#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ .
#পর্বসংখ্যা_২৮ .
#ফাবিয়াহ্_মমো .
গগনবিদারী হু:ঙ্কার দিচ্ছে। বজ্রপাত শুরু হয়েছে। বৃষ্টির জন্য চারপাশ অন্ধকার। এমতাবস্থায় বাইরে বেরুনো যায় না। দুপুর এখন বারোটা বাজে, অথচ বাইরের অবস্থা সন্ধ্যা। পুরো রাস্তায় পানি উঠে গেছে, কোনো যান চলাচল করছে না। সিএনজির ভেতর গুটিয়ে আছে মেহনূর, সে বজ্রনাদের সশব্দ হু:ঙ্কার নিতে পারে না। নীতি অস্থিরভাবে কল দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। সিএনজির দুপাশে প্লাস্টিক নামিয়ে দিয়েছে, যেন বৃষ্টির ছাঁট না আসে। কিন্তু বাতাসের লীলাখেলায় বারবার প্লাস্টিক সরে বেশ পানি আসছে। ভেজা আঁচলটা পিঠের উপর টেনে গুটিশুটি হলো মেহনূর, শীতকাতুরে দেহটা প্রবলভাবে কাঁপছে। পাশ থেকে নীতি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। অন্যহাতে ফোন নিয়ে একের-পর-এক কল বসাচ্ছে। নেটওয়ার্কের কারণে বারবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন। হঠাৎ সিএনজি ড্রাইভারটা দুম করে গাড়ি থামালো। আরেকটু হলে নীতির মাথায় বেকায়দায় বা:রি লাগতো। ভাগ্যিস ফোনটা ছেড়ে সামনের জালযুক্ত বেড়িতে ডানহাত বসায়, তাৎক্ষণিকভাবে তাল সামলায়। নীতি প্রচণ্ড ক্ষে:পে গিয়ে কর্কশকণ্ঠে বললো,
– মা:থা খারাপ? এভাবে গাড়ি থামায়? এখনই আমার মা:থাটা ফে:টে দুভাগ হয়ে যেতো! কি আশ্চর্য! আপনি গাড়ি চালাতে জানেন না, তাহলে চালান কেন?
সিএনজি ড্রাইভারটা সম্পূর্ণ পিছু না ফিরে মুখটা শুধু ডান কাধে রাখলো। নীতির উদ্দেশ্যে উচ্চকণ্ঠে বললো,
– সামনে চাইয়া দ্যাহেন। রাস্তায় হাডু সমান পানি। এই পানির ভিত্তরে ক্যামনে নিয়া যামু? আপনেরা নাইমা যান। আর সামনে যাওন যাইবো না। আমার গাড়িতে পানি ঢুইকা পরলে ইন্ঞ্জিনে সমস্যা হইবো।
নীতি অযাlচিত কথা শুনে ভীষণ চ;টে গেলো। এগুলো কি ধরনের কথা? মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে আবার নেমে যেতে বলছে? মগের মুল্লুক পেয়েছে? এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাবে? নীতিও বেজায় রাগ দেখিয়ে কপাল কুঁচক বললো,
– আপনি কি জানেন না? বৃষ্টি পরলে রাস্তায় পানি উঠে? এটা কি নতুন কিছু? এখন আমরা কোথায় যাবো? আপনি আমাদের কোথায় নামানোর চেষ্টা করছেন? আগে বলেননি না কেন সামনে পানি দেখলে যাবেন না? এই ঝড়ো বৃষ্টির মধ্যে আর গাড়ি পাবো? আপনি গাড়ি স্টার্ট দিন। ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছি।
ড্রাইভার বেঁকে বসলো। সে যাবে না। স্পষ্ট সুরে বললো,
– ভাড়া চাইর গুণ বাড়াইলেও যামু না। আপনেরা বড়লোক মানুষ খালি ট্যাকা ট্যাকা করতে জানেন। এইদিকে আমার ইন্ঞ্জিন ন:ষ্ট হইলে হাজার ট্যাকার লস। হেই লসের ট্যাকা কি আসমান থিকা নাইমা আইবো? নাকি গাছ ঝাঁক্কি মাlরlলে ফড়ফড়ায়া পরবো? কথা বাড়ায়েন না। নাইমা যান। আমি আর যাইমু না।
লোকটার কথা শুনে ভীষণ রাগ হচ্ছে। তার চেয়ে বেশি রাগ লাগছে লোকটার উদাহরণটা শুনে। নীতি এমনেই বাংলাদেশের মাটিতে অভ্যস্ত না। যা একটু অভ্যস্ত সেটা শুধু ভাইয়ের জন্য এসেছে। এখন এই মূহুর্তে কি করবে? এই প্রবল বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাবে? এখনো গন্তব্য ত্রিশ মিনিট দূরে আছে। পানি ভেঙ্গে হেঁটেও যাওয়া সম্ভব না। ড্রেনের নোংরা পঁ:চা পানিতে রাস্তাঘাঁট বিশ্রী হয়ে আছে। হঠাৎ বাঁ-পাশ থেকে দাম্ভিকতার সুর এলো, এমনই ভাবে কথাগুলো বললো যেন এটা একটা স্বাভাবিক ইস্যু।
