#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-২০
★আদিত্য অফিস থেকে ফিরসে।গাড়িতে বসে কিছু একটা নিয়ে কেমন চিন্তায় আছে। সেটা দেখে বিহান বলে উঠলো।
–কিরে কি হইচে? এমতে মুখ লটকাইয়া আছোছ ক্যালা?
আদিত্য গম্ভীর কন্ঠে বললো।
–ইয়ার একটা টেনশনে আছি। আমাদের সিলেটের প্রজেক্টে একটু ঝামেলা হয়েছে। আমাদের দুজনের কাল সিলেট যেতে হবে। তাই চিন্তা হচ্ছে। নূরকে এভাবে একা রেখে যেতে আমার মন টানছে না। ওকে বাসায় রেখে অফিসে যতক্ষণ থাকি ততক্ষণই আমার টেনশনের শেষ থাকে না। সেখানে ওকে একা রেখে আউট অফ টাউন যাবো কিভাবে? আবার না গেলেও হবে না। অন্য কোন ব্যাপার হলে হয়তো আমি যেতাম না। কিন্তু তুই তো জানিস এটা আমার ড্রিম প্রজেক্ট। ওখানে আমার বাবা মার নামে আধুনিক আর মানসম্পন্ন একটা এনজিও খুলছি।যেখানে এতিম আর অবহেলিত বাচ্চাদের জন্য সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকবে। স্কুল,হসপিটাল,বাচ্চাদের থাকার জন্য উন্নত মানের হোস্টেল, খেলার জন্য থাকবে অনেক সুযোগ সুবিধা আরও অনেক কিছু।
–হ জানিতো আমি। সবিতো বুঝলাম। তয় এককাজ করলেই তো হয়।নূরেরেও আমগো লগে লইয়া যাই।তাইলেই তে হইলো।
–আরে না। মা বলেছে নূরের নাকি দূরের রাস্তায় জার্নি করতে অসুবিধা হয়।অনেক অসুস্থ হয়ে পরে। তাই ওকে সাথেও নিতে পারছিনা। আর নূরের মা বাবাও একটু গ্রামের বাড়িতে গেছে।তাই তারাও আসতে পারবেনা।
–হুমম তাইলে আর কি করার? আরে তুই টেনশন লইচ না। কিছুই হইবো না। বাসায় এতগুলান লোক আছে।আর আবির আর নিলাও তো আছে। ওরা দেইখা রাখবো নূরেরে।আর তাছাড়া মাত্র একদিনেরই ব্যাপার। ছকাল বেলা যামুগা। কাজবাজ সাইরা আবার রাতেই চইলা আমু।
–হ্যাঁ তাই করতে হবে। তাছাড়া তো আর কোন উপায় নেই।
কথাটা বলে আদিত্য একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। বিহান যতই বলুক তবুও ওর টেনশন কমছে না।ওর এঞ্জেল টাকে এভাবে রেখে যেতে ওর মন টানছে না। কিন্তু না যেয়েও উপায় নেই।
পরদিন ভোরের দিকেই আদিত্য আর বিহান সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। যাতে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে আবার সকাল সকাল ফেরত আসতে পারে। রাতে আদিত্য নূরকে কোলের মাঝে নিয়ে নরম সুরে ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে যে,তার আজ অনেক ইম্পর্ট্যান্ট একটা কাজ আছে। তাই বাসায় আসতে হয়তো দেরি হতে পারে। সে যেন কান্না কাটি না করে। নূর বাচ্চাদের মতো ঘাড় কাত করে বলেছিল,আচ্ছা কিন্তু তুমি বেশি দেরি করোনা। তোমাকে ছাড়া আমার ভালো লাগে না। আদিত্য মুচকি হেসে নূরকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে বলেছিল, তোমাকে ছাড়া আমারও ভালো লাগে না সোনাপাখি। তুমি চিন্তা করোনা আমি কাজ শেষ করেই আমার এঞ্জেল টার কাছে ফিরে আসবো।
সকালে অনেক ভোরে আসায় আদিত্য আর নূরকে ডাকেনি। আসার সময় অনেকক্ষণ নূরের মুখটার দিকে তাকিয়ে ছিল। তারপর নূরের কপালে অনেকটা সময় নিয়ে চুমু খেয়ে, নূরের হাতের উল্টো পাশে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে এসেছে আদিত্য। আসার সময় সবাইকে বারবার করে বলে দিয়ে এসেছে। সবাই যেন নূরের খেয়াল রাখে। ওকে চোখে চোখে রাখে।একমুহূর্তের জন্যেও যেন ওকে একা না ছাড়ে।
