#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৪০
#ইশরাত_জাহান
🦋
কথাগুলো বলেই পকেট থেকে গুলি বের করে বীর।বীরের হাতে গুলি দেখে রাজের সামনে এসে দাঁড়ায় মায়া।রাজকে নিজের পিছনে ঢেকে রাখার মতো করে দাড়িয়ে থাকে মায়া।বীর সেদিকে তাকিয়ে থাকে।মায়ার মুখে এখন নেই কোনো হাসির ঝলক।আতঙ্কে আছে মায়া।রাজকে মেরে ফেললে সর্বস্ব হারাবে এমন ভয় দেখা যাচ্ছে মায়ার চোখেমুখে।
বীর হালকা হেসে বলে,”ভয় নেই জানেমান।ভালোবাসার অনুভূতি আমি বুঝি।বুকের এই জায়গাটায় স্থান দিয়েছি আমি তোমাকে।তোমার মুখের হাসি দেখতে চেয়েছি।সেই হাসি কেড়ে নিয়ে নিজের করি কিভাবে বলো?”
বুকের বাম পাশটায় হাত রেখে কথাগুলো বলে বীর।বীরের কথার মাঝে আরো একটি গাড়ি চলে আসে।সবাই তাকায় সেদিকে।গাড়ি থেকে নেমে এসেছে গোলাপী শাড়ি পরিহিতা নারী।তার দিকে তাকিয়ে থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া নেই বীরের।জারা দুর থেকে দৌড়ে আসছে বীরের দিকে।জোরে জোরে চিল্লিয়ে বলে,”বীর কিছু করোনা তুমি।তোমরা বন্ধ করো এই যুদ্ধ প্লিজ।”
জারার দিকে তাকিয়ে রাজ বলে,”দেখ ভাই এখনও সুযোগ আছে।আমি আমার মায়াবতীকে নিয়ে থাকবো।সেটা যেভাবেই হোক। তোর জীবনেও আরেকটা অপশন আছে। জোর করে ভালোবাসা নেওয়ার থেকে ভালো তোর জন্য যে ব্যাকুল তার সাথে সুখে থাক।”
বীর হালকা হেসে বলে,”জীবন তো একটাই।এই এক জীবনে কতগুলো নারীর প্রতি আসক্ত হওয়া যায় বলতো?”
বীরের এহেন কথা শুনে মায়া ও রাজ দুজনেই থমকে যায়। বীর আবার বলে,”চিন্তা করিস না।তোদের জীবন থেকে সরে যাবে বীর।চিরবিদায় নিবে এখন সে।”
বলেই গুলি নিজের কপালে চেপে ধরে বীর।এক পা দুই পা পিছিয়ে যেতে যেতে বীর বলে,”এক নারীতে আসক্ত হয়েছি আমি।জীবনে একটাই নারীর আগমন ছিলো আমার হৃদয়ে কিন্তু সেও আজ অন্যের।যাকে ভালোবেসে ঘর বাঁধার সুখ দেখেছি সে অন্যের সাথে বাঁধে ঘর।তাহলে ভেঙ্গে যাক আজ আমার বেধে রাখা ঘর।বারে বারে মন বদলাতে জানে না এই বীর। যাকে ভালোবেসেছি তাকে কি করে ভুলি?ভুলতে পারার ঔষধ যখন পৃথিবীতে নেই তাহলে চিরবিদায় নিয়েই তাকে ভুলতে হবে।বেচে থেকে কখনই এই ভালোবাসার হার মানবে না। মরে গিয়ে নাহয় ভালোবাসার সমাপ্তি করে দেই সবকিছুর।”
বলেই নিজের কপালে নিজেই শুট করে দেয় বীর।জারা দৌড়ে আসতে নিয়েও থমকে যায়।বীরের এহেন কাজে ব্যালেন্স হারা হয়ে একটি ইটের সাথে ধাক্কা খায় জারা।উল্টে পড়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে।তারপর মাথা উচু করে তাকিয়ে দেখতে থাকে বীরকে।মুখ থেকে চিল্লিয়ে বলে ওঠে,”বীর।”
