#মরুর_বুকে_পুষ্পপরাগ
পর্ব (১৩)
জেলা হাসপাতালে প্রবেশ করে দাদিজানকে ডাক্তার দেখানো হলো। মুনছুর সাখাওয়াত বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, স্বর্ণলতা সাথে। ডাক্তার দেখানো শেষ হতে দুজন বেরিয়ে এলো। মুনছুর সাখাওয়াত দূর হতে গলা ছেড়ে জিজ্ঞেস করল,
” অপারেশন করা লাগবে নাকি? ”
খাইরুন নিসা ভারি বিরক্ত হলেন। রুমকিকে দেখতে এসে, নিজেই রোগী হয়ে বসে আছেন। কত করে বলল, সে ঠিক আছে। রুমকিকে দেখে আসি! কে শুনে কার কথা? জোর করে ডাক্তারের রুমে পাঠানো হলো। না গেলে, রুমকিকে দেখতে পারবে না এই হু মকিটাও শুনে বাধ্য হয়েছেন যেতে। তিনি নাতির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললেন,
” মেয়েটা এখানে আছে তো? ”
মুনছুর সাখাওয়াত মৃদু হাসল। চোখের পলক ফেলে আশ্বস্ত করে বুঝাল, আছে। খাইরুন নিসা সময় ব্যয় করতে চাচ্ছেন না। দুপুর হয়ে আসছে। যোহরের আযান পড়বে। নামাজ কাযা করা তার স্বভাবে নেই। অসুস্থ হলে, দাঁড়াতে না পারলে বসে বসে নামাজ পড়েন। তিনি তাড়া দিলেন,
” তাহলে ওর কাছে নিয়ে চল। দেরি করছিস কেন? ”
” যাচ্ছি। ডাক্তার কী বলল, সেটা তো বলো। ”
” তেমন কিছু বলেনি। আমি তো রোগী নই। গরমে মাথা ঘুরে গিয়েছিল। ”
” অপারেশন-টপারেশন কিছু করতে বলেনি? ”
” না। ”
” ঠিক বলছ তো? আমার তো মনে হয়, তোমার মাথার সামনে, পেছনে, ডানে, বামে, উপরে, নিচে সব মিলিয়ে ছয়টা অপারেশন করানো দরকার। ”
খাইরুন নিসার বিরক্ত বাড়ল। কপাল দলে, চোখ ছোট ছোট করে তাকালেন নাতির দিকে। তার মুখে কৌতূকের ছায়া। ঠোঁটে মৃদু হাসি ধরে রেখেছে। গোঁফ নাড়ছে ঘন ঘন।
” আমার কথা যদি বিশ্বাস না হয়, তোর বউকে জিজ্ঞেস কর। ”
তিনি সামনে এগিয়ে গেলেন। স্বর্ণলতা তার পাশে পাশে ছিল। এবার পিছিয়ে পড়ল। আড়চোখে মুনছুর সাখাওয়াতের দিকে চেয়েই সামনে পা বাড়াল। দাদিজানের কাছে পৌঁছানোর পূর্বেই শুনল,
” দৌড়াচ্ছ কেন? ধীরে হাঁটো। ”
স্বর্ণলতা সেই আদেশ আমলেই নিল না। আগের চেয়েও গতি বাড়িয়ে দিল। দাদিজানের কাছে পৌঁছে গেল চোখের পলকে। পাশাপাশি একই মাপে পা ফেলছে। মুনছুর সাখাওয়াত তখনও পেছনেই রয়ে গেল। অবাক চোখে চেয়ে আছে স্ত্রীর দিকে। এই সময় একজন নার্স যাচ্ছিল পাশ দিয়ে। তাকে হাত বাড়িয়ে দাঁড় করাল। জিজ্ঞেস করল,
” আমি কি দেখতে ভ য়ঙ্কর? ”
নার্সটি মধ্যবয়সী সুন্দরী মহিলা। হাতে স্টিলের ট্রে। তাতে ঔষধ ও ডাক্তারি যন্ত্রপাতি। জরুরি সেবা দিতে যাচ্ছিলেন। সহসা থামিয়ে দেওয়ায় বিরক্ত হলেন শুরুতে। প্রশ্ন শুনে থতমত খেলেন। পরক্ষণে বিস্ময় ধরা পড়ল চোখে, মুখে। মুনছুর সাখাওয়াতের আপাদমস্তক দেখতে দেখতে মুখে হাসি ফুটল। লাজুক সুরে জবাব দিলেন,
” জি না। আপনি দেখতে সিনেমার নায়কদের মতো। শুধু এই গোঁফ..”
কথার মধ্যে তিনি গোঁফ স্পর্শ করতে যাচ্ছিলেন, পারলেন না। মুনছুর সাখাওয়াত তার হাত ধরে ফেলল। মুখে র ক্ত জমল নিমিষেই। ক্রো ধানল জ্বলে ওঠল অক্ষিকোলে। তীব্র হুং কার ছেড়ে বললেন,
” কত বড় স্পর্ধা, আমার গোঁফে হাত দেয়! হাতটা ম চকে দিব? বল, দিব? ”
নার্স ভ য়ে কুঁকড়ে গেল। ব্যথায় টনটন করে ওঠল হাতের কব্জিস্থান। যন্ত্রণায় কালো হয়ে আসা বদন নিয়ে দেখছেন, সামনের মানুষটাকে। একটু আগের সেই মুখ, রূপ, সৌন্দর্য কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। সম্পূর্ণ অন্য মুখ, অন্য কণ্ঠস্বর যেন! দীর্ঘ, চওড়া পুরুষটি আচমকায় ভ য়ঙ্কর দানবে রূপান্তর হয়ে গেল। এই সময় আরেকটি পুরুষ কণ্ঠস্বর ভেসে এলো,
” কী হচ্ছে এখানে? এ কি! আপনি ওর হাত এভাবে ধরে আছেন কেন? ছাড়ুন। ”
কণ্ঠটি এখানকার ডাক্তারের। তার নাম আল হাদি। কিছুক্ষণ আগে, ইনি খাইরুন নিসার চিকিৎসা করছিলেন। মুনছুর সাখাওয়াতের ছাড়ার কোনো ইচ্ছে নেই। কে কী বলছে, কর্ণধারে কিছুই পৌঁছাচ্ছে না। রা গে চোখ থেকে র ক্ত বেরিয়ে আসার উপক্রম! রুক্ষ মুখটা ক্রমাগত কাঁপছে। হাতটা ধরল আরও শক্ত চাপে। কনুই ভেঙে নার্সের পিঠের দিকে চেপে ধরল। ডাক্তার হাদির কণ্ঠস্বর আবারও বেজে ওঠল। এবার অনুরোধের সুর বেরুল,
” স্যার, ছেড়ে দিন। প্লিজ! উনি মেয়ে মানুষ। কোনো দোষ করলে, আমরা শাস্তি দিব। চাকরি থেকে বরখাস্ত করব। আপনি ছেড়ে দিন। ”
নার্স ভ য় ও ব্যথায় কেঁদে দিয়েছে। চিৎকার করে বলছে,
” মাফ করে দেন, স্যার। আমার ভুল হয়েছে। ”
