#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#পর্বসংখ্যা_২০.
#ফাবিয়াহ্_মমো.
সুরাইয়ার চিৎকারে রুমের ভেতরটা বিভীষিকা হয়ে উঠলো! সন্ধ্যার আচঁটা আরো গাঢ় হয়ে অন্ধকার হয়ে গেলো! চিৎকার করতে-করতে গলা শুকিয়ে কাঁশতে লাগলো সুরাইয়া। বেগতিক মাত্রায় কাঁশতে-কাঁশতে দুহাতে গলা ধরে ধপ করে ফ্লোরে বসে পরলো। রুম এতোটাই অন্ধকার ছিলো যে, সেখানে একফোঁটা আলো নেই।এদিকে ঘন্টাখানেক চিল্লিয়েও সুরাইয়ার লাভ হয়নি। সুরাইয়া বিবশ অবস্থায় হাঁপাতে-হাঁপাতে ফ্লোরে মাথা লুটিয়ে ফেললো। চোখের পাতা বন্ধ করে সমস্ত দেহ ফ্লোরে ছেড়ে দিলো। কানের মধ্যে ভোঁ ভোঁ শব্দ শুনতে পেলেও শরীর একেবারে শূন্য অনুভব করলো। এরপর কিচ্ছু মনে নেই ওর।
সন্ধ্যার আঁধার নামতেই নির্জন রেসোর্টটা আরো নিস্তেজ হয়ে উঠলো। প্রতিটি কটেজের বাইরে লাইট জ্বললেও ভূতুড়ে পরিবেশ লাগছিলো। চারপাশ ঘিরে এতো গাছপালা ছিলো যেগুলো রাতের অন্ধকারে ভয় দেখানোর জন্য যথেষ্ট। বিশাল লম্বা-লম্বা গাছগুলো কেমন ঝুঁকে আছে কটেজের দিকে। মাথা তুলে লম্বা গাছগুলোর দিকে তাকালে ভয়ে গা ছমছম করে উঠবে। মাগরিবের পর সবাই মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে রেসোর্টে ফিরে আসলো। সবাই নিজেদের কটেজে ফিরে গেলেও আশ্চর্য ব্যাপার ঘটলো ছেলেদের কেটেজে। সৌভিক মাহতিমকে দেখতে এসে ওর রুমটা বাইরে থেকে লাগানো দেখে। ও কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে গেলে হঠাৎ পাশ থেকে সিয়াম জিজ্ঞাসু সুরে বলে উঠে,
– তোর ভ্রুঁ কুঁচকাইলো ক্যান? কিছু হইছে?
সিয়াম প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ নিরুত্তর চেয়ে রইলো সৌভিক। এদিকে ওর চুপটি দেখে সিয়ামের মনেও খটকা লাগতে শুরু করলো। ও কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই সৌভিক চিন্তান্বিত সুরে বললো,
– মাহতিম যদি কিছু লুকাতে শুরু করে তাহলে কিন্তু ঘাপলা। দরজা লাগানো দেখেই আমার মনটা কেমন সাইরেন দিয়ে উঠলো। আচ্ছা চলতো ওদিকে। একটু কাজ আছে।
সৌভিক তর্জনী তুলে মেহনূরের রুমের দিকে ইশারা করলো। সিয়াম ওর ইশারা মোতাবেক ওর পিছু-পিছু কটেজের দিকে পা বাড়ালো। মেহনূরের রুমটার কাছে এসে দরজা ভিড়ানো দেখে দুজনই বাইরে থেকে নক করলো। মেহনূর তখন বিছানায় শুয়ে বুকের নিচের বালিশ রেখে উপন্যাস পড়ছিলো। সেই মনোযোগটা ভঙ্গ করে দিলে মেহনূর বইটা বন্ধ করে বিছানা থেকে নামলো। ছোট্ট সুরে ‘ আসুন ‘ বললে সৌভিক আর সিয়াম দরজা ঠেলে ঢুকলো। সৌভিক একটা হাসি দিয়ে শান্তচিত্তের মেহনূরকে জিজ্ঞেস করলো,
– তুমিতো কটেজের বাইরে যাওনি না? মাহতিমকে দেখেছো? ও কোথায় গিয়েছে জানো?
দুটো প্রশ্ন শুনে মেহনূর ‘ না ‘ সুচকে মাথা নাড়িয়ে দিলো। ওর উত্তর দেখে সৌভিক আরো চিন্তিত হয়ে উঠলো। মাহতিম রেসোর্টের বাইরে গেলে জিপ নিয়ে বেরুবে, আশেপাশে থাকলে ওকে দেখা যাবে, কিন্তু ও যেহেতু এখানেও নেই তার মানে কোথায় গেছে? সৌভিক অন্যমনষ্কে ডুব দিলে আর কোনো প্রশ্ন করলোনা মেহনূরকে। একটা সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে পরলো, সিয়ামও বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে কোমরে দুহাত রেখে আশেপাশে তাকাতে লাগলো। সবাই নিজ-নিজ রুমে আছে, মাহদি সামিকের রুমে শুয়ে সিওসি গেম খেলছে, মেহনূর নিজের রুমে শুয়ে উপন্যাস পড়ছে। মাহতিম নিশ্চয়ই কিছু করে হাওয়া হয়ে বসে আছে। সৌভিকের চিন্তান্বিত মুখটা দেখে সিয়াম কৌতুহল সামলাতে না পেরে বললো,
– আচ্ছা তুই কি নিয়ে চিন্তা করোস ওইটা তো ক্লিয়ারলি বলবি? মাহতিম ঘাপলামি যদি করেই থাকে এতে তোর চিন্তা করার কারন কি?
এবার সৌভিক পূর্ণদৃষ্টিতে সিয়ামের দিকে তাকালো। বিরক্তমুখে ওর দিকে শক্ত মেজাজে বললো,
– রেসোর্টের কোথাও সুরাইয়াকে দেখতে পাইছিস?
সিয়াম প্রশ্নটা শুনেই চরম বিষ্ময়ে সঙ্গে-সঙ্গে চর্তুদিকে দৃষ্টি দিলো। কাউকে খুঁজার চেষ্টা করতেই সুরাইয়ার কটেজের দিকে দৃষ্টি থমকে তাকালো। বদ্ধ দরজার দিকে দৃষ্টি রেখে আশ্চর্য কন্ঠে বললো,
– মাহতিম ওরে ই-ন্না-লিল্লা-হ —
সিয়াম কথাটা শেষ করতে যেয়ে থেমে গেলো। চাপা ভয়ার্ত চাহনি নিয়ে সৌভিকের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে তাকালো। সৌভিক একটা ঢোক গিলে নিচের ঠোঁটটা দাঁতে কামড়ে ওকে সঙ্গে আসার জন্য ইশারা করলো। সিয়াম ওর ইশারাটুকু টের বুঝতে পেরে সৌভিকের পিছু-পিছু পুনরায় চলতে থাকলো। ওরা হাঁটতে-হাঁটতে পুকুরঘাঁটের কাছে আসতেই অকস্মাৎ চমক ভঙ্গিতে সটান দাড়িয়ে পরলো। আধো অন্ধকারে দূরের একটা লাইটের আলোয় পুকুরঘাঁট দেখা যাচ্ছে। সেই ঘাঁটের কিনারা ঘেঁষে পকেটে দুহাত গুঁজে মাহতিম দাড়িয়ে আছে। ওরা মাহতিমের পিছনদিকে দাড়িয়ে আছে বলে মাহতিম ওদের দেখতে পায়নি। চুপচাপ পা চালিয়ে মাহতিমের ডানে সৌভিক এবং বামে সিয়াম এসে দাঁড়ালো। দুজনই মাহতিমদের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখলো মাহতিম পুকুরের টলটলে পানির দিকে তাকিয়ে আছে। ওরা দুপাশে এসে দাড়িয়ে আছে, সেটা একদম গ্রাহ্য করেনি মাহতিম। নিরবতার প্রহর চলতে থাকলে সৌভিক নিরবতা চ্ছিন্ন করে বললো,
– দোস্ত ওর সাথে কি করছিস?
বাতাসের শোঁ শোঁ ঠান্ডা হাওয়ার আওয়াজ ছাড়া অন্য কোনো উত্তর এলো না তখন। সৌভিক উত্তরের জন্য তখনও মাহতিমের দিকে তাকিয়ে আছে। সিয়াম তাগাদা দেওয়ার জন্য মুখ খুলবে ওমনেই মাহতিম অটল অবস্থায় শান্ত ভঙ্গিতে বললো,
– রুমে বন্দি।
মাহতিমের উত্তর শুনে কিছুক্ষণ হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো দুজন। পরক্ষণে সৌভিক কৌতুহলের জোরেই তীব্র উৎকন্ঠায় বললো,
– তুই কি পাগল হয়েছিস? ওরা যদি জানতে পারে তাহলে কি অঘটনটা হবে জানিস? তুই কেন এই কাজ করলি মাহতিম? সুরাইয়ার কি দোষ?
