মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব-৩২+৩৩

0
13

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৩২
#ইশরাত_জাহান
🦋
“জানেমান জেদ করে না।এই আরহান খান বীর যেটা চায় সেটা নিয়েই ছাড়ে।তোমাকে আমি আমার করেই ছাড়বো।একবার বিয়ে করে নেও আমাকে দেখবে পৃথিবীর সব সুখ তোমার করে দিবো।প্লিজ জানেমান আমার হয়ে যাও তুমি।”

মায়া পিছিয়ে যেতে যেতে বলে,”আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না।আমার বিয়ে হয়ে গেছে।প্লিজ আমার কাছে আসবেন না।”

“তোমার ঐ বরকে আমি তোমার জীবন থেকে সরিয়ে দিবো। আর সে তো তোমার অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত না।তুমি আমার হাত ধরে জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করো জানেমান।দেখো তুমি তোমার অতীত ভুলে যাবে।খুব খুব খুব ভালোবাসবো তোমাকে।”

“আপনি বুঝতে পারছেন না।আমার অনেক সপ্ন ওই বাড়ির বউ হওয়া।আমি আমার স্বামীকে পাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি।কেনো আমাকে বিরক্ত করছেন?আমি ভালোবাসি না আপনাকে।আমি আমার ছোটবেলার পুতুল বর(রাজ)কে ভালোবাসি।”

হিংস্র রূপ ধারণ করে বীর।মায়ার দিকে ভয়ংকর চাহনি দিয়ে বলে,”তোমার ঐ বরকে আমি খুন করে দিবো।সে কখনই তোমার হতে পারবে না।তোমার জীবনে শুধু একজনের অস্তিত্ব বিরাজ করবে সে আর কেউ না এই বীর।”

বলেই এগোতে আসে মায়ার দিকে।মায়া ভয়তে ভয়তে পিছিয়ে যায়।কারণ তার কাছে কোনো অস্ত্র নেই।কিভাবে এখান থেকে পালাবে বুঝতে পারে না।ভয়তে কাপতে থাকে মায়া।মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।মুখে ফুটে ওঠে একটি কথা,”আমার পুতুল বরের কিছু হতে দিবো না।আমি ওকে বাঁচাবো।আমার করেই ছাড়বো আমার পুতুল বরকে।”

হঠাৎ মায়া অনুভব করে তার মুখের উপর কারো হাতের বিচরণ।ভয়তে ভয়তে চোখ মেলে তাকায় মায়া।চোখ মেলে দেখতে পায় রাজকে।রাজ তার গালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।চোখ খুলতেই মায়ার চোখে পানি জমতে শুরু করে।রাজের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মায়া।রাজ তার উপরে ভর করে শুয়ে আছে।মায়া বুঝতে পারলো এতক্ষণ সে সপ্ন দেখেছে।শুধু সপ্ন না অতীতের কিছু অংশ আজ নতুন করে দুঃস্বপ্ন।যেটা তার জীবনের সংক্ষিপ্ত এক অধ্যায় ছিলো।সাথে সাথে মায়া রাজের বক্ষে মুখ গুজে নেয়।হালকা উচু হয়ে মুখ গোজাতে ঝুঁকে থাকা রাজ টাল সামলাতে পারেনি।এক হাত বালিশের পাশে রেখে আরেক হাত মায়ার মাথায় রেখে দিলো।মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,”দুঃস্বপ্ন দেখছিলে মায়াবতী?”

“খুব খারাপ সপ্ন।সেই সপ্ন আমি আমার জীবনে রাখতে চাই না।”

“কি এমন সপ্ন দেখছিলে যে ঘুমের ঘোরে কান্না করে দিয়েছো?এমন কি আছে তোমার জীবনে?”

রাজের কথায় থমকে যায় মায়া। বীর যে রাজের মামাতো ভাই এটা মায়া জানতো না। আর বীর তার জীবনে ভয়ংকর এক অধ্যায়। বীর তাকে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।এগুলো রাজকে কিভাবে বলবে?তাহলে যে রাজ তার আসল পরিচয় জেনে যাবে।রাজ জানতে পারবে তার বাড়িতে আসার সর্ব প্রথম উদ্দেশ্য এই পরিবারকে শেষ করে দেওয়া।মায়া কথা পাল্টাতে বলে,”আচ্ছা মন্ত্রী মশাই!আমাদের ভিতর কোনো তৃতীয় ব্যাক্তি আসবে না তো?”

“কখনই না।আমি আমাদের মাঝে তৃতীয় ব্যাক্তির স্থান রাখবো না।যে আসবে এই সম্পর্ককে ভাঙতে তার অস্তিত্ব এই দুনিয়া থেকে আমি নিঃশেষ করে দিবো।”

“যদি কেউ আমাকে তোমার থেকে কেড়ে নিতে আসে?”

“যে এই শাহমীর রাজের কলিজার গায়ে হাত লাগাতে আসবে তার হাত আমি টুকরো টুকরো করে দিবো রাস্তার কুকুর দিয়ে খাওয়াবো।তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নেওয়া তো দূরের কথা।”
বলেই আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মায়াকে।মায়া শান্তি পায় এখন।কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে রাজের বক্ষে মাথা রেখেই বলে,”এই বক্ষে আমি করতে চাই আমার রাত্রি যাপন।তুমি বিরক্ত হবেন না তো?”

