#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_10
#ইয়াসমিন_খন্দকার
সারজিস অভীক্ষাকে দেখে মনে মনে বলে,”ভাগ্যে কি তাহলে এটাই লেখা ছিল! যে কারণে আমার অতীতকে এনে বর্তমানে দাড় করালো!”
এদিকে অভীক্ষা কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে না৷ সে শুধু অবাক চোখে সারজিসকে দেখেই যায়৷ এই লোকের সাথেই তো তার দূর্ঘটনাবশত বিয়ে হয়েছিল অথচ আজ অন্য কারো সাথে তার এনগেজমেন্ট। অভীক্ষা আর বেশি কিছু ভাবতে পারে না। বারবার একটাই কথা মনে ভেসে ওঠে,”যা হয়েছিল তার কোন ভিত্তি নেই। আমরা কেউই মন থেকে কবুল বলিনি। ওটা কোন বিয়েই ছিল না। তাই ওনার অধিকার আছে নিজের জীবন নতুন করে শুরু করার!”
ইভা সারজিসের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তুমি এখনো ওখানে দাঁড়িয়ে আছে কেন? এদিকে এসো।”
অভীক্ষা সারজিসের থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। সারজিসও অভীক্ষাকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে গিয়ে আমায়রার পাশে দাঁড়ায়। ইভা তাদের দুজনকে একসাথে দেখে বলে,”তোমাদের দুজনকে একসাথে কি সুন্দর মানিয়েছে। একদম মেইড ফর ইচ আদার।”
আমায়রার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কিন্তু সারজিস গম্ভীর মুখশ্রী করে দাঁড়িয়ে আছে। অভীক্ষার কেন জানি সারজিস ও আমায়রাকে এভাবে একসাথে দেখে খুব একটা ভালো লাগে না। ভেতরে ভেতরে অন্যরকম একটা অনুভূতি হতে থাকে। সে মনে মনে বলে,”আমার এমনটা লাগছে কেন? এই বিয়ের তো কোন মূল্য নেই আমার কাছে। তাহলে ওদের একসাথে দেখে খারাপ লাগছে কেন?”
ইভা সারজিসের দিকে একটা আংটি বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”নাও, এটা আমায়রাকে পরিয়ে দাও।”
সারজিস কাপা কাপা হাতে আংটিটা হাতে নেয়। আংটি হাতে নিয়েই সে অভীক্ষার দিকে তাকায়। অভীক্ষাও সারজিসের দিকেই তাকিয়ে থাকায় দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়৷ অভীক্ষা সাথে সাথে নিজের চোখ সরিয়ে নেয়। চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে,”না, আমি ভুল ভাবছি। হয়তো অতীতের ঘটনাটা নিয়ে আমার মনে খুতখুতানি থেকে গেছে তাই এমন মনে হচ্ছে। কিন্তু আমার এসব ভাবা উচিৎ নয়। আমায়রা তো বলল, ও সারজিসকে অনেক ভালোবাসে৷ সারজিসও হয়তোবা আমায়রাকে ভালোবাসে। ওরা একে অপরের সাথে সুখী হোক, ব্যস এটাই আমার চাওয়া।”
সারজিস আংটিটা নিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল। এদিকে আমায়রা হাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করছিল। ইভা তাড়া দিয়ে বলে,”দাঁড়িয়ে আছ কেন? আমায়রা তো অনেকক্ষণ থেকে হাতটা বাড়িয়ে আছে। জলদি আংটিটা পড়িয়ে দাও।”
সারজিস এতক্ষণ অভীক্ষার ভাবনাতেই ডুবে ছিল। ইভার কথায় সেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অভীক্ষার তো কোন হেলদোলই নেয়। তাহলে সে কেন এত ভাবছে অভীক্ষাকে নিয়ে? এই বিয়ে তো মূল্যহীন। এমন ভাবনা থেকেই সারজিস আংটিটা আমায়রাকে পড়িয়ে দিয়ে উদ্যত হয়। কিন্তু ভুলবশত তার হাত থেকে আংটিটা পড়ে যায় এবং ফ্লোরে গড়াতে গড়াতে অভীক্ষার পায়ের কাছে চলে যায়। এই দৃশ্য দেখে সবাই তাজ্জব বনে যায়।
লোকজন বলাবলি করতে থাকে,”এ কি অনাসৃষ্টি কাণ্ড ঘটে গেল!”
