#মরুর_বুকে_বৃষ্টি (S-2)
পর্ব-৯
®মেহরুমা নূর
★নূরকে নিয়ে হসপিটালে এসেছে আদিত্য। ডাক্তারের দেওয়া পরিক্ষা নিরীক্ষা গুলো করিয়েছে। এখন রিপোর্ট দেখছে ডক্টর। আদিত্য চিন্তিত,ভারাক্রান্ত মুখে বসে আছে। ভয় হচ্ছে তার এঞ্জেলের রিপোর্টে যেন খারাপ কিছু না আসে। নূর পাশেই বসে আছে।অবুঝ নূরের মাঝে নেই কোনো চিন্তা ভাবনার ছাপ। সেতো চঞ্চল,উৎসুক নয়নে এদিক ওদিক দেখতে ব্যাস্ত। টেবিলের উপর রাখা ডক্তারি ইকুইপমেন্ট গুলো নাড়াচাড়া করে দেখছে। ডক্টর রিপোর্ট দেখে আদিত্যর উদ্দেশ্যে বলল,
“মিঃ আদিত্য আপনার সাথে একা কথা বলতে হবে একটু।”
আদিত্য মাথা নেড়ে নূরকে বাইরে নিয়ে এলো। বাইরে বিহান আর আবির ছিলো। আদিত্য ওদের বলল নূরকে দেখে রাখতে। নূরকে ওদের কাছে রেখে আদিত্য ভেতরে এলো। ডক্টর তখন আদিত্যের উদ্দেশ্যে বলল,
“রিপোর্ট দেখে যা বুঝলাম মিসেস নূরের সমস্যা অনেক দিনের। আর কোনো চিকিৎসা না পাওয়ায় তার সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অ্যাটাক গুলোও একারণেই হচ্ছে। আসলে যখন মাথায় তীব্র যন্ত্রণা হয় তখন পেশেন্ট সইতে পারে না। যন্ত্রণায় হুঁশ হারিয়ে ফেলে। তখন ওমন নিজের মাথা নিজেই বারি দেয়।”
আদিত্য ভীতিকর কন্ঠে বলল,
“ডক্টর ওর এই সমস্যা কিভাবে ঠিক হবে? ওকে ওই যন্ত্রণা পেতে আর দেখতে চাইনা আমি। প্লিজ ওকে ওই যন্ত্রণা থেকে বাঁচান। আপনি বললে দরকার হলে পৃথিবীর যে ডক্টরের কাছে গেলে এর চিকিৎসা পাওয়া যাবে সেখানেই নিয়ে যাবো আমি ওকে।”
“রিল্যাক্স মিঃ আদিত্য। অন্য কোথাও যেতে হবে না আপনাকে। দেশেই এখন উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। আমি কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি। এগুলো নিয়মিত খাওয়ান। তবে রোগ যেহেতু পূরান তাই সারতেও অনেকটা সময় লাগবে। সময় নিলেও আশা করি ঠিক হয়ে যাবেন উনি। আর সাথে সপ্তাহে একদিন করে উনাকে থেরাপি দেওয়াতে নিয়ে আসবেন।আজ থেকেই শুরু করুন থেরাপি। আশা করি ধীরে ধীরে পুরোপুরি সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে যাবেন উনি।”
“ওকে ডক্টর, থ্যাংক ইউ সো মাচ। আমি আজই থেরাপি দিয়ে নিয়ে যাবো।”
আদিত্য বাইরে এসে নূরকে থেরাপির জন্য নিয়ে গেল। ওরা যেতেই আবির বিহানের উদ্দেশ্যে বলল,
“ধুরর,একটাও সুন্দর ডাক্তারনী পাইলাম না যে আমার অসুখের চিকিৎসা করবে।”
বিহান জবাবে বলল,
“ক্যালা, তোর আবার কি ওইচে! মগজে ক্রিমি ওইচে নাকি কিডনিতে আমাছা ওইচে!”
আবির এটিটিউড দেখিয়ে বলল,
“ছ্যাঃ ছ্যাঃ! এইসব ইয়াক মার্কা রোগ তোর মতো আবুলগো হয়। আমারতো সিঙ্গেলেরিয়া রোগ হয়েছে। খুবই মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে। জলদি চিকিৎসা না পাইলে মারা যামুগা।”
“এইডা আবার কি রোগ! মদনলাল পাগলের গবেষণাগার থাইকা নতুন উৎপন্ন করছচ এই রোগ!”
