মন রাঙানোর পালা পর্ব-৩৮+৩৯

0
184

#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_38
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আরাফাত ও অহনাকে আলাদা কথা বলার সময় দেয়া হয়েছে। আরাফাত অহনাকে একটা রুমে নিয়ে এসেছে। এসেছে থেকে অহনা কোন কথা বলছে না। আরাফাত দীর্ঘ সময়ের নীরবতা ভেঙে বলে,”কি হলো ম্যাডান? কিছু বলছেন না যে?”

“কি বলবো? আমি বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। আপনার যদি কিছু বলার হয় তো বলুন।”

আরাফাত বুঝতে পারে অহনা তার উপর একটু রেগে আছে। সেও মুচকি হেসে বলে,”খুব শীঘ্রই তো আমাদের বিয়ে হতে চলেছে। তো আমি বলি কি, এসব আপনি, আজ্ঞে ছেড়ে আমরা কি তুমি বলতে পারি না একে অপরকে?”

“আপনার ইচ্ছা হলে আপনি আমাকে তুমি করে বলতেই পারেন। সেটা আপনার ব্যাপার৷ কিন্তু আমি এত সহজে কাউকে তুমি বলতে পারি না। কিছু সময় লাগবে।”

“বেশ। তোমার ইচ্ছা। তো যাইহোক, তোমার নাকি কি শপিং করার কথা?”

“সে আমি সময় মতো করে নেব।”

“ঠিক আছে,আমার নাম্বারটা নিয়ে রাখো। শপিং এর সময় কল দিলেই আমি চলে আসব।”

অহনা মাথা নাড়ায়। আরাফাত একটু থেমে বলে,”এই বিয়ে নিয়ে তোমার কোন আপত্তি নেই তো? আমার আসলে খুব তাড়াহুড়ো ছিল। আর তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে..”

“যাইহোক আমাকে আরো আগে জানাতে পারতেন। তাহলে আমি বিয়ে নিয়ে আর একটু প্রিপারেশন নিতে পারতাম। তবে অসুবিধা নেই। বিয়ে তো আজ নাহয় কাল একদিন করতেই হবে৷ পাত্র কে যখন পছন্দ তখন আমার আর কোন আপত্তি নেই।”

