#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৪০
★এক সপ্তাহ পর,
নূর আর নীলা মিলে আয়াতকে সাজাচ্ছে। আয়াত আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখছে। ওর যেন এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, ও সত্যি সত্যিই আজ বিহানের বউ হতে চলেছে। ফাইনালি ওর জীবনে সেই কাঙ্খিত দিনটা এসেছে। ওর ভালোবাসা সফলতা পেতে চলেছে আজ।
যদিও এর জন্য কম কষ্ট করতে হয়নি ওদের। এত সহজ ছিলনা সবকিছু। তবে এই অবাধ্য সাধন করতে সবচেয়ে বেশি হেল্প করেছে আদিত্য। আদিত্য প্রথমে আয়াতের বাবার সাথে এই বিষয়ে কথা বলে। আয়াতের বাবা প্রথমে রাজি হতে চায়নি। মানা করে দিয়েছিল। আদিত্য তাকে অনেক ভাবে বুঝায়। তাকে ভরসা দেয় যে বিহান তার মেয়েকে সবচেয়ে ভালো রাখবে। আদিত্য এটাও বলে যে, বিহানের ফাইনানশিয়াল সিকিউরিটি নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। আদিত্য ওর সম্পত্তির টুয়েন্টি পার্সেন্ট বিহানের নামে লিখে দিয়েছে। যদিও বিহান এব্যাপারে জানে না। ওর অগোচরেই এটা করা হয়েছে। আর আদিত্য থাকতে বিহানের কখনো কোন সমস্যা হবে না। এভাবে আরও অনেক ভাবে আয়াতের বাবাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে আদিত্য। আবিরও আদিত্যের পক্ষ হয়ে ওর বাবাকে বুঝায়।কারণ আবির বিহানকে অনেক ভালো করে জানে। তাই ওর বিশ্বাস বিহান ওর বোনকে ভালো রাখবে। ওদের কথায় আয়াতের বাবা একটু নরম হলেও পুরোপুরি রাজি হচ্ছিল না। তখন আয়াত অনেক কান্নাকাটি করে। আয়াত ওর বাবার পায়ে ধরে অনেক কান্নাকাটি করে রাজি হতে বলে। মেয়ের এতো কষ্ট দেখে শেষমেশ আয়াতের বাবা রাজি হয়ে যান।
তবে শরিফা বেগম কিছুতেই এই বিয়েতে রাজি নন। সে কোনমতেই বিহানের মতো ছেলের সাথে তার মেয়ের বিয়ে দিবেন না। আয়াতের বাবা অনেক বার বুঝানোর চেষ্টা করেন তবুও রাজি হননা। আয়াতের চোখের পানিও তার মন গলাতে পারেন না। বরং সে বিহানের ব্যাপারে অনেক খারাপ ভাষায় কথা বলেন। এতে আয়াতের অনেক রাগ লাগে। ওর মা যে এতটা নির্দয় আর স্বার্থপর তা আজ টের পাচ্ছে আয়াত। মনে মনে ভয়ও হয়, যদি বিহান এসব দেখে পিছু হটে যায়। যদি সে আবারও আয়াতের হাত ছেড়ে দেয়। তাহলে কি করবে আয়াত। সেতো আবারও নিঃশ্ব হয়ে যাবে। না না তাহলে আর ও বাঁচতেই পারবে না। পেয়ে হারানোর শোক সে বয়ে বেড়াতে পারবে না। তাই হাজার আকুতি মিনতি করার পরও যখন ওর মা রাজি হয়না, শেষমেশ আয়াত ওর মাকে ছাড়াই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। যে মা নিজের ছেলে মেয়ের খুশির চেয়ে তার মিথ্যে অহংকার টাই বেশি বড়ো মনে করে। তার জন্য আয়াত তার ভালোবাসাকে কুরবান করবে না। এত কষ্টের পর ও বিহানকে পেয়েছে। এখন আর হারাতে পারবে না তাকে। তাই আয়াতও আবিরের মতো ওর মাকে ছেড়ে আদিত্যর বাসায় চলে আসে। আজ এবাড়ি থেকেই আয়াত আর বিহানের বিয়ে হবে। খুবই ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা হবে।
আয়াতের ভাবনার মাঝেই ওর সাজ হয়ে গেল। নূর আয়াতের দিকে তাকিয়ে বললো।
–ওয়াও আমার কিউটি ননদটাকে একদম পরির মতো লাগছে। আজকে তো বিহান ভাইয়া চোখই ফেরাতে পারবেনা।
নূরের কথায় আয়াত লাজুক হাসলো।
এদিকে আদিত্য বিহানকে ধরে বেন্ধে একটু বর সাজানোর চেষ্টা করছে। তবে বিহান এসবে কেমন বিরক্ত হচ্ছে। বিহান বিরক্তিকর কন্ঠে বললো।
–ইয়ার এইছব মাঞ্জা না মারলে কি শাদি করন যাইবো না? কিছব পরাইয়া দিছচ? নিজেরে চিড়িয়াখানার প্রাণী লাগতাচে।
আদিত্য বিরক্তির সুরে বললো।
–তো তুই কি লুঙ্গি পরে বিয়ে করতে চাস?