এতকিছুর পরেও আদিত্যের টেনশনের শেষ নেই। গাড়িতে বসে বসেও শুধু নূরের টেনশনই করছে। মনটা কেমন যেন ওর ধুকপুক করছে। ওর এঞ্জেল টা যেন ঠিক থাকে। আর কিছু চাইনা ওর।
_____
–ম্যাম খবর পাক্কা। আদিত্য স্যার আজ সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে। আজ সে ঢাকার বাইরে থাকবে।
ফোনটা কেটে একটা সয়তানি হাসি দিল শরিফা বেগম। এমন একটা সুযোগের আসায়ই তো সে ছিল। আদিত্যের অফিসের এক ছেলেকে টাকা খাইয়ে, আদিত্যের সব ইনফরমেশন নিতো। আর আজ সে একটা সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছে। এই সুযোগ সে হাতছাড়া করবে না। মনে মনে বলছে, আজতো ওই পাগল মেয়েটাকে তার আসল জায়গা দেখিয়েই ছাড়বো। ও কি ভেবেছিল, আমার প্ল্যান ফেইল করে ওই পাগল মেয়েটা জিতে যাবে? কখনোই না। শরিফা বেগম তার চোখের কাটাকে কিভাবে উপড়ে ফেলতে হয় তা ভালো করেই জানে। আজ দেখে নিস আমি তোর সাথে কি করি।
কথাগুলো ভেবে সয়তানি হাসি দিল শরিফা বেগম।
সকাল ১০টা
নূর নিজের রুমে বসে বিড়াল ছানা দিয়ে খেলছে। নিলা একটু আগে কলেজে গেছে। আজ নাকি ওর একটা ইম্পর্ট্যান্ট এসাইনমেন্ট আছে। তাই যেতে হয়েছে। নূরকে বলে গেছে ও ঘন্টা খানিকের ভিতরেই ফিরে আসবে। আবিরকেও ওর বাবা একটা জরুরি কাজে তার অফিসে ডেকেছে। আবির প্রথমে যেতে চেয়েছিল না নূরকে একা রেখে। কিন্তু আশরাফ রহমান বলেছেন, একটা জরুরি কাগজে নাকি আবিরের সিগনেচার লাগবে।কাজটা ইম্পরট্যান্ট না হলে তাকে যেতে বলতো না। বলেছে, শুধু সিগনেচার টা করেই চলে যেতে পারবে। তাই অগত্যা আবিরকে যেতে হয়েছে।
নূর আপাতত বাসায় একা।শুধু সার্ভেন্ট আর গার্ডস রা আছে।
একটু পরে শরিফা বেগম তার গাড়ি নিয়ে আদিত্যের বাসায় ঢুকলো। গাড়ি থেকে নেমে শরিফা বেগম গার্ডসদের দিকে তাকিয়ে বললো।
–শোন আজকে আদিত্যের বাসায় এখানকার এমপি আসবে।তাই তোমরা সবাই গেটের বাইরে গিয়ে দাঁড়াও। ওনার যেন রাস্তায় কোন সমস্যা না হয়।
গার্ডস রা শরিফা বেগমের কথা বিশ্বাস করে নিলো।কারণ আদিত্যের বাসায় মাঝে মধ্যেই এমপি মন্ত্রীরা আসে। তাই তারা সহজেই শরিফা বেগমের কথা মেনে নিলেন। আর সবগুলো গার্ড গেটের বাইরে চলে গেল। ওরা যেতেই শরিফা বাঁকা হাসলেন। তার প্রথম কাজ সফল হয়েছে। এবার আসল কাজের পালা। শরিফা বেগম এবার বাসার ভেতর ঢুকলেন। এদিক ওদিক তাকিয়ে সোজা সিড়ি বেয়ে উপরে নূরের রুমে উঠে গেল।
নূর বেডের ওপর বসে বিড়াল ছানা দিয়ে খেলছিল। তখনই শরিফা বেগম দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। শরিফা বেগম কে দেখে নূর প্রচুর ভয় পেয়ে গেল। সেদিনের কথা মনে পরে গেল ওর। ভয়ে জড়সড় হয়ে বসলো নূর। শরিফা বেগমের দিকে ভীতু চোখে তাকিয়ে বললো।
–তু তুমি এখানে কেন এসেছ? যাও এখান থেকে। তুমি অনেক পঁচা।
নূরকে এভাবে ভয় পেতে দেখে শরিফা বেগম আরও খুশী হলেন। সে ধীরে ধীরে সয়তানি হাসি দিয়ে নূরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। নূর আরও ভয়ে গুটিয়ে যেতে যেতে বললো।
–এই এই এদিকে আসছ কেন? চলে যাও এখান থেকে। যাও বলছি।
শরিফা বেগম নূরের কাছে গিয়ে নূরের দিকে ঝুঁকে সয়তানি ভাবে জোরে জোরে হাসতে লাগলো। নূর ভয়ে হাত দিয়ে দুই কান চেপে ধরে বলতে লাগলো।