অহনার এহেন কথা শুনে আরাফাত মুচকি হাসে। অহনার হাসিমুখ দেখে আরাফাতও হেসে ফেলে।

~~~~~~~~~~~~~~~~
অহনা সুনীতিকে নিয়ে বসে গল্প করছিল৷ কথায় কথায় হঠাৎ সুনীতি বলে,”কিরে? তুই তো বিয়ে করে ফেলছিস। তাহলে তোর ঐ অনলাইন আশিকের কি খবর?”

অহনা কিছু একটা ভেবে বলে,”আরে কিসের আশিক? আমি তো ওর প্রতি কোন অনুভূতিই রাখিনি কখনো। ওর একতরফা অনুভূতি।”

“তাও তুই চাইলে ছেলেটাকে নিজের বিয়ের খবর জানাতে পারিস। তোর কথা শুনে বুঝলাম ছেলেটা আমাদের থেকে ২/১ বছরের জুনিয়র। তো ওর মনটা তো ভেঙে যাবে। তাই ওকে বল, যাতে আর তোর আশায় বসে না থাকে।”

“ও,,কথাটা ভুল বলিস নি তো। অনেকদিন থেকে আমি অনলাইনে ঢুকি না। আজ একটু ঢুকে দেখি কি অবস্থা। ছেলেটা ম্যাসেজ-ট্যাসেজ দিয়েছে নাকি।”

বলেই অহনা অনলাইনে প্রবেশ করে। ডাটা অন করতেই ফোনের নোটিফিকেশন আসতে থাকে। অহনা ম্যাসেঞ্জারে প্রবেশ করতেই দেখতে পায়, ছেলেটার অসংখ্য ম্যাসেজ। অহনা সেই ম্যাসেজগুলো দেখে, অহনাকে অফলাইন দেখে ছেলেটা একদম ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। অহনা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ছেলেটাকে ম্যাসেজ দিয়ে বলে,”ডিয়ার ছোট ভাই, তোমাকে অতি দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে আগামীকাল আমার বিয়ে। তোমার অনুভূতিকে আমি কখনো সিরিয়াসলি নেই নি৷ তবে এবার মনে হয় তোমাকে ব্যাপারটা জানানো উচিৎ। তাই জানিয়ে দিলাম। তুমি আর আমার আশায় বসে না থেকে নিজের জন্য অন্য কাউকে খুঁজে নাও।”

ম্যাসেজটা পাঠানোর সাথে সাথেই ছেলেটা সেটা সিন করে। অহনাকে সাথে সাথেই পাল্টা ম্যাসেজ দিয়ে বলে,”আপনি আমার সাথে মজা করছেন তাই না?”

“না, সত্যি।”

“আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই সিনিয়র। দয়া করে আমার এই রিকোয়েস্ট টা রাখুন। মনে করুন এটাই আমার আপনার কাছে প্রথম এবং শেষ চাওয়া দয়া করে না করবেন না।”

“কিন্তু,,”

“দয়া করে না বলবেন না। আমি আর কখনো আপনাকে ডিস্টার্ব করব না। শুধু আমার এই রিকোয়েস্টটা রাখুন।”

অহনা ছেলেটার করা ম্যাসেজগুলো সুনীতিকে দেখায়। সুনীতি অহনাকে বলে,”ছেলেটা যখন এত করে বলছে তখন দেখা করে নে। আমিও নাহয় যাব তোর সাথে। কোন ঝামেলা হবে না।”

“আচ্ছা।”

অহনা ছেলেটাকে ম্যাসেজ পাঠায়,”ঠিক আছে। আমি তোমার সাথে দেখা করতে প্রস্তুত। তুমি আমায় প্লেস এবং টাইম বলে দাও।”

ছেলেটা ফিরতি ম্যাসেজ করে বলে,”আজ বিকেল ৪ টায় মতিঝিলের কফি ক্যাফেতে সামনে চলে আসবেন। ওখানেই আমরা দেখা করব।”

“ঠিক আছে, আমি দেখা করতে প্রস্তুত।”

~~~~~~~~~~~~~~
বিকেল ৪ টায় অহনা সুনীতিকে নিয়ে উপস্থিত হয়ে গেছে মতিঝিলের কফি ক্যাফেতে। সেখানে উপস্থিত হয়ে অহনা বলে,’ছেলেটা কোথায়? এখনো আসে নি নাকি?’

অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে অহনা বিরক্ত হয়ে বলে,”আমি আর পারছি না৷ ছেলেটা শুধু শুধু এত দূরে আসতে বলল। অথচ ওর আসার কোন কথা নেই। চল এখান থেকে যাই আমরা।”

বলেই অহনা উঠে দাঁড়ায়। এমন সময় হঠাৎ করে আরাফাতের সাথে দেখা হয়ে যায়। আরাফাতের সাথে অভিকও ছিল। আরাফাত ও অভিক, অহনা এবং সুনীতি সবাই একে অপরকে দেখে অবাক হয়। আরাফাত বলে,”তোমরা এখানে?”

সুনীতি বলে,”আমি আর অহনা এখানে আড্ডা দিতে এসেছিলাম। কিন্তু আপনারা?”

অভিক বলে,”আমরাও তো এখানে আড্ডা দিতে এসেছি। এখানকার কফির অনেক সুনাম শুনেছিলাম। তাই আজ খেতে চলে এসেছি।”

আরাফাত বলে,”যাইহোক, তোমাদের সাথে এখানে দেখা হয়ে গিয়ে ভালোই হলো। অহনা তো শপিং করতে চাইছিল। তো চলো এখন আমরা এখান থেকেই সবাই শপিং এ চলে যাই।”

অহনা বলে,”গুড আইডিয়া।”

সবাই মিলে শপিং এর জন্য বেরিয়ে পড়ে। ক্যাফে থেকে বের হবার সময় হঠাৎ করে সুনীতিদের মুখোমুখি হয় সাগর। সুনীতি সাগরকে দেখে অবাক হয়ে বলে,”সাগর, তুমি?”

