মরুর বুকে বৃষ্টি ২ পর্ব-১৮+১৯

0
309

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি (S-2)
পর্ব-১৮
®মেহরুমা নূর

★বাসায় এসে গাড়ি থেকে নূরকে কোলে নিয়েই বাসার ভেতর ঢুকল আদিত্য। নূরকে খুঁজে পেয়েছে দেখে বাসার সবার মুখেই খুশি দেখা গেল। আবিরও চলে এসেছে নূরের হারানোর খবর শুনে। এখন নূরকে পেয়েছে দেখে স্বস্তি পেল সে। নূরের কিছু হয়ে গেলে যে তার বন্ধুটাও শেষ হয়ে যেত। তবে সবার মাঝে অখুশি শুধু একজন ব্যক্তি। নূরকে ফিরে আসতে দেখে ঝুমুরের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।তার প্ল্যান এভাবে ফ্লপ হয়ে যাওয়া দেখে রাগে শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে তার। এই পাগলী বরাবর ফিরে আসে কেমনে! আজ এই পাগলীর সাথেই ঝুমুর পেরে উঠছে না! আর এই আদিত্য হচ্ছে আরেক পাগল। এই পাগলীর মাঝে কি দেখেছে কে জানে! কোথাথেকে বারবার খুঁজে বের করেই ছাড়ে। এখনতো ঝুমুরের ভয় হচ্ছে। নূর যদি বলে দেয় যে এসব আমি বলেছি তাহলে কি হবে! না না, বলবে না নিশ্চয়। পাগলী নিজের প্রমিজ ঠিকই রাখবে।

আদিত্য নূরকে রুমে এনে দ্রুত তোয়ালে দিয়ে আগে মাথা মুছে দিলো।নূর কেমন বাধ্য বাচ্চাদের মতো চুপচাপ অপলক চোখে তাকিয়ে আছে আদিত্যর দিকে।কেমন একাগ্র দৃষ্টিতে দেখছে। যেন মোহময় কিছু দেখছে সে। কেন দেখছে তা বুঝতে অক্ষম নূর। শুধু দেখতে ইচ্ছে করছে তার। ভালো লাগছে তার হিরোকে দেখতে। অবুঝ নূরের মন প্রাঙ্গনে নতুন জোয়ার এসেছে। যে জোয়ারের ঢেউ তার অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়ছে। তবে সেই জোয়ারের সারমর্ম বুঝতে অক্ষম নূর। সে জানে না কি ঘটছে তার মাঝে। নূরের মাথা মোছা শেষে আদিত্য কাবার্ড থেকে নূরের কাপড়চোপড় বের করে নূরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“যাও ভেজা কাপড় পাল্টে এসো। ঠান্ডা লেগে যাবে।”
নূর এখনো ওভাবেই তাকিয়েই আছে। যেন আদিত্যর কথা তার কানেই প্রবেশ করেনি। ওভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ নূর আদিত্যকে জড়িয়ে ধরল। দুই হাতে আদিত্যর কোমড় পেঁচিয়ে ধরে আলগোছে নিজেকে সামিল করে ফেলল আদিত্যর বুকের মাঝে। এতে আদিত্য প্রথমে খানিকটা অবাকই হলো। তারপর মুচকি হেঁসে বলল,
“কি হলো এঞ্জেলটার? কাপড় পাল্টে এসো৷ ঠান্ডা লেগে যাবেতো সোনা।”
নূর আদিত্যর সাথে আরও এটে গিয়ে বাচ্চাদের মতো জেদ ধরে বলল,
“না, আমি যাবোনা। আমি এখানেই থাকবো। এখানে অনেক ভালো লাগছে আমার।”
আদিত্য মৃদু হেসে বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে, আগে কাপড় পাল্টে এসো তারপর এখানে থেকো যতখুশি।”
“না, যাবোনা আমি। আমি এখানেই থাকবো।”
“সর্দি-জ্বর লেগে যাবেতোরে বাবা।”
“লাগুক।”
আদিত্য বুঝল এভাবে কাজ হবে না। সে আবারও নূরকে কোলে তুলে নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে নিয়ে নামিয়ে দিলো। তারপর কাপড়চোপড় তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আবার দরজা বন্ধ করে দিলো। নূর ভেতর থেকে দরজা চাপড়ে আহ্লাদী কান্নার ভঙ্গিতে বলল,
“হিরোওওও….খোলো না! তোমার বুকে যাবো তো!”
আদিত্য হাসিমুখে বলল,
“আগে ভেজা কাপড় পাল্টে এসো তারপর বুকে নিবো। ফটাফট পাল্টে এসো।”
নূর অগত্যা গাল ফুলিয়ে আদিত্যের কথামতো কাজ করতে লাগল।আদিত্য নীরব হাসল।আজ হঠাৎ নূরের কি হলো বুঝতে পারছে না সে। এমনতো আগে কখনো করেনি৷ তবে যাই হচ্ছে মন্দ না। সে’তো নূরকে সবসময়ই বুকপকেটে ভরে রাখতে চায়।