–চুপ করো,চুপ করো।যাও এখান থেকে। নাহলে আমার হিরো এসে তোমাকে অনেক বকা দিবে।
শরিফা বেগম আরও উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো। তারপর হাসিটা একটু থামিয়ে বলে উঠলো।
–তোর হিরো আর আজ আসবেনা তোকে বাঁচাতে। তুই তো একটা পাগল। আর তোর মতো পাগলকে আজ আমি তোর আসল জায়গায় পৌঁছে দেব।
–এই এই আমাকে পাগল বলবে না কিন্তু। আমি পাগল না।
–একশো বার বলবো। পাগল কে পাগল বলবো নাতো কি বলবো? তুই একটা পাগল। পাগল, পাগল, পাগল,,
শরিফা বেগম বারবার নূরকে পাগল বলেই যাচ্ছে।
–না না না,আমি পাগল না।চুপ করো, চুপ করো,,
নূর আর সহ্য করতে পারছে না। কেমন যেন অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে। ধীরে ধীরে হাইপার হয়ে উঠছে। আবারও সবকিছু ছোড়াছুড়ি শুরু করে দিল।
শরিফা বেগম সয়তানি হাসি দিল। সেতো এটাই চাচ্ছিল।নূর আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে গেলেই তো সে তার কার্য সফল করতে পারবে। তাই শরিফা বেগম নূরকে আরও ক্ষ্যাপাতে লাগলো। নূর এতে আরও হাইপার হয়ে গেল। একসময় নূর একেবারে আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে গেল। জোরে জোরে চিল্লাতে চিল্লাতে সবকিছু ছোড়াছুড়ি করতে লাগলো।
তখনই একটা বড়ো এম্বুলেন্স আদিত্যের বাসার ভেতর ঢুকলো। এম্বুলেন্স টা মেন্টাল এসাইলাম থেকে এসেছে। শরিফা বেগমই এদের আসতে বলেছে।এম্বুলেন্স থামলে তার ভেতর থেকে দুজন ডক্টর আর কয়েকজন ওয়ার্ড বয় নেমে হনহন করে বাসার ভেতর ঢুকলো। সার্ভেন্ট রা তাদের দেখে কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলে, তখনই ওপর থেকে নূরের চিল্লানোর আওয়াজ শোনা গেল। আওয়াজ শুনে সবাই নূরের রুমের দিকে দৌড়ালো।
শরিফা বেগম ডক্টরদের আসতে দেখে কপালে হাত চেপে ধরে মেলোড্রামা করে বলে উঠলো।
–আপনারা এসেছেন? দেখুন দেখুন কেমন উন্মাদ পাগল এই মেয়ে। দেখুন সবকিছু কেমন ভাংচুর করছে। আমার কপালটাও ফাটিয়ে দিয়েছে। প্লিজ আপনারা এই বদ্ধ উন্মাদ পাগল মেয়েটাকে নিয়ে যান। নাহলে এই পাগল সবাইকে মেরে ফেলবে। একে নিয়ে গিয়ে পগলা গারদে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখুন।
সার্ভেন্ট রা শরিফা বেগম কে কিছু বলতে গেলে, শরিফা সবার দিকে চোখ গরম করে সবাইকে চুপ থাকতে বলে। সবাই ভয়ে আর কিছু বলতে পারে না।
ডক্টর নূরের পাগলামো দেখে ওয়ার্ড বয় গুলোকে বলল নূরকে ধরে গাড়িতে তুলতে। ডক্টরের কথামতো লোকগুলো নূরকে ধরার জন্য ওর দিকে এগিয়ে গেল। লোকগুলোকে কাছে আসতে দেখে নূর আরও ছোড়াছুড়ি করে চিল্লাচিল্লি করতে লাগলো। লোকগুলো গিয়ে নূরের দুই হাত চেপে ধরলো। নূর ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলো। আর জোরে জোরে চিল্লিয়ে কেঁদে উঠে বলতে লাগলো।
–ছাড়ো আমাকে ছাড়ো। ছেড়ে দাও আমাকে। আমি কোথাও যাবোনা। ছাড়ো আমাকে।
কিন্তু লোকগুলো শুনল না। নূরের হাত ধরে নূরকে টেনে হিঁচড়ে রুম থেকে বের করে নিয়ে আসলো। তারপর টানতে টানতে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। সার্ভেন্ট রাও ওদের পেছনে পেছনে নেমে এলো। নূরের অবস্থা দেখে ওদের চোখেও পানি চলে আসছে। ওরা লোকগুলোকে অনেক বার মানাও করছে কিন্তু লোকগুলো শুনছেই না। শরিফা বেগম পছন থেকে বিশ্ব জয়ের হাসি দিল। নূর জোরে জোরে কাঁদছে আর ছাড়া পাওয়ার জন্য হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে করতে বলছে।
