মরুর বুকে বৃষ্টি পর্ব-১৫

0
1360

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-১৫

★আরও একটা সপ্তাহ পার হয়ে গেছে আদিত্য আর নূরের হাসিখুশি ময় জীবনের। ঘুম থেকে উঠে রোজকার মতো নিজের বুকেই তার প্রাণভোমরাকে দেখতে পেল আদিত্য। কতো শান্তিতে তার বুকের জমিনে ঘুমিয়ে আছে। আদিত্য মুচকি হেসে নূরকে নিজের থেকে আলতো করে ছাড়িয়ে বালিশে শুইয়ে দিল। নূরের কপালে ভালোবাসার উষ্ণ পরশ দিয়ে বিড়বিড় করে বললো।
–হ্যাপি বার্থডে মাই এঞ্জেল। জন্মদিন শুভ হোক পরিটার।

আজকের দিনটা আদিত্যের কাছে অনেক স্পেশাল। আজ যে নূরের জন্মদিন। আদিত্য অনেককিছু প্লানিং করে রেখেছে নূরের আজকের দিনটা স্পেশাল করার জন্য। আদিত্য আজ অফিসে যাবে না। আজকের পুরোটা সময় নূরের সাথে কাটাবে সে। নূরের গায়ে চাদর টেনে দিয়ে উঠে গেল আদিত্য। কিছুক্ষণ জগিং করে এসে ফ্রেশ হয়ে নিল আদিত্য। আজ আর সে নূরকে ডাকবেনা। যতক্ষণ খুশি ঘুমাক। নিজের ইচ্ছেমতো উঠবে আজ নূর।

বেলা নয়টার দিকে ঘুমের রেশ কাটলো নূরের। আড়মোড়া ভেঙে চোখ খুলে তাকালো নূর। তবে রোজকার মতো আদিত্যকে চোখের সামনে পেল না নূর। নূর উঠে বসে রুমের এদিক ওদিক তাকিয়ে কোথাও আদিত্যকে দেখতে পেল না। আদিত্যকে না দেখতে পেয়ে নূরের কেমন যেন লাগলো। রোজতো হিরো আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দেয়। তাহলে আজ কেন উঠালো না?নূরের মনে হালকা অভিমানের সৃষ্টি হলো আদিত্যের প্রতি। নূর হাটু ভাজ করে মাথা নিচু করে হাঁটুর ওপর ঠেকালো। এলোমেলো চুলগুলো সব ছড়িয়ে পড়লো। তখনই হঠাৎ একটা বিকট শব্দ হলো। নূর চমকে গিয়ে মাথা উপরে তুললো। সাথে সাথে উপরে থাকা বেলুনটা ফেটে, তার ভেতরে থাকা গোলাপের পাপড়ি আর রঙিন ঝিলিক গুলো নূরের গায়ের ওপর ছড়িয়ে পড়লো।

নূর প্রথমে অবাক হয়ে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো। কিন্তু পরে ফুলের পাপড়ি দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। একটু পরে আরও এক ঝুড়ি ফুলের পাপড়ি ওর গায়ের ওপর এসে পড়লো।এভাবে পর পর কয়েক বার করে অনেক গুলো ফুলের পাপড়ি এসে পড়লো নূরের গায়ের ওপর। পুরো বিছানা ফুলের গালিচা হয়ে গেল । নূরের খুশী আর দেখে কে।নূর উচ্ছ্বসিত হয়ে তালি বাজাতে লাগলো,আর ফুলের পাপড়ি গুলো হাতে নিয়ে উড়াতে উড়াতে খিলখিল করে হাসতে লাগলো। পর্দার আড়াল থেকে নূরের হাসিমুখ টা দেখে মুগ্ধ হচ্ছে আদিত্য।

একটু পরে আদিত্য আড়াল থেকে বেড়িয়ে আসতে আসতে গানের সুরে বলে উঠলো।
–হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।হ্যাপি বার্থডে মাই এঞ্জেল। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।
বলতে বলতে আদিত্য নূরের কাছে এসে বসলো। নূরের গালে হাত রেখে বললো,
–শুভ জন্মদিন নূর। কেমন লাগলো সারপ্রাইজ?