– মামা, কথা বাড়াতে হবে না। আমরা নেমে যাচ্ছি। আপনি এতদূর কষ্ট করে নিয়ে এসেছেন, এর জন্য আপনাকে তিনগুণ ভাড়াই দেবো। কিন্তু দয়াকরে অন্য যাত্রীর কাছে ডাবল ভাড়া চাইবেন না। সবাই পকেটের দিক দিয়ে এক না। বৃষ্টি হয়েছে বলে যাই-তাই ভাড়া চাইবেন এটা কিন্তু জ:ঘ:ন্য কাজ। নোং:রা ট্রি:ক্স চালিয়ে মানুষকে বিপদের মুখে ফেলবেন, আর গাছ ঝাঁ:ক্কি দেওয়ার হিসাব বুঝাবেন, এসব একদম ঠিক না।
মেহনূর দেরি করলো না। ড্রাইভারকে বলে দরজা খুলে সোজা পানিতে নামলো। বৃষ্টির তীব্র ছোঁয়া গায়ে মেখে ভাড়া গুণতে লাগলো। ডানহাত বাড়িয়ে তিনটে কচকচে নোট বাড়ালো সে। কাlঠখোট্টার মতো কথাগুলো বলেছে মেহনূর। কথার গরিমা দেখে অবাক হয়েছে নীতি। এমন ধাঁচের কথা শুধু একজনই বলে। ঢোক গিলতেই মাহতিমের পুরোনো কথা মনে পরলো। মাহতিম সেদিন স্টাডি টেবিলে বসে পেন্সিল দিয়ে কিছু একটা আঁকছিলো। কাগজে ব্যস্ত আঁচড় বসাতেই বাঁকা হাসিতে জানায়,
‘ ওকে একটু সময় দে। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। সবসময় চার দেয়ালে আবদ্ধ, ঘরকুনো, একা-একা থেকেছে। আমাদের সাথে মিশতে একটু সময় লাগবে। আমার বউকে আমার মতোই বানাবো। দরকার পরলে আমার চেয়েও এক কাঠি ধী-সম্পন্ন হবে। দেখে নিস নীতি। সবটাই সময়। ওকে ওর মতো ছেড়ে দে। চাপ দিলে যেমন প্যাঁচ কাটে, চাপ দিলে মানুষ বিগ;ড়ে যায়। ‘
‘ – চলো নীতি আপু। গাড়ি থেকে নামো। বসে থেকে লাভ শূন্য। উনাকে যেতে দাও। ‘
হঠাৎ পুরোনো ভাবনা থেকে ছিটকে এলো নীতি। মেহনূরের কথায় সম্বিত পেলো সে। গাড়িটা ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ মেহনূরের কাছে আসে। রাস্তায় কেউ নেই। পানির উচ্চতা হাঁটু অবধি। রাস্তার দু’পাশে সবকিছু ঠান্ডা, দোকানপাট বন্ধ। নীতির দিকে তাকালো মেহনূর, সাদা পায়জামাটা লক্ষ করে বললো,
– পায়জামাটা উপরে তোলো। বেশি নোংরা হলে দাগ উঠে না।
নীতি প্রজার মতো কথাগুলো শুনলো। পায়ের নিচ থেকে গুটিয়ে-গুটিয়ে একটু উপরে তুললো। মেহনূর পা মাড়িয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলো, যে করেই হোক গন্তব্যের দিকে যাবে। মেহনূর কয়েক পা এগোনোর পর হঠাৎ থেমে যাচ্ছে। সন্দিহান চোখে ডানে-বামে তাকাচ্ছে, আবার চট করে পিছু ফিরে তাকাচ্ছে। নীতি ব্যাপারটা লক্ষ করে সেও দৃষ্টি ধরে পিছু তাকালো, কিন্তু পেছনে শুধু পানি-আর-পানি। মেহনূর এখনো কান খাড়া করে স্থির। নীতি কৌতুহল গলায় শুধাল,
– থামছো কেন?
মেহনূর ডান হাতের তর্জনী তুলে ঠোঁটের উপর রাখলো। ইশারায় চুপ করতে বললো। ওর চোখদুটো ডানে-বামে অনিশ্চিত ভাবে ঘুরছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা নিয়ে ঘোর চিন্তায় আছে। কিয়ৎকাল নীরব থেকে আবার চলতে শুরু করলো। নীতির সাথে স্বাভাবিক হাঁটা চালিয়ে সতর্ক কণ্ঠে বললো,
– আমাদের ফ:লো করা হচ্ছে। সাlবlধাlন হও নীতি আপু। যখনই আমরা পানি ঠেলে এগুচ্ছি, তখন পেছন থেকে বাড়তি একটা শব্দ আসছে। যেই থেমে যাচ্ছি, ওমনেই সেটা থামছে। কিন্তু থামতে গিয়ে কিছু সেকেন্ড হেরফের করে ফেলছে। সেই শব্দটা আমার আসছে।
নীতির বুকটা ধ্বক করে উঠলো! সমস্ত গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে। আপনা-আপনি হাঁটার গতি থেমে যাচ্ছিলো, তৎক্ষণাৎ মেহনূর ওর হাতটা ধরে চাপা গলায় বললো,
– সাবধান! থেমো না আপু। ওদের বুঝতে দিও না। ওরা এখনো কিছু বুঝেনি। কষ্ট করে পা চালাও। দেখি কি করে। আমি নিশ্চিত ওরা আমার পেছনে লেগেছে।
নীতির মুখের অবস্থা করুণ হয়ে গেলো। অপ্রতিভ ভঙ্গিতে এগুতে লাগলো। কথাটা ভুল বলেনি মেহনূর। একদিকে মাহতিম ভাইকে জা;নে মেlরে দিচ্ছে, অন্যদিকে মেহনূরের উপর চোখ লাগানো। সময়টা কতো নিlষ্ঠুর! বি:পlদ যেন পিছ্ ছাড়ছেই না। মানুষ যে বলে, ঠিকই বলে। বি:পlদের বেলায় আরো দশটা বি:পlদ এসে হানা দেয়। নীতি মুখ তুলে আকাশের পানে চাইলো। উপরে আকাশ, নিচে জলাবদ্ধ পানি; পেছনে বিlপদ, সামনে বোধহয় গুঁড়ে বালি।
.