আদিত্য ততক্ষণে নিজেও ভেজা কাপড় পাল্টে নিলো।তারপর নূরের জন্য গরম গরম সুপ নিয়ে এলো। বৃষ্টিতে ভিজেছে তাই গরম গরম সুপ ভালো হবে ওরজন্য।সুপটা টেবিলের উপর রেখে ডিভনে বসে নূরের বের হওয়ার অপেক্ষায় রইল। তখনই নূর বের হলো। বের হয়েই কোনদিন না দেখে সোজা গিয়ে আদিত্যর কোলের মাঝে দুম করে বসে পড়ল।আবারও আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে মাথা এলিয়ে দিলো তার বুকে।যেটা এখন নূরের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হয়ে গেছে। বুকে মিশে গিয়ে বলল,
“নাও,ভেজা কাপড় পাল্টেছি। এখন আমাকে এখানে থাকতে দাও। আর উঠাবে না একদম।আমি এখানে ঘুমাবো এখন।”
আদিত্য নূরের আজকের আচরণে বারবারই কেমন অবাক হচ্ছে। তবে সীমাহীন ভালো লাগাও কাজ করছে। সুখময় অনুভূতির প্রশান্তিতে শীতল হয়ে যাচ্ছে তার বক্ষস্থল। সেই প্রশান্তির হাসি ঝুলিয়ে আদিত্য নূরের মাথার উপর চুমু খেয়ে চুলে হাত বুলিয়ে বলল,
“আচ্ছা ঘুমিও। আগে সুপটা খেয়ে নাও। খালি পেটে ঘুমানো যাবে না এঞ্জেল।”
কিন্তু নূর সুপ দেখেই নাক সিটকে ফেলল।খাবে না সে এই পঁচা জিনিসটা। একদম ভালো লাগে না তার কাছে৷ তবুও আদিত্য অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে নূরকে খাওয়াতে রাজি করালো। সামনে বসিয়ে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগল তাকে। খাওয়ার মাঝেই আবির আর বিহান এলো ওদের রুমে। ওদের দেখে আবির শায়েরী বলার ভঙ্গিতে বলল,
“বাহ! বাহ! বাহ! তোদের দেখে এইমাত্র একটা কবিতা বলক দিয়ে উঠল আমার মাথায়।”
বিহান বলল,
“তো গ্যাস বন্ধ করে দিলেইতো পারিস।”
“ওই তুই চুপ কর ছাগলের বংশধর। আমারে কবিতা কইতে দে। হ্যাঁ তো ভাইসাব পেশ করছি আপনাদের সামনে দ্য গ্রেট, নোবেলের বউ বিজয়ী কবি, আবিরের কবিতা।
তোর পিরিতে কত কিছুই না হইলাম ছকিনা
কখনো ধোপা, কখনো সুইপার, কখনি বাবুর্চি
কখনো বা হইলাম তোর হাতের বদনা।”
নূর দুই হাতে জোরে জোরে তালি বাজিয়ে প্রফুল্লিত কন্ঠে বলল,
“অনেক ভালো হয়েছে।”
আবির গদগদ ভঙ্গিতে বলল,
“শুকরিয়া ভাবি,ব্যাস কখনো অহংকার করিনি।”
বিহান পাশ থেকে বলল,
“তুই আগে গোসল কর তারপর অহংকার করিছ। গরু মরা গন্ধ আইতাছে তোর থাইকা। বায়ু দূষণের পেছনে তুইই দায়ী হালা। তোরে অনতিবিলম্বে বুড়িগঙ্গায় ছুইড়া মারা উচিত।”
“আরে বুড়িগঙ্গায় মারবি কেন? ছুঁড়ে মারতেই হয় তো কোনো যুবতীগঙ্গায় মার। আমারও মন লেগে থাকবে।”
এদের কান্ড দেখে হাসছে নূর। আদিত্য বলল,
“হয়েছে তোদের! কোনো দরকারে এসেছিলি?”
বিহান এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
“হ আদি জরুরি কথা ছিল। আছলে…. ”
বিহানের কথা শেষ হওয়ার আগেই আদিত্য বলে উঠল,
“আমি বুঝেছি কি বলতে চাস তোরা। আমি পরে কথা বলছি তোদের সাথে। এখন যা।”
আবির যেতে যেতে মেলোড্রামা করে বলল,
“হ হ এহনতো খেদায়ই দিবি। বিয়ে করার পর বন্ধু আর বন্ধু থাকে না। বন্ধু হয়ে যায় তহন বাংলা সিনেমার বড়লোক ছেলে আর আমরা হয়ে যাই বাপ আনোয়ার।যে খাবারের নামে শুধু হার্ট অ্যাটাক খায়। চল বিহাইন্না দোকানে গিয়ে দেখি ভালো মানের কোনো হার্ট অ্যাটাক পাওয়া যায় কিনা। আমার স্ট্রবেরি ফ্লেবার পছন্দ। দেখি স্ট্রবেরি ফ্লেভারের হার্ট অ্যাটাক পাওয়া যায় কিনা।আর তোর লাইগা ভ্যানিলা ফ্লেভার নিমুনে।”
বলতে বলতে বেড়িয়ে গেল ওরা। আদিত্য মাথা নেড়ে স্মিথ হেঁসে বিড়বিড় করে বলল,
“ড্রামাবাজ।”

রাত এগারোটা পার হয়েছে তখন। আদিত্য তার বুকের মাঝে লিপ্টে থাকা নূরের তাকালো। ঘুমিয়ে গেছে তার পরিটা। অভ্যাস অনুযায়ী দুই হাতে আদিত্যর টিশার্ট চেপে ধরে ঘুমিয়ে আছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল আদিত্য। নূর পুরোপুরি ঘুমিয়ে গেছে বুঝতে পেরে আদিত্য নূরের হাত টিশার্ট থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে সরে যেতে নিলেই নূর ঘুমের মাঝেই নড়ে উঠে মুখ দিয়ে “উমমম” জাতীয় শব্দ বের করল। টিশার্ট আরও জোরে খামচে ধরে আদিত্যর সাথে একেবারে মিশে গেল। আদিত্য আর নড়ল না। নূরের ঘুম ভেঙে যাওয়ার ভয়ে দ্রুত আবারও জড়িয়ে নিলো তাকে৷ নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে নীরবে হাসল সে। আজ তার এঞ্জেলটার কি হয়েছে কে জানে! আদিত্যকে যেন এক মুহূর্তের জন্যও ছাড়তে চাচ্ছে না। ঘুমের মাঝেও শক্ত করে ধরে আছে। যেন ছেড়ে দিলে বুঝি আদিত্য হারিয়ে যাবে। নূরের গালে বৃদ্ধাঙ্গুল বুলিয়ে কপালে চুমু এঁকে দিলো আদিত্য। এই মেয়েটাকে ছাড়া আদিত্যর সব শূন্য। আজকে ওর কিছু হয়ে গেলে আদিত্য শেষ হয়ে যেত। তবে এটাই শেষ। এরপর আর ওর পাখির উপর কোনো আচ আসতে দিবেনা সে। একদম না। নূরের দিকে আসা সব বিপদ সে রুখে দিবে। আর প্রতিদানে দিবে ভয়ংকর পরিণাম। এসব ভাবতে ভাবতে চোখ মুখ কঠিন হয়ে এলো আদিত্যের। আস্তে করে নূরের কাছ থেকে আবার সাবধানে টিশার্ট ছাড়িয়ে নিলো আদিত্য। গায়ে চাদর টেনে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো সে।