নূর বিস্ময় নিয়ে বললো।
–এগুলো তুমি করেছ? ওয়াও কত্তো সুন্দর। তুমি এত্তো গুলো ভালো হিরো।
কথাটা বলে নূর আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্যও মুচকি হেসে নূরকে জড়িয়ে ধরলো। একটু পরে নূর আদিত্যকে ছেড়ে দিয়ে বললো।
–আজ বুঝি আমার বার্থডে? আমার তো মনেই নেই।

–তোমার মনে রাখতে হবে না। আমি মনে রেখেছি না? এতেই এনাফ।

ওদের কথার মাঝে হঠাৎ দরজা খুলে হুড়মুড়িয়ে প্যাঁ পুঁ বাঁশি বাজিয়ে ভেতরে ঢুকলো আবির,আয়াত, নিলা,আর বিহান। সবার মাথায় কোন টুপি,গলায় ঝিলিমিলি কাগজ আর মুখে প্যাঁ পুঁ বাঁশি। রুমে ঢুকেই সবগুলো নূরের বেডের চারপাশে গোল গোল ঘুরে নাচতে নাচতে গাইতে লাগলো।
♬ ♬ অওও.. তেরা হ্যাপি বাড্ডে
♬ ♬ অওও.. তেরা হ্যাপি বাড্ডে
♬ ♬ অওও.. তেরা হ্যাপি বাড্ডে
♬ ♬ নাচ পাজামা পাকাড়কে বাড্ডে
♬ ♬ অওও..তেরা হ্যাপি বাড্ডে
♬ ♬ অওও…তেরা হ্যাপি বাড্ডে
♬ ♬ আজতো পার্টি জাবতাক ফাট্টে
♬ ♬ নাচ পাজামা পাকাড়কে বাড্ডে

এসব দেখে নূর আরও খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল। হাতে তালি বাজিয়ে খিলখিল করে হাসতে লাগলো। সবাই এক এক করে এসে নূরকে বার্থডে উইশ করতে লাগলো।

বাসায় নূরের জন্য বার্থডে পার্টির আয়োজন করেছে আদিত্য। বাইরের কোন লোকজন না। শুধু নিজেদের লোকজন মিলে করবে।কারণ আদিত্য চাইনা বাইরের কেও এসে নূরকে উল্টো পাল্টা কিছু বলুক। আজকের দিনে মোটেও নূরকে মন খারাপ হওয়ার কারণ দিবেনা আদিত্য। আজকে শুধু নূর হাসবে,আর আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে থাকবে।

পার্টির জন্য বাসার লোকজন মিলেই ডেকোরেশন করছে। কেও বেলুন ফুলাচ্ছে,কেও ফুল লাগাচ্ছে। নানান জন নানান কাজ করছে। সবাই খুব স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কাজ করছে। নূরকে বাসার সব সার্ভেন্ট আর গার্ডস রাও অনেক পছন্দ করে। এইকয়দিনে নূর সবার মন জয় করে নিয়েছে। এমন নিষ্পাপ আর মায়াবী মেয়েকে কেউ ভালো না বেসে থাকতেই পারে না।