দুই হাত ভর করে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে জারা।আজ প্রথম শাড়ি পড়েছিলো।শখের পুরুষের জন্য শাড়ি পরে তাকে প্রোপজ করতে চেয়েছিলো।কিন্তু শখের পুরুষ এখন অন্য নারীতে মত্ত হয়ে নিজেকে শেষ করে দিলো।কোনো মতে উঠে ব্যাথা পাওয়া পা নিয়ে খোঁড়াতে থাকে যারা। ইটের সাথে ধাক্কা লাগাতে জারার পায়ের আঙ্গুল থেকে রক্ত বের হয়।কোনো রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আসতে থাকে সে।
বীর আস্তে আস্তে নিচে পড়ে যায়।তার কপাল ছিদ্র হয়ে রক্ত পড়তে থাকে।গুলি তার কপালের ভিতরে ঢুকে গেছে।নিচে শুয়ে থেকেও তার চোখ মায়ার দিকে।হাত বাড়িয়ে মায়াকে বলে,”তোমাকে না পেলে আরেক অপশন থাকলেও আমার জীবনে একমাত্র তোমার জায়গায়ই থাকবে।তুমি আমার জীবনে কোনো অপশন ছিলে না জানেমান।এই মৃত্যুশয্যায় আমি একমাত্র তোমাকে ভালোবেসে মৃত্যু গ্রহণ করলাম।যাওয়ার আগেও আমি তোমাকে কবুল বলে যেতে চাই।”
জারা বীরের কাছে প্রায় চলে এসেছে।সেদিক কোনো নজর নেই বীরের।সে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি আমাকে আপন নাই করলে।বিদায় বেলা আমি তোমাকে আমার আপন করে বিদায় নিলাম।তিন কবুল বলে আমাকে গ্রহণ নাই করলে তুমি কিন্তু আমি তোমাকে তিন কবুল বলে গ্রহণ করে মরতে চাই,কবুল কবুল কবুল।এটা আমি তোমার জন্যই নিজের জবান থেকে বের করতে চেয়েছি তাই তোমার জন্যই বলে গেলাম।ভালোবাসি জানেমান।”
বলেই বীরের কথা বন্ধ হয়ে গেলো।ঠিক তখনই বীরের কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসে জারা।বীরের চোখ মেলে আছে।মুখে হাসি ফুটে আছে।কিন্তু নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আছে। বীরের মাথাটি নিজের দুই হাটুর উপরে নিয়ে নেয় জারা।বীরকে বলে,”আমি তোমাকে ভালোবাসি বীর।আমি রিয়েলাইজ করেছি যাকে তাকে হুট হাট ভালোবাসা যায় না। জানো হ্যান্ডসাম আমি তোমার জন্য নিজেকে আজ সাজিয়েছি।তোমাকে প্রপোজ করবো বলে।তুমি কি মেনে নিবে আমাকে?”
বীরের মেলে রাখা চোখ যেনো দেখছে জারাকে।জারার মনে হয় এখন বীর তার কোলে শুয়ে আছে।মুখের এই হাসি জারা তাকে প্রোপজ করেছে তাই।কিন্তু জারা বেচারি বুঝতে পারছে না তার বীর নেই।বুঝতে পারলেও তার ব্রেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
বীর শুধু তাকিয়েই আছে।কোনো কথা বলছে না।জারা বিরক্ত হয়ে বলে,”এই হ্যান্ডসাম।কিছু বলো না কেনো?শুনো আমি তোমার সাথে এভাবে সেজেগুজে এই পৃথিবী ঘুরে দেখতে চাই।নিয়ে যাবে কি আমাকে?”
