#মরুর_বুকে_পুষ্পপরাগ
পর্ব (১০৮)
” এই বাচ্চার জন্য যদি আগের মতো আমাকে দূরে সরিয়ে দেও বা তোমাকে তীব্র যন্ত্রণায় ভুগতে দেখি তাহলে সত্যি বাচ্চা নষ্ট হওয়ার ঔষধটা খায়িয়ে দিব। এমনভাবে খাওয়াব তুমি টেরও পাবে না। তাই এতদূর ভেব না। তখন কষ্টটা দ্বিগুণ হবে। ”
স্বর্ণলতা আঁতকে ওঠল। মুখ থেকে স্বামীর রুক্ষ, ঠান্ডা আঙুলটা সরাল তাড়াহুড়ায়। অতঃপর বিপন্ন কণ্ঠে বলল,
” অবুঝের মতো আচরণ করছেন কেন? এই সময়ে কম-বেশি সমস্যা তো হবেই। সবার হয়, আমারও হবে। আগের বার জানা ছিল না, তাই একটু ঝামেলা হয়ে গেছে। এবার তো দুজনেই জানি। ঠিক সয়ে নিব। বেশি কষ্ট হবে না। আল্লাহর রহমতে দুর্ঘটনাও ঘটবে না। বিশ্বাস রাখুন। ”
মুনছুর সাখাওয়াত স্ত্রীর ঠোঁট থেকে আঙুল সরিয়ে নিলেও হাতটা সরায়নি। গালের কাছে চেপে ছিল। এবার যেন আরও গাঢ়ভাবে চেপে ধরল কোমল গালটা। মুখটা আরেকটু এগিয়ে এনে পূর্বের মতোই দৃঢ়ভাবে জানাল,
” আমি সয়তে পারব না। তোমাকেও সয়তে দেখতে পারব না। ”
হঠাৎ করে চোখের তারাদ্বয় চঞ্চল হয়ে ওঠল। পুরো মুখটায় এলোমেলোভাবে দৃষ্টি বুলাল। তারপরে আচমকা দুই হাতে মুখটা চেপে ধরল। ঠোঁটের দুই পাশে দুই হাতের বৃদ্ধা আঙুল বুলিয়ে কাতর স্বরে পুনরায় বলল,
” আমার মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছ না কেন, স্বর্ণলতা? তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই। ভাবনাটা মাথায় আসার পর থেকে আমি কতটা অসহায় বোধ করি, এটা কি প্রতিদিন বুঝাতে হবে? ”
” আমি তো আপনার কাছেই আছি। কোথাও যাচ্ছি না। ”
” যদি চলে যাও? আমি সামান্য ঝুঁকিও নিতে পারব না। আগের বার দাদিজান ছিল। তাই দূরে থেকেও আমি নিশ্চিন্ত ছিলাম। কিন্তু এবার! স্বর্ণলতা, আমি কি ব্যবসা বন্ধ করে দিন-রাত তোমার কাছে পড়ে থাকব? বলো, তুমি কি এমনটায় চাও? ”
স্বর্ণলতা সবেগে দ্রুত মাথা নাড়ল দু’পাশে। ঘন ঘন পলক ফেলে জানাল,
” একদমই না। ”
” তাহলে তোমার দেখাশোনা করবে কে? ”
” কলি….”
শুধু নামটায় উচ্চারণ হতে পারল। সম্মানিত সম্বোধনটা যুক্ত হওয়ার পূর্বেই মুনছুর সাখাওয়াত বলল,
” ঝি’দের তুমি ভরসা করতে পার। আমি পারি না। ওদের কাছে তোমাকে রেখে গেলে আমার দুশ্চিন্তা আরও বাড়বে। ”
স্বর্ণলতা জবাবে কী বলবে বুঝতে পারছিল না। স্বামীর কাতরপূর্ণ চোখজোড়ায় চেয়ে থাকে কতক্ষণ। মানুষটা তাকে এতটায় ভালোবাসে, যার পরিমাণ সে কল্পনায়ও মাপতে পারে না। এই মাপতে না পারার ভালোবাসার জন্যই বোধ হয় স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা করতে পারছে না। বোধবুদ্ধিও লোপ পাচ্ছে। নাহলে পৃথিবীতে এমন কোনো পুরুষ আছে, যে বউকে হারানোর ভয়ে সন্তান চায় না! একমাত্র সন্তানই যে পারবে, তার বংশ বৃদ্ধি করতে। সংসারে আপন মানুষের সংখ্যা বাড়াতে। স্বর্ণলতা থেকেও যে অসহায় বোধটা কমাতে পারছে না। পেটের বাচ্চাটা পৃথিবীতে জন্মানো মাত্রই সেই অসহায়ত্ব কমে যাবে।
মুনছুর সাখাওয়াতের দৃষ্টি জোড়া স্থির হলো স্বর্ণলতার ঠোঁটে। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি এসে পড়ল নরম ঠোঁট জোড়ায়। কালচে স্থানটায় আলতো স্পর্শ করে সুধাল,
” ব্যথা করছে? ”
স্বর্ণলতার ধ্যানমগ্নতা পুরোপুরি কাটেনি। প্রশ্নটা কানে প্রবেশ করলেও বুঝে উঠতে পারল না। তাই জিজ্ঞাস্য ভাব ফুটিয়ে আওয়াজ দিল,
” হুম? ”
” ঠোঁটে ব্যথা করছে? ”
” হুম। অল্প। ”
” ইচ্ছে করে ব্যথা দিইনি। হঠাৎ দূরে সরিয়ে দিচ্ছিলে, আমি মানতে পারিনি। এত রাগ উঠে গেল! আমি বুঝতে পারছিলাম, ওটা অভিমানের কথা। তারপরেও মানতে পারছিলাম না। মন-মেজাজ তো গতকাল সন্ধ্যা থেকেই খারাপ হলো। দুজনের মতামত সবসময় এক হবে, এরকম কোনো নিয়ম আছে, বলো? ভিন্ন হতেই পারে। তাই বলে ওভাবে ছুটে গিয়ে দরজা বন্ধ করে পাগলামি করতে হবে? ”
স্বর্ণলতা দৃষ্টি নামিয়ে ফেলল। মুখটা তখনও স্বামীর দুই হাতের মাঝেই। নাহলে দৃষ্টির সাথে মুখটাও নেমে যেত! মুনছুর সাখাওয়াতের স্বীকারোক্তি শেষ হয়নি। আবারও বলতে লাগল,
” জানতাম না বদঅভ্যেসটা এখনও রয়ে গেছে। আমি তো ভুলেই গেছিলাম। আচমকা ঘটনাটা ঘটিয়ে ফেললে যে, আমার নিজের সাথে তোমাকেও সামলাতে হচ্ছিল। তোমার কাছে পৌঁছাতে কম খাটুনি তো যায়নি। তারপরে যদি কাছে না টেনে দূরে ঠেলে দাও, সহ্য হয়? একটু নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলাম। মাফ করে দাও। ”
” মাফ চাচ্ছেন কেন? বললেন তো, ইচ্ছে করে দেননি। ভুল তো আমারও হয়েছে। আপনাকে বুঝতে পারিনি। উল্টো আরও রাগিয়ে দিয়েছি। ”
” তোমার বুকে যখন মাথা রেখেছিলাম তখনই মাফ করে দিয়েছি। কিন্তু আমাকে মাফ করো না। শাস্তি দাও। নাহলে আবারও রাক্ষস হয়ে যেতে পারি। ”