নিলা একটা রেডমিট সিড়ির ওপর দাঁড়িয়ে দেয়ালে ফুলের মালা লাগিয়ে ডেকোরেশন করছে। আবিরও কিছুটা দূরে অন্য কাজ করছিল। নিলাকে দেখে বরাবরের মতো ওর মাথায় দুষ্টু পোকা কামড়ালো। আবির ধীরে ধীরে নিলার সিড়ির নিচে গিয়ে দাঁড়াল। নিলা উপর দিকে কাজ করছিল তাই নিচে দেখছে না। আবির সুযোগ বুঝে হাত দিয়ে সিঁড়িটা একটু ধাক্কা দিল। ধাক্কা দেওয়ায় সিঁড়িটা নড়ে উঠলো।হঠাৎ এমন হওয়ায় নিলা নিজের ব্যালেন্স ধরে রাখতে পারলো না। ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যেতে নিল।তবে পড়ে যাওয়ার আগেই আবির নিচ থেকে নিলাকে কোলে ধরে ফেললো। নিলার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো।
–বাহ্ মিছ কচি বিয়াইন।এখন আমি কিছু বললেই লুচু হয়ে যাবো তাইনা? আর তুমি যে সবসময় ইচ্ছে করেই আমার আলিঙ্গন পেতে চাও তার বেলায় কিছুই না তাইনা?দিন নেই, দুপুর নেই, সন্ধ্যা নেই, সাঝ নেই, লোকজন আছে কিনা সেটা দেখার বালাই নেই।আমাকে দেখলেই শুধু গায়ে ঢলে পড়তে ইচ্ছে করে তাইনা? এখন নিশ্চয় তুমি বলবে যে, তুমি ইচ্ছে করে পরোনি।ভুলে হয়ে গেছে। আই সোয়ার, আমাদের মাঝে কোয়েন্সিডেন একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না? বায়দা মেঠোপথ, তোমার যখন এতই ইচ্ছে হয় তো আমাকে বললেই তো পারো।এভাবে বাহানা বানানোর কি দরকার। তুমি বললে আমি মধ্যে রাতেও তোমার সেবায় উপস্থিত হয়ে যাবো। আই এ্যাম ভেরি ফ্লেক্সিবল ইউ নো।

আবিরের কথাগুলো শুনে নিলা একলাফে আবিরের কোল থেকে নেমে আঙুল তুলে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো।
–দেখুন,,,

যথারিতী আবির নিলাকে মাঝপথে থামিয়ে বলে উঠলো।
–এখানেই দেখাবে? না মানে বলছিলাম যে, এখানে তো সবাই আছে। চলো রুমে গিয়ে দেখাও।
কথাটা বলে আবির নিলার হাত ধরে নিয়ে যেতে নিলে, নিলা ঝটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো।
–ব্যাস, অনেক হয়েছে। আপনি কিন্তু সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন?

আবির বলে উঠলো।
–আরে সীমাকে এখন ছাড়বো কেন? সীমাকে তো সেই একবছর আগেই ছেড়ে দিয়েছি। আসলে মেয়েটা না একটু বেশিই ইরিটেটিং ছিল।তাই ওর সাথে বেশিদিন টিকলো না।

নিলা রাগে কিড়মিড় করে দুই হাত মাথার দুইপাশে মুষ্টি করে,মুখ দিয়ে গররর শব্দ বের করলো।যার অর্থ অসহ্যকর। তারপর গটগট করে ওখান থেকে চলে গেল। আর আবির পেছন থেকে হাসতে লাগলো। মেয়েটাকে জ্বালাতে তার চরম লাগে।

আয়াত এতক্ষণ ধরে আবির আর নিলার কান্ড দেখছিল।যদিও ওদের কথাবার্তা কিছু শুনতে পাইনি। তবে ওদের দেখে আয়াতের মাথায়ও একটা বুদ্ধি এলো। আয়াতের থেকে কিছুটা দূরে বিহান কাজ করছিল। আয়াতও সিড়িতে দাঁড়িয়ে ফুল লাগাচ্ছিল। আয়াত নিজে নিজেই পড়ে যাওয়ার ভান করে, কিছুটা উচ্চস্বরে বিহানকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলো।
–আ আমি পরে যাচ্ছি, কেও আমাকে বাচাও আআআ।
আয়াত আরচোখে তাকিয়ে দেখলো বিহান ওর দিকেই আসছে।আয়াত মনে মনে লুঙ্গি ডান্স দিল।তারমানে ওর প্ল্যান কাজ করেছে।ওয়াও আয়াত তোর কতো বুদ্ধি। এতো বুদ্ধি নিয়ে রাতে ঘুমাস কিভাবে। আয়াত মনে মনে খুশি হয়ে, বিহানের কাছে আসা দেখে আয়াত চোখ বন্ধ নিজে নিজেই আল্লাহু নাম নিয়ে পরে গেল। চোখ বন্ধ করেই অনুভব করলো ও নিচে পরেনি, কারোর শক্ত বাহুতে আটকে আছে। তারমানে ও ওর বিহানের কোলে পরেছে। কথাটা ভাবতেই আয়াতের খুশিতে অজ্ঞান খাওয়ার উপক্রম।