স্টাডি রুমে আবির আর বিহান আগে থেকেই বসেছিল। আদিত্য ওদের কাছে এসে বসে বলল,
“এবার বল কি বলছিলি তোরা?”
বিহান বলল,
“আদি, আমি আর আবির কিছু পাইছি। সিসিটিভি ফুটেজ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কইরা আছল কালপ্রিট খুুইজা পাইছি।যে ভাবির হারিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী৷”
আবির বলল,
“হ্যাঁ আদি,এই দেখ ফুটেজ টা দেখ তুই।”
আবির তখনকার নূরের বাসা থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সময়কার ফুটেজ চালু করে দেখিয়ে বলল,
“এই দেখ, ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে ওই ঝুমুর মেয়েটা কেমন ইচ্ছে করেই পড়েছে সুইমিং পুলে। আর পুলে পানিও কম ছিলো। ডুবে যাওয়ার মতো না। তাহলে মেয়েটা বাঁচাও বাঁচাও করছে কেন শুধু শুধু! তারমানে সে ইচ্ছে করে এমন করেছে যাতে গার্ড গুলো তারদিকে চলে আসে। আর তাই হলো। ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে ঝুমুর ভাবিকে চোখের ইশারা করল। আর তখনই ভাবি গেটের দিকে গেল। আর এতেই বোঝা যায় সয়,তান মেয়েটাই ভাবিকে বের হওয়ার বুদ্ধি দিয়েছে। শুধু তাই না। গত কয়েকদিন হলো ভাবির সাথে যা যা হচ্ছে তারজন্যেও ওই দায়ী।মেয়েটার উপর সন্দেহতো আমাট প্রথম থেকেই ছিলো।তাই আমরা আগের সব ফুটেজও চেক করেছি। যদিও সে অনেক চালাকি করে সব করেছে। সিসি ক্যামেরায় তাকে যাতে দেখা না যায় সেই কৌশলে কাজ করেছে। তবে সে’তো আর জানে না যে বাসায় সাউন্ড রেকর্ড সিস্টেমও লাগানো আছে। যাতে তার সব কথা রেকর্ড হয়ে গেছে। আজ আমরা ওর আগের সব রেকর্ডিং শুনেছি। যেখানে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে তার কুবুদ্ধি গুলো। বেডি ভাবির জায়গা দখল করার জন্য এসব করেছে বুঝছস আদি!”
আদিত্য এই পর্যায়ে বলে উঠল,
“তা আমি আগেই বুঝতে পেরেছি।নূর বেড়িয়ে যাওয়ার ওই ফুটেজ দেখেই আমার সন্দেহ হয়েছিল। কিন্তু তখন নূরকে খুঁজে বের করা বেশি জরুরি ছিলো তাই ওই বিষয়ে তখন ঘাটিনি। নূরকে নিয়ে ফেরার সময় নূর ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করে বলছিল,” তুই ভুল বলছিলি ঝুমু,আমার হিরো পঁচা না৷ আমার হিরো ভালো। অনেক ভালো।” সেটা শুনে আমার সন্দেহ তখন বিশ্বাসে রুপ নেয়। আমি বুঝতে পারি এগুলো ঝুমুরের কাজ। যদিও এটা বুঝতে আমি দেরি করে ফেলেছি।আমার আরও আগেই এই ব্যাপারে তদন্ত করা উচিত ছিলো। কিন্তু কিভাবে সন্দেহ করতাম! কোনো আপন বোন হয়ে যে নিজের বোনের এমন ক্ষতি করার চিন্তা করতে পারে এমন একটা জঘন্য খেয়াল কিভাবে আসতো আমার মনে! তাইতো আমি ওভাবে কখনো ভাবিনি বিষয়টা। সবসময় ভেবেছি নূরের হয়তো কোনো শারীরিক সমস্যা হয়েছে। তাই ফুটেজ ওভাবে ঘেটে দেখিনি। নাহলে আমার নূরের ক্ষতি করার চেষ্টা করা হাতটা আমি কবেই উপড়ে ফেলতাম।”
আবির বলল,
“তো এখন কি ভাবছিস! ভাবির অপরাধীকে শাস্তি দিবিনা? চল ওই বেডিরে শায়েস্তা করি এখুনি।”
“না আবির। ঝুমুরকে শাস্তি দেওয়ার ইচ্ছে আমার চেয়ে বেশি কারোর নেই। ও আমার নূরকে আমার কাছ থেকে দূর করতে চেয়েছিল। এর জন্য ওকে ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর শাস্তি দেওয়ার তীব্র ইচ্ছে থাকা সত্বেও আমার হাত বাঁধা। আমি চাইলেও এখন ওকে শাস্তি দিতে পারবোনা। কারণ হলো নূর। আমার নূর অনেক মাছুম আবির। ও এইসব স্বার্থপর মানুষের মতো না। ও শুধু মানুষকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসতে জানে। ঝুমুরের চালাকি সে বোঝেনা। সে’তো বোনকে ভালোবাসতেই জানে। তাই ঝুমুরকে কোনো শাস্তি পেলে নূর কষ্ট পাবে। কোন কারণে শাস্তি দিচ্ছি তা বুঝবেনা৷ বোনের জন্য মায়া করে কাঁদবে। আর আমি আমার নূরকে কষ্ট দিতে পারবোনা।”
“তাহলে কি এভাবেই ছেড়ে দিবি ওই বদ বেডিরে? কিছু করবিনা ওর?”
“করবো,তবে আমি না।অন্য কেউ করবে।যারা করবে তারা কালই আসবে। ঝুমুরের যা করা দরকার তারাই করবে। এখন যা তোরাও শুয়ে পড়।”
বলেই আদিত্য উঠে চলে গেল নিজের রুমের দিকে। আবির আর বিহানও আপাতত শুতে চলে গেল।
___

সকালে ফ্রেশ হওয়ার পর আদিত্য নূরকে নিয়ে নিচে যেতে চাইলে নূর দুই সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে আহ্লাদী সুরে বলল,
“কোলে যাবো।”
আদিত্য হেঁসে দিয়ে কোলে তুলে নিলো নূরকে।এটা নূরের প্রায় রোজকার আবদার হয়ে গেছে। তবে আদিত্যরও ভালোই লাগে তার এঞ্জেলের সকল আবদার পূরণ করতে। আদিত্য নূরকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে আসতে লাগল।আর নূর এক হাতে আদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে আদিত্যর সাথে দুষ্টুমি করছে। কখনো কানে ফু দিচ্ছে, কখনো নাক টানছে আর হি হি করে হাসছে। এভাবে নিচে আসলো ওরা। তখনই হঠাৎ নূর সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল। বিস্ময় আর চমকিত কন্ঠে বলে উঠল,
“মা…..!”
আদিত্যর কোল থেকে ঝট করে নেমে দৌড়ে গেল নূর ওর মায়ের কাছে। নূরের মা-বাবা আর বড় বোন এসেছে গ্রাম থেকে। নূর তাদের দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল। ছুটে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরল নূর। আমোদিত কন্ঠে বলল,
“মা! তুমি এসেছ!”
নূরের মা নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“হ্যাঁরে মা আইছি৷ তুই কেমন আছিস? ”
নূর খুশিমনে বলল,
“আমিতো অনেএএএক ভালো আছি। এত্ত এত্তো গুলা ভালো আছি।”
নূরের মা তার মেয়ের খুশি দেখে যেন চোখ ভরে উঠল। তার পাগলী মেয়েটার কপালে আল্লাহ এত সুখ লিখছিল তা দেখে মন ভরে উঠল তার।নূরের বড় বোন ঝিলিক এগিয়ে এসে বলল,
“কিরে পাগলী কেমন আছিস?”
এই পর্যায়ে আদিত্য বলে উঠল,
“দেখুন প্লিজ সবাই নূরকে ওর নাম ধরে ডাকলে খুশি হবো। ওকে ওই নামে ডাকবেন না কেউ।”
ঝিলিকও অবাক হলো বোনের ভাগ্য দেখে। ছেলেটা কত ভালোবাসে ওকে যে ওকে পাগলী বলাতেও রাগ হয়। সত্যিই ওদের নূর অনেক ভাগ্যবতী। নূর ওর মা বোনের সাথে খুশিমনে কথা বললেও ওর বাবাকে দেখে কেমন ভীতু নজরে তাকালো সে। বাবাকে ভীষণ ভয় পায় নূর। ছোট থেকেই নূর শুধু বাবার নারাজিই পেয়েছে। তাই তাকে শুধু ভয়ই পায় সে।

ওদের দেখাসাক্ষাৎ-এর মাঝেই ঝুমুর এসে উপস্থিত হলো সেখানে। নিজের পরিবারকে হঠাৎ এখানে দেখে বড়সড় ধাক্কা খেল সে। ভয়ও পেল ভীষণ। বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার পর এই প্রথম তাদের সামনে এসেছে সে। ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“আব্বা, মা! তোমরা কখন এলে!”
ঝুমুরকে দেখা মাত্রই নূরের মা বাবার চেহারায় রাগী ভাব স্পষ্ট হলো। আদিত্য এই পরিস্থিতি থেকে নূরকে দূরে রাখতে নূরের উদ্দেশ্যে বলল,
“এঞ্জেল! তোমার আপুকে তোমার রুম দেখাবে না! যাও নিয়ে যাও। ”
নূর খুশিমনে বলল,
“হ্যাঁ, হ্যাঁ বোনু চল। তোমাকে আমার রুম দেখাই। আমার রুম না অনেক বড় আর অনেক সুন্দর। চল তোমাকে দেখাই।”