–ছেড়ে দাও আমাকে,ছেড়ে দাও। হিরোওও কোথায় তুমি? হিরো আসোনা,বাচাও আমাকে। নূর ফ্লোরে ঝুলে পরে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে, আর পা দিয়ে লোকগুলোকে জোরে জোরে লাথি মারছে।
লোকগুলোর মধ্যে একটা লোক রেগে গিয়ে নূরের গালে ঠাস করে থাপ্পড় লাগিয়ে দিল ।আসলে মেন্টাল রোগীদের সাথে ওরা এভাবেই করে। নরম গালে এমন শক্ত থাপ্পড় পড়ায়, নূরের ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হতে লাগলো। গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গেল। নূর ব্যাথা পেয়ে আরও জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো। অন্য আরেকটা লোক এসে নূরের মুখে রুমাল বেঁধে দিল। নূর এবার শুধু গোঙাতে লাগলো।
এতক্ষণ চুপ থাকলেও নূরকে এভাবে মারতে দেখে সার্ভেন্ট রা আর চুপ করে থাকতে পারলোনা। মিনু আন্টি সহ বাকি সবাই তেড়ে গিয়ে নূরকে লোকগুলোর কাছ থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। তখন কিছু লোক এসে সার্ভেন্ট দের সরিয়ে নিয়ে গিয়ে তাদের একটা রুমের ভেতর আটকে রাখলো। শরিফা বেগমের এসব দেখে অনেক মজা লাগছে। সে আগেই এইসব লোকেদের টাকা খাইয়ে রেখেছিল। যাতে তারা শরিফা বেগমের প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করে।
শরিফা বেগম বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই তার পিলে চমকে গেল। দরজায় আদিত্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শরিফা বেগমের আত্মার পানি শুঁকিয়ে গেল। আদিত্য! আদিত্য কি করে এলো এখানে? ওরতো সিলেট যাওয়ার কথা। এখানে কি করে এলো?
ফ্ল্যাশব্যাক,,
আদিত্যরা প্রায় অনেকটা রাস্তা চলে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎই আদিত্যের কেমন যেন প্রচুর অস্থির লাগতে শুরু করলো। বুকটা কেমন যেন ধুকপুক করতে লাগলো। বারবার শুধু নূরের কথাই মনে পড়তে লাগলো। আদিত্য তখন নূরকে দেখার জন্য ল্যাপটপ চালু করতে নিয়ে দেখলো ল্যাপটপে চার্জ নেই। আদিত্য নিলার নাম্বারে ফোন করলো। কিন্তু নিলা ফোন রিসিভ করলো না। তারপর আবিরকে ফোন করলো। কিন্তু ওর ফোন ব্যাস্ত পেল। আদিত্য তারপর বাসার নাম্বারটি কল করলো।কিন্তু সেখানেও কাওকে পেলনা। আদিত্যের অস্থিরতা আরও বেড়ে গেল।বুকটা কেমম কাঁপছিল। শরীর ঘেমে উঠতে লাগলো। আদিত্য আর পারছে না। এই মুহূর্তে নূরকে না দেখতে পেলে ওর দম বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ও বিহানকে তাড়াতাড়ি গাড়ি ব্যাক করে বাসার দিকে যেতে বললো। বিহান অনেক বার জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে? কিন্তু আদিত্যের শুধু একটাই কথা বাসায় চল। অগত্যা বিহান গাড়ি ব্যাক করে।
বাসার সামনে এসে সব গার্ডসদের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আদিত্য তাদের ডেকে বললো।
–কি ব্যাপার তোমরা সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে আছ কেন?
