মরুর বুকে বৃষ্টি পর্ব-২৫

0
1385

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-২৫

★আদিত্য ধীরে ধীরে রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। ভেতরে ঢুকে দেখলো, নূর বেডের ওপর বসে ঠোঁট ফুলিয়ে নাক টানছে। আর রাগে টেডিবিয়ারের উল গুলো টেনে টেনে ছিড়সে। আদিত্যর প্রচুর খারাপ লাগছে। ওর জানটাকে কিভাবে বকে দিল তখন। ওর হাতে থাকলে ও কখনোই ওর এঞ্জেল টাকে এভাবে বকতো না।

আদিত্য ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে নূরের পাশে বসলো। নূর অভিমান করে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নাক টানতে লাগলো। আদিত্য হাত বাড়িয়ে নূরের মুখটা ধরতে গেলে নূর ঝটকা মেরে হাত টা সরিয়ে দিল। আদিত্য বুঝতে পারছে নূর অনেক বেশিই রেগে আছে। আদিত্য নিজের দুই কান ধরে অপরাধী সুরে বললো।
–সরি সোনা।ভুল হয়ে গেছে। মাফ করে দাওনা? একবার তাকাও আমার দিকে প্লিজ?

নূর এবার অভিমানী দৃষ্টিতে আদিত্যের দিকে তাকালো।তারপর হঠাৎ আদিত্যকে ধাক্কা মেরে বেডের ওপর চিত করে ফেলে দিল। তারপর নূর গিয়ে আদিত্যের পেটের ওপর উঠে বসলো। নূর রাগ দেখিয়ে আদিত্যর বুকের ওপর এলোপাথাড়ি হাত দিয়ে চাপড় মারতে মারতে কাঁদো কাঁদো গলায় বলতে লাগলো।
–পঁচা তুই, পঁচা, পঁচা। তুই আমাকে ধমকালি কেন? কেন বকলি আমাকে? তুই ওই পঁচা মেয়েটার জন্য আমাকে বকলি। কেন, কেন,কেন???

একপর্যায়ে নূর আদিত্যের বুকে খামচি দিতে লাগলো। নিজের নখগুলো আদিত্যের ফর্সা বুকে বিঁধিয়ে দিল। তাতেও যেন নূরের রাগ কমছে না। নূর এবার মাথা নিচু করে আদিত্যের বুকে কামড় দিতে লাগলো। নিজের সব রাগ আদিত্যের ওপর ঝাড়তে লাগলো নূর। আদিত্য নূরকে কিছুই বলছে না। নূরকে বাঁধাও দিচ্ছে না। দাঁত চেপে সব সহ্য করে নিচ্ছে। কেন দিবে? ও ওর এঞ্জেল কে কষ্ট দিয়েছে। তারজন্য তো এই শাস্তি ওর প্রাপ্য। নূর যদি ওকে ক্ষত বিক্ষত করেও শান্তি পায়। তাহলেও কোন আপসোস নেই ওর।

নূর একসময় ক্লান্ত হয়ে আদিত্যের ওপর অত্যাচার বন্ধ করে দিল। তারপর আদিত্যের ওপর থেকে নেমে ওর পাশে উল্টো দিকে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো। নূর এবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। নূরের কান্নার শব্দ শুনে আদিত্যের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। এতক্ষণ নূরের আঘাতেও হয়তো এতটা কষ্ট হয়নি,যতটা নূরের কান্না দেখে কষ্ট হচ্ছে। আদিত্য পেছন থেকে নূরকে জড়িয়ে ধরে আবেগী কন্ঠে বললো।
–এই এঞ্জেল সোনা,কাঁদিস না প্লিজ। তোর কান্না যে আমার সহ্য হয়না। দরকার হলে আমাকে আরও আঘাত কর। তবুও কাদিস না।

নূর কাঁদো কাঁদো গলায় অভিমানী সুরে বললো।
–আজ তুমিও আমাকে পাগল বললে? তারমানে তুমিও আমাকে পাগল ভাবো তাইনা? আমি আর থাকবো না তোমার সাথে। তোমরা সবাই পঁচা। আমি কালই চলে যাবো এখান থেকে। আর কখনো আসবোনা।

নূরের কথা শুনে আদিত্যের বুক কেঁপে উঠল। আদিত্য একটানে নূরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে বললো।
–খবরদার এঞ্জেল,এই কথা আর কখনো বলবেনা।তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো কি করে? তুমি ছাড়া আমার কে আছে বলো?

নূর নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে করতে বললো।
–ছাড় আমাকে ছাড়। তুমি পঁচা। আমাকে বকা দিয়েছ, পাগল বলেছ। আমি থাকবো না আর তোমার কাছে। ছাড় তুমি আমাকে।

আদিত্য নূরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো।
–এমন করে বলিস না প্লিজ। আ্যাম সরি না সোনা? অনেক গুলো সরি। প্লিজ মাফ করে দেনা কলিজাটা? আমি কি আমার এঞ্জেল টাকে কখনো পাগল ভাবতে পারি বল?

নূর এবার একটু শান্ত হয়ে এলো। আদিত্য নূরের মুখটা সামনে এনে দুই হাতে নূরের মুখটা আগলে ধরে বললো।
–কিন্তু কি করবো বলো?তুমি তখন অমন করছিলে। তোমাকে থামানোর জন্য আর কোন উপায় ছিল না। আর তুমি যদি ওই কাঁচের বোতল টা শায়নার মাথায় ফাটাতে তাহলে তো ও মরে যেতো। তখন কি হতো জানো?

নূর দুই দিকে মাথা নাড়াল। মানে ও জানে না।

আদিত্য বলে উঠলো।
–তখন এতো গুলো পুলিশ এসে আমার এঞ্জেল টাকে ধরে নিয়ে যেত। তারপর তোমাকে জেলের ভেতর আটকে রাখতো।তখন আমি আমার এঞ্জেল টাকে কোথায় পেতাম বলো?

নূর একটু অভিমানী সুরে বললো।
–তো কি করবো? ওই পঁচা মেয়েটাকে আমার একদম ভালো লাগে না। ও সবসময় শুধু তোমার কাছে কেন আসে? তোমার কাছে কেউ আসলে আমার একটুও ভালো লাগে না। অনেক পঁচা পঁচা লাগে।
নূর নিজের বুকের বামপাশে আঙুল ঠেকিয়ে বললো।
–এইখানে না কেমন কেমন লাগে। আর অনেক রাগও হয়। তুমিতো শুধু আমার হিরো। শুধু আমার কাছে থাকবে।আর কারও কাছে না।অন্য কেউ তোমার কাছে আসলে আমি তাকে মেরে ফেলবো হুহ্।

আদিত্য অবাক চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে রইলো। ও যা ভাবছে তাকি সত্যিই? ওর এঞ্জেল টা কি ওকে ভালোবেসে ফেলেছে? কথাটা ভাবতেই আদিত্যের বুকের ভেতর এক প্রশান্তির শীতল বাতাস বইতে লাগলো। আদিত্য নূরের দিকে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে বললো।
–আচ্ছা তাই নাকি? আচ্ছা বলোতো আমার জন্য কি আরও কিছু হয় তোমার?

নূর বাচ্চাদের মতো বললো।
–হ্যাঁ হয়তো আরও অনেক কিছু হয়। তুমি যখন বাসায় না থাকো তখন আমার অনেক পঁচা পঁচা লাগে। একটুও ভালো লাগে না। আমার সারাক্ষণ শুধু তোমার সাথে থাকতে ইচ্ছে করে। তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে। তোমার বুকে ঘুমাতেও আমার অনেক ভালো লাগে।

নূরের কথা শুনে আজ আদিত্যের পুরো বিশ্বাস হয়ে গেল, ওর এঞ্জেল টা সত্যি ওকে ভালোবেসে ফেলেছে। আদিত্যের বুকের ভেতর খুশির জলরাশী উপচে পড়ছে। এতো খুশী আদিত্য কই রাখবে। খুশিতে আদিত্য পাগল না হয়ে যায়। আদিত্য নিজের ঠোঁট কামড়ে নিঃশব্দে হাসলো। তারপর একটু মিছে অভিমান দেখিয়ে বললো।
–ভালো লাগে না ছাই। তুমি মিধ্যে বলছ। তানা হলে কি আর আমাকে ছেড়ে চলে যাইতে চাইতে এভাবে? তুমি আমার কথা একটুও ভাবোনা।
কথাটা বলে আদিত্য মিছে অভিমান করে উল্টো দিকে ফিরে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো।

আদিত্যকে এভাবে অভিমান করতে দেখে নূরের অনেক খারাপ লাগছে। নূর আদিত্যেকে মানানোর জন্য বলে উঠলো।
–না না হিরো আমি যাবোনা তো। ওটাতো আমি এমনই বলছিলাম। সত্যি বলছি। এই হিরো ঘোরনা এদিক?

নূর পেছন থেকে আদিত্যর শার্ট ধরে টানাটানি করছে।কিন্তু আদিত্য ঘুরছে না শুধু মুচকি মুচকি হাসছে। ও দেখতে চায় নূর কি করে। নূর অনেকক্ষন টানাটানি করেও আদিত্যকে ফেরাতে পারলো না। না পেরে নূর উঠে বসলো। তারপর আদিত্যের হাতের ওপর হাত বুলিয়ে ছোট বাচ্চাদের যেভাবে বলে,সেভাবে বলে উঠলো।
–আলে লে লে, রাগ করেনা হিরো সোনা। ময়না পাখি আমার রাগ করেনা। আমি তোমাকে চকলেট কিনে দেব হ্যাঁ? আর রাগ করেনা লক্ষি সোনা।

আদিত্য আর নিজের হাসি আটকাতে পারলোনা। হো হো করে হেসে উঠলো। পেটে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। কপাল গুনে বউ একটা পেয়েছে ও। কেমন করে রাগ ভাঙ্গাচ্ছে। যেন আমি কোন ছোট বাচ্চা।
আদিত্যকে হাসতে দেখে নূর না বুঝেই হাসা শুরু করে দিল। আদিত্য নূরকে টান দিয়ে ওর বুকে ফেললো। তারপর বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় একটা চুমু দিল। মেয়েটা সত্যিই একটা খুশীর গুপ্তধন।

নূর আদিত্যের বুকের দিকে তাকিয়ে দেখলো। বুকে খামচি আর কামড়ের দাগ হয়ে অনেক খারাপ অবস্থা হলো গেছে। নূর মাথা উঁচু করে আদিত্যের দিকে অপরাধী চোখে তাকিয়ে বললো।
–সরি হিরো আমি আবারও তোমাকে ব্যাথা দিয়েছি। আমি সত্যিই পঁচা। শুধু তোমাকে ব্যাথা দেই।

আদিত্য মুচকি হেসে নূরের গালে হাত বুলিয়ে বললো।
–কে বললো আমার এঞ্জেল পঁচা? আমার এঞ্জেল তো যাদুকর। এখুনি তার যাদু দিয়ে আমার ব্যাথা ছু মন্তর করে দিবে তাইনা?

নূর হাসি মুখে বললো।
–হ্যাঁ করবো তো।
কথাটা বলে নূর আদিত্যের শার্টের বোতাম খুলে, মুখ নামিয়ে আদিত্যের বুকে চুমু খেতে লাগল। আর আদিত্য ভাসতে লাগলো সুখের জোয়ারে।

শায়না এসে আদিত্যের দরজার বাইরে কান পেতে দাড়িয়ে ছিল। ভেবেছিল হয়তো রুমে এসে আদিত্য নূরের সাথে আরও রাগারাগি করবে।কিন্তু ওর আশায় গরুর চোনা ঢেলে পড়লো,যখন রুম থেকে হাসাহাসির শব্দ শুনতে পেল। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে ওর। এতকিছুর পরেও আদিত্যে ওই মেয়েটার জন্য পাগল। তবে আমিও এতো সহজে হার মানছি না। এই পাগলকে তো আমি বিদায় করেই ছাড়বো।
____

পরের দিন সকাল বেলা। আদিত্য অফিস চলে গেছে। নূর ড্রয়িং বসে বসে খেলছিল। তখনই শায়না এসে হাজির হলো। বাঁকা হেসে ধীরে ধীরে নূরের পাশে গিয়ে বসলো। তারপর নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–কি করছো নূর?

নূর বিরক্ত হয়ে বললো।
–দেখছনা খেলছি?

শায়না তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ খেল খেল।আর কয়দিনই বা থাকবে এখানে। দুচারদিন একটু খেলাধুলা করেই কাটাও।

নূর বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে বললো।
–মানে??

–মানে হলো। আদিত্য তোমাকে খুব শীঘ্রই এই বাড়ি থেকে বের করে দিবে।

নূর একটু রাগী কন্ঠে বললো।
–এই এই পঁচা মেয়ে। একদম পঁচা কথা বলবে না। হিরো কেন আমাকে বের করে দিবে হ্যা?

–কারণ তুমিতো আদিত্যর জন্য একটা খেলনা। যেমন তুমি এইসব খেলনা দিয়ে খেলা করো। আবার কয়দিন পরে ভালো না লাগলে ফেলে দাও। তেমনি আদিত্যও তোমাকে তার খেলনা হিসেবে নিয়ে এসেছে। কয়দিন খেলেছে,কিন্তু এখন আর তোমকে ভালো লাগছে না ওর। আদিত্য তোমার ওপর বিরক্ত হয়ে গেছে। তাই তোমাকেও খেলনার মতো ফেলে দিবে।

শায়নার কথা শুনে নূরের অবুঝ টা কেমন যেন করতে লাগলো। নূর তবুও আত্মবিশ্বাস দেখানোর চেষ্টা করে বললো।
–এই এই একদম মিথ্যে কথা বলবে না তুমি। যাও এখান থেকে। পঁচা একটা।

–ওমা, আমি কেন মিথ্যে কথা বলতে যাবো? আমি যা সত্যি তাই বলছি। কেন তুমি দেখোনি? কাল কেমন করে আদিত্য তোমাকে সবার সামনে বকে দিল। আবার তোমাকে পাগলও বললো। কেন বললো বলো? কারণ আদিত্য তোমাকে আর পছন্দ করে না৷ তোমাকে তার আর সহ্য হচ্ছে না। দেখবে এভাবে দুই দিন পরেই তোমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবে।

শায়নার কথায় এবার নূর দমে গেল। অবুঝ নূরের শায়নার বানোয়াট কথাই সত্যি মনে হতে লাগলো। তবে কি হিরো সত্যিই আমাকে এখান থেকে বের করে দিবে? কিন্তু আমার তো হিরোকে ছাড়া ভালো লাগে না।
কথাগুলো ভেবে নূরের কেমন যেন কান্না আসতে লাগলো।

নূরের চেহারা দেখে শায়না বাঁকা হাসি দিল। তারমানে এই পাগল টা আমার কথা মেনে নিয়েছে। শায়না নূরকে আরেকটু বিশ্বাস করানোর জন্যে বলে উঠলো।
–ঠিক আছে আমার কথা তোমার বিশ্বাস হচ্ছে নাতো? তাহলে এক কাজ করো, তুমি এখন আদিত্যকে ফোন করো। দেখবে তোমার সাথে কথাই বলতে চাইবে না।

নূর মলিন মুখে বললো।
–কিন্তু আমার কাছে তো ফোন নেই।

–ঠিক আছে আমার ফোন দিয়ে দিচ্ছি।
কথাটা বলে শায়না একটা নাম্বারে ফোন দিল। একটু পরে ফোনটা রিসিভ হলো। শায়না ফোনটা লাউড স্পিকারে দিয়ে নূরের সামনে ধরে বললো।
–হ্যালো আদিত্য, নূর তোমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে। ওর সাথে একটু কথা বলো।

নূর হাসিমুখে যেই কিছু বলতে যাবে,তখনই ওপাশ থেকে বলে উঠলো।
–আরে ওইসব পাগল ছাগলের সাথে কথা বলার সময় নেই আমার। আমার অনেক কাজ আছে এখানে। বাসায় তো ওই পাগলের জ্বালায় একটু শান্তি পাই না। এখন কি অফিসেও শান্তি পাবোনা? রাখ ফোন।
তারপর ফোনটা কেটে গেল।

নূর যেন থমকে গেল। ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না যে,ওর হিরো ওকে নিয়ে এভাবে কথা বলছে। তাহলে কি হিরো সত্যিই আমাকে আর চায়না? আমাকে এই বাড়ি থেকে বের করে দিবে? নূরের চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। অথচ অবুঝ নূর বুঝতেই পারলো না যে,ফোনের ওপাশের ব্যাক্তি আদিত্য না অন্য কেও ছিল।

নূরের চোখে পানি দেখে শায়না বাঁকা হাসি দিল। তারমানে ওর প্ল্যান সফল হয়েছে। শায়না ওর এক ফ্রেন্ড কে আগেই বলে রেখেছিল। ও যখন ফোন দেয় তখন যেন এভাবেই কথা বলে। আর তাই হয়েছে। পাগল মেয়েটা সব সত্যি ভেবে নিয়েছে।
শায়না ধীরে ধীরে ওখান থেকে উঠে গেল। এখন শুধু তামাশা দেখার পালা। দেখা যাক এবার পাগলটা কি করে। যাই করুক না কেন, শায়নার জন্য যে সুবিধাজনক হবে সেটা ভেবেই ওর আনন্দ হচ্ছে।

নূরের অনেক কান্না আসছে। কিছু ভালো লাগছে না ওর। ওর হিরো ওর সাথে এমন করতে পারলো? পঁচা হিরো,পঁচা একটা। আমাকে নাকি বের করে দিবে? আমি নিজেই আর থাকবোনা। চলে যাবো এখান থেকে। আর এক মুহূর্তও আর থাকবো না এখানে।নূরের চোখ দিয়ে পানি ঝরতে লাগলো। চোখের পানি মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়াল নূর। অভিমানে ভরা মনটা নিয়ে দরজা খুলে বাইরের দিকে বেরিয়ে গেলো নূর। বাসার সার্ভেন্ট রা তখন যার যার কাজে নিয়োজিত। তাই ওরা কেও নূরকে খেয়াল করলো না।

শায়না উপর থেকে সবই দেখছে। তবুও কিছু বলছে না। বরং নূরকে এভাবে যেতে দেখে আরও খুশী লাগছে ওর। নূর যদি নিজে নিজেই একদিকে চলে যায়। তাহলে তো ওর কিছু করতেই হবে না।

নিলা নিজের রুমে বসে একটা এসাইনমেন্ট করছিল। তাই নিচে কি হচ্ছে তা ও দেখতে পারছেনা। একটু আগে একবার নূরকে দেখে এসেছে ড্রয়িং রুমে খেলতে। তাই নিশ্চিন্ত হয়ে রুমে এসে এসাইনমেন্ট শুরু করেছে।

নূর হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখের পানি মুছছে,আর গেটের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। গার্ডসরা নূরকে একবার দেখলো, তবে তেমন একটা গায়ে লাগালো না। কারণ নূর অনেক সময় এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে খেলা করে। তাই ওরা আর অন্য কিছু ভাবলো না।
নূর হাঁটতে হাঁটতে একসময় মেইন গেটের কাছে চলে এলো। গেঁটে দুজন সিকিউরিটি গার্ড থাকে। দূর্ভাগ্যবশত ওইসময় ওদের দুজনের একজন উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। আরেক জন ওয়াশরুমে গিয়েছে। তাই কেউই নূরকে খেয়াল করলো না।

নূর একসময় গেট পার হয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে গেল। আপাতত ওর কোন হুঁশ জ্ঞান নেই, ও কি করছে। শুধু রাগের মাথায় বেড়িয়ে যাচ্ছে তাই জানে। রাস্তায় এসে গন্তব্যহীন ভাবে এমনই একদিকে হাঁটতে লাগলো। বারবার হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছছে আর বিড়বিড় করে বলছে।
–পঁচা তুমি, পঁচা হিরো। আমি থাকবো না আর তোমার কাছে।
এভাবে হাঁটতে হাঁটতে নূর একসময় অনেক দূর চলে আসে।হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে নূর একসময় ক্লান্ত হয়ে যায়। প্রায় বিশ মিনিট ধরে হাঁটার কারণে পা জোড়া অনেক ব্যাথা করছে ওর।

হঠাৎ নূরের হুঁশ আসে। নূর আশেপাশে তাকিয়ে ভাবে, কোথায় চলে এসেছে ও? এই জায়গা তো ও চেনে না। এখন কি করবে ও? কোথায় যাবে? রাস্তাও তো গুলিয়ে ফেলেছে। নূরের এবার আরও কান্না আসছে। নূর রাস্তার পাশে একটা ব্রেঞ্চে বসে আস্তে আস্তে কাঁদতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো।
–হিরোওওও আমি হারিয়ে গেছি। কোথায় তুমি? তাড়াতাড়ি আসোনা। ভালো লাগছে না আমার।

রাস্তার পথচারীরা আসতে যেতে সবাই নূরের দিকে তাকিয়ে রইলো। কেও কেও আবার হাসতে লাগলো ওকে দেখে। এসব দেখে নূরের আরও কান্না পাচ্ছে।

হঠাৎ একটা গাড়ি এস নূরের সামনে রাস্তার ওপর থামালো। গাড়ি থামিয়ে একটা লোক ভালো করে নূরকে স্ক্যানিং করলো। নূরকে চিনতে পেরে লোকটি হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো খুশি হয়ে তাড়াতাড়ি কাওকে ফোন লাগালো। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হতেই লোকটা বলে উঠলো।
–বস অনেক বড়ো একটা গুড নিউজ আছে। জানেন আমার সামনে এখন কে বসে আছে ?

ফোনের ওপাশের লোকটি বলে উঠলো।
–কে?

–আরে বস ওই সাদমান শাহরিয়ার আদিত্যর জান বসে আছে আমার সামনে।

–মানে?

–মানে হলো ওর বউ। আদিত্যর কলিজার বউ আমার সামনে বসে আছে। যাকে ধরার জন্য আমরা কতো প্ল্যান করছি। তার প্রাণের প্রিয়া বউ আমার সামনে। ভাবতে পারছেন বস,একবার যদি ওর জানকে আমাদের কব্জায় নিয়ে নেই। তাহলে ওই আদিত্য সুরসুর করে আমদের হাতে ধর দিবে।

–বাহ্ এটাতো অনেক ভালো খবর শোনালি মানিক। যাহ জলদি আদিত্যের পরাণ পাখিটারে ধরে নিয়ে আয়।

–জ্বি বস।
লোকটা ফোন রেখে গাড়ি থেকে নেমে নূরের সামনে এলো।তারপর নূরের দিকে তাকিয়ে অভিনয় করে বললো।
–আরে ম্যাডাম আপনি এখানে?

নূর লোকটার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
–তুমি কি আমাকে চেনো?

–হ্যা চিনিতো। আপনি তো আদিত্যে সারের বউ। আপনি এখানে কি করছেন?

–আসলে আমি না হারিয়ে গেছি। আমাকে একটু আমার বাড়িতে নিয়ে যাবে?

–হ্যাঁ হ্যাঁ আসুন না। আপনাকে এখুনি নিয়ে যাচ্ছি।

নূর খুশী হয়ে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ চলো চলো।

লোকটা নূরকে নিয়ে ওর গাড়িতে বসালো। অবুঝ নূর জানেও না ও কোন ফাঁদে পারা দিল।

চলবে……