নূর যেতেই নূরের মা এসে ঠাস করে সজোরে চড় বসিয়ে দিলো ঝুমুরের গালে। ঝুমুর হতচকিত হয়ে গেল যেন। কিছু বলতে গেলে সঙ্গে সঙ্গে অন্য গালেও আরও একটা চড় বসালো ওর মা। রাগী গলায় বলল,
“বেশরম,বেহায়া মেয়ে! লজ্জা করলোনা তোর নিজের মায়ের পেটের বোনের সাথে এমন করতে!”
ঝুমুর বিস্মিত কন্ঠে বলল,
“কি বলছ মা! আমি কি করেছি! আর মারছ কেন আমাকে?”
“কি করেছিস! এখনো জিজ্ঞেস করেছিস? তোর কি মনে হয় আমরা কিছু জানি না! জামাই আমাদের সব বলে দিয়েছে তোর কুকৃতির কথা। নূরের সাথে কি কি করছিস সব জানি আমরা।”
ঝুমুর ভীষণ ভয় পেয়ে গেল এবার। তারমানে আদিত্য সব জেনে গেছে! আর মা বাবাকে ওই ডেকে পাঠিয়েছে! নূরের মা তিক্ত সুরে বলতে লাগল,
“আমারতো ভাবতেও ঘৃণা করছে যে তোর মতো মেয়ে আমি আমার পেটে ধরেছি। ভরা মজলিসে বিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে তোর মন ভরেনি! এখন আবার নিজের বোনের ক্ষতি করতে চেয়েছিলি! ছিহ! আরে আর কতো মেয়েটাকে কষ্ট দিবি তোরা! জন্মের পর থেকেতো শুধু অবহেলায়ই পেয়েছে মেয়েটা। এমনকি আমি মা হয়েও তেমন ভালোবাসা দেয়নি ওকে। পরপর মেয়ে জন্ম দেওয়ায় তোর বাবা আর দাদী আমাকে দিনরাত কথা শোনাতো। তারউপর আবার পাগল মেয়ে পয়দা করাই আরও কথা শুনতে হয় আমার। তোর বাপের রাগ সইতে হয় আমাকে। আর আমিও সেই রাগে কখনো মেয়েটাকে তেমন ভালোবাসিনি। সবসময় অবহেলা করেছি। সবার কাছ থেকে অবহেলা আর কষ্টই পেয়েছে মেয়েটা। আর আজ যখন ভাগ্যগুণে মেয়েটা সুখের দেখা পেয়েছে সেখানেও তুই চলে এসেছিস কালসাপ হয়ে! কোন লজ্জায় তুই বাড়িতে ঢুকেছিস! কোন সাহসে নূরের ক্ষতি করতে চেয়েছিস তুই! আজ তোকে আমি জন্মের শিক্ষা দিয়েই ছাড়বো। ”
বলেই ক্ষিপ্ত হয়ে ইচ্ছেমতো ঝুমুরকে চড় থাপ্পড় মারতে লাগল নূরের মা। বাকিরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখতে লাগল। আবির মাঝখান থেকে একটা ঝাড়ু নিয়ে এসে নূরের মায়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“আন্টি হাত দিয়ে মারতে কষ্ট হচ্ছে নিশ্চয়। আপনি বরং এটা ট্রাই করতে পারেন। ”
নূরের মা সত্যি সত্যিই ঝাড়ুটা হাতে নিয়ে ইচ্ছেমত মারতে লাগল ঝুমুরকে। মারতে মারতে একসময় ক্লান্ত হয়ে গেল। নূরের বাবা তখন বলল,
“আচ্ছা বাদ দাও এখন। আর শোন ঝুমুর, তোকে আমি সেদিনই মৃত মেনে নেয়েছি যেদিন তুই আমার মুখে চুলকানি লাগিয়ে ভরা মজলিসে আমাকে অপমানিত করে রেখে গেছিলি। তাই যেখানে তুই আমার মেয়েই না। সেখানে নূর তোর বোনও না। আর না তোর এবাড়িতে কেউ আছে। তাই এক্ষুণি বেড়িয়ে যা এ বাড়ি থেকে আর আমাদের জীবন থেকে। জীবনেও এই মুখ দেখাবিনা আর। বেড়িয়ে যা এক্ষুনি।”
ঝুমুর অনেক আকুতি মিনুতি করে মাফ চাইল। কিন্তু মানলনা কেউ। অগত্যা চলে যাওয়ার জন্য এগুতেই আদিত্য তখন বলে উঠল,
“শুনুন, আপনি আমার নূরের ক্ষতি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শুনে রাখুন আজ শুধুমাত্র আপনি ওর বোন দেখে নিজ পায়ে যেতে পারছেন। নাহলে আই সুয়্যার, আমার নূরের ক্ষতি করার চেষ্টাকারী এই পৃথিবীতে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য বাঁচিয়ে রাখতাম না৷ তাই জীবনের মায়া থাকলে আর কখনো আমার নূরের জীবনে আসবেন না। নাউ গেট লস্ট!”
চলে গেল ঝুমুর। নূরের মা বাবা তাদের মেয়ের কৃতকর্মের জন্য আদিত্যর কাছে মাফ চাইল।

নূর ঝিলিককে নিজের রুম দেখাচ্ছে। ঝিলিক সব দেখে অনেক খুশি হয়ে গেল। তারপর নূরকে নিজের সামনে বসিয়ে বলল,
“আচ্ছা নূর বলতো, তোদের মাঝে কি সব ঠিক চলে?”
নূর বুঝতে না পেরে কপাল কুঁচকে বলল,
“কি ঠিক চলবে?”
“মানে স্বামী স্ত্রীর ভিতর যেসব হয় তা হয়েছে তোদের?”
“কি হয়?”
“আদিত্য কি আদর করে তোকে?”
নূর হাসিমুখে বলল,
“হ্যাঁ করেতো। অনেক আদর করে। ”
“আচ্ছা! কিভাবে আদর করে?”
“আমাকে খাইয়ে দেয়, ঘুম পারিয়ে দেয়, কোলে নেয় এইসব করে।”
“আরে এই আদর সেই আদর না। আচ্ছা শোন নূর। তোকে আমি কিছু কথা বলি মনোযোগ দিয়ে শোন। স্বামী স্ত্রীর আরও কিছু হয়। এটা নাহলে আসল স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হয়না। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কিছু চাহিদা থাকে। তা পূরণ না করলে স্বামী খুশি হয়না।”
“তাই! কিন্তু আমিতো হিরোকে খুশি করতে চাই। বলোনা কিভাবে খুশি করবো?”
“আচ্ছা আমি তোকে বলে দিচ্ছি কি কি করতে হবে। তুই আমার কথামত কাজ করবি ঠিক আছে? ”
“আচ্ছা, আমি তাই করবো।”