আয়াত খুশী মনে চোখ খুলে তাকালো তার হিরোকে দেখার জন্য। চোখ খুলে তাকাতেই আয়াতের মুখটা বেলুনের মতো ফটাস করে ফুটে গেল। কোলে নেওয়া ব্যাক্তিটিকে দেখে আয়াত ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। কারণ এটা তার মাচোম্যান না,বরং একটা গার্ড ওকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর আয়াতের দিকে তাকিয়ে আবালের মতো দাঁত বের করে হাসছে। আয়াত একলাফে গার্ডের কোল থেকে নিচে নেমে দাঁড়াল। আয়াত পাশে তাকিয়ে দেখলো বিহান একটা ফুলের টোকরি উঠাচ্ছে। তারমানে বিহান ওকে ধরার জন্য না,বরং এই টোকরি নিতে এসেছিল? আয়াতের বুক চিরে এক হতাশার নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো। বেচারি কি ভেবেছিল,আর কি হয়ে গেল। লোকটার কি আমাকে চোখেই পরেনা? সত্যি কি তার মনে কখনো কোন অনুভূতি জাগাতে পারবো না আমি?সে কি এতটাই পাথর হয়ে গেছে?
___

আদিত্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নূরের জন্য অপেক্ষা করছে। একটু আগেই নূরের জন্য আনা ড্রেসটা নূরের হাতে দিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়েছে পড়ে আসার জন্য। তখন থেকে আদিত্য বাইরে অপেক্ষা করছে। আরও পাঁচ মিনিট পর নূর ওয়াশরুমের দরজা খুললো। দুই হাতে গাউনের দুইপাশের সাইডের কাপড় উচু করে ধরে আস্তে আস্তে বেড়িয়ে আদিত্যের সামনে এসে মিষ্টি হেসে দাঁড়াল।

আদিত্যের চোখ দুটো ঝলসে উঠলো, নূরের এই অলৌকিক আসমানী রুপ দেখে। আদিত্য যতটা ইমাজিন করেছিল, তার চেয়ে শতগুণ বেশি অপূর্ব লাগছে নূরকে। যে সৌন্দর্য আদিত্যর চোখের ধারণ ক্ষমতার বাইরে। আদিত্য নূরের জন্য একটা সাদা ফেইরিটেল প্রিন্সেস গাউন এনেছে।ফুল হাতার গাউনটা, যার নিচের অংশ অনেক টা ফোলানো আর ফ্লোরে অনেকখানি ছড়িয়ে আছে। নূরকে আজ সত্যিকারের একটা পরি লাগছে। আদিত্যের পরি।

নূর গাউনের দুইপাশে ধরে হেলেদুলে আহ্লাদী কন্ঠে বললো।
–আমাকে কেমন লাগছে হিরো?

নূরের কথায় আদিত্যের ঘোর কাটলো। আদিত্য দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে বলে উঠলো।
–এমন কোন ভাষা কি আছে, যে ভাষাটা দিয়ে তোমার রুপের প্রশংসাটা জাস্টিফাই করতে পারবো?

আদিত্যের কথা নূরের অবুঝ মাথায় বোধগম্য হলো না।নূর ঠোঁট উল্টিয়ে বললো।
–মানে?

আদিত্য এবার হালকা হেঁসে বললো।
–মানে, আমার এঞ্জেল টাকে আজ অনেক অনেক অনেক সুন্দর লাগছে। সবচেয়ে সুন্দর।

নূর খুশী হয়ে বললো।
–সত্যিই?

