমার খুব চিন্তা হচ্ছিল সেই সময়। আর বিপদের দিনে তোমরা আমাদের অনেক সাহায্য করেছো। আমার মেয়েটাকে চাকরি দিয়েছো। আমি এইসব কোনদিন ভুলবো না। ”
অর্জুন কথাটায় আর কি বলবে বুঝতে পারেনি। তাই অল্প কথায় বলেছিল,
———–” আসছি আমি আজ কাকিমা। অনেক রাত হলো! ”
এই কথায় নন্দিনী একটু ব্যস্ত হয়েই বলে উঠেছিল,
———” সে কি বাবা! তুমি প্রথম দিন আমাদের বাড়িতে এলে, খালি মুখে চলে যাবে? একটা অন্তত মিষ্টি খেয়ে যাও। ”
কথাটায় সৌমী একটুও সময় না বেশ কাটা কাটা স্বরে বলেছিল,
——–” উনি ডায়েট করেন মা। মিষ্টি খান না। অফিসে দেখেছি। ”
অর্জুন এতে কিছুটা ইতঃস্তত হয়ে বলেছিল,
———-” না না কাকিমা, আজ আর কিছু খাবো না। আজ আসি। অন্যদিন এসে খাবো। ”
কথাটা বলেই ও দড়জার দিকে এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যাওয়ার আগে দরজার সামনে দাঁড়ানো সৌমীর কাছে এসে বলেছিল একটু আস্তে গলায়,
———” থ্যাঙ্ক ইউ আজকের জন্য। তুমি কাল অফিসে আসছো তো? ”
সৌমী এই প্রশ্নে খুব অল্প শব্দেই বলেছিল,
———-” হ্যাঁ, আসছি। ”
কথাটা শুনে আর সৌমীর গম্ভীর মুখটা দেখে অর্জুন বুঝেছিল এখনো মেয়েটার মনে ওর জন্য অনেক রাগ জমে। একটা সরিতে সেটা ঠিক হওয়ার নয়। তাই কথা না বাড়িয়ে চলে গিয়েছিল সেদিন। তবে সৌমীর যেন মনে মনে রাগটা এসে আরো বেশি করে চেপে বসেছিল। এরকম অহংকারী মানুষের থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই ভালো। কাল থেকেই নতুন চাকরি খুঁজবে ও পেপার ইন্টারনেট ঘেঁটে। এই রাগি অহংকারী লোকটার থেকে যেভাবে হোক মুক্তি পেতে হবে।
চলবে।