#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-২২+২৩
★রাত ১১টা
আদিত্য নূরকে বুকে নিয়ে শুয়ে আছে। নূর ঘুমাইনি এখনো। হাত নেড়ে নেড়ে নানান কথার ফুলঝুরি সাজাচ্ছে। আর আদিত্য মুগ্ধ হয়ে সেসব শুনছে। তখনই হঠাৎ কেউ দরজায় জোরে জোরে নক করলো। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে ভাবলো, এতরাতে আবার কে এলো? আদিত্য নূরকে উঠে গিয়ে দরজা খুলতে গেল। দরজা খুলতেই হঠাৎ শায়না আদিত্যকে জাপটে ধরলো।জাপটে ধরে ন্যাকামি করে বললো।
–আদিত্য আ্যাম স্কেয়ার্ড আদিত্য। প্লিজ হেল্প মি।
শায়নাকে আবারও আদিত্যকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে দেখে নূরের প্রচুর রাগ হতে লাগলো। ওর ইচ্ছে করছে এখনি এই শায়নার মাথার ওপর বেবিকে দিয়ে পটি করাতে। পঁচা একটা। বারবার শুধু নূরের হিরোকে জড়িয়ে ধরে। শায়নার আচরণে আদিত্যও চরম বিরক্ত। অন্য কেউ হলে এতক্ষণে দু একটা চড় থাপ্পড় লাগিয়ে দিত আদিত্য। তবে ফুপাতো বোন দেখে কিছু বলাতেও পারছে না। আদিত্য শায়নাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে শক্ত গলায় বললো।
–তোমাকে কতবার বলবো, এটা বাংলাদেশ। এখানে অন্য একটা পুরুষকে কেউ এভাবে কথায় কথায় জড়িয়ে ধরে না। আর আমার পার্সোনালি ও এসব পছন্দমতো না। তাই পরবর্তীতে খেয়াল রাখবে।
শায়না ঢং করে বললো।
–সরি আদিত্য। আসলে আমি না অনেক ভয় পাচ্ছিলাম তাই এমন করেছি। আমি কখনো একা একা থাকিনি তো তাই খুব ভয় লাগছে। তারওপর নতুন জায়গা। আমার খুব ভয় লাগছে। প্লিজ আদিত্য আমি কি আজ তোমার সাথে থাকতে পারি?
আদিত্য কিছু বলার আগে নূর তেড়ে এসে শায়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো।
–এই এই পঁচা মেয়েটা তুমি কেন আমার হিরোর সাথে থাকবে? হিরোর সাথে শুধু আমি থাকবো। আর কেউ যদি। তুমি যাও এখান থেকে যাও।
নূর শায়নাকে ঠেলে বার করে দিতে লাগলো। শায়না ভেতরে ভেতরে রাগে কটমট করলেও আদিত্যের সামনে চুপ করে রইলো।
আদিত্য নূরের হাত আটকে দিয়ে বললো।
–শান্ত হও এঞ্জেলা। এমন করতে হয় না। শায়না আমাদের গেস্ট। গেস্টের সাথে এমন করলে লোকে তোমাকে পঁচা বলবে। আমি ওকে বুঝিয়ে বলছি।
আদিত্যের কথামতো নূর থেমে গেল। আদিত্য এবার শায়নার দিকে তাকিয়ে বললো ।
–দেখ শায়না তুমি যেটা বলছ সেটা সম্ভব না। তুমি আমাদের সাথে থাকতে পারবে না। আর এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবুও যদি বেশি ভয় লাগে তাহলে আমি নিলাকে বলে দিচ্ছি ও তোমার সাথে ঘুমাবে ঠিক আছে?
শায়না জোরপূর্বক হেসে বললো।
–না না তার দরকার নেই। আমি নাহয় আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করি গিয়ে।
কথাটা বলে শায়না চলে যেতে লাগলো। আর নিজের প্ল্যান ফেইল হওয়ার জন্য রাগে কিড়মিড় করতে লাগলো। ও ভেবে পাচ্ছে না আদিত্য এই পাগল মেয়েটার মাঝে কি পেয়েছে। যার জন্য ও এতো পাগল হয়েছে। তবে যাই হয়ে যাক।এই পাগল মেয়েটাকে তো আদিত্যের জীবন থেকে সরিয়েই ছাড়বে।
______
রাত বারোটার দিকে বিহান বাসায় ফিরলো। নেশায় ধুত, চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে বেডের দিকে তাকাতেই কপাল কুঁচকে এলো বিহানের। আঙুল দিয়ে চোখ কচলিয়ে আবার ভালো করে তাকালো। নাহ ও ভুল দেখছে না। আায়াত সত্যি সত্যিই ওর বিছানায় বসে আছে। তাও আবার দেহকর্মী মহিলাদের মতো কেমন অদ্ভুত ভাবে সেজেগুজে বসে আছে। বিহানের মন মেজাজ এমনিতেও খারাপ হয়ে আছে। তারওপর আয়াতকে এভাবে দেখে রেগে গিয়ে বললো।
–এই বেশরম মাইয়া আপনে আবার আইছেন এইহানে? আপনার কি লাজলজ্জা বলতে কিছু নাই? এতরাইতে আমার রুমে কি করবার আইছেন আপনি?
আয়াত উঠে দাঁড়িয়ে বিহানের সামনে এসে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো।
–কেন আপনার যেটা দরকার সেটাই দিতে এসেছি। যাতে আপনাকে আর অন্য কারোর কাছে যেতে না হয়।
বিহান ভ্রু কুঁচকে বললো।
–মানে?কি কইবার চান আপনে?
–বাহ্ ভালোই তো অভিনয় শিখেছেন। তা ড্রামা করার কি আছে?