গার্ডস রা বললো।
–স্যার আপনার চাচী বললো,আজ নাকি এমপি আসবে।তাই বাইরে পাহারা দিতে।
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
–হোয়াট? এমপি আসবে আর আমি জানবো না?
আদিত্যর কেমন খটকা লাগলো। চাচী গার্ডসদের একথা কেন বলেছে? কি করতে চাচ্ছেন উনি?আদিত্য আর দেরি না করে দ্রুত গতিতে বাসার দিকে এগুলো।
বাসার দরজায় আসতেই নূরকে এই অবস্থায় দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল আদিত্য। নূরকে এই অবস্থায় দেখতে হবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি আদিত্য। কেমন যেন পাথর হয়ে গেল আদিত্য।
বর্তমানে,
আদিত্য মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে দরজায়। আদিত্যকে দেখে ডক্টর আর ওয়ার্ড বয় গুলোও অনেক ভয় পেয়ে গেল।সাথে সাথে থেমে গেল ওরা।সাদমান শাহরিয়ার আদিত্যকে চিনেনা এমন লোক অনেক কম। এটা যে আদিত্যর বাড়ি তা ওদের জানাই ছিলনা। আগে জানলে কখনোই আসতো নয়তো ওরা।
সবাইকে দরজার বাইরে তাকাতে দেখে নূরও সেদিকে তাকালো। আদিত্যকে দেখে নূরের জানে পানি ফিরে এলো। নূর অতি করুন দৃষ্টিতে আদিত্যের দিকে তাকালো। ফুলে যাওয়া লাল চোখ জোড়া দিয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ছে। এই দৃশ্য কেমন করে সহ্য করবে আদিত্য। এর চেয়ে যে মরন ঢের ভালো।
তখনই বিহান এসে আদিত্যের কাছে দাঁড়াল। সামনে এসব দেখে বিহানও হতভম্ব হয়ে গেল। বিহান রাগে চিল্লিয়ে বললো।
–এই তোরা কারা? নূরের সাথে কি করতাছস তোরা? নূরর,,
বিহান দৌড়ে গিয়ে লোকগুলোকে এলোপাতাড়ি কয়েক ঘা দিয়ে নূরের কাছ থেকে সরিয়ে দিল। তারপর নূরের কাছে গিয়ে ওকে ধরে আস্তে করে সোফায় বসিয়ে দিয়ে, ওর মুখের বাধন খুলে দিল।
বাঁধন খুলতেই নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে হিরো বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। আদিত্য তখনও পাথরের মতো দাঁড়িয়েই আছে।ওর দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু শুধুই নূর। আশেপাশের সবকিছুই আপাতত ধোঁয়াসা ওর কাছে। নূরের এমন করুন ডাক যেন আদিত্যের বুকে তীর হয়ে বিঁধল। আদিত্য এবার ধীরে ধীরে নূরের কাছে এগিয়ে এলো। নূরের কাছে এসে ওর সামনে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসলো। আদিত্যের শরীর প্রচুর পরিমাণ কাঁপছে। বারবার শুধু ঢোক গিলছে। আদিত্য দেখলো নূরের গালে পাঁচ আঙুলের লাল দাগ হয়ে আছে। ঠোঁটের কোনায় রক্ত জমে আছে। আদিত্য তাড়াহুড়ো করে পকেট থেকে রুমাল বের করে, কাঁপা কাঁপা হাতে নূরের ঠোঁটের রক্ত মুছে দিতে লাগলো। যাতে নূর রক্ত দেখে প্যানিক না হয়ে যায়। রক্ত মুছে দিতে গেলে নূর ব্যাথায় হালকা আওয়াজ করে উঠলো।
–আহহ,