সারাদিন পর রাতের গাড়িতে নূরের পরিবার ফিরে গেল। নূরকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল কয়েকদিনের জন্য।তা শুনে প্রথমে আদিত্য ঘাবড়ে যায়। কিন্তু নূর যখন বলে সে হিরোকে রেখে কোথাও যাবে না তখন যেন স্বস্তি পা সে। আর মন জুড়ে খুশির প্রশান্তি ছড়িয়ে যায় তখন।তার এঞ্জেলের কাছে এখন আদিত্যই সবচেয়ে আপন। এরচেয়ে বেশি খুশির আর কি হতে পারে আদিত্যর জন্য।

রাতের বেলা আবির আর বিহানের সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা শেষে রুমে আসতেই যা দেখল তাতে থমকিত হয়ে গেল আদিত্য।

চলবে……

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি (S-2)
পর্ব-১৯
®মেহরুমা নূর

★আদিত্যর মাথা ঘুরে উঠার উপক্রম তার সামনের নূরকে দেখে। নূর শাড়ি পড়েছে। আর আজকে ঠিকমতই পড়েছে। শুধু পড়েনি, একেবারে আবেদনীয় ভঙ্গিতে কোমড়, নাভী বের করে শাড়ি পড়েছে। বোঝা যাচ্ছে কেউ তাকে পড়িয়ে দিয়েছে। সাথে তার সাজটাও তেমনই আবেদনীয়।বুকের উপর আঁচলের অংশটাও সরে গেছে অনেকটাই।যার দরুন আরও বেশি আবেদন ছড়াচ্ছে। আদিত্যর হৃদপিণ্ড ব্লাস্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম। গলা শুকিয়ে আসছে আদিত্যর। তার মাছুম বাচ্চা পরিটার এমন ভয়ংকর রুপ পরিবর্তন কিভাবে হলো! আদিত্য আচম্বিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে নূরের দিকে এগিয়ে গিয়ে ঢোক গিলে থতমত কন্ঠে বলল,
“এঞ্জেল! এসব কি পড়েছ!”
নূর আদিত্যর প্রশ্নের উত্তর দিলোনা। বরং উল্টো নিজের লাল লিপস্টিকে রাঙা ঠোঁট দাঁতের নিচে কামড়ে ধরে আরও বেশি আবেদনীয় ভঙ্গিতে বলল,
“তুমি এসেছ দার্জেলিং (ডার্লিং)? ”
আদিত্য যেন ঠাস করে বারি খেল। ভ্রু কপাল কুঁচকে বলল,
“দার্জিলিং! কি বলছ এঞ্জেল? আমিতো তোমার হিরো। আরে এভাবে ঠোঁট কামড়াচ্ছ কেন? ঠোঁট কেটে যাবেতো। ছাড়ো ঠোঁট।”
নূর বলল,
“না, আপনি আমার স্বামী। আর স্বামীকে দার্জিলিং বলতে হয়। যখন স্বামীর সাথে আসল কাজ করতে হয়। তখন এমন করতে হয়।”
“হোয়াট! আসল কাজ মানে? এসব বাদ দাও নূর। যাও কাপড় পাল্টে এসো।”
নূর বোকার মতো মুখ করে বলল,
“আরে কাপড় কেন পাল্টাবো! কাপড়তো আপনি খুলেই ফেলবেন। এটাইতো আসল কাজের নিয়ম।”
আদিত্যর চোখ বেড়িয়ে আসার যো। কাশি উঠে গেল তার। কি বলে এই মেয়ে! কোনরকমে কাশি থামিয়ে বলল,
“এ….এঞ্জেল! কি বলছ এসব!”
“আরে ঠিকইতো বলছি। আসল কাজের প্রথম ধাপ হলো কাপড় খোলা। নাহলে হয়না।”
নূর দুই সামনে ছড়িয়ে দিয়ে আদিত্যর দিকে অগ্রসর হয়ে বলল,
“নিন, খুলুন কাপড়। তারপর আপনার চাচা(চাহিদা) পূরণ করুন।”
আদিত্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল,
“চাচা! কিসের চাচা? কোথাকার চাচা? কি বলছ এসব তুমি এঞ্জেল!”
“আরে চাচা, তোমার চাচা। বোনু বলেছে স্বামীর চাচা পূরণ করতে হয় নাহলে স্বামী অখুশি থাকে। তাই আজ আমি তোমার চাচা পূরণ করবো।”
বেচারা আদিত্যর উপর মনে হলো এমুহূর্তে টাস টাস করে বাজ পড়ল। এই বোনদের জ্বালা থেকে কি রেহায় পাবেনা সে! এক বোনের জ্বালা শেষ হয়নি কি আরেক বোন আবার কি বুদ্ধি দিয়ে গেছে আমার এঞ্জেল কে! এখন আদিত্য বেচারা কি করবে! নিজেকে সামলাবে নাকি নূরকে! আদিত্য কোনরকমে নূরকে বোঝানোর চেষ্টা করে বলল,
“দেখ এঞ্জেল, আমার কোন চাচা… আই মিন চাহিদা নেই। তোমার এগুলো করতে হবে না।”
“কেন চাচা নেই? বোনু বলেছে সব পুরুষের চাচা থাকে। তাহলে কি তুমি পুরুষ না?”
এবারতো বেচারা আদিত্যর গলা ফাটিয়ে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে মন চাইছে। যেন ধরনী ফেটে যাচ্ছে, আসমান কেঁপে যাচ্ছে টাইপ অবস্থা। এ কোন জ্বালায় পড়ল সে! আদিত্যর অবস্থা বেগতিক করে দিয়ে নূর বলে উঠল,
“দেখ চাচাতো আমি পূরণ করবোই। নাহলে তুমি অখুশি থাকবে। আর তোমাকে অখুশি থাকতে দেবোনা৷ তাই চাচা পূরণ করো তাড়াতাড়ি। বোনু কি যেন বলেছিল!”
নূর মাথা চুলকে মনে করল তার বোন কি বলেছিল তাকে। কিছু একটা মনে পরার মতো করে প্রফুল্ল হয়ে বলল,
“হ্যাঁ মনে পড়েছে। বোনু বলেছে চাচা পূরণ করতে প্রথমে একজন আরেকজনের ঠোঁট খেতে হয়। তো চলো ঠোঁট খাই আমরা।”
বলেই নূর নিজের ঠোঁট চোখা আদিত্যর দিকে নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে গেল। এবারতো বোধহয় ভুমিকম্পই শুরু হলো আদিত্য জন্য। সিডোর, আইলা সব ঘূর্ণিঝড় উপচে পড়ল তার উপর। আকাশ পাতাল ধ্বংস হয়ে যাবার মতো অবস্থা। আদিত্য ভয়ে পিছিয়ে গিয়ে আমতাআমতা স্বরে বলল,
“কি…কি করছ এঞ্জেল! দেখ এসব করতে হবে না তোমার। আমি এমনিতেই তোমার উপর খুশি। এই দেখ কত খুশি আমি। ”
আদিত্য দুপাটি দাঁত বের করে হাসিমুখ করে নূরকে দেখালো সে খুশি। কিন্তু নূরের উপর তা ছটাক পরিমাণও প্রভাব ফেলল না। সে জেদ ধরে বলল,
“না না তা বললে হবে না। আপনাকে চাচাতো পূরণ করতেই হবে।”
বলেই নূর আবারও আদিত্যর ঠোঁটের দিকে আবারও এগুতে লাগল। বেচারা আদিত্য পেছাতে পেছাতে অসহায় কন্ঠে বলল,
“নূ….নূর দেখ আমার কথা শোনো। এমন করে না সোনা। এসব করতে হবে না তোমাকে। কথা শোনো আমার প্লিজ। ”
আদিত্য নূরের কাছ থেকে বাইতে এদিক ওদিক সরে যেতে যেতে নূরকে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু নূর তা বুঝতে নারাজ। সে গো ধরে রইল। আদিত্যকে ধরার জন্য তার দিকে যেতে যেতে বলল,
“না না, আজতো চাচা পূরণ হবেই। নাহলে হবে না। তাড়াতাড়ি আসো। ”
বেচারা আদিত্যর ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। এমন অবস্থা হয়তো পৃথিবীতে কোনো স্বামীরই হয়নি। যেখানে বউয়ের আহবান থেকে বাঁচতে পালাতে হচ্ছে তাকে। আদিত্য শেষ পর্যন্ত না পেরে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গিয়ে ঝট করে দরজা লাগিয়ে দিলো। নূর দরজায় করাঘাত করতে করতে বলল,
“দার্জিলিং! এই দার্জিলিং বাইরে আসো না! আরে চাচা পূরণ করতে হবে তো।”
কিন্তু আদিত্য বের হলোনা৷ নূর কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
“এই দার্জিলিং বের হও না! পঁচার মতো করছে কেন?”
কিন্তু আদিত্য বের হলো না। আজতো যদি এই ধরণী ফেটে দুই ভাগ হয়ে যায়,আসমান চৌচির হয়ে যায়, সিডোর এসে সব ধ্বংস করে দিয়ে যায় তবুও আদিত্য বের হবে না এখান থেকে। দরকার হলে সারাজীবন ওয়াশরুমেই কাটিয়ে দিবে সে তবুও বের হবে না। এমনটাই পণ করল সে। তবে আদিত্যর এই পণ সেকেন্ডের সময় না নিয়েই তৎক্ষনাৎ পরিবর্তিত হতে বাধ্য হলো যখন বাইরে নূরের চিল্লানোর আওয়াজ কানে এলো। নূর জোরে জোরে আবির আর বিহানের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে বলছে,
“দেবর! দেখো না! হিরো চাচা পূরণ করছে না। তোমরা একটু বলোনা তাকে।”
আদিত্যের মাথায় এবার মহাকাশের সমস্ত গ্রহগুলো ভেঙে পড়ল। এই সেরেছে! এই মেয়েতো সবাইকে ডাকছে! আবিররা এই নূরকে এই অবস্থায় দেখলে আর নূরের কথা শুনলে মান ইজ্জত পুরাই নিলামে উঠে যাবে। আদিত্য ধড়ফড়িয়ে দ্রুত দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো। নূর সবাইকে ডাকতে ডাকতে দরজা খুলতে যাচ্ছিল তা দেখে আদিত্য ছুটে এসে দ্রুত নূরের হাত ধরে তাকে আটকিয়ে বলল,
“শুশ শুশ,কি করছ এঞ্জেল! সবাইকে কেন ডাকছ? প্লিজ চুপ করো।”
“ডাকবোনাতো কি করবো! তুমি আমার কথা মানছ না কেন? তাই সবাইকে আমি বিচার দিবো।”
বলেই আবার জোরে জোরে ডাকতে লাগল সবাইকে নূর। আদিত্য অসহায়, করুন সুরে বারবার থামতে বলছে কিন্তু থামছেই না নূর। শেষ পর্যন্ত আর না পেরে আদিত্য নূরের ওষ্ঠদ্বয় চেপে ধরল নিজের ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা। এভাবেই বন্ধ হলো নূরের কন্ঠস্বর। কিন্তু আদিত্যর এহেন কাজে নূরের মাঝে কি হলো সে বুঝতে পারল না। কেমন অদ্ভুত অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল তার সর্বাঙ্গে। অবুঝ নূর এই অনুভূতির মর্ম বুঝতে অক্ষম। তবে যাই হচ্ছে তার কেমন ভালো লাগছে। আরও বেশি করে এই ছোঁয়া পেতে মন চাইছে। নূর ঘোরের মাঝে আনমনেই আদিত্যর সাথে আরও লিপ্টে গেল। নিজের থেকেই আরেকটু মিলিয়ে নিলো অধরযুগল জোড়া। আদিত্যও যেন কেমন ঘোরের মাঝে চলে গেল। নূরের নেশা তাকে বাস্তবতার সাথে বিচ্ছিন্ন করল। সব ভুলে নূরের ওষ্ঠদ্বয়ের মাঝে বিলীন হলো সে। নূরের মনে হচ্ছে তার শরীরে কেমন শুরশুরির মতো অনুভব হচ্ছে। হাত পায়ের নখ শিনশিন করছে। অজান্তেই সে আদিত্যর সাথে আরও নিবিড় ভাবে মিলিত হলো। তাদের এই ওষ্ঠদ্বয়ের ক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটলো দরজায় নক করার শব্দে। বাইরে আবির আর বিহান দরজা চাপড়িয়ে বলছে,
“ভাবি! কি হয়েছে! ডাকছিলেন কেন?”

