মন রাঙানোর পালা পর্ব-০২

0
8

#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_2
#ইয়াসমিন_খন্দকার

মেজর অভিক নিজের কক্ষের দরজা বন্ধ করে বসে আছে সকাল থেকে। রাহেলা খাতুন কয়েকবার এসে তাকে ডেকে গেছে কিন্তু সে দরজা খুলে নি। তখনকার ঘটনাটা সে এখনো ভুলতে পারে নি। এরইমধ্যে তার ফোনে একটা কল আসে। মেজর অভিক বিরক্ত হয়ে ফোনটা হাতে তুলে নিতেই দেখতে পায় তার বন্ধু আরাফাত কল দিয়েছে। আরাফাতও অভিকের সাথে সেনাবাহিনীতে কাজ করে কিন্তু তার পোস্টিং আলাদা যায়গায়। অভিক ফোনটা রিসিভ করতেই আরাফাত বলে,”কি রে অভিক? কি খবর তোর?”

“কি খবর চাস?”

“আরে..এত রেগে যাচ্ছিস কেন। মনে হচ্ছে তোর মন মেজাজ খুব একটা ভালো নেই। নিশ্চয়ই কিছু না কিছু হয়েছে। কি হয়েছে আমাকে খুলে বল তো।”

অভিক যতই রাগী ও গম্ভীর হোক আরাফাতের কাছে সে একদম খোলা বইয়ের মতো। ছোটবেলা থেকেই তাদের বন্ধুত্ব অনেক গভীর। তাই অভিক নিঃসংকোচে সকালে সুনীতিদের বাড়িতে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা আরাফাতকে সবিস্তারে জানালো। আরাফাত সব শুনে ঠাট্টার ছলে বলে,”কোন মেয়ের এত বড় বুকের পাটা যে আমার জাঁদরেল বন্ধুকে রিজেক্ট করে দেয়।”

“আরাফাত! একদম মজা করবি না।”

“আরে ভাই! কুল কুল! আমার কথাটা শোন মন দিয়ে, তোর কি ঐ মেয়েকে পছন্দ হয়েছিল নাকি? যদি হয়ে থাকে তো বল,প্রয়োজনে আমি ঐ মেয়েকে তুলে এনে তোর সাথে বিয়ে দিয়ে দেব।”

অভিক বলে,”ব্যাপারটা এমন না যে, আমার ঐ মেয়েটাকে পছন্দ হয়েছিল জন্য আমার এত রাগ হচ্ছে। তুই তো খুব ভালো করে জানিস, আমি প্রত্যাখান নিতে পারিনি। সেই স্কুল, কলেজ লাইফ এমনকি প্রফেশনাল লাইফে আসার পরেও তো আমাকে কতজন প্রেম নিবেদন করেছে। তাদের সবাইকে প্রত্যাখ্যান করে আমি অভ্যস্ত, এই প্রথম কোন মেয়ে আমায় এভাবে প্রত্যাখ্যান করল। এটা মেয়ে নেয়া আমার জন্য কষ্টসাধ্য।”

আরাফাত হেসে বলে,”ও এই ব্যাপার। তাই তো বলি তুই একটা মেয়ের জন্য খামোখা কেন এত রেগে যাবি। ব্যাপারটা তাহলে তোর ইগোতে লেগেছে।”

অভিক কোন উত্তর দেয় না। আরাফাত একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”ব্যাপারটা অদ্ভুত হলেও সত্যি, তোর মতো এত সুদর্শন, সুযোগ্য পাত্রকে একটা মেয়ে এভাবে প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে। আচ্ছা মেয়েটা কি খুব সুন্দরী?”