–হ। লুঙ্গিতে কি ছমছ্যা? কি সুন্দর একখান জিনিস মাইরি।পরলে মনেই হয়না কিছু পরছি। কত সুন্দর হাওয়া বাতাছ পাওন যায়। আরে লুঙ্গিরে তো জাতীয় পোশাক হিসেবে ঘোষণা করন উচিত।
–ঠিক আছে। তুই বাসর ঘরে লুঙ্গিই পরে যাস কেমন? তোর কাজেও আসবে ভালো।
আদিত্যের কথায় বিহান একটু লজ্জার পেয়ে যায়।
একটু পরে আদিত্য বিহানকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসে। ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছে। আয়াতের বাবা এসেছে। ওর মা আসেনি। মিঃ আজাদ এবং তার স্ত্রী ও এসেছেন। বিহানের আজ কেমন যেন ইতস্তত লাগছে সবার সামনে। বিহান সোফায় গিয়ে বসতেই আবির বলে উঠলো।
–কিরে বসে পরলি ক্যান? আমাকে সালাম কবে কে? জানিস না আমি কনের বড়ো ভাই? আমাকে সম্মান কর। পায়ে হাত দিয়ে সালাম কর। নাহলে কিন্তু বোন বিয়ে দিবোনা?
আবিরের কথায় সবাই হেসে দিল। বিহান দাঁত কিড়মিড় করে আবিরের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বলছে, হালা খাড়া খালি একলা পাইবার দে। হ্যারপর তোরে সম্মান কত প্রকার ও কি কি উদহারন স্বরূপ বুঝাই দিমুনে।
এরমধ্যে কাজী সাহেবও চলে এসেছেন। কিছুক্ষন পরেই নূর আর নীলা মিলে আয়াতকে নিয়ে এলো। বিহান আয়াতের দিকে তাকাতেই তার হার্টবিট দুই তিনটা মিস হয়ে গেল। আয়াতকে যে আজ কোন অপ্সরির চেয়ে কম লাগছে না। নিজের প্রিয়তমাকে বধূবেশে দেখার চেয়ে মুগ্ধতা বুঝি আর কিছুতেই নেই।
নূর আয়াতকে নিয়ে এসে বিহানের পাশে বসালো। কিছুক্ষণ পর কাজী সাহেব বিয়ে পরানো আরম্ভ করলেন। বিয়ে পরানো শেষে সবাই মোনাজাত করে ওদের দাম্পত্য জীবনের জন্য শুভকামনা করলো। আয়াতের খুশীতে চোখে পানি চলে এলো। শেষমেশ ও বিহানের হয়েছে। আজ থেকে ও বিহানের বউ। ভাবতেই সারা শরীরে ঠান্ডা শীতল বাতাস বয়ে গেল।
আজকে নূরের বাবাও এসেছিলেন। আশরাফ রহমান নূরের বাবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন।
–বিয়াই সাহেব আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
নূরের বাবা বললেন।
–জ্বি বলুন?