সাগর মৃদু হেসে বলে,”আরে সুনীতি আপু যে?! কেমন আছ?”

“আলহামদুলিল্লাহ, তুমি?”

“আছি কোনরকম। তা তোমরা এখানে?”

“কিছু জরুরি কাজে এসেছিলাম।”

সাগর কথা বলতে বলতে অহনার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকায়। অহনা তখন আরাফাতের দিকে তাকিয়ে ছিল৷ সুনীতি সাগরকে বলে,”এখন তো তোমাদেরই দিন। এইচএসসি পরীক্ষায় তো অটো পাশ পেয়ে গেলা। তো এডমিশন নিয়ে কি ভাবছ?”

সাগর সামান্য হেসে বলে,”আমার আর্মিতে জয়েন করার ইচ্ছা আছে।”

অভিক সাগরের পিঠ চাপড়ে বলে,”এই তো আমাদের ব্রেভ বয়। তোমার মতো নতুন তরুণদের অপেক্ষাতেই তো আছি আমরা। কি বলিস আরাফাত?”

আরাফাত হেসে বলে,”একদম।”

সাগরের কাছে আরাফাতের হাসিটা ভীষণ বিরক্তিকর লাগে। সুনীতি সাগরকে জিজ্ঞেস করে,”তুমি কি এখানে একা এসেছে?”

“না, আমার ফ্রেন্ড আবিরও এসেছে আমার সাথে।”

“ওহ, সাজিদ ভাইয়ের ছেলে কেমন আছে?”

“আছে ভালোই।”

“ঠিক আছে, আমরা এখন শপিং এ যাচ্ছি তো পরে কথা হবে।”

বলেই সুনীতি, অহনারা সবাই বেরিয়ে যায়। সাগর করুণ চোখে অহনার দিকেই তাকিয়ে থাকে। যতক্ষণ না পর্যন্ত সে দৃষ্টির অগোচরে চলে যায়। দৃষ্টিসীমার বাহিরে যেতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সাগরের বন্ধু আবির এসে সাগরকে বলে,”কি রে? তুই এখানে দাঁড়িয়ে যে? তোর মিস সিনিয়রের সাথে দেখা করবি না?”

সাগর মলিন হেসে বলে,”না।”

“কিন্তু কেন? তুই তো আগ্রহী ছিলি তার সাথে দেখা করার জন্য। তাকে কতটা ভালোবাসিস সেটা জানানোর জন্য!”

“সব ভালোবাসা কি পূর্ণতা পায় দোস্ত? কিছু ভালোবাসা তো অবহেলিতই থেকে যায়। তেমনি মনে কর, আমার এই একতরফা ভালোবাসার গল্পটাও অপূর্ণ।”

“এভাবে হার মেনে নিস না। তাকে একবার জানাতি তোর ভালোবাসার কথা।”

“আমি ভাগ্যে বিশ্বাসী দোস্ত। যদি ভাগ্যে থাকত আমি ওনাকে অবশ্যই পেতাম।”

“কার ভাগ্যে কি আছে সেটা তুই কিভাবে বুঝবি? মন থেকে চাইলে সব পাওয়া যায়।”

সাগর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ভাবতে থাকে ২ বছর আগের সেই দিনের কথা যেদিন সুনীতির সাথে প্রথম অহনাকে দেখেছিল। প্রথম দেখায় ভালোবাসা, তারপর কত পাগলামি। কতদিন লুকিয়ে লুকিয়ে ফলো করা, অনেক কষ্ট করে ফেসবুক আইডি খুঁজে পাওয়া৷ এত ভালোবাসা সব বৃথা গেল। তার ভালোবাসার মানুষ কাল অন্য কারো বধূ সাজবে। ভাবতেই সাগরের চোখে জল চলে এল।

To be continue…….