–হ্যাঁ একদম সত্যি। এখন এসো আমি তোমাকে রেডি করিয়ে দেই।

আদিত্য নূরকে আয়নার সামনে বসিয়ে ওকে সাজিয়ে দিতে লাগলো।চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগিয় দিল। নূরের চুলগুলো আঁচড়িয়ে পোনিটেল করে দিল। নূরের গলায় আর কানে ডায়মন্ডের একটা ছোট নেকলেস আর দুল পড়িয়ে দিল। সবশেষে নূরের মাথার ওপর একটা ডায়মন্ডের পাথর বসানো ক্রাউন লাগিয়ে দিল। ক্রাউনের সাথে লাগানো পাতলা সাদা ওড়নার মতো কাপড় টা অনেকখানি নিচ পর্যন্ত ঝুলে পড়লো। সাজানো শেষে আদিত্য অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। নিজের চোখের ওপরই ভয় লাগছে ওর। আবার নিজেরই না নজর লেগে যায়। আদিত্য নিজের অনামিকা আঙুলের মাথায় একটু কাজলের ফোটা লাগিয়ে, নূরের কানের পেছনে ছোট্ট করে একটা নজর টিকা লাগিয়ে দিল। যাতে পরিটার কারোর নজর না লাগে। তারপর নূরের গালে হাত রেখে বললো।
–আমার এঞ্জেল আজ সত্যিকারের পরি হয়ে গেছে।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে দিল।

সন্ধ্যা ৭-৩০
আদিত্য নূরের হাত ধরে ধীরে ধীরে নিচে নেমে আসছে।আদিত্যকে আজ এ্যাশ কালারের গ্রামীণ চেকের কোট প্যান্টে অনেক ড্যাশিং লাগছে। নিচে সবাই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। দুজনকে একসাথে কতসুন্দর মানিয়েছে।যেন মেট ফর ইচ আদার। নূরের মা বাবাও এসেছে আজ। নিজের মেয়ের এমন খুশী আর সৌভাগ্য দেখে তাদের চোখে আনন্দ অশ্রু চলে এসেছে। তাদের অসুস্থ মেয়েটার কপালে যে এতসুখ ছিল, সেটা তারা কখনো কল্পনাও করেনি।

সবাই খুশী হলেও,শরিফা বেগম নূরের এতো সুখ মোটেও সহ্য করতে পারছেন না।শরীর জ্বলে যাচ্ছে তার। সেতো এখানে আসতেও রাজি ছিলনা। আশরাফ রহমান আর ছেলে মেয়েদের চাপে পড়ে আসতে হয়েছে। তবে নূরের এতো সুখ যেন তার চোখে কাটা হয়ে বিঁধছে।

নূর নিচে এসে ওর বাবা মার কাছে ছুটে এসে হাসি হাসি মুখে বললো।
–বাবা,আম্মু দেখ আমাকে কত্তো সুন্দর লাগছে। এগুলো সব হিরো আমার জন্য এনেছে। সুন্দর না?

নূরের মা নূরের গালে হাত রেখে বললেন।
–হ্যাঁ নূরিমা, তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। একদম পরিদের মতো।

–হি হি হিরোও তাই বলেছে। আমাকে নাকি পরির মতো লাগছে।

–তোমার হিরোটা অনেক ভালো, তাইনা নূরিমা?