ইভা ব্যাপারটা সামলানোর জন্য বলে,”এমন দূর্ঘটনা তো ঘটতেই পারে। আমি এখনই আংটিটা নিয়ে আসছি।”
অভীক্ষা আংটিটা তুলে নেয়। ইভা তার সামনে আসতেই আংটিটা তার হাতে দেয়। ইভা আংটিটা নিয়ে সারজিসের হাতে দিয়ে বলে,”নেও, এবার সাবধানে এটা আমায়রাকে পড়িয়ে দাও।”
এদিকে সারজিস মনে মনে ভাবছে,”এই আংটি হয়তো তার আসল মালকিনের কাছেই গেছিল কিন্তু সে যে এর মূল্য বুঝল না।”
এহেন ভাবনা থেকেই আংটিটা আমায়রার অনামিকা আঙুলে পড়িয়ে দেয় সারজিস। অতঃপর আমায়রাও সারজিসকে একটা আংটি পড়িয়ে দেয়। এই দৃশ্য দেখে অভীক্ষার এবার চাপা কষ্ট অনুভব হয়। সে জানে না, কেন নিজের অনুভূতির সাথে লড়াই করতে পারছে না।
অহনা এভাবে আংটি পড়ে যাওয়া দেখে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ে। সে বলে,”এটা কোন অশুভ লক্ষণ নয় তো?”
সাগর বলে,”অহনা, তুমিও না। শুধু শুধু এসব ভাবছ। এমন কিছুই না।”
সুনীতি পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে বলে,”আসলেই। এত চিন্তা করার কিছু নেই। এটা একটা দূর্ঘটনা ছিল। তুই এটা নিয়ে এত ভাবিস না।”
“তোমরা যাই বলো, আমার মন মানতে চাইছে না। বিয়েটা ঠিক ভাবে মিটে গেলে বাঁচি।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
এনগেজমেন্ট পর্ব মিটে যেতেই সারজিস নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। তার মাথা থেকে এখনো অভীক্ষার ভাবনা যাচ্ছে না। সারজিস নিজের চুল টেনে ধরে বলে,”কেন? কেন? কেন আমায় এমন দ্বিধার মধ্যে পড়তে হলো? আমি তো অতীতের ঐ ঘটনাকে ভুলে সামনের পথে পা বাড়ানোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম তাহলে ভাগ্য কেন আবার আমার সামনে আমার অতীতকে দাঁড় করিয়ে দিলো?”
সারজিস কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে বলে,”নাহ, আমার এই ব্যাপারে অভীক্ষার সাথে খোলামেলা কথা বলতে হবে। আমাকে জানতেই হবে, ও এই সম্পর্কটা নিয়ে কি ভাবছে। যদি ও এটাকে কোন মূল্য দিতে না চায় তাহলে আমি ওকে ভুলে আমায়রাকে বিয়ে করতে প্রস্তুত। কিন্তু ও যদি এমনটা না চায় তো,,,আমি কিছুতেই আমায়রাকে বিয়ে করতে পারবো না। কারণ আমায়রার জন্য আমার মনে কোন অনুভূতি নেই, ওকে শুধু আমি পরিবারের সবার কথা মেনে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি আর অভীক্ষার প্রতি,,,”
সারজিস চোখ বন্ধ করে অভীক্ষার সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো মনে করে।
“ওর প্রতি আমার কিছু একটা অনুভূতি আছে। ওর পাশে থাকলে আমি একটা অদ্ভুত কানেকশন ফিল করি। আমি জানি না, এই অনুভূতির কি নাম দিব কিন্তু,,আমি অসহায়।”
অভীক্ষা বেজার মনে খন্দকার বাড়িতে ঘোরাঘুরি করছিল। সুনীতি তো অহনার সাথে গল্পে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু রাহেলা খাতুন অভীক্ষার এই অন্যমনস্কতা লক্ষ্য করেন। তিনি অভীক্ষার সামনে এসে বলেন,”কি হয়েছে সখী? তোমায় এমন অন্যমনস্ক লাগছে কেন? কিছু কি হয়েছে?”
“না, কিছুনা।”
অভীক্ষা কাউকেই ঐ ব্যাপারে কিছু বলতে চায়না। তাই সে ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখে। রাহেলা খাতুনকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। কিন্তু রাহেলা খাতুনও বুঝতে পারেন ব্যাপারটা এত সাধারণ না। কিছু তো একটা হয়েছেই।
অভীক্ষা অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কারো একটা সহিত ধাক্কা খায়। “সরি” বলে সামনে তাকাতেই হতবাক হয়ে যায়। কারণ তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল মুকিত চৌধুরী। মুকিত অভীক্ষাকে দেখেই বাকা হাসি দিয়ে বলে,”তাহলে আমাদের আবারো দেখা হয়েই গেল।”
“তুমি,,মানে আপনি কি করছেন এখানে?”
“তুমি যেই কারণে এখানে এসেছ ঠিক সেই কারণেই এসেছি। আমার ইনভাইটেশন ছিল। সারজিসের বাবা সাজিদ খন্দকার হলো আমার বিজনেস পার্টনার।”
অভীক্ষা মুকিতের সাথে কথা বাড়াতে চায়না৷ তাই সে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চায়। কিন্তু মুকিত হঠাৎ তার হাত টেনে ধরে। অভীক্ষা বলে,”আমার হাতটা ছাড়!”
“ছাড়বোনা? কি করবে?”
“মুকিত, আমি বলছি আমার লাগছে, হাতটা ছেড়ে দাও।”
“লাগুক, লাগাই উচিৎ। এত সেজেগুজে কেন এসেছ এখানে? যাতে কোন বড়লোক ছেলে পটাতে পার?”
“মাইন্ড ইউর ল্যাঙুয়েজ!”
“তোমার মতো মেয়ের প্রতি এর থেকে আর কি সুন্দর ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করব? টাকার জন্যই তো আমায় ছেড়ে গেছিলে তাইনা? আমার বাবা তোমায় কত টাকা দিয়েছিল আমার জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য?”
“এসব তুমি কি বলছ? আমি মোটেই টাকা নেইনি তোমার বাবার থেকে।”
“চুপ, এসব নাটক আমার সামনে চলবে না। মা আমাকে সবটা বলেছে। আমার তো এটা ভেবেই ঘৃণা হচ্ছে যে, তোমার মতো এত লোভী একটা মেয়েকে আমি ভালোবেসেছিলাম।”
অভীক্ষার চোখে জল চলে আসে। এরইমধ্যে সেখানে হঠাৎ করে সারজিস এসে উপস্থিত হয়। মুকিতকে এভাবে অভীক্ষার হাত ধরে থাকতে দেখে তার ভীষণ রাগ হয়। সে বলে,”হোয়াট দা হেল ইজ গোয়িং অন?”
মুকিত অভীক্ষার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে,”আরে! সারজিস যে। ও আমার পূর্বপরিচিত তাই একটু আলাপ করছিলাম।”
অভীক্ষা নিজের চোখের জল মুছে মুকিতকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,”দেখবে, তুমি একদিন এসবকিছুর জন্য অনেক পস্তাবে। কিন্তু সেইদিন আর তোমার কিছু করার থাকবে না।”
বলেই সে দৌড়ে চলে আসে। মুকিতের এই ব্যবহার আজ তাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে।
To be continue……