খাইরুন নিসা বেশিদূর এগোয়নি। পেছনের কণ্ঠস্বরগুলো শুনতে পাচ্ছিলেন। শুরুতে পাত্তা না দিলেও, পরক্ষণে ঘুরে দাঁড়ান ঝটিতে। স্মরণ হয়, এখানে তার নাতি আছে। যেখানে সে আছে, সেখানে তো গণ্ডগোল বাঁধবেই! কান্নাকাটির রোল পড়বে। ক্ষমা প্রার্থনা চলবে একাধারে। পেছনে ফিরতে বুঝে গেলেন, তার ধারণায় ঠিক। এই ছেলে এখানেও মা রামারি, খু নাখু নি শুরু করে দিয়েছে! তিনি ঘন ঘন পা ফেলে এলেন। মুনছুর সাখাওয়াতের বাহু চেপে ধরে টানতে টানতে বললেন,
” ছাড়, ছাড় ও কে। মুনছুর এটা তোর গ্রাম না। ছাড়, বলছি। মেয়েটার হাতটা ভেঙে যাবে তো। ”
সে র ক্তিম চোখে তাকাল দাদিজানের দিকে। কঠোরভাবে দৃঢ় সুরে বলল,
” সত্যিকারের রাজা, শুধু তার রাজ্যের ভেতরে নয়, বাইরেও ক্ষমতা ধরে রাখতে জানে। ”
” হ্যাঁ, আমরা সবাই তোর ক্ষমতা দেখেছি, এবার ছাড় ও কে। তোর কাছে কি নারী-পুরুষের কোনো ভেদাভেদ নেই? সবার সাথে একই রূপ, একই ব্যবহার! ”
স্বর্ণলতা দূর হতে দেখছিল। দাদিজানের মতো ছুটে আসতে পারেনি। দানব রূপী মানুষটার দিকে বেশিক্ষণ চেয়ে থাকতে পারল না। দৃষ্টি সরিয়ে নিতে শুনল,
” আরে! ওখানে কী করো? তোমার স্বামীর পাগলামি থামাও। এটা তো পাগলাগারদ নয়। ”
সে নিতান্ত বাধ্য হয়ে ভীরু পায়ে এগিয়ে এলো। দাঁড়াল দাদিজানের পেছনে। মুনছুর সাখাওয়াত তখনও নার্সের হাত চেপে ধরে আছে। দাদিজান তাকে চোখের ইশারায় বুঝাল, মুনছুরকে টেনে সরাতে। স্বর্ণলতা বুঝেও তাকে সামান্যতম স্পর্শও করল না। সেকেন্ড কয়েক নীরব থেকে, আচমকা মাথাটা এগিয়ে নিল তার দিকে। কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
” বিয়া কইরা বউ থুইয়া, অন্য ব্যাডির হাত ধরে। ছি! লুইচ্চা বুইড়া। ”
মুনছুর সাখাওয়াতের হাত ঢিলে হয়ে আসল। চোখের রঙ ও মুখের ভাব স্বাভাবিক হতে হতে ঘাড় ফেরাল। স্বর্ণলতা টের পেয়েই দাদিজানের অন্যপাশে চলে গেল। দৃষ্টির আড়াল হয়ে বলল,
” দাদিজান, চলেন রুমকিবুকে দেখে আসি। ”
নাতির রা গ পড়েছে। নার্সটি ছাড়া পেয়ে ছুটে পালিয়েছে। ডাক্তারের দিকে অনুতপ্তের দৃষ্টি চাইতে, তিনিও চলে গেলেন। মুনছুর সাখাওয়াতকে তিনি চিনেন। তাই ব্যাপারটাকে এখানে ছেড়ে দিলেন, ঘাটলেন না। খাইরুন নিসা দাঁত চিবিয়ে রা গ নিয়ে বললেন,
” রুমকির কেবিনে নিয়ে যাবি? নাকি পুরো হাসপাতাল ঘুরে বেড়াব? তোর জন্য তো মনে শান্তি নেই, এখন শরীরেও শান্তি নেই। অসুস্থ, বুড়ি মানুষটাকে খাটিয়ে মা রছিস! ”
তার কণ্ঠে একই সাথে বিরক্ত ও অভিমান। যার একটিও মুনছুর সাখাওয়াতের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলতে পারল না। সে অবাক ও নিবিড় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে, স্বর্ণলতার দিকে। সে কি তাকে অপমান করল নাকি গ্রহণ করল?
________
দাদিজানকে পুরো হাসপাতাল ঘুরতে হলো না। মুনছুর সাখাওয়াত পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল। রুমকির চিকিৎসা হচ্ছিল হল রুমে। আজ সকালেই আলাদা কেবিনে নেওয়া হয়েছে। ঘন ঘন ডাক্তার দেখছে, একজন নার্স সর্বসময়ের জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে। স্বর্ণলতা দাদিজানের সাথে কেবিনে ঢুকল। রুমকি শুয়ে আছে। চোখ বুঁজা। অকস্মাৎ স্নেহপূর্ণ কণ্ঠস্বরটা শুনতে পেল,
“রুমকিবু! ”
মুনছুর সাখাওয়াত ভেতরে ঢুকেনি। বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। চেয়ার রাখা আছে দুটো। একটায় বসতে যাচ্ছিল, সহসা স্ত্রীর কণ্ঠে ডাকটা শুনে থমকে গেল। আগ্রহ নিয়ে কেবিনের দরজার পর্দা একটু ফাঁক করল। মুহূর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। তার স্ত্রী কাজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে। গালে, কপালে সমানে চুমু খাচ্ছে! এরচেয়ে জঘন্য দৃশ্য আর কী হতে পারে? মুনছুর সাখাওয়াতের পেটের মধ্যে গুড়গুড় শুরু হলো। মুখের ভেতরটা তেতো ঠেকছে! ইচ্ছে করছে, রুমকির শরীরটা টু করো টু করো করে কা টতে। ওটা না থাকলে তো, স্বর্ণলতা জড়িয়ে ধরত না, চুমু খেতে না। আফসোস! এখন নীরবে সহ্য করা ছাড়া কিছুই করতে পারছে না। এরমধ্যে ডাক্তার হাদির আগমন ঘটল। মুনছুর সাখাওয়াতকে ইশারায় সালাম প্রদান করলেন প্রথমে। অতঃপর মৃদু হেসে, ভদ্রতা ধরে রেখে কেবিনে প্রবেশ করতে চাইলেন, পারলেন না। আচমকা কাঁধ টেনে ধরল মুনছুর সাখাওয়াত। সে ঘাড় ফেরাতেই প্রশ্নটা শুনল,
” যে তোর দাদিকে আম্মা বলে ডাকে, তাকে তোর বউ কী বলে ডাকবে? ”
ডাক্তার হাদির ভ্রূদ্বয়ের মাঝে ভাঁজ পড়ে গেল। দ্বিধাগ্রস্ত দেখাল মুখটা। কিছু সেকেন্ড নীরব থেকে অসহায় সুরে বলল,