–হ্যাঁ হ্যাঁ, এত্তো এত্তো এত্তগুলা ভালো আমার হিরো।
নূর দুই হাত ছড়িয়ে করে পেছন দিকে যতটুকু পারে ততটুকু প্রসারিত করে পরিমাপ করে দেখালো।

একটু পরে কেক কাটিং এর সময় হলো। আদিত্য ইয়া বড়ো চার লেয়ারের একটা কেক নিয়ে এসেছে নূরের জন্য। নূর এত্তো বড়ো কেক দেখে খুশিতে হাতে তালি বাজাচ্ছে। আদিত্য নূরের হাতের ওপর হাত রেখে নূরকে দিয়ে কেক কাটালো। সবাই হাতে তালি বাজিয়ে হ্যাপি বার্থডে উইশ করলো। নূর কেক নিয়ে প্রথমে আদিত্যকে খাইয়ে দিল,তারপর ওর বাবা মাকে খাইয়ে দিল। এক এক করে সবাই যার যার মতো কেক খেতে লাগলো।

নিলা এক পিচ কেক নিয়ে খেতে যাচ্ছিল,ওমনি আবির ফট করে এসে নিলার হাত থেকে কেকটা নিজের মুখে পুরে নিলো। নিলা দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–এটা কি হলো?

আবির ভাবলেশহীন ভাবে বললো।
–কি হবে? কিছু হওয়ার জন্য তো,আগে কিছু করতে হবে তাইনা? আমরা কি তেমন কিছু করেছি? বায়দা চিপা গলি,আজ কিন্তু তোমাকে চরম লাগছে। একদম এটম বোম। তুমি রাজি থাকলে আমরা এখুনি কিছু করতে পারি। আমি কথা দিচ্ছি তারপর ঠিক নয়মাস পরেই তোমার এটা বা ওটা একটা কিছু হয়ই যাবে।
কথাটা বলে আবির চোখ টিপ মারলো।

–ফালতু কথা বলবেন না একদম । অসভ্য কোথাকার।আপনি আমার কেক খেলেন কেন? কেকের কি অভাব পরেছে যে,আমার টা নিয়ে খেতে হবে?

–কেকের তো অভাব নাই জানেমন। পিয়ার,ইস্ক,মোহাব্বতের অভাব। আর সেটা তোমার কাছেই আছে। দাওনা একটু ভালুপাসা।

তখনই সাউন্ড বক্সে একটা গান বেজে উঠল।কয়েকজন ডান্স ফ্লোরে নাচানাচি করছে। নিলা বাঁকা হেসে বলে উঠলো।
–ইস্ক চাই আপনার তাইনা? আসুন দিচ্ছি আপনাকে।
কথাটা বলে নিলা আবিরের হাত ধরে ডান্স ফ্লোরে নিয়ে এলো। আবিরও খুশী খুশী নিলার সাথে এলো। ডান্স ফ্লোরে এসে হঠাৎ নিলা নিজের কোমড় বাঁকিয়ে আবিরকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল। তারপর আবিরের চারিদিকে গোল গোল ঘুরে তুড়ি বাজিয়ে এটিটিউট নিয়ে নাচতে নাচতে গেয়ে উঠলো।
♬ ♬ ইয়ে ইস্ক ইস্ক চিল্লাতে হে
♬ ♬ উ.উউউ ইয়া
♬ ♬ ইয়ে গালি গালি মান্ড রাতে হে
♬ ♬ উ.উউউ ইয়া
♬ ♬ শাদি কে ডাগার,না যায়ে মাগার
♬ ♬ ইয়ে গোরে গোরে ছে ছোড়ে
♬ ♬ ইয়ে গোরে গোরে ছে ছোড়ে
♬ ♬ ইয়ে গোরে গোরে ছে ছোড়ে
(নিলার সাথে এবার আরও মেয়েরা এসে যোগ দিল। সবাই আবিরকে নিয়ে টানা হ্যাচরা করছে আর নাচছে।নিলা আবিরকে টিস করে করে নেচে নেচে গাইলো)
♬ ♬ আন্দার সে চাহে কুছভি হো ইয়ে
♬ ♬ আদা মাগার হে হিরো ওয়ালে
♬ ♬ দিন রাত কিতাবে পাড়তে হে ইয়ে
♬ ♬ ল্যারকি কি তাসবিরো ওয়ালে