#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_39
#ইয়াসমিন_খন্দকার

সুনীতি ও অহনা আজ শপিং মলে এসে নিজেদের মনমতো শপিং করছে। দুই বান্ধবী মিলে যেন আজ ঠিকই করে নিয়েছে অভিক আর আরাফাতের পকেট একদম ফাকা করে দেবে। অভিকের অবশ্য কোন সমস্যা হচ্ছে না। সে সুনীতিকে পূর্ণ অনুমতি দিয়েছে যা পছন্দ হয় কিনে নিতে কিন্তু আরাফাত অহনাকে এত্ত এত্ত শপিং করতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। একটু হিসেবি ছেলে কিনা!

আরাফাত অহনার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আমাদের তো বিয়ে একবারই হবে, তুমি তো এত শপিং করছ যেন বিয়েটা ৭ বার হবে।”

অহনা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,”হ্যাঁ, করছি তো? আপনার কি সমস্যা? মুখটা বন্ধ রাখুন আর আমাকে শপিং করতে দিন। এখনো তো গায়ে হলুদের শাড়ি, বিয়ের লেহেঙ্গাই কেনা হলো না। আমি তো ঠিক করেছি সুন্দর গর্জিয়াস লেহেঙ্গা পড়েই বিয়ে করব। এছাড়াও কত কসমেটিকস, বিউটি প্রোডাক্ট, চুড়ি আরো কত কি নিতে হবে। এই নিন এই ব্যাগগুলো বহন করুন। এত কিছু বয়ে নিয়ে আমি আর শপিং করতে পারব না।”