মৃত এক ব্যাক্তির সাথে কথা বলছে জারা।চেয়ে চেয়ে দেখছে মায়া ও রাজ।জারার হুশ নেই এখন।বীরের এই মৃত্যু সে মেনে নিতে পারছে না। বীরের উত্তর না পেয়ে জারা এবার বীরকে ঠেলতে থাকে।বলে,”এই হ্যান্ডসাম তুমি কি খালি আমার কথাই শুনবে।কখনও কি উত্তর দিবে না?আমি খালি তোমার সাথে বকবক করতে থাকি।একটু তো মাথা গরম করে আমাকে বকা দিতেও পারো।আমি তোমার বকাগুলোকে ভালোবেসে গ্রহণ করবো।একটু কিছু বলো।”
আরো ভিন্ন কথা বলতে থাকে জারা।মায়া এবার জারার কাছে আসে।জারার কাধে হাত রাখে মায়া।জারা মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”লিসেন?আমি আমার হ্যান্ডসামকে নিয়ে দূরে সরে যাবো।তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।তুমি রাজ বেইবীকে নিয়ে থেকো কেমন? বীর আর আমি মানে এই বীরজারা তোমাদের মাঝে বাধা হয়ে আসবে না।”
“বাধা হয়ে আসার আর কোনো রাস্তা নেই।তোমার বীর মারা গেছে।”
চিৎকার করে ওঠে জারা।বলে,”একদম আমাকে আজেবাজে কথা বলবে না।আমার হ্যান্ডসাম এমন চুপচাপ থাকে। রুডি বয় এমন হয় জানো না?ওরা কথা কম বলে।কিন্তু তারমানে মারা যায় না।”
“মিস্টার খানের মস্তিষ্কের দিকে তাকাও জারা।ওনার জখম দেখো।উনি আর নেই।চিরতরে বিদায় নিয়েছে উনি।”
জারা এবার তাকালো বীরের দিকে।ভালো করে দেখলো বীরের কপালে রক্ত।শাড়ির আঁচল হাতে নিয়ে রক্তগুলো মুছতে থাকে জারা।রাজকে উদ্দেশ্য করে বলে,”ওকে হসপিটালে নিয়ে চলো বেইবী।ওর কপাল থেকে রক্ত পড়ছে।”
এবার রাজ নিজেই জারার কাছে এসে বলে,”ও আর নেই।বিদায় নিয়েছে আমাদের থেকে।মুক্ত করে দিয়েছে আমার মায়াবতীকে।কেড়ে নিতে চেয়েও নিতে পারেনি তাই চিরতরে চলে গেলো দুনিয়া থেকে।”
“এগুলো বলো না বেইবী।কষ্ট হচ্ছে আমার।আমি ওকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাব। প্রমিস করছি আমি। আর আসবো না তোমাদের মাঝে।এই দেখো আজ আমি নিজে থেকে ওর জন্য সেজেছি।”
“তোমার এই সাজ আজ বৃথা।”
বলে ওঠে মায়া।থমকে যায় জারা।চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে তার।আজ অসহায় অনুভব করছে জারা।এটাই তার ভাগ্যে ছিলো।
নিজের আনা গাড়িতে করে জারা ও বীরের লাশকে নিয়ে যায় মায়া।তারেক শাহানা পারভীনকে নিয়ে অনেক আগেই চলে গেছে।সবাই চলে যাওয়ার পর স্থান ফাঁকা হয়ে যায়।এই জায়গায় এখন দাড়িয়ে আছে রাজ ও তার লোকজন।জোরে চিৎকার করে রাজ ডাকলো,”পিয়াশ।”
কেরোসিনের বোতল নিয়ে সেখানে হাজির হয় পিয়শ।রাজের দিকে কেরোসিনের বোতল এগিয়ে দিতেই রাজ হাত বাড়িয়ে নিলো।বীরের বানানো এই বাড়িটির চারদিকে কেরোসিন দিতে থাকে রাজ।পকেট থেকে একটি দিয়াশলাই বের করে কাঠিতে আগুন জ্বালিয়ে নেয় রাজ।মুখে ডেভিল হাসি ফুটিয়ে বলে,”আমার মায়াবতীর জন্য সুখের রাজ্য একমাত্র আমি গড়ে তুলবো।কোনো তৃতীয় ব্যাক্তির গড়া রাজ্য থাকবে না।”
বলেই বাড়িটির দিকে আগুন জ্বালানো কাঠি ছুড়ে মারে।দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন।সেদিকে তাকিয়ে বিজয়ের হাসি হাসে রাজ।বলে,”আমার জীবন থেকে আমার মায়াবতীকে সরানো এতটা সহজ নয়।আমি যতটা কঠিন তার থেকেও বেশি কঠিন আমার মায়াবতী।সেই সবাইকে শেষ করে দিলো।”
রাজের পাশে এসে দাড়ালো পিয়াশ।রাজকে জিজ্ঞাসা করে,”এই বীর তো শুধু ম্যামকে ভালোবাসতো।তার মৃত্যুটা কি খুব দরকার ছিলো?”
