#মহারানী
#পর্বঃ৫(শেষ পর্ব)
#Jhorna_Islam
“তুমি আমাকে ধোঁকা দিচ্ছো বিশাল খান?”
এই ছিলো তোমার মনে? এই দিনও দেখতে হলো আমাকে। আমি কেন বেঁচে আছি? কিসের জন্য বেঁচে আছি আমি?
আমি আজই চলে যাবো।
“কোথায়?”
জেরিন নাক টানতে টানতে বলে,, কোথায় আবার বিদ্দেশেএএএ। এখানে থাকলেতো আবার সেই ধরে বেঁধে নিয়ে আসবে। কথাটা বলেই মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে ।
জেরিনের টেনে টেনে বলা বিদ্দেশেএএএ বিশাল খানকে চুপ থাকতে দিলো না হুহা করে অট্টহাসিতে মুখরিত করে তুলে চারপাশ। সেই হাসির শব্দ এসে কানে এসে প্রতিধ্বনি হচ্ছে বারবার। জেরিন হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
বিশাল হাসতে হাসতে ক্লান্ত হয়ে গেছে,। কতোদিন পরে এমন মন খুলে হেঁসেছে তার জানা নেই।
জেরিনও তার বিশালের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বিশালের এরকম হাসির খুব বড় ফ্যান জেরিন।কিন্তু সচরাচর এই হাসি দেখা যায় না। খুব কম হাসে বিশাল এরকম করে।
বিশাল অনেক কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে ব্রু কুচকে তাকায়৷
জেরিন কিছু বলতে নিবে তার আগেই কারো কন্ঠস্বর শুনে চুপ হয়ে যায়।
“ঐ হাসি থামালে কেন বিশাল ডার্লিং?”
বিশাল তাকিয়ে দেখে পাশের বিল্ডিংয়ের টয়া হাসি মুখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
“আবার হাসো প্লিজ। ”
বিশাল মাথা নাড়িয়ে না বুঝায়।
“প্লিজ হাসো।”(টয়া)
টয়ার দিকে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে কিছুটা রাগী গলায় জেরিন বলে,,বিশাল তুমি একদম হাসবে না। আর এই টয় নগরী তোমার কথায় ও কেন হাসবে? কেন হাসবে বলো?
আমাকে একদম টয় নগরী বলবে না আমার নাম টয়া। তুমি উচ্চারণ না করতে পারলে আমার বিশ ডার্লিংকে বলো সে উচ্চারণ করে দিবে ঠিক মতো।
জেরিনের দিকে তাকিয়ে টয়া মুখ ভেংচি দেয় তারপর আবারও বিশালের দিকে তাকিয়ে বলে,, নিশ ডার্লিং হাসো প্লিজ।
ওরে বজ্জাত মাইয়া। ছিঃ বিশ ডার্লিং তোমার বউয়ের মুখের ভাষা কি জঘন্য। আমাকে বিয়ে করো আমার মুখের ভাষা অনেক ভালো। আমি তোমার বউয়ের থেকে ও বেশি সুন্দর।
জেরিন মনে মনে বলে,,দাঁড়া বজ্জাতনি তোর সুন্দরতা বের করছি আমি।
এদের মধ্যে বিশাল নীরব দর্শক তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু দুইজনের ঝগড়া দেখছে।
“কি হলো বিশ ডার্লিং হাসো।”
হ্যা বিশ ডার্লিং হাসো। আন্টি ওওও আন্টি কোথায় আপনি? আন্টি ছাদে এসে দেখে যান আপনিও আপনার মেয়ের বিশ ডার্লিংয়ের হাসি। আন্টি শুনতে পাচ্ছেন?
জেরিনের এমন চিৎকার করে টয়ার মাকে ডাকতে থাকায় টয়া কিছুটা ঘাবড়ে যায়। তোতলাতে তোতলাতে বলে,, আ,আমি কোথায়? ওহ আমি ছাদে এসেছি? ভু ভুলে গেছি মা আমাকে পড়তে বলেছিলো আমি গেলাম হ্যা। কথাগুলো বলেই আর এক মুহূর্ত ও দেরি করে না দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়।
*******
বিশালের ফোনে একটা কল আসে। বিশাল অপরিচিত নাম্বার দেখে ব্রু কোঁচকায় কি মনে করে কলটা রিসিভ করে। কল রিসিভ করতেই অপর পাশের ব্যক্তির কন্ঠ শুনে পুরো শরীরে রাগ তরতড়িয়ে বাড়তে থাকে। আমি আসছি বলে কল কেটে দেয়। ফোন লাগায় বিশালের কাকা ইশমাম কে। ইশমাম কল রিসিভ করতেই,,,
“ইশ কাকু মাছ টোপ গিলে নিয়েছে। ”
“এতো দ্রুত?”..
” অবশ্যই তুমি জানো না তোমার ভাতিজা আবার লেট কিছু পছন্দ করে না। ”
“পরবর্তী প্লেন কি?”