আয়াত হঠাৎ বিহানের কলার চেপে ধরে অশ্রু চোখে কিছুটা উচ্চাস্বরে বলে উঠলো।
— আপনার যদি এতই চাহিদা ছিল। তাহলে আমাকে বলতেন, আমি নিজেকে আপনার সামনে বিলিয়ে দিতাম। তাহলে তো আর আপনাকে ওই নষ্ট পাড়ায় যেতে হতোনা।
আয়াতের মুখে নষ্ট পাড়ার কথা শুনে অনেক টা চমকে গেল বিহান। সাথে সাথে আয়াতের কথায় প্রচুর রাগও হলো। বিহান আয়াতকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো।
–বাহ্ বহুত আচ্ছা। আমি খুব একটা অবাক হইতাচি না আপনের কাজে। আমি আগেই জানতাম আপনের জোচ্চর মা, একদিন না একদিন টাকার লোভে আপনেরে এই কাজে নামায় দিবো। তা আপনিও যে এতো সহজে এই ধান্দায় নাইমা পরবেন তা জানতাম না। তা আমিই কি প্রথম কাস্টোমার? নাকি আমার আগেও কেউ,,
–বিহান,,,
বিহানের কথা শেষ করার আগেই আয়াত বিহানের নাম নিয়ে চিল্লিয়ে উঠে ঠাস করে বিহানের গালে একটা চড় মেরে দিল। তারপর রাগী কন্ঠে বলে উঠলো।
–আপনার মুখে কিচ্ছু বাঁধে না তাইনা? যা ইচ্ছে তাই বলে যান? আচ্ছা ঠিক আছে,আমার মা খারাপ।আমি খারাপ। তাহলে আপনি কি হ্যাঁ? আপনি যে জঘন্য কাজ করে বেরাচ্ছেন,তার বেলায় কি হ্যাঁ? এমনিতেতো এমন ভাব দেখান যেন মেয়েদের থেকে আপনি দশহাত দূরে থাকেন। আর অন্য দিকে ওইসব নোংরা কাজ করে বেরান? আমার মা নাহয় খারাপ দেখে আমাকে খারাপ শিক্ষা দেয়। তো আপনার মা বাবা কেমন শুনি? তারা কি আপনাকে এইসব করার শিক্ষা দিয়েছে? বলুন?
আয়াত বিহানের সবচেয়ে দূর্বল জায়গায় আঘাত করেছে। বিহানের আগে থেকেই মন মেজাজ বিগড়ে আছে, আবার নেশাও করে আছে তারওপর আয়াতের এমন মা বাপ নিয়ে কথা বলায় বিহানের রাগের সর্বসীমা পেরিয়ে গেল। এই মুহূর্তে বিহান রাগের মাথায় তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। বিহান চোখ মুখ লাল করে ঠাস করে আয়াতের গালে একটা চড় বসিয়ে দিল। চড় খেয়ে আয়াত ছিটকে নিচে পড়ে গেল। গালে হাত দিয়ে আহত দৃষ্টিতে বিহানের দিকে তাকালো আয়াত।
বিহান আয়াতের সামনে বসে আয়াতের চুলের মুঠি ধরে ওর মুখটা উঁচু করে ক্রুর চোখে তাকিয়ে বললো।
–তোরে আগেই কইছিলাম আমারে চ্যাতাইছ না। আমি জংগী কুকুর। ক্ষেপে গেলে কাওরে ছাড়িনা। কিন্তু তুই মানোছ নাই। অহন আমার জংলীপনা দেখ। কি জানি কইতাছিলি? আমি ওই নষ্ট গলিতে গেছি ক্যান। তয় শোন। হ গেছি, আমার মন চাইছে গেছি। আরও ইচ্ছে হইলে আরও যামু। রোজ রোজ যামু। তাতে তোর কি? আমি যা খুছি তাই করি তাতে তোর কি? আর তোরে আমি জবাব দিমু ক্যালা? আমার জীবন, আমার ইচ্ছা,আমার খুশি। আমার য্যামনে মন চায় হ্যামনে চলুম। তোর জবাব দিতে বাধ্য না আমি।
আয়াত এদিকে ব্যাথায় ছটফট করে যাচ্ছে। কিন্তু বিহানের সেদিকে কোন হুঁশ নেই। বিহান রাগের মাথায় ওর সব হুঁশ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। বিহান আরও বলতে লাগলো।
–তোর শরীরে যদি বহুত জ্বালা ধইরা থাকে, তাইলে তুইও ওই নষ্ট গলিতে যাইবার পারোস। হাজারটা লোক তোর জ্বালা মিটাই দিবো। তয় আমার সামনে এইসব দেখাতে আবিনা। অহন যা এইখান থাইকা। আর লজ্জার ছিটেফোঁটাও যদি থাইকা থাকে। তাইলে আমার সামনে আর আবিনা।
কথাগুলো বলেই বিহান আয়াতের হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে রুমের বাইরে বের করে দিল।
আয়াত যেন অনুভূতি শূন্য হয়ে গেল। আজকের মতো অপমান ও কোনদিনও হয়নি। এই মানুষটাকে ভালোবাসার জন্য নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ মনে হচ্ছে। ওর এখন মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আয়াত শূন্য চোখে তাকিয়ে ধীরে ধীরে এলোমেলো পায়ে ওখান থেকে চলে গেল।
______
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙে চোখ মেলতেই চমকে গেল নিলা। আবির ওর সামনে বেডের ওপর গালে হাত দিয়ে বসে ওর দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে। নিলা গায়ের চাদর টা ভালো করে টেনে নিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে বললো।
–আ আপনি? আপনি সকাল সকাল এখানে কি করছেন? কেউ দেখে ফেললে কি হবে?