মাহতিম এবার তিরিক্ষি দৃষ্টিতে সৌভিকের দিকে তাকালো। পকেটে দুহাত গুঁজা অবস্থায় ওর দিকে সম্পূর্ণ ঘুরে দাঁড়ালো। সৌভিক স্থির ভাবে ওর অবস্থা বুঝার চেষ্টা করছে, সিয়াম পেছন থেকে মাহতিমের কাধে হাত রেখে শান্তসুরে ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাচ্ছে। মাহতিম ওদের দুজনের উদ্দেশ্যেই ঠান্ডা মস্তিষ্কে বললো,
– কি করছি, কেনো করছি, কি কারনে করছি এসব উত্তর এই মূহুর্তে দেওয়াটা প্রয়োজন বোধ করছিনা। তোরা আমাকে আপাতত তিনটা দিনের জন্য একদম একা ছেড়ে দিবি। এই তিনদিনের ভেতর কি করবো, কেনো করবো কিচ্ছু জিজ্ঞেস করতে যাবিনা। আমার রাস্তায় ফুল সাজাতে গিয়ে ফুলের সাথে কাঁটা ফেলে দিস না। নিশ্চয়ই আনসারী গাধামি করার পার্সনালিটি রাখেনি। স্বাভাবিক থাক।
মাহতিমের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত উত্তর পেয়ে চুপ হয়ে গেলো দুজন। ওদের সামনে দিয়ে দ্রুতপায়ে পুকুরঘাঁট থেকে রেসোর্টের অন্যদিকে ফিরলো মাহতিম। সৌভিক ও সিয়াম নিরুদ্যম ভঙ্গিতে কটেজের দিকে যেতেই হঠাৎ ‘ রুমবন্দি ‘ কথাটা মনে পরলো। সৎবিৎ ফিরে পাওয়ার মতো চেতন হলে দুজনেই নিজেদের দিকে বড়-বড় চোখ করে তাকালো। একসাথে দুজন ঢোক গিলতেই শঙ্কামুখে মাহতিমের বদ্ধ দরজার দিকে তাকালো। ওমনেই ঝড়ের বেগে দৌড় লাগিয়ে ওরা দুজন কটেজে ঢুকে দরজা খুলতে গেলো। তড়িঘড়ি করে দরজা খুলতেই সিয়াম প্রচণ্ড অস্থির হয়ে বললো,
– দোস্ত, ওই সুরাইয়া যেনো ঠিক থাকে। নাইলে কপালে বাশঁ আছে। তাড়াতাড়ি মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালা!
সৌভিক তাড়াতাড়ি মোবাইল বের করে ফ্ল্যাশ অন করলো। রুমের ভেতরে আলো ফেলতেই হঠাৎ ফ্লোরের উপর বেহুঁশ অবস্থায় সুরাইয়াকে দেখতে পেলো। দ্রুত দুজন রুমের ভেতরে ঢুকে সুরাইয়াকে ধরে-ধরে বাইরে এনে গলা চড়িয়ে সবাইকে ডাকলো। সৌভিকের গলার কন্ঠ পেয়ে সবগুলো কটেজ থেকে ছুটে এলো । শানাজ-সাবা-মেহনূর দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে মাঠের প্রাঙ্গণটুকু পেরিয়ে ছেলেদের কটেজে উপস্থিত হলো। মাহতিমের কটেজে যেই পরিস্কার সিড়ির জায়গাটুকু ছিলো সেখানে সুরাইয়াকে বসিয়ে ওর মুখে পানি ছিঁটা দিতে লাগলো। শানাজ ছুটে এসে অস্থির হয়ে তাড়াতাড়ি সুরাইয়ার পাশে এসে বসলো। সুরাইয়ার মাথাটা কাধে নিয়ে বারবার ওর গাল ধরে ডাকতে থাকলো, কিন্তু সুরাইয়া কোনোভাবেই উঠলো না। সুরাইয়ার এমন অবস্থা দেখে সবার যেনো আত্মা শুকিয়ে আছে। মেহনূর দৌড়াতে গিয়ে হাতের বই ফেলে সুরাইয়ার পায়ের কাছে ঠান্ডা তালুতে হাত ঘঁষে দিচ্ছে। সাবা ওর মুখের উপর অনবরত পানি ছিঁটা দিয়ে ডেকেই যাচ্ছে। সুরাইয়ার কোনো হেলদোল না দেখে সাবির ডাক্তার ডাকতে মাইক্রো নিয়ে বেরুলো। নীতি-প্রীতি-ফারিন আশ্চর্যজনক অবস্থায় মুষড়ে পরেছে। সুরাইয়া কিভাবে মাহতিমের রুমে আটকা পরেছে কিছুতেই ওরা বুঝতে পারছেনা। সামিক নীতির পেছন থেকে ওর কানের কাছে মুখ এনে বলল,
– মাহতিম ভাই কি ফারিনের ব্যাপার নিয়ে রিভেন্ঞ্জ নিলো?
নীতি কন্ঠ আরো নিচু করে খুব সাবধানে সামিকের উদ্দেশ্যে বললো,
– ভাইয়াকে ফারিনের ঘটনা বলা হয়নি।
সামিক কান খাড়া করে উত্তরটা শুনে নীতির পেছন থেকে সরে এলো। সিড়ির কাছে গিয়ে মেহনূরের পাশে বসে শানাজের দিকে প্রশ্ন করলো,
– সুরাইয়া কি ভাইয়ার সাথে দেখা করতে এসেছিলো? ও কিভাবে রুমের ভেতর আটকা পরলো শানাজ?
সামিকের যুক্তিপূর্ণ প্রশ্ন শুনে শানাজের শঙ্কিত ভাবটা চিন্তার দুয়ারে কড়া নাড়লো। সুরাইয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই উদ্বেল কন্ঠে বললো,
– ও তো ঘুমানোর জন্য চলে এসেছিলো। এরপর কি হয়েছে জানিনা, কিন্তু আমরা যখন চলে এলাম, তখন সুরাইয়াকে পেলাম না। ফিরে এসেই দেখলাম, মেহনূর নিজের রুমে উপন্যাস পড়ছে। আর কেউ সুরাইয়াকে কটেজে আসতে দেখেনি। এখন কিভাবে মাহতিম ভাইয়ার রুমে আসলো আমি কিছুই জানিনা।
এদিকে সামিকের অযথা জেরা দেখে লাত্থি মারতে ইচ্ছে করলো সৌভিকের। এখন যদি মাহতিমের ফাঁদটা ধরে ফেলে তাহলে কি হবে জানা নেই। সৌভিক তাড়াতাড়ি পুরো ব্যাপারটা ঘুরানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলো। ছটফট ভঙ্গিতে তাড়াহুড়ো কন্ঠে বললো,
– আমি, আমি, আমি ভুল করেছি। আসলে রুমের ভেতর যে সুরাইয়া ছিলো সেটা আমি জানতাম না। দরজা খোলা ছিলো বলে বাইরে থেকে লাগিয়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু ভেতরে যে সুরাইয়া আঁটকা পরবে কে জানতো? আই এম সরি গাইজ। আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি সুরাইয়ার এরকম অবস্থা হবে। আমি সত্যিই দুঃখিত।
সৌভিক সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলে মাহতিমের ঝামেলাটা নিজের কাধে নিলো। এই ব্যাপারটা দেখে সিয়াম শুধু চুপ করে তাকিয়ে রইলো। এখন কিছু বলা মানেই বি-প-দ, আর মাহতিমের কাহিনী জানতে পারলে মহা সাং-ঘা-তিক বি-প-দ! শানাজ ওর কথা শুনে ক্রুদ্ধ ভঙ্গিতে মুখ নামিয়ে নিলো। কেনো মুখটা রাগে ভস্ম হলো সেটা শুধু সৌভিকের কাছেই গোচর রইলো। এদিকে আর দেরি না করে, সবাই মিলে সুরাইয়াকে ধরাধরি করে কটেজের রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো। ডাক্তার এসে চেক করে বললো, ভয় থেকে জ্ঞান হারিয়েছে, খুব শীঘ্রই সেন্স চলে আসবে। কেউ আর সুরাইয়ার রুমে ভিড় করলো না, সবাইকে নিজেদের রুমে যেতে বলে শুধু মেহনূর সুরাইয়ার পাশে রইলো। সুরাইয়ার কপালে হাত বুলিয়ে দিতে-দিতেই সময়ের কাটা রাত আটটায় এসে পৌঁছলো। প্রায় দেড়ঘন্টা পর সুরাইয়া ধীরে-ধীরে চোখ খুললে মেহনূর ওর মুখের দিকে একটু ঝুঁকে বললো,
– বুবু, খারাপ লাগছে? চোখ খুলো বুবু। চোখ বন্ধ করো না।
মেহনূর কথাটুকু বলতেই গ্লাস এনে বিছানায় এসে বসলো। বালিশ থেকে সুরাইয়ার মাথাটা একটু তুলে অন্যহাতে গ্লাস এগিয়ে ঠোঁটের কাছে গ্লাস ঠেকালো। সুরাইয়া খুবই দূর্বল ভঙ্গিতে দুঢোক পানি গিলে আবার বালিশে মাথা রাখলো। দূর্বলমাখা কন্ঠে আস্তে-ধীরে বললো,
– আমি কোথায় আছি রে মেহনূর?