“মায়াবতীর দিকে নজর দিয়েছিলো ও।আমার ভালোবাসা একমাত্র আমার।আমার বউয়ের দিকে অন্য পুরুষের নজর বিষের মতো লাগে আমার কাছে।সেখানে আমার বউকে সোজা ও নিয়ে যেতে চেয়েছিলো।বিদায় তো ওকে নিতেই হতো।”
কথাগুলো বলেই দূরে থাকা গাছের দিকে তাকালো রাজ।ওখান থেকে বের হয় হিডেন কিলার।যাকে রাজ রেখেছিলো বীরকে খুন করার জন্য।লোকটি কাছে আসতেই পকেট থেকে টাকা বের করে তাকে দিয়ে বলে,”যদিও তোমাকে কাজে লাগেনি।কিন্তু তারপরও তোমাকে উপহারটি দিলাম।”
পিয়াশের কাছে ভালো লাগছে না।একজন প্রেমিক পুরুষ তার ভালোবাসাকে না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে।এটাতে কষ্ট পাচ্ছে না মায়া ও রাজ।বরং তাদের কাছে মনে হয় এক আপদ গেলো।রাজ তাকালো পিয়াশের দিকে।বলে,”খুব নিকৃষ্ট মনে হচ্ছে না আমাকে!কিন্তু কি করবো বল?আমার থেকে আমার বউকে আলাদা করতে চেয়েছিলো। আর ওর চোখে মায়াবতী ছাড়া আর কারো জন্য আকতি আমি দেখিনি।মায়াবতীর জীবনে ও এক বিশেষ স্থান থাকলেও মায়াবতী ওকে চায়নি।এদিকে আমিও আমার মায়াবতীকে ভালোবাসি।যেখানে আমি ও মায়াবতী একে অপরের জন্য ব্যাকুল সেখানে তৃতীয় ব্যাক্তির স্থান থাকাটা কি মানায়?সম্পর্কে বাধা সৃষ্টি হবে তো।”
বলেই ডিভোর্সের পেপার পকেট থেকে নিয়ে পুড়তে থাকা বাড়ির দিকে ছুড়ে মারে।যেটা এখন বেকার।তারপর রাজ গাড়ির দিকে হাঁটতে থাকে। পিয়াশ একবার পুড়তে থাকা বাড়ির দিকে তাকালো। বীর ছেলেটি খারাপ ছিল না।কিন্তু তার চাওয়া পাওয়া অনৈতিক ছিলো।অন্যের বউকে জোর করে বিয়ে করতে চাওয়া তো পাপ।কারো সংসার ভেঙ্গে জোর করে সুখে থাকা যায় না।যে কোনো পুরুষ সহ্য করবে না তার বউকে অন্য কেউ কেড়ে নিলে।এখানে তো স্বয়ং শাহমীর রাজের বউ বলে কথা।
রাজ গাড়িতে ওঠার পর পিয়াশ এসে রাজের পাশে বসে। গাড়িতে হেলান দিয়ে রাজ বলে,”ওকে আমি মারতে চাইনি।আমি আর ও যখন একসাথে পড়াশোনা করতাম তখন আমরা ছিলাম বেস্ট ফ্রেন্ড।মামা মামীর দিকে তাকিয়ে ওকে ছার দিয়েছি।কিন্তু ও মায়াবতীকে আমার থেকে নিয়ে যেতে চায়।দেশে আসার পর যখন মায়াবতীকে হারিয়ে ফেলি হঠাৎ একদিন খোঁজ পাই আমার বউ ওর আস্তানায়।তবে সে সুরক্ষিত আছে ভেবে খুশি হই।ওর ঐ আলিশান বাড়িতে আমি আমার গার্ড রেখে দেই।তাছাড়াও একটি ক্যামেরা আমি ওর ড্রয়িং রুমে সেট করেছিলাম। ছলে বলে কৌশলে মামা মামীকে বলে ওকে বিদেশে পাঠিয়ে দেই।দেশে যাতে না আসে তাই প্রায়ই কাজের চাপ দেওয়াতাম মামাকে দিয়ে।কিন্তু ও দেশে ফিরলো। আর ফিরলো তো ফিরলো আমার মায়াবতীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলো।মানলাম ও জানতো না আমি আর মায়াবতী স্বামী স্ত্রী।কিন্তু মায়াবতী তো ওকে বলেছিলো যে ও শাহমীর রাজের বউ।তখন কেনো সরে গেলো না?সেও জেদ করলো।তাই তো ওইদিন ওর গাড়ির ব্রেক ফেল করে ওখানে চাবি রেখে দিয়েছিলাম গার্ড দিয়ে।কিন্তু ভুল বশত মায়াবতী গাড়ি চালিয়ে যায়। আর ওই রাতেই আমার সহজ সরল ভাইকে কেউ ড্রাগ দিয়ে দেয়।অতিরিক্ত ড্রাগ শরীরে থাকায় আমার ভাইটা সুযোগ বুঝে এসাইলাম থেকে বের হয়ে যায়।কিন্তু কেউ তো একজন আছে যে এসাইলাম থেকে পালাতে ওকে সাহায্য করেছে।তাই তো সে রাস্তায় নেমে যায়। আর মায়াবতীর গাড়ির সাথে পিষে..”