সিয়াম সবকিছু ফেলে ছুটে গিয়েছে। সৌভিকের গাড়িটা নিয়ে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে। খবরটা পাওয়া মাত্র দেরি করেনি সিয়াম। কাউকে কিছু জানায়নি সে। বন্ধুর শ:ঙ্কটা:পন্ন অবস্থা শুনে উন্মাদের মতো করছে। স্টিয়ারিং ধরা হাতদুটো কাঁপছে, চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। বক্ষস্থলের খাঁচার নিচে ছোট্ট হৃৎপিন্ডটা ধড়ফড়-ধড়ফড় করছে। হাতের উলটো পিঠে চোখ ডলে আবার স্টিয়ারিং ধরলো সিয়াম। আবার চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে। বুক ফাটা কান্নায় তার কিছু ভালো লাগছে না। কে জানতো এমন কিছু হবে? সৌভিকের ছেলেকে নিয়ে সবাই যেখানে মত্ত, সেখানে দুঃখদায়ক অবস্থা সবার জন্য মুখিয়ে আছে। এইতো একটু আগে সৌভিকের ছোট্ট শিশুকে নিয়ে সিয়ামও হেসে-হেসে খেলছিলো। তার কোলজুড়ে নিষ্পাপ প্রাণটা ঘুমুচ্ছিলো। অন্যদিকে মৃ:ত্যু:র সাথে লড়ছে মাহতিম। ‘ শাlলা তুই আস্ত একটা স্বা:র্থপ:র! তুই আমাদের কারোর কথা চিন্তা করলি না। ‘ আবারও চোখ মুছতে গিয়ে মনে-মনে বললো সিয়াম। গাড়িটা ডানে বাঁক নিয়ে ড্রাইভ-ওয়েতে উঠলো। হাসপাতাল চত্বরে এসে ভেতরে ঢুকলো সে। লিফটে চড়ে কাঙ্ক্ষিত রুমের কাছে যেতে-যেতেই পা থামিয়ে ফেলে। শার্টের হাতায় চোখ মুছে নিজেকে শান্ত করলো সে। কিন্তু লাভ হলো না। আবারও চোখের কার্নিশ গলে পানি গড়িয়ে পরছে।
‘ – সিয়াম সাহেব, ‘
সম্বোধন শুনে চোখ তুললো সিয়াম। সামনেই দাঁড়িয়ে আছে তাশরিফ সাগ্রত। গোlয়েন্দাlভাজন ব্যক্তিটি হেঁটে-হেঁটে কাছে আসলো। সিয়ামের কাধে হাত রেখে নতনয়নে বললো,
– স্যারের —
ছোট্ট শব্দটা গলার ভেতর কুণ্ডলী পাকিয়ে গেছে। সাগ্রত বাকি কথাটুকু বলতে পারলো না। সিয়াম যতটুকু মনোবল দিয়ে নিজেকে দমিয়ে রেখেছিলো, হঠাৎই ঝরঝর করে সাগ্রতকে জাপটে ধরে কেঁদে ফেললো। এভাবে তো কোনোদিন কাঁদেনি। ছোট থেকে একসাথে বড় হলো। খেলাধুলা, স্কুল সব একসাথে করলো। ও যে এতো আপন ছিলো, বুকের কাছটায় কোনো প্রিয়জন ছিলো, সেটা কোনোদিন বুঝতে পারেনি সিয়াম। সিয়াম কান্না জুড়ে হাউমাউ করে বললো,
– ওরে আমি হাসিখুশি বিদায় দিলাম, শাlলা আমার সাথে নাlফরlমাlনী করলো। সাগ্রত ভাই, বহুত ক:ষ্ট হচ্ছে। আমি — আমি জীবনেও এই দিনের কথা চিন্তা করতে পারি নাই। ওরে এই অবস্থায় কিভাবে দেখবো? দেখার মতো শক্তি আমার নাই। আমি সামনে যাব না। ওর এই অবস্থা আমি দেখতে পারবো না।
সিয়ামের অবস্থা দেখে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। যদি সিয়ামের মতো বন্ধু এভাবে কাঁদতে পারে, তাহলে স্যারের বউ কি করবে? চিত্রটা কল্পনায় আনা যাচ্ছে না। কি ভ:য়া:বহ দৃশ্য! সিয়ামকে শান্ত করে চেয়ারে বসিয়ে দিলো। আরেকবার দৃষ্টি তুলে সামনের দিকে চাইলো। করিডোরের শেষ রুlমটায় ‘ I. C. U. ‘ লিlখা। দরজা দুটো ভেতর থেকে বন্ধ। গতরাত থেকে এক রত্মি দেখার সুযোগ হয়নি। সিয়াম সারিবদ্ধ চেয়ারে বসে অশ্রু ঝরিয়ে যাচ্ছে। নিজেকে থামাতে পারেনি সে। পকেট থেকে ফোন বের করে সৌভিকের নাম্বারে ডায়াল করে। ছেলেকে কোলে নিয়ে ডানহাতে কলটা রিসিভ করে সৌভিক। কিছু বলতে যাওয়ার আগেই সিয়াম ভেঙ্গে পরে। মুষড়ে পরা কান্নায় বলে,
– সৌভিক, বন্ধু রে… ও বন্ধু, মাহতিমের অবস্থা ভালো না। শাlলা হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। আlশ:ঙ্কাজনক কে:সে ডাক্তার ঢুকতে দেয় না।
সৌভিক কথা বলার জন্য ঠোঁট খুলেছিলো, সেই ঠোঁট নির্লিপ্তের মতো স্থির হয়ে গেলো। কানে শুধু হৃৎপিণ্ডের শব্দগুলো বাজছিলো। ‘ ধ্বক ধ্বক ধ্বক ‘। বুকের কাছে ছোট্ট ছেলে যে বাবার চুপটি পেয়ে কেঁদে দিয়েছে, সেদিকে ক্ষণিকের জন্যও হুঁশ নেই।
.