মেহনূর গ্লাসের পানিটুকু নিজের আচঁলের শেষপ্রান্তে ঢেলে শাড়ির আচঁলটা একটু ভিজিয়ে নিলো। হালকা একটু নিংড়ে নিয়ে সুরাইয়ার গালে-কপালে-কানে বুলিয়ে দিতেই বললো,
– তোমাকে কটেজের রুমে শোয়ানো হয়েছে বুবু। তুমি ওদিকটায় কেনো গিয়েছিলে?
সুরাইয়া প্রচণ্ড আরাম বোধে চোখ বন্ধ করে রইলো। মেহনূরের ছোট্ট সেবাটায় আলতো ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে বেশ শান্তি পাচ্ছিলো। কপালে মেহনূরের হাতটার উপর নিজের শক্তিহীন হাতটা রাখতেই মেহনূর একটু ধাক্কা খেলো যেনো। ঠিক তখনই সুরাইয়া আলতো একটা ঢোক গিলে চোখ বন্ধ অবস্থায় বললো,
– আমি রুমে ঢুকেছিলাম। ওখানে কেউ ছিলো না। রুম অন্ধকার ছিলো, আমি রুমের ভেতরে ঢুকলে কে জানি বাইরে থেকে ইচ্ছে করে দরজা লাগিয়ে দিলো। কত চিৎকার করলাম, দরজা ধাক্কালাম, লাইটের সুইচ খুজেঁ ইচ্ছামতো টিপলাম, কিন্তু কিচ্ছু হলো না। কিচ্ছু হলো না।
সুরাইয়া আড়ষ্ট কন্ঠে কথা বলতে-বলতে চুপ হয়ে গেলো। ভেতর থেকে লম্বা একটা নিশ্বাস টেনে সশব্দে ছেড়ে দিলো। চোখ বন্ধ করা অবস্থায় দূর্বল শরীরে শক্ত কন্ঠে বললো,
– এখন এই রুম থেকে চলে যা। আমি একা ঘুমাতে পারবো। যখন তোকে আর সবাইকে ডেকেছি, তখন তো আর আসতে পারিসনি।এখন তোদের দেখানো সেবার দরকার নেই। আর শোন, যাওয়ার আগে দরজা টেনে যাবি।
কথাটা বলতেই মেহনূরের দিকে পিঠ দিয়ে ডানপাশ হয়ে শুলো ও। মেহনূর কথার বিপরীতে সবসময়ের মতো চুপটি থেকে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো। টেবিল থেকে জগ নিয়ে খালি বোতলে পানি ভরে সেটা ওর মাথার কাছে রেখে দিলো। রাতে যদি কারেন্ট না থাকে, তাই সে চিন্তা করে একটা মোমবাতি আর দিয়াশলাইয়ের প্যাকেট টেবিলের উপর রেখে দিলো। মেহনূর দরজা টানার আগে আরেকবার সরল কন্ঠে বললো,
– কিছু দরকার হলে ডাক দিও বুবু। আমি তোমার পাশের কটেজেই আছি। আর সাবা বুবু তোমার বামপাশের রুমে আছে। আমি গেলাম।
সুরাইয়া আরেকবার ওকে তাড়না দিয়ে রুষ্ট গলায় বললো,
– কাহিনী করতে হবেনা। বেরিয়ে যা।
মেহনূর ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে দরজা ভালোমতো টেনে দিলো। কটেজের তিনধাপ সিড়ি ধরে নামার সময় আকাশের দিকে তাকালো। কালো আকাশটায় যেনো প্রচুর মেঘ জমে আছে, বিদ্যুপৃষ্ঠের মতো আলোর ঝিলিক মেঘে-মেঘে খেলে যাচ্ছে। বাতাসের তেজও পূর্বের তুলনায় বেশি এখন। বৃষ্টি আসার আগমুর্হূতের মতো ভিজভিজে বাতাস বইছে, গাছগুলো শাখা-প্রশাখা নাড়িয়ে যেনো ভয় দেখাতে চাইছে। মেহনূর মাথা নিচু করে সিঁড়ি পেরিয়ে ঘাসের উপর পা রাখলো। বাদামী চামড়ার চটিজুতার দিকে দৃষ্টি রেখে ছোট ছোট পা ফেলে অনেক কিছু চিন্তা করতে থাকলো। ঠান্ডা-তেজালো হাওয়ার জন্য খোঁপা করা চুলগুলো আলগা হতে লাগলো ওর। অন্যমনষ্ক মেহনূর খুবই ধীরগতিতে পা ফেলে হাঁটতে থাকলে বাতাসের জন্য খোঁপাটা একদম খুলেই গেলো। বিদ্যুতের বেগে পিঠ ছাড়িয়ে কোমরে মৃদ্যু বাধা পেয়ে একেবারে হাটুর কাছে চুলগুলো পৌঁছলো। রাতের আবছা অন্ধকারে বাতাসের তেজে ওর চুলগুলো উড়তে লাগলো। পড়নে সাদা সুতির শাড়ি এবং পাড়টা গোলাপী রঙের ছিলো। হিম জড়ানো বাতাসের জন্য গোলাপী ব্লাউজটার গোলাপী হাতাটা আরেকটু কনুই থেকে উপরে তুললো। আকাশে এখন গুড়ুম-গুড়ুম শব্দ করে মেঘ ডাকছে। মেঘের থেমে-থেমে ডাক চলতে থাকলে হঠাৎ পুরো চারপাশ আলোকিত হয়ে দিনের মতো উজ্জ্বল হলো, আর সেকেন্ডর মধ্যেই উজ্জ্বলতা নিভে গিয়ে নিকষ কালোতে ফিরে আসলো প্রকৃতি। মেহনূর আর হাঁটলো না তখন, আকস্মিকভাবে পা থামিয়ে মুখটা তুলে ছেলেদের কটেজের দিকে তাকালো। মনের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্নের আনাগোনা চলতে থাকলে শেষমেশ বাধ্য হয়ে নিজেকে শক্ত করে সেদিকেই পা বাড়িয়ে দিলো। চোখের শান্ত-নরম দৃষ্টি কটেজের দিকে স্থির রেখে কাছে চলে এলো। ঘাস থেকে সাদা টাইলসের সিড়িতে একপা ফেললো। এভাবে পরপর তিনটা সিড়ি অতিক্রম করে কটেজের প্রথম রুমটার দিকে এগুতে লাগলো মেহনূর। কটেজের দ্বিতীয় রুমটা এখন খালি, এখানে সৌভিক আজ ঘুমায়নি, সে তৌফের রুমে চলে গেছে, তাই রুমটা আলো ছাড়া অন্ধকার হয়ে আছে। মেহনূর বারবার দুঠোঁট ভেতরে পুড়ে জিহবা দিয়ে ভিজিয়ে নিচ্ছে। যেই পরিমাণে ভয় হচ্ছে পানির তেষ্টায় বুকটা একদম ছটফট করে উঠছে। নিজেকে শান্ত-স্থির রাখার জন্য জোরে একটা নিশ্বাস টেনে ঠোঁট গোল করে ছেড়ে দিলো। সাদা টাইলসের জমিনে দৃষ্টি রেখে সামনে এগুনোর জন্য পা বাড়ালো, যতবার একপা করে দরজার কাছে যাচ্ছে, ততবার মনেহচ্ছে কেউ বুকের যন্ত্রটায় পাথর দিয়ে জোরে চাপা দিয়ে রেখেছে। মেহনূর ঠোঁটদুটো একটু ফাঁক করে অনবরত নিশ্বাস ছাড়ছে তখন, নিশ্বাসের তেজটাও বুকের ধুকপুকের সাথে তাল মিলিয়ে বেড়েছে। দরজাটার কাছে এসেই দেখলো দরজাট আধ-ভেজানো, রুমের ভেতরে টেবিল ল্যাম্প জাতীয় লাইট জ্বালানো ছিলো। সেই ল্যাম্পের অল্প আলো দরজার বাইরে একটুখানি এসে পরেছে। মেহনূর সেই আলোটা একপলক দেখে নিয়ে দরজাটা ধীরভাবে ঠেলে ঢুকলো। সাদা টাইলস থেকে দৃষ্টি তুলে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় ধীরগতিতে তাকাতে থাকলো। মাহতিম তখন চেয়ারে বসে টেবিলে কি যেনো একটা করছিলো। মেহনূর দৃষ্টি তুলে মাহতিমের উন্মুক্ত পিঠ, পেশিবহুল হাত, মুখের ডানপাশটা একটুখানি দেখতে পাচ্ছিলো। টেবিলের উপর ডানহাতটা তুমুল স্পিডে চলছে মাহতিমের। মেহনূর ওর দিকে আরেকটু ভালোভাবে খেয়াল করতেই দেখতে পেলো, মাহতিমের হাতে একটা লাল পেন্সিল, আর সেই পেন্সিল দিয়ে সাদা কাগজের উপর মনোযোগের সাথে কি যেনো লিখছে। মেহনূর কিভাবে ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করবে সেটাই চিন্তা থাকলে ওখানেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলো। রুমের দুপাশে বড় দুটো জানালা দিয়ে শোঁ শোঁ করে পর্দা উড়িয়ে বাতাস আসছিলো। সেই সঙ্গে মেঘের গর্জন যেনো আরো বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ আকষ্মিকভাবে বিদ্যুৎপৃষ্ঠের বজ্রধ্বনি হলে অস্ফুট শব্দে শিউরে উঠলো মেহনূর। খট করে ডানহাতের পেন্সিল থমকে গেলো মাহতিমের। দুকানের কর্ণপথে যে শব্দটা আসলো তাতে আর চিন্তা না করে তৎক্ষণাৎ পিছু ফিরে তাকালো। টেবিল ল্যাম্পের আলোয় দরজার মুখে যে বালিকা ভয়ে জবুথবু হয়ে দাড়িয়ে ছিলো, তাকে দেখে ভ্রুঁদুটো কুঁচকে নাকের দিকটায় নেমে এলো। মেহনূর ওর বিরক্তিভরা মুখটা দেখে সঙ্গে-সঙ্গে চোখ নামিয়ে বললো,
– জরুরী কথা ছিলো।
কথাটুকু শুনতেই ভ্রুঁদুটো স্বাভাবিক হয়ে বাঁ-ভ্রুটা উপরে উঠালো মাহতিম। ওর দিকে তীক্ষ্মদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেই হাতের পেন্সিলটা টেবিলের উপর রাখলো। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতেই পালটা প্রশ্ন করে বললো,
– কি দরকার এখানে?