বলতে না বলতেই চোখ বন্ধ করে রাজ।রাজের ছোট ভাই থাকে নাম তাজ।প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম হয় তার। মায়ারও তখন জন্ম হয়না।মাহমুদ সরদার ও রোহিণী খুব ভেঙ্গে পরে।কিন্তু নিজেদের সন্তান তাই মানুষ করতে থাকে খুশি মনে।এই খুশি সমাজ মানতে নারাজ।নারাজ হওয়ার কারণ আছে। তাজ সাধারণ বাচ্চাদের মতো ছিলো না।সে যেখানে যেতো সবাই তাকে ভয় পেতো।রাজের দাদা দেখতেন তাজকে কেউ সহ্য করতে পারে না। তাজের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।তাজ পড়াশোনা করতে পারেনা।কোনো জায়গায় চলতে পারেনা।ভবিষ্যতে নিজ পায়ে দাড়াতেও পারবে না।তাই রাজের দাদা তাজের নামে সম্পত্তির পরিমাণ একটু বেশি রাখে।ব্যাবসা থেকে আসা টাকা কিছুটা তাজের নামে ব্যাংকে ট্রান্সফার্ট হবে।
রোহিণীর মৃত্যুর পর তাজ এসাইলামে বড় হয়।সপ্তাহে সপ্তাহে তাজের সাথে তার পরিবার দেখা করে যায়।বাড়িতে কখনও আসেনি বলে মায়া বা কেউ জানতে পারেনা যে রাজের কোনো ভাই তাজ আছে।বীরকে গুলি করার দিন তাজ কিভাবে ওই রাস্তায় আসে এটা কেউ জানেনা।তবে তাজের শরীরে ড্রাগ পাওয়া যায়।
প্রতিবন্ধী হয়ে কখনও সে নিজে থেকে বন্ধ ঘরে ড্রাগ নিতে পারবে না।এটার জন্য অন্য কেউ দায়ী।এমনটাই ধারণা রাজের।তবে এই খুনি মায়া নয়।আসল খুনি তো সে যে তাজের শরীরে ড্রাগ পুষ করে।শুধু তাই না রাজের উদ্দেশ্য এখন কে সে যে তার দাদা মা ও ভাইকে খুন করেছে এটা জানতে চাওয়া।তাকে কঠিন শাস্তি দিবে রাজ।বীরকে মায়া গুলি করার সময় রাজ সেখানে আসে।তাজের জন্যই তার ছুটে আসা।কিন্তু বীরের গাড়িতে মায়াকে দেখে সবকিছু ক্লিয়ার হয় রাজের।বীরকে শুট করার সময় রাজ নিজেও চোখ বন্ধ করে।এটা রাজ চায়নি।হাজার হোক মামার দিকে তাকিয়ে।মায়া চলে যাওয়ার পর রাজ তার লোকদের ডেকে বীরের লোকদের সাহায্য করে।বীরকে হসপিটালে নিয়ে যায়।বীর বাড়াবাড়ি করলে রাজ ওর মামার সাথে কথা বলে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়।দেশে আসতে মানা করে।কিন্তু তারপরও বীর চলে আসে নিউজ দেখে।
রাজ এগুলো ভেবে আবার বলে,”এতদিন আমি সব জেনেও না জানার অভিনয় করেছি।তার একটাই কারণ।মায়াবতীর আসল সত্যি প্রকাশ হয়ে যাবে। আর আসল সত্যি প্রকাশ পেলে যেভাবেই হোক ছোট মাকে শত্রুরা খুঁজে বের করবে।কে ওই লোক যে আমার মা দাদু আর ভাইকে খুন করেছে এটা ছোট মা জানে।ছোট মার কাছে সব প্রমাণ আছে।”
“আমার তো মনে হয় আপনার ছোট কাকি আছে এর ভিতরে।নাহলে আপনাকে বললো কিভাবে যে বীর মায়ার প্রতি আসক্ত।”