–আসলে আপনিতো আমাদের আত্নীয়। তবে আপনাদের সাথে আরেকটা আত্মীয়তা বাড়াতে চাই।
–মানে? বুঝলাম না।
–আপনি হয়তো জানেন না। তবে আবির আর নিলা দুজন দুজনকে পছন্দ করেন। তাই আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে আমার ছেলের জন্য আপনার মেয়ের হাত দিন।
নূরের বাবা একটু অবাক হয়ে নীলার দিকে তাকালেন। নীলা বেচারি ভয়ে মাটির নিচে ডেবে যাচ্ছে। নাজানি ওর বাবা ওর কি অবস্থা করেন। নীলার বাবা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন।
–নীলা, উনি যা বলছেন তাকি সত্যিই?
নীলা মাথা নিচু করে ভয়ে ভয়ে মাথা ঝাকালো। মানে সত্যিই। নীলার বাবা এবার আশরাফ রহমানের দিকে তাকিয়ে বললেন।
–দেখুন আমি এই ব্যাপারে কিছু জানতাম না। তাই এমন ঝট করে কোন কথা বলতে পারছিনা।
এতক্ষণে আদিত্য নূরের বাবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
–বাবা আপনার আমার ওপর যদি ভরসা থেকে থাকে তাহলে নির্দ্বিধায় রাজি হয়ে যান। আবির আমারই ভাই। আর নীলাও আমার ছোট বোনের মতো। তাই বলছি ওরা দুজন সুখে থাকবে। এটার দায়িত্ব আমি নিতে পারি।
নূরের বাবা বলে উঠলেন।
–তোমার ওপরতো আমি সবচেয়ে বেশি ভরসা করি।তুমি আমার নিজের ছেলের চেয়েও বেশি। ঠিক আছে তুমি যখন বলছ তখন আমি রাজি। তবে নীলার বয়স এখনো কম। তাই এমুহূর্তে বিয়ের কথা ভাবছি না আমি। অন্তত এইচএসসি টা দিক। তারপর দেখা যাবে।
আশরাফ রহমান হাসিমুখে বলে উঠলেন।
–ঠিক আছে। বিয়েটা নাহয় পরেই হোক। তবে আজকে এই শুভদিনে ওদের এনগেজমেন্ট টা সেরে ফেলি কি বলেন?
নূরের বাবা কিছুক্ষণ ভেবে বললো
–ঠিক আছে।
এদের সিদ্ধান্তে সবাই খুশী হয়ে গেলেন। আবিরতো পারছেনা লুঙ্গি ডান্স দিতে। এতো সহজে সবকিছু হয়ে যাবে। ভাবতেই পারেনি ও। মনে চাচ্ছে বাসার ছাঁদে চিল্লাতে চিল্লাতে উড়াধুড়া নাচতে।
অতঃপর কিছুক্ষণ পর আবির আর নীলার এনগেজমেন্টও হয়ে গেল। সবাইকে মিষ্টি মুখ করানো হলো।
____
রাত এগারোটার দিকে বিহান আয়াতকে নিয়ে ওর ফ্ল্যাটের সামনে এলো।মিঃ আজাদ আর তার স্ত্রী বিহান আর আয়াতকে তাদের বসায়ই যেতে বলেছিল। তবে বিহান তাদের বুঝিয়ে বলেছে যে তারা তাদের নতুন জীবনের শুরু এখান থেকেই করতে চায়।তাই ওনারাও আর কিছু বলেননি। এই কয়দিনে ওরা দুজন মিলে ফ্ল্যাট টা পুরোপুরি ভাবে সাজিয়ে ফেলেছে। আয়াত সুন্দর করে ফ্ল্যাটের সব জিনিস নিজে হাতে সাজিয়েছে।
ফ্ল্যাটের দরজায় এসে বিহান চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। ভেতরে ঢুকে কতদূর গিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখলো আয়াত দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে। বিহান ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কি হইচে? ভিতরে আছনা ক্যালা?
আয়াত ওভাবেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। বিহান এবারে আয়াতের কাছে এগিয়ে এসে বললো।
–আরে আজব দাঁড়ায় আছ ক্যালা? ভিতরে আহো?
আয়াত একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বিহান এবার একটু বিরক্তির সুরে বললো।
–আরে সারারাত কি বাইরেই কাটানোর ইচ্ছে আছে নাকি?
আয়াত মাথা নাড়াল। মানে না।
–তাহলে আসছ না কেন?
আয়াত এতক্ষণে বলে উঠলো।
–কি জানি? আমার পা কেন যেন চলছেই না। কিভাবে ভেতরে ঢুকবো বলুন?