মেহনূর ভীতু চাহনি দিয়ে আরেকবার মাহতিমের মুখটা দেখে নিলো। এরপর নিচু গলায় নতমুখে বললো,
– আপনি সুরাইয়া বুবুকে কেনো রুমে আটকে দিয়েছেন? যদি বুবুর কিছু হতো, সেটার দায়ভার কি আপনি নিতেন?
প্রশ্ন করেই মনে হলো মস্ত বড় ভুল হয়ে গেছে। কথাটা এভাবে না বলে সুন্দরভাবে বলা উচিত ছিলো। লোকটা যদি রাগের মাথায় ওকেও রুমে আঁটকে দেয়? সুরাইয়াকে কেনো রুমে আটকে দিয়েছে এই প্রশ্ন করাটাও এখন জরুরী ছিলো। আর সবার সামনে প্রশ্ন করলে বিপাকে পরতে হতো। এসব চিন্তায় মশগুল হতেই মাহতিম তখন পা এগিয়ে মেহনূরের দিকে আসতে থাকলো। মেহনূর ফ্লোরের দিকে মাহতিমের লম্বা ছায়াটা দেখে ভয়ে চুপসে যেতে লাগলো। বুকে আবারও সেই ধুকপুকনিটা হচ্ছে, ঠোঁটদুটো সরু ফাঁক করে একটার-পর-একটা লম্বা নিশ্বাস ছাড়ছে। কি হবে এখন? রেগে গেলো? সত্যি রেগে গেলো? নিশ্বাসের গতি আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে ওর। ছায়াটা কাছে আসতে-আসতে একেবারে ওর শরীরের উপর পরলো। যেই ভয়টা এতোক্ষন ছিলোনা, সেই ভয়ের জন্যই এখন আচমকা পিছাতে লাগলো মেহনূর। কিন্তু পেছনের অবস্থা না দেখে, না বুঝে পিছাতে থাকলে তৎক্ষণাৎ ধড়াস করে দরজায় ধাক্কা খেলো। ওইমুমূহর্তেই দরজাটা ভুলবশত চাপিয়ে ফেললো ও। ওর মন বলছে এই মুহূর্তে খুবই বোকার মতো কাজ করেছে, যার দরুন এখন সমস্ত শরীর একদম মাথা-থেকে-পা পযর্ন্ত মৃদ্যু ভঙ্গিতে কাঁপছে। সেই কম্পমান মাথাটা কোনোমতে পিছনে ঘুরিয়ে দরজাটার দিকে তাকালো। দরজা সম্পূর্ণ পুরোপুরি লেগে গেছে এখন। একটুও ফাঁকি দেবার উপায় নেই যেনো। মাহতিম আরো দুপা এগিয়ে ওর সামনে এসে বললো,
– আমার রুমের আসার আগে চিন্তা করা উচিত ছিলো। আমিতো চরম লেভেলের অসভ্য, এখন তুমি দরজাও বন্ধ করে দিয়েছো। এইমূহুর্তে যদি নন-অকারেন্স কাহিনী করি তাহলে তোমার কি অবস্থা হবে বুঝতে পারছো?
বড় করে ঢোক গিলে মেহনূর ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো। ভেতরে-ভেতরে কুকড়ে গেলেও সুরাইয়ার কথা চিন্তা করে সাহস জুগিয়ে বললো,
– আপনি বুবুকে রুমে আটকে দিয়েছেন কেনো?
মাহতিম ওর কথা শুনে ঠোঁটের কোণে হাসি টানলো। সেই হাসির আভাসে বাঁ ভ্রুঁটা উঁচু করে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
– আচ্ছা তোমার বুবুকে আমি আঁটকাতে যাবো কেন?
মেহনূরের প্রচুর রাগ লাগছিলো কাটা শুনে। তবুও সেই রাগের চেয়ে এখন ভয়ের মাত্রাটাই বেশি। মাহতিমের দিকে তাকিয়ে থাকতেই ওর হাসি-হাসি চোখদুটো থেকে চট করে দৃষ্টি নামিয়ে ফেললো মেহনূর। মাহতিম ব্যাপারটা দেখে প্রচণ্ড মজা পেলেও মুখে হাসির আভাস ফুটালো না। মেহনূর হাতদুটো পেছনে নিয়ে দরজা খোলার জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু নব্ অনেকটা উপরে থাকাতে হাত সেখানে পৌঁছাচ্ছে না। বাইরে আরেকবার বাজ পড়লে তৎক্ষণাৎ বিকট শব্দ হলো, সেই শব্দের জন্যে চমকে উঠতেই মেহনূরের ভেতরে অবস্থা টালমাটাল হচ্ছিলো। মাহতিম প্রসন্ন মেজাজে শান্ত-নয়নে মেহনূরের মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে। মনের বিরুদ্ধেই ওর দিকে আরো এগিয়ে গিয়ে কয়েক ইন্ঞ্চির দূরত্ব রেখে দাঁড়ালো সে। এই অবস্থা দেখে মেহনূরের হৃৎযন্ত্রটা ছিঁড়ে আসতে চাইছে, চোখের সামনে পেশিবহুল বুকটার দৃশ্য খুব নিকটে চলে এসেছে। বাধ্য হয়ে চোখদুটো কুঁচকে আরো ব্যগ্ররূপে কাঁপতে লাগলো মেহনূর। ওর ভয়ার্ত অবস্থার আতঙ্কিত ভাব দেখে মাহতিমেরও রাগ হলো। এখানে যখন আসার সাহস হয়েছে তখন ভয় পাওয়া হচ্ছে কেনো? বিনা অনুমতিতে রুমে ঢুকেছে কোন্ সাহসে? কেনো ওকে দেখে ভয়ে পেয়ে খালি পালাতে ইচ্ছে করে? সব প্রশ্নের গুটি পাকিয়ে মাহতিম তরুণের বিবৃতিগুলো মানসপটে চিন্তা করতে থাকলো। সেদিন তরুণ যেভাবে যেই-যেই জায়গায় বেহায়ার মতো স্পর্শ করেছিলো, মাহতিমও সুক্ষ্ম রাগ, অল্প গূঢ়তা নিয়ে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। কাধের দিকটায় স্পর্শ করার উদ্দেশ্যে ধপ করে দরজার উপর হাত রাখলো। মেহনূর আরেকদফায় শিউরে উঠে মাথাটা সেদিকে ঘুরিয়ে দরজার উপর মাহতিমের হাত দেখলো। ঘন করে ঢোক গিলে মাহতিমের দিকে আতঙ্ক দৃষ্টিতে তাকালোম। মাহতিম ওর অবস্থা দেখে শান্ত মেজাজে বললো,
– তোমার বোন নিজের কটেজে না ঢুকে আমার কটেজের দিকে এসেছিলো।
প্রথম বাক্য শেষ করতেই চট করে মেহনূরের কাধে হাত ফেলে দিলো মাহতিম। মেহনূর মাথা নিচু করে চোখদুটো খিচ মেরে উঠলো তখন। মাহতিম বর্তমানে ওকে বোকা বানানোর যে খেলাটা খেলছে, সেটা অবশ্য ওর অভিনয় দেখে কেউ ধরতে পারবেনা। মাহতিম এবার এটিটিউট দেখিয়ে গমগম সুরে বলতে লাগলো,
– ওকে আমার রুমে একা দেখে মারাত্মক শান্তি লেগেছে বুঝছো।
কথাটা শেষ করতেই মেহনূর চমকিত ভঙ্গিতে চোখ খুলে তাকালো। মাহতিম ওর বিষ্ময় ভরা সরল মুখটার দিকে তাকিয়ে কাধ থেকে হাতটা উঠালো মাহতিম। সেটা ওর খোলা চুলের উপর রেখে শান্ত ভঙ্গিতে বুলাতে লাগলো। মেহনূর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহতিমের দিকে, বিষ্ময়ের ভাব এখনো ওর কাটেনি। সুরাইয়াকে একা পেয়ে কিছু করেছে কিনা সেই তুচ্ছ চিন্তা মাথায় আনতেও কষ্ট হচ্ছে ওর । মেহনূরের ওমন স্থির চাহনি দেখে মাহতিম ওর থুতনিটা আরেকটু উপরে তুলে দিলো। ওর দিকে নিজের মুখটা একটু নামিয়ে নিচু স্বরে বললো,