আবিরের কথায় আদিত্যর হুঁশ এলো। ঝট করে তড়িৎ গতিতে সে ছেড়ে নূরের ঠোঁট।মনে মনে ভাবল, এটা কি করছিলাম আমি! না না এটা ঠিক না। আমার পরীটা এখনো মাছুম,অবুঝ। তার সাথে এখন শারীরিক সম্পর্ক করা একদম ঠিক না। ভীষণ অপরাধবোধ হলো আদিত্যর। অপরদিকে আবির বাইরে থেকে ডেকেই যাচ্ছে,
“ভাবি কি হয়েছে? দরজা খোলো।আদি আছিস তুই? ”
নূর তৎক্ষনাৎ বলে উঠল,
“হ্যাঁ আছেতো। আমরা চাচা পূরণ করছি। এইতো মাত্রই ঠোঁট খে……”
বাকি কথা শেষ করার আগেই আদিত্য দ্রুত নূরের মুখ চেপে ধরল। আজতো মান ইজ্জত পুরাই নর্দমায় ডুবিয়ে দিবে মেয়েটা। আবির নূরের কথা বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“চাচা পূরণ করছি! কার চাচা? কোথাকার চাচা? কিসের চাচা?”
আদিত্য তাড়াহুড়ো করে বলল,
“আরে কিছুই হয়নি। নূর তেলাপোকা দেখে ভয় পেয়ে গেছে। আমি ওয়াশরুমে ছিলামতো তাই তোদের ডাকছিল। আর কিছু না।”
আবির প্রতিত্তোরে বলল,
“তেলাপোকা ভাবির চাচা হয়? বাহ! তাহলেতো তোর শ্রদ্ধেয় চাচা শশুর হইলো। আর আমগো তাওই। এখন থেকেতো তাহলে তেলাপোকার সাথে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করতে হবে। আত্মীয় বলে কথা।”
বলেই হো হো করে হাসতে লাগল আবির। আদিত্য ভেতর থেকে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“তোরা এখন যা এখান থেকে ইডিয়টস!”
আবির মিছে রাগ দেখিয়ে বলল,
“হ হ যাইতাছি৷ এইখানে কি রিলিফের চাউল বিতরণ হচ্ছে যে হুদাই দাঁড়িয়ে থাকব!”
আবিররা চলে গেছে বুঝতে পেরে আদিত্য নূরের মুখ ছেড়ে দিয়ে দশ মন ওজনের হাফ ছেড়ে বাঁচল। নূর আদিত্যর উদ্দেশ্যে বলল,
“আরে ওদের মিথ্যে বললে কেন? আমি কখন তেলাপোকা দেখে ভয় করেছি! আরে আমরাতো চাচা পূরণ করছিলাম তাইনা! ”
আদিত্য এবার দীর্ঘশ্বাস টেনে নিয়ে নূরের হাত ধরে বিছানায় উপর এনে বসাল। নূরের শাড়ির আঁচল ঠিক করে দিয়ে, নূরের দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় জড়িয়ে নিয়ে নরম শান্ত সুরে বলল,
“দেখ এঞ্জেল, মন দিয়ে আমার কথা শোনো। তোমাকে কে কি বলল সেটা শোনার একদম দরকার নেই। আর না আমাকে খুশি করার জন্য ুসব করতে হবে। তুমি যেমন আমি তোমাকে ওভাবে পেয়েই অনেক খুশি৷ শুধু খুশি না৷ অসামান্য খুশি। তুমি আমার চাহিদা পূরণ করতে চাও তাইতো?”
নূর মাথা উপর নিচে নাড়িয়ে বুঝাল হ্যাঁ। আদিত্য মুচকি হেঁসে বলল,
“তাহলে আমার চাহিদা হলো,তুমি চঞ্চল হাসিতে,তোমার দুরন্তপনায়, তোমার মাছুম কথায়, তোমার আনন্দে। তুমি যেমন আমি তেমনই থাকবে এটাই আমার চাহিদা। তাই কারোর কথায় আমার জন্য নিজেকে বদলাবে না তুমি।এসব আমার চাইনা। আমার জন্য কিছু করতে চাইলে শুধু নিজেকে খুশি রাখো। তাহলেই আমি খুশি। কি করবেতো আমার এই চাহিদা পূরণ?”
নূর বাচ্চাদের মতো ঘাড় কাত করে বলল,
“হ্যাঁ করবো।”
“এইতো আমার লক্ষী এঞ্জেল!”
আদিত্য নূরের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“যাও, এখন এসব চেঞ্জ করে জামা পড়ে এসো। তারপর ঘুমাবো আমরা। তোমাকে আমার বুকের মাঝে নিয়ে ঘুমানোটাও আমার চাহিদাগুলোর মাঝে অন্যতম। তাই এখন সেই চাহিদা পূরণ করো ঠিক আছে!”
“আচ্ছা।”
নূর উঠে গিয়ে কাপড় পাল্টে এলো। তারপর আদিত্যর বুকে লেপ্টে ঘুমিয়ে গেল দুজন পরম প্রশান্তিতে।
___