” বুঝতে পারিনি, স্যার। যদি আরেকবার প্রশ্নটা করতেন! ”
মুনছুর সাখাওয়াত এখানে ধৈর্য দেখাল। নরম ও সহজ গলায় পুনরায় প্রশ্নটা করল,
” তোর দাদিকে যে আম্মা বলে ডাকে, তাকে তোর বউ কী বলে ডাকবে? ”
ডাক্তার হাদির মুখের অসহায়ত্ব ও দ্বিধাবোধটা মিলিয়ে গেল। ভাবনায় ডুবল না। চট করে বলল,
” আম্মা। ”
” তাহলে আমার বউ বু বলে ডাকে কেন? ”
প্রশ্নটা ডাক্তার হাদিকে শুনিয়ে নিজেকেই করল যেন। তার কাঁধটা ছেড়ে দিল অজান্তেই। দরজার পাশ থেকে সরে এলো ধীর পদক্ষেপে। দুটো চেয়ারের মধ্যে একটাতে বসতে বসতে আপনমনে বিড়বিড় করল, ‘ কী আশ্চর্য! মেয়েটা রুমকিকে আমার আম্মার আসনে বসিয়ে বু বানিয়ে দিল। ‘
_________
হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরতে বেশ বেলা হলো। ঘড়িতে তখন দুটো বাজে। দাদিজান ও স্বর্ণলতা উভয়ে গোসল করে নামাজে বসেছে। নামাজের মধ্যে মন ছুটে গেল স্বর্ণলতার। সালাম ফিরিয়ে বসে আছে, দাদিজানের নামাজ শেষ হওয়ার। প্রায় মিনিট পাঁচেক পর, যখন মোনাজাত ধরলেন তখন স্বর্ণলতার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। কাছে এগিয়ে এসে মিনতির সুরে বলল,
” রুমকিবু রে বাড়িত আইনেন না, দাদিজান। এবার বাঁইচা গেছে, পরেরবার হয়তো বাঁচব না। আপনার নাতি মানুষ না, আযরাইল। হের র ক্তে মানুষের জান কবজ করার নেশা আছে। ”
খাইরুন নিসা ভীষণ চ টে গেলেন। একে তো নামাজ শেষ করেনি, তার মোনাজাতটাও শান্তিতে পূর্ণ করতে পারেনি৷ তন্মধ্যে তার নাতি যে কিনা স্বর্ণলতার স্বামী হয় তাকে সোজা আযরাইল বানিয়ে দিল! তিনি স্বভাবসুলভ ঘটনায় পুনরাবৃত্তি করলেন। স্বর্ণলতার গালে সশব্দে চ ড় বসিয়ে দিয়ে বললেন,
” আমার চোখের সামনে থেকে যা, বেয়াদব মেয়ে। আদব-কায়দা কিছু জানে না। মূর্খ কোথাকার! ”
চলবে
#মরুর_বুকে_পুষ্পপরাগ
পর্ব (১৪)
আচানক চ ড় খেয়ে স্বর্ণলতা হতভম্ব হয়ে গেল। ব্যথা টের পেল না। চোখদুটি পরিষ্কার, শুকনো। গালে হাতটাও আপনাআপনি চলে গিয়েছে। সরছে না আর। নিষ্পলক ও বিস্মিতনেত্রে চেয়ে থাকলে দাদিজান পুনরায় ধ মক দিলেন,
” চোখের সামনে থেকে যাস না কেন? যা, বলছি। ”
স্বর্ণলতা খানিক কেঁপে ওঠল। উঠে দাঁড়াল দ্রুত। জায়নামাজ উঠাতে উঠাতে সুধাল,
” সত্যি চইলা যামু, দাদিজান? ”
খাইরুন নিসা চোখ রা ঙালেন। রা গের নিশ্বাস ফেললেন জোরে জোরে। স্বর্ণলতা ভ য় পেল না একটুও। মায়া হলো, দরদে পূর্ণ হলো হৃদয় ঘর। মানুষটার নিশ্বাস ফেলতেও এত কষ্ট হয়! বয়স হলে চলতে, ফিরতে যে কী পরিমাণ কষ্ট হয়, দাদিজানকে দেখে বুঝতে পারছে। সাথে একজন না থাকলে বিরাট সমস্যা! সে মনে মনে ঠিক করল, মা বুড়ো হওয়ার আগেই সুবর্ণকে বিয়ে করাবে। স্বর্ণলতার মতো, সেই বউও মায়ের সাথে সাথে থাকবে। কখন, কী লাগবে খবর রাখল, ঠিক সময়ে এনে দিল।
স্বর্ণলতা জায়নামাজ পালংকের উপর রেখে দরজার দিকে হেঁটে গেল। গাল থেকে হাত সরেনি তখনও। সে আনমনে বেরিয়ে এলো। বসার ও খাওয়ার ঘর একসাথেই। রান্নাঘরটা শেষ সীমানায়। দরজাবদ্ধ। দাদিজানের রুম থেকে দূরে, কিন্তু মুনছুর সাখাওয়াতের রুমের পাশেই। স্বর্ণলতা রান্নাঘরের দিকে এগুল প্রথমে। সকালে পানি গরম করতে এসে দেখেছিল, এখানে মাটির চুলা নেই। খড়ি নেই, ধোঁয়া নেই। অদ্ভুত ধরনের চুলা। চাবি ঘুরালেই আগুন জ্বলে। এই জিনিস সে কখনও দেখেনি, আজই প্রথম দেখল! অদ্ভুত চাবিওয়ালা চুলাটি দেখার শখ হলো আবারও। চোখ ভরে দেখবে। এখন বাঁধা দেওয়ার কেউ নেই। স্বর্ণলতা রান্নাঘরের কাছাকাছি যেতেই দেখল, দরজাটা খোলা। ভেতর থেকে ফিসফিসানি শব্দ আসছে। খাবারের গন্ধও আসছে! ভেতরে উঁকি দিতে দেখল, দুটি মেয়ে। মলিন শাড়ি জড়ানো। আঁচল গুঁজা কোমরে। একজন চুলায় বসানো হাড়ি নাড়ছে, অন্যজন থালাবাসন ধুচ্ছে। কাজের ফাঁকে দুজন কথাও বলছে। ফিসফিসানি এবার শব্দে রূপান্তর হলো। যে রান্না করছে, সে বলছে,
” ছারের বউ নাকি হাঁটু বয়সি? বুক ফুটে নাই এহনও। ”
অন্যজন জবাব দিল,
” তাই তো শুনলাম, কলিবু। দেহি নাই এহনও। দেখতে মনে অয় পরির লাহান। রূপ দিয়া মাথা খাইছে, নাইলে ছার তারে বিয়া করতে যাইব ক্যান? বাড়িঘরও নাকি নাই। নদীত ভাইয়া আসা কচুরিপনা! ”
স্বর্ণলতা শেষকথাটা সহ্য করতে পারল না। দরজা থেকেই প্রতিবাদ করল,
” আমি কচুরিপনা হমু ক্যান? আমার বাড়িঘর আছে। মা,বাপ আছে। একটা কইরা ভাই ও বোনও আছে৷ সুন্দর, পরিপূর্ণ সংসার। ”