” হবেন না। আমি জানি। আপনাকে বিশ্বাস করি। ”
” এই বিশ্বার রক্ষা করার জন্য হলেও একটা কঠোর শাস্তি পাওয়া দরকার। তুমি দিবে না তো? আমি নিজেই নিচ্ছি। ”
মুনছুর সাখাওয়াত সেকেন্ড কয়েক ভাবল। তারপরে হঠাৎ বলল,
” যতদিন না এই দাগ যাচ্ছে ততদিন তোমার ঠোঁটে চুমু খাব না। ”
স্বর্ণলতা অবাক হয়ে বলল,
” যদি অনেক দিন থাকে? ”
” নিষেধাজ্ঞাও জারি থাকবে। ”
” আপনি মানতে পারবেন? ”
” বছরের পর বছর মেনেছি। ভুলে গেলে নাকি? ”
” ওটা আলাদা বিষয়। তখন একেবারেরই স্পর্শ করেননি। ”
” স্পর্শ করার পরেও তো মাসের পর মাস মেনেছি। ”
” ওটাও আলাদা বিষয়। তখন আমরা দুজনে দুই জায়গায় ছিলাম। ”
মুনছুর সাখাওয়াত এক মুহূর্তের জন্য থামল। স্ত্রীর মুখটা ছেড়ে দিয়ে বলল,
” ভয় দেখাচ্ছ কেন? শাস্তি তো আমি সেধে নিলাম। যতদিন চুমু না খেয়ে থাকতে পারব, ততদিনই শাস্তি মানব। সমস্যা নেই তো। ”
স্বর্ণলতা হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে স্বামীর বুকে মাথা রাখল। দুই হাতে দীর্ঘ, চওড়া বলিষ্ঠ দেহটা আকড়ে ধরতে শুনল,
” রাগ পড়েছে? ”
” হ্যাঁ। ”
” তাহলে শুরু করি? ”
স্বর্ণলতা মাথাটা তুলল। স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল,
” কী? ”
মুনছুর সাখাওয়াত জবাব দিল না। কপালে গাঢ় চুম্বন রাখল। তারপরে আর থামেনি। আদরে-আদরে দুজনেই প্রায় ডুবে যাচ্ছিল। তখনই স্বর্ণলতা একহাতে স্বামীকে বাঁধা দিল। মুখটা আপন ঠোঁটের কাছে টেনে এনে বলল,
” আমার লাগবে। অভ্যাস তো! শান্তি লাগছে না। ”
” অপেক্ষা করো। ”
” উহুঁ। শাস্তিটা তো আপনার, আমার না। ”
স্বর্ণলতা নিজেই এগিয়ে এলো। কামনায় পীড়িত দেহটা শান্তি পেল না। খুব কাছ থেকেও কাঙ্ক্ষিত ঠোঁট জোড়া সরে গেল। একটুও স্পর্শ পেল না। ভীষণ বিরক্তে চোখ মেলে তাকাতে দেখল, মুনছুর সাখাওয়াত হাসছে। নীঃশব্দের, দুষ্টুমি প্রকাশের হাসি। হাসতে হাসতে একহাত বাড়াল তার বুকের দিকে। ব্লাউজের উপরের বোতামটা খুলে দিয়ে বলল,
” শান্ত হও, বউ। ”
মুনছুর সাখাওয়াত হাত ফিরিয়ে আনল সাথে সাথেই। হাসিটা চওড়া করে বলল,
” তোমাকে এই রূপে দেখলে আমার নিজেকে নিয়ে খুব গর্ব হয়। মনে হয়, আল্লাহ আমার মধ্যে অন্তত একটা গুণ হলেও দিয়েছে। যেই গুণের টানে তুমি লজ্জা-শরম ভুলে সেচ্ছায় আমার কাছে ছুটে আসো। ”
এই স্বল্প বিরতিতে স্বর্ণলতার দৈহিক উন্মাদনা একটু হলেও কমল। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিও খানিক স্বাভাবিক হলো। দেরি হলেও স্বামীর ইঙ্গিতপূর্ণ কথাটা বুঝে এলো। সাথে সাথে লজ্জায় রাঙা হয়ে ওঠল। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকল না। দুষ্টুমি ভর করল তার মধ্যেও। বিছানার একপাশে গুচ্ছ হয়ে পড়ে থাকা শাড়িটা তুলে নিল আচমকা। বুকের মাঝে চেপে ধরে বিছানা থেকে নেমে গেল। সোজা গোসলখানার দিকে ছুটে যেতে যেতে বলল,
” বাকিটুকু তাহলে ঐ গর্বের সাথেই করুন। ”
সে দরজা আটকে দিল। মুনছুর সাখাওয়াত দরজার কাছে পৌঁছে পানি ছাড়ার শব্দ পেল। মৃদু টোকা মেরে অভিযোগ ছুঁড়ল,
” এটা কিন্তু অবিচার হলো। একটাই তো গুণ পেয়েছি, একটু গর্ব প্রকাশ করতে পারব না? ”
” না। ”
” কেন? ”
” আমি বিরক্ত হয়েছি। ”
” তুমিও তো আমাকে কতভাবে বিরক্ত করো। এখনও করছ। তাই বলে কি দূরে সরে যাচ্ছি? ”
” চাইলেও যেতে পারবেন না। মনে করুন, আপনার মতো আল্লাহও আমাকে এমন একটা গুণ দিয়েছে। যেটার টানে আপনি এমনভাবে বাঁধা পড়েন যে, হাজার বিরক্তেও দূরে যেতে পারেন না। ”
” শোধ নিলে? বেশ, দেখি কতক্ষণ ভেতরে থাকতে পার। ”
” সত্যি দেখতে চান? ”
মুনছুর সাখাওয়াত হ্যাঁ বলতে চেয়েও পারল না। দরজায় ঘন ঘন টোকা মারতে মারতে বলল,
” এক সেকেন্ডও দেখতে চাই না। বের হও। খবরদার শরীরে পানি ঢালবে না! প্রেগন্যান্ট হয়ে বসে আছ। না জানি, কী থেকে কী হয়ে যায়! ”
” তাহলে কথা দিন, আর কখনও আমাকে লজ্জা দিবেন না। ”
” দিলাম। ”
স্বর্ণলতা বের হলো না কিন্তু দরজা খোলার শব্দ হলো।
______
দুপুর হতে চলল অথচ নাস্তা খাওয়া হয়নি। দুজনের পেটই ফাঁকা। গলায় ভারী খাবার পড়েনি, শুধু গ্লাস ভরে পানি খাওয়া হয়েছে। স্বর্ণলতা দ্রুত হস্তে নাস্তা সাজাচ্ছিল। মুনছুর সাখাওয়াত তখনও রুম থেকে বের হয়নি। গোসল করছে। এই সুযোগে নাস্তার প্লেট দুটো সাজিয়ে নিচ্ছিল। সহসায় কী ভেবে যেন দাদিজানের রুমের দিকে তাকাল। মুহূর্তে জমে গেল। টেবিলটা পেরিয়ে ঐ রুমের দিকে হাঁটা দিল। প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে বুঝল যা ভেবেছিল তাই। দরজার পাল্লা নেই। পুরো হাঁ হয়ে আছে। তাকে অন্য রুমে নিয়ে গিয়েছে দরজা ভেঙে? টের পেল না তো! কখন করল এসব?