সকালে লিভিং রুমের সোফায় শুয়ে ছিলো আবির। ঘুম থেকে উঠেও আলসি ছাড়ছেনা তাই সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে এক পা নিচে, অন্য পা সোফার উঁচুর উপর উঠিয়ে দিয়ে এলোমেলো ভাবে শুয়ে আছে। যেন সোফার উপর চাদর মেলে দিয়ে রেখেছে কেউ। পাশেই টি টেবিলের উপর থেকে ফোনের টু টাং ম্যাসেজ টোনের শব্দে সেদিকে তাকালো আবির। ফোনটা বিহানের চিনতে পারল তা। ফোন রেখে হয়তো কোনোদিকে গেছে। আবির ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো হিয়া ম্যাসেজ দিয়েছে,
“বিহান, কি করছেন? আজ কি আসবেন দেখা করতে?”
ম্যাসেজ দেখে আবিরের ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলল। মাথায় কুবুদ্ধি লাফিয়ে উঠল তৎক্ষনাৎ। সে বিপরীতে ম্যাসেজ পাঠাল,
“কি করুম প্রেতাম্মা…. থুক্কু প্রিয়তমা! তোমার পিরিতের নদীতে হাবুডুবু খাইতাছি। এই ভরা যৌবন, এই কাঁচা অঙ্গ পড়ে পড়ে বাসি হয়ে যাচ্ছে জানেমন! আমি তোমার শিকার হতে চাই।এই জ্বালা আর যে সইতে পারছিনা।তুমি বাঘিনী হয়ে আমাকে শিকার ছিড়েখুঁড়ে খেয় ফেল। এই যৌবন জ্বালায় ছটফট করছি আমি। আসো জানেমন আমাকে ফালাফালা করে দাও। খতম করে দাও আমার কাহিনি।”
ম্যাসেজ পাঠিয়েই নিজে নিজেই হাসতে লাগল আবির। তখনই বিহান এসে আবিরের হাত থেকে ফোনটা ছোঁ মেরে নিয়ে বলল,
“ওই হালা! তুই আমার ফোনে কি করতাছচ!”
বিহান নিজের ফোনের ম্যাসেজটা দেখে চোখ চড়কগাছ হয়ে গেল তার। ক্ষিপ্ত সুরে বলল,
“আয় হায়! এইগুলা কি পাঠাইছচ হারামি! হিয়াতো আমারে মাইরাই ফালাইবো। আমার ঘর সাজানোর আগেই ভাইঙ্গা দিলি তুই! ”
বিহান দ্রুত আগে হিয়াকে ফোন দিলো ভুল ভাঙানোর জন্য। হিয়া প্রথমে ফোন রিসিভ করলোনা। কয়েকবার দেওয়ার পর রিসিভ করল সে। সাথে সাথেই বিহান বলে উঠল,
“হিয়া আমার কথা ছোনো। ওই ম্যাসেজ আমি পাঠাই নাইক্কা। আমার হারে হারামি বন্ধু পাঠাইছে।”
হিয়া ওপাশ থেকে বলল,
“থাক আর মিথ্যে বলতে হবে না। আপনারা সব পুরুষই এমন। ছিহহ!”
“আরে না না হাচাই কইতাচি আমি। তোমার বিচ্ছাছ না হইলে আমি তোমারে দেখাইতাছি খাড়াও। ”
বিহান ভিডিও কল করল হিয়াকে। তারপর আবিরের কাছে এসে বসে আবিরকে দেখিয়ে বলল,
“এইযে দেখ ওই হারামি পাঠায়ছে।”
বিহান আবিরের উদ্দেশ্যে বলল,
“কিরে কছ না ক্যা? ক তুই করছছ!’
আবির যেন এমুহূর্তে দুনিয়ার সবচেয়ে ইনোসেন্ট ব্যাক্তি। যেন মাত্রই পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হলো সে। দুনিয়া দারি কিচ্ছু বোঝে না সে। এমন একটা ভোলাভালা ফেস করে বলল,
” কি বলেছি আমি! কিছু কি বলার ছিলো আমার!”
বিহান ক্ষেপে গিয়ে এক হাতে ফোন ধরে রেখে অন্য হাতে আবিরের গলা শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরে মোচড়াতে মোচড়াতে দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“ছালা হারামি! কিছু কছ নাই তুই তাইনা! ভালোই ভালোই ক কি করছচ নাইলে তোর বংছের বাত্তি আইজকাই নিভাই দিমু কইলাম!”
আবির এই পর্যায়ে হাসতে হাসতে বলল,
“আরে কি বলছি। যা বলছি তোর ভালোর জন্যইতো বলছি। ভাবি থাকতে তোর ভরা যৌবন খালি থাকার হাত থাইকা উদ্ধার করতাছি। কোথায় আমার এতবড় উপকারের বদলে ধন্যবাদ দিতে দিতে মুখের ছালা তুইলা ফালাবি তা না মারতাছচ! মানবতা আজ কোথায়!”
“মানবতা উগান্ডায় গেছে গা। তুইও যা হেইহানে।”
এদের কান্ড দেখে হিয়া মুখ টিপে হাসল। বুঝতে পারল আবির আসলেই মজা করেছে। ওদের কথার মাঝে নূর এলো সেখানে। ভিডিও কলে হিয়াকে দেখে সে উৎসুক হয়ে জানতে চাইল মেয়েটি কে! আবির জানাল,
“ভাবি এটা তেমার হবু জা।”
নূর কনফিউজড মুখ বানিয়ে বলল,
“জা! সেটা আবার কি?”
“আরে জা মানে দেবরের বউ৷ উনি হলো তোমার বিহান দেবরের হবু বউ।”
“ওওও তাই! তাহলে আমিও কথা বলবো জা-এর সাথে।”
বিহান ফোন নূরের কাছে দিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলো হিয়ার সাথে। নূর অনেক হাসি মুখে হিয়ার সাথে কথা বলল। হিয়ারও অনেক পছন্দ হলো নূরকে। বিহানের কাছে সে শুনেছিল নূরের ব্যাপারে। তার সত্যিই অবিশ্বাস্য লাগে পৃথিবীতে এখনো এমন ভালোবাসা আছে। মানুষিক ভারসাম্যহীন নূরকে কতটা ভালোবাসে আদিত্য! এমন ভালোবাসা দেখে যেন হিয়ারও ভালোবাসতে মন চায়। হ্যাঁ, সে ভালোবাসতে চায় বিহানকে। তার সাথে আগামীর পথ একসাথে চলতে চায় সে।