“এটা আবির দ্য গ্রেট সাইনটিস্টের আবিষ্কৃত রোগ। আসলে আমি সিঙ্গেল থাকলেই এই রোগ প্রাদুর্ভাব ঘটে। মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যাই আমি।গত রাত ঠিক একটার পরপরই ঠাস করে সিঙ্গেল হয়ে গেলাম আমি বুঝলি! আর সাথে সাথে শুরু হলো আমার সিঙ্গেলেরিয়া রোগ। সিঙ্গেল হওয়ার সাথে সাথেই আমার হিমোগ্লোবিন কমে গেল,সুগার ফল করছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। খুবই মুমূর্ষু অবস্থা আমার। এখন জলদি একখান ডাক্তারনী খোঁজা লাগবে। নাহলে রোগ সারবে না।”
“আহারে ছুইন্না দিলে বহুত দুঃখ পাইলাম। দুঃখে এক্কেরে ডাইরিয়া হওনের দছা। তয় আমার কাছে একখান ছুন্দর ডাক্তারনীর খোঁজ আছে। তুই চাইলে কইতে পারি।”
“কস কি মামা! আরে জলদি ক ব্যাটা। কে সে?”
“আহানা।”
উৎসুক মুখখানা মুহূর্তেই স্থির হয়ে গেল আবিরের। সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
“আবার শুরু করেছিস তুই! সব কথার মাঝে তুই আন্নিকে টেনে আনিস কেন?”
“কারণ ভাল্লাগে আমার, তোর কি ছমছ্যা?”
আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো বিহানের দিকে। তারপর হঠাৎ বাঁকা হেঁসে বলল,
“আচ্ছা তোর ভাল্লাগে আন্নিরে! ফাইন তাহলেতো তোর জন্য সুপারিশ করতেই হয়। দশটা না, পাঁচটা না একখানইতো ফাটা বাঙ্গি মার্কা দোস্ত তুই। তোর জন্য এটা করাতো আমার গুরুদায়িত্ব। দাঁড়া এখুনি তোর মালকা বানুর সাথে রটনা ফিক্স করে দিচ্ছি।”
বলেই বিহানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আবির ফোন বের করে কারো নাম্বারে ফোন লাগাল। লাউড স্পিকারে রাখল ফোন।অনেকক্ষণ ফোন বাজার পর ফোন রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে মেয়েলী কন্ঠে বলল,
“বলুন। ”
আবির বলল,
“দিনদিন ম্যানার্সের চরম ঘাটতি দেখা দিচ্ছে তোর ভেতর আন্নি। একেবারে এভারেস্ট সমান বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস তুই। মন চাচ্ছে ঠাস করে চড় মেরে তোর বত্রিশ পাটি দাঁত ফেলে দেই। শুধু ঠাস করে না, ফটাস ফটাস করে চড় মারা উচিত। একজন মানুষ ফোন দিলে তাকে সালাম দেওয়ার নূনতম ম্যানার্সও ভুলে গেছিস তুই! তার উপর আমি হলাম তোর ছয় বছরের বড় মুরব্বি। আমাকেতো তোর মাথায় তিন মাইল সমান ঘোমটা টেনে সালাম দেওয়া উচিত। তা না সোজা ” বলুন!” ছিঃ ছিঃ এত অভদ্র মেয়ের দায়ে আঙ্কেল, আন্টি আজই বনবাসে যাবে নির্ঘাত।”
আবিরের কথার পরিপেক্ষিতে ওপাশ থেকে উত্তর এলো,
“ধন্যবাদ আপনার মহান বানির জন্য। এবার কি ফোন দেওয়ার কারণ বলে কৃতার্থ করবেন নাকি ফোন রাখব আমি?”