“নিজেকে এতটা ফিট রেখে লাভ কি যদি বউকে বক্ষে রেখে না রাখতে পারি।তোমার স্থান আমার এই বক্ষে সবসময়ের জন্য রেজিস্ট্রি করে রেখেছি মায়াবতী।এই বক্ষ আর কেউ স্পর্শ পারবে না।”

শান্তির আভাস মিলল মায়ার মনে।মন্ত্রী মশাই যে তার প্রেমে ব্যাকুল এটা মায়া শিওর।কিন্তু বীর যদি অঘটন ঘটিয়ে দেয়।বিশেষ করে মায়ার আসল পরিচয় বলে দেয়। আর তাদের কিছু ছবিও তো আছে।ওগুলো রাজকে দেখিয়ে দিলে রাজ কি মেনে নিবে তাকে?আপাতত কিছু ভাবতে চায় না মায়া। রাজের বক্ষে মাথা রেখে আস্তে আস্তে চোখ বুজে নেয়।শান্তির ঘুম এসেছে এবার তার চোখে।রাজ মায়াকে এভাবে নিজের বক্ষে রেখেই ঘুমিয়ে যায়।

সকালবেলা,
সবাই খাবার খেতে হাজির হয় ডাইনিং টেবিলে।মোহন সরদার এখনও শান্তিতে খাচ্ছেন।সারারাত পার্টিতে ব্যস্ত ছিলো।তার ব্যস্ততা তো ওই সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে।যেটা মায়া দেখেছিলো।কিন্তু কিছু বলেনি।লোকটার দোষ তো আছেই সাথে দোষ ওই নষ্ট মেয়েগুলোর।তারাও তো এই বয়সে নিজেদের রক্ষা না করে লেলিয়ে দেয় টাকা আলার পিছনে।ঘৃণা করে মায়া ওসব মেয়েদের।সারারাত ফুর্তি করার কারণে যে এখন তার জীবন ধ্বংস হতে চলেছে এটা সে বুঝতেও পারছে না।এই যে তার কোম্পানিতে আগুন লেগেছে।এদিকে বেচারা আরাম করে খাচ্ছে। ফোনটাও সারারাত দূরে রেখেছিলো।মায়া তাকিয়ে আছে মোহন সরদারের মুখের দিকে।মায়ার মুখেও শয়তানি হাসি।একটু পর মোহন সরদারের ফুর্তিগুলো উড়ে যাবে।

সবার মনোযোগ দিয়ে খাওয়ায় ব্যাস্ত।খাওয়ার সময় কম কথা বলে সবাই।হঠাৎ খাওয়ার মাঝে সেখানে চলে আসে বীর। বীরকে দেখা মাত্রই মায়া খাওয়া থামিয়ে দেয়।ভীতু চোখে আছে সে।কিছু বলে না দেয় এখন।এই বীরের ব্যাবস্থা তাকে নিতে হবে। বীর এসে মাহমুদ সরদারকে জড়িয়ে ধরে বলে,”কেমন আছেন ফুফা?”

“আল্লাহ রহমতে ভালো।তুমি কেমন আছো?”

“আমিও এখন ভালো আছি।”

“কেনো এতদিন ভালো ছিলে না?”
প্রশ্ন করে রুদ্র।

জবাবে বীর বলে,”না ভাই।আসলে ভালো থাকার মেডিসিন ছিলো না।এখন মেডিসিন পেয়ে গেছি।তবে আমার মেডিসিন গ্রহণ করার সময় এসে গেছে।খুব তাড়াতাড়ি আমি আমার মেডিসিন সেবন করবো।”

“সাবধানে মেডিসিন নিও ভাই।আজকাল ফার্মেসির খুব ডিমান্ড।তারা কিন্তু ভুলভাল মেডিসিন সাপ্লাই করে।এই মনে করো তোমার সুখের মেডিসিন বাদ দিয়ে দিলো বিষ।তখন কিন্তু অন্য কিছু ঘটতে পারে।”

“ডোন্ট ওরি রুদ্র।আমি এক ভুল বারবার করিনা।তবে এবার যদি আমাকে বিষ গ্রহণ করতে হয় তাহলে চিরতরে বিদায় দিবে বীর নামের এই মাফিয়া।”

মালিনী বীরের কাছে এসে বলেন,”এগুলো কি কথা বীর?তুমি কেনো যাবে?তোমাকে অনেক কষ্টে ফিরিয়ে পেয়েছি আমরা।ভাই ভাবী তোমার জন্য কত কষ্ট করেছে।তুমি তোমার জীবনে সুখ ফিরে পাবে।”

“সুখ কুড়াতে এই বীর হাজাবার পান করবে বিষ।কিন্তু বীর তার সুখের মানুষটিকে নিজের করেই ছাড়বে।”

সম্পূর্ণ কথাগুলো বীর মায়ার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে।মায়া না খেয়ে তাকিয়ে আছে বীরের দিকে।এতক্ষণে এটুকু শিওর হয়ে গেলো যে বীর কেউকে কিছু বলবে না।একটু স্বস্তি পেলো সে।বীর কথাগুলো বলেই একটি চেয়ার টেনে বসে পড়লো।বীরের পাশে এসে বসে পড়লো জারা। বীরের দিকে তাকিয়ে জারা বলে,”হাই হ্যান্ডসাম।আমি জারা।রুদ্র ও মিলির কাজিন।”

বীর তার প্লেটে খাবার নিতে নিতে বলে,”হাই সিস্টার।আমি বীর রাজের কাজিন।”