“তার আগে বলো তুমি কি আমার সাথে জয়েন করবে নাকি আমি একাই হ্যান্ডেল করবো?”
“আমিও যাবো।”
“ওকে দেন আমি ফোনে লোকেশন ট্যাক্সট করে দিচ্ছি তোমাকে এসে পরো।”
“ওকে সেন্ড কর। ”
কি করতে যাচ্ছো তোমরা বিশাল?
বিশাল এহেন প্রশ্নে ফোন রেখে ব্রু কুঁচকে পিছনের দিকে তাকায় ।
জেরিন ও ব্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
তোমার আর কোনো কাজ নেই? তোমাকে না কতোবার বলেছি আমি নিজ থেকে তোমাকে কিছু না জানালে বা না বললে কখনো সেই বিষয় নিয়ে জানতে চাইবে না বা আমাকে সেই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করবে না। বিশাল একটু রাগী গলায় বলে কথাগুলো।
আমিতো জাস্ট,,,,
কি আমিতো জাস্ট নিচে গিয়ে সকলের সাথে গল্প করো আমার ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে গেলাম। আর হ্যা রাতে আসতে লেট হতে পারে খেয়ে ঘুমিয়ে পরবে।আমার জন্য অপেক্ষা করার বা টেনশন করার কোনো দরকার নেই।
বিশালের কথাগুলো জেরিন চুপচাপ শুনেছে। বিশাল তৈরি হয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় জেরিনের দিকে এগিয়ে আসে। জেরিন কিছু বুঝে উঠার আগেই জেরিনের কপালে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে বের হয়ে যায়।
জেরিন বিশালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয় কেন জানি খুব ভয় করছে। বিশাল কিছু একটা ঘটাবে আজ সে নিশ্চিত। জেরিন মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকে সব যেনো ঠিকঠাক থাকে।
*****
বাইরে প্রচন্ড ঝড় হচ্ছে। থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আর বা’জ পরছে। প্রকৃতির সাথে জেরিনের মনেও ভয়ের ঝড় উঠেছে। অজানা ভয়ে গলাটা বারবার শুকিয়ে যাচ্ছে। বিশাল এখনও বাড়ি ফেরেনি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় দেড়টা। কি করবে বুঝতে পারছে না জেরিন এই ঝড় বাদলের দিন মোবাইলের নেটওয়ার্ক ও পাওয়া যাচ্ছে না। বিশাল বলে গেছে টেনশন না করতে এজন্য আরো বেশি টেনশন হচ্ছে। লোকটা ঠিক আছে তো? কোনো বিপদ হয়নিতো আবার এসব ভাবনায় জেরিনের হাত পা কেমন ঠান্ডা হয়ে আসছে।
জেরিন গুটিশুটি মেরে মেঝেতে বসে খাটে মাথাটা এলিয়ে দেয়। শরীরটা কেমন টেনশনে অবশ হয়ে আসছে। বিশালের কথা চিন্তা করতে করতে এক সময় জেরিন ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়।
জেরিনের ঘুম ভাঙে কারো শীতল স্পর্শে। কেউ একজন বরফ ঠান্ডা শরীরটা নিয়ে ক্রমশ জেরিনকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরছে। জেরিন জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে চোখ খুলে আলো আধারিতে দেখতে পায় আর কেউ নয় তার বর মহাশয়। বিশাল এসেছে ভেবেই জেরিন স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। বিশাল জেরিনের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। বিশালের শরীরটা কেমন গরম হয়ে আসছে বৃষ্টিতে ভিজার ফলে হয়তো জ্বর আসছে।
বিশাল জ্বরের ঘোরে কেমন আবোলতাবোল বকছে।
“তুমি চিন্তা করোনা মহারানী, তোমার বিশাল আছে তোমার সাথে। তোমার দিকে যে চোখ তুলে তাকাবে বা’জে কথা বলবে তোমাকে নিয়ে তাকে আমি আস্তো রাখবো না। আজ দেখিয়ে দিয়ে এসেছি বিশালের মহারানীর দিকে নজর দিলে কি অবস্থা হয়। চোখগুলোই তুলে নিতাম ইশশ কাকুর জন্য পারলাম না।
জেরিন অবাক হয়ে যায়। বিশালকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে মি. এলেক্সকে বে’ধম পিটিয়েছে বিশাল। অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে ইশমাম হসপিটালে এডমিট করিয়ে দিয়ে এসেছে।
বিশাল এখন ঘুমিয়ে আছে কি শান্তির ঘুম। কে বলবে এই লোক রেগে গেলে এতো ভয়ানক হতে পারে? এখন কেমন শান্ত বাচ্চা।
বিশাল একটু পর পর একটা কথাই বলছে, তুমি শুধু আমার মহারানী। তোমার দিকে শুধু আমি তাকাবো আর কেউ নয়। আমার মন পিন্জিরার মহারানী তুমি।
#সমাপ্ত।