“অফকোর্স কারণ আছে। কারণ ছাড়া এই আবির তোর মতো ম্যানার্সহীন মেয়েকে ফোন দিতে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আচ্ছা শোন তোর জন্য বিশাল গুড নিউজ আছে। চেয়ার টেয়ার থাকলে বসে পড়। নাহলে এতবড় গুড নিউজ শুনে ঠাস করে পড়ে ঠুস করে অজ্ঞান খেয়ে যেতে পারিস। তো কথা হলো,আমার বন্ধু আছে না বিহান! তার তোর উপর দিল আইছে। যদিও তোর উপরতো হাঁচিও আসার মতো কিছু নাই। হারিকেন দিয়ে খুঁজলেও কিছু পাওয়া যাবে না। তবে ওইযে বলে না,” দিল এসেছে গাধার উপর তো ঘোড়া কি করবে!” তোরও তেমন কপাল খুলে গেছে। আমার বন্ধুর পোলা সারাজীবন তাপস্যা করলেও পাবিনা৷ গন্ডারের মতো নাক, গরুর মতো চোখ, হাতির মতো পেট, এনাকোন্ডার মতো চুল। হাসলে গাধার মতো লাগে আর কাঁদলে ব্যাঙের মতো।মনে কর পুরা একখান চিড়িয়াখানা। কপাল গুনে এমন পোলা তোরে পছন্দ করছে। তোর নিশ্চয় খুশিতে হার্ট অ্যাটাক করার অবস্থা তাইনা! আমি জানি এমন পোলাতো আর……”
এই পর্যায়ে ওই পাশ থেকে ফোন কেটে দিলো। ফোন কাটা দেখেই হো হো করে হেঁসে উঠল আবির। পাশে তাকিয়ে দেখল বিহান খেয়ে ফেলব টাইপ লুক দিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তা দেখে আবির বলল,
“কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? তুইতো নিজেই দেখলি তোর জন্য কত সুপারিশ করলাম। এখন ওর ইন্টারেস্ট না হলে আমার কি দোষ বল।”
বিহান আবির পিঠে দুম করে কিল বসিয়ে দিয়ে বলল,
“তোর মতো ঘটক হইলে জীবনে আর কোনো সম্বন্ধ হইবো না।”
বলেই হাসলো দুজন। বিহান আবার বলল,
“ছালা তুই কেমন পোলা! নিজের ভালোবাছার মানুষের কাছে অন্য পোলার ছুপারিছ করগাছচ!”
আবির তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“হোয়াট রাবিশ! আবির কাউকে ভালোবাসে না। ওসব সিলি কাজ আমার জন্য না। আর না আহানা আমার ভালোবাসা টাইপ কিছু।”
“তাইলে আহানা তোর লাইগা কি?”
আবির দিশাহীন শূন্যে নজর রেখে বলল,
“আহানা আমার জন্য এক মিস্ট্রি। যে মিস্ট্রি আমি কখনোই সলভ করতে চাইনা। কিছু কিছু মিস্ট্রি সলভ না হওয়াই ভালো। এরমাঝে এক অন্যরকম প্রশান্তি আছে। তুই বুঝবি না। কারণ তোর জীবনে এমন মিস্ট্রি আসেনিতো তাই। ”
আবিরের কথায় হঠাৎ হিয়া নামের ওই সুনয়নাধিকারী মেয়লটির কথা মনে পড়ল বিহানের। তার জীবনেও যে মিস্ট্রির আগমন ঘটেছে। তবে বিহান চায় ওই মিস্ট্রি সলভ করতে।ওই সুনয়নার ধূম্রজালের মায়ায় আঁটকে গেছে যে সে। তাইতো তাকে বারবার দেখার ইচ্ছে জাগে মনে। এই প্রথমবার মন অবাধ্য হচ্ছে বিহানের। কিছুতেই মানছেনা বারণ। তবে কি ওই নিষিদ্ধ জালে আঁটকে গেল সে!
ওদের কথাবার্তার মাঝেই আদিত্য নূরকে নিয়ে বেড়িয়ে এলো থেরাপি শেষ করে। ওদের কাছে এসে আদিত্য বলল,
“তোরা নূরের সাথে দাঁড়া এখানে। আমি ফার্মেসী থেকে ঔষধ গুলো নিয়ে আসছি।”
আদিত্য যাওয়ার পর আবির নূরের সাথে টুকটাক কথা বলছিল। হঠাৎ নূরের চোখে কিছু পড়ল।এবং তা দেখে কেমন যেন অন্যরকম হয়ে গেল নূর। কেমন ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেল। যেন কিছু একটা দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছে সে। আবির, বিহান দুজনেই বিষয়টা খেয়াল করল। আবির বলল,
“ভাবি কি হয়েছে? ভয় পাচ্ছেন কেন?”
