মন রাঙানোর পালা পর্ব-১৩

0
12

#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_13(বিয়ে স্পেশাল)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

সুনীতি চিৎকার করতে যাবে এমন সময় মন্টু তার মুখ চেপে ধরে। সুনীতি উম..উম করতে থাকে। মন্টু সুনীতির এই অবস্থা দেখে পৈশাচিক আনন্দ পেতে থাকে। সুনীতির মুখ আরো জোরে চেপে ধরে বলে,”কি..খুব উড়ার ইচ্ছা ছিল না? আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবে। সে বিয়ে তুমি যাকেই করো বাসর আমার সাথেই করতে হবে। বলেছিলাম না?”

সুনীতির চোখ বেয়ে জল পড়তে থাকে। মন্টু তাকে আরো জোরে চেপে ধরছিল নিজের কাছে। সামনে একজন ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছিল। মন্টু সুনীতির স্পর্শকাতর স্থানে হাত বোলাচ্ছিল। সুনীতির কাছে এই সময়টা ছিল অভিশাপের মতো।

এদিকে সুনীতিদের এলাকার কিছু মানুষ দেখে সুনীতিকে কেউ একটা গাড়িতে করে তুলে নিয়ে গেল। তারা কিছুক্ষণ গাড়িটার পেছনে দৌঁড়ায় কিন্তু তারা গাড়িটার নাগাল পাবার আগেই গাড়িটা চলে গেল নাগালের বাইরে। এরপর তারা এলাকায় এসে সবাইকে জানিয়ে দিলো ঘটনাটা। এ ঘটনা শুনে কেউ বা সমবেদনা জানালো, সুনীতির জন্য চিন্তা করল। তবে এমন মানুষেরও অভাব হলো না যারা সুনীতিকে নিয়ে সমালোচনা করল। একজন মহিলা তো মুখের উপরই বলে দিলেন,”ঐ মেয়ের চরিত্রের ঠিক আছে নাকি? যদি থাকত তাহলে এভাবে বিয়ের আসরে এসে বিয়ে ভাঙতো না। দেখো কোথায় কোন ছেলের সাথে ঢলাঢলি ছিল, সেই মনে হয় তুলে নিয়ে গেছে।”

সামিউল খন্দকার আর নয়না খন্দকারের কানে এই খবর পৌঁছাতেই তাদের দুশ্চিন্তা হতে লাগল। নয়না খন্দকার তো হাহাকার করে কাঁদতে লাগলেন। সামিউল জীবন ছুটলেন পুলিশ স্টেশনের দিকে। সাথে নিলেন এলাকার কিছু ছেলে-পেলেকে। তাঁর সন্দেহ মূলত মন্টুকে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সুনীতিকে নিয়ে নিজের বাড়ির সামনে আসলো মন্টু। তারপর গাড়ি থেকে টেনে নামালো সুনীতিকে৷ সুনীতি বলল,”এটা কোথায় নিয়ে এসেছ আমায়?”

সুনীতি লক্ষ্য করল এটা বেশ নিরিবিলি এলাকা। ফাঁকা স্থানে একটা ঘিঞ্জি বাড়ি। মন্টু একটা বিদঘুটে হেসে বলল,”এটা তো আমার বাড়ি। আজ এখানেই আমাদের বাসর হবে।”

বলেই সুনীতির দিকে এগোতে লাগল৷ সুনীতি মন্টুকে ধাক্কা দিয়ে সামনে এগোতে লাগল আর মন্টু বলে উঠল,”পালিয়ে লাভ নেই। পালানোর পথ খুঁজে পাবে না।”

বলেই সে সুনীতির পেছনে দৌঁড়াতে লাগল। সুনীতি দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে হঠাৎ কারো প্রশস্ত বুকের সামনে ধাক্কা খেল। একটু চোখ উঁচিয়ে সামনে তাকাতেই দেখতে পেল অনাকাঙ্ক্ষিত একটি মুখ। হতবাক হয়ে বলল,”আপনি!”

মন্টু সুনীতির পেছন পেছন ছুটে এসে একজন যুবককে তার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,”আবে কে তুই? আমার কাছ থেকে আমার শিকারকে কেড়ে নেওয়ার দুঃসাহস দেখাস না। এর পরিণাম ভালো হবে না।”

মেজর অভিক ভীষণ রেগে গেল। সুনীতিকে আগলে দাঁড়িয়ে বলল,”কি করবি তুই?”