সিস্টার!এই সিস্টার দিয়েই তাকে ডাকতে হলো?সিস্টার বলাতে জারার মুখ শুকিয়ে গেলো।এর থেকে তো ভালো রাজ।তাকে ভালো না বাসলেও বেইবী বলে ডাকে।বীরের দিকে তাকিয়ে জারা বলে,”আমি কারো সিস্টার নই।আমাকে জারা বলে ডাকবে।”

সোনালী সূক্ষ দৃষ্টি দিয়ে দেখছে জারাকে।এই মেয়ে আবার রাজ থুয়ে বীরের দিকে যাচ্ছে যেনো?বীর হ্যান্ডসাম বলে এখন তার দিকেও নজর দিতে হবে।তাহলে তো তার উদ্দেশ্য সফল হবে না।

সদর দরজা দিয়ে দৌড়ে এসেছে মোহন সরদারের এসিস্ট্যান্ট।হাঁফাতে হাঁফাতে বলে,”অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে স্যার।আমাদের কোম্পানিতে আগুন লেগেছে।”

সবার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সবাই।মুখে হাসি ফুটে আছে মায়ার।মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে বীর।সে তো শিওর কে করেছে এই কাজ।রাজ নিজেও আন্দাজ করতে পারছে।কারণ কালকে মায়ার ফোনে আসা ম্যাসেজ রাজ নিজেও দেখেছিলো।মোহন সরদার উঠে দাঁড়ান টেবিল থেকে।চিল্লিয়ে বলেন,”কিভাবে লেগেছে আগুন?”

“জানি না।কিন্তু আজকে সকালে দেখি কোম্পানির আশেপাশে মানুষজন জড়িত। ভীড় ঠেলে দেখি সবকিছু পোড়া।প্লাস্টিক ও বিভিন্ন জিনিস পুড়ে গোলে গেছে। ইট গুলো সব মাটিতে ছড়াছড়ি।সারারাত পুড়তে থাকে।”

“সারারাত তোমরা কোথায় ছিলে?খোঁজ নেওনি কেনো?”

খাবার শেষ করে টিস্যু দিয়ে ঠোঁট মুছে রাজ বলে,”সারারাত খাটাখাটনি করে কি রাতে বউ থুয়ে তোমার কোম্পানি জড়িয়ে ঘুমাবে!যে ওদেরকে এখন এডভাইস দিচ্ছ।তোমাকেও বলি কাকাই একটু বউ আর ব্যাবসায় মন দিতে।কিন্তু তোমার মন তো থাকে হট মেয়েদের দিকে।পারলে নিজের বউকে হট বানিয়ে এসিস্ট্যান্ট করে রাখো।দেখবে এমনটা আর ফেস করতে হবে না।”

মাথা গরম আছে মোহন সরদারের।চিল্লিয়ে বলে ওঠে,”শাট আপ।মন্ত্রীর পরিবারের একজনের কোম্পানিতে কিভাবে আগুন লাগে।কেমন পাওয়ার নিয়ে চলো তুমি যে তোমার পরিবারের লোকের ক্ষতি হয়ে যায়?”

“ভুল বললে।আমার কিন্তু কোনো ক্ষতি আজ অব্দি হয়নি।আমি মন্ত্রী হইলেও বিরোধী দল আমার ক্ষতি করতে আসেনি।কিন্তু তোমার কোনো দল না থেকেও ক্ষতি হয়ে যায়।কেনো জানো তো?এগুলো হলো কর্মফল।জীবনে যতটুকু অর্জন করবে ততটুকু ভোগ করবে।”

“এত বড় বড় জ্ঞান না দিয়ে কিছু করে দেখাও।কোম্পানির লস হয়ে গেলো।কোম্পানি পুরো ডুবে গেছে আমার। আর এই যে তুমি।বসে বসে বাবার টাকা খাও।বাবার বিপদে কিছু তো কর।”

শেষের কথাটি রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে মোহন সরদার।রুদ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”আমি তোমার ব্যাবসার এদিক ওদিক কোনদিকে নেই।তোমার টাকা খাই কারণ তোমার বংশের বাতি হয়ে এসেছি।নাহলে অন্যের টাকা খেতাম।”

“অপদার্থ অকর্মা ছেলে কোথাকার।”

“দুই নাম্বার বউ আসার পর থেকে তোমার ব্যাবসায়ও দুই নাম্বার কাজ কারবার ধরা দেয়।আসলে কি বলোতো!তুমি যেমন ফল গ্রহণ করবে তার বীজ থেকে তেমনটাই গাছ বের হবে।”
কথাগুলো বলে রাজ।

কথাগুলো কাটার মত করে গেঁথে গেলো মোহন সরদারের মনে।আজ তার বিপদে তার ছেলেটাও কোনো কাজের না।অথচ এই ছেলেকে ঘরে রেখে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে চেয়েছিলেন তিনি।প্রথম স্ত্রী সহ সন্তানকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।এতগুলো বছর মনে না পড়লেও আজ হঠাৎ শাহানা পারভীন ও মোহনা(মায়ার) মুখ ফুটে উঠলো তার সামনে।মনে পড়ে গেলো তার ছোট মোহনা তাকে কত ভালোবাসতো।তিনি যখন অফিস থেকে এসে ডিপ্রেশন থাকতেন মোহনা(মায়া) তার কাছে এসে ছোট ছোট হাত দিয়ে মাথায় বিলি কেটে দিতো।বাবাকে শান্ততা দেওয়ার জন্য বলতো,”চিন্তা করবেনা বাবা।আমি বড় হয়ে তোমার কাজে সাহায্য করবো।তোমর প্রিন্সেস তোমর সব কাজের দায়িত্ব নিবে।আমরা বাবা মেয়ে মিলে অনেক বড় কোম্পানি খুলবো।”