নূর কিছুই বলছেনা শুধু কিছু একটা দেখে ভয়ে ওদের পিছনে লুকিয়ে পড়ছে। একটু পর আদিত্য নূরের ঔষধ কিনে ফিরে এলো। আদিত্যকে দেখে নূর দৌড়ে গিয়ে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে শক্ত হয়ে তার বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে রইল। নূরের হঠাৎ এমন আচরণ দেখে একটু ঘাবড়ে গেল আদিত্য। আবির আর বিহানের উদ্দেশ্যে বলল,
“কিরে, কি হয়েছে? নূর এমন ভয় পাচ্ছে কেন?”
আবির বলল,
“আমরাও বুঝতে পারছি না। ঠিকঠাকই ছিলো, হঠাৎ কি দেখে যেন এমন ভয় পেয়ে গেল।”
আদিত্য নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বলল,
“কি হয়েছে এঞ্জেল? ভয় পাচ্ছ কেন? আমাকে বলো। তোমার হিরো আছে না! ভয় কিসের! বলো কি হয়েছে? ”
নূর আদিত্যর শার্ট শক্ত করে খামচে ধরে আছে। বুকের মাঝে লুকিয়ে থেকেই ভয়ে আতঙ্কিত চোখ সামান্য বের করে একদিকে তাকালো। পরপরই আবারও ভয়ে লুকিয়ে পড়ল আদিত্যর বুকের মাঝে। ভয়মিশ্রিত, অস্পষ্ট স্বরে বলল,
“ও….ওই প…পঁচা লোক। আবার এসেছে। ভালো না সে। ভয় করছে আমার। আমাকে নিয়ে চলো এখান থেকে। নাহলে আমার কাছে আসবে সে।”
ভ্রু কুঁচকে আসলো আদিত্যর। বুঝতে পারলোনা কাকে দেখে এভাবে ভয় পাচ্ছে নূর। আদিত্য আবারও জানতে চাইল,
“কে পঁচা লোক? কার কথা বলছ তুমি? দেখ ভয় নেই এঞ্জেল। আমি আছি না! আমি থাকতে কেউ আসবেনা তোমার কাছে। তুমি বলো কার কথা বলছ তুমি? ”
নূর আবারও ভয়ে ভয়ে চোখ বের করে তাকালো কারোর দিকে। হাত উঠিয়ে ইশারা করে দেখালো কাউকে। নূরের ইশারা অনুযায়ী আদিত্যসহ আবির, বিহানও তাকালো সেই দিকে। কিছুটা দূরে অন্য এক ডক্টরের কেবিনের সামনে ওয়েটিং চেয়ারে বসে আছে এক মধ্যবয়স্ক পুরুষ। গালে হাত দিয়ে বসে আছে। আদিত্য তাকে দেখে বলল,
“ওই কালো জামা পড়া লোকটা?”
নূর আবারও আদিত্যর বুকে মুখ লুকিয়ে মাথা ঝাকিয়ে বুঝাল ওই লোকটাই। আদিত্য বলল,
“ওই লোকটাকে ভয় পাচ্ছ কেন? উনাকে চেন তুমি?”
নূর মুখ লুকানো অবস্থায়ই ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
“হ্যাঁ চিনি। আমাদের গ্রামের বাড়ির পাশে বাড়ি।”
“তো ভয় পাচ্ছ কেন? কি করেছে সে?”
“সে পঁচা, একদম ভালো না। আমাকে শুধু ব্যাথা দেয়। আমাকে একলা পেলেই বাগানে নিয়ে গিয়ে আমার এখানে কামড়ায়।”
নূর তার সম্মুখভাগে হাত দিয়ে দেখাল। তারপর বলল,
“আরও আমার জামা….”