“উহু।ছোট কাকি জানে তার কারণ ছোট কাকি চায় জারা আর আমি এক হয়ে যাই তাই ছোট কাকির উদ্দেশ্য ছিলো বীরের সাথে মায়াবতীকে নিয়ে বদনাম করা।আমাকে কাকি উশকাতে থাকে আমিও তখন কাকির তালে তাল মিলিয়ে বলেছিলাম ওদের ফলো করতে। আর মায়াবতী যখন বেড় হয় তখন মায়াবতীর পিছনে লোক লাগিয়ে রেখেছে কাকি। যাতে জানতে পারে ওরা কোথায় দেখা করছে।কিন্তু জারাকে পাঠাবে এটা বুঝতে পারিনি।”
“কিন্তু কাকির সাথে এমন নাটক করার মানে কি?”
“কারণ সেই আমার একমাত্র চাবিকাঠি।টাকার লালসায় কাকি সব করতে পারে।শত্রুপক্ষের সাথে হাত মেলাতে তার দুই সেকেন্ড লাগবে না।শত্রুপক্ষ কে এটা আমাকে কাকি বলে দিতে পারবে।তার জন্য একটু সময় লাগবে।”
ড্রাইভ করতে করতে ফ্রন্ট সিটের আয়নার দিকে তাকায় মায়া।জারা মেয়েটিকে দেখে আজ তার খারাপ লাগছে।মেয়েটি বীরের প্রেমে পড়েছিলো।মন থেকে ভালোবেসেছে বীরকে।তাই এবার মায়া চায়নি বীরকে মারতে।জারা বীরকে টেনে টেনে মেলার এ মাথা থেকে ও মাথা ঘুরতে থাকে তার উপর দেশী থ্রি পিস পরে তখনই জারার চোখে দেখা যায় বীরের প্রতি ভালোবাসা।মায়া তখনই চেয়েছিলো বীর বেচে থাকুক শুধু মাত্র জারার জন্য বেঁচে থাকুক।বীরের প্রতি জারার ভালোবাসাকে সম্মান জানিয়েছিলো মায়া। সেও যে রাজকে মন থেকে ভালোবাসে।কিন্তু জারার ভাগ্যে তার ভালোবাসার পরিপূর্ণতা ছিলো না।মেয়েটি কারো জীবন নষ্ট করতে চেয়েছিলো।অবশেষে কোনো ব্যার্থ প্রেমিকের ছোয়া পেয়ে নিজে থেকে ভালো পথে এসেছিলো।কিন্তু ভাগ্য তাকে সুখে রাখেনি।হয়তো এটাই জারার নিয়তি।
খাটিয়ায় করে সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে বীরের লাশ। সেই লাশের আশেপাশে বসে আছে বীরের আত্মীয়।বীরের বাবা মা জানতে পেরেছে তাদের ছেলে আর নেই।কিন্তু তারা আজকে আসতে পারবে না।টিকিট পাওয়া তো মুখের কথা না।বীরের মা অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন বারবার।কোনমতে তাকে সামলাচ্ছে বীরের বাবা।
আজ সবার শরীরে সাদা কাপড় দেওয়া।জারা একটি সাদা সালোয়ার কামিজ পরে মাথায় কাপড় দিয়ে বিদ্ধস্থ হয়ে বসে আছে বীরের লাশের পাশে।অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করেছে।পুরো রাস্তা বীরের মাথা তার কোলে করে নিয়ে এসেছে।জীবিত বীরকে এভাবে নিজের সাথে মেশাতে না পারলেও মৃত বীরকে নিজের সাথে মিলিয়ে নিয়েছিলো সে।বীরকে স্পর্শ করলে জারার নিজের কাছেই অদ্ভুত ভালো লাগতো।