“সুন্দরী মাই ফুট। ভিতুর ডিম একটা। যতবার ঐ মেয়ের মুখোমুখি হয়েছি ততবার কেমন ভয়ার্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়েছে। আমাকে দেখেই শীতার্ত ব্যক্তির মতো কাপতে থাকে। মনে হয় যেন, আমি মানুষ না। কোন বাঘ অথবা ভাল্লুক।”

আরাফাত এপর্যায়ে খিলখিল করে হাসতে থাকে। অভিক বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে দেয়। অতঃপর রেগে মেঝেতে আরো কয়েকটা পুশআপ দিতে থাকে। পুশআপ দেওয়ার সাথে সাথে তার সুঠাম দেহের পেশিগুলো স্পষ্ট হচ্ছে। পেশিবহুল হাতে চাপ পড়ায় সকল শিরা-উপশিরা টের পাওয়া যাচ্ছে। যে কেউ এই অবস্থায় অভিককে দেখলে কোন গ্রীক দেবতা ভেবে ভুল করে বসবে!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সামিউল খন্দকার ড্রয়িংরুমে বসে তার স্ত্রী নয়না খন্দকারের সাথে বসে নিজেদের কন্যা সুনীতির ব্যাপারে কথা বলছিল। সামিউল খন্দকার চান যত দ্রুত সম্ভব নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে। এদিকে নয়না খন্দকার স্বামীর উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”মেয়েটাকে তুমি এত জলদি কেন বিয়ে দিতে চাইছ? ও তো সবেমাত্র অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ে। আর কয়েক বছর যাক। তারপর নাহয় বিয়ের কথা ভাবা যাবে।”

সামিউল খন্দকার বলেন,”তুমি বুঝতে পারছ না নয়না। আমার সমস্যাটা অন্য যায়গায়।”

“সেটাই তো জানতে চাচ্ছি, কি কারণে তুমি আমাদের একমাত্র মেয়েকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাইছ।”

“আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, সুনীতি যেই ভার্সিটিতে পড়ে সেই ভার্সিটির এক ছাত্রনেতার নজর পড়েছে ওর উপর। নেতা কম, গুণ্ডা বেশি বলা যায় ওকে। যেতে আসতে আমাদের মেয়েকে বিরক্ত করে। সুনীতি ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারে না। কারণ ঐ ছাত্রনেতা এর আগেও কিছু মেয়েকে এভাবে ডিস্টার্ব করেছে এবং তারা প্রতিবাদ করায় তাদের তুলে নিয়ে গিয়ে…”

নয়না খন্দকারের বুক ভয়ে কেপে ওঠে। এত ভয়ানক ঘটনা অথচ তিনি আগে এটা আন্দাজও করতে পারেন নি। নয়না খন্দকার ভয়ে ভয়ে বলেন,”ব্যাপারটা যদি এমন হয় তো আমি তোমাকে আর বাঁধা দিব না। আমার কাছে সবার আগে আমার মেয়ের সুরক্ষা।”

“এজন্যই তো চাইছি সুনীতিকে বিয়ে পড়িয়ে দিয়ে ওর পড়াশোনার ইতি টানতে। তাহলে এই ওকে আর সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না৷ আর এমনিতেও সুনীতিও পড়াশোনায় ওতোটা ভালো না আবার পড়ার তেমন আগ্রহও নেই ওর মাঝে।”

“হুম, ঠিক বলেছ তুমি। কিন্তু একটা ভালো পাত্রের খোঁজ পাওয়া তো এত সহজ না।”

এমন সময় কেউ বলে উঠল,”ঘরের কাছে ভালো পাত্র থাকতে তোমাদের বাইরে কেন খোঁজ করতে হবে?”

নয়না খন্দকার এবং সামিউল খন্দকার সামনের দিকের তাকাতেই অবাক হয়ে যান। সামিউল খন্দকারের বড় বোন সালমা খন্দকার সামনে দাঁড়িয়ে। তাকে দেখেই সামিউল খন্দকার উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,”আপা আপনি? এতদিন পর এলেন!”