মন্টু ক্ষিপ্তগতিতে এগোতে নিতেই অভিক একটি বন্দুক বের করে তার দিকে তাক করে বলল,”আর এক পাও নয়..”

মন্টু ভয়ে দাঁড়িয়ে গেল। অভিক সুনীতিকে বলল,”যাও, আমার গাড়িতে গিয়ে বসো।”

সুনীতি ভয়ে এগোতে পারল না। অভিক এবার বেশ রাগী কন্ঠে বলল,”কি বললাম শুনতে পারলে না? যাও গাড়িতে গিয়ে ওঠো।”

সুনীতি ধমক খেয়ে চমকে উঠল। সুর সুর করে গিয়ে গাড়িতে উঠল। এরপর অভিক মন্টুর দুই হাতে এবং পায়ে লক্ষ্য করে গুলি করে। যার ফলশ্রুতিতে মন্টু আহত হয়ে মাটিতে বসে পড়ে। অভিক বেশ আক্রোশ নিয়ে বলে,”এরপর কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকানোর আগে আজকের ঘটনাটা মনে রাখিস। একটু পরেই পুলিশ এসে তোকে তুলে নিয়ে যাবে।”

অভিক কথাটা বলতে না বলতেই পুলিশ চলে এলো। অভিক পুলিশ অফিসারকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,”এনাকে এরেস্ট করুন। ইনি একজন মেয়েকে রে*প করার চেষ্টা করছিল।”

“জ্বি, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করব। আপনাকে ধন্যবাদ মেজর।”