আদিত্য মাথাটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে নিজের মাথাটা একটু ঝাকালো। ওযে এসব আর সহ্য করতে পারছে না। কিছুতেই না। যাকে সে মাটিতে রাখেনা পিঁপড়ায় খাবে,মাথায় রাখেনা উকুনে খাবে এমন ভাবে রাখে। যার শরীরে সে ফুলের টোকাও লাগতে দেয়না।তাকে আজ এই অবস্থায় দেখে আদিত্যের কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। আদিত্য আবার নূরের দিকে তাকালে,নূর লোকগুলোর দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো।
–ও ওওওরা আ আআমাকে,,,
অতিরিক্ত কাঁদার জন্য নূর ঠিকমতো কথাও বলতে পারছে না।
আদিত্য দুই হাতে নূরের মুখটা আগলে ধরে আদুরে গলায় বললো।
–হুশশশশ,, আর কাঁদেনা সোনাপাখি। দেখ আমি এসে গেছি না? তোমার হিরো এসে গেছে। আর কোন ভয় নেই। আর কেউ আমার এঞ্জেল কে কিছু করতে পারবে না। তুমি এবার শান্ত হও সোনা।
আদিত্যের কথায় নূরের কান্নার মাত্রাটা একটু কমে এলো। তখনই নিলা বাসায় চলে এলো। নূরের এই অবস্থা দেখে নিলা দৌড়ে গেল নূরের কাছে। নূরের কি হয়েছে বারবার তাই জিজ্ঞেস করতে লাগলো। আদিত্য নিলাকে বললো।
–তুমি একটু ওকে ভেতরে নিয়ে যাও। আমি তোমাকে পরে সব বলছি।
নিলা মাথা ঝাকিয়ে নূরকে ধরে আস্তে আস্তে উপরে নিয়ে যেতে লাগলো। নূর ঠিকমতো হাটতেও পারছেনা। নিলাকে ধরে কোনরকমে হেঁটে যাচ্ছে।
এটা দেখে আদিত্য চোখ বন্ধ করে নিল। ওযে আর দেখতে পারছেনা।
নূর চলে যেতেই আদিত্য ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। তারপর লোকগুলোর দিকে অগ্নি চোখে তাকালো। চোখ দিয়ে আগ্নেয়গিরির লাভা গলে পড়ছে। চোয়াল শক্ত হয়ে, কপালের রগ ফুলে যেন চামড়া ফেটে বের হয়ে আসবে। আদিত্য হাতের মুঠো শক্ত করে লোকগুলোর কাছে এগিয়ে আসলো। আদিত্যের এমন ভয়ানক রুপ দেখে লোকগুলো ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। শরিফা বেগমেরও ভয়ে অবস্থা খারাপ। আদিত্য ওদের সামনে এসে চোয়াল শক্ত করে বললো।
–ওর গায়ে হাত তুলেছে কে?
লোকগুলো শুধু ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। কেউ কিছুই বলছে না। আদিত্য উচ্চস্বরে বলে উঠলো।
–আমি জানতে চাই কে নূরের গায়ে হাত তুলেছে?
এরিই মধ্যে বিহান সার্ভেন্ট দের রুমের দরজা খুলে দিয়েছে। তাই মিনু আন্টি নূরকে চড় দেওয়া লোকটার দিকে হাত তুলে দেখিয়ে বললো।
–আদি বাবা এই লোকটা, এই লোকটা বউমনিরে মারছে।
মিনু আন্টির ইশারা অনুযায়ী আদিত্য ওই লোকটার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো। এক হাত দিয়ে লোকটার কলার টেনে নাক বরাবর একটা ঘুষি মেরে দিল। লোকটা ছিটকে নিচে পড়ে গেল। আদিত্য নিচে বসে লোকটার হাত ধরে বলে উঠলো।
–তুই মেরেছিস? কোন হাত দিয়ে মেরেছিস বল?এই হাত দিয়ে? এই হাত দিয়ে আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস তুই? তোর কলিজাটা বের করে দেখতে হবে, এতো সাহস কি করে হলো তোর কলিজায়?