– শাড়িতে ওকে বলিউডের শিল্পা শেঠির মতো লেগেছে।
উদাহরণের অবস্থা দেখে বুকটা সজোড়ে ধ্বক করে উঠলো মেহনূরের। এই লোকটার চেহারা দেখে তো কখনো চরিত্র আন্দাজ সম্ভব না। তরুণের মতো আচরণ এই লোকটার কাছ থেকে কোনোভাবেই আশা করা যায় না। মেহনূরের গালের কাছে অনেকগুলো চুল এসে ঝাপটা খাচ্ছে তখন, সেটা দেখে মাহতিম নিজের ডানহাতটা আবার উপরে তুললো। তর্জনী আঙ্গুলটা কপাল ছুঁইয়ে-ছুঁইয়ে গালের কাছে নামাতেই চুলগুলো কানের দিকে সরাতে থাকলো। মেহনূর প্রতিক্রিয়াহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেই চোখদুটো আপনাআপনি চোখ বন্ধ করে নিলো। মাহতিমের একহাত এখনো ওর পিঠের চুলগুলোকে বুলিয়ে যাচ্ছে, অন্যহাতে কানের পেছনে চুল গুঁজে দিচ্ছে। মেহনূর তখন অদ্ভুত ঘ্রাণের মায়ায় ডুবে গিয়ে ঘোর আবেশে আবদ্ধ ছিলো। মাহতিমের শরীর থেকে আসা প্রাণবন্ত ঘ্রাণশক্তি সমস্ত ইন্দ্রিয় দখল করে নিচ্ছিলো। গভীর করে নিশ্বাস নিচ্ছিলো মেহনূর, সেই নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসের গভীরতায় ছোট্ট বুকটা ফুলে-ফুলে উঠছিলো ওর। মাহতিম গাঢ় গলায় ঠান্ডা সুরে বললো,
– ওমন ভয়াবহ মেয়েকে একাকী রুমে দেখে অন্য বুদ্ধি চাপে। সেই অন্য বুদ্ধির জন্যই সেদিনের ঘটনা আবার রিপিট করতে চাইলাম। ইতিহাস বারবার পুনরাবৃত্তি হয়, আমিও পুনরাবৃত্তি করে কারোর বীভৎস দিনটা আবার দেখতে চাইলাম।
কথাটুকু চলতে-চলতেই ওর পিঠের চুলগুলো সন্তপর্ণে সরিয়ে ফেললো মাহতিম। আবারও সেই তরুণের ঘটনার মতো ওর পিঠের উপর পাঁচ আঙ্গুল রাখলো সে। বাইরে বাতাসের প্রবলধ্বনি পৈশাচিক ভাবে শোনা যাচ্ছে। মেঘের গর্জন বৃদ্ধি পেয়ে বজ্রকন্ঠের সুর ধরেছে এখন। প্রকৃতির সেই নিবিড় খেলায় মেহনূর আবারও বিশ্রী দিনটার কথা দুচোখের পাতায় কল্পনা করতে লাগলো। তরুণের একপেশে জঘন্য হাসি, লাইটার নিয়ে অন-অফ করা, জবরদস্তি করে পিঠের কাছে ব্লাউজের হুক খোলার চেষ্টা, নানা জায়গায় বিশ্রীভাবে চোখ বুলিয়ে দেখা, সব একে-একে ওর বদ্ধ চোখের অন্ধকার পটে জলজ্যান্ত ভাবে ভেসে উঠলো। মাহতিম আজও সেই পিঠের উপর একইভাবে হাত রাখলো, কিন্তু সেই হাত রাখলো পরম আবেশে আলতো ছোঁয়ায়। প্রশস্ত বিশাল পেশিময় বুকটার মধ্যে উষ্ণতা দিয়ে আঁকড়ে ধরার জন্য শুধু একটুখানি দূরত্ব ছিলো। কিন্তু সেই দূরত্বের মাঝে বিশাল বড় বেড়িবাধ ছিলো, যেটার নাম হলো ‘ অধিকার ‘। আজ মাহতিমের কাছে সেই অধিকার নেই, কোনো বাধ অতিক্রমের জোর নেই। মাহতিম নিজেকে চূড়ান্ত সীমায় নিয়ন্ত্রণ রেখে আবারও মেহনূরের বদ্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
– ওই অন্ধকার গোয়ালঘরটায় কেউ বাজে স্পর্শ পেয়ে হাউমাউ করে কেদেঁছিলো। ছাড় পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলো প্রচুর। ছুটাছুটি করাও বাদ দেয়নি একদম। কিন্তু আফসোস, কেউ যে তাকে উদ্ধার করতে আসেনি। শেষমূহুর্তে যদি ছাড় পাওয়ার উছিলা না পেতো, তাহলে সে কি এখনো সুস্থ থাকতো?
মাহতিম কথাটা শেষ করতেই মৃদ্যু আভায় অবজ্ঞাপূর্ণে হেসে দিলো। নিয়তির খেলায় অঘটন ঘটতে কতমিনিট লাগতো? কিন্তু দুঃখটার কথা চিন্তা করে ছোট্ট মানুষটার বদ্ধ চোখদুটো থেকে হঠাৎ গাল ছাপিয়ে পানি পরতে লাগলো। বাইরের বড়ো-বড়ো বৃষ্টিফোঁটার মতোই তার অশ্রুফোঁটাগুলো একে-একে ঝরে পরছিলো। মাহতিম ওর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে গাঢ় করে নিশ্বাস টেনে নিলো। পিঠ থেকে হাত সরিয়ে ওর ছোট্ট কোমল মুখটা দুহাতের তালুতে নিজের মুখের দিকে উঁচু করে ধরলো। নিচু কন্ঠে আবার বলে উঠলো,
– মেহনূর আফরিন, তোমার কান্না দেখার জন্য যে ব্যক্তি বাইরে দাড়িয়ে সেদিন কুকর্ম করেছিলো, আজ তাকে ভেতরে ঢুকিয়ে কান্নার একছত্র মূল্য বুঝিয়ে দিয়েছি।
দুহাতের তালুতে আবদ্ধ মেহনূরের মুখটা চাপা কান্নার জন্য লাল হয়ে উঠলো। নিঃশব্দে ফুপিয়ে-ফুপিয়ে মাহতিমের দুতালুর মাঝেই অনেকক্ষন কাঁদলো ছোট্ট মানুষটা। অশ্রুমাখা মুখটা দেখে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো মাহতিম। চোখদুটোর উপর ঠোঁট বসিয়ে সকল কষ্ট দূর করার জন্য ব্যকুল হৃদয়টা খানখান করছিলো যেনো। আজ ওই মুখটা চুপচাপ দেখা ছাড়া আর কোনো অধিকার নেই, একদম নেই। নূন্যতম অধিকারও নেই। মেহনূর কিছুটা শান্ত হলে ফুপানো ভঙ্গিতে চোখের পাতা খুলে ফেললো। লাল হয়ে আসা অশ্রুপূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে মাহতিমের দিকে চোখ রাখলো। ওই নাশ-ঘাতক দৃষ্টির দিকে তাকানো সম্ভব না, ওই চওড়া ফোলা বুকের কাছে দাড়ানো সম্ভব না, আর শান্ত ভঙ্গিতৃ দাড়ালেই কিছু-একটা ঘটার প্রবণতা প্রবল। মেহনূর দ্রুত নিজের কান্না থামিয়ে দুগাল থেকে মাহতিমের হাত সরিয়ে দিলো। মাহতিমের দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে দরজাটার নব পেয়ে সেটা দ্রুত মোচড়ে বাইরে চলে গেলো। মাহতিম অপলক চাহনিতে রাতের বাদলধারায় মেহনূরের বৃষ্টিতে ভিজে-ভিজে যাওয়াটা দেখতে লাগলো। আজ আবারও সেই ছোট্ট বালিকা অগ্রাহ্য করে পালিয়ে ছুটলো। খুব কাছে এসে হাতছানি দহন ঘটিয়ে আবার শান্তভাবে পালিয়ে যাচ্ছে।
#চলবে
#FABIYAH_MOMO
#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#পর্বসংখ্যা_২১.
#ফাবিয়াহ্_মমো.