অভিক গুরুগম্ভীর মুখ নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। অতঃপর গাড়ি চালানো শুরু করে। সুনীতির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে৷ ভাগ্যিস সে দূর থেকে দেখেছিল সুনীতিকে জোরপূর্বক গাড়িতে তোলা হচ্ছে এবং এরপর গাড়িটাকে ফলো করে এখানে এসেছিল। নাহলে আর একটু দেরি করলে না জানি কত বড় বিপদ ঘটে যেত।

~~~~~~~~~~~~~~~~
খন্দকার বাড়িতে এলাকার সব মানুষ এসে জড়ো হয়েছে। সুনীতি খবরটা পাওয়ার পর থেকে নয়না খন্দকার কান্না করে চলেছে। সামিউল খন্দকার তাকে অনেকবার এই বলে আশ্বস্ত করেছেন যে তিনি ইতিমধ্যেই পুলিশকে জানিয়েছেন। কিন্তু মায়ের মন কি আর তাতে মানে?

তার উপর এলাকার নানান মানুষ নানান কথা বলছেন। একটু আগেই একজন বললেন,”জোয়ান একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে তো আর এমনি এমনি ছেড়ে দিবে না। নিশ্চয়ই ওর সাথে খারাপ কিছু করবে।”

এসব শুনে তিনি আরো ভেঙে পড়ছেন। এরইমধ্যে অভিক সুনীতিকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়। সুনীতিকে দেখামাত্র নয়না খন্দকার আর্তনাদ করে বলে ওঠেন,”মামনী!”

সুনীতি ছুটে গিয়ে নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে। নয়না খন্দকার বলতে থাকেন,”তুমি ঠিক আছ তো?”

“আমি একদম ঠিক আছি, মা।”

সামিউল খন্দকার বলেন,”এলাকার কিছু লোক নাকি দেখেছে তোমাকে কেউ গাড়িতে করে তুলে নিয়ে গেছিল।”

অভিক এগিয়ে এসে বললো,”আমি আপনাকে সব বলছি আঙ্কেল।”

এরপর সে এগিয়ে এসে সবিস্তারে সব জানায়। সব শুনে সামিউল খন্দকার আর নয়না খন্দকার আতকে ওঠেন। তবু তারা সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করেন কারণ বড় কোন ক্ষতি হয়নি।

তবে এতকিছুর মধ্যে এলাকার কিছু লোক বলা শুরু করল,”নিশ্চয়ই কোন কেচ্ছা ছিল নাহলে এমনি কেউ কেন তুলে নিয়ে যাবে?”

এসব কথা শুনে সুনীতির চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকে। একজন মহিলা বলল,”এই মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে এমনি এমনি ছেড়ে দিয়েছ ভাবছ? নিশ্চয়ই যা করার করে ফেলেছে!”

“আসলেই। আর যদি কিছু নাও করে তাও তো মেয়েটার জীবনে একটা কলংক হয়ে গেল। এমনিতেই গতকাল ওর বিয়ে ভেঙে গেছে তার উপর আজ এই ঘটনা। কোন ভদ্রঘরের ছেলে কি আর এমন মেয়েকে বিয়ে করবে?”

এসব কথা শুনে অভিক ভীষণ ক্ষেপে যায়। সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আপনাদের কথাবার্তা শুনে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। কোন যুগে আছেন আপনারা? আজকালকার দিনে কারো চিন্তাভাবনা এতটা নিচ হয় কিভাবে?”

“দেখো আমরা ভুল কিছু বলছি না। এই মেয়ের চরিত্রে যা কলংক লেগেছে তারপর আর এই মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে বলে মনে হয়না।”

নয়না খন্দকার এবার চেঁচিয়ে বলেন,”আপনাদের আমার মেয়েকে নিয়ে ভাবতে হবে না। প্রয়োজনে আমরা ওকে আজীবন নিজেদের কাছে রাখব। তবুও আপনারা এসব আর বলবেন না।”

অভিক বলে ওঠে,”সুনীতির বিয়ে ভালো ঘরেই হবে।”

একজন লোক টিটকারি করে বলে,”কে বিয়ে করবে? তুমি?”

“যদি বলি, হ্যাঁ, আমিই করব।”

সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অভিকের দিকে। অভিক সামিউল খন্দকারের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,”আঙ্কেল,আমি আপনার কাছে যদি সুনীতিকে বিয়ের প্রস্তাব দেই আপনি কি মানা করবেন?”

সামিউল খন্দকার তাৎক্ষণিক কোন কিছু বলতে পারলেন না। এমনিতেই অভিক তার পছন্দের ছেলে ছিল। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কিছু সময় নীরবে চলে যায়। এরমধ্যে অভিকের পরিবারের কাছে খবরটা পৌঁছে গেলে তারা ছুটে আসে। রাহেলা খাতুন এসেই বলতে থাকেন,”এসব আমি কি শুনছি অভিক, তুমি নাকি এই মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাইছ?”

অভিক বলল,”তুমিই তো বলেছিলে মা, যে আমি এবার ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার আগেই আমার বিয়ে দিতে চাও। আমি তো তোমার সেই স্বপ্নটাই পূরণ করছি। আর তাছাড়া সুনীতিকে তো তোমার পছন্দ ছিল।”

“কিন্তু তাই বলে…”

বলতে গিয়ে রাহেলা খাতুন থেমে যান। আহসান চৌধুরী এগিয়ে এসে অভিকের পিঠে হাত রেখে বলে,”তোমার সিদ্ধান্তকে আমি সমর্থন দিলাম।”

অতঃপর তিনি সামিউল খন্দকারকে বলেন,”আপনিও মত দিয়ে দিন খন্দকার সাহেব।”

সামিউল খন্দকার আর না করতে পারলেন না। তৎক্ষণাৎ কাজি ডাকা হলো। সুনীতি হঠাৎ করে বলে উঠল,”আমি এই বিয়ে করতে পারবো না, আমি কারো করুণার পাত্রী হতে চাইনা।”

অভিক সুনীতির সামনে এসে বলে,”আমি তোমাকে করুণা করছি না। আমার তোমাকে পছন্দ হয়েছে এ কারণেই বিয়েটা কর‍তে চাই।”

অভিকের এই কথার পর সুনীতি আর কিছু বলতে পারল না। নয়না খন্দকার এসে সুনীতির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,”বিয়েটা করে নেও, মামনী৷ অভিক যথেষ্ট দায়িত্ববান ছেলে। ও তোমায় ভালো রাখবে।”

অতঃপর কাজি ডেকে তাদের বিয়ে পড়ানো হল। সব ঘটনা বিরস মুখে দেখলেন রাহেলা খাতুন। তিনি এই বিয়েতে মোটেই খুশি নন!
To be continue…….