কথাগুলো যদিও শাহানা পারভীনের শেখানো ছিলো।কারণ শাহানা পারভীন চেয়েছিলেন মায়া বড় হলে কোম্পানির দায়িত্ত্ব মায়া নিবে।কিন্তু মোহন সরদারের মনে হতো মেয়েরা এগুলো পারবে না।এগুলো একমাত্র ছেলেরাই পারবে।কারণ তখন তার রুদ্রের জন্ম হয়।আজ হঠাৎ তার হারিয়ে যাওয়া মেয়ে মোহনার কথাগুলো মনে পড়লো।ভাবনার মাঝেই মুখ ফুটে বের হলো,”মোহ মা।”

তার কিছুটা কাছেই বসে ছিলো মায়া।জীবনের কতগুলো বছর পার হয়ে গেলো এই ডাক শুনেনি।আজ এই ডাক শুনলো।কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে তার।কিন্তু চোখের সামনে মায়ের চেহারা ভেসে ওঠে।মাকে যে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে।বর ছাড়া মেয়েরা কত কটু কথা শুনে চলে সমাজে এটা মায়া দেখেছে।তার পবিত্র মাকে অনেকে নিন্দা করে অপবিত্র বলে দিতো।এগুলো গায়ে মাখেনি শাহানা পারভীন।কিন্তু মায়ার ছোট মন মাকে বিনা দোষে কলঙ্কিত হতে দেখে বিষে জর্জরিত হয়ে যেত।অনেক সময় তো একাকীত্বের জীবনের জন্য বাজে প্রস্তাব পেতে হয়েছে শাহানা পারভীনকে।যেগুলো সামাল দিয়ে মানুষ করেছে মায়াকে।শুধু টাকা থাকলেই হয়না দুনিয়াতে বাঁচতে গেলে নিজেকে শক্তপোক্ত রাখতে হয়।এটা শাহানা পারভীনকে দেখে শিখেছে মায়া। তাই তো মায়া নিজেও আজ প্রভাবশালী আর শক্তিশালী।আজকে মোহন সরদারের মুখে এই ডাক শুনে বুকে হালকা মোচড় দিলেও মন কেড়ে নিতে পারেনি।চুপচাপ বসে আছে সে।

মায়ার এই মুখের দিকে তাকিয়ে আছে দুই জোড়া চোখ।একজন রাজ আর একজন বীর।দুজনেই বুঝতে পারছে মায়ার অবস্থা।মায়ার ভিতরটা এখন পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।যতই মায়ের অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে আসুক লোকটি তো তার বাবা।বীরের ইচ্ছা করছে মায়াকে এখন নিয়ে কোনো পাহাড় থেকে ঘুরে আসতে।যেখানে মায়া দু হাত মেলে শান্তির নিশ্বাস নিবে আর সে মুগ্ধ হয়ে দেখবে।যেভাবে আগে তারা কাটাতো।রাজের মন চাচ্ছে মায়াকে এখন তার বক্ষে জায়গা করে দিতে।যেটা একমাত্র শান্তির জায়গা মায়ার জন্য।

মোহন সরদার দুর্বল পায়ে হেঁটে চলে গেলেন ঘরের দিকে।মায়া তাকিয়ে দেখতে থাকে।তার খুব আনন্দ হচ্ছে এখন। হ্যা আনন্দ হওয়ার কথা।বাবা নামক এই বাজে লোকটিকে সে ঘৃণা করে এসেছে।তার মায়ের জীবন ধ্বংস করেছে।সে তো আজ খুব খুশি।