আবির নিলার দিকে নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে টেডি স্মাইল দিয়ে,নিলার গালে হাত বুলিয়ে বললো।
–হায়য়,শুধু সকাল সকাল কেন। আমার তো রাত বিরাতেও তোমার কাছে থাকতে মন চায়। কি বলো চলে আসবো নাকি?
কথাটা বলেই আবির দুষ্টু হেসে নূরের মেরে দিল।
নিলা লজ্জা পেয়ে বললো।
–ধ্যাৎ সবসময় শুধু লুচুগিরি। সরেন তো এখান থেকে।
নিলা আবিরকে দুই হাত দিয়ে ঠেলতে লাগলো। কিন্তু আবিরের একটা পশমও নড়াতে পারছে না। নিলা না পেরে অনুনয়ের সুরে বললো।
–প্লিজ সরুন না? আমি ওয়াশরুমে যাবো।
আবির বলে উঠলো।
–যেতে দেব তার আগে আমার কিচ্ছি চাই। চুমু দাও আর নিজেকে আজাদ করে নাও। চুমুর বদলে আজাদী। হায় এমন অফার তো পাক বাহিনীও দেয়নি। দেখেছ আমি কতো মহান।
–হ্যাঁ হ্যাঁ দেখেছি। এখন সরুন প্লিজ।
–নো সরুন। আগে কিচ্ছি তারপর সরাসরি।
কথাটা বলেই আবির নিলার ঠোটের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। দুজনের ঠোঁট প্রায় ছুঁই ছুঁই তখনই হঠাৎ নিলা দরজার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
–জিজু??
আবির বেচারা এক ঝটকায় নিলাকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসলো।দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো দরজায় কেউই নেই। তারমানে নিলা ওকে বোকা বানিয়েছে? আর নিলা তাড়াতাড়ি উঠে ওয়াশরুমের দিকে দৌড়ালো। ওয়াশরুমের দরজায় গিয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে জিব দেখিয়ে হাসতে হাসতে ভেতরে ঢুকে গেল। আর মাথা ঝাকিয়ে হাসলো।
_____
আদিত্য গার্ডেন এরিয়ায় এক্সারসাইজ করছে। আর শায়না উপর থেকে লোভী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদিত্যের দিকে। আদিত্যের সুঠাম বডি দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না ও। শায়নাও একটু পরে নেমে এলো আদিত্যের কাছে। টাইট টিশার্ট আর টাইট থ্রি কোয়ার্টার লেগিস পরে আদিত্যর কাছে এসে নিজেও এক্সারসাইজ করতে লাগলো। এক্সারসাইজের বাহানায় আদিত্যেকে নিজের দিকে এট্রাক করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আদিত্য শায়নার দিকে একবারের জন্যও তাকাচ্ছে না।
নূরের বিড়াল ছানা নূরের শরীরের ওপর এসে নড়াচড়া করায় নূরের ঘুম ভেঙে গেল। নূর আড়মোড়া ভেঙে মুচকি হেসে বিড়াল ছানাকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলো। একটু পরে ছানাকে নিয়ে নূর উঠে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে বেলকনিতে এলো। বেলকনিতে এসে নিচে তাকাতেই আদিত্য আর শায়নাকে দেখতে পেল। শায়নাকে আদিত্যর কাছে দেখে নূরের আবারও রাগ লাগতে শুরু করলো। এই মেয়েটাকে নূরের একদমই পছন্দ হয়না সবসময় শুধু হিরোর আগেপিছে ঘোরে। পঁচা একটা মেয়ে।
তখনই হঠাৎ শায়না পরে যাওয়ার ভান করে আদিত্যের গায়ের ওপর ঢলে পড়লো। এটা দেখে নূর আরও রাগ হতে লাগলো। ওর ইচ্ছে করছে এখনি বেবিকে দিয়ে ওই পঁচা মেয়েটার শরীরে আঁচড় বসিয়ে দিতে।
আদিত্য মুখে বিরক্তের ছাপ এনে শায়নাকে নিজের কাছ ছাড়িয়ে সোজা করে দাঁড় করালো। শয়ানা ঢং করে বললো।
–সরি আদিত্য। আসলে হঠাৎ করে পর যেতে নিলাম তো তাই তোমাকে ধরেছি।
আদিত্য কিছু না বলে শায়নাকে ওখানে রেখে চলে গেল।
একটু পরে আদিত্য নূরকে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে নিচে নেমে এলো। ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে নূরকে খাইয়ে দিতে লাগলো। তখনই শায়নাও নিচে এলো। হেলেদুলে গিয়ে আদিত্যের পাশের চেয়ার টা টেনে আদিত্যের গা ঘেঁষে বসলো। খাওয়ার সময়ও বারবার নানান বাহানায় শায়না আদিত্যর গা ঘেঁষে পড়ছে। নূর আর সহ্য করতে পারলোনা হাতে থাকা পানির গ্লাস টা শায়নার মুখে ছুড়ে মারলো। তারপর বলে উঠলো।
–এই এই পঁচা মেয়েটা সরো এখান থেকে। শুধু আমার হিরোর কাছে আসে।
হঠাৎ নূরের এমন আচরণে আদিত্য অবাক হয়ে গেল। শায়নাকে ওর নিজেরও তেমন পছন্দ না। তবুও যেমনই হোক ও আদিত্যের ফুপুর মেয়ে তাই আদিত্য সিচুয়েশন সামলানোর জন্য বলে উঠলো।
–এঞ্জেলা এটা কি করলে? তোমাকে আমি বলেছি না শায়না আমাদের গেস্ট। আর গেস্টদের সাথে এমন মিসবিহেব করতে নেই। তুমি কি ব্যাড গার্ল হতে চাও?