বিহান ভ্রু কুঁচকে বললো।
–এটা আবার কেমন কথা? এতক্ষণ তো সহিসালামতই ছিল তোমার পা জোড়া। তো এখানে আসতেই আটকে গেল? এখানে কি ভেবিকল লাগানো আছে?
আয়াত অসহায় ভাব ধরে বললো।
–আমি কি জানি? পা উঠছে নাতো আমি কি করবো? এখন কিভাবে যে যাবো? কেও যদি একটু কোলে করে নিয়ে যেত আমাকে। কিন্তু কে নিবে আমাকে? এখানে কি তেমন কোন সহৃদয় ব্যাক্তি আছে?
কথাটা বলে আয়াত এদিক ওদিক তাকিয়ে কাওকে খোজার ভান করতে লাগলো।
বিহান ভ্রু কুঁচকে কতক্ষন তাকিয়ে রইলো আয়াতের দিকে। আসল ব্যাপার টা এতক্ষণে মাথায় ঢুকলো ওর। আয়াতের নাটকের মর্মার্থ বুঝতে পেরে বিহান ফট করে আয়াতকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে বাঁকা হেসে বললো।
–কোলে ওঠার জন্য এতো মেলোড্রামা করার কি দরকার? বললেই তো হতো।
আয়াত দুহাতে বিহানের গলা জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বললো।
–তো কি করবো? আমার জামাই টা কিছুই বুঝেনা। নতুন বউকে যে কোলে নিয়ে ভেতরে ঢুকতে হয় সেটাও বলে দিতে হয়।
বিহান আয়াতকে কোলে নিয়ে ভেতরে যেতে যেতে হাসিমুখে বললো।
–ব্যাপার না। আমার ইনটেলিজেন্ট বউ তো আছেই। সে আমাকে সব শিখিয়ে দিবে। একেবারে হাতে কলমে।
কথাটা বলে বিহান এক চোখ টিপ মারলো। আর আয়াত লজ্জায় বিহানের বুকে মুখ লুকালো।
বিহান আয়াতকে নিয়ে ওদের বেডরুমে এসে দেখলো ওদের বেডরুম ফুল আর লাভ শেপের রেড বেলুন দিয়ে সাজানো। ওরা অবাক হয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো। আয়াত বলে উঠলো।
–এসব কে করেছে?
বিহান বলে উঠলো।
–কে আর করবে? আমার জানে জীগার দোস্ত ছাড়া আর কার কাজ হতে পারে?
–আদিত্য ভাইয়া?
–হ্যাঁ। ওর কাছে ফ্ল্যাটের একটা চাবি দিয়ে রেখেছি। নিশ্চয় ওই করিয়েছে এসব।
–ভাইয়া সত্যিই গ্রেট। কত করে সবার জন্য। অথচ আমরা ভাইয়ার জন্য কিছু করতেই পারি না।
–আপসোস করোনা। আমরা ওকে খুব তাড়াতাড়ি মামা হওয়ার খুশীটা দিয়ে দেব। তাহলেই হয়ে যাবে। আফটার অল ওর এতো মেহনত তো আর বিফলে দিতে পারিনা তাইনা?