বড় একটি বিল্ডিংয়ের সামনে গাড়ি থামালো মায়া।গাড়ি থেকে নেমে নির্দিষ্ট একটি জানালার দিকে চোখ বোলালো মুখে মাস্ক পরা।তারপর মেইন গেট দিয়ে ঢুকে লিফটের ভিতর ঢুকলো।সেভেন ফ্লোরে টাচ করে দাড়িয়ে আছে।লিফট তার কাঙ্খিত স্থানে এসে থেমে যায়।লিফট থেকে নেমে দু পা হেটেই একটি দরজার সামনে দাড়ালো।কলিং দিতেই একজন মহিলা এসে খুলে দিলো দরজা।মহিলাটিকে দেখে মায়া ভিতরে ঢুকে গেলো।প্রতিদিন অফিস ছুটির পর এখানে এসে সময় কাটায় সে।বিয়ের আগে লোকের অগোচরে প্রায় এখানে আসা হত তার।শুধু কাজের সময় দূরে থাকা। আর লোকজনের কুনজর থেকে বাঁচতে এই জায়গাটিতে কম আসা হয় তার।ভিতরে ঢুকেই মায়া দ্রুত চলে যায় একটি ঘরে।যেখানে আছে তার সুখ।ঘরে ঢুকেই মায়া তাকালো বিছানার দিকে।বিছানায় শুয়ে আছে মায়ার মা শাহানা পারভীন।কোনদিকে তার নড়চড় নেই।একদম স্থির হয়ে আছে সে।কখন কি লাগবে না লাগবে কেউ কিছু বলতে পারেনা।একটু আগে যে দরজা খুলে দিয়েছিলো সে একজন নার্স।শাহানা পারভীনের পার্সোনাল নার্স।মায়া তাকে হায়ার করেছে।শাহানা পারভীনকে আপাতত প্রকাশ্যে রাখা যাবে না।তাই তো মায়া তাকে লুকিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।কক্স বাজার থাকতে হাসির কাছে মায়া শুনেছিলো শাহানা পারভীন একটু একটু রেসপন্স করছে।আজকে নার্সকে বলে রেখেছিলো মায়া।টিভি অন রাখতে।টিভিতে মোহন সরদারের কোম্পানির খবর এসেছে।এটা কর্ণপাত হলে শাহানা পারভীন কি করে এটা জানতে চায় মায়া।নার্স ঠিক এমনটাই করেছিলো।খবরে যখন মোহন সরদার এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হয় তখন নাকি শাহানা পারভীনের এক আঙ্গুল নড়তে থাকে।মায়াকে সাথে সাথে কল করে জানিয়েছে নার্স।দীর্ঘ নয় বছর কোমায় থেকে আজ একটু আঙুল নড়ে উঠলো এটা শুনেই মায়া ছুটে এসেছে মাকে দেখতে।নয় বছর আগে যখন মায়ার বয়স আঠারো হয় তখন এক এক্সিডেন্টে শাহানা পারভীন কোমায় চলে যান।কিন্তু ঘটনার কোনো কিছুই বলতে পারে না মায়া।কিভাবে এই ঘটনা ঘটেছিলো এটা একমাত্র শাহানা পারভীন নিজে বলতে পারবেন।শুধু শেষের দিকে দেখেছিলো নির্জন অন্ধকার রাস্তায় শাহানা পারভীনের পায়ের উপর মোটা স্টিলের ভারী লাঠি দিয়ে বাড়ি মারছে কেউ।যার হাতে ছিলো একটি চিকচিক করা হীরের আংটি।যেটা দেখে মায়া শিওর হয়ে যায় যে ইনি একজন নারী। আর তার সাথে সঙ্গ দেওয়া একটি ছেলেকে দেখেছিলো মায়া।যাকে খুজেছিলো সে এতগুলো বছর ধরে।অবশেষে পেয়েছে তাকে।আটকে রেখেছে তার ফ্যাক্টরির সিক্রেট রুমে।যাকে কারেন্টের শক দিয়ে রাখা হয়।কিন্তু তার মুখ থেকে বের করতে পারছে না কে তার মাকে খুন করতে চায়।রাস্তায় শাহানা পারভীনের দেহ ফেলে রেখে যায় ওই লোকগুলো।যাতে গাড়ি এসে তার উপর দিয়ে পিষে চলে যায়। আর কেউ সন্দেহ করবে না।কিন্তু তারা একটু ভুল করে।শাহানা পারভীনের ডেডবডি না দেখেই চলে যায়।এটা মায়ার একটা সৌভাগ্য বলা চলে।গাড়ি শাহানা পারভীনের অতি নিকটে আসার আগেই মায়া অনেক কষ্টে শাহানা পারভীনের দেহটি নিয়ে সরে আসে।তানাহলে এতক্ষণে শাহানা পারভীন এই দুনিয়াতে থাকতে পারতেন না।অতীতের এই সংক্ষিপ্ত দৃশ্য মনে পড়তেই গা কেপে ওঠে মায়ার।সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে শাহানা পারভীনকে।

চলবে…?

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৩৩
#ইশরাত_জাহান
🦋
শাহানা পারভীনের হাত ধরে মায়া নিজের গালের কাছে বুলিয়ে দিতে থাকে।মা তাকে আদর স্নেহ নাই করতে পারুক মায়া নিজে তো এই ভালোবাসা আদায় করে নিতে পারে।মায়ের হাতের পিঠে চুমু দিয়ে বলে,”তুমি আজকে রেসপন্স করেছো মা।আমি খুব খুব খুব খুশি হয়েছি।আজকে আমার অপেক্ষার একটু ফল পেয়েছি।তুমি রিকোভার করতে যাচ্ছো।ডাক্তার বলেছে তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।”

শাহানা পারভীনের কোনো নড়চড় নেই।তিনি চোখ মেলে আছেন শুধু।মায়া তার হাতটি নিজের হাতের মুঠে নিয়ে বলে,”জানো মা আমাদের মৌ মা হতে চলেছে।তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠলে আমি আর তুমি মিলে ওর বাবুর জন্য অনেক কিছু করবো।তুমি তো সোয়েটার বুনতে পারো।তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ছোট সোনামনির জন্য সোয়েটার বুনে দিবে। জানো মা আমি আজকে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ঘৃণিত ব্যাক্তিকে শাস্তি দিয়েছি।মোহন সরদার আজ শেষ।তার ব্যাবসায় আবার ফিরে আসতে হলে অনেক স্ট্রাগল করতে হবে।কিন্তু এই মায়া সেই সুযোগ দিবে না।তোমার শাহমীর বাবা আমার স্বামী আমাকে তার বউয়ের মর্যাদা দিয়েছে মা।আমাকে তার জন্য তেমন কষ্ট করা লাগেনি।আমার এতগুলো সুখের মাঝেও একটা সমস্যা বাধা সৃষ্টি করছে মা।ওই মিস্টার খান ফিরে এসেছে।বিনা দোষে কাউকে মেরে ফেলতে চাই না আমি।কিন্তু মা মিস্টার খান আমাকে আমার স্বামীর থেকে কেড়ে নিতে চায়।আমি তো যাবো না তার থেকে।যে করেই হোক মিস্টার খানের একটা ফয়সালা আমি করবই।”