নূর মাথা নাড়ালো।মানে সে চায়না।
–দেন সে সরি টু শায়না।
নূর অনিচ্ছা সত্ত্বেও শায়নার দিকে আরচোখে তাকিয়ে আস্তে করে সরি বলে দিল।
শায়না ভেতরে ভেতরে রেগে থাকলেও আদিত্যের সামনে জোরপূর্বক হেসে বললো।
–ডোন্ট ওয়ারি। ইটস ওকে। আমি চেঞ্জ করে আসছি।
কথাটা বলে শায়না চলে যেতে লাগলো। যেতে যেতে বাঁকা হেসে মনে মনে ভাবলো, নূরকে আদিত্যের জীবন থেকে সরানোর এটাই ভালো উপায়। নূরকে এমন এমন কাজ করাতে হবে, যাতে আদিত্য চরম বিরক্ত হয়ে যায়। আর একসময় বিরক্ত হয়ে নূরকে ওর জীবন থেকে বের করে দিবে। কথা গুলো ভেবে শায়না সয়তানি হাসলো।
___
বিহান ঘুম থেকে উঠে দুই হাতে মাথা চেপে ধরে বসে আছে। মাথাটা অনেক ব্যাথা করছে। কাল একটু বেশিই খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। তাই হ্যাংওভার টা বেশিই হচ্ছে। কালকের কথা ভাবতেই হঠাৎ বিহানের কাল রাতের কথা মনে পড়ে গেল। কাল রাতে আয়াতের আসা,ওর সাথে করা খারাপ ব্যবহার গুলো মনে পরে গেল। বিহানের প্রচুর খারাপ লাগছে। মেয়েটার সাথে এমন ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। যতই হোক আয়াত আদিত্যের বোন। আমার ওর সাথে কথা বলে ওকে সরি বলতে হবে।
কথাটা ভেবে বিহান উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। তারপর রেডি হয়ে আদিত্যর বাসার উদ্দেশ্যে বের হলো।
কিন্তু আদিত্যের বাসায় এসেই এমন একটা খবর শুনলো যার জন্য বিহান মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। নিলা এসে বিহানকে জানালো আয়াত নাকি সুইসাইড এটেম্প করেছে। তাই আবির আর আদিত্য হসপিটালে গিয়েছে। কথাটা শুনে বিহান হতভম্ব হয়ে গেল।
চলবে……
(রিচেক করিনি। ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার চোখে দেখবেন)
#মরুর_বুক_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-২৩
★চারদিন পার হয়ে গেছে। দুদিন পরেই আয়াতকে হসপিটাল থেকে বাসায় আনা হয়েছিল।এখন প্রায় সুস্থ আয়াত। সেদিন রাতে বিহানের করা কাজগুলো আয়াত মেনে নিতে পারেনি। তাই অনেক গুলো ঘুমের বড়ি খেয়ে নিয়েছিল। পরে ওর বাবা মা টের পেলে দ্রুত ওকে হসপিটালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে দুদিন পরেই আয়াতকে রিলিজ দিয়ে দেয়। এরইমধ্যে অনেকেই ওর কাছে এমনটা করার কারণ জিজ্ঞেস করে। কিন্তু আয়াত কাওকে কিছুই বলেনি। ও অসুস্থ দেখে কেও আর ওকে বেশি চাপ দেয়নি।
হসপিটাল থাকতে সবাই ওকে দেখতে এসেছিল। শুধু নূর বাদে। কারণ আদিত্য নূরকে শরিফা বেগমের সামনে আনতে চাইনি। তবে বাকি সবাই আয়াতকে দেখে গেছে। তবে যাকে সবচেয়ে আশা করছিল আয়াত সেই লোকটিই আসেনি ওকে দেখতে। বিহান একবারের জন্যও হসপিটালে ওকে দেখতে আসেনি।এমনকি একটা ফোনও করেনি। আয়াত ভেবেছিল হয়তো ওর সুইসাইড এর খবর শুনে বিহান দয়া করে হলেও ওকে দেখতে আসবে। কিন্তু না, আয়াত তো ভুলেই গিয়েছিল যে ও একটা পাথরকে ভালোবেসে ছিল। যার কোন মন নেই। হয়তো আমি মরে গেলেই বরং সে খুশি হতো। জানালার বাইরে তাকিয়ে আনমনা হয়ে কথাগুলো ভাবছিল আয়াত।
তখনই হঠাৎ আবির রুমে ঢুকে বললো।
–আয়ু চল ভাইয়ার বাসায় যাই।
আয়াত মনমরা হয়ে বললো।
–তুমি যাও ভাইয়া। আমার যেতে ইচ্ছে করছে না।
–আরে চলনা? ভাইয়া ফোন করেছিল। ভাবিডল নাকি বারবার তোর কথা বলছে। তোকে দেখতে চাচ্ছে। চলনা তোরও ভাবিডলের কাছে গেলে ভালো লাগবে।
নূরের কথা শুনে আয়াত আর মানা করতে পারলো। অগত্যা আবিরের সাথে যেতে রাজি হয়ে গেল।
ঘন্টাখানেক হলো আয়াত আবিরের সাথে আদিত্যের বাসায় এসেছে। নূরের সাথে সময় কাটিয়ে আয়াতের সত্যিই অনেক টা ভালো লাগছে। মেয়েটা সত্যিই অনেক মায়াবী। মুহূর্তেই সবার মন ফ্রেশ করে দেয়। আয়াত একটু ফ্রেশ এয়ার নেওয়ার জন্য বাইরে হাঁটছিল। তখনই সামনে তাকিয়ে বিহানকে বাগানের পাশে একটা ব্রেঞ্চের ওপর বসে ফোনে কথা বলতে দেখলো। আয়াতের বুকটা ধুক করে উঠলো। আমি এই লোকটার শোকে মরতে বসেছিলাম। আর এই পাষাণ লোকটা এখানে কতো নিশ্চিন্তে বসে আছে। সত্যিই এই লোকটাকে না দেখলে কখনো জানতামই না যে, দুনিয়াতে এমন নিষ্ঠুর মানুষও আছে।
আয়াত ধীরে ধীরে বিহানের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। আয়াতকে দেখে বিহান ফোনটা রেখে দিয়ে আয়াতের দিকে তাকালো। আয়াত আস্তে করে বিহানের পাশে গিয়ে বসে তিরস্কার স্বরূপ বলে উঠলো।
–আমাকে দেখে নিশ্চয় খুশি হননি। ভাবছেন এই আপদ টা এখনও বেঁচে আছে কেন? মরে গেল না কেন তাইনা? সত্যি আপনাকে ডিসিপয়েন্ট করার জন্য দুঃখিত। তবে আমি আমার তরফ থেকে পুরো চেষ্টা করেছিলাম আপনাকে খুশি করার। কিন্তু উপর ওয়ালা বাচিয়ে রাখল এতে আমার কি দোষ বলুন?