সালমা বেগম এগিয়ে এসে মৃদু হেসে বলেন,”এসেছিলাম একটা বিশেষ কাজে। অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম, তোমাদের সাথে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলব। যখনই শুনতে পারলাম, তোমরা সুনীতির জন্য পাত্র খুঁজছ, তখন আর দেরি না করে চলে এলাম একটা সুন্দর প্রস্তাব নিয়ে।”

সামিউল খন্দকার ও নয়না খন্দকার একে অপরের দিকে অবাক চোখে তাকান। তারা বুঝতে পারেন না, সালমা খন্দকার কি প্রস্তাব দিতে চলেছে। সামিউল খন্দকার নিজের বোনকে জিজ্ঞেস করেন,”আপনি কোন প্রস্তাবের কথা বলতে এসেছেন আপা?”

সালমা খন্দকার মৃদু হেসে বলেন,”তোমরা তো জানোই, সুনীতিকে ছোট থেকেই আমি নিজের মেয়ের মতোই দেখি। আমার খুব সখ ছিল আমি একটা মেয়ের মা হবো৷ কিন্তু আল্লাহ আমার ঘরে দুটো রাজপুত্র পাঠালেন। তো সেইজন্য অনেক আগে থেকে আমার ইচ্ছা, সুনীতিকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাব তাও পার্নামেন্টলি। এজন্য আমি সুনীতির সাথে আমার বড় ছেলে সাজিদের বিয়ে দিতে চাই। তোমরা তো সাজিদের ব্যাপারে সবটাই জানো। ও একজন প্রতিষ্ঠিত ছেলে, একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। আমেরিকায় একটা বড় কোম্পানিতে চাকরি করে। কিন্তু দেশীয় সংস্কার একদম ভোলে নি। তাই তো ও আমাকে বলেছে, আমি যেই মেয়েকে পছন্দ করব ও সেই মেয়েকেই বিয়ে করবে। আর ছেলের এমন সম্মতি পেতেই আমি চলে এসেছি তোমাদের কাছে খুব সুন্দর একটা প্রস্তাব নিয়ে। আমি তোমাদের মেয়ে সুনীতিকে আমার বড় ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে চাই। তোমরা কি এই প্রস্তাবে রাজি আছ?”

সামিউল খন্দকার হেসে বলেন,”এতো অতি উত্তম প্রস্তাব। তুমি কি বলো নয়না?”

নয়না খন্দকারও খুশি হয়ে বলেন,”তা আর বলতে। সাজিদ অনেক ভালো ছেলে। ওর সাথে বিয়ে হলে আমাদের সুনীতিও অনেক সুখী হবে।”

“তাহলে তোমরা আমার প্রস্তাবে রাজি তো?”

নয়না খন্দকার দৌড়ে গিয়ে ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে এসে সালমা খন্দকারকে সোফায় বসিয়ে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে বলেন,”মিষ্টি মুখ করে নিন,আপা। আমরা এই প্রস্তাবে রাজি।”

সালমা খন্দকার ভীষণ খুশি হয়ে যান।

এদিকে সুনীতি সবেমাত্র ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরলো। এসেই নিজের বিয়ের কথা শুনতে লজ্জায় তার গাল লাল হয়ে গেলো। আরও বেশি লজ্জা পেল যখন শুনল তার বিয়ে হবে তার কাজিন সাজিদের সাথে। সুনীতিকে দেখে সামিউল খন্দকার তাকে ডাক দিলো। কিন্তু সুনীতি লজ্জায় নিজের ঘরের দিকে দৌড় দিলো। নিজের রুমে এসে বিছানায় গা ছেড়ে দিয়ে সাজিদের ভাবনায় মগ্ন হলো। ছোটবেলা থেকেই সুনীতি মনে মনে সাজিদকে পছন্দ করে। আর আজ তার স্বপ্নের পুরুষের তরফ থেকেই তার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসছে! ব্যাপারটা তার জন্য অনেক আনন্দের।

To be continue…