শাহানা পারভীন শুধু শুনছেন মেয়ের কথা।কোনো উপদেশ দেওয়ার মতো ক্ষমতা এখন তার নেই।যদি থাকতো তিনিও বলতে পারতেন যে তার স্বামী তার শাহমীর তার হয়েই সবকিছু করছে।রাজকে শাহানা পারভীন শাহমীর বলে ডাকে।রাজ যে সেই ছোট থেকেই তার জন্য অপেক্ষা করে ছিলো।এগুলো মায়াকে জানায়নি শাহানা পারভীন।শুধু বলেছিলেন তার মাহমুদ সরদারের ছেলে শাহমীর রাজের সাথে বিয়ে হয়েছে।

ঘাড়ে কারো স্পর্শ পেয়ে পিছনে তাকালো মায়া।দেখতে পেলো হাসি ও মিহির দাড়িয়ে আছে।হাসি মায়ার কাধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে।মিহির তার কাজে ব্যাস্ত থাকে।এসবের ভিতর মায়া তাকে জড়ায় না।খুব বেশি প্রয়োজন হলে ডাকা হয় মিহিরকে।হাসিকে দেখে মায়া বলে,”দেখো হাসি আমার মা খুব তাড়াতাড়ি আমার কাছে ফিরবে।মা আমার কথা শুনে মিটিমিটি হাসতে থাকে।আমি দেখেছি মায়ের সুখ।মা খুব খুশি হয়েছে আমি মন্ত্রী মশাইকে বিয়ে করেছি তাই। আর আজকে আমি মোহন সরদারকে ডাউন করতে পেরেছি তাই মাও রিকোভার করতে থাকে।তারমানে আমার মা খুব তাড়াতাড়ি আমার কাছে আসবে।”

খুব খুশি হয়ে বলতে থাকে মায়া।মায়ার খুশিতে চোখের কোনায় পানি জমতে থাকে।হাসি সেই পানি মুছে দিয়ে বলে,”আমার মায়াবতী মা।খুব তাড়াতাড়ি তুমি আর তোমার মা একসাথে থাকবে।আপা খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে তার কোলে নিয়ে আদর করতে থাকবে।সন্তান তার মায়ের ভালোবাসার জন্য এতকিছু করছে।আর মা তার ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারে?অবশ্যই আপা সুস্থ হয়ে তোমাকে ভালোবাসবে।”

“আমি মাকে নিয়ে অনেক অনেক জায়গায় ঘুরবো হাসি।আমি আর মা মিলে সরদার বাড়িতে আবার ঢুকবো।আমার মা ওই বাড়িতে যাওয়ার আগে ওই বাড়ির আবর্জনা গুলো সরিয়ে দিবো।আমার মা ওখানে শান্তিতে থাকবে।এক সময় যে মাকে অপদস্থ হয়ে অধিকার হীনতা হয়ে আসতে হয়েছে সেই মা তার নিজ অধিকার নিয়ে যাবে ওই বাড়িতে।এটা আমার ওয়াদা।”

মায়া কথাগুলো খুব উত্তেজিত হয়ে বলতে থাকে।এতগুলো বছর পর মা একটু সুস্থ হয়েছে।এটা যে মায়ার জন্য কতটা খুশির খবর এটা একমাত্র মা হারা সন্তান বুঝবে।হাসি মায়ার মুখে হাত রেখে বলে,”তুমি তোমার উদ্দেশ্যে সফল করতে সক্ষম হবে।এই বিশ্বাস আমার আছে।মায়া যে একজন বাঘিনী।এই হিংস্র মায়াবতী সবকিছু পারে।তার উদ্দেশ্যে সে অটুট।”

“একদম হাসি।কিন্তু আমার পথে যে একজন বাধা হয়ে আছে।”

মিহির শান্তনা দিয়ে বলে,”বাধা অতিক্রম করে পথ চলতে হবে বেবিডল।পথে বাধা আসবেই।কিন্তু উদ্দেশ্য তোমার নিজের সাথে করে নিয়ে সফল করতে হবে। উদ্দেশ্যের কথা ভুলে বাধাকে নিয়ে ভাবলে হবে না।তুমি আমার ব্রেভ বেবিডল।তোমাকে ভীতু চেহারায় মানায় না।তোমার মন্ত্রী মশাই তোমার সব ইচ্ছা পূরণ করে।সেক্ষেত্রে এটা তো ক্ষুদ্র এক বিষয়।”

“কিন্তু মিহির ভাই।ওর কাছে আমার আর ওর কিছু…”

আর কিছু বলতে পারে না মায়া।রাজ কল করেছে।এতক্ষণে রাজ বাসায় এসেছে।বাসায় এসেই রাজ খুঁজতে থাকে মায়াকে।না পেলে কল করে।আজও হয়তো তাই।মায়া কল রিসিভ করতেই রাজ বলে ওঠে,”সারাদিন কাজের মাঝে বউকে দেখার জন্য মন ছট ফট করতে থাকে।কখন বাড়ি আসবো আর বউকে আলিঙ্গন করবো সেই অপেক্ষায় থাকি।কিন্তু বউ আমার বাড়িতেই নেই।বলি আলিঙ্গন কি এখন আমি আমার গুলি ধরে রাখা বউয়ের ছবিকে করবো?”
মায়া ও রাজের বেডরুমে মায়ার একটি বড় ছবি টাঙানো আছে।যেটাতে মায়া গুলি ধরে সাইড লুকে আছে।সেদিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলতে থাকে রাজ।

“মিহির এসেছে তাই ওর সাথে একটু কথা বলছিলাম।”

“এটা ওই মিহির না যে তোমার হবু বর ছিলো?”