♬ ♬ কাহে জীবন মেলা,হোই শাভা
♬ ♬ পার শাদী ঝামেলা, হোই শাভা
♬ ♬ দারওয়াজা ইসে দিখলাও যারা
♬ ♬ ইয়ে গোরে গোরে ছে ছোড়ে
♬ ♬ ইয়ে গোরে গোরে ছে ছোড়ে
♬ ♬ ইয়ে গোরে গোরে ছে ছোড়ে
(মেয়েরা সবাই মিলে বেচারা আবিরের নাজেহাল অবস্থা করে ফেলছে। নিলা এবার আবিরকে নিচে ফেলে দিয়ে ওর পিঠের ওপর বসে পিঠের শার্ট টেনে টেনে গাইলো।)
♬ ♬ শাদী কী জো বাত কারো তো
♬ ♬ বুরি ইয়ে হালাত কারতি হে
♬ ♬ আচ্ছা? হুমমম
♬ ♬ বিন শাদী সাঙ রেহনি কি ইয়ে
♬ ♬ বারি ওকালাত কারতি হে

♬ ♬ হার ল্যারকি পিয়ারি,হোই শাভা
♬ ♬ বিন জিম্মেবারি,হোই শাভা
♬ ♬ লেইলা কে বিনা ইয়ে মাজনু বানে
♬ ♬ ইয়ে গোরে গোরে ছে ছোড়ে
♬ ♬ ইয়ে গোরে গোরে ছে ছোড়ে
♬ ♬ ইয়ে গোরে গোরে ছে ছোড়ে
(নিলা একটা লাঠি ভর দিয়ে বুড়িদের মতো হেঁটে হেঁটে গাইতে লাগলো)
♬ ♬ যাব ইয়ে বুড়ে হো যায়েঙ্গে
♬ ♬ খাস খাস কে রেহ যায়েঙ্গে
♬ ♬ কাঁন্ধে পার কোই হাত না হোগা
♬ ♬ হাম দাম কোই সাথ না হোগা
♬ ♬ ঠোকার খায়েঙ্গে, হোই শাভা
♬ ♬ ফির পাসতায়েঙ্গে,হোই শাভা
♬ ♬ তাব ইয়াদ ইনহে আয়েঙ্গে হাম
♬ ♬ ইয়ে গোরে গোরে ছে ছোড়ে
♬ ♬ ইয়ে গোরে গোরে ছে ছোড়ে
♬ ♬ ইয়ে গোরে গোরে ছে ছোড়ে
♬ ♬ ইয়ে গোরে গোরে ছে ছোড়ে

সব মেয়েরা মিলে বেচারা আবিরের অবস্থা কেরোসিন করে ফেলেছে।ডান্স শেষে নিলা আবিরের দিকে তাকিয়ে চুল ঝটকা মেরে এটিটিউট নিয়ে চলে গেল। আদিত্য আর বিহান আবিরের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে। নূরেরও খুব মজা ওদের ডান্স দেখে।
বিহান একটু পরে আবিরের কাছে গিয়ে বললো।
–হুদাই যে ক্যান পাঙ্গা লইবার যাচ? দেখলিতো মাইয়াগো ক্যালমা? মাইনছে কি হুদাই কয় যে নারীর ছোল(ষোল) কলা আছে। খালি এক কলা দেইখাই তোর এই হাল হইচে।ভাব ছোল কলা দেখাইলে তো তুই পৃথিবীর জন্য ইতিহাচ হইয়া যাইবি গা।🤣

–হ হ হাস হাস। আপনা টাইম ভি আয়েগা।তখন আমিও দেখাবো এই আবির কি জিনিস।

সবাই হাসি আনন্দ করলেও,শরিফা বেগমের কিছুই সহ্য হচ্ছে না। তারওপর আবার আবিরকে নিলার সাথে দেখে আরও বেশি রাগ হচ্ছে। মনে মনে ভাবছে, ওই থার্ডক্লাশ মেয়েটা আবার আবিরকে পটানোর চেষ্টা করছে নাতো? না না এটা হতে দেওয়া যাবে না। আমার ছেলেকে ওই মেয়ের জালে কখনোই ফাঁসতে দেবনা আমি। কখনোই না।

চলবে…..