দুটি মেয়েই চমকে পেছন ফিরল। চোখ আটকে গেল দুয়ারে দাঁড়ানো প্রতিবাদিনীর ওপর। এক ঝলকে মনে হলো, মুখটায় কিশোরী নয়, তারুন্যের ছাপ। পরক্ষণেই কিশোরী অবুঝ ও পবিত্র রঙটা ভাসতে লাগল। দুজনের একজনের মুখেও রা নেই। স্বর্ণলতা একই সুরে পুনরায় বলল,
” আমি পরি না। তোমাগো ছারের মাথাও খাই নাই। সে আমার বাপের মাথা খাইয়া, আমারে তুইলা আনছে। বুঝছ? ”
দুটি মেয়েই একই সাথে মাথা নাড়ল। টেনে টেনে বলল,
” জি, বুঝছি। ”
তাদের কণ্ঠ কাঁপছে। চোখদুটি ভ য়ার্ত! শরীর শক্ত হয়ে আছে। জবাব দেওয়া মাত্র মাথাটা নুয়ে গিয়েছিল আস্তে আস্তে। স্বর্ণলতার চুলা দেখার শখ মিটে গেল। মনের মধ্যে অশান্তি ও অস্থিরতা তৈরি হলো। হঠাৎই মনে পড়ে গেল, সে এই বিয়ে নিজের ইচ্ছায় করেনি। মা-বাবার জোরাজুরিতে করেছে। বিয়ের জন্য তারা টাকাও নিয়েছে, চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছে। স্বর্ণলতার উপর এখন তাদের কোনো অধিকার নেই। মেয়ে দুটি পূর্বের মতো কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল। স্বর্ণলতা দাঁড়িয়ে থাকেনি। সরে এলো সদর দরজার দিকে। পালানোর মতলবটা আবারও মনের মধ্যে উঁকি মারছে। সাহস নিয়ে মাথা তুলছে। আশেপাশে কেউ নেই। দাদিজান নিজেই তাড়িয়ে দিয়েছে। খুঁজতে আসবে না। পালিয়ে গেলেও, তাকে ধরে আনার আদেশ দিবে না। এই সুযোগ! স্বর্নলতা ঘাড় ফেরাল, দৃষ্টি নিয়ে রাখল মুনছুর সাখাওয়াতের রুমের দিকে। দরজাটা বন্ধ, তালা ঝুলছে। মানুষটা বাড়িতে নেই! সে দৃষ্টি ফিরিয়ে আনল। শিরায় শিরায় আনন্দ ও উত্তেজনার আলোড়ন হচ্ছে। অবশেষে, সে পালানোর সুযোগ পেল। মুক্তির আলো দেখছে, মনের আয়নায়। স্বর্ণলতা দ্রুত চৌকাঠ পার হলো। ডানে, বামে তাকাল না। সোজা নেমে এলো উঠোনে। বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণ। ফাঁকা ও মসৃণ মাটি। চারপাশ ইটের দেয়ালে ঘেরা। দূরের গেইটটা লোহার। খোলাই আছে। স্বর্ণলতা সেদিকেই ছুটছে। সহসা থামতে হলো। দেখতে পেল, একটা জীপগাড়ি ঢুকছে। ড্রাইভিং সিটে মুনছুর সাখাওয়াত বসা। পাশের সিটে ও পেছনে কেউ নেই। চোখাচোখি হলো দুজনের। গাড়িটি এসে থামল তার ঠিক পাশে। মুনছুর সাখাওয়াত জানালা দিয়ে মুখ বাড়াল। একহাতে স্বর্ণলতার বামগালে ইশারা করে সুধাল,
” গালে কী মেখেছ? এত লাল লাগছে কেন? ”
সে ভেতরে ভেতরে কেঁপে ওঠল। ভ য় ও আতঙ্ক ছুটে বেড়াচ্ছে চোখদুটিতে। পালানোর বিষয়ে ধরা পড়েনি এখনও। স্বর্ণলতা জবাব দিল না। মাথা নামিয়ে উল্টো ঘুরল। হাঁটা ধরতেই মুনছুর সাখাওয়াত প্রশ্নটা করল,
” দাদিজান কি তোমাকে মে রেছে? ”
সে থেমে গেল অজান্তেই। দাদিজানের চ ড়টা স্মরণে এলো এতক্ষণে। মুহূর্তে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ল মুখের একপাশে। চোখে অশ্রুজল টলমল করছে। এই সময়টাকে কাজে লাগাল মুনছুর সাখাওয়াত। সোজা এসে দাঁড়াল, বালিকা বধূর মুখের সামনে। গালটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে প্রশ্নটা আবারও করল,
” স্বর্ণলতা, বলো। দাদিজান কি তোমাকে মে রেছে? ”
সে কী জবাব দিবে বুঝতে পারছে না। কান্না পাচ্ছে খুব। চোখের পানি লুকানো এত কঠিন? মনে হচ্ছে, কথা বললেই কেঁদে ফেলবে। ব্যথাটাও বাড়ছে যেন! এই বিপন্ন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিল, খাইরুন নিসা। বারান্দা থেকে গলা ছেড়ে বললেন,
” মুনছুর, ওর পথ ছাড়। তুই কথা দিয়েছিলি, নাতবউকে বিরক্ত করবি না। ওর ইচ্ছে মতো পুরোবাড়ি ঘুরে বেড়াতে পারবে। ”
সে পথ ছাড়ল। ঘন ঘন পা ফেলে পৌঁছাল দাদিজানের কাছে। চোখ, মুখ শক্ত করে জিজ্ঞেস করল,
” ওর গাল লাল কেন? তুমি মে রেছ? ”
খাইরুন নিসা তসবিহ পাঠ করছিলেন। সেটা গলায় পড়ে বিরক্ত সুরে বললেন,
” কৈফিয়ত চাস? তোর দাদাজান ছাড়া আমি আর কারও কাছে কৈফিয়ত দিই না। ”
স্বর্ণলতাও ধীরে ধীরে হেঁটে এলো এদিকে। দাদিজান তার দিকে চেয়ে বলল,
” তোমাকে চোখের সামনে থেকে দূর হতে বলেছিলাম, বাড়ি ছাড়তে না। পোলাপান বিয়ে করে আনলে এই এক জ্বালা! বলব এক, করবে আরেক। দাঁড়িয়ে আছ কেন? ভেতরে আসো। দুপুর তো পেরিয়ে যাচ্ছে, খেতে হবে না? নাকি না খেয়ে ম রে যাব? ”
মুনছুর সাখাওয়াতকে পাশ কেটে সে বারান্দায় ওঠল। সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে যেতেই দাদিজানের উদ্দেশ্যে বলল,
” আমার বউকে আদর করে একটা চুমুও খেলাম না, আর তুমি গায়ে হাত তোলা শুরু করে দিয়েছ! আমি কিন্তু এসব সহ্য করব না, দাদিজান। বাড়িঘর সব জ্বালিয়ে দিব। ”