আদিত্য তড়িৎ গতিতে নূরকে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“হুঁশ,আর বলতে হবে না। বুঝতে পেরেছি আমি।”
আবির আর বিহানও ঘটনা বুঝতে পেরে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে ফেলে। নিজেদের পুরুষ জাতি হওয়া নিয়েই যেন ঘৃণা হচ্ছে তাদের। আদিত্যর মুখমন্ডল তৎক্ষনাৎ র,ক্তিম বর্ণ ধারণ করে। যেন দাবানল টগবগিয়ে উপচে পড়ছে। কপালের রগ ফুলে হয়েছে নীল। ক্রুর,হিংস্র চোখের নজর ওই জঘন্য লোকটার উপর।আদিত্যর এমন ভয়াবহ অগ্নিমূর্তি রুপ দেখে বিহান,আবির দুজনেই ঘাবড়ে গেল। কারণ তারা বুঝে গেছে এই লোকটাকে কোনো কিছুর বিনিময়ে আজ বাঁচানো যাবে না আদিত্যর হাতে খু,ন হওয়া থেকে। বিহান আদিত্যর কাছে গিয়ে বলল,
“দেখ আদি,এটা হসপিটাল। এখানে কিছু করলে ধরা খাইয়া যাবি। আমরা ওরে পরে উঠাইয়া নিমু।”
আদিত্য ক্ষিপ্ত চোখে বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ডু ইউ থিংক আই কেয়ার অল দিস! আই উইল নট স্পেয়ার দিস বা,স্টা,র্ড ফর আ সেকেন্ড। হি হ্যাভ টু ডাই রাইট নাউ।”
এবার আবির এগিয়ে এসে বলল,
“কে বলছে ছেড়ে দিতে। ও শাস্তি পাবে। তবে মৃত্যু ওরজন্য সহজ শাস্তি। আর তাছাড়া ও যার সাথে অন্যায় করেছে শাস্তিও সেই দিবে। ভাবিই ওকে শাস্তি দিবে।”
“মানে? কি বলতে চাচ্ছিস তুই?”
আবির রহস্যময় হেঁসে বলল,
“এখুনি বুঝতে পারবি।”
তারপর নূরের উদ্দেশ্যে বলল,
“চলো ভাবি, আজ আমরা ডক্টর ডক্টর খেলবো।”
আবির একটা ওয়ার্ডবয়কে ডাক দিলো। তার পকেটে টাকার বান্ডিল গুঁজে দিয়ে কি করতে হবে বুঝিয়ে দিলো।
অপারেশন থিয়েটারের বেডে হাত পা বাঁধা অবস্থায় শোয়ান হয়েছে লোকটাকে। আবির, বিহান ডাক্তাদের সার্জারী এপ্রন আর মাস্ক পড়ে এগিয়ে এলো লোকটার সামনে। লোকটা ভীতু গলায় বলল,
“ডাক্তার সাহেব, আমারে এইহানে আনছেন ক্যা? আমারতো খালি দাঁতে ব্যাথা? তার জন্য অপারেশন থিয়েটারে আনছেন ক্যা?”
আবির বলে উঠল,
“দেখুন মিঃ বিটিডি, আপনার পরিক্ষা নিরীক্ষা করে ধরা পড়েছে যে আপনার দাঁতের ভাইরাস ধীরে ধীরে আপনার পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই ভাইরাস থেকে আপনার ” দিকোস্টা,ফিকোস্টা দ্য জাস্টিন বিবার দ্য লেডি গাগা,দ্য জো বাইডেন” নামক ভয়াবহ রোগ হয়েছে। এতে আপনার কিডনি, লিভার, ফুসফুস, নাড়ীভুঁড়ি সব পঁচে গেছে। তাই আপনার সবকিছুর অপারেশন করতে হবে।”
লোকটা ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
“কি কন এইগুলা? এমন রোগের নামতো জীবনেও হুনি নাই। কিন্তু আমারতো সব ঠিকই আছে।”
আবির ধমক দিয়ে বলল,
“চুপ, ডাক্তার আমি না আপনি! আমি বলেছি রোগ হয়েছে মানে হয়েছে। এখন চুপচাপ শুয়ে থাকেন। আমাদের বড়ো ম্যাডাম এসে আপনার অপারেশন করবে।”
নূরও সার্জারী এপ্রন আর মাস্ক পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে যেতে ভয় পাচ্ছে লোকটার সামনে। আদিত্য নূরকে সাহস দিয়ে বলল,
“যাও এঞ্জেল কোনো ভয় নেই। তোমার না ডাক্তার ডাক্তার খেলার ইচ্ছে। যাও ইচ্ছেমত খেল আজ। কেউ ঠেকাবে না। ওই পঁচা লোকটার সাথে যা খুশি করো। কেউ বাঁধা দিবেনা তোমাকে। আমি আছি না তোমার পাশে! কোনো ভয় নেই যাও।”
নূর সাহস পেয়ে এগিয়ে গেল অপারেশন বেডের কাছে। ডাক্তার ডাক্তার খেলার তার খুব ইচ্ছে ছিলো। আজ পূরণ হবে ইচ্ছে। নূর আসতেই আবির বলল,
“তো বলুন ডাক্তার সাহেবা, প্রথমে কোথা থেকে শুরু করব? আই থিংক সব সমস্যার উৎপত্তি এই দাঁত থেকেই হয়েছে। তাই সবার প্রথমে দাঁতের অপারেশন করতে হবে।”
নূর বলল,
“হ্যাঁ ঠিক বলেছ। প্রথমে আমরা দাঁত তুলব।”
বিহান বিশাল বড় বড় লোহার স্ক্রু-ড্রাইভার, চেলাইরেঞ্জ আর প্লাস এগিয়ে দিলো নূরের দিকে। তা দেখে লোকটা ভয়ে চোখ বড় বড় করে বলল,
“এইগুলা কি আনতাছেন! দাঁত তুলবেন নাকি গাড়ির ইস্ক্রুপ খুলবেন? আর আগে বেহুশ করবেন না?”