বিহান চোয়াল শক্ত করে আয়াতকে কিছু না ওখান থেকে উঠে চলে যেতে নিল। আয়াত উঠে দাঁড়িয়ে আবার বলে উঠলো।
–কি হলো কিছু বললেন না? আজ আমাকে কিছু না শুনিয়েই চলে যাচ্ছেন? নাকি দয়া করছেন আমার ওপর?
বিহান হঠাৎ আয়াতের দিকে ঘুরে ঠাস করে আয়াতের গালে একটা চড় মেরে দিল। আয়াত গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে বিহানের দিকে তাকালো। বিহান চোয়াল শক্ত করে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো।
–আপনি হয়তো আমার কথা বুঝতে পারেন না। তাই আজ আমি আপনাদের মতো শুদ্ধ ভাষায় বলছি। হ্যাঁ তো কি যেন বলছিলেন? আমি কিছু বলছিনা কেন? কি বলবো আমি? আমি যা বলবো তাকি শোনার ক্ষমতা আছে আপনার? আপনাদের মতো ননির পুতুল কি এতো কঠিন কথা নিতে পারবেন? আপনি কি ভেবেছিলেন, আপনি সুউসাইড করবেন আর আমি সিনেমার হিরোদের মতো আপনার কাছে দৌড়ে এসে বলবো তুমি আমাকে ছেড়ে যেওনা, আমি তোমাকে ভালোবাসি ব্লা ব্লা। এখানে কি কোন মুভি চলছে? জানেন, আমার সেদিন সকালে উঠে অনেক গিল্টি ফিল হচ্ছিল। ভাবছিলাম আপনাকে গিয়ে সরি বলবো।কিন্তু আপনার সুইসাইডের কথা শুনে আমার মত পাল্টে গেছে। আপনাদের মতো বড়লোকের ছেলেমেয়েদের এইজন্য আমি দেখতে পারি না।কেন জানেন? কারণ আপনারা না চাইতেই অতি সহজেই সবকিছু পেয়ে যান। সেইজন্যই আপনারা কোন কিছুর মূল্য বোঝেননা। আরে জীবন কি এতই সহজ?একটু কষ্ট পেলেন আর ওমনি মরতে চলে গেলেন? মানুষ বেঁচে থাকার জন্য কতো কষ্ট করে জানেন আপনি? আরে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে মানুষকে কখনো কখনো জানোয়ার হয়ে উঠতে হয়। চলুন আপনাকে আমি কিছু দেখাবো আজকে।
কথাটা বলে বিহান আয়াতের হাত ধরে টেনে বাইরের দিকে নিয়ে গেল। আয়াত হতভম্বের মতো শুধু তাকিয়ে রইলো।
বিহান আয়াতকে রাস্তার এক জায়গায় নিয়ে এলো।যেখানে অনেক আবর্জনা রাখা হয়েছে। বিহান হাত উঁচু সামনের দিকে দেখালো। বিহানের ইশারা অনুযায়ী আয়াত সামনে তাকিয়ে দেখলো, কিছু রাস্তার সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা আবর্জনার স্তূপ থেকে খাবার কুড়িয়ে খাচ্ছে। এটা দেখে আয়াত থমকে গেল। চোখ দুটো ভরে উঠলো ওর। বিহান আবার বলে উঠলো।
–দেখুন ওদের। বেঁচে থাকার জন্য ওরা কতো লড়াই করছে। কুকুর বিড়ালের মতো রাস্তার খাবার কুড়িয়ে খাচ্ছে। তবুও ওরা বাঁচতে চায়। এতো সহজে হার মানতে চায়না। আল্লাহর দেওয়া জীবন টাকে এরা হেলাফেলা করতে চায়না। আর আপনি? ফস করেই জীবন দিতে চলে গেলেন? জীবন টা এতই খেলনা আপনার জন্য?
আয়াত কিছুই বলছে না। আসলে ও কিছু বলার ভাষাই পাচ্ছে না। বিহানের কথার কোন জবাব নেই ওর কাছে। বিহান আবারও আয়াতের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। বিহান আয়াতকে নিয়ে নিজের কোয়ার্টারের রুমে এসে ঢুকলো। রুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে আয়াতকে এক টানে সামনে দাঁড় করালো। তারপর হাত ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলো।
–দেখলেন তো মানুষ কতটা স্ট্রাগল করে বেঁচে থাকার জন্য। আরে আমার কাছে জিজ্ঞেস করুন বেঁচে থাকতে কতটা কষ্ট করতে হয়। সবার জীবন আপনার মতো হয় না। যাদের সোনার প্লেটে সব সাজানো থাকে।আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটা সময় লড়াই করতে হয়।কখনো অন্যের সাথে, তো কখনো নিজের সাথে। নিজের ধৈর্যের সাথে, নিজের আত্মসম্মানের সাথে।আর আপনি ভাবছেন আপনার করা ওই মহান কাজটার জন্য আমি আপনাকে স্যালুট দিব? আচ্ছা বলুন তো, কি এমন এতো পাহাড় সমান কষ্ট শুনি আপনার যে ওই মহান কাজটা করলেন আপনি? লেট মি গেস, আমি আপনার ভালোবাসাকে একসেপ্ট করিনা,আপনাকে ভালোবাসি না এটাই আপনার কষ্ট তাইনা? যার জন্য আপনি এই মহান কাজটা করেছেন? একটা পরপুরুষ আপনাকে ভালোবাসেনা সেই দুঃখে আপনি জীবন দিতে যাচ্ছেন। অথচ আপনাকে যারা ছোট বেলা থেকে ভালোবাসে তাদের ভালোবাসার কোন দাম নেই আপনার কাছে? আপনার কিছু হয়ে গেলে তাদের কি অবস্থা হবে একবারও ভেবেছেন আপনি? হাহ্ তা কেন ভাববেন, আপনি তো আছেন আপনার মহান দুঃখ নিয়ে। যার সামনে আপনার অন্য কিছুর কোন মাইনে নেই।
আয়াতের চোখ দিয়ে অঝরে পানি ঝরছে। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। বিহানের কথার কোন জবাব নেই ওর কাছে। সত্যিই তো বলছে বিহান।
বিহান কিছুটা থেমে আবার বলে উঠলো।
–আরে কি ভালোবাসা ভালোবাসা লাগিয়ে রেখেছেন? জীবনে কি শুধু প্রেম ভালোবাসাই সবকিছু? আচ্ছা চলুন, আপনার কথাই মেনে নিলাম। ধরুন আপনাকে আমি ভালোবাসলাম। তারপর? তারপর কি?
আয়াত চমকে তাকালো বিহানের দিকে। বিহান বলে উঠলো।
–বলুন তারপর কি? তারপর নিশ্চয় আপনি আমাকে বিয়ের কথা বলবেন? তো বলুন কিভাবে বিয়ে হবে? আমার মতো ছেলের সাথে কি আপনার বাবা বিয়ে দিবেন কখনো? আচ্ছা চলুন তাকে কোনমতে মানিয়ে নিলাম। আপনার ওই জোচ্চর মা। সেকি আদৌও মানবে কখনো? তার মতো লোভী মহিলা কখনও আমার মতো ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দিতে রাজি হবে? তখন নিশ্চয় আপনি বলবেন আপনি আমার জন্য সব ছেড়েছুড়ে চলে আসবেন। আচ্ছা ঠিক আছে চলুন আপনার কথাই মানলাম। আমরা বিয়ে করে নিলাম। তারপর কি করবেন? এইযে কবুতরের বাসা দেখছেন। এখানেই আপনাকে থাকতে হবে। পারবেন থাকতে? এখানে আপনার আলিশান প্রাসাদের মতো কোন ফ্যাসিলিটি নেই।নো এসি,নো গিজার,নো সার্ভেন্ট,নো কার, পারবেন ম্যানেজ করতে? হ্যাঁ জানি আপনি হয়তো এখন ডায়লগ ঝেড়ে বলবেন, হ্যাঁ হ্যাঁ আমি পারবো তোমার সাথে আমি কুঁড়ে ঘড়ে থেকে ডাল ভাত খেয়েও বেঁচে থাকতে পারবো। এসব ডায়লগ বলা সহজ করাটা সহজ না। তারপরও চলুন আপনার কথামতো এটাও নাহয় মেনে নিলাম। কোনভাবে আপনি এখানে এডজাস্ট করে নিলেন। এখন আসি সবচেয়ে মেইন পয়েন্টে। আপনি আমাকে মানে আপনার হাসব্যান্ড কে সবার কাছে কি বলে পরিচয় দিবেন? না না আমি আমার প্রফেশনাল পরিচয়ের কথা বলছিনা।সেটা আপনি যা খুশি তাই বলুন ইট ডাজেন্ট ম্যাটার। আমি আমার পারসোনাল পরিচয়ের কথা বলছি। আপনি আপনার স্বামীর পরিচয় হিসেবে কি বলবেন? আমার বংশ পরিচয় হিসেবে কি বলবেন?
বিহানের কথা বুঝতে না পেরে আয়াত ভ্রু কুঁচকে তাকালো। বিহান বলে উঠলো।
–কি হলো বুঝলেন নাতো আমার কথা? আপনি কখনো ভেবে দেখেছেন আমার নামের আগেপিছে কিছু নেই কেন? কেন নেই জানেন? কারণ আমি, আমি,,
এপর্যায়ে এসে বিহানের কন্ঠ কেমন যেন কাঁপতে লাগলো।গলা দিয়ে কথাটা বের করতে কষ্ট হচ্ছে ওর। চোখ দুটো লাল হয়ে এলো। বিহান ধরা গলায় বলে উঠলো।
–কারণ আমি,আমি একটা জারজ সন্তান।
কথাটা শুনে আয়াত স্তব্ধ হয়ে গেল। চমকে বিহানের দিকে তাকালো। বিহান সামনের চেয়ারে লাথি মেরে উচ্চস্বরে বলে উঠলো।
–ইয়েস,আই এ্যাম এ ব্লাডি বাস্টার্ড। আমার কোন পরিচয় নেই। আমার জন্মদাতা বাপ কে তা আমি জানিনা। এতদিন তো আমার মা কে তাও জানতাম না। শুনেছি রাস্তায় কেও আমাকে ফেলে রেখে গিয়েছিল। যারা রাস্তায় থাকে তারাই কেও আমাকে ওখান থেকে উঠিয়ে ছিল। সেই থেকে আমার রাস্তার জীবন শুরু। আদিটা আমার জীবনে না আসলে হয়তো আমিও কোন অন্ধকারে ডুবে যেতাম।
আয়াত মুখে হাত চেপে ধরে কাঁদছে। বিহান আয়াতের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো।
–এইটুকু শুনেই কাঁদছেন? আরও শুনলে কি করবেন? আপনি সেদিন আমাকে নষ্ট গলিতে যেতে দেখেছিলেন না? আপনি জানেন আমি কেন গিয়েছিলাম? না আপনি যে কারণ ভাবছেন আমি সেইজন্য যাইনি। কিছুদিন আগেই জানতে পারলাম আমার জন্মদাত্রী মা নাকি ওখানে থাকে। তাই ওখানে গিয়েছিলাম। আপনি জানেন আমার মা একজন দেহকর্মি। পারবেন আপনি আপনার স্বামীর এই অস্তিত্ব মেনে নিতে? পারবেন সবার কাছে আমার পরিচয় দিতে? আরে যেখানে আমি নিজেই নিজের অস্তিত্বকে ঘৃণা করি, সেখানে আপনি কি করে মেনে নিতে পারবেন?
কথাগুলো বলতে বিহানের চোখ ভরে উঠলো। তবে তা চোখ থেকে গড়িয়ে পরার আগেই মুছে ফেললো। নিজের চোখের পানি সে কাওকে দেখাতে চায়না। এতটাও দূর্বল সে না। বিহান চোখ মুছে কিছুটা সময় নিয়ে আবার শান্ত সুরে বলে উঠলো।
–দেখুন আমি আপনার ভালোর জন্যই বলছি। আমার পেছনে ছুটে শুধু শুধু নিজের জীবন বরবাদ করেননা। আপনার সামনে পুরো লাইফ পরে আছে। পড়ালেখা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। দেখবেন জীবনে অনেক সুখি হবেন।
আয়াত শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর চোখের পানি মুছে নিজেকে একটু শান্ত করলো। এতক্ষণে আয়াত বলে উঠলো।
–আপনি ঠিকই বলেছেন। আমি কাজটা ঠিক করিনি। সরি। আর হ্যাঁ আপনি চিন্তা করবেন না। আজকের পর আর আমি আপনাকে বিরক্ত করবোনা। এ্যাগেন সরি ফর এভরিথিং। আমি এখন আসি।
কথাটা মনে আয়াত দরজা খুলে বেড়িয়ে গেল।
পেছন থেকে বিহান শুধু তাকিয়ে রইলো।
______
মাঝখানে আরও দুই দিন কেটে গেছে। এই দুইদিনে বিহান একটা জিনিস খেয়াল করেছে। আয়াত আগের থেকে অনেক টা বদলে গেছে। আয়াত আর আগের মতো ওর পেছনে ঘোরে না। কেমন যেন সবসময় মন মরা হয়ে থাকে। মুখে কোন হাসিখুশি নেই।
বিহান আদিত্যের বাসার ছাঁদে দাঁড়িয়ে কথাগুলো ভাবছিল। হঠাৎ কারোর পায়ের আওয়াজ শুনে পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো আয়াত। আয়াত বিহানকে দেখে বলে উঠলো।
–সরি, আমি জানতাম না আপনি আছেন। জানলে আসতাম না।
কথাটা বলে আয়াত আবার চলে যেতে নিলেই বিহান আয়াতের নাম ধরে ডেকে উঠলো। আয়াত বিহানের দিকে ফিরে বললো।
–কিছু বলবেন?
বিহান একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললো।
–আপনি কি ঠিক আছেন? দেখুন আমি যা বলেছি তা আপনার ভালোর জন্যই বল,,,,,,
বিহানের কথা শেষ হওয়ার আগেই আয়াত বলে উঠলো।
–চিন্তা করেন না। আমি আবার সুইসাইড করার চেষ্টা করবো না। বোকামি একবার করেছি, বারবার করবোনা।
–যাক শেষমেশ আপনার সুবুদ্ধি হয়েছে। জেনে খুশি হলাম। আর আপনি ভবিষ্যতে আমার থেকেও হাজার গুণ ভালো ছেলে পাবেন। কারণ আপনি অনেক খুশী ডিজার্ভ করেন।
আয়াত ফেক হাসি দিয়ে বললো।
–আপনি হয়তো আমাকে ভুল বুঝছেন বিহান জি। আমি আপনাকে বলেছি আপনার জীবন থেকে সরে যাবো। তাই বলে আমি অন্য কাওকে বিয়ে করে সংসার করবো সেটাও বলিনি।
বিহান ভ্রু কুঁচকে বললো।
–মানে?
আয়াত শান্ত সুরে বলে উঠলো।
–মানে আপনি সেদিন আমাকে অনেক গুলো কথা বলেছিলেন। আজ আমি কিছু কথা বলতে চাই আপনাকে। আমি আপনাকে বিরক্ত করবোনা। তবে অন্য কারোর ঘরণীও হবোনা কখনো। আমি সারাজীবন আপনাকেই ভালোবেসে যাবো। তবে দূর থেকে। বিনা কোন শর্তে, বিনা কোন দাবিতে।কারণ আপনাকে ভালো না বাসা আমার হাতে নেই। আমি চাইলেও আপনাকে ভালোবাসা বন্ধ করে অন্য কাওকে ভালোবাসতে পারবোনা।এটা আমার হাতে নেই। আপনাকে ভালোবাসা বন্ধ করতে হলে আমাকে আমার জীবন দিতে হবে। আর আপনিই তো বলেছেন জীবন এতো সস্তা না। তাহলে কিভাবে করবো বলুন। তবে চিন্তা করবেন না। আমি কখনো আর আপনার কাছে আমার ভালোবাসার দাবি নিয়ে আসবোনা। দূর থেকেই ভালোবেসে যাবো। তাই বলে এটা ভাববেন না যে আমি সেদিন আপনার জীবনের সত্যতা জেনে আপনার কাছ থেকে দূরে যাচ্ছি। বা আমি আপনার সাথে এডজাস্ট করতে পারবো না সেইজন্য দূরে যাচ্ছি। না এটা কখনোই না। আমি আপনার কাছে যেকোনো পরিস্থিতিতে খুশী খুশী থাকতে পারবো। আপনার হয়তো আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না, হয়তো ফিল্মি ডায়লগ মনে হচ্ছে। তবে এটাই সত্যি। আমি আপনার থেকে দূরে সরে গেছি কেন জানেন?
বিহান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো আয়াতের দিকে । আয়াত ম্লান হেসে বলে উঠলো।
–কারণ টা আপনি। আপনি সেদিন আমাকে সবগুলো কারণই বলেছিলেন, কিন্তু আসল কারণটাই বলেন নি। তবে আমি ঠিকই বুঝে গেছি। আসল কারণ হলো আমি আপনার কাছে আসলে আপনি তখন নিজেকে সবচেয়ে অসহায় ব্যাক্তি মনে করেন। কারণ আপনি ভাবেণ, আপনি আমাকে আমার প্রাপ্ত খুশী দিতে পারবেন না। আপনি ভয় পান এটা ভেবে যে, আপনার অস্তিত্বের প্রভাব আমাকে না গ্রাস করে নেয়। আমার জীবন টাকে অন্ধকারে না ঠেলে দেয়। আমি আমার নিজের অস্তিত্বই না হারিয়ে ফেলি। আর এসব আপনি কখনোই মেনে নিতে পারবেন না। আপনি ভাবেন আপনার জন্য আমার জীবন হয়তো নষ্ট হয়ে যাবে। আর তাই আমি আপনার সামনে আসলে আপনি নিজেকে অনেক অসহায় মনে করেন তখন।
বিহান অবাক চোখে তাকালো আয়াতের দিকে। এই মেয়েটা কিভাবে ওর মনের কথা বুঝে গেল? সেতো কখনো তার মনের ভাব বুঝতে দেয়নি।
আয়াত আবারও বলে উঠলো।
–সেইজন্য আমি আপনার জীবন থেকে সরে যাবো। কারণ আমি চাইনা আমার জন্য আপনি নিজেকে অসহায় ভাবেন,অপরাধ বোধ আপনাকে কুড়ে কুঁড়ে খাক। আমি সেটা সহ্য করতে পারবোনা। তাই আপনাকে দূর থেকেই ভালোবেসে যাবো। আর হ্যাঁ আরেক টা কথা, আপনি যতই না বলুন আমি বুঝে গেছি যে, আপনি কোথাও না কোথাও আমাকে ভালোবাসেন। হ্যাঁ আপনি হয়তো মানবেন না। কারণ আপনি নিজেও এটা এখনো বুঝতে পারেন নি।
বিহান কিছু বলতে নিলে আয়াত তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো।
–প্লিজ না বলবেন না। আমি যদি ভুলও বুঝে থাকি। তবুও আমি এই ভুলটা নিয়েই থাকতে চাই। সারাজীবন নাহয় এটা ভেবেই একটু খুশী হবো। যাইহোক আসি এখন। অনেক কথা বলে ফেললাম। কিছু ভুল হয়ে গেলে মাফ করে দিবেন।
কথাটা বলেই আয়াত দ্রুত ওখান থেকে চলে গেল।
আর বিহান অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।আজ মেয়েটার কথাগুলো অন্যরকম ছিল। অনেক ম্যাচিওর। কোন বাচ্চামো ছিল না। শেষে কি বলে গেল মেয়েটা? আমি ওকে ভালোবাসি?না না এটা কিভাবে সম্ভব? কখনোই না।
বিহানও একটু পরে ছাঁদ থেকে নেমে এলো। করিডরের কাছে আসতেই হঠাৎ কারোর কান্নার শব্দ শুনতে পেল বিহান। বিহান ভ্রু কুঁচকে পাশে থাকা দরজাটা হালকা খুলে ভেতরে তাকাতেই চমকে গেল । ভেতরে আয়াত ফ্লোরে বসে মুখে হাত চেপে ধরে কাঁদছে। বিহানের কেমন যেন লাগলো। এই প্রথম বুকে কোন ব্যাথা অনুভব করলো ও।মেয়েটা কি তাকে সত্যিই এতো ভালোবাসে? বিহান একবার ভেতরে যেতে নিয়েও আবার গেলনা। ওকে এমুহূর্তে একা ছেড়ে দেওয়ায় ঠিক হবে। বিহান আস্তে করে ওখান থেকে সরে এলো। মাথার ভেতর শুধু আয়াতের কথাই ঘুরতে লাগলো। বুকের ভেতর কেমন চিনচিন ব্যাথা করছে। ওকি কোন ভুল করছে?
চলছে….