মুনছুর সাখাওয়াত পেছনে এসে দাঁড়াল নীঃশব্দে। বউয়ের দিকে ঝুঁকে কানের কাছে ফিসফিসে বলল,
” একটাই ভেঙেছি। বাকিগুলো ভাঙব নাকি সেটা তুমিই জানিও। ”
স্বর্ণলতা শিউরে ওঠল। চকিতে পেছন ফিরতে পুনরায় শুনল,
” জানতাম, ঔষধ পাওয়ার পরে পাগলামি আরও বাড়বে এজন্যেই ঘুমের ঔষধটা খায়িয়েছি। আমার পরিকল্পনা তো সফল হয়েছে। এখন দেখ, এর কোনো প্রভাব তোমার পেটের বাচ্চার উপরে পড়ে নাকি। এই সময়ে এসব ট্যাবলেট খাওয়া ঠিক না। ”
সতর্কবার্তাটা স্বর্ণলতাকে খুব একটা নাড়াতে পারল না। তার চিন্তাভাবনায় এখনও ভাঙা দরজার দৃশ্যটায় ঘুরছে। মানুষটা দরজা ভাঙার কথা অসংখ্যবার বলেছে। কিন্তু ভাঙেনি কখনও। আজ স্বচক্ষে দেখল! প্রবল বিস্ময় প্রকাশ পেল একটা বাক্যেই,
” আপনি এত পাগল কেন! ”
_______
স্বর্ণলতার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্বোধন হলো পোলিও টিকার কর্মসূচির মাধ্যমে। কর্মসূচির সকল আয়োজন করেছে মুনছুর সাখাওয়াত। বউকে একবারের জন্যও কিতাবগড়ের স্কুলের ধারেকাছে ঘেষতে দেয়নি। সে শুধু ইচ্ছে প্রকাশের স্বাধীনতা পেয়েছিল।
প্রথম সেবা! স্বচক্ষে দেখতে না পারলে মনে শান্তি লাগে? স্বর্ণলতা জোরপূর্বক স্বামীকে নিয়ে স্কুলের প্রাঙ্গনে হাজির হলো। খুব ভিড়! মেয়ে-বউদের সাথে অল্প কিছু পুরুষদের আনাগোনাও আছে। ছোট্ট বাচ্চারা দৌড়াচ্ছে, খেলছে, চেঁচাচ্ছে। কেউ কেউ কাঁদছেও। দৃশ্যগুলো দেখতে দেখতে স্বর্ণলতার ছোটবেলার কথা মনে পড়ল। সুবর্ণকে নিয়ে সেও একবার পোলিও টিকার জন্য এসেছিল। কিন্তু পায়নি। ফুরিয়ে গিয়েছিল। তখন এই কর্মসূচি চলছিল তার স্কুলে। চারটা গ্রাম থেকে মায়েরা বাচ্চা নিয়ে আসত। এত ভিড় হতো! মাঠে পা রাখা যেত না। তারপরেও শোনা যেত, কেউ কেউ খবর পায়নি। তাই বাচ্চাকে নিয়ে যেতে পারেনি। আবার খবর পেলেও হেঁটে আসতে আসতে সময় শেষ হয়ে যেত। কিংবা পোলিও টিকা ফুরিয়ে যেত। পরের দিন আবারও এত সময় নিয়ে, খেটেখুটে আসতে ইচ্ছে হয়? অনেকেই উদ্যম হারিয়ে আসত না। অথচ কত গুরুত্বপূর্ণ টিকা!
স্বর্ণলতা টিকাদানের খবর পেয়ে স্বামীকে জানায়। বুঝায়, দুই ভাগে বসালে কত উপকার হবে। সেই সাথে একদিন আগেই গ্রামের রাস্তায় মাইকিং করে জানানোর ব্যবস্থাও করতে বলেছিল। মুনছুর সাখাওয়াত বউয়ের সকল ইচ্ছায় পূরণ করেছে।
ভিড়ের মধ্যে বউকে ঢুকতে দেয়নি। মুনছুর সাখাওয়াত হাত ধরে গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। কাছেরই এক মায়ের কোলের শিশুটি কান্না করছে। সে এক পলক চেয়েই বিরক্তে ভ্রূ জোড়া কুঁচকে ফেলল। দৃষ্টি সরিয়ে বউয়ের উদ্দেশ্যে বলল,
” দেখা হয়েছে না? চলো। ”
” যাচ্ছি। বাচ্চাটা এত কাঁদছে কেন? দাঁড়ান না, একটু দেখে আসি। ”
স্বর্ণলতা স্বামীর হাত থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চাইল, পারল না। মুনছুর সাখাওয়াত বিরক্ত স্বরে বলল,
” আবার বাচ্চা কোলে নিতে হবে কেন? ”
” মায়া লাগছে তো! কেমন কাঁদছে দেখুন। খুব কোলে নিতে ইচ্ছে করছে। আপনার করছে না? ”
” না। ”
” দেখলেই ইচ্ছে করবে। ছাড়ুন, নিয়ে আসি। ”
হাত ছাড়বে তো দূর আরও শক্ত করে ধরল। তারপরে বলল,
” দেখলেও করবে না। জীবনে কত বাচ্চাই তো দেখলাম, কখনও তো ইচ্ছে করেনি! ”
স্বর্ণলতা অবাক হয়ে সুধাল,
” আপনি ছোট বাবু কোলে নেননি? ”
” না। ”
” কখনওই না? ”
” না। ”
” দাঁড়ান, আসছি। ”
স্বর্ণলতা এবার জোর করেই হাতটা ছাড়াল। তারপরে ব্যস্তচালে কোথাও ছুটে গেল। মিনিট দুইয়ের মধ্যে ফিরেও এলো। এবার সে একা নয়। তার হাতে একটি পবিত্র ফুটফুটে ছেলে শিশু। বয়স এক কী দেড় মাস হবে। স্বামীর দিকে বাড়িয়ে বলল,
” নিন, কোলে নিন। ”
মুনছুর সাখাওয়াত প্রথমে আশ্চর্য হলো। পরক্ষণে বিরক্তে খেঁকিয়ে ওঠল,
” আরেকজনের বাচ্চা আমি কোলে নিব কেন? ”
” আদর করার জন্য। নিন তো! ”
স্বর্ণলতা জোর করেই বাচ্চাটা কোলে তুলে দিল। মুনছুর সাখাওয়াত বাধ্য হলো বাচ্চাটাকে ধরতে। কিন্তু স্পর্শে বড্ড অযত্ন, অনাদর। শক্ত হাতের তালু দিয়ে কোনোমতে ছোট্ট, নরম শরীরটাকে আটকে রেখেছে যেন! বুকের সাথে মিশাতে ঘোর আপত্তি। এক ঝলক চেয়েও দেখছে না।
স্বর্ণলতা এগিয়ে আসে। মাথা নুয়িয়ে আহ্লাদ করে কথা বলে, আদর করে, চুমু খায়। অতঃপর স্বামীর উদ্দেশ্যে বলল,
” বাবুটাকে আরও কাছে টেনে নিন। বুকের ওম দিন। হাসি হাসি মুখে দু, চারটা চুমু খান। নাহলে বুঝে যাবে তো আপনি পছন্দ করছেন না। তখন কষ্ট পাবে না, বলুন? কেঁদে ফেলবে তো! ”
” জন্মেছে দুদিনও হয়নি। এখনই পছন্দ-অপছন্দ বুঝে গেছে? কষ্ট কী, দুঃখ কী এগুলো বুঝার মতো যে জ্ঞান লাগে ওটা ওর হয়েছে? ঠিকমতো চোখই তো মেলতে পারে না। ”
সে কথাগুলো শেষ করতেই বাচ্চাটা কেঁদে দিল। স্বর্ণলতা চটজলদি বাচ্চাটাকে ফেরত নিল। পরম স্নেহে বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। কানের কাছে দু, চারটে আদুরে বুলি শুনাতে কান্নাটা বন্ধ হয়ে গেল। অতঃপর স্বামীর দিকে চেয়ে প্রত্যুত্তর করল,
” ভালোবাসা বুঝতে জ্ঞান লাগে না, বয়সও হতে হয় না। জন্মেরও প্রয়োজন পড়ে না। মায়ের পেটে থাকতেই সব ধরনের বুঝ চলে আসে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারে না। কীভাবে প্রকাশ করতে হয়, এই ধারণা পাওয়ার জন্যে মানুষের পর্যাপ্ত জ্ঞানের প্রয়োজন হয়, বয়স বৃদ্ধির দরকার হয়। বুঝছেন? ”
মুনছুর সাখাওয়াত জবাব দিল না। বউয়ের বুকের মধ্যে মিশে থাকা ত্যানায় মোড়ানো বাচ্চাটার দিকে এক ধ্যানে চেয়ে আছে। সহসায় শুনতে পেল,
” আপনি যে অপছন্দ করেছেন বুঝতে পেরেই কেমন কেঁদে দিল! এখন একটুও কাঁদছে না। আমি যে পছন্দ করেছি এটাও বুঝে গেছে। এবার বিশ্বাস হলো তো, বাচ্চারা সব বুঝে? ”
স্বর্ণলতা জবাবের অপেক্ষা করল না। বাচ্চাসহ স্বামীর থেকে সরে যাচ্ছিল, সহসায় হাতে টান খেল। থামতে শুনল,
” কোথায় যাচ্ছ? ”
” বাবুটাকে দিয়ে আসি। বাসায় যেতে চাইলেন তো। ”
মুনছুর সাখাওয়াত হাত ছেড়ে দিল। বাচ্চাটার দিকে চেয়ে থেকে ইতস্ততভাবে বলল,
” আবার কোলে দাও তো। কান্না করে আমাকে যে, অপমান করল। এর শাস্তি দিব। ”
” কী বলেন! এটুকু বাচ্চা। ওসব বুঝে নাকি? ”
স্বর্ণলতা তৎক্ষনাৎ কেটে পড়তে চাইল। সফল হলো না। মুনছুর সাখাওয়াত সামনে এসে দাঁড়াল। জোর করে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে অন্যদিকে ফিরে গেল। মাথা ঝুঁকে কী যে করল, স্বর্ণলতা দেখতে পারল না। পেছন থেকে উঁকিঝুঁকি মেরেও কাজ হচ্ছে না বুঝতে পেরে সামনে এলো। ভয়ে ভয়ে বাচ্চার দিকে তাকাল। হাত দিয়ে কিছুক্ষণ হাতিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” পেছন ঘুরে কী করেছেন? বলুন, কামড়ে দিননি তো! কোথায় কামড়েছেন। ”
মুনছুর সাখাওয়াত হতভম্ব হয়ে গেল। জীবনে কাউকে কামড়েছে বলে মনে পড়ছে না। বউটাকে ঢাকার বাসায় একবার কামড় দিয়েছিল। কাঁধে, ভালোবেসে। সেই সূত্র ধরে কি এই অপবাদটা দিয়ে ফেলল?
স্বর্ণলতা বাচ্চাকে আরও কতক্ষণ পরখ করল। তারপরে পুনরায় জিজ্ঞেস করল,
” বলছেন না কেন? কোথায় কামড়েছেন? বলুন! ”
” আমি যে পছন্দ করিনি এটা তো কেঁদে বুঝিয়ে ছিল। এখন কোথায় কামড়েছি এটাও কেঁদে বুঝাতে বলো। ”
চলবে
আমি ভাবলাম এই পর্বে শেষ হবে। তাই ইচ্ছে করে গতকাল দিইনি। শেষ হয়ে যাবে তো তাই মনখারাপ হচ্ছিল। আজকে লিখতে বসে দেখি, শেষের অংশটা আসছে না। আসতে আসতে আরও কত সময় লাগবে আল্লাহই জানে! এদিকে পর্বটা বড় হয়ে যাচ্ছে, সময়ও যাচ্ছে। তাই থেমে গেলাম। আপনাদেরও বআর অপেক্ষায় রাখতে ইচ্ছে হলো না। দেখি, আগামীকাল দেওয়া যায় নাকি। গত পর্বে উৎসাহ তেমন পাইনি। এই পর্বে কেমন উৎসাহ আসে দেখি!
#মরুর_বুকে_পুষ্পপরাগ
পর্ব (১০৯)
প্রেগন্যান্সির সময়ের চার মাস পেরিয়েছে। এখন অবধি গন্ধ বিষয়ক কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। তীব্র মাথা ব্যথার যন্ত্রণা থেকেও এবার রক্ষা পেয়েছে বোধ হয়। মুনছুর সাখাওয়াত স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে গিয়েও থেমে যায়। মাত্র তো চার মাস পেরুল! এখনও প্রায় ছয় মাসের মতো সময় বাকি আছে। ঐ সময়ের ব্যাপারে সে অনভিজ্ঞ। আহামরি কোনো জ্ঞান নেই। শুধু জানে, পেটটা বড় হতে থাকবে। কাপড়ের আবরণেও লুকানো সম্ভব নয়। দূর হতেও দৃষ্টি পড়লে বুঝা যাবে স্বর্ণলতা গর্ভবতী, পেটের মধ্যে আস্ত এক প্রাণীর বাস চলছে।
দ্বিতীয় প্রেগন্যান্সিতে স্বর্ণলতার মধ্যে একেবারে কোনো পরিবর্তন আসেনি, এমনটাও না। তার মানসিক আচরণে বেশ কিছু অদলবদল হয়েছে। তবে দেখার মতো পরিবর্তন এসেছে মেজাজে। অল্পতেই চটে যায় সে। ধৈর্য নামক বিস্ময়কর গুণটা কেমন করে যেন হারিয়ে গেল! মুনছুর সাখাওয়াত হাজার চেষ্টায়ও খুঁজে আনতে পারছে না। দরুন স্বর্ণলতার মাফ চাওয়ার গুণের দেখা-সাক্ষাৎ পাচ্ছে কদাচিৎ। নিয়ম করে দিনে তিনবেলায় কথা দিয়ে কথা ভাঙছে। এই নিয়ে মুনছুর সাখাওয়াতকে ভালোই যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে। বউ কখন কী বলছে, কী চাচ্ছে এই ব্যাপারগুলোতে চূড়ান্ত পর্যায়ের মনোযোগ রাখতে হচ্ছে। একটু এদিক-ওদিক হলেই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যায়। এই মাসখানেক আগের এক সকালবেলা। মুনছুর সাখাওয়াত কাজে বের হওয়ার সময়ে বলল,
” আজ আমার জন্য অপেক্ষা করো। তাড়াতাড়ি ফিরব। দুপুরে একসাথে খাব। ”
স্বর্ণলতা খুশিতে ঝলমলিয়ে ওঠল। দ্বিতীয়বার পেটে বাচ্চা আসার পরে তার খুব ক্ষুধা পায়। যখনতখন, একটু পরে পরে। পেটপুরে খেতেও পারে। সমস্যাটা হলো এই ক্ষুধা নিয়েই। টের পাওয়া মাত্র তার খাবার চাই। নাহলেই পেটটা এত মুচড়ে ওঠে! দমটা আটকে যায়। কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। এমতাবস্থায় স্বামীর জন্য অপেক্ষা করা খুব দুষ্কর হয়ে পড়ছিল। মুনছুর সাখাওয়াত বিষয়টা জানতে পেরে হেসে বলেছিল, ‘ অপেক্ষা করতে হবে না। তুমি খেয়ে নিও। আমার সাথে নাহয় আবারও খাবে। ‘ স্বর্ণলতা অপেক্ষা করা বাদ দিল। কিন্তু স্বামীর পাশে বসে আবারও খাওয়া হয় না। ক্ষুধা ছাড়া খাবারকে বিষের মতো লাগে। একটা লোকমাও মুখে তুলতে পারে না। এই যন্ত্রণা থেকেও মুনছুর সাখাওয়াত মুক্ত করে দিল। সে একা একাই খেতে লাগল। স্বর্ণলতা পাশে বসে শুধু পাতে খাবার তুলে দেয়। দিন কয়েক যেতেই বুঝতে পারে, স্বামীটা আগের মতো পেটপুরে খেতে পারে না। একটুতেই পেট ভরে আসে। প্রায়ই অর্ধেক খেয়ে উঠে পড়ছে। ঘটনাটা তাকে এত পীড়া দিচ্ছিল! আজ বুঝি সেই পীড়া একটু হলেও কমবে।
যোহরের আজানের সময়ে স্বর্ণলতা ক্ষুধার আভাস পাচ্ছিল। মুনছুর সাখাওয়াত ফিরেনি তখনও। সে এই ফাঁকে গোসল করল, নামাজ পড়ল। ততক্ষণে ক্ষুধাটা তীব্র হয়ে ওঠল। আর অপেক্ষা করা যাচ্ছিল না। এদিকে খেতেও উৎসাহ পাচ্ছিল না। মানুষটা কত আশা নিয়ে বলেছিল, অপেক্ষা করতে। একসাথে খাবে। স্বর্ণলতা আশাটা ভেঙে দিতে চাচ্ছিল না। ভারি মায়া হচ্ছিল। না পেরে মুনছুর সাখাওয়াতের নাম্বারে কল করল। সে ধরেই বলল,
” আমি তো একটু দূরে চলে আসছি, বউ। ফিরতে আধঘণ্টার মতো লাগবেই। তুমি খেয়ে নাও। ”
স্বর্ণলতা হ্যাঁ, না কিছুই বলল না। কল কেটে দিয়ে ঘড়ির দিকে চেয়ে রইল। পাক্কা আধঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরে সেই দৃষ্টি সরল। কিন্তু মুনছুর সাখাওয়াত ফিরল না। স্বর্ণলতা আরও একবার কল দিল। রিসিভ হতেই জিজ্ঞেস করল,
” আপনি কোথায়? ”
” বাজারে। ”
” ওখানে কেন? আপনি না বললেন, আধঘণ্টার মধ্যে বাসায় ফিরবেন? ”
” ফিরছিলাম। বাজারের কাছে আসতে মনে হলো, একটা ছোট্ট কাজ আছে। কাজটা সেরে একেবারে ফিরি। তাহলে আজকে আর বাড়ি থেকে বের হতে হবে না। ”
এই স্বীকারোক্তির বিপরীতে স্বর্ণলতা একটা শব্দও উচ্চারণ করল না। কলটা কেটে দিল। ঠিক দুই মিনিটের মাথায় ফোনটা আবার বেজে ওঠল। মুনছুর সাখাওয়াতের নাম্বারটায় ভাসছে। সে ধরল না। দ্বিতীয়বার কল আসতে মোবাইল বন্ধ করে ফেলল। এই সময়ে কলি ডাকল,
” ম্যাডাম, আইজকা দেহি খাউন চাইতেছেন না। খিদা লাগে নাই এহনও? অন্যদিন তো এই সময়ের মধ্যে দুইবার ভাত খাইয়া ফেলেন! শরীরটা ভালা তো? ভিতরে আসমু? ”
স্বর্ণলতার চটে যাওয়া মেজাজের বহিঃপ্রকাশ ঘটল এতক্ষণে। চেঁচিয়ে ওঠল,
” না, ভিতরে আসবে না। তুমি না, তোমার স্যারও না। আর যদি খাবারের কথা আরেক বার শুনছি, তাহলে সাথে সাথে তোমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিব। ময়নাবুকেও রাখব না। তারপরে আমি পাতিল ভরে বিষ রান্না করে, তিনবেলা পেট ভরে খাব। ”
মুনছুর সাখাওয়াত ফিরেছিল দশ মিনিটের মধ্যে। যা আন্দাজ করেছিল, তাই ঘটেছে। মেয়েটা তার উপরে রাগ করে খায়নি। এরপরে কত বুঝাল! শুনল না। ধমকেও কাজ হয়নি। উল্টো রেগে গিয়ে বলেছে,
” যদি আসতে না পারবেন তাহলে অপেক্ষা করতে বলবেন কেন? আমি বলেছি, আসুন? কখনই তো বলিনি। আমি জানি, আপনার কাজ থাকে। চাইলেও সবকাজ এড়িয়ে যাওয়া যায় না। করতে হয়। যদি এড়িয়ে যাওয়া যেত, তাহলে আমাকে বলতে হতো না। আপনি নিজেই কাজ ফেলে চলে আসতেন। এত বুঝেও অবুঝের মতো আচরণ করতে যাব কেন? তাই নিজ থেকে কখনও বলি না। আজ তো আপনিই বললেন, একসাথে খাবেন। তাহলে কথা রাখলেন না কেন? অযথায় আমাকে অপেক্ষা করিয়ে কষ্ট দিয়েছেন! ”
স্বর্ণলতা রাগের চোটে বুঝলই না, সে এখনও অবুঝের মতোই কাজ করছে। জোর করেও কিছু খাওয়াতে পারেনি। একফোঁটা পানিও না। ফলস্বরূপ পরের দিন দুপুরে প্রেসার এত নেমে গেল যে, স্যালাইন দিতে হলো। মুনছুর সাখাওয়াতের কঠোর ধৈর্য ভাঙল তখনই। বউয়ের শিয়রের কাছে বসে সুধীর গলায় বলল,
” বাচ্চা নষ্ট করে ফেল। ”
স্বর্ণলতা আঁতকে ওঠল। চমকে তাকাল স্বামীর মুখটায়। মুনছুর সাখাওয়াত মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে নিরুদ্বেগে জানাল,
” তিন মাস পেরিয়ে গেছে। এখন ট্যাবলেট ব্যবহার ঠিক হবে না। হাসপাতালে চলো। দেখি, কী উপায় বলে। যেটায় ঝুঁকি সবচেয়ে কম থাকবে ওটাই গ্রহণ করব। ”
স্বর্ণলতা হাতটা সরিয়ে দিল। তারপরে বলল,
” পাগল হয়েছেন? আমি কোথাও যাব না। ”
” যেতে হবে। আমি সেই শুরুতেই হুঁশিয়ার করেছিলাম। মনে আছে? ”
প্রেগ্ন্যাসির খবরটা মুনছুর সাখাওয়াতকে খুশি করতে পারেনি। অখুশি হওয়ার কারণটাও বউকে বুঝিয়ে বলেছিল। স্বর্ণলতা সেসব আমলে নেয়নি। উল্টো তাকে বুঝ দিয়েছিল কিছু হবে না। মুনছুর সাখাওয়াত মানতে বাধ্য হলেও সতর্কবার্তা হিসেবে বলেছিল, এই নিয়ে যদি স্বর্ণলতার শরীরে কোনো ধরনের যন্ত্রণা দেখে তাহলে বাচ্চা নষ্ট করার ঔষধ খায়িয়ে দিবে। স্বর্ণলতার ইচ্ছে বা অনিচ্ছাকে গুরুত্ব দিবে না। আজ কি সেটায় ঘটাতে চলেছে? স্বর্ণলতার রূহ কেঁপে ওঠল। গলা শুকিয়ে এলো। কম্পনরত কণ্ঠে বলল,
” আমার কোনো কষ্ট হচ্ছে না। বিশ্বাস করুন। ”
” স্যালাইনটা কি তাহলে শখ করে শরীরে পুশ করা হচ্ছে? ”
স্বর্ণলতা ঝটিতে তাকাল ঝুলন্ত স্যালাইনের বোতলটায়। মুহূর্তে তার অবুঝপনা ছুটে গেল। গত দুপুর থেকে এই পর্যন্ত কী কী ঘটিয়ে ফেলেছে সবটায় অপরাধের নামে সিল মারল নিজ থেকেই। তারপরে মেজাজটা নরম হলো। কাতর স্বরে অনুরোধ করল,
” মাফ করে দিন। এরকম আর কখনও করব না। ”
” কথা দিচ্ছ? ”
” দিচ্ছি। ”
সেই কথা ভেঙে গেল স্বর্ণলতাকে অনার্সে ভর্তি করানোর কারণে। খাওয়া-পরা ঠিকমতোই চলল। বন্ধ হয়ে গেল গলার মিষ্টি কণ্ঠস্বরটা। পুরো দুইদিন মেয়েটা মুনছুর সাখাওয়াতের সাথে কথা বলেনি। সেই বারই সে বুঝতে পারল, এই ভয়াবহ ঘটনাগুলো ঘটছে স্বর্ণলতার প্রেগন্যান্সির কারণে। মেজাজের উপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে মেয়েটা! এবার দূরে থেকে নয় কাছে থেকেই দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এরপরে সময় যত এগুতে লাগল, স্বর্ণলতার চটা মেজাজটা ঘন ঘনই দেখা দিতে লাগল। ছোট ছোট অপ্রয়োজনীয় বিষয়েও রেগেমেগে বোম হয়ে যায়।
______
যেই মেয়ে জেদ দেখিয়ে দিনের পর দিন বন্ধ ঘরে কাটিয়ে দিতে পেরেছে। সেই মেয়ে এখন গোসলখানার দরজা আটকাতেও ভয় পায়। এত হাঁসফাঁস লাগে! সিটকানি খুলে রেখে গোসল করে। তারপরেও শান্তি পায় না। কোনোমতে ব্লাউজ পেটিকোট পরে বেরিয়ে আসে। শাড়ি পরার কাজটা সারে রুমের ভেতরে এসে।
মুনছুর সাখাওয়াতের কাঁচামালের ব্যবসায়িক বছর সমাপ্ত হয়েছে। তাই একটু হিসাবে বসেছিল। আশপাশে বেশকিছু কাগজপত্র। কিছু গুছানো, কিছু ছড়ানো। এই অবস্থায়ও খেয়াল করল, স্বর্ণলতা গোসলখানা থেকে বেরিয়েছে। পরনে পেটিকোট আর ব্লাউজ। শাড়িটা ভেতরে নেয়নি, বিছানায় রাখা। সে হাত বাড়িয়ে শাড়িটা নিল। বউয়ের দিকে বাড়িয়ে ধরে সুধাল,
” আমি পরিয়ে দিব? ”
” দরকার নেই। আপনি কাজ শেষ করুন। আপনার হিসাবের খাতা দেখলেই আমার রাগ হচ্ছে। ”
মুনছুর সাখাওয়াত মৃদু হাসল। হিসাবের পাতায় মনোযোগ ফেরাতে ফেরাতে বলল,
” বই কিনে দিলাম যে? ছুঁয়েও দেখনি মনে হয়। অক্ষত আছে তো? নাকি পুড়িয়ে ফেলেছ? ”
স্বর্ণলতা জবাব দেয় না। একমনে শাড়ি পরছে। মুনছুর সাখাওয়াতই পুনরায় বলল,
” যে পড়াশোনা স্বপ্ন ছিল সেই পড়াশোনা এমন দুশমন হয়ে গেল কীভাবে আজও বুঝতে পারলাম না! ”
” বুঝতে হবে না। কুঁচিটা ঠিক করে দিন তো। উপুড় হলে পেটে চাপ লাগছে। ”
” দিচ্ছি। একটা মিনিট সময় দেও? ”
হিসাবটা শেষ প্রায়। জের টানবে। এমন সময়ে একটু গড়মিল লাগল। গড়মিলটা খুঁজতে গিয়ে সে এক মিনিট পেরিয়ে ফেলল। কত মিনিটে গড়মিলটা ঠিক করল জানে না। টাকার হিসাবে মন দিতে গিয়ে সময়ের হিসাবটা ছুটে গিয়েছে। জের টেনে খাতাটা বন্ধ করে দিল। স্ত্রীর দিকে চাইতে দেখল, উক্ত স্থানে স্বর্ণলতা নেই। মেঝেতে শাড়ি, ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে আছে। মুনছুর সাখাওয়াত বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গেল। সেই মুহূর্তে তার মাথার মধ্যে একটা দৃশ্য ভেসে ওঠল। যেখানে স্বর্ণলতা রাগে ফুঁসছে ও একে একে শাড়ি, পেটিকোট, ব্লাউজ খুলছে। তারপরে অনাবৃত অবস্থায় রুম থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। দৃশ্যটা এত বিভৎস লাগল! মুনছুর সাখাওয়াতের হৃদয়ে প্রবল চাপ খেল। যন্ত্রণাটা পুরো দেহে তীব্র হয়ে ছড়িয়ে পড়ার পূর্বেই একহাতে বুক খামচে ধরল। চোখ বুজে আপনমনে বিড়বিড় করল, ‘ হে আল্লাহ, আমাকে ধৈর্য দাও। শান্ত করো। নাহলে আজকে বাচ্চাসহ মাও আমার হাতে মারা পড়বে। ‘
মুনছুর সাখাওয়াত দরজার চৌকাঠটা পেরুল প্রায় দৌড়ে। অস্থিরচিত্তে রান্নাঘরের দিকে দৃষ্টি ফেলল। সাথে সাথে হৃদয়ের চাপটা সরে গেল। ধপ করে নিঃশ্বাসটা ফেলতে শুনল,
” কাজ শেষ? ”
মুনছুর সাখাওয়াত জবাব দিতে পারল না৷ একদৃষ্টে চেয়ে রইল স্বর্ণলতার পরনের থ্রি-পিসটায়। সেখানে চেয়ে থেকে নিজের ভাবনাকে ধিক্কার দিল। মেয়েটা একটু বদমেজাজি হয়ে গিয়েছে, ধৈর্য হারিয়েছে, ব্যবহারে অবাধ্যতা এসেছে, দ্বীনের নিয়ম-নীতিতে উদাসীন হয়েছে কিন্তু নির্লজ্জ তো হয়নি। হওয়ার আশঙ্কা করাও বোকামি। আর কেউ না জানুন, অন্তত মুনছুর সাখাওয়াত জানে দ্বীনের প্রতি এই মেয়ে কতটা কঠোরতা অবলম্বন করে আসছে। সেই মেয়েকে নিয়ে এমন কুৎসিত ভাবনাটা এলো কীভাবে? সে অনুতাপের আগুনে জ্বলে উঠে বলল,
” মাফ করে দাও। ”
এই মাফ চাওয়ার পেছনের সঠিক কারণটা স্বর্ণলতা জানে না। সে ভাবল, কুঁচি ধরতে দেরি করাও যে, ছোটখাটো অন্যায় সেটা বুঝতে পেরেছে। তাই মাফ চাচ্ছে। স্বর্ণলতা খানিক ভাব নিয়ে বলল,
” দিব। কিন্তু শর্ত আছে। ”
” কী শর্ত? ”
” ঐসব কাগজপত্র আর কখনও বাড়ি বয়ে আনতে পারবেন না। ”
” আনব না। ”
” কথা দিচ্ছেন? ”
মুনছুর সাখাওয়াত মাথা নেড়ে বুঝায়, কথা দিচ্ছে। স্বর্ণলতা সাথে সাথে মাফ করে দিল। কারণ, সে জানে এই কাগজ বাড়িতে বয়ে নিয়ে আসার কারণও সে। তার কাছে থাকতে পারল, কাজটাও শেষ হলো। শুধু শুধু আর অফিসঘরে যেতে হলো না।
” খাবার দিচ্ছি, আসুন। ”
স্বর্ণলতা খাবার টেবিলের দিকে এগুতে চাইল, পারল না। মুনছুর সাখাওয়াত খপ করে হাতটা ধরে ফেলল। রুমের দিকে টেনে নিতে নিতে বলল,
” তুমি তো শাড়ি পরতে চেয়েছিলে। চলো, আমি নিজ হাতে পরিয়ে দিব। ”
স্বর্ণলতা মনে করিয়ে দিল,
” আমি পরতে চাইনি, আপনি পরতে বলেছিলেন। ”
প্রেগন্যান্সির সময় শুরু হওয়ার পরে স্বর্ণলতা শাড়ি পরা কমিয়ে দিয়েছিল। ভারি যন্ত্রণার লাগত! একসময়ে সেটা একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু মুনছুর সাখাওয়াতের বউকে শাড়িতে দেখতেই বেশি লাগে। আজ সে সারাদিন বাসায় থাকবে। তাই গোসল করতে যাওয়ার সময়ে বউকে বলেছিল, ‘ আজ শাড়ি পরো তো! ‘
মুনছুর সাখাওয়াত নিজের হাতে কাপড় বদলে দিল। কোমরের কাছে কুঁচি গুঁজার সময়ে উন্মুক্ত সফেদ মসৃণ পেটটা নজরে পড়ল। এত কাছ থেকে সময় নিয়ে এভাবে দেখল অনেক দিন পর। ভালোই ফুলেছে! নতুন প্রাণটা বড় হচ্ছে একটু একটু করে। হাত, পা কি গজিয়েছে? মুখটা কার মতো হচ্ছে?
” তাড়াতাড়ি করুন না! খুব ক্ষুধা লেগেছে। ”
তাগাদা ভরা কণ্ঠটায় ধ্যান ভাঙল। নজরটা কাঁপল। মুনছুর সাখাওয়াত উঠে দাঁড়াতেই আরও একটা বিষয় চোখে পড়ল। স্বর্ণলতার শুধু পেট নয়, পুরো দেহটায় ফুলেছে। আগেরবার স্বাস্থ্য খুব শুকিয়েছিল। এবার মোটা হয়েছে। পাল্লা দিয়ে মুখের জেল্লাটাও বেড়েছে। পূর্ণ যৌবন, উপচে পড়া সৌন্দর্য মিলেমিশেও আজ মুনছুর সাখাওয়াতের পৌরুষ জাগাতে পারল না। তবে মুগ্ধতায় ডুবিয়ে ফেলল। মুখ উঠাতে বেশ সময় নিল। কিন্তু পারল। তারপরে বউকে আয়নার দিকে ফিরিয়ে বলল,
” তুমি যত বড় হচ্ছ তত সুন্দরী হয়ে ওঠছ। এর রহস্য কী? তোমাকে তো রূপচর্চা করতে দেখিনি কখনও! ”
” বয়স। একটা নির্দিষ্ট বয়সসীমা আছে যে সময়ে মেয়েদের সৌন্দর্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এজন্যে রূপচর্চার প্রয়োজন পড়ে না। এমনিতেই মেয়েদের শরীরে সৌন্দর্যের আলো ছড়াতে থাকে। তবে হ্যাঁ, মনের মধ্যে যদি সুখ থাকে আর শরীরে যত্নের স্পর্শ পড়ে তাহলে সেই সৌন্দর্য আরও কয়েক গুণে বেড়ে যায়। আপনার থেকে আমি দুটোই পেয়েছি। ”
” এই স্বীকারোক্তিটা কি মন থেকে এলো নাকি আমাকে খুশি করতে? ”
” এটা তো আপনার চোখে পড়া আমার সৌন্দর্যই বলে দিচ্ছে। ”
মুনছুর সাখাওয়াত কেঁপে ওঠল। মনে হলো, স্বর্ণলতার যে সুখটার কথা বলেছে সেটা এই মাত্র তার হৃদয়েও স্থানান্তর করা হলো। এই অপরিসীম আনন্দটা পরিপূর্ণ উপভোগ করতে গিয়ে চোখ বুজে এলো আপনাআপনি। তখনই স্বর্ণলতা বলল,
” আপনি আমাকে যে বয়সে বিয়ে করেছেন, সেই বয়সেই মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন আসে। প্রতি বেলায় বেলায় রূপের দ্বার খুলতে থাকে। ”
” আর প্রতি বেলায় বেলায় তাকে অন্যরকম সুন্দর লাগে। স্বর্ণলতা, আমি তোমাকে প্রতিটি রূপে দেখেছি। যত দেখেছি, তত আসক্তি হয়েছি। এই আসক্তি বোধহয় কোনোদিন ফুরাবে না! ”
” ফুরাবে। আমার সুন্দরী হওয়ার রহস্যটা শেষ হতে চলেছে। শারীরিক পরিবর্তনটা কখনও বন্ধ হবে না কিন্তু সৌন্দর্যের দ্বার খোলা বন্ধ হয়ে যাবে। রূপচর্চা করেও সেই দ্বার খুলতে পারব না। হয়তো আরও কয়েক বছর এই বর্তমানটাকে ধরে রাখতে পারব। তারপরে ধীরে ধীরে মলিন হয়ে যাব। তখন আপনার এই আসক্তি ঠিক ফুরিয়ে যাবে। ”
মুনছুর সাখাওয়াত জোর দিয়ে বলল,
” না, ফুরাবে না। আমি শুধু তোমার রূপে না গুণেও মারাত্মকভাবে আসক্ত। আর মানুষের রূপের মেয়াদ থাকলেও গুণের মেয়াদ থাকে না। তাই নষ্ট হওয়ারও ভয় নেই। সবচেয়ে বড় কথা, তোমাকে যেদিন আমি বিয়ে করে এই বাড়ি এনেছিলাম, সেদিন কিন্তু তুমি এমন সুন্দরী ছিলে না। তারপরেও তোমার জন্য আমি বেলায় বেলায় মরেছি। তোমার মধ্যে এই রূপ, গুণ ছাড়াও অন্য কিছু আছে। আমাকে ঘায়েল করেছিল মূলত ওটাই। ”
” ওটা কী? ”
” জানি না। কিন্তু কিছু তো একটা আছে। ”
স্বর্ণলতার কাছ থেকে সরে গেল। বিছানায় বসতেই স্ত্রীকে আরও একবার আপাদমস্তক দেখল নিবিড়ভাবে। তারপরে বলল,
” তোমার ছেলের জন্যও অল্পবয়সী বউ আনব। ”
” বাল্যবিবাহ করাবেন? ”
” অবশ্যই। নাহলে প্রতি বেলায় বেলায় যে রূপের দ্বার খুলে ওটা দেখবে কীভাবে? মেয়েদের এই সৌন্দর্যের রহস্য উন্মোচনের সময়টা উপভোগের একমাত্র হক তো তার স্বামীরই থাকার কথা, তাই না? তোমার স্বামী পেয়েছে, তাহলে ছেলে পাবে না কেন? আমার তো মনে হচ্ছে, প্রতিটি পুরুষেরই এই হকটা পূরণ করা উচিত। ”
” হ্যাঁ, তারপরে সবাই বাচ্চা বিয়ে করে বসে থাকুক। তারপরে ঐ বাচ্চার মনে যে স্বপ্নগুলো আছে সেগুলো দুঃখ হয়ে চোখ থেকে ঝরে পড়ুক। ”
” দুঃখ হবে কেন? বাস্তব হবে। ”
” কে বাস্তব করবে? ওদের স্বামীরা? ”
” হ্যাঁ। ”
” সবাই কি আপনার মতো পাগল? ”
মুনছুর সাখাওয়াত থমকাল। তারপরে আচমকা বলল,
” তোমার ছেলে পাগল হলেই চলবে। আমার তো শুধু ওর হক নিয়েই ভাবনা। ”
স্বর্ণলতা কাছে এগিয়ে এলো। স্বামীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
” হঠাৎ এত ছেলে ছেলে করছেন কেন? ডাক্তার কি বলেছে, আমার ছেলেই হবে? ”
” না। ”
” তাহলে? মেয়েও তো হতে পারে। ”
মুনছুর সাখাওয়াত আবারও একটু থমকাল। তারপরে বলে ওঠল,
” তাহলে মেয়েকেই অল্প বয়সে বিয়ে দিব। ”
” বাবা হয়ে মেয়ের স্বপ্ন পূরণের অধিকার কেড়ে নিবেন? ”
মুনছুর সাখাওয়াত জবাব দিল না। কেমন যেন আচ্ছন্ন হয়ে গেল। বাবা শব্দটা অন্যরকম শোনাল না? কত মানুষের মুখেই শব্দটা শুনেছে, কখনও সেভাবে খেয়ালই করেনি। আজকে স্বর্ণলতার পুরো বাক্যটার মধ্যে ঐ একটা শব্দই বুঝি তার কানে ঢুকল ও অনেক সময় ধরে বাজল। মাথাতেও কেমন চেপে আছে!
স্বর্ণলতা সেধে এসে স্বামীর ঊরুতে বসল। গলাটা জড়িয়ে ধরে বলল,
” বিয়ে তো অনেক পরের ব্যাপার। তাই ওটা ছাড়ুন। এখন শুধু দোয়া করুন আমাদের সন্তান যেন সুস্থ ও নেককার হয়। ”
” দোয়া করতে হবে কেন? তোমার গর্ভে যে আসবে সে তোমার মতোই হবে। ”
” এটা তো কোনো নিয়ম না তাই না? বাবা-মা ভালো হলেই সন্তান ভালো হবে এরকম কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। খারাপও হয়। এই আমার পরিবারেই দেখুন না, আমার বাবা-মা কত সুস্থ! কোনো শারীরিক ত্রুটি নেই। তারপরেও তো বড় আপা হলো। হলো না? এজন্যই বলে, আল্লাহর কাছে সুস্থ ও নেককার সন্তান চাইতে হয়। ভাগ্যে যদি খারাপও থাকে উনি চাইলে ভালোতেও রূপান্তর হতে পারে। তাই সবসময় দোয়া করতে হয়। করবেন না? ”
মুনছুর সাখাওয়াত জবাব দেয় না। একটা হাত দিয়ে স্ত্রীর পেটে স্পর্শ করে। হাতটা আর সরে না। চেপেই থাকে। প্রায় মিনিটখানেক সময় পরে সুধাল,
” ওর আগমনের খবরটা শুনে আমি অখুশি হয়েছিলাম, এই কথাটা কি তুমি সত্যি বলে দিবে? ”
” দিব। ”
” কেন? ”
” কারণ, আপনি এখনও অখুশি। আর এই অখুশির জন্যে আমাকে অনেক যন্ত্রণা পেতে হচ্ছে। ঠিকভাবে রাগারাগি করতে পারি না। ভয় দেখান, মেরে ফেলবেন। আমি তো এটাও বলে দিব, আপনি ও কে মে…”
কথাটা শেষ হলো না। মুনছুর সাখাওয়াত মুখ চেপে ধরল।
চলবে