বীরকে খাটিয়ায় করে নিয়ে যেতে থাকে বাড়ির ছেলেরা।মালিনী হাউমাউ করে কান্না করছে বীরের জন্য।কোনো মতে মালিনিকে আটকিয়ে আছে সোনালী।জারার বাবা মা এসেছে আজ।তারাও জারার পাশে বসে আছে।জারা যে বীরকে ভালোবেসেছিলো এটা জারা নিজে তাদের জানিয়ে দেয় আগে।আজ মেয়ের মন ভাঙ্গা দেখে সহ্য করতে পারছে না জারার বাবা মা।সাজগোজ করে নিজেকে সাজিয়ে রাখা মেয়েটা আজ কান্না করে নিজের করুন অবস্থা করে রেখেছে।মানতে কষ্ট হয় বাবা মায়ের।
চলবে…?
#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৪১
#ইশরাত_জাহান
🦋
সুখের দিন শেষে দুঃখের দিন আসে।আবার সেই দুঃখের দিন শেষ হয়ে সুখের দিনটিও ফিরে আসে।বীর মারা গেছে দুইদিন।সবার মনে খারাপ লাগা থাকলেও যে যার মতো করে কাটিয়ে দিচ্ছে।শুধু শান্তিতে দিন কাটছে না জারার।অবশ্য সে শান্তিতে আছে নাকি অশান্তিতে এটা বোঝার অবস্থা নেই।সেদিনের ঘটনার পর জারা অনেকবার সেন্সলেস হয়েছিলো।যতটুকু সময় জ্ঞান ছিলো বলছে বীর তার আশেপাশে আছে।সে বীরকে দেখছে।কিন্তু নাহ বীর কোথাও নেই।এই সব তার ভ্রম।বীরকে না পাওয়ার আঘাত হানা দিয়েছে তার মনে।এখন জারা হসপিটালে ভর্তি।ডক্টরের ট্রিটমেন্টে দিন পার করছে সে।বেশিরভাগ সময় তাকে ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়।তানাহলে তো জারার পাগলামি বেড়ে যায়।ডাক্তারের মতে,”জারা সুস্থ থাকলেও মেন্টালি অসুস্থ।সে বীরের মৃত্যু নিজের চোখের সামনে মেনে নিতে পারেনি।”
আসলেই কি সম্ভব?যে মেয়েটি তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য প্ল্যান করে রেখেছিলো সেই মেয়ের সামনে হঠাৎ ভালোবাসার মৃত্যু।যাকে নিয়ে নিজে থেকে ঘর বাধার সপ্ন বুনেছিলো সেই ভালোবাসা আজ হারিয়ে গেছে।নিজের চোখের সামনে তার ব্যার্থ প্রেমিককে নিজের হাতে খুন হতে দেখে।যেখানে জারা বারবার চেয়েছিলো সে বীরকে পরিবর্তন করবে।তার ভালোবাসায় পৃথিবী সাজিয়ে দিবে।কিন্তু হলো তার উল্টো।এখন জারা আগের মতো নেই।জ্ঞান ফিরলে বীরের জন্য তার কাতরতা ফুটে ওঠে।
মালিনী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বীরের মৃত্যুতে সেও শোকাহত।কয়েকদিন ধরে ঠিকমত খাওয়া দাওয়ার ভিতরে নেই সে।নিজের যত্ন নেওয়া ভুলে গেছে।কিছুক্ষণ পর পর মায়ার দিকে আঙুল দেখিয়ে বলছে,”তুমি অলক্ষ্মী।অপয়া মেয়ে তুমি।তোমার জন্য এই বাড়িতে অশান্তি বেড়েছে।আমার বীর বাবা তোমার জন্য মারা গেছে।”
মায়া কোনো প্রতিক্রিয়া করেনি।চুপ করে শুনে গেলো।সবকিছুর প্রতিবাদ মায়া করেনা।যখন প্রতিবাদ করে তখন তার ভয়ংকর মুহূর্ত বানিয়ে দেয়।তাই মায়া এখন রাজের দিকে তাকিয়ে হাত মুঠ করে আছে।