গতরাতে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার জন্য রেসোর্টের এলাকাটা কর্দমাক্ত অবস্থা হয়ে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় পানি জমে গর্তমতো হয়ে আছে। গাছের নিচগুলা স্যাতস্যাতে হয়ে পিচ্ছিল হয়ে গেছে। সকালের সোনালি আলোয় সবকিছু প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। ফুলের উপর শিশির জমা পানিগুলো সূর্যের আলো পেয়ে ঝলমল করছে। মেহনূর খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে নেয়। শাড়ি বাঁচিয়ে খুব সাবধানে রুমে ফিরে আসে। এলোমেলো চুলগুলো না আঁচড়ে শান্তমনে কটেজ থেকে বেরিয়ে আসে। কটেজ থেকে একটু দূরে ঠিক ডানদিকটায় বসার মতো আরেকটা কটেজ আছে। তবে কটেজ না বলে আড্ডাখানা বললে চলে। সিনেমায় যেমন দেখায় বিলাসী মানুষগুলো সকাল-বিকাল শান্ত সময়টায় চায়ের পসরা নিয়ে আড্ডা দেয়, ঠিক তেমনি একটা আড্ডার জায়গা সেখানে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। বড় বড় দুটো গোল-টেবিল দিয়ে আড্ডাখানার অর্ধেকটা সাজানো হয়েছে, বাকি অর্ধেকটা বাগানের সিন-সিনারি দেখার জন্য ডিভানের মতো সিস্টেম করেছে। মেহনূর হাঁটতে-হাঁটতে সেই কটেজটার দিকে চলে গেলো। দুটো নিচু সিড়ি অতিক্রম করে ভেতরে পা রাখলো। আড্ডাখানার কটেজটা একদম খোলামেলা, চর্তুদিকেই দেয়াল ছাড়া। কিন্তু একটার-পর-একটা বিশাল বড় খাম্বা একটু দূরত্ব রেখে রেখে করা হয়েছে। মেহনূর হাতে করে যেই বইটা এনেছিলো সেটা এমন সুন্দর জায়গায় পড়ার জন্য উত্তম। সোজা ডিভানের সাইডটায় চলে গিয়ে সেখানে বই খুলে বসলো। সামনে তাকাতেই বেশ চমৎকার একটা বাগান, সেখানে রঙ-বেরঙের ফুল ফুটে আছে, ফুলগুলোর মিষ্টি পবিত্র সুভাষে চারপাশটা মৌ মৌ করছে। মেহনূর ডিভানে পিঠ হেলিয়ে পাদুটো বাঁদিকে একত্র রেখে বইয়ের দিকে মন দিলো। কখন যে বইয়ের শব্দমালায় ডুবে গেলো সেই সুক্ষ হুঁশও ওর হলো না। সবাই একে-একে ঘুম থেকে উঠে নিজেদের হাতমুখ ধোয়ার কাজ সেরে ফেললো। সকালের নাস্তার জন্য অপেক্ষা করতেই ম্যানেজার জানালো দূরের কটেজটায় খাবার এসে যাবে। সবাই সেদিকটায় যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে দেখে ডিভানের দিকটায় একাকীভাবে মেহনূর বসে আছে। তৌফ মেহনূরের অবস্থা দেখে সবার দিকে ইশারা করে দিলো, সবাই ওর ইশারা দেখে মেহনূরের উপস্থিতি পেয়ে চুপচাপ গোলটেবিলে চলে গেলো। শানাজ নিজের রুমে চুলসজ্জা করছে, সাবা নিজের শাড়ি ঠিকঠাক করে মুখে হালকা প্রসাধন লাগাচ্ছে। অন্যদিকে সুরাইয়া গো-মর মুখে দুপুরের জন্য শাড়ি সিলেক্ট করছে। মাহতিম সদ্য ব্যায়াম শেষে জগিং করতে-করতে রেসোর্টের গেটটা দিয়ে ঢুকলো। পড়নে কালো রঙের এক্সার্সাইজ ট্রাউজার, গায়ে ‘GUCCI’ ব্র্যান্ডের মেরুন টিশার্ট, পায়ে কালো কালার স্নিকার পরা ওর, যার সোলটা মূলত সাদা এবং জুতার ফিতাগুলো ডোরাকাটা ছিলো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে রোদের কিরণে চিকচিক করছে, চুলগুলো ঘামে ভিজে কপালের সাথেই লেপ্টে আছে, পাতলা সুন্দর ঠোঁটদুটো জগিংয়ের জন্য হালকা নিঃশ্বাস ছাড়ছে। গেটের কাছ থেকে কটেজের জন্য বামদিকে পা চালাবে ওমনেই দূরের সেই কটেজটার দিকে চোখ পরে। মাহতিম কিছু খেয়াল করলেও সেদিকে ঠিক করে তাকায় না, সোজা নিজের কটেজের দিকে চলে যায়। নাস্তার জন্য সবকিছু রেডি হয়ে গেলে মাহদির তাড়নায় সেই কটেজটার টেবিলে এসে পরে। সিয়ামের বাঁপাশে খালি চেয়ার পেয়ে চেয়ারটায় তখন টেনে বসে। পুরো টেবিল জুড়ে নানাপদের ভর্তা সাজানো, একপাশে সালাদের বোল রাখা, খিচুড়ির বিশাল হাড়িটা তখন দুটো ওয়েটার মিলে ধরে আছে। আরেকজন ওয়েটার সবার কাছে গিয়ে প্লেটে-প্লেটে খিচুড়ি বেড়ে দিচ্ছে। গোল-টেবিলের বাঁপাশে ছেলেরা বসেছে, ডানপাশটা নিয়ে মেয়েরা বসেছে। শানাজ এসে চেয়ার টেনে বসতেই মেহনূরের জন্য ডাক পাঠিয়ে টেবিলে আসতে বলে। মেহনূর বইটা বন্ধ করে ওদের টেবিলের দিকে চলে আসে। সবাই যখন খাবারের বিভিন্ন পসরা নিয়ে মেতেছে উঠবে, তখন মেহনূর নীতির পাশে চেয়ার খালি পেয়ে সেটা টেনে চুপচাপ বসে। প্লেটের উপর খিচুড়ির পরিমাণ দেখে মেহনূর ইতস্তত করতে থাকে। ধোয়া উঠা খিচুড়ির উপর আঙ্গুল দিয়ে নাড়তে থাকলে নীতি বিষয়টা লক্ষ করে বলে,
– মেহনূর কোনো সমস্যা? তুমি খাচ্ছো না যে? খিচুড়ি কি বেশি গরম?
নীতির প্রশ্ন শুনে এতোক্ষন পর শানাজ মেহনূরের প্লেটের দিকে নজর দিলো। ওর প্লেটের দিকে তাকাতেই শানাজ নীতির উদ্দেশ্যে হাসি দিয়ে বললো,
– ও তো এতো খিচুড়ি খেতে পারবেনা। ওর প্লেট থেকে কিছু কমাও।
শানাজের হাসিসুলভ কথায় সবাই হাসি না দিয়ে উলটো চোখ বড় করে বিষ্ময়াভূত হলো। মাহতিম একবারের জন্যও মেহনূরের দিকে না তাকালেও, এবার ঠিকই ওর দিকে দৃষ্টি রেখে দেখলো। প্লেটে যেটুকু খিচুড়ি দেওয়া হয়েছে সেটা একদম মাহদির প্লেটের সম-পরিমাণ। যেখানে মাহদি একদম গোগ্রাসে ভর্তা মাখিয়ে খাওয়া শুরু করেছে, সেখানে নাকি মেহনূরের উলটো খিচুড়ি কমাতে হবে। নীতির সাহায্য নিয়ে শানাজ মেহনূরের প্লেটটা থেকে আধা পরিমাণ কমিয়ে ফেললো। বাকি আধা পরিমাণ দিয়ে মেহনূর ধীরেসুস্থে খাওয়া শুরু করলো। মাহতিম ওর সম্পূর্ণ অবস্থা দেখে নিজের খাওয়াটা ঠিকমতো করতে পারছিলোনা। এদিকে কানের কাছে চোরের মতো সিয়াম বলে উঠলো,
– মামা, তোমার মুরগীর তো হেব্বি ফিড দিতে হইবো। তাড়াতাড়ি একটু বুকে টানো। এইভাবে চললে তো তোমারে সামলাইতে পারবো না।
মাহতিম প্লেটের দিকে তাকিয়ে খিচুড়ি মাখানো অবস্থায় ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছাড়লো। এরপর সিয়ামের উদ্দেশ্যে নিচু গলায় শক্ত কন্ঠে বললো,
– খিচুড়ি খাচ্ছিস, সেটার দিকে নজর দে। আশেপাশে কি হচ্ছে সেটার জরিপ এনে আমার কানে ঠুকে দিবিনা।
সিয়াম এই কথা শুনে মুখভর্তি খিচুড়ির লোকমা নিয়ে ফিসফিস নাক দিয়ে শব্দ করে হাসতে লাগলো। সিয়ামের নাকে টাইপ হাসি দেখে চোয়াল নাড়াতে-নাড়াতে ফারিন বলে উঠলো,
– তুমি নাক দিয়ে ভটভটি গাড়ির মতো শব্দ করছো কেন?
ফারিনের ইজ্জত মার্কা কথা শুনে সিয়াম সাথে-সাথে মুখটা কুঁচকে নিলো। তাড়াতাড়ি মুখের খিচুড়ি গিলে ফারিনের জন্য কিছু বলবে, তার আগেই সৌভিক গলা নামিয়ে মাহতিমের জন্য সবার অগোচরে বললো,
– মেহনূরের খাওয়ার অবস্থা দেখ বন্ধু! ও তো কিছুই খায় না। ওর চেয়ে আমাদের মাহদি আলহামদুলিল্লাহ ভালোই খায়। ওর দিকে খেয়াল রাখ মাহতিম। মেয়ে মানুষের এতো কম খাওয়া ঠিক না।
ব্যাপারটা নিয়ে মাহতিম নিজের মনে চিন্তা করছিলো, হঠাৎই সৌভিকের কথায় ভ্রু কুঁচকে কাটকাট সুরে প্রশ্ন করলো,
– আমি খেয়াল রাখবো মানে? ও আমার কে হয় যে খেয়াল রাখতে যাবো?