আরাফাত বেচারা আর কি করবে। অগত্যা ব্যাগ হাতে নিয়ে অহনার পিছে পিছে ঘুরতে থাকে। নিজের জন্য লাল রঙের একটা ভীষণ সুন্দর লেহেঙ্গা পছন্দ করে অহনা বিয়েতে পড়ার জন্য। আরাফাতেরও লেহেঙ্গাটা বেশ ভালো লেগেছে। সব শপিং শেষে সবাই রওনা দেয়। অভিক এবং সুনীতি তাদের বাসাতে চলে যায়। আর আরাফাত অহনাকে তার বাসায় নামিয়ে দিয়ে নিজের বাসায় চলে যায়।

~~~~~~~~~~~
অহনার গায়ে হলুদের আয়োজন চলছে। সুনীতি বেশ সকাল সকাল চলে এসেছে। অহনার পাশেই থাকছে সে সবসময়। অভিকও চলে গেছে আরাফাতের বাসায়। অহনা তো এসব অনুষ্ঠান নিয়ে ভীষণ আনন্দিত। সে সকাল থেকে একটার পর সেলফি তুলছে। গায়ে হলুদের সাজ পুরো হতেই হলুদ শাড়ি পড়ে সেলফি তুলে ফেসবুকে ক্যাপশন দেয়, “In My Holod Ceremony” সাগরের নজরে আসে এই ছবিটি। ছবিটা তার বুকে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করে। আবির ও সাগর একসাথেই একটা ক্যান্টিনে বসে ছিল। আবির সাগরের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”দোস্ত, তুই এখনো ভেবে দেখ৷ এখনো কিন্তু সময় আছে। আমি বলছি, তুই শুধু একবার বল৷ আমি এমন কোন ব্যবস্থা করব যাতে এই বিয়েটা আটকে যায়।”

সাগর মলিন হেসে বলে,”দেখছিস না, অহনাকে কতটা হাসিখুশি লাগছে। আমি চাই না, ওর এই খুশিটা নষ্ট হোক। আমার ভালোবাসাটা নাহয় অপূর্ণই থাকুক। ওর খুশিতেই আমার খুশি।”

“তুই যত যাই বলিস, তোকে আমি এমন দেবদাস বেশে দেখতে পারব না। তুই কিছু করবি না তো? বেশ তোকে কিছু করতেও হবে না। যা করার এবার আমিই করবো তুই শুধু দেখে যা।”

বলেই আবির উঠে দাঁড়িয়ে কাউকে একটা ফোন করতে করতে কোথাও একটা চলে যায়।

সাগর আবিরের এহেন কথায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। সে বুঝতে পারে আবিরের মাথায় কিছু একটা চলছে।

অহনার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে৷ তাকে মাঝখানে বসিয়ে তার গায়ে হলুদ মাখানো চলছে। সুনীতিও কম না। সে নিজে উৎসাহী হয়ে অহনার গায়ে হলুদ মাখাচ্ছে। অহনা বলছে,”দোস্ত, একটু কম মাখা। রাতে তো আবার মেকআপ করতে হবে।”

এভাবেই হাসি মজা খুনশুটি চলতে থাকে।

হলুদ পর্ব শেষ হতেই অহনা নিজের রুমে এসে সেলফি তুলতে থাকে। এমন সময় সুনীতি তার রুমে এসে বলে,”ঐ, আরাফাত ভাইয়া কখন থেকে তোকে কল করছে তুই রিসিভ করছিস না কেন?”

অহনা বলে,”দেখতে পাচ্ছিস না, আমি তো সেলফি তোলায় ব্যস্ত আছি। এখন আমি কথা বলতে পারব না। আগে সেলফি তোলা শেষ হোক তারপর।”

অহনার এহেন কথা শুনে সুনীতি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”এই সেলফি পাগল মেয়েকে নিয়ে আর পারি না! দেখা যাবে বিয়ের আসরের কবুল বলার আগে কাজির সাথে সেলফি তুলতে চাইবে!”

সুনীতির কথা শুনে অহনা বলে ওঠে,”সে আর বলতে, সেলফি তুলব আর ক্যাপশনে দিব, সেলফি উইথ কাজি দাদু।”

অহনার কথা শুনে সুনীতি হেসে ফেলে। এরইমধ্যে অহনার ফোন আবারো বেজে ওঠে। সে আরাফাতের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সুনীতি তাদের কথা বলার স্পেস দেয়ার জন্য রুম থেকে বেরিয়ে আসে। একটু সামনের দিকে আগাতেই কেউ একজন সুনীতির হাত ধরে টান দেয়। তারপর তাকে একটা ফাঁকা যায়গায় নিয়ে যায়। সুনীতি তো ভয়ই পেয়ে গেছিল কিন্তু যখন দেখে এটা আর কেউ নয় অভিক তখন স্বস্তি পায়। অভিকের দুহাতে ছিল হলুদ। অভিক এই হলুদ সুনীতির গালে মাখিয়ে দিয়ে বলে,”আমাদের তো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হয়নি,,অনেক ইচ্ছা ছিল তোমাকে হলুদে কেমন লাগে সেটা দেখার। সেই ইচ্ছাটা পূরণ করে নিলাম।”

সুনীতিও নিজের হলুদে রাঙা গাল অভিকের গালের সাথে ঘষে বলে,”এখন পরিপূর্ণ লাগছে। কি বলেন?”

অভিক খুব সুন্দর একটা হাসি উপহার দিয়ে বলে,”ইচ্ছা তো করছে আরাফাতের সাথে সাথে আমিও বিয়েটা করে নেই।”