আয়াত লজ্জায় বিহানের বুকে আলতো করে কিল মেরে বললো।
–ধ্যাৎ,,,,
বিহান হেসে দিয়ে আয়াতকে নিয়ে বেডের ওপর বসিয়ে দিয়ে বললো।
–তুমি এসব শাড়ী গয়নায় নিশ্চয় টায়ার্ড হয়ে গেছ। যাও চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নাও।
আয়াত আলতো করে মাথা ঝাকিয়ে আস্তে করে বেড থেকে নেমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। বিহানও উঠে দাঁড়িয়ে গায়ের পাঞ্জাবিটা খুলে কাবার্ড থেকে একটা টিশার্ট বের করে পরে নিল। আয়াত আয়নার সামনে দাড়িয়ে মাথার ওড়নাটা খুলে ধীরে ধীরে সব অর্নামেন্ট গুলো খুলতে লাগলো। হাতের চুড়ি গুলো খুলে ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখছে। চুড়ির রুনুঝুনু শব্দে বিহান আয়াতের দিকে ঘুরে তাকালো। আয়াত এবার কানের দুল খুলছে। বিহান কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আজ থেকে বিহান আর একা নেই। এই মেয়েটা এখন থেকে ওর বউ। ওর অর্ধাঙ্গিনী, চিরজীবনের সাথী। এখন থেকে এই মেয়েটার ওপর শুধু ওর অধিকার। সে শুধুই বিহানের। একান্তই বিহানের।
বিহান নেশাগ্রস্থ চোখে তাকিয়ে ধীরে ধীরে আয়াতের দিকে এগিয়ে গিয়ে আয়াতের পেছনে দাঁড়াল। আয়াত ওর নেকলেস টা খোলার চেষ্টা করছিল। বিহান হাত বাড়িয়ে আয়াতের নেকলেস খুলতে লাগলো। আয়াত একটু চমকে উঠে আয়নায় তাকিয়ে দেখলো বিহান কেমন নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে আছে। বিহানের এমন চাহুনি দেখে আয়াত লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেললো। বিহানের দিকে তাকানোর আর সাহস নেই ওর।
বিহান নেকলেস টা খুলে রেখে আয়াতের গলার পেছনে একটা গভীর চুমু খেল। আয়াতের সারা শরীরে শিহরণ ছড়িয়ে পড়লো। আয়াত কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে দুই হাতে শাড়ী খামচে ধরলো। বিহান আরও গভীর ভাবে আয়াতের গলায় ঘাড়ে চুমু খেতে লাগলো। আয়াতের নিঃশ্বাস ভারি হয়ে যাচ্ছে। দম আটকে আসছে ওর। আয়াত ওখান থেকে চলে যেতে নিলে বিহান আয়াতের কোমড় জড়িয়ে ধরে নেশালো কন্ঠে বললো।
–কোথায় যাচ্ছ?
আয়াত কোনরকমে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো।
–চে চেঞ্জ করে আসি।
বিহান আয়াতের কানে নাক ঘষে বললো।
–চেঞ্জ করে কি হবে? কিছু তো আর থাকবেনা। আজ তোমার সারা অঙ্গে শুধু বিহান নামক বস্ত্র থাকবে।
কথাটা বলে বিহান আয়াতকে আবারও কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে এগুলো। আয়াতও বিহানের বুকে নিজেকে সঁপে দিল। আজ সে বিহানের রঙে রাঙাবে নিজেকে।
_____
নূর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওর গহনা গুলো খুলছে। অনুষ্ঠান শেষ করে সবাইকে বিদায় দিয়ে মাত্রই রুমে এসেছে ও। গহনা খোলা শেষে নূর ওর পিঠে হাত দিয়ে ব্লাউজের ফিতা খোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু ফিতায় কেমন গিট্টু লেগে গেছে তাই খুলতে পারছে না।
তখনই আদিত্য দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। রুমে ঢুকতেই নূরকে এভাবে দেখে আদিত্যের চোখে নেশা লেগে গেল। আদিত্য টেডি স্মাইল দিয়ে ধীরে ধীরে নূরের কাছে এগিয়ে গেল। নূরের পেছনে এসে হাত বাড়িয়ে নূরের ফিতা খুলতে লাগলো। নূর আয়নায় তাকিয়ে আদিত্যকে দেখে লাজুক হাসলো। আদিত্য ফিতা খুলে দিয়ে নূরের পিঠে একটা চুমু খেল। তারপর দুই হাতে নূরের শাড়ির ফাঁকে খোলা কোমড় জড়িয়ে ধরে নূরের চুলে নাক ডুবিয়ে দিয়ে নেশালো কন্ঠে বললো।
–আজকের সারাদিনে ঝামেলায় বউটাকে একটু কাছেই পায়নি। একটু আদরও করতে পারিনি। আই মিস ইউ সো মাচ।
নূর মুচকি হেসে বললো।
–এমন ভাবে বলছো যেন কতদিন দেখোনি। আরে সারাদিন চোখের সামনেই তো ছিলাম।