চলমান .
#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ .
#পর্বসংখ্যা_২৮ . ( সংযুক্ত অংশ )
#ফাবিয়াহ্_মমো .
শীর্ষ চার নে:তার মধ্যে তিনজন গ্রেlফlতার, প:লাlতক এক। এমন একটি শিরোনামে উত্থাল হয়েছে দেlশ। রোকনুজ্জামান ধlরা পlরেনি। সে ফেlরাlরী হয়েছে। দেlশেlর ভাlবমূর্তি বিনlষ্টকারী নেlতাlদের আlটlক করা হয়েছে। এ নিয়ে সংlবাlদ মাধ্যমে তুমুল বাকবিতণ্ডা চলছে। কেউই অবশ্য একচুল ছাড় দিচ্ছে না। অতীতে করা সমস্ত কুlকাlজ ফাঁস করে দিচ্ছে। কেউ ভlয় পাচ্ছে না সত্য বলতে। পেটে রাখা হাজার-হাজার সত্য জlনগlণেlর সামনে উন্মোlচন করে দিচ্ছে। টিlভির সবকটা চ্যাlনেlল তাদের মুখনিঃসৃত বাlণীগুলো সরাসরি সম্প্রlচাlর করছে। বহু বছর আগে যেই সত্যটা ধূলোর নিচে চাপা ছিলো, আজ মানুষ তা নিয়ে দেদারসে মুখ খুলছে। সদ্য গ্রেlফlতার হওয়া তিনজন নেlতাlর মধ্যে বিশিষ্ট সমাlজসেlবlক তথা রামচন্দ্র চ্যাটার্জীর আরো কিছু ব্যাপার খোlলাlসা হয়েছে। রামচন্দ্র চ্যাটার্জী ও আবুল বাশার একসময় ধূlর্তlতার সাথে পlরিকল্পlনা আঁlটেন। ওয়াসিফ পূর্বকে সংlস:দ সlদlস্য থেকে বেইlজ্জlতlভাবে পlদচ্যুlত করেন। ইlয়াlবাlর চালান দেওয়া ব্যাপারটা স্রেফ মিlথ্যে এবং বাlনোয়াট ফlন্দি বৈ কিছুই নয়। মিlথ্যা মাlমlলার ভিত্তিতে জেlলভুlক্ত করা, দিনের-পর-দিন পাlশবিlক অlত্যাlচাlর চালানো, এগুলো শুধু ষlড়যlন্ত্র ছিলো। জেlলে থাকা একজন কlর্মকlর্তা, যিনি নিজের নাম ও পরিচয় নিlরাপlত্তার জন্য গোlপlন রেখেছেন, তিনি জেlলেlর এসকল তথ্য জানিয়ে দিয়েছেন। গো:পন সূত্র মোতাবেক, চারজন নেlতা কখনো অন্যের ব্যাপারকে দাম দিতেন না। উলটো তাদের মতামতকে কেউ অগ্রাহ্য করলে তাদের রাতারাতি গুlম, হlত্যা, নতুবা মিlথ্যে কেlসে ফাঁlসাlনো হতো। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাlণ হাlরাlয় মেহেদি শরীফ আনসারী। তিনি একজন সেlনাlবাlহিনী কlর্মকlর্তাlর পাশাপাশি সচেlতlন নাগরিক হিসেবে তৎপর ছিলেন। নেlতাlদের এরকম কুlচlক্রী কীর্তিকলাপ সম্বন্ধে প্রথম থেকেই জানতেন। কিন্তু আক্ষেপের বিষয়, তাদের ঘটনা নিয়ে শlক্ত প্রlমাlণ ছিলো না। এছাড়া তাদের ক্ষlমlতাপ্রাlপ্ত হাত টাকার জোlর ও গlদিlর গরমে বহুদূর চলতো। তাদের জlঘlন্যlতম কাজের জন্য উপরতলা থেকে সায় আসতো। অর্থাৎ, কেlন্দ্রেlর কেউ সাহায্য করতো বিধায় বহু মানুষের মৃlত্যু রlহlস্য ধাপাচাপা পরে যায়। জlনগlণের কাছে সবকিছু ধোঁয়াlশা করা হয়। দলের মানুষ তাদের নিয়ে কোনোকিছু বলতে ভlয় পেতো। তাই নীরব থেকেছে একগোlষ্ঠী। টিভির সামনে বসে খবরটা দেখছিলেন অশোক। টানা সপ্তাহখানেকের জন্য মুখরোচক খবর পেয়ে সাংlবাদিlকদের অবস্থা হৈ-হুল্লোড়। ডিভানের নরম গদিতে বসে-বসে অনেক কিছু ভাবছিলেন তিনি। হঠাৎই উনার মানসপটে গভীর কিছু মনে পরলো। তিনি সেই স্মৃতিতে ফিরে গেলেন। ভোর পাঁচটার দিকে ফোন দিলেন অশোক সেন। ফোনটা বাজতে-বাজতে কেটে গেলো। কেউ ধরলো না। আরো ক’বার চেষ্টা চালালেন তিনি, শেষে চতুর্থবারের মতো কলটা রিসিভ হলো। কণ্ঠের মধ্যে তেজপূর্ণ অবস্থাটা ম্রিয়মাণ ছিল, কিছুটা ঘুমাচ্ছন্ন কণ্ঠে অপরপাশ থেকে বললো,
– হ্যালো, স্যার।
এরপরই অশোক সেন দাপটের সাথে চ্যাঁচিয়ে উঠলেন। এমন অকর্মণ্য সুর তার কাছে দূর্বলতার চিহ্ন। তিনি বাঁজখাই কণ্ঠে গমগম সুরে বললেন,
– আই ফিল এ্যাসেম্ড আনসারী! আই জাস্ট ফিল এ্যাসেম্ড। তোমাকে স্ট্রিlক্টলি বলেছিলাম বাসার বাইরে যেও না। তুমি আমার কথা শুনেছ? কি জন্যে ওয়াইফ নিয়ে বেরিয়েছ?