সুনীতি বলে,”তো বারণ করেছে কে?! এখানে আশেপাশে কত সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে ঘুরছে তাদের কাউকেই পছন্দ করে বিয়েটা করে নিন।”

অভিক মশকরা করে বলে,”তুমি কি আমাকে নিজের সতীন আনার পরামর্শ দিচ্ছ নাকি? পরে কিন্তু কিছু বলতে পারবে না। আমি কিন্তু সত্যিই..”

সুনীতি অভিকের শার্টের কলার চেপে ধরে বলে,”এমন কিছু করার চিন্তাও করবেন না। নাহলে আমি আপনার এমন হাল করব যে..”

অভিক সুনীতিকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে তার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে গভীর চুম্বরে মত্ত হয়। একে অপরের মাঝেই যেন হারিয়ে যায় দুজনে। একটা ফাঁকা ঘর দেখে সেখানে ঢুকে পড়ে। অভিক দরজাটা লাগিয়ে দেয়। অতঃপর রুমের বাতিটা অফ করে দেয়। তারপর নিজের শার্টের বোতাম খোলা শুরু করে দেয়। সুনীতিকে ধাক্কা মে*রে বিছানায় ফেলে দেয়। অতঃপর তার উপরে উঠে পড়ে। সুনীতির বুক থেকে ওড়না সরিয়ে সেখানে ডুব দেয়। ধীরে ধীরে তাকে অনাবৃত করে। সুনীতির উপর ধীরে ধীরে চড়াও হতে থাকে। সুনীতি শীৎকার করতে করতে ক্রমশ সুখের সাগরে হারিয়ে যেতে থাকে।

এক ঘন্টা পর, দুজনেই গোসল করে রুম থেকে বের হয়।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিয়ের প্রহর যত ঘনিয়ে আসছে ততই যেন সবার আনন্দের মাত্রা বাড়ছে। আরাফাত বরবেশে তৈরি হয়ে নিচ্ছে। তাকে সাহায্য করছে অভিকসহ তার আরো কিছু বন্ধু। আরাফাতকে তৈরি করতে করতে অভিক বলে,”বিয়ের পর তোর নেক্সট প্ল্যান কি? কালই তো আমাদের আবার ক্যাম্পে ফিরতে হবে!”

আরাফাত হেসে বলে,”আমার তো এবারের প্ল্যান অহনাকে কালকেই নিজের সাথে নিয়ে যাব। আজ আগে বিয়ে, বাসর করে নেই।”

সবাই হেসে ফেলে আরাফাতের কথা শুনে।

অন্যদিকে অহনারও বিয়ের সাজ চলছে৷ তাকে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে লোক এসেছে। সুনীতিও আশে তার পাশে। লালরঙা শাড়িটা পড়তেই অহনার সৌন্দর্য যেন দ্বিগুন বেডে যায়, সাথে আবার বাহারি মেকাপ। সুনীতি অহনাকে দেখে বলে ওঠে,”আজ তো আরাফাত ভাই তোকে দেখে পাগল হয়ে যাবে রে! এই সাজেই তো তুই তার মন রাঙিয়ে ফেলবি।”

অহনা হঠাৎ যেন কি মনে করে সুনীতির হাত শক্ত করে ধরে বলে,”সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে হয়ে যাবে তো? আমার মন কেন জানি ভীষণ কু ডাকছে!”

সুনীতি অহনাকে অভয় দিয়ে বলে,”তুই এত চিন্তা করছিস কেন? দেখবি সবকিছু ঠিকঠাকই হবে৷ আজ কত খুশির দিন আর তুই ফালতু চিন্তা করছিস।”

“কেন জানি না আমার মনে অজানা ভয় কাজ করছে ”

“কিছু হবে না। এসব ফালতু টেনশন বাদ দে। এত চিন্তা করিস জন্য মনে খারাপ চিন্তা ঘোরে!”

~~~~~~~~~~
বিয়ের সময় হয়ে এসেছে৷ আরাফাত বিয়ের আসরে উপস্থিতও হয়ে গেছে। কাজিও এসে গেছে। কিন্তু পাত্রী মানে অহনার আসার কোন খোঁজ নেই। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর আরাফাতসহ পাত্রপক্ষ বিরক্ত হয়ে যায়। অহনার মা সুনীতির উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”তুমি গিয়ে দেখো তো অহনার এত দেরি হচ্ছে কেন। ওনারা আর কত অপেক্ষা করবেন।”

“আচ্ছা, আন্টি।”

বলেই সুনীতি চলে যায়। ১০ মিনিট পর হন্তদন্ত হয়ে ফিরে এসে বলে,”আমি ওর রুম তছনছ করে খুঁজেছি, আশেপাশেও দেখেছি কিন্তু ও কোথাও নেই আন্টি!”

আরাফাত বসা থেকে উঠে বসে বলে,”সেকি! তাহলে ও কোথায় গেল? আবার কোন বিপদ হলো নাতো?!”

বিয়েবাড়িতে এটা নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়। আরাফাত ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়। অহনার মাও কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।

To be continue…….