মাহতিমের ভ্রুঁ কুঁচকানো অবস্থা দেখে সৌভিক একপেশে হাসি দিলো। কোনো উত্তর না দিয়ে খাবারের জন্য তীব্র মনোযোগ দিলে মাহতিম আর কিছুই বললো না। সবাই নিজেদের খাওয়া শেষ করে আজকে কি কি ফূর্তি করা যাবে সেটা নিয়ে শলা-পরামর্শ শুরু করলো। মেহনূর একা-একা আবারও ডিভানে বসে উপন্যাসের বই খুললো। খাওয়ার সময় চুলগুলো খোপা করেছিলো, সে চুলগুলো মেলে দিয়ে পাদুটো আগের মতো উঠিয়ে নিলো। এদিকে কটেজের বাইরে চেয়ার টেনে ছেলেমেয়ে সবাই মিলে বহু বিষয়ে আলোচনা করছে, কালকের ক্লান্তিটা এখধো রয়ে গেছে বিধায় আজও সবাই রেস্ট নিচ্ছে। তবে সবাই মিলে মুভি দেখে আজকের দিনটা রেসোর্টে কাটিয়ে কাল দুপুরে নদীতে নেমে গোসল করবে। বিকেলের দিকে নদীতীরে বসে ছোটখাটো খাবারের আয়োজন করা হবে। নদীতে গোসলের ব্যাপারে সবাই হৈচৈ সমাগম করে প্রফুল্ল হলেও শানাজ প্রথম দফায় দ্বিমত পোষণ করলো। কিন্তু সকলের চাপাচাপি এবং সাবার জুড়াজুড়িতে বহু বছর পর নদীতে নামার জন্য রাজি হলো। মাহতিম সবার কথায় চুপ করে শুনে যাচ্ছে। নিজ থেকে কোনো বাড়তি কথা এখন পযর্ন্ত বলেনি। হাতে কোকাকোলার ক্যান নিয়ে সবার ব্যস্ত আলোচনার মধ্য থেকে চোখদুটো মেহনূরের দিকে রাখলো। সেদিকে দৃষ্টি রেখে ডানহাতের লাল ক্যানটা ঠোঁটের কাছে ছোঁয়ালো। ছোট্ট এক চুমুক দিয়ে ডিভানে বসা মেহনূরের দিকে তাকিয়ে রইলো। কালরাতে এই মেয়েটা কেমন করে রুমে এসে পরলো, সেটাই এখন চিন্তা করছে মাহতিম। শুধুমাত্র চাচাতো বোনের জন্য চিন্তা করে ওর রুমে কথা শোনাতে এসেছিলো, এটা ভাবলেই ওর ভীষণ হাসি পায়। সেই হাসির জন্যই ঠোঁটের কোণে হাসি ঠেলে আবারও ক্যানে চুমুক দিলো মাহতিম। কিন্তু হুট করে কোত্থেকে মাহদির এসে দাড়ালো, সে এসেই মাহতিমের হাত থেকে ক্যান কেড়ে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে বললো,
– তোমার ফোন কোথায় ভাইয়া? ফোন দাও। তুমি ইচ্ছে করে ফোন লুকিয়ে রেখেছো। আমি তোমার বালিশের নিচে ফোন পাইনি।
মাহতিম ওর আচরণ দেখে প্রথমেই খুব বিরক্ত হয়ে গেলো। হুট করে মুখের ক্যানটা কেড়ে আবার বড় গলায় মোবাইলের জন্য চাচ্ছে! মাহতিম একদফা তুড়ি বাজিয়ে শক্ত গলায় তর্জনী তাগ করে বললো,
– ক্যান ফেরত দে! আর তুই কিসের মোবাইল চাচ্ছিস? ফোনের ব্যালেন্স দুদিনের মধ্যে কত গিলেছিস ধ্যান আছে? তোর কি বয়স হয়েছে মোবাইল ধরার? একটা চ-ড় মেরে দাঁত ফেলে দিবো ফাজিল!
মাহদি ‘ ডোন্ট কেয়ার ‘ ভাব দেখিয়ে ধীরগতিতে পা পিছিয়ে কটেজের দিকে যেতে লাগলো। মাহতিম বারবার বললো ক্যান ফেরত দিয়ে যেতে, কিন্তু মাহদি সেটা দিলো না। মাহতিমের কথাও একদম শুনলো না। মাহদি সোজা পা ঘুরিয়ে কটেজে ঢুকে মেহনূরের দিকে ছুটে গেলো। মেহনূরের পাশে ধপ করে বসলে মেহনূর চমকে গিয়ে বই বন্ধ করে দিলো। মাহদির দিকে আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকাতেই ফিক করে হেষে দিয়ে ওর টুকটুকে গালদুটো ধরে বললো,
– আজকে তোমার কি কি করার প্ল্যান আছে বলোতো। কিভাবে আজকের দিনটা কাটানোর ইচ্ছা আছে?
মাহদি বেশ ভাব দেখিয়ে ডানহাত দিয়ে চুলের ব্যাকব্রাশ করলো। একদম মাহতিমের মতো স্টাইলটা কপি করে ঢঙ দেখিয়ে বললো,
– ওহে সুন্দরী, চলো আমরা পুকুরপাড়ে গিয়ে বসি। আজ যে সবাই মিলে নদীতে গোসল করবো জানো? জানোনা। চলো চলো আমার হাতটা ধরো, তোমাকে নিয়ে সুন্দর রাজ্যটা ঘুরে-ঘুরে দেখে আসি।
মাহদির এমন ঢকের কথা শুনে মেহনূর খিলখিল করে হেসে দিলো। ঠোঁট চওড়া করে সাদা উজ্জ্বল দাঁতগুলো উকি দিয়ে ওর হাসির জৌলুস যেনো বাড়িয়ে দিচ্ছিলো। মাহতিম এতোক্ষন আলোচনার দিকে মন দিলেও হঠাৎ বাঁ-কান দিয়ে সুরেলা হাসির শব্দ শুনে খানিকটা চমকে গিয়ে তাকালো। যে দৃশ্যটা চোখের সামনে সে দেখতে পেলো, একটুও প্রস্তুত ছিলোনা সেটা দেখার জন্য। মাহতিম অপলক দৃষ্টিতে মেহনূরের হাসির দিকে তাকিয়ে রইলো, ড্যাবড্যাবে তাকিয়ে রইলো। এদিকে বুকের যন্ত্রটা ওর হাসির শব্দ শুনে ধুপধুপ ধুপধুপ করছিলো। মেহনূর ছোট্ট মাহদির গালদুটো ধরে ওর কপালে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দিলো, চুলগুলোতে নরম-চিকন আঙ্গুল দিয়ে এলোমেলো করে হাসি দিয়েই থাকলো। কিন্তু মাহদির সঙ্গে আর পুকুরঘাঁট দেখতে গেলোনা, মাহদি এ নিয়ে মন একটু খারাপ করলেও পরক্ষণে উদাস অবস্থা কাটিয়ে ফেললো। মেহনূরের পাশে সেই লাল ক্যানটা ওভাবেই রেখে মনের ভুলে চলে গেলো। মাহতিম দূর থেকে সব দেখলেও হঠাৎ সাবার ডাকে সাড়া দিতেই মুখ ঘুরিয়ে ফেললো। এদিকে মেহনূর গলা ভেজানোর ইচ্ছায় যখন বই বন্ধ করে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলো, তখনই তার পাশে একটা লাল ক্যান দেখতে পেলো। মাহদি যে ভুলবশত ক্যান রেখে গেছে সেটা ভালোভাবে বুঝতে পারলো। মাহতিম সাবার কথাটা মন দিয়ে শুনে নিজের অভিমত প্রকাশ করে আবারও মেহনূরের দিকে তাকানোর জন্য দৃষ্টি রাখলো। কিন্তু চোখের কোটর স্থির হয়ে অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে ধাপে-ধাপে পৌঁছাতে লাগলো যেনো! অজান্তেই ঠোঁট ফাঁক করতে-করতে চোয়াল ঝুলিয়ে তাকিয়ে রইলো। ক্যানের যেই জায়গাটায় মাহতিম ঠোঁট লাগিয়ে চুমুক দিয়েছিলো, সেই জায়গায় ঠোঁট বসিয়ে একটু-একটু করে কোক খাচ্ছে মেহনূর। ডানহাতে ক্যানটা পাঁচ আঙ্গুলে ধরে বামহাতে বইটা নিয়ে নিবিড়ভাবে পড়ছিলো। মেহনূরের অজ্ঞাতসারে দূরের একটা চেয়ারে বসা মাহতিম অদ্ভুত প্রাপ্তিতে হাসছিলো, সেই মনোরম প্রাপ্তিমূলক হাসিটা দেখলে মেহনূর লজ্জায় লাল টুম্পা হয়ে যেতো।
.