“বর আর হলো কোথায়?বর তো আপনি হয়েছেন।”

“বাসায় আসেন বিবিজান।অন্যের বউ হওয়ায় ইচ্ছা আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।”

মায়া হেসে দেয়।ফোন কেটে সবাইকে বিদায় দিয়ে মাস্ক পরে চলে যায়।গাড়ি সরদার মহলের সামনে আসতেই দারোয়ান দরজা খুলে দেয়।গাড়ি নিয়ে গ্যারেজে যায় মায়া।সেখানে গাড়ি রেখে ভিতরে আসতে নিলেই সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বীর।মায়া দেখেও না দেখার মতো করে আসতে নিলে বীর বলে ওঠে,”এভাবে ইগনোর করোনা জানেমান।সইতে পারি না আমি।”

“সইতে শিখে নিন মিস্টার খান। আর এখন আমি আপনার ভাইয়ের বউ।অন্তত সেই খাতিরে আমার থেকে দূরে থাকুন।”

“কখনই সম্ভব না।আমার ভালোবাসা আমি আদায় করেই ছাড়বো।”

“নিজের জেদকে কন্ট্রোল করুন।আমি আপনার নই।আমি যার জন্য জন্মেছি তার হয়েও গেছি।এখন আর এই ভাগ্য বদলাবে না।”

“ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা তো করে দেখো।ভালোভাবে বলছি ছেড়ে দেও ওই শাহমীর রাজকে।আকড়ে ধরো আমার এই হাত।দেখবে সুখের রাজ্যে নিয়ে যাবো তোমাকে।”

“এই মায়ার সর্বাঙ্গে এখন একটাই নাম।এটা শাহমীর রাজ।এই নাম কেউ মুছতে পারবে না।ভুলেও আমার আর আমার বরের মধ্যে তৃতীয় ব্যাক্তি হতে আসবেন না।একবার যখন আপনাকে নিজের হাতে শেষ করেছি বারবার শেষ করে দিবো।ভাগ্য বশত আপনি একবার বেচে গেছেন কিন্তু এবার সেই সুযোগ দিবো না।”

“তুমি যতবার আমাকে খুন করতে চাইবে আমি বেচে ফিরলে ঠিক ততবার তোমার জন্যই ফিরে আসবো।এটা এই বীরের ওয়াদা।আমার জীবনের একমাত্র নারী আসক্তি হয়ে জায়গা নিয়েছো তুমি।যত যাই হোক ভুলবো না তোমাকে।বারবার ফিরে এসে ভালোবাসার দাবিদার আমি রাখবই।”

“কিন্তু আপনি সফল হবেন না।একবার যখন আপনি ব্যার্থ বারবার আপনি ঠিক তেমন ভাবেই ব্যার্থ হবেন।”

বলেই মায়া চলে যায় বাড়ির ভিতরে। বীর সেদিকে তাকিয়ে আছে।মায়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বীর বলে,”তোমাকে আমার না করতে পারলে এই জীবন যে ব্যার্থ হয়ে যাবে।বেচে থেকেও মৃত ব্যাক্তির মতো জীবন পার করতে হবে।”

ঘরের ভিতরে আসতেই মায়াকে হেঁচকা টান দিয়ে দেওয়ালে চেপে ধরে রাজ।মায়াকে অতি নিকটে এনে মায়াতে মেতে ওঠে রাজ।তারপর কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,”খুব শখ না ওই মহিরের সাথে কথা বলা?”

“আর ইউ জেলাস?”

“হ্যাঁ হ্যাঁ জ্বলছি আমি।আমার বউ অন্য ছেলের সাথে কথা বলেছে।তার হাত পা গুড়ো গুড়ো করে দিবো।”

“কাম অন মন্ত্রী মশাই।আমি তো জাস্ট নরমালি কথা বলছিলাম। আর মিহির আমার ফ্রেন্ড হয়।বর না হলেও ফ্রেন্ড তো আছেই।”

“ফ্রেন্ড হোক আর পাতানো ভাই।কোনো ছেলের সাথেই আমি আমার মায়াবতীকে সহ্য করবো না।”

“যদি দেখেন তো?”

“ওখানেই তার রক্তের বন্যা বইয়ে দিবো। শাহমীর রাজ তার কথাতে পাক্কা।”

“আমাকে যে বাইরে অনেক ছেলেদের সাথে মিটিং করতে হয়।সেখানে তো হ্যান্ড শেক করা লাগে।তখন আপনি কি করবেন?”

মাথা গরম হয়ে গেছে রাজের।মায়ার হাত ধরে অন্য ছেলে।রাজের চোখমুখ লালবর্ণ হয়ে এসেছে।পকেটে থাকা রিভলবার বের করে মায়াকে দেখিয়ে তেজী কণ্ঠে বলে,”এটাকে আমি খেলনা হিসেবে ব্যাবহার করি না মায়াবতী।যে কু**ত্তা**র বা**চ্চা আমার বউয়ের হাত ধরবে তার হাত না পুরো অঙ্গ আমি ভষ্ম করে দিবো।”

মায়া ঠোঁট প্রসারিত করে জড়িয়ে ধরে রাজকে।আপাতত মায়া বলতেও পারছে না যে মিহির তার হবু বর না তার হাসির ছেলে।ছোটবেলা থেকে মিহিরের সাথে সে খেলাধুলা করেছে।মিহিরকে ভাইয়ের নজরেই দেখে মায়া।কারণ এখন রাজ জানে হাসি মায়ার মা।এগুলো মায়া ভাবলেও রাজ তো জানে আসল সত্যিটা।