লোকটা কেঁদে দিয়ে আকুতি মিনতি করে বললো।
–ভুল হয়ে গেছে স্যার। মাফ করে দিন। আর কখনো এমন হবে না।
–আর কখনো এমন হওয়ার জন্য তোর হাতটাই থাকবে না।
কথাটা বলেই আদিত্য ব্লেজারের পেছন থেকে একটা ধারালো চাকু বের করলো। লোকটার হাতের পাঞ্জা ফ্লোরে চেপে ধরে এলোপাথাড়ি ভাবে চাকু দিয়ে হাতে কোপাতে লাগল। লোকটা গগনবিদারী আর্তনাদ করে উঠলো। কিন্তু আদিত্য থামলো না। ও আজ একটা হিংস্র পশুর মতো করছে।
শরিফা বেগম আরও বেশি ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। সে যে আজ রাগের বশে অনেক বড়ো একটা বোকামি করে ফেলেছে, তা হারে হারে টের পাচ্ছে। আদিত্য নাজানি তার সাথে কি করে।
আদিত্য এবার উঠে দাঁড়িয়ে বাকি লোকগুলোকেও ইচ্ছেমতো মারতে লাগলো। মারতে মারতে সবগুলোকে প্রায় আধামরা করে ফেলেছে। আদিত্যের মাথায় আজ রক্ত উঠে গেছে। বিহান অনেক ঘাবড়ে গেল। আদিত্যকে সে এর আগে কখনো এতটা হিংস্র হতে দেখেনি। আদিত্যকে এভাকে ওর নিজেরও ভয় লাগছে।
আদিত্য সবাইকে মারা শেষে গান বের করে সবগুলোকে শুট করতে নিলেই বিহান দৌড়ে এসে ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো।
–বহুত হইচে, এখন থাম। অগো কি দোষ? দোষতো অন্য কারোর। যে অগো এইহানে আনছে।ওরাতো খালি পেয়াদা। আসল মাস্টার মাইন্ড তো অন্য কেউ।
কথাটা বলে বিহান শরিফা বেগমের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।
আদিত্য এবার লোকগুলোকে ছেড়ে দিয়ে শরিফা বেগমের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো। শরিফা ভয় পেয়ে আমতা আমতা করে বললো।
–দে দেখ আদিত্য। আমি তোমার ভালোর কথা ভেবেই এসব করেছি। নূরকে মেন্টাল এসাইলাম পাঠালেই সবচেয়ে ভালো হবে। ওখানে পাগলদের,,,
শরিফা বেগম কথা শেষ করার আগেই, আদিত্য বাড়ি কাঁপানো এক হুংকার দিয়ে উঠলো।
–মিসেস রহমান!!!
আদিত্যের হুংকারে শরিফা বেগমের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল।এই প্রথম আদিত্য চাচী না বলে নাম ধরে ডাকলো। আদিত্য ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে উঠলো।
–আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। আপনি কি ভুলে গেছেন এই আদিত্য কি জিনিস? কি কি করার ক্ষমতা রাখি আমি? তারপরও এমন একটা কাজ করতে আপনার কলিজা কাঁপল না? একবারও ভাবলেন না এই আদিত্য জানতে পারলে কি হবে?
শরিফা বেগম আবারও একটু সাহস যুগিয়ে বলতে লাগলো।
–আমি যা করেছি তা তোমার ভালোর জন্য,,,
শরিফা বেগমের কথা শেষ হওয়ার আগেই আদিত্য ওর সামনে থাকা টি টেবিলে সজোরে একটা লাথি মেরে দিয়ে অত্যন্ত রাগী কন্ঠে বললো।
–টু হেল উইথ ইউর ভালো। আপনি কি ভাবেন, আমি কিছুই বুঝিনা? আমি সবই বুঝি মিসেস রহমান। আমার রেসপেক্ট কে আমার বোকামি ভাবার ভুল করবেন না। আপনি আমার কতো ভালো চান,আমি তা ভালো করেই জানি। আমি সব বুঝেও চুপ করে থাকি কেন জানেন?কারণ আপনি আমার চাচার স্ত্রী তাই,আপনি আবির আর আয়াতের মা তাই। তাই আমি সব বুঝেও চুপ চাপ থাকি। আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করার চেষ্টা করি। তবে আজকে আপনার কাজে আপনি আমার মন থেকে সবকিছু মুছে দিতে বাধ্য করেছেন। আজকে আপনি আমার সবচেয়ে দূর্বল জায়গায় আঘাত করেছেন। আমার কলিজায় হাত দিয়েছেন আপনি। আপনাকে আমি আগেই বলেছিলাম, আমাকে যা খুশী তাই করুন আমি চুপচাপ মেনে নিব। কিন্তু আমার নূরের গায়ে হালকা টোকাও আমি বরদাস্ত করবো না। আপনি আজ আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছেন। সত্যিই আপনার মতো এমন জঘন্য মহিলা আমি এই দুনিয়াতে আর দেখিনি। এর আগে আমি আমার শেষ ধৈর্য টুকুও হারিয়ে ফেলি,আপনি চলে যান এখান থেকে। নাহলে হয়তো আমার হাতে আজ গুনাহ হয়ে যাবে। আমি আবির আর আয়াতকে এতিম করতে চাইনা। তাই আপনি আপনার এই কুৎসিত চেহারা নিয়ে চলে যান আমার সামনে থেকে। আর কখনো যেন আপনাকে আমার বাড়ি বা নূরের ত্রি সীমানায় না দেখি। তাহলে সেদিন আর নিজের শেষ ধৈর্য টুকু রাখতে পারবো না। কথাটা মনে রাখবেন। যান চলে যান এখান থেকে। আই সেড গেট আউট অফ মাই হাউজ।
আদিত্যের চিল্লানিতে শরিফা বেগম আর এক মুহূর্তও দেরি না করে দৌড়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল।
শরিফা বেগম চলে যেতেই আদিত্য রাগে চিৎকার করে সব জিনিস পত্র আছার মেরে ভাঙতে লাগলো। নিজের সব রাগ এই বেজান জিনিস গুলোর ওপর ঢালতে লাগলো। বিহান দৌড়ে এসে আদিত্যেকে জাপটে ধরে ওকে শান্ত করতে লাগলো। আদিত্য একসময় ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে আহত কন্ঠে বললো।
–উনি এমন কেন করেন আমার সাথে বিহান? আমি কি ক্ষতি করেছি তার? আজ আমার এঞ্জেলের কি অবস্থা করেছেন উনি। ওই মাছুম মেয়েটা তার কি ক্ষতি করেছেন?
বিহানের কাছে কোন উত্তর নেই। কিবা বলবে ও? আদিত্যর জন্য ওর অনেক খারাপ লাগছে। ছেলেটা কতো হাসিখুশি থাকতে শুরু করেছিল।ওই জোচ্চর মহিলা এসে আবার ওর ক্ষত তাজা করে দিয়ে গেল।
____
আদিত্য নূরকে কোলের মাঝে নিয়ে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর নূর আদিত্যের শার্ট খামচে ধরে বুকের মাঝে লুকিয়ে আছে। কান্না থেমে গেছে, তবে এখনো মাঝে মাঝে শরীর কেঁপে ফু্ঁপিয়ে ফুঁপিয়ে উঠছে। আদিত্যের নিজেকে আবারও আজ অনেক অসহায় মনে হচ্ছে। আজ যদি ওর বাবা মা বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো নূরের সাথে এসব হতোনা। তারা তাদের বৌমার খেয়াল রাখতো। ওর কোন ক্ষতি হতে দিতনা। আজ যদি ও ফিরে না আসতো তাহলে ওর এঞ্জেলের কি হয়ে যেত, সেটা ভাবতেই আদিত্যের রুহ কেঁপে উঠছে। আদিত্য আরও নিবিড় ভাবে নূরকে জড়িয়ে নিয়ে, নূরের মাথার ওপর পরপর কয়েকটা চুমু খেল। এই মেয়েটাকে ছাড়া যে তার বেঁচে থাকা অসম্ভব।
আদিত্য নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে নরম সুরে বললো।
–এঞ্জেল তুমি বোস। আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসি হ্যাঁ?
নূর আদিত্যের শার্ট আরও শক্ত করে ধরে ভীতু স্বরে বললো।
–না না তুমি কোথাও যাবেনা। কোথাও যাবেনা আমাকে ছেড়ে। নাহলে ওরা আবার আসবে। আবার আমাকে নিয়ে যেতে আসবে। কোথাও যাবেনা তুমি।
নূরকে এভাবে ভয় পেতে দেখে আদিত্যের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। আদিত্য নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
–ওকে ওকে যাচ্ছিনা। যাচ্ছিনা সোনা। আমি এখানেই আছি তোমার কাছে। তুমি শান্ত হও প্লিজ।
আদিত্যের আজ প্রথম মনে হচ্ছে। নূর সুস্থ হলে ভালো হতো। কমছে কম নিজের ভালো মন্দটা বুঝতে পারতো।নিজের খেয়াল রাখতে পারতো। তখন আর কেও ওর সাথে এমন কিছু করতে পারতো না। আদিত্য আল্লাহর কাছে চাইছে ওর এঞ্জেল টা যেন জলদিই সুস্থ হয়ে ওঠে।
চলবে….