আবির বলল,
“আসলে আমাদের বেহুশ করার ডাক্তার ভুলে নিজেকেই ইনজেকশন দিয়ে বেহুশ করে ফেলেছে। তাই বেহুশ ছাড়াই কাজ চালাতে হবে। আরে আপনি ফ্রী ফ্রী ডাক্তারি শিখে যাচ্ছেন এতেতো আপনার খুশি হওয়া উচিত। এখন চুপচাপ আমাদের কাজ করতে দিন। বিহান,উনার মুখ হা করে ধরো।”
বিহান লোকটার মুখ খুলে ধরলো। নূর বিশাল একটা প্লাস নিয়ে লোকটাট একটা দাঁতে ধরে টেনে তুলে ফেলল। ব্যাথায় লোকটা গগনবিদারী এক আর্তনাদ করে উঠল। আবির বলল,
“ডাক্তার সাহেবা, আপনিতো ভুল দাঁত তুলেছেন। সমস্যা অন্য দাঁতে।”
নূর বলল,
“ঠিক আছে ওটাও তুলে ফেলছি।”
এই বলে নূর আরেকটা দাতও একইভাবে টেনে তুলে ফেলল। লোকটা আবারও আর্তনাদ করে উঠল। তবে নূরের ভীষণ মজা লাগছে। সে উৎসাহিত কন্ঠে বলল,
“এবার কোনটা ফেলব?”
আবির বলল,
“ভাবি নিচেরটা ফেলেন।”
বিহান বলল,
“না না ভাবি এই কোনারটা ফেলেন। এক্কেরে বিচ্ছিরি গন্ধ।”
নূর বলে উঠল,
“আচ্ছা এক কাজ করি আমরা রাম-সাম করি।শেষে যেটা আসবে সেটা তুলবো।”
“গুড আইডিয়া ভাবি। তাই করেন।”
নূর লোকটার দাঁতের উপর আঙুল দিয়ে একটা একটা করে বলতে লাগল,
“রাম,সাম,যদু,মদু…”
এমন করতে করতে শেষে যেটা এলো সেই দাঁতটা তুলে ফেলল। এভাবে এক এক করে লোকটার সব দাঁত তুলে ফেলল।”
লোকটা ব্যাথা সইতে না পেরে একসময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। আবির বলল,
“আরে, অপারেশনতো এখনো বাকিই আছে। তার আগেই বেহুঁশ হয়ে গেল?”
নূর বলল,
“থাক আজকের মতো খেলা হয়ে গেছে। আর খেলব না।”
“ঠিক আছে ভাবি আপনি যান। এর বাকি অপারেশন আমরা করবো।”
নূর এপ্রন, মাস্ক খুলে এগিয়ে এলো আদিত্যের কাছে। আদিত্য দুই হাতে নূরের মুখটা আগলে ধরে বলল,
“খুশি হয়েছতো এঞ্জেল! আর ভয় নেইতো!”
নূর খুশিমনে বলল,
“হ্যাঁ, অনেক খুশি হয়েছি। অনেক মজা লেগেছে।”
নূর দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি এত্তগুলা ভালো, হিরো।”
আদিত্য মুচকি হেঁসে নূরের কপালে চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
“আমার এঞ্জেলটা যে এত ভালো তাইতো হিরোও ভালো। আমার এঞ্জেলকে কেউ আর কষ্ট দিতে পারবেনা।”
চলবে…