রিসেপশনের ছবি আর ভিডিওগুলো দেখছিলো হিয়া।হলরুমের সোফায় বসে একেক করে ছবিগুলো দেখতে থাকে আর হাসতে থেকে।সবগুলো দেখতে দেখতে হঠাৎ একটি ছবিতে চোখ আটকে গেলো হিয়ার।চোখ ছলছল করতে থাকে।রুদ্রকে একটি মেয়ে জড়িয়ে ধরে আছে।মেয়েটি শর্ট ড্রেস পরেছে।ড্রেস দেখে হিয়ার মনে পড়লো এই মেয়েটিকে সে দেখেছিলো পার্টিতে।গাঢ় নীল রংয়ের শর্ট ড্রেস পরেছিলো আরেক কোম্পানির সিইওর মেয়ে।মেয়েটি অনেক স্মার্ট।এর আগেও দেখেছিলো হিয়া।যেদিন থেকে হিয়ার মনে রুদ্রের জন্য ঘৃণা ভরে আছে।মনে পড়ে যায় পুরনো কথা।

হিয়ার অতীত,
একদিন সন্ধ্যায় নীলক্ষেত থেকে বাসায় ফিরছিলো হিয়া।গুলশানে আসার আগে একটি বার সেন্টার দেখা যায়। হিয়া জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখতে থাকে।হটাৎ বারের সামনে রুদ্রকে দেখে অবাক হয় হিয়া।রুদ্রর সাথে আরেকটি মেয়ে থাকে।দুজনে একসাথে বারে ঢুকে যায়।হিয়া এটা দেখার পর ড্রাইভারকে বলে গাড়ি থামিয়ে দেয়।তারপর সেও ঢুকে যায় বারের ভিতরে।বার নিয়ে এক্সপেরিয়েন্স নেই হিয়ার।বারের ভিতরটা আজ ফাঁকা থাকে।বারের ভিতরে একটি সিড়ি আছে যার উপর দিয়ে তাকালে দেখা যায় কিছু ঘর।হিয়া দেখলো একটি ঘরের দিকে ওই মেয়েটি ঢুকছে যেই মেয়েটি রুদ্রের সাথে ছিলো।সাথে সাথে হিয়া সেদিকে দৌড় দেয়।হিয়া সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় একজনের সাথে ধাক্কা খায়।কিন্তু কিছু খেয়াল করে না।মেয়েটির দেখা দেখে ওই ঘরটিতে ঢুকে দেখতে পায় রুদ্র আর ওই মেয়েটি একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে।রুদ্রের হাত মেয়েটির পিঠে।দেখতে খুবই বিবৃতিকর লাগবে এদেরকে।রুদ্র মেয়েটিকে ছেড়ে দিতেই দেখতে ফেলো হিয়াকে।হিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে।অনেক আগে থেকেই রুদ্রের জন্য নিজের মনে জায়গা করে নিয়েছিলো হিয়া।কিন্তু আজ প্রণয় পুরুষের এমন দৃশ্য দেখে থমকে যায় সে।হিয়ার চোখের পানি স্পষ্ট দেখতে পায় রুদ্র।হিয়া যে তার প্রতি দূর্বল এটা রুদ্র বুঝে যায়।হিয়া কোনো কিছু না বলেই চলে আসে বাসায়।

বর্তমান,
অতীত মনে পড়তেই চোখ আবারও ভিজে এলো হিয়ার।আজকে আবারও রুদ্রের সাথে ওই মেয়েটির ছবি দেখে মন ভাঙতে থাকে মেয়েটির। কান্না সুরে বিড়বিড় করতে থাকে,”কেনো আমাকে এই নষ্ট পুরুষের আসল রূপ দেখতে হয়?কেনো আমার সামনেই আসে তার আসল সত্যতা। আর নিতে পারছি না আমি।”

বলেই কান্না করতে থাকে হিয়া।খুব কষ্ট হচ্ছে তার।ভালোবাসার মানুষকে অন্যের সাথে দেখতে পারেনা কেউ।হিয়া তো নরম মনের মানুষ।সে কিভাবে দেখবে তার মনের মধ্যে লুকায়িত ভালোবাসার আসল রূপ।খুব কষ্ট হচ্ছে তার।

মিলি তার ফোন স্ক্রল করে যাচ্ছে।তারেকের আইডিতে একবার রিকোয়েস্ট দিচ্ছে আবার আনফ্রেন্ড করছে।বারবার চেষ্টা করেই যাচ্ছে মিলি।তারেক তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করছে না।কতক্ষন এমন করতে পারে এটাও দেখে ছাড়বে মিলি।মেসেঞ্জার রিকোয়েস্টে ম্যাসেজ দিয়েছে,”ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করো আমার ভবিষৎ বাবুর আব্বু।সেই কখন থেকে রিকু দিচ্ছি তুমি একসেপ্ট করছো না।আমাকে এভাবে ঝুলিয়ে রাখলে কিন্তু তোমায় বাবুদের হাত পা ইয়া লম্বা লম্বা হয়ে যাবে।এই দেখো তোমার বাবু মানে তো আমার বাবু।শুনো ব্ল্যাক ডায়মন্ড এভাবে তোমার বাবুর মাকে ঝুলিয়ে রেখো না।আমার লক্ষীসোনা প্লিজ একসেপ্ট মি।”

তারেক ম্যাসেজগুলো দেখবে কিভাবে?সে তো এখন অনলাইনে নেই।সকালে তার কাজ আছে।এখন তো সে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।এদিকে বেচারি মিলি চেষ্টার উপর চেষ্টা করেই যাচ্ছে।

চলবে…?