হিয়ার সাথে কথা বলা শেষে বিহান আবিরকে শুনিয়ে শুনিয়ে নূরকে বলল,
“ভাবি আপনার আরও জা চাই?”
নূর উৎসাহিত কন্ঠে বলল,
“হ্যাঁ, চাইতো।”
“আরেকটা জা কিন্তু আছে। আবিরের কাছে লুকাইন্না আছে। আপনি কন আপনার জা’কে আইনা দিতে।”
আবির কপাল কুঁচকে বলল,
“ওই বিহাইন্না কি কস! উল্টা পাল্টা বুঝাস কেন ভাবিরে! ভাবি ওর কথায় কান দিওনা। এমনিই বলে।”
“আরে না ভাবি হাঁচাই আছে। আবির চাইলে অহনি আপনারে দেহাইতে পারবো আপনার আরেক জা’কে। মাগার দেহাইবো না। আছলে ও আমার মতো ভালো দেবর নাতো ও। তাই দেহাইবো না।”
নূর তখন অভিমানে মুখ মলিন করে বলল,
“তুমি ভালো দেবর না। আমাকে জা দেখাও না। যাও কাট্টি তোমার সাথে। নূর কথা বলবে না আর দেবরের সাথে।”
আবির পড়ে গেল মুশকিলে। বিহান বাঁকা হাসল। এবার মজা হবে। আবির অগত্যা নূরের মন খারাপ দেখে বলল,
“আচ্ছা আচ্ছা ভাবি রাগ করোনা। আমি দেখাচ্ছি।”
আবির আহানাকে ভিডিও কল করল। একটু পর রিসিভ হলো ফোন। মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে হয়তো আহানা। চুলগুলো এলোমেলো, চোখ ফোলা ফোলা, মুখটায় ঘুমো ঘুমো টান টান ভাব।আবিরের নজর থমকিত হলো ক্ষণেই। আহানা হামি ছাড়তে ছাড়তে বলল,
“কি হয়েছে? সকাল সকাল ভিডিও কল কেন করেছেন? ”
আবিরের ঘোর কাটল। তৎক্ষনাৎ নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে নিজস্ব ভঙ্গিতে বলল,
“কেন? তুই কি রাণী ভিক্টোরিয়ার কাজের বুয়া যে তোরে সকাল সকাল ভিডিও কল করা যাবে না! ভাবটাতো এমন করছিস যেন রাতভর জাতিসংঘের স্পিকারের কার্জ সামলে বসে আছিস! এমন তালগাছ সমান মান্যগণ্য,সনাম ধন্য ব্যক্তিকে সকাল সকাল ভিডিও কল করার দায়ে আমার পাঁচ হাজার বছরেরে জেল হওয়া উচিত। আর জেলে আমারে রোজ অনন্ত জলিলের ছবি দেখাইয়া টর্চার করা উচিত টাইপ অবস্থা। অহংকার যেন তোর হিমোগ্লোবিনে মিশে গেছে। মাই গড! একেতো এমন পেত্নীর খালাম্মা পিশাচিনীর মতো লুক নিয়া সামনে আইছস। মাছুম পোলাপানের পরানডা ফাইটা দুই ভাগ হয়ে যাইনি এটাই কপাল। খবরদার! এমন পেত্নীর রুপ নিয়া কোনোদিন সমানে আইছস তো!”
আবিরের এত এত মহান উক্তি গুলোর বিপরীতে আহানাকে একেবারেই ভাবলেশহীন দেখা গেল। যেন তার এসব কিছুর পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। তাই আর কোনো প্রতিক্রিয়া হয়না। সে ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
“আমারতো অহংকার আছে। আপনিতো মহানতার দেবতা। তো কৃপা করে বলবেন কেন ফোন দিয়েছেন? ”
“হ্যাঁ হ্যাঁ বলছি।কারণ ছাড়া তোর মতো পেত্নীরে ফোন দিতে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আচ্ছা শোন আমার কিউট নূর ভাবি তোর সাথে কথা বলবে। নে কথা বল।”
আবির ফোনটা নূরের কাছে দিলো। নূর হাসিমুখে তার সাথেও কথা বলতে লাগল। আহানাও নূরের ব্যাপারে জানে। নূরকে দেখার তার এমনিতেও খুব ইচ্ছে ছিলো। যাক ওই ফালতু লোকটা ওর কোনো উপকারতো করল। নূর আর আদিত্যর ভালোবাসা দেখে সেও মুগ্ধ হয়। মনে ইচ্ছে জাগে এমন কিছু তারও পাওয়ার। কিন্তু তার মনের মানুষটাতো এমন না। সে’যে নিঠুর অপ্রেমিক। জানে না তাদের কখনো কোনো গল্প হবে কিনা। ফেরারি মন কখনো কুলায় ফিরবে কিনা।

চলবে……