–তুমি বুঝবে না। জানো তোমাকে একটু খানি না দেখতে পেলেও মনে হয় কত দিন দেখিনি। তোমার প্রতি কেয়ার একটু কম হয়ে গেলেও মনে হয় আমি অনেক বড়ো অন্যায় করে ফেলছি। যার শাস্তিস্বরূপ তোমাকে আরও বেশি করে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। তোমাকে যত ভালোবাসি তবুও মনে হয় যেন কম হয়ে যাচ্ছে। মনে হয় আরও কেন ভালোবাসতে পারিনা আমি তোমাকে। ইচ্ছে করে তোমাকে চোখের পলকে বসিয়ে রাখতে।
আদিত্যের এমন মনোমুগ্ধকর আবেগী কথায় নূরের চোখে সুখের অশ্রু জমা হয়ে গেল। তবে সেটা গড়িয়ে নিচে পড়তে দিল না আদিত্য। নূরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নূরের গাল বেয়ে আসা অশ্রু কনাটাকে আদিত্য ঠোঁট দিয়ে শুষে নিল। নূরের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বললো।
–তুমি জানো তোমার এই চোখের পানি আমার কাছে কতো দামি? খবরদার আর কখনো এভাবে আমার জিনিস কে নষ্ট করবেনা। নাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ কেও হবে না।
নূর মুচকি হেসে আদিত্যের বুকে মাথা রাখলো। আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিয়ে দুষ্টু হেসে বললো।
–চলো আজকে আমরাও একটু নতুন করে বাসর করে ফেলি।
নূর লাজুক হেসে আদিত্যের বুকে মুখ লুকালো।আদিত্য নূরকে নিয়ে চললো তার ভালোবাসার রাজ্যে।
____
সকালের ঝলমলে মিষ্টি রোদ জানালা ভেদ করে রুমে ঢুকে ছড়িয়ে পড়ছে। রোদের ঝিলিক আয়াতের চোখে পড়তেই আয়াতের ঘুম ভেঙে গেল। চোখ একবার খুলে আবার বন্ধ করে নিল। কয়েকবার পিটপিট করে চোখ পরিস্কার করে ভালো ভাবে তাকালো। নিজেকে বিহানের উন্মুক্ত বুকে আবিস্কার করলো আয়াত। ওদের গায়ের ওপর শুধু একটা সাদা চাদর। বিহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে এখনো ঘুমে বিভোর। আয়াত মুচকি হেসে বিহানের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো। কাল রাতের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় লাল হয়ে গেল আয়াত। আজ সে পুরোপুরি বিহানের হয়ে গেছে। শুধুই বিহানের, আমার বিহানের।
হঠাৎ ফোনের শব্দে আয়াতের ভাবনায় ছেদ পড়লো। আয়াত বেডের পাশের ছোট টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ওর এক বান্ধবী ফোন করেছে। হয়তো এনজিওর কোন কাজে হবে তাই ভেবে আয়াত গায়ের চাদর বুকের সাথে পেচিয়ে উঠে বসে ফোন রিসিভ করে কথা বলতে লাগলো।
আয়াতের কথা বলার শব্দে বিহানের ঘুম ভেঙে গেল। বিহান চোখ কচলে তাকিয়ে দেখলো আয়াত ফোনে কথা বলছে। পেছন থেকে আয়াতের খোলা ফর্সা পিঠ দৃশ্যমান হয়ে আছে।
সকাল সকাল এমন আবেদনময়ী দৃশ্য দেখে বিহানের আবারও নেশা ধরে গেল। বিহান হঠাৎ আয়াতের হাত ধরে টান মেরে নিজে ওপর ফেলে দিল। আয়াত একটু চমকে উঠে বললো।
–আরে কি করছেন ফোনে কথা বলছি তো?
বিহান কিছু না বলে আয়াতের হাত থেকে ফোন টা নিয়ে পায়ের কাছে ছুড়ে ফেললো। আয়াত কিছু বলতে যাবে তার আগেই বিহান ওর মুখ বন্ধ করে দিল। আবারও আয়াতে মেতে উঠলো।
__
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আয়াত। মাত্রই শাওয়ার নিয়ে এসেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝাড়ছে। বিহান এখনো বিছানায় শুয়েই ছিল। আয়াতের চুলের পানির ঝাপটায় চোখ মেলে তাকালো বিহান। সদ্য শাওয়ার নিয়ে আসা স্নিগ্ধ আয়াতের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।বিহান উঠে দাঁড়িয়ে আয়াতের কাছে এসে পেছন থেকে আয়াতের কোমড় জড়িয়ে আয়াতের কানে আলতো করে একটা কামড় দিল।
আয়াত লজ্জা পেয়ে বলে উঠলো।
–কি করছেন? আবার শুরু করেছেন? কাল রাতে এতো কামড়েও বুঝি স্বাদ মেটেনি? জানেন শাওয়ার নিতে গিয়ে শরীর জ্বলছিল আমার। আপনি না সত্যিই একটা জঙ্গলি। এভাবে কেউ কামড়ায়?