দুপুরের সেই কাঙ্ক্ষিত মূহুর্ত, কাঙ্ক্ষিত সময়টা চলে এলো। সবাই নিজেদের পোশাক-আশাক বিছানায় রেডি রেখে মাঠে জড়ো হলো। শানাজ এবার জোর-জবরদস্তি করে সুরাইয়াকে ডেকে আনলো। সুরাইয়া এসেই দেমাক দেখিয়ে বললো,
– আমি তোমাদের সাথে ফান করতে আসিনি। আমাকে দুটো ছবি তুলে দিবে তাতেই হবে। আমি একা-একাই নদীতে গোসল করতে পারবো।
ওর কথার ধরনটা কেউ পছন্দ না করলেও কেউ সেটা মুখের আভাসে একটুও প্রকাশ করলো না। সবাই হাসিমুখে নদীতে গোসল করার আনন্দ উদযাপন করতে সেদিকে দলবেঁধে ছুটলো। তৌফরা একদৌড় মেরে আগেই নদীতীরে চলে গেলো। তারপর চললো শানাজদের দল, শানাজদের পেছনে নীতিদের দল এবং সবশেষে ঢিলামির মতো পেছনে পরে গেলো মেহনূর। মেঠোপথটা ঘাস দ্বারা আবৃত, ডানে সারি-সারি বটগাছ সাজানো। বামপাশে একটা পুকুর শেষ হয়ে আরেকটা পুকুর শুরু হচ্ছে। সূয্যিমামা মাথার উপর দারুণ উত্তাপে ফেটে পরছে। সবাই দ্রুত পা চালিয়ে নদীতীরে চলে গেলেও মেহনূর চারপাশে প্রকৃতি দেখতে-দেখতে ধীরভাবে এগুতে লাগলো। গাছের পাতাগলো কালরাতের বৃষ্টির জন্য সতেজ লাগছে, রাস্তাগুলো মাটির সোঁদাগন্ধে আরো প্রাণচাঞ্চল্যে ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে। এদিকে শার্ট পড়ুয়া লম্বাটে মানুষটা পেছন-পেছন হেঁটে আসছে সেদিকে খেয়াল নেই ওর। মেহনূরের থেকে প্রায় সাত-আটহাত দূরে তখন মাহতিম হেঁটে আসছিলো। সাদা শাড়িটা দেহের সাথে মিলেমিশে আছে। সেই শাড়ির গোলাপী মোটা পাড়টা গোলাপের মতো চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। চুলগুলো সম্পূর্ণ বাঁদিকে টেনে সামনে এনে রেখেছে। গোলাপী ব্লাউজটা যেনো ফর্সাটে পিঠটা একদম আবৃত করে দিয়েছে। কোমরের দিকটাও জবুথবু করে ঢেকে রেখেছে। মাহতিম হাঁটতে-হাঁটতে পায়ের গতি একটু বাড়িয়ে মেহনূরের ডানপাশে চলে আসলো। মেহনূর হঠাৎ ডানদিকে কারোর উপস্থিতি পেয়ে তৎক্ষণাৎ চোখ তুলে মাহতিমকে দেখতে পেলো। কিন্তু মুখে কিছু না বলে আবার চোখ নামিয়ে মাটির দিকে দৃষ্টি ফেলে হাঁটতে লাগলো। মাহতিম কথা বলার ইচ্ছাটাকে চেপে না রেখে হালকা একটু কেশে নরম গলায় বললো,
– তোমরা কখন থেকে শাড়ি পরা ধরো? আমার মানে হলো, ঠিক কোন বয়সটা থেকে শাড়ির জন্য প্রেশার আসে?
মেহনূর প্রশ্নটা শুনে ঢোক গিলে নিলো, কিন্তু দৃষ্টি তুলে তাকালো না। নতমুখে ঠান্ডা সুরে শান্ত ভঙ্গিতে বললো,
– বয়স দশ হলেই শাড়ি পরতে হয়। কিন্তু কেউ চাইলে আরো ছোট থেকে অভ্যাস করতে পারে।
মাহতিম এমন উত্তর শুনে মনের ভেতর খচখচ করা প্রশ্নট ছুড়ে দিলো,
– তুমি কবে থেকে অভ্যাস করেছো তাহলে?
মেহনূর এবার নির্দ্বিধায় ভঙ্গিতে উত্তর দেয়,
– নয়ের মাঝামাঝিতে।
উত্তর শুনে কালো প্যান্টের পকেটে দুহাত পুড়ে দিলো মাহতিম। শব্দ করে নিঃশ্বাস ছেড়ে আরো একটা প্রশ্ন করে বসলো,
– তোমাদের এখানে তাহলে মেয়েদের বিয়ের বয়স কতো? বাল্যবিবাহের প্রথা আছে নাকি?
মেহনূর প্রথম দুটো প্রশ্ন সহজভাবে দিলেও এই প্রশ্ন শুনে মনের ভেতর মারাত্মক একটা কামড় দিলো। একসঙ্গে থেমে-থেমে দুটো ঢোক গিলে হাতদুটো মুচলেকা করতেই বললো,
– আছে।
মাহতিম আবারও তার একপেশে ভঙ্গির তীক্ষ্ম হাসিটা দিলো। এরপর কিছুসময় চুপ থেকে মেহনূরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে তাকালো। মেহনূর যে প্রচণ্ড উৎকন্ঠায় কাঁচুমাচু করচে সে ওর মুখ না দেখেও বলা দেওয়া যাচ্ছে। ওকে আরো বিপাকে ফেলতে মাহতিম ইচ্ছে করেই বললো,
– আমার মা তো ছোট বয়সী বউয়ের জন্য ডেসপারেট হয়ে গেছে। ভাবছে এখান থেকেই বউ বানিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু বুঝছো মেহনূর আফরিন, আমার ছোট বয়সী বউ নিয়ে সংসার করার রুচি নেই। এজন্যই মা পিছিয়ে আছে। নাহলে মা সম্ভবত তোমার বড়জন সাবাকে তুলে নিয়ে যেতো।
মাহতিম কথাটা শেষ করতেই মেহনূরের দিকে তাকালো। কিন্তু মেহনূর সেই যে চোখ-নত করে রেখেছে, সেই চোখ ভুলেও উপরের দিকে উঠলো না। মাহতিম ওর মনের অবস্থা বুঝার জন্য একটুও চেষ্টা করলো না। কালকে যে তিনদিনের শেষদিনটা রাত পোহালেই এসে যাবে, তখন সবকিছু খোলাখুলি ওকে বুঝিয়ে বলবে। আর কালকেই হবে সমস্ত ঘটনার শেষদিন। এরপর হয়তো এখান থেকে প্রস্ফুটিত ফুলটি নিজের বক্ষস্থলে আগলে রেখে আদরে-আদরে সঙ্গে নিয়ে যাবে, নয়তো ক্লেশযুক্ত মনে ভীষণকঠোর হয়ে আজকের এই দিনগুলো হামেশার জন্য মুছে ফেলবে। মাহতিম আনসারী সবই পারবে, শুধু কারোর মনের অধিকার জোরপূর্বক নিজের করে বেধেঁ রাখতে পারবেনা। দুজন হাঁটতে-হাঁটতে নদীতীরে এসে সবার সাথে যুক্ত হলো। মেহনূর শানাজদের সাথে মিলিত হয়ে নদীর অবগাহনে বহু বছর পর গা ভিজালো। ছেলেরা সাঁতারের রেস লাগিয়ে বেশ দূরে চলে গেল। মেয়েরা কোমর পযর্ন্ত পানিতে নেমে আনন্দ করতে লাগলো। কিন্তু মেহনূর নিজের চিন্তায় বিভোর হয়ে বারবার মুঠোভর্তি পানি তুলে সেই পানির দিকে তাকিয়ে রইলো। উদাস হয়ে যাওয়া মনটা আরো নিকষ কালো অন্ধকারের মতো ঘুটঘুটে ঠেকতে লাগলো। সবাই নদীতে গোসল সেরে রেসোর্টমুখী হলে মেহনূর কেনো জানি সবাইকে ফেলে আগে-আগে চলে গেলো। মাহদির বাঁদরামির জন্য মেহনূরের দিকে খেয়াল রাখতে না পারলেও রেসোর্টে পৌঁছে দেখলো মেহনূর ভেজা শরীরে আচঁলটা দিয়ে গা ঢেকে কটেজের সিড়িতে বসে আছে। সাবা-শানাজ-সুরাইয়া ওকে ‘ কি হয়েছে ‘ প্রশ্ন করলে মেহনূর জানায় ‘ বাড়ির কথা মনে পরছে, তাই দ্রুত এখান থেকে চলে যেতে চায়। ‘ শানাজ ওর মাথায় হাত বুঝিয়ে দিলো, সাবা ওকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বললো আর মাত্র কালকে দিনটাই আছে, তারপর সবাই এখান থেকে চলে যাচ্ছে। তিনবোন একসাথে ভেজা কাপড়ে কটেজে ঢুকলে সবাই নিজ-নিজ রুমে চলে যায়। শানাজরা কটেজে ঢুকে গেলেও মেহনূর পা থামিয়ে একপলকের জন্য পিছু ফিরে তাকালো। মাহতিমের আধ ভেজানো দরজার দিকে তাকিয়ে ছোট বন্ধ করে দৃষ্টি নামিয়ে রোমের দিকে চলে গেলো। কাল সবকিছুর শে-ষ-দি-ন।
#চলবে
#FABIYAH_MOMO