মাহতিম মুখ নিচু করে ঘুমন্ত মেহনূরের মুখে চাইলো। ডানহাতটা আরেকটু শক্ত করে মেহনূরকে বুকের মধ্যে চেপে ধরলো। বাইরে প্রভাতের আলো ফুটছে, এখনো সকালের আভা ফুটেনি। ওর মোলায়েম ঘুমটা যেন না-ভাঙ্গুক, তাই কণ্ঠ খাটো করে বললো মাহতিম,
– সরি স্যার। ইফ আই হ্যাভ ডান এনিথিং রং, আই এ্যাপোলোজাইয। আমার টাষ্কটা সকাল সাতটা থেকে শুরু। ঘড়িতে এখন পাঁচটা বাজছে। সেখানে যদি ছয়টা ঊনষাট পযর্ন্ত ব্যস্ত থাকি, আমার তো মনে হয় না খারাপ কিছু হবে।
অশোক সেন কণ্ঠের নিচুভাব শুনে দমে গেলেন। আনসারী শুধু-শুধু এই টোনে কথা বলে না। টোনটা যেহেতু নামিয়ে বলেছে, তার মানে এটা পার্সনাল কেস। এতে কথা বাড়ালে খারাপ দেখাবে। তিনি সময়টা একঘন্টা এগিয়ে ছয়টায় বেরুতে বললেন। নির্দেশটা শোনার পর কলটা কাটলো মাহতিম। ফোনটা রেখে আবারও উষ্ণ শয্যার ভেতর গুটিয়ে গেলো। মেহনূরের মুখটা বুক থেকে তুলে ওর গালে-গাল ছোঁয়ালো সে। মেহনূর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, মাহতিমের নড়াচড়া টের পায়নি সে। যদি একটু টের পেতো, তবে দেখতে পেতো মাহতিম খুব ব্যাকুল হয়ে জড়িয়ে ধরেছে। এই ঘনিষ্ঠপ্রবণ আকাঙ্ক্ষী রূপ দেখলে মেহনূর কেমন চন্ঞ্চল পাখির মতো বিহ্বল হতো জানা নেই। শুধু প্রিয় মানুষটাকে তীব্র ভালোবাসায় খুব বেশিই আদর করতো সে। যতটুকু জাহির করলে মাহতিম নামক পুরুষটা প্রসন্ন হতো, ততখানিই ব্যস্ত হতো সে। অথচ, মাহতিম তাকে জাগায়নি। কানের কাছে আদুরে সুরে ‘ ও মেহনূর ‘ বলে ডাকেনি। ওর কানের লতি, গালের নরম ত্বকে ছোট-ছোট চুমু খেলো মাহতিম। তার সৌম্য-সুঠাম বুকটা পেতে মেহনূরকে আরো কিছুক্ষণ মুক্তোর মতো আগলে ধরলো। হাতদুটো খুলে মেহনূরের ছেড়ে উঠার বাসনা একটুও ছিলো না। তবুও মেহনূরকে রেখে উঠতে হলো তার। প্রাতঃকালীন স্নান শেষে রওনার জন্য উদ্যত হলো। কিন্তু মনটা যেন ফিনফিনে পর্দা ঘেরা বিছানার কাছে রেখে যাচ্ছিলো; ওই ঘুমন্ত শয্যাসঙ্গী, প্রাণদায়িনী, অর্ধাঙ্গিনী প্রাণটা তার তনুমনে শিকড়ের মতো আঁকড়ে ছিলো। ছোট্ট একটা চিরকুট লিখে গ্লাসের নিচে চাপা দিলো। মুখ ফিরিয়ে দরজার কাছটায় চলে যাচ্ছিলো মাহতিম, হঠাৎ পা থামিয়ে পিছু ফিরে আরেকবার বিছানার দিকে তাকালো। মৃদ্যু একটা হাসি দিয়ে বিদায় জানালো মাহতিম। ঘুমন্ত মেহনূরকে নিঃসঙ্গ করে চুপিসারে চলে গেলো।
.
বৃষ্টির পানিটা বরফের মতো ঠান্ডা। যেন আকাশ থেকে বরফ স্নাত পানি গলে-গলে পরছে। দাঁতে ঠকঠকানি উঠে গেছে। শরীরে কাঁপুনি এসে গেছে। শীতের প্রকোপে সর্দি বসে গেছে। হাঁটুর নিচ থেকে ডুবন্ত পা-টা খুব টনটন করছে। পানি ঠেলে-ঠেলে শাড়ি পরা অবস্থায় হাঁটা যায় না। পেছনে সন্দেlহজlনক ঘটনা। কেউ তো আসছে। কেউ তো ফlলো করছে। কিন্তু ধরা দিচ্ছে না। চাlলাlকির সাথে পাlলিয়ে যাচ্ছে। ধরতে পারছে না মেহনূর। মেহনূর পরপর দু’বার শব্দটা শুনলো। তবুও চুপচাপ হেঁটে-হেঁটে একটা ছাউনির কাছে আসলো। ছোট্ট একটা টং দোকানের পাশে পলিথিনের ছাউনি আঁটা। ছাউনিতে কেউ নেই, পানি কিছুটা কম। ছাউনির নিচে দাঁড়াতেই নীতি ক্লান্ত সুরে বললো,
– ভাবী, পা-টা খুব ব্যথা করছে। এখানে একটু বসি?
কেবলই বলতে নিচ্ছিলো, ‘ বসো ‘; কিন্তু বলতে পারলো না মেহনূর। এক টান দিয়ে নীতিকে সরিয়ে ফেললো সে, এক চিৎকার দিয়ে বললো,
– কে আপনি? কি চান?
নীতি প্রচlণ্ড ভিlড়মি খেয়ে মেহনূরের পাশে দাঁড়ালো। আকস্মিকভাবে টান খেয়ে কিছুটা ভ:য় পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু কখন যে বিlপlদ এসে পিছু দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেনি। লো:কটা আরেকটু হলে খা:রাপ কিছু করতো। নীতি জোরে-জোরে দম নিতেই মেহনূর ওকে নিজের পিছনে ঠেলে দিলো। সমস্ত ভ:য়কে আড়াল করে দু’বার ঢোক গিললো সে। লোকটার হাতে পিlস্তlল। পড়নে কালো হুডির মতো দীর্ঘ রেইনকোট। মুখে কালো একটা মাস্ক লাগিয়ে শুধু চোখদুটো বের করে রেখেছে। চোখের দৃষ্টি কমনীয় না। মেহনূর নিজের একচ্ছত্র ভয়কে কাবু করে কাঠিন্য স্বরে বললো,
– কে পাঠিয়েছে?
লোকটা ঠিক কয়েক হাত দূরে। কিন্তু পিlস্তlলটা এমনভাবে ধরেছে, যেন বুlলেlট নিক্ষেপ করলেই বুlকেlর এফোঁ:ড়-ওফোঁ:ড় ঢুlকে যাবে। মেহনূর একপলক ওই পিlস্তlলটার পানে তাকিয়ে লোকটার দিকে দৃষ্টি দিলো। বাঁ-হাতটা খুব সতর্কতার সাথে পিছনে নিয়ে কোমরের কাছটায় রাখলো। নীতি আড়চোখে মেহনূরের ব্যাপারটা লক্ষ করলেও মুখে কোনো ভাবভঙ্গি আনলো না। মেহনূর কথার ছলে আবারও শুধাল,
– কথা বলছেন না কেন? কে পাঠিয়েছে?
লোকটা রোবটের মতো তাকিয়ে আছে। চোখের পলক যেন মিনিটের মতো পরছে। মেহনূর যে বাঁ-হাত দিয়ে কিছু একটা করার ধাlন্দায় আছে, বোধহয় ধরতে পারেনি সে। মেহনূরও এই সুযোগে কোমরের কাছটায় হাত দিয়ে শাড়ির ভাঁজ সরিয়ে পেডিকোটের আওতা থেকে ছোট্ট আয়তাকার জিনিসটা বের করলো। নীতি চোরাদৃষ্টিতে ওই আয়তাকার ডিভাইসটা দেখতে পেয়ে ভেতরে-ভেতরে উত্তপ্ত কিছু অনুভব করলো। কি চান্ঞ্চল্যকর অবস্থা! ভাবী এটা কোথা থেকে পেল? এটা ভাইয়ার সবচেয়ে গোlপlন অlস্ত্র। এটা সহজে ধরে না সে। বিপদের সময় যত করুণ অবস্থাই আসুক, মস্তিষ্কের সচল বুদ্ধিতে দমিয়ে ফেলে। নীতি মেহনূরের কলাকৌশল ধরার আগেই অজ্ঞাত লোকটা গুমোট সুরে বললো,
– পেছন থেকে হাত সরান। পেছনে কি?
মেহনূর বাঁ-হাতটা ধীরে-ধীরে আনতে লাগলো। সঙ্গে মুঠোর ভেতর ছোট্ট ডিlভাlইসটা আঁকড়ে ধরলো। উনিশ-বিশ দেখলেই টিপে বসবে মেহনূর। ভয় পাবে না সে। হাতটা স্বাভাবিকভাবে সোজা করতেই লোকটা খিঁচানো কণ্ঠে বলে,
– হাতে ওটা কি? দেখি, দেখি ওটা কি!
লোকটা মেহনূরের দিকে এক-পা এগুতেই মেহনূর আবারও চিৎকার দিয়ে উঠলো। এবার কণ্ঠস্বর সুউচ্চ করে রাগত দৃষ্টিতে বললো,
– খবরদার আগাবেন না! আমার হাতে যে বস্তুটা আছে, এটা সাধারণ কিছু না। পা পিছান, পিছান বলছি। আমাকে দুlর্বlল ভাবলে আপনার জন্য মহা ভুlল! এমন ধরা ধরবো, এখান থেকে সু:স্থভাবে যেlতে দেব না।
ডানহাতে তুড়ি বাজালো মেহনূর। তর্জনী তাক করে পিছিয়ে যেতে বললো। লোকটা দুহাতে মধ্যে পিlস্তlল ধরে সরাসরি মেহনূরের দিকে টাlর্গেট করেছে। ট্রিlগাlরের জায়গায় তর্জনী বসিয়ে শক্তভাবে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টি পরা তখনও থামেনি। আকাশ থেকে বজ্রপাতের গুম-গুম শব্দ যেন লীলাখেলা দেখতে মত্ত। লোকটা পিlস্তlল উঁচিয়ে সতর্ক কণ্ঠে বললো,
– রাস্তা থেকে সরে যান।
রেইনকোট পরা পিlস্তlলধারী লোকটা কোন্ উদ্দেশ্যে কথাটা বললো, বুঝতে পারেনি মেহনূর। কোনো এক ঐশ্বরিক শক্তিবলে সংযত রয়েছে সে, মাহতিমকে সবসময় ঠান্ডা মাথায় দেখেছে। বি:পদ যত গুরুতর হোক, সমাধানটা তত সহজভাবে এনেছে। এবারও তাই হোক। হাতের ছোট্ট বস্তুটা একটা জি-পি-এস। এটায় টিপ পরলে কাজ শেষ। দেশের যেকোনো প্রান্তে থাকো না কেন, সরাসরি ডিlপার্টমেlন্টের কাছে ‘ বিপ্ বিপ্ ‘ করতে থাকবে। সিগন্যালটা পেতে দেরি, আশেপাশের নিlরাপlত্তাবাlহিনী আlল্টিমেlটাম কেlসে ওই স্থানে পৌঁছে যাবে। মেহনূর ডিভাইসটায় ক্লিক বসাতে দেরি, ওমনেই ছোঁ করে এক তরফা গুlলি ছুঁlড়লো। দারুণ শব্দে নীতি চিৎকার দিয়ে উঠলো! মেহনূর দু’কানে হাত চেপে চোখ খিঁচে ফেলেছে। পেছন থেকে এক আlহlত ব্যক্তির আlর্তনাlদ চর্তুদিকে ছাপিয়ে গেছে। মেহনূর চট করে চোখ খুলে পিছনের দিকে চাইলো। দৃষ্টিজোড়া বিস্ফোরিত করে দেখলো, কয়েক গজ দূরে একটা লোক দোlকাlনের উপর কাlতরাlচ্ছে। দোকানের ছাদটা রlক্তে ভেসেছে নির্ঘাত! তার মানে ওই লোকটা ছুপা আlততাlয়ী ছিলো। তাহলে ওই লোকটাই টাlকাlর বিlনিমlয়ে এসেছে। মেহনূর ছকটা ধরতে পেরে দ্রুত মাথাটা সামনে ঘুরায়, রেইনকোটধারী লোকটার দিকে বিস্মিত সুরে বলে,
– আপনি মানুষটা কে? আপনাকেই ফলো করতে দেখেছি। আপনার ‘ ছপছপ ‘ পায়ের শব্দ আমার কানে এসেছে। আপনি কেন ওই লোকটাকে মাlরlলেন? আপনি কোন দলের লোক?
লোকটা ভারী পিlস্তlলটা পকেটে পুড়লো। মেহনূরের প্রশ্ন শুনে নীতি ততক্ষণে ধাতস্থ হয়ে তাকাচ্ছে। বিষয়টা নিগূঢ়ভাবে বুঝার জন্য একবার মেহনূরের দিকে, আরেকবার লোকটার দিকে তাকালো। লোকটা পকেট থেকে প্লাস্টিকের জিপার ব্যাগে থাকা ফোন বের করলো। একটা কল বসিয়ে লাউড দিয়ে এক-পা এগিয়ে এলো। তা দেখে মেহনূর কেন জানি পিছালো না, সেখানেই স্থির রইলো। ফোনটা ওর দিকে বাড়াতেই একটা শক্ত পুরুষালী গলা ভেসে এলো,
– আমি অশোক সেন বলছি।
.
সৌভিকের অবস্থা খুবই খারাপ। কথাই বলতে পারছে না। ফোনটা ছাড়ার পর মূকের মতো করছে। কোলের ছেলেটা কান্না জুড়ে দিলে ফারিন এসে কোলে নিলো। বেডে শোয়া শানাজ বহুবার কারণ জিজ্ঞেস করলো। ফারিন, প্রীতিও উৎকণ্ঠার সাথে সৌভিককে ঝাঁকালো। সৌভিক কোনো কথাই বললো না। ওর মুখের অবস্থা দেখে তৌফের বুকটা কামড়ে উঠেছে। ভালো সংবাদ না, সৌভিক ভালো কিছু শোনেনি। তৌফ অস্থিরচিত্তের মতো সৌভিকের ফোনটা কেড়ে নিলো, ওর কললিস্টের শেষ নাম্বারটা টুকে কল বসালো। সিয়াম কলটা রিসিভ করলে তৌফ তাকে সবকিছু বলতে বাধ্য করলো। এমতাবস্থায় সিয়াম কিছুই আড়াল করলো না। খোলাখুলি সবকিছু বলে দিলো। তৌফ উদভ্রান্তের মতো মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে বসে পরতে নেয়, তাড়াতাড়ি তাকে দুপাশ থেকে সামিক ও প্রীতি ধরে ফেলে। তৌফ বুকটা হাঁlপাlনি রোগীর মতো ফুলাচ্ছে, খুব লম্বা-লম্বা দম নিচ্ছে। কথাটা বলার জন্য খুব চেষ্টা চালাতেই অত্যন্ত বিমর্ষ সুরে বললো,
– মাহতিম মনেহয় শোয়েবরে দেখে যাইতে পারবো না।
একসঙ্গে অনেকগুলো বুক মোlচlড় দিয়ে উঠলো। ফারিন ছোট্ট শোয়েবকে নিয়ে বাক্য ভুলে গেলো। প্রীতি ধাlক্কাটা নিতে না-পেরে চ্যাঁচানো সুরে বললো,
– পাlগlল পেয়েছ আমাদের? পাlগlলের মতো বলেছ কেন? কি কথা বলছ! কি শোনাচ্ছ তুমি! তুমি মাহতিম ভাইকে নিয়ে একদম ফাlজলাlমি করবে না।
প্রীতি কথাটা বলতে গিয়ে হুট করে কেঁদে ফেলে। সৌভিকের চোখ লাল হয়ে আসছে। অশ্রুতে টলমল অবস্থা। নাকটা টেনে অনেকক্ষণ পর নড়চড় করলো। শানাজের হাতটা ধরে আস্তে করে বললো,
– তুমি থাকো। শোয়েবকে দেখে রাখো। আমার বন্ধু ওইদিকে —
কথাটা শেষ না করলেই শানাজ বুঝে নিলো। সৌভিকের হাতের উপর হাত চেপে বললো,
– তুমি যাও, বের হও, দেরি কোরো না। আমি সুস্থ আছি। মেহনূর কই? ইয়া আল্লাহ্! আমার বোনটার দিকে খেয়াল রেখো সৌভিক। আমার খুব ভয় করছে। আমার সেlলা:ইটা যদি শুকিয়ে আসতো …. দেরি কোরো না। এখনই রওনা দাও।
সৌভিক অস্থিরভাবে ‘ হ্যাঁ ‘ সূচকে মাথাটা দুলিয়ে দেয়। সম্মতি জানিয়ে চটজলদি সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে পরে। হুড়োহুড়ি দৌঁড় লাগিয়ে পার্কিংলটে চলে যায় ওরা। তাড়াতাড়ি গাড়িতে চড়ে গন্তব্যের দিকে পৌঁছায়। সৌভিক আজ গাড়ি চালাতে গিয়ে আগে-পিছে কিচ্ছু খেয়াল করছে না। ইচ্ছামতো গাড়ি চালানোর মতো স্পিlড তুলেছে সে। গাড়িটা কাঙ্ক্ষিত হাসপাতালের কাছে থামতেই ব্যস্ত ভঙ্গিতে নামতে থাকে। পুরো ছয়জন একত্রে হাlসlপাতাlলের ফোর্থ ফ্লোরে পৌঁছায়। সেই ‘ I. C. U. ‘ সেlকশাlনটার কাছেই যেতেই সিয়ামকে সারিবদ্ধ চেয়ারে বসে থাকতে দেখে। সিয়াম পায়ের শব্দ শুনে মুখ তুলে ডানদিকে চাইতেই ওদের দেখতে পায়। ভেতরে দমিয়ে রাখা আবেগটা ছেড়ে দেয় সে। সৌভিকরা সিয়ামের কাছাকাছি আসতে দেরি, সিয়ামও বসা ছেড়ে ওদের দিকে ছুটে গিয়েছে। দু’হাত বাড়িয়ে সৌভিককে জাপটে ধরতেই সিয়াম হু হু করে কেঁদে উঠে। সৌভিকের লাল চোখ দিয়েও অশ্রু নির্গত হচ্ছে। সিয়ামের অবস্থা দেখে সবার চোখে পানি চলে এসেছে। ফারিন তৌফের হাতটা খামচে দাঁত কামড়ে চোখ ভিজিয়ে যাচ্ছে। তৌফ শক্তমূর্তির মতো চোখের তলা থেকে তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে পানি সরিয়ে যাচ্ছে, তবুও তার চোখ শুষ্ক হচ্ছে না। সৌভিক বহু কষ্টে ঢোক গিলে কাষ্ঠ গলায় বললো,
– কি-কি-কিভাবে হয়েছে?
সিয়াম তখনও স্থির হতে পারেনি। খুব প্রিয় কেউ হাlরাlনোর ভয়ে ভেতরটা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে। আজ পযর্ন্ত কখনো এভাবে কাঁদেনি। না সৌভিক কখনো ভেlঙেlছে, না তৌফ কখনো মুlষlড়েছে, না ফারিন কখনো ঠোঁটে দাঁত বসিয়ে কান্না চেপেছে। অমাlনুlষিক পীlড়ায় আlহlত হয়ে সিয়াম হাউমাউ করে বললো,
– ওর শরীরে রlক্ত নাই দোস্ত। কাল রাত থেকে চাlর ব্যাগ রক্ত দেওয়া শেষ। মাথায় সেlলাlই পরছে। জাlনোlয়াlরের বাlচ্চাlরা ওর মা:থায় আlঘাlত করছে সৌভিক। কত বড় নিlর্দlয়, কত বড় পাlষাlণের পাlষাlণ! ওই জাlনোlয়াlর, ওই বেlজlন্মাlগুlলা ওরে সাlমনে থিকা কিlছু করতে পারলো না। ওরে — ওরে পিlছন থিকা মাlরlলো। আমি সাগ্রতের শার্ট দেইখা ভাষা হারায়া ফেলছি বন্ধু। ওর দুই হাত …. বিশ্বাস কর, ওর — ওর দুই হাত পুরা রlক্তে মাlখামাlখি ছিলো। ডাক্তার ওর কাছে যেতে দেয় না। যদি বাহাত্তর ঘন্টায় হুঁ:শ না আসে, পরে লাlইফ সাlপোlর্টে —
‘ – সিয়াম ভাই, ‘
মেয়েলি কণ্ঠের পরিচিত ডাক শুনে সবাই চমকে যায়। সিয়াম সজল নয়নে ঢোক গিলে সামনের দিকে তাকায়। বাকিরা ওর দৃষ্টি ধরে পিছু ফিরতেই একসঙ্গে ভয়ার্ত ঢোক গিললো। কারো মুখে রা নেই। এখন আসন্ন অবস্থা কি হতে পারে?
চলমান .
#FABIYAH_MOMO .