হঠাৎ বিহানের মুখটা মলিন হয়ে গেল। বিহানের হাত ঢিলা হয়ে এলো। বিহান আস্তে করে আয়াতের কোমড় ছেড়ে দিয়ে অপরাধী সুরে বলে উঠলো।
–সরি,
কথাটা বলেই বিহান আয়াতকে ছেড়ে বেলকনির দিকে চলে গেল।
বিহানকে এভাবে যেতে দেখে আয়াতের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। ওযে ভুল কথা বলে ফেলেছে তা টের পাচ্ছে ও। নিজের ওপর চরম রাগ লাগছে ওর। কেন বলতে গেলাম ওই কথা? আয়াত দ্রুত বেলকনিতে গিয়ে দেখলো বিহান উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে বিষন্ন মনে তাকিয়ে আছে। আয়াত ছুটে গিয়ে পেছন থেকে বিহানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে বললো।
–অ্যাম সরি। প্লিজ মাফ করে দিন আমাকে। আমি সত্যিই ওভাবে বলিনি কথাটা। প্লিজ রাগ করে থাকবেন না। চাইলে আমাকে বকাঝকা করুন। তবুও রাগ করে থাকবেন না প্লিজ।
বিহান এবার আয়াতের দিকে তাকালো। চোখ দুটো কেমন লাল হয়ে গেছে ওর। আজ প্রথম বিহানের চোখে পানি দেখতে পেল আয়াত। আয়াতের বুকটা আরও কেঁপে উঠল। ওকি ওর বিহানকে এতটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছে? বিহান আয়াতের দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাতে চুমু খেয়ে বললো।
–কেদনা প্লিজ। তোমার কোন দোষ নেই। আর তোমার কথায় আমি রাগও করিনি। আসলে আমি তোমার জন্য ভয় পাচ্ছি। আমার ভয় হয় আমার অস্তিত্বের প্রভাব কখনো তোমার ওপর না পরে। আয়াত আমি জানি না। আমার রক্ত কেমন? আমার জন্মদাতা কেমন? তবে এটা আমি নিশ্চিত যে সে কোন ভালো মানুষ হবে না। কারণ কোন ভালো মানুষ এমন কাজ করতে পারে না। কোন ভালো মানুষ পতিতা পল্লিতে যায়না। সে নিশ্চয় কোন নিকৃষ্ট মানুষ হবে। আর আমার রক্তেও সেই নিকৃষ্ট মানুষের রক্ত বইছে। আমার ভয় হয় আমার এই রক্ত কখনো তার রঙ না দেখালে হয়। আমিও যেন ওই লোকটার মতো নাা হয়ে যাই। আর তার প্রভাব যেন তোমার ওপর কখনো না পরে। তাহলে আমি সহ্য করতে পারবোনা। বেঁচে থেকেও মরে যাবো।
আয়াত পা উঁচু করে বিহানের কপালে চুমু খেয়ে বললো।
–কখনো না। একদম এসব কথা বলবেন না। আপনি কখনো ওই ব্যাক্তির মতো হবেন না। আপনি আমার বিহান। আমার দেখা সেরা পুরুষ। তার দ্বারা কখনো কোন অনৈতিক কাজ হবে না।
বিহান আয়াতকে জড়িয়ে ধরে বললো।
–প্লিজ কখনো এমন হলে আমাকে সামলে নিও। আমাকে ছেড়ে যেওনা। দরকার হলে আমাকে বকাঝকা করো শাস্তি দিও। তবুও ছেড়ে যেওনা।
আয়াতও বিহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো।
–কখনো না। যাই হয়ে যাকনা কেন আমি সবসময় আপনার পাশে আছি।
বিহান একটা তৃপ্তির হাসি দিল। আয়াত থাকলে আর কিছু চাইনা ওর।
চলবে……