” দে, মানা করেছে কে? যে বাড়িতে জাহান্নামের মতো উত্তাপ থাকে, সেই বাড়ি জ্বালিয়ে দিলেও সওয়াব। নামাজ, কালাম তো পড়িস না, বাড়ি পুরিয়েই সওয়াব কামা। ”
মুনছুর সাখাওয়াতের রা গ আরও বেড়ে গেল। একলাফে উঠে গেল বারান্দায়। দাদিজানের মুখের সামনে আঙুল তুলতেই তিনি বললেন,
” বউকে যদি রুমে চাস, এই রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখ। ”
___________
খাবার টেবিলে বসে দাদিজান বললেন,
” নাতবউয়ের বাড়িতে লোক পাঠা। ওর বাবা-মাকে ডেকে আন। ”
মুনছুর সাখাওয়াত উল্টোমুখে বসে আছে। স্বর্ণলতা দুজনের মাঝে। খাবার পরিবেশন করছে। দাদিজানের আদেশে স্বামীর প্লেটেও ভাত, তরকারি দিতে হচ্ছে। কিন্তু ফিরে তাকাচ্ছে না। সে দাদিজানের দিকে পুরো ঘুরে আছে৷ খাওয়া নিয়ে চিন্তা নেই। প্লেটে শুধু আঙুল ডুবাচ্ছে। ভাত নাড়ছে, তরকারি মেশাচ্ছে।
মুনছুর সাখাওয়াত ভাত খেতে খেতে প্রত্যুত্তর করল,
” না। ওদের ডাকা যাবে না। ”
” কেন? ”
” আমি চাই না, স্বর্ণলতার সাথে ওদের কোনো সম্পর্ক থাকুক। ”
উত্তরটা শুনে স্বর্ণলতার ভাত নাড়া বন্ধ হয়ে গেল। মাথা তুলে পাশে ফিরল। মুনছুর সাখাওয়াত তার দিকে চেয়েছিল। চোখে চোখ পড়তে তারও ভাত চিবানো বন্ধ হয়ে গেল। স্বর্ণলতার চোখদুটি চিকচিক করছে। যেকোনো মুহূর্তে বন্যা বয়ে যেতে পারে! অশ্রুজলে ডুবে যেতে পারে কোমল ও স্নিগ্ধ গালযুগল। খাইরুন নিসা মৃদু ধ মকের মতো বললেন,
” এটা কী ধরনের কথাবার্তা? মেয়ের সঙ্গে বাবা-মায়ের সম্পর্ক থাকবে না কেন? ওরা তোর কাছে মেয়ে বিয়ে দিয়েছে, দান করে দেয়নি যে, পরে এসে চেয়ে নিয়ে যাওয়ার আসঙ্কা থাকবে। ”
এই পর্যায়ে মুখ খুলল স্বর্ণলতা। ভীষণ অভিমানে বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল,
” বিক্রি কইরা দিছে, দাদিজান। চাইতে আসলেও নিতে পারব না। এই অধিকার ওরা ট্যাকার বিনিময়ে ছাইড়া দিছে। ”
স্বর্ণলতা ভাত ভর্তি প্লেটে পানি ঢেলে দিল। মুনছুর সাখাওয়াত দেখল, তার উভয় চোখের কোণ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে৷ সেই অবস্থায় টেবিল ছেড়ে চলে গেল। খাইরুন নিসা ডাকলেন, সে শুনল না। তিনি রে গে গেলেন। অসন্তুষ্টের ছাপ পড়ল বদনে। বললেন,
” বিয়ে করেছিস একদিন হলো না, এরমধ্যেই নিজের মতো বানিয়ে ফেলেছিস! বড়দের অমান্য করে, ডাক শোনে না। খাবার নষ্ট করা আমার পছন্দ নয়, এর জন্য ওর শা স্তি পেতে হবে৷ ”
” কোন খাবার নষ্ট হয়েছে? ”
খাইরুন নিসা নাতবউয়ের প্লেটের দিকে তাকালেন, পুরো খালি। একটি ভাতের দানাও নেই! তিনি কি তাহলে ভুল দেখলেন? স্বর্ণলতা ভাতসহ প্লেটে পানি ঢালেনি?
_________
দাদিজানের কক্ষের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল স্বর্ণলতা। উঠোনে সন্ধ্যা নেমেছে। দূরের মসজিদ থেকে মাগরিবের আযান ভেসে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে বাইরের সবক’টা আলো জ্বলে ওঠল। দিনের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল চারপাশ। কিছু সেকেন্ড আগেও যে ঝাপসা অন্ধকার ঝেঁকে ছিল উঠানটায়, যাদুবলে তা হারিয়ে গেল আচমকা। স্বর্ণলতা অশ্রুসিক্ত নয়ন জোড়া বিস্মিত হলো। তাদের বাড়ির উঠোনটা মনে পড়ল, সন্ধ্যা হলে কেমন নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে ডুবে যায় উঠোন ও আশপাশের গাছপালা। রান্নাঘরটা পর্যন্ত দেখা যায় না। কলপাড়ে যেতে হয় হারিকেন নিয়ে। শৌচাগার বাড়ির পেছনে, বাঁশঝাড়ের নিচে। একা হারিকেন নিয়ে যেতে ভয় লাগে, গা ছমছম করা অবিরাম বাতাস বয়তে থাকে। বাঁশঝাড়ের পেছনেই তো শেয়ালটা ঘাপটি মেরে বসে থাকে! কী ভ য়ঙ্করভাবে ডাকে! স্বর্ণলতা ঘুমের মধ্যেও ভ য়ে কেঁপে ওঠে। শৌচাগারে যাওয়ার প্রয়োজন হলে, সে মাকে নিয়ে যায়। সুবর্ণ মাকে নিতে চায় না, সে নিবে আপাকে। কারণ, বাড়ির পেছনে তাকে ধরেবেঁধেও নেওয়া যাবে না। তার ধারণা, শেয়ালটা তার জন্যই বসে থাকে। দেখা দিলেই সুবর্ণের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়বে। তাই সে রান্নাঘরের পাশে যে সাজনা গাছটা? সেখানে যায়। সকালে উঠে মা টের পেলেই ভাইবোন দুটোকে ইচ্ছে মতো ঝাড়বে, সকালে ও দুপুরের খাবার বন্ধ করে দিবে।
স্বর্ণলতার দৃষ্টি উঠোন ছেড়ে লোহার ফটকটায় চলে গেল কখন খেয়াল নেই। সহসা দেখতে পেল, ফটক দিয়ে একটি মেয়ে ঢুকছে। পরনে লাল টকটকে টাঙ্গাইল শাড়ি, কানে লাল রঙের বড় পাপড়ির ফুল গুঁজা। বেনিটা মুঠোয় নিয়ে কী দারুনভাবে ঘুরাচ্ছে! সম্পূর্ণ মুখটায় হাসি হাসি ভাব ধরে রেখে কী যেন বিড়বিড় করছে! মাঝেমধ্যে হাত দুটো এমনভাবে নাড়াচ্ছে যে, স্বর্ণলতার মনে হলো মেয়েটি গান গাচ্ছে। তার পেছনেই একটি লোক। মাথায় ও হাতে ভারী বোঝা। মেয়েটিকে অনুসরণ করতে করতে উঠোনে ঢুকল। এই সময় পেছন থেকে খাইরুন নিসার গলা পাওয়া গেল,