মোহন সরদারের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে আজ।তাকে রুদ্র হসপিটালে নিয়ে এসেছে।রাস্তার লোকজনের মতামত এটা কেউ ইচ্ছা করে করেছে।কারণ যে ট্রাকে অ্যাকসিডেন্ট করেছে ওই ট্রাক মোহন সরদারের গাড়িকে ক্রস করে যেতে পারতো অনেক জায়গা ফাঁকা রেখেই।কিন্তু এটা করেনি বরং চোখের নিমিষেই গাড়ির সাথে ট্রাকের ঘর্ষণ লাগিয়ে দেওয়া হয়।
ডক্টর দেখছে মোহন সরদারকে।কিছুক্ষণ দেখার পর ডাক্তার বলেন,”ওনার শরীরের অনেক জায়গায় ফ্র্যাকচার হয়েছে।ওনার গভীরের ক্ষতগুলো কতদূর কি এটা দেখতে হবে।”
সোনালী বলে,”তাহলে দেখুন।”
“দেখুন এটা আমার কাজ নয়।এটার জন্য অন্য অর্থোপেডিক ডক্টর আছে।উনি আজ ছুটিতে।তাই আমাদেরকে এখন কল করে ডাকতে হবে।কিন্তু ওনার জন্য আপনাদের অনেক বেশি একাউন্ট পে করতে হবে।”
“আমরা রাজি।”
“ঠিক আছে।তাহলে কল করছি ডক্টর অহর্নিশ আদ্রকে।উনি এই বিষয়ে অনেক এক্সপার্ট।”
“ওকে।”
বলেই হাফ ছাড়ে সোনালী।
সবাই আড় চোখে দেখছে মায়াকে।মায়া লক্ষ করেছে বিষয়টি।সবার দিকে তাকিয়ে মায়া বলে,”এভাবে আমার দিকে তাকানোর কোনো মানে নেই।আমি এসব করিনি।আমি করলে এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে করি না।প্রকাশ্যে থাকতো।”
সবাই বিশ্বাস করে নেয় মায়ার কথা।এটা সত্যি মায়া যাই করে তা প্রকাশ্যে।তাই সন্দেহের তালিকায় নতুন কে এসেছে এটা কেউ বুঝতে পারছে না।
সবার ভাবনার মাঝেই পায়ের শব্দ বাড়তে থাকে।পিছনে তাকালো সবাই একসাথে। ব্ল্যাক শার্টের উপর দিয়ে সাদা অ্যাপ্রন পরে সবার দিকে এগিয়ে আসছে একজন ডক্টর।সবাই তারদিকে তাকিয়ে আছে।সোনালী তাকে দেখেই তার সামনে এসে বলে,”আমার হাসব্যান্ডকে ঠিক করে দিন।আপনার যত টাকা লাগে আমরা দিবো।”
আদ্র সোনালীর মুখের দিকে তাকিয়ে ভরসা দিয়ে বলে,”আমি আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করবো।বাকিটা ওপর ওয়ালার হাতে।”
বলেই ভিতরে ঢুকে যায় আদ্র।বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্র বের হলো ওটি থেকে।আদ্রকে দেখে রাজ এবার এগিয়ে আসে।রাজকে দেখ আদ্র বলে,”হি ইজ ফাইন বাট হি কান্ট মুভ।তার বাম পা এখন অচল।উনি হাঁটতে পারবেন না।”
সোনালী ভেঙ্গে পড়েছে।মালিনী এসে ধরে রেখেছে।সোনালী বলে,”আর কোনো উপায় কি নেই ওকে সুস্থ করার?”
“আছে।ওনাকে থেরাপির উপর রাখতে হবে।যতটুকু সমস্যা হয়েছে তাতে করে ওনার ব্যায়াম সঠিকভাবে করলে আর মেডিসিন রেগুলার টাইমলি চালাতে থাকলে রিকোভার করতে পারবেