মরুর বুকে বৃষ্টি পর্ব-৩১

0
1310

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৩১

★আদিত্য আর নূর একজন আরেকজনের চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর সম্ভূতি ফিরে পেতেই নূর এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিল আদিত্যের কাছ থেকে। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
–তুমি..আই মিন আপনি ঠিক আছেন?

নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো। –হ্যা ঠিক আছি। কিন্তু আপনি কে? আর এভাবে আমাকে ধরতে কে বলেছে আপনাকে?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
–আমি এই দেশের একজন দায়িত্ববান নাগরিক।আর একজন দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে চোখের সামনে একজন সুন্দরী মেয়েকে তো আর পরে যেতে দিতে পারি না তাইনা? তাই আপনাকে বাঁচাতে চলে এলাম।

ওদের কথার মাঝে নূরের মা এসে বললো।
–আরে নূরিমা, তোকে বলেছিলাম না পেইং গেস্টের কথা? এই হলো সেই পেইং গেস্ট।ওর নাম আদিত্য। আজ থেকে ও আমাদের সাথেই থাকবে।
মায়ের কথায় নূর আদিত্যের দিকে আবারও কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকালো। লোকটাকে ওর কেমন যেন রহস্যময় লাগছে। লোকটার চোখে কিছু একটা আছে। ওই চোখে তাকালে বুকের ভেতর টা কেমন যেন ঢিপঢিপ করে ওঠে। এমন কেন হচ্ছে বুঝতে পারছে না নূর। নূর আর বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলোনা ওই চোখের দিকে। চোখ সরিয়ে নিয়ে আদিত্যকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আর আদিত্য শুধু মুচকি হাসলো।

আবির বেচারাও কখন থেকে তার কচি বিয়াইন টার দিকেই চোখ গেড়ে বসে আছে। কচি বিয়াইন টাকে যে আজ বউ বউ লাগছে ওর কাছে। আবির সবার অগোচরে নিলার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে চোখ মেরে দিল। তারপর ঠোঁট চোখা করে চুমু দেখালো। নিলা সেটা দেখে লাজুক হাসলো।

নূরের মা নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–নূরিমা যাতো আদিত্যকে ওর রুমটা দেখিয়ে দে।

নূর অবাক চোখে ওর মায়ের দিকে তাকালো।আজ ওর মায়ের কার্যকর্ম সব অদ্ভুত লাগছে নূরের কাছে। একেতো একটা বাইরের একজন ছেলেমানুষ কে বাসায় নিয়ে এসেছে। তারওপর আবার আমাকে বলছে রুম দেখিয়ে দিতে? মায়ের মাথাটা বোধহয় সত্যিই গেছে। নূরের ভাবনার মাঝেই ওর মা আবারও বলে উঠলো।
–কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন যা?

নূর বলে উঠলো।
–আমি?

–হ্যাঁ তুই নাতো কি পাশের বাড়ির রহিমা? যা তাড়াতাড়ি।

মায়ের ধমকে অগত্যা নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
–চলুন।

আদিত্য মুচকি হেসে ওর ট্রলি ব্যাগটা নিয়ে নূরের সাথে গেল। নূর আদিত্য সাথে করে গেস্ট রুমে নিয়ে এলো। রুমে এসেই বলে উঠলো।
–এই হলো আপনার রুম। দেখেছেন তো? এখন আমি যাই।
কথাটা বলেই নূর চলে যেতে নিলেই আদিত্য পেছন থেকে বলে উঠলো।
–আরে আরে কোথায় যাচ্ছেন?

নূর আদিত্যের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো।
–কোথায় যাচ্ছি মানে? আপনাকে রুম দেখানোর দরকার দেখিয়ে দিয়েছি। এখন আমি চলে যাচ্ছি।

আদিত্য একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললো।
–দেখানো হয়েছে মানে? আরে শুধু বললেন আর দেখানো হয়ে গেল? আরে আমি এখানে নতুন। কোথায় কি আছে, কোনটা কিভাবে করবো সেসব তো আপনি ভালো করে বললেনি না?

–মানে? এখানে কি এমন এতো বলার আছে?

–আছেতো, এইযে ধরুন আমার এই ল্যাগেজের জিনিস গুলো আমি কই রাখবো? তারপর আমার অন্যান্য জিনিস গুলো কোনটা কোথায় রাখবো এটা তো দেখিয়ে দিবেন তাইনা? তারপর এখানে পানি ঠিকমতো আসে কিনা, কোন টাইমে কোন খাবার খাওয়া হয় এগুলো আমাকে না বললে আমি কিভাবে বুঝবো বলেন?

নূর একটু বিরক্তির সুরে বললো।
–আচ্ছা চলুন আমি দেখিয়ে দিচ্ছি সব।
কথাটা বলে নূর এক এক করে আদিত্যকে সব বলতে লাগলো। আর আদিত্য শুধু মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে রইলো। নূর কি বলছে সেসব কিছুই আদিত্যের কর্ণপাত হচ্ছে না। ওতো শুধু ওর এতদিনের আঁখির তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। খুব ইচ্ছে করছে নূরকে একটু বুকের মাঝে জড়িয়ে নিতে। তবে মনের ইচ্ছে টাকে আপাতত দমিয়ে নিল আদিত্য। যা পাচ্ছে এটাই কি কম নাকি? আল্লাহ সহায় থাকলে একদিন সবই হবে। তবে আদিত্য আরেকটা জিনিসও খুব মিস করছে। ওর বাচ্চা এঞ্জেল টাকে। তার মিষ্টি হাসি, কিউট কিউট কথাগুলো অনেক মিস করছে আদিত্য।

নূর সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে আবারও চলে যেতে নিলে,আদিত্য আবারও নূরকে আটকে দিয়ে বললো।
–শুনুন, আমাকে একটু আমার জিনিসপত্র গুলো অ্যারেঞ্জ করে দিতে সাহায্য করবেন প্লিজ?

নূর মনে মনে বিরক্ত হলেও ভদ্রতার খাতিরে আদিত্যের কথা মেনে ওর জিনিসপত্র গুলো গুছিয়ে দিতে সাহায্য করলো। আর আদিত্য বরাবরের মতো মুগ্ধ নয়নে শুধু নূরকেই দেখে গেল। কাবার্ডে কাপড়চোপড় গোছানোর সময় আদিত্য নূরের পেছনে দাঁড়িয়ে মাথাটা হালকা ঝুকিয়ে নূরের চুলের ঘ্রাণ নিল। আজ কতদিন পর সে নূরের শরীরের ঘ্রাণ পাচ্ছে। মূহুর্ত টা এখানেই থামিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তা সম্ভব না। তাই নূর বুঝে ওঠার আগেই আদিত্য আবার সরে এলো।

সব গুছানো শেষে নূর আবারও চলে যেতে নিলে আদিত্য আবারও বলে উঠলো।
–শুনুন,

নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর কন্ঠে বললো।
–এখন আবার কি? দেখুন অনেক হয়েছে। আপনাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছি এখন আবার কি?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
–আরে বিরক্ত হচ্ছেন কেন? আমি শুধু আপনার নামটা জানতে চাচ্ছিলাম। এখনতো আমাদের একসাথে এক বাড়িতে থাকতে হবে। তাই আপনার নাম টা তো জানা দরকার তাইনা?

নূর শান্ত সুরে বললো।
–আমি মেহরুমা নূর।

–নাইস টু মিট ইউ মিস নূর। আমি সাদমান শাহরিয়ার আদিত্য। আচ্ছা আপনি তো বয়সে আমার থেকে ছোট হবেন।তাই আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি কি আপনাকে তুমি করে সম্বোধন করতে পারি?

নূর একটু সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বললো।
–হ্যাঁ করতে পারেন ইটস ওকে।

–তো নূর, আমার হেল্প করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

–ইটস ওকে।

–ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল।

–জ্বি বলুন

–আচ্ছা তুমি কি বাসায় সবসময় শাড়ী পরেই থাকো?

–আরে না না। এটাতো আমার ছোট বনের
কাজ। আসলে ও আজ জিদ করছিল শাড়ী পরার জন্য। তাই আরকি।

–ওও আচ্ছা। যাইহোক তোমাকে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে। মাইন্ড করোনা, সৌন্দর্যকে সবসময় অ্যাপ্রিশিয়েট করা দরকার তাই বললাম। সত্যিই তোমাকে অপূর্ব দেখাচ্ছে।

আদিত্যের কথায় নূরের রাগ হওয়ার কথা হলেও কেমন যেন রাগ হলোনা নূরের। বরং আদিত্যর প্রশংসায় লজ্জা ঘিরে ধরলো নূরকে। বুকের ভেতর টা আবারও ধুকপুক করে উঠলো। নূর আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারলোনা। আদিত্যকে ছোট্ট করে একটা থ্যাংকস বলে ওখান থেকে চলে গেল। আর আদিত্যর ঠোঁটে ফুটে উঠলো সেই ভালো লাগার হাসি।
____

নিলা ওর রুমের দরজায় আসতেই কেউ ওর হাত টেনে ধরে রুমের দেয়ালের সাথে আটকে দিল। নিলা একটু ঘাবড়ে গিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো এটা আর কেওনা বরং ওর পাগলটা। নিলা একটু ঘাবড়ে গিয়ে বললো।
–কি করছেন? কেউ চলে আসলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

আবির নিলার দিকে ঝুঁকে বলে উঠলো।
–সর্বনাশ তো হয়েই আছে। জানো তোমাকে এতদিন কতো মিস করেছি? মিস করতে করতে আমি আধা হয়ে গেছি। তোমার কি একটুও মনে পরে না আমার কথা? এতো নিষ্ঠুর কেন তুমি? জানো ভিটামিন এর অভাবে আমি দূর্বল হয়ে গেছি?

নিলা ভ্রু কুঁচকে বললো।
–আমার সাথে দেখা না হওয়ায় আপনার ভিটামিন কমার কি সম্পর্ক?

–অনেক কঠিন সম্পর্ক। তোমার সাথে দেখা হয়না। তোমার কাছ থেকে মিষ্টি ডোজ গুলো নেওয়া হয়না তাইতো আমি দূর্বল হয়ে গেছি। তুমি ওই গানটা শোননি? ♬ তেরে চুম্মে মে চাবান প্রাস হে। তো আমি তো আমার চাবান প্রাস পাচ্ছি না। তাইতো আমার বডিতে ভিটামিন এর অভাব পরেছে। এখন ফটাফট আমার ভিটামিন এর ডোজ দিয়ে দাও যাতে আমি আবার সুস্থ সবল হয়ে উঠি।

–দেখুন,,,

বরাবরের মতো নিলার কথা শেষ হওয়ার আগেই আবির বলে উঠলো।
–দিজ ইজ নট ফেয়ার হাহ্।শুধু বলো দেখুন দেখুন। দেখাও নাতো কিছুই।

নিলা মিনতির সুরে বললো।
–প্লিজ বন্ধ করুন এইসব। কেও না কেও দেখে ফেলবে।

আবির বাঁকা হেসে বললো।
–তো দেখুক।দেখলে তো আরও ভালো। দুইজনকে ধরে বিয়ে পরিয়ে দিবে। তারপর তো সারাক্ষণ ভিটামিন এর ডোজ নিতে পারবো। হায় কত্তো মজা হবে।

–প্লিজ আমার কথাটা একটু বোঝার চেষ্টা করুন? কেও দেখে ফেললে সমস্যা হয়ে যাবে।

–ঠিক আছে আমাকে আমার ভিটামিন দিয়ে দাও। তাহলে আমি চলে যাবো।
কথাটা বলে আবির নিলার ঠোঁটের দিকে এগুতে নিল। নিলা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিল। আবিরের ঠোঁট নিলার ঠোঁটে ছুঁইছুঁই। সেই মুহূর্তে হঠাৎ কারোর পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল নিলা। নিলা ঘাবড়ে গিয়ে দুই হাত দিয়ে আবিরকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে ভীতু স্বরে বললো।
–কেও আসছে। প্লিজ আপনি লুকিয়ে পড়ুন কোথাও।

আবিরের বারা ভাতে পানি ঢেলে পড়ায় বেচারা আশাহত হয়ে বললো।
–ধ্যাৎ তেড়ি, এখই মুহূর্তেই কাওকে আসতে হলো? ভাইয়ার প্রেম করাতে সবাই মিলে হেল্প করছে। আর আমার বেলায়ই সবার ভেজাল করতে হয়।

আবিরের ফালতু কথায় পাত্তা না দিয়ে নিলা তাড়াতাড়ি করে আবিরকে লুকানোর চেষ্টা করতে লাগলো। আশেপাশে তাকিয়ে তেমন জায়গা না পেয়ে জলদি জলদি করে জানালার পর্দার পেছনে লুকিয়ে দিল আবিরকে। তখনই রুমে ঢুকলো নূর। নিলা ভয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো।
–আরে আপু, কিছু বলবে তুমি?

–হ্যাঁ, আসলে আমার চার্জার টা কাজ করছে না। তোর চার্জার টা দেতো।

–হ্যাঁ হ্যাঁ এখুনি দিচ্ছি।
নিলা তড়িঘড়ি করে ওর চার্জার টা নিয়ে নূরের হাতে দিল।

নূর চার্জার টা হাতে নিয়ে চলে যেতে নিবে তখনই জানালার পর্দার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেললো নূর। তারপর নিলার দিকে তাকিয়ে বললো।
–এসব কি?

নিলা ভয় পেয়ে গেল। তাহলে কি আপু সব জেনে গেল? নিলা একটা ঢোকে গিলে বললো।
–কি আপু? কিসের কথা বলছ?

–কিসের কথা বলছি তাকি তুই জানিস না? নাকি জেনেও না জানার ভাব করছিস?

এইরে আপু বোধহয় দেখে ফেলেছে। এখন কি হবে?আব তো তু গায়ী নিলা। নিলা করুন সুরে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নূর পর্দার দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বলে উঠলো।
–এসব কি হ্যাঁ? পর্দায় এতো ময়লা আর ঝুল কেন? পর্দা ঝাড়িস না তুই?

নূরের কথায় নিলা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারমানে আপু বুঝতে পারেনি। যাক বাঁচা গেল। নূর ঘড়ের কোনা ঝাড়ুটা হাতে নিয়ে বলে উঠলো।
–তুই না দিনে দিনে একদম আলসে হয়ে যাচ্ছিস। চোখ দিয়ে দেখেও একটা কাজ করিস না।
কথাটা বলে নূর ঝাড়ু নিয়ে এসে পর্দার ওপর জোরে জোরে বাড়ি দিয়ে পর্দা ঝাড়তে লাগলো। নিলা এসব দেখে চোখ বড়োবড়ো করে নিল। বেচারা আবিরের তো অবস্থা খারাপ। নিজের মুখ চেপে ধরে দাঁত কিড়মিড় দাঁড়িয়ে আছে। নূরের ঝাড়ুর বারিতে আবিরের হালুয়া টাইট। নিলা তাড়াতাড়ি করে নূরের হাত ধরে বললো।
–থাক থাক আপু তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না। আমি করে নিবো তুমি বরং যাও হ্যাঁ?

নূর বলে উঠলো।
–ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি ঝেড়ে নিচে আয়।মা লাঞ্চের জন্য ডাকছে।

–ঠিক আছে আপু তুমি যাও আমি আসছি।

নূর মাথা ঝাকিয়ে চলে গেল। নূর চলে যেতেই নিলা পর্দা সরিয়ে আবিরকে বের করলো। আবিরের অবস্থা করুন। নিলা অপরাধী সুরে বললো।
–সরি,,,

আবির করুন সুরে বললো।
–কি সরি হ্যাঁ? এসেছিলাম ভিটামিন এর ডোজ নিতে। আর পেলাম ঝাড়ুর ডোজ।কি কপাল আমার। আমার কিউট ভাবিডল টাও পঁচা হয়ে গেছে। কেমন করে মারলো তার দেবর কে।

আবিরের কথা শুনে নিলার অনেক হাসি পাচ্ছে। মুখ টিপে হাসছে নিলা। সেটা দেখে আবির নিলার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে নিয়ে বললো।
–অনেক হাসি পাচ্ছে না? ঝাড়ুর বারি খাইয়েছ, এখন আমাকে আমার পাওনা টা বুঝিয়ে দিয়ে আমার ব্যাথা দূর করবে।
কথাটা বলে আবির আবারও নিলার ঠোঁটের দিকে ঝুঁকতে লাগলো। নিলার ঠোঁট ছুঁইছুঁই। তখনই হঠাৎ বাইরে থেকে নিলার মা নিলার নাম ধরে ডাক ধরে ডাক দিল। নিলা হড়বড়িয়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি আবিরকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে রুম থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেল। বেচারা আবিরের আর ভিটামিন নেওয়া হলোনা। আবিরের এখন হাত পা ছড়িয়ে কেঁদে দাওয়ার মতো অবস্থা।
______

ডাইনিং টেবিলে আসতেই নূরের চোখ কপালে উঠে গেল। টেবিলের খাবার দেখে মনে হচ্ছে আজ যেন জামাই ষষ্ঠী হচ্ছে। এমন কোন জিনিস নেই যা ওর মা রান্না করেনি। এতো আহামরি আয়োজন কিসের জন্য হচ্ছে সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না নূরের।

একটু পরে সবাই লাঞ্চের জন্য টেবিলে আসলো। আদিত্য আর আবিরও এসে চেয়ার টেনে বসলো। আদিত্য নূরের পাশের চেয়ারে বসলো। নূরের মা আজ অনেক খুশী ।আজ প্রথম সে তার জামাতাকে আপ্যায়ন করার সুযোগ পাচ্ছে। তাই সে প্রফুল্লচিত্তে আদিত্যর আপ্যায়ন করতে লাগলো। নূর শুধু হা করে ওর মায়ের কান্ড দেখছে। ওর মায়ের হঠাৎ করে হলোটা কি তাই বুঝতে পারছে না নূর। এই অপরিচিত লোকটাকে এমন আদিখ্যেতা করতে দেখে নূর অবাক হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে লোকটা যেন পেইং গেস্ট না বরং তার মেয়ের জামাই।

শুধু ওর মা না,নূর খেয়াল করলো বাসার সবাই কেমন এই লোকটাকে পারলে মাথায় করে নাচে। এই নিলাটাও কি সুন্দর এই লোকটার সাথে মিশে গেছে। যেন মেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাই বোনের নতুন করে মিলন হয়েছে। এদের মাঝে নিজেকেই যেন পরপর মনে হচ্ছে। ওকে কেও খেয়ালই করছে না। যেন এখানে নূর নামের কাওকে দেখতেই পাচ্ছে না ওরা।লাইক ভ্যানিস হয়ে গেছে। এই লোকটা একদিনেই কেমন ওর পরিবারকে বস করে নিয়েছে। এসব ভেবে নূরের কেমন যেন রাগ লাগছে এই লোকটার ওপর।নাজানি কোথাথেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে।

এসব ভাবতে ভাবতে নূর বোয়ালখালীতে ভাতের সাথে একটা মরিচ সহ মুখে দিয়ে দিল।মরিচে কামড় লাগতেই ঝালে বিষম খেয়ে উঠলো নূর। নূর ঝাল একদম সহ্য করতে পারে না। চোখ দুটো কেমন লাল হয়ে গেল। নূরের এই অবস্থা দেখে আদিত্য ঘাবড়ে গেল। আদিত্য তড়িঘড়ি করে পানির গ্লাস টা নিয়ে নূরের মুখে ধরলো। আপাতত ওর অন্য কোন খেয়াল নেই। নূরও ঝালের তাড়নায় অত কিছু না ভেবে আদিত্যর হাত থেকে পানিটা খেয়ে নিল। পানি খাওয়া শেষে আদিত্য অতি চিন্তিত সুরে বললো।
–ঠিক আছ তুমি?

আদিত্যের কথায় নূর এবার আদিত্যের দিকে তাকালো। লোকটার চোখে নিজের জন্য চিন্তা স্পষ্ট দেখতে পেল নূর। কিন্তু কেন? উনি আমার জন্য এতো আকুল হচ্ছেন কেন। উনিতো আমাকে এখনো ভালো করে চেনেনই না।

নূরকে চুপ থাকতে দেখে আদিত্য আবারও বলে উঠলো।
–কি হলো কথা বলো? ঠিক আছ তুমি?

নূর এবার আদিত্যের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে মাথা হালকা ঝাঁকিয়ে বললো।
–হ্যাঁ ঠিক আছি।

আদিত্য পায়েসের বাটিটা এগিয়ে দিয়ে বললো।
–একটু মিষ্টি খাও ঝাল চলে যাবে।

লোকটাকে যতো দেখছে ততই অবাক হচ্ছে নূর।এতো কেয়ার কেন করছেন উনি আমার? নিজের মনে প্রশ্নটা করে কোন উত্তর পেলনা নূর।অগত্যা সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে পায়েস নিয়ে খাওয়া শুরু করলো।

খাওয়া দাওয়া শেষে আবির কিছুক্ষণ পর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নূরের বাসা থেকে চলে গেল।
___

রাত ১২ টা
আদিত্যের চোখে ঘুম নেই। বেডের ওপর শুধু উসখুস করছে। এতক্ষণে বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। এই সময়টারই অপেক্ষা করছিল আদিত্য। আদিত্য বেড থেকে নেমে ধীরে ধীরে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো। বাইরে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই। তাই আদিত্য ধীরে ধীরে নূরের রুমের দিকে এগুলো।যদিও কেউ দেখলেও সমস্যা হবে না। তবুও কেউ দেখলে লজ্জায় পরতে হতো। তাই আদিত্য সবার ঘুমিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা করছিল। নূরের রুমের দরজায় এসে দেখলো দরজা খোলাই শুধু চাপানো আছে। আদিত্য খুব একটা অবাক হলোনা।কারণ ও নিলাকে আগেই বলে রেখেছিল।তাই নিলাই হয়তো দরজা খুলে রেখেছে।

আদিত্য মুচকি হেসে মনে মনে ভাবলো,বাহ কি কপাল তোর আদিত্য। প্রেম করার জন্য মেয়ের ফ্যামিলিই তোকে হেল্প করে। এমন কপাল কয়জনের আছে।

আদিত্য আস্তে করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। পা টিপে টিপে নূরের বেডের কাছে এসে দেখলো নূর ঘুমে কাঁদা হয়ে আছে। বাহ্ আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে কি সুন্দর আরামে ঘুমাচ্ছে। কথাটা ভেবে মুচকি হাসলো আদিত্য। তারপর ধীরে ধীরে বেডের ওপর নূরের পাশে আস্তে করে শুয়ে পড়লো। নূরের দিকে কাত হয়ে মুখোমুখি হয়ে শুয়ে নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তবে এইটুকুতে যেন আদিত্যের মন ভরলো না।আদিত্য নূরের গায়ের ওপর থেকে চাদরটা একটু সরিয়ে নিজেও চাদরের ভেতর ঢুকে গেল। তারপর এক হাত দিয়ে নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে নূরকে নিজের বুকের ভেতর নিয়ে নিল। ঘুমে কাঁদা হয়ে থাকা নূর কিছুই টের পেল না। এটা দেখে আদিত্য খুব একটা অবাক হলোনা। ও জানতো ওর ঘুম পাগলি বউটা এমনই। ঘুমিয়ে গেলে দিন দুনিয়ায় আর কোন খবর থাকে না তার। আর এই স্বভাবটাই আজ আদিত্যর সুবিধা করে দিল। তাইতো সে তার এঞ্জেল টাকে বুকে নিয়ে ঘুমানোর লোভটা সামলাতে পারলোনা। আদিত্য দুই হাতে নূরকে নিবিড় ভাবে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিল।আজ কতদিন পর তার পরিটার শরীরের ঘ্রাণ পাচ্ছে। এতদিনের তৃষ্ণার্থ মনটা যেন প্রশান্তির ঠান্ডা শীতল বাতাস পেল। আদিত্য নূরের মাথায় চুমু খেয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিল। একমাস পর সে শান্তির ঘুম দিবে।

নূর নিজেও ঘুমের মাঝেই আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। নূরের মস্তিষ্ক ঘুমিয়ে থাকলেও তার অবচেতন মনটা ঠিকই আদিত্যর আলিঙ্গনে শান্তির পরশ খুঁজে পেল। ঘুমের ভেতরেই নূরের চেহারায় এক প্রশান্তির ছাপ ভেসে উঠলো। যেন অনেকদিন পর আজ সে অতি প্রিয় কিছু পেয়েছে। এভাবে দুজনেই প্রশান্তিতে ঘুমের রাজ্যে পারি দিল।

চলবে…..