” কী ব্যাপার? সারাবেলা তো ঘরের মধ্যে পড়ে থাকলে, এবার তো বের হও। আযান কানে যায়নি? যাও, আমার জন্য পানি গরম করো। ”
স্বর্ণলতা জানালা থেকে সরে এলো ভীষণ অনিহায়। মেয়েটিকে শেষবারের মতো দেখেই পালংক থেকে নামল লাফ দিয়ে। রান্নাঘরে ছুটে গেল ঘন ঘন পা ফেলে। তাকে কষ্ট করে পানি গরম করতে হলো না। কলি ভেতরে ছিল, সেই গরম করে দিল। স্বর্ণলতা শুধু পানির পাতিলটা নিয়ে পৌঁছে দিবে দাদিজানের গোসলখানায়। কলি তার হাতে গরম পানির পাতিল দিলে, সে হাঁটা ধরল দাদিজানের রুমের দিকে। পৌঁছাতে পারল না। পূর্বেই সেই মেয়েটি ঢুকল বাড়ির মধ্যে। সোজা গিয়ে বসল খাবার টেবিলে। জগ থেকে পানি ঢেলে খেতে খেতে স্বর্ণলতাকে দেখছিল। খাওয়া শেষ করে বলল,
” মুনছুর নাকি বিয়ে করেছে? ওর বউকে ডাক দেও। দেখি, সে আসমান থেকে কোন পরি ধরে আনছে! ”
চলবে
#মরুর_বুকে_পুষ্পপরাগ
পর্ব (১৫)
” মুনছুর নাকি বিয়ে করেছে? ওর বউকে ডাক দেও। দেখি, সে আসমান থেকে কোন পরি ধরে আনছে! ”
স্বর্ণলতা মেয়েটিকে আড়চোখে দেখছিল, এবার সরাসরি তাকাল। ভারি সুন্দর দেখতে! গায়ের রঙটা জোসনার মতো উজ্জ্বল ও স্নিগ্ধ। কানে পরে থাকা ফুলটি রক্তজবা। ঠোঁটদুটিতে গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক, চোখে চিকন করে কাজল টানা। থুতনির ডান দিকে গাঢ় কালো রঙের চমৎকার একটি তিল। কথা বলার সময় থুতনি নড়ে ওঠলে, তিলটাকে জীবন্ত লাগে।
” হাঁ করে চেয়ে আছ যে? বললাম না, মুনছুরের বউকে ডেকে দিতে? ”
মেয়েটির কণ্ঠ চিকন ও পরিষ্কার। চড়া ও কর্কশ ভাবটা ঠিকমতো ফুটছে না। কানের কাছে এসে, মধুর শোনাচ্ছে। স্বর্ণলতার সামান্যতম ভ য় হলো না। শুরুতে আড়ষ্টভাব এলেও এখন নেই। সে নির্ভয়ে, সহজসুরে জিজ্ঞেস করল,
” যদি জিগায়, ক্যা ডাকতাছে? ”
মেয়েটির পানি খাওয়া শেষ হয়নি। খেতে খেতে কথা বলছিল, এবার থেমে গেল। স্বর্ণলতার দিকে ভালো করে চেয়ে থেকে সুধাল,
” এখানে নতুন? ”
” জি। ”
” তাই তো বলি, আমাকে চিনছ না কেন! বলবে, চাঁদনি ম্যাডাম ডাকছে। খবর পাওয়া মাত্রই যেন ছুটে আসে। নাহলে খুব খারাপ হবে। আমার কিন্তু অনেক রা গ! রা গ উঠে গেলে মাথা ঠিক থাকে না। ”
স্বর্ণলতা চাইলে বলতে পারে, আমি মুনছুরের বউ। আসমান থেকে ধরে আনা পরি। কিন্তু বলল না। তার মনে হচ্ছে, চাঁদনি নামের মেয়েটির মধ্যে কোনো রা গ নেই। অযথায় মিথ্যা বলছে কেন, সেটা জানার কৌতূহল হচ্ছে। সে মাথা নেড়ে জবাব দিল,
” জি, আচ্ছা। এখনই ডাইকা দিতাছি। ”
দাদিজানের রুমের দিকে পুনরায় অগ্রসর হলো। দু’কদম ফেলতেই পেছন থেকে কণ্ঠটা ভেসে এলো। ভীষণ আনন্দিত ও উত্তেজিত কণ্ঠস্বর,
” মুনছুর! তুমি বাড়িতেই? আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। ”
স্বর্ণলতার পাজোড়া থমকে গেল। ঘাড়টা ঘুরে গেল সামান্য ডানে। চোখদুটি সরাসরি ছুটে গিয়ে থামল, মুনছুর সাখাওয়াতের দোরগোড়ায়। সে দরজার মাঝেই দাঁড়িয়ে আছে। মুখটা সবসময়ের মতো কঠোর, ক্রু দ্ধ। হাতদুটি বুকে বাঁধা। এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে, চাঁদনির পানে। এরমধ্যে চাঁদনি তার নিকট পৌঁছে গিয়েছে। মুনছুর সাখাওয়াত ঠোঁট মৃদু ফাঁক করে নীরস কণ্ঠে সুধাল,
” এই বাড়িতে কী করছিস? ”
চাদনির মুখটা হাসি হাসি। জবাব দিল,
” তুমি তো ডেকে পাঠালে। কতদিন পর দেখা! একটু জড়িয়ে না ধরলে হয়? ”
সে জড়িয়ে ধরার জন্য এগিয়ে গিয়েছিল প্রায়। বুকটা ছুঁয়েও ছুঁয়া হলো না। হাতদুটি দিয়ে পিঠটা প্যাঁচিয়ে ধরা হলো না। পূর্বেই মুনছুর সাখাওয়াত সজোরে চ ড় মেরে বসল চাঁদনির নরম, ফকফকা গালে। রূঢ়ভাবে পুনরায় প্রশ্নটা করল,
” এই বাড়িতে কী করছিস? ”
চাঁদনির চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। মুহূর্তে চোখের কাজল ল্যাপ্টে গেল, হাসি হাসি মুখটা হয়ে ওঠল ভীষণ অভিমানি, যন্ত্রণাপূর্ণ। সে লিপস্টিক মাখা নিচের ঠোঁটটা মুখের ভেতর টেনে নিল। ব্যথা সহ্য করার নিষ্ফল চেষ্টা করে বলল,
” দাদিজান ডেকে পাঠিয়েছে। ”
” ভুল করেছে। আমাকে জিজ্ঞেস করা দরকার ছিল। ”
বাক্য দুটো উচ্চারণ করে তার বদনখানা ঘুরে গেল স্বর্ণলতার দিকে। তার দিকে চেয়ে বলল,
” দাদিজানকে বলবে, চাঁদনিকে যেন এখনই ফেরত পাঠায়। ”
চাঁদনি ব্যথা ভুলে পাশ থেকে বলল,
” এখনই ফেরত পাঠাবে কেন? আমি তো কয়েকদিন থাকব। দেখছ না, ব্যাগপত্র নিয়ে এসেছি? ”
প্রশ্নের জবাব নেই। মুনছুর সাখাওয়াত তার দিকে ফিরেও তাকাল না। সে রুমের বাইরে এসেছিল স্বর্ণলতার গলা পেয়ে। দুপুরে রা গ করে খাবার টেবিল ছেড়েছিল মেয়েটি। ছুটে গিয়েছিল দাদিজানের রুমে। তারপর আর বেরোয়নি। তার মন আনচান করছিল, মুখটা দেখতে ইচ্ছে করছিল খুব। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিল না। বিকেলে একটা জরুরি কাজে বেরোনোর কথা ছিল, বেরোয়নি। বাসায় থেকেছে। অবশেষে মুখটা দেখতে পেল। চোখে অশ্রু নেই। মুখেও রা গ বা অভিমানের ছায়া নেই। বেশ সতেজ ও স্বাভাবিক লাগছে। মুনছুর সাখাওয়াতের হৃদয়ের উচাটন থামল। শান্তির বৃষ্টি নামল বুকের আকাশে।
স্বর্ণলতা সেই দৃষ্টির মাঝে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। চোখ সরিয়ে ঘাড় ফিরিয়ে আনল সামনে। দাদিজানের রুমের দিকে পা বাড়াবে, তখনই মুনছুর সাখাওয়াত দৌড়ে এলো। পথ রোধ করে বলল,
” এত ভারী পাতিল তুমি বয়তে পারবে না। চাঁদনিকে দাও। ”
বলতে বলতে সে গরম পানির পাতিলটা কেড়ে নিল। চাঁদনির দিকে গ রম দৃষ্টি রাখতে সে এগিয়ে এলো। তার হাতে পাতিল ধরিয়ে শা সানির সুরে বলল,
” আধা ঘণ্টার মধ্যে এই বাড়ি ছাড়বি, নাহলে অন্য গালেও আমার আঙুলের ছাপ পড়বে প্রথমে। তারপর ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব। আমি যতটা বলি তারচেয়েও যে বেশি করতে পারি, এটা নিশ্চয় তোর জানা? ”
চাঁদনি সেখানে এক মুহূর্তও দাঁড়াল না। গটগটে চলে গেল দাদিজানের রুমের দিকে। স্বর্ণলতাও তাকে অনুসরণ করে যাচ্ছে। রুমের ভেতর একপা ফেলার পর কণ্ঠটা আবারও বাজল,
” চাঁদনির ধারেকাছেও থাকবে না। এটা আমার আদেশ। ”
স্বর্ণলতা এক সেকেন্ডের জন্য থেমেছিল। তারপরে ভেতরের দিকে এমনভাবে এগিয়ে গেল যেন, মুনছুর সাখাওয়াতের কথাটা শোনেনি। শুনলেও গ্রাহ্য করবে না।
______
দাদিজান পানি পেয়ে ওযু করায় মনোনিবেশ করলেন। তিনি এই সময় কারও সাথে কথা বলেন না। অন্যদিকে নজরও দেন না। তার বিশ্বাস এই সময়, ফেরেশতা দাঁড়িয়ে থাকে কাছে। কথা বললেই সেই ফেরেশতা চলে যায়। চাঁদনি এই বিষয়ে পূর্বেই অবগত, তাই মুখ ফুটে কিছু বলল না। পালংকে বসে নীরবে দেখল, স্বর্ণলতাও তার গোসলখানার দিকে ঢুকল। ওযু করল। পরিশেষে, দাদিজানের জায়নামাজের পাশেই সেও জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ শুরু করল। চাঁদনি আশ্চর্য হলো। যতদূর জানে, দাদিজান কাছের মানুষ ছাড়া এই ঘরে কাউকে ঢুকতে দেয় না, কোথাও বসতে দেয় না। অথচ এই মেয়েটি গোসলখানায় ঢুকে পড়েছে, পাশে দাঁড়িয়ে নামাজও পড়ছে!
খাইরুন নিসা নামাজ শেষ করে নিজ থেকেই বললেন,
” ওর নাম স্বর্ণলতা। মুনছুরের বউ। তোকে ওর কথায় বলেছিলাম। ”
তথ্যটা পেয়ে চাঁদনির মাথায় বাজ পড়ল যেন! কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে থেকে আচমকা বলল,
” ও আসমানের পরি তো দূর, মাটির তলায় বাস করা পোকামাকড়ের মতোও সুন্দর না। মুনছুর কী দেখে বিয়ে করছে? শলার মতো শরীর! সামনে, পেছনে সবদিকেই তো ফাঁকা। একটা শার্ট পরিয়ে দিলে ছেলে হয়ে যাবে। ”
দাদিজান বিরক্তে কপাল দলা করে ফেললেন। চাঁদনি বেশি বাড়িয়ে বলছে। স্বর্ণলতা এতটাও কুৎসিত না। গায়ের রঙটা পরিষ্কার। চাঁদনির পাশে দাঁড়ালে, একটু মলিন লাগবে তাই বলে কালো বলা চলে না। তাছাড়া মেয়ের বয়স কম, ঋতুস্রাব হয়নি। শরীরটা বাড়বে কী করে? নারীর দেহের সৌন্দর্য একটু একটু করে ফুটতে থাকে ঋতুস্রাবের পর। মনের মধ্যে ভাবনা চলাকালীন স্বর্ণলতার দিকে ফিরে তাকালেন। আশ্চর্য হলেও সত্য দৃষ্টিজোড়া সরাসরি পড়ল, স্বর্ণলতার বুকে। সঙ্গে সঙ্গে আটকে গেল। মনে হলো, চাঁদনি সামনে, পেছনে ফাঁকা বলতে শিশুর মতো শরীর বুঝালেও, শরীরটা শিশুর মতো নয়। কিশোরী ছাপ বুঝা যায়। পুরুষের চোখে কামনা সৃষ্টি করার মতো দৈহিক গঠন হয়েছে।
” মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে, কোনো ঝিয়ের মেয়ে। দাদিজান, ওর মা কি এই বাড়িতে কাজ করে? মুনছুর শেষমেশ ঝিয়ের মেয়ের দিকে নজর দিল! ”
” আমি ঝিয়ের মাইয়া না। আমার মা, কারও বাড়ি কাম করে না। আপা, আপনি দেখতে সুন্দর হইলে কী হইব, মনডা দুইনার কালা! মনে হয়, লেখাপড়া করেন নাই। তাই জ্ঞান অর্জন করতে পারেন নাই। করলে, মনের কালা দূর হইয়া যাইত। জ্ঞান হইল মনের আলো। ”
স্বর্ণলতার কথা শুনে খাইরুন নিসা হেসে ফেললেন। চাঁদনির পাশে বসে বললেন,
” বানরের মতো গাছে না চড়ে যদি, স্কুলে যেতি তাহলে এই পোকামাকড়ের চেয়েও অসুন্দর মেয়েটার কাছে মূর্খ প্রমাণিত হতি না। ”
চাঁদনির রা গ হলো না। অভিমান ধরা পড়ল কণ্ঠস্বরে। বলল,
” আমি তো তোমার নাতির কোলে চড়ার জন্য গাছে গাছে চড়ে বেরিয়েছি। তুমি সব জেনেও, এমনটা বলতে পারলে! ”
দাদিজানের হাসি চওড়া হলো। পা তুলে আয়েশ করে বসলেন বিছানায়। চাঁদনির গায়ে হাত রেখে ধীরে ধীরে বললেন,
” তোকে দরকারে ডেকেছি। ”
” কী দরকার? ”
” বলছি। আগে মুনছুরকে ডেকে নিয়ে আয় তো। তোর থাকার ব্যবস্থা করি। ”
চাঁদনি ঠোঁট বাঁকিয়ে মুখ গোমরা করে বলল,
” পারব না৷ যে ছেলে বউয়ের সামনে আমাকে চ ড় মারে, তার সাথে আমার কোনো কথা নেই। দেখাও নেই। ”
খাইরুন নিসা অবাক কণ্ঠে সুধালেন,
” চ ড় মে রেছে নাকি? ”
চাঁদনি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝাতে চেয়েও থেমে গেল। বাঁকা চোখে তাকাল স্বর্ণলতার দিকে। মেয়েটি তার মুখের দিকে চেয়ে আছে। চোখদুটিতে ভীষণ কৌতূহল, আগ্রহ। সে ঠোঁট কা মড়ে বলল,
” যার স্বামী তাকেই ডাকতে বলো। আমি পারব না। ”
দাদিজান সঙ্গে সঙ্গে বললেন,
” স্বর্ণলতাকে পাঠানো যাবে না। ”
” কেন? ”
” ঝামেলা আছে। সেই জন্যই তোকে ডাকা। মুনছুরের সাথে অভিমান করে লাভ আছে? ও কি বুঝে এসব? বুঝলে, আমার এত জ্বালা হতো? ছেলেটাকে কবেই শোধরে নিতাম। ”
কথাগুলো বলতে বলতে পায়ের ভাঁজ খুললেন। মেঝেতে স্পর্শ করতে চাঁদনি বলল,
” তোমার কষ্ট করে যেতে হবে না। আমি যাচ্ছি। থাকার ব্যবস্থা হয়ে গেলে, চ ড় মা রার শোধটা হয়ে যাবে। ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র মতো কাহিনি হবে। ”
সে বিছানা থেকে নামল লাফিয়ে। দরজা পার হতে দেখল, মুনছুর সাখাওয়াত বসার রুমে বসে আছে। মুখটা এদিকে ফেরানো। দৃষ্টিও সোজা এঁটে আছে দাদিজানের রুমের দিকে। সে বের হতেই চোখে চোখ পড়ে গেল। চাঁদনি মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে চেয়ে বলল,
” দাদিজান ডাকছে। ”
মুনছুর সাখাওয়াত এক মুহূর্তও দেরি করল না। বড় বড় কদম ফেলে চলে এলো দাদিজানের রুমে। তিনি বেশি এগোতে দিলেন না। দরজার কাছে থামিয়ে দিলেন। গম্ভীরমুখে বললেন,
” আমার পাশের ঘরটা পরিষ্কার করার ব্যবস্থা কর৷ চাঁদনি কয়দিন থাকবে এখানে। ”
নাতির মুখের ভাব বদলে যেতে তিনি চটজলদি বললেন,
” স্বর্ণলতাও ওর সঙ্গে থাকবে। তোর দাদাজান মারা গেছে, অনেক বছর। তার চলে যাওয়ার পর থেকে এই ঘরে, এই বিছানায় আমি একা থাকি। এতদিনে অভ্যাসটা এত খারাপ হয়ে গেছে যে, অন্য কেউ পাশে থাকলে ঘুম হচ্ছে না। আমি চাচ্ছি না, এই শেষ বয়সে ঘুমের কষ্ট করি। ”
” ঠিক আছে। ঘুমের কষ্ট করতে হবে না। কিন্তু স্বর্ণলতাকে অন্য কারও সাথে থাকতে হবে না। আমার সাথে, আমার ঘরে থাকবে। ”
” না, থাকবে না। তোর সাথে আমার কী কথা হয়েছিল? একদিনেই বেঁকে বসলে তো হলো না। ”
” তখন তো জানতাম না, ও কে চাঁদনির কাছে গছিয়ে দিবে! ”
” এটা গছিয়ে দেওয়া নয়, মুনছুর। তোর ও স্বর্ণলতার ভালোর জন্য চাঁদনির কাছে ও কে পাঠাচ্ছি। ”
মুনছুর সাখাওয়াত কঠোর দৃষ্টি রাখল চাঁদনির পানে। সে টের পেয়ে ভেংচি কাটল। মুখ ফিরিয়ে নিল অন্যদিকে।
” এই বেহায়াটা আমাদের কোন ভালোটা করবে বুঝতে পারছি না। ওর চরিত্র সম্পর্কে তোমার সবটাই তো জানা! ”
” জানি বলেই ডেকে পাঠিয়েছি। মনে হচ্ছে, যে শিক্ষাটা আমি দিতে পারব না, সেটা চাঁদনি পারবে। ”
মুনছুর সাখাওয়াতের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে যেন! কোনোভাবে দুই হাতে বাঁধটা আটকে রেখে বলল,
” ও কী শিক্ষা দিবে? ভুল করেও স্কুলের মাঠে পা দিয়েছে কখনও? ”
” সব শিক্ষা স্কুলে দেওয়া হয় না। পাঠ্যবইয়েও পাওয়া যায় না। মুনছুর, তুই এসব বুঝবি না। কথা না বাড়িয়ে যে কাজটা করতে বলেছি, সেটা কর। চাঁদনি আমার কথায়, স্বামী-সংসার ফেলে এসেছে। যত দ্রুত কাজ হবে, তত দ্রুত ফেরত যেতে পারবে। ”
স্বর্ণলতা দূরে দাঁড়িয়ে সব শুনছে ও দেখছে। মেয়েটির পরিচয় মেলেনি এখনও। নিজের মতো যুক্তিসঙ্গত কোনো সম্পর্কও বের করতে পারছে না। এরা ভাই-বোন হতে পারে না। অন্য যে সম্পর্কটা মাথায় এসেছিল, সেটাও বাদ দিতে হলো। স্বামী, সংসার ফেলে এসেছে মানে চাঁদনি বিবাহিত। একজন বিবাহিত মেয়ে নিশ্চয় অন্য পুরুষের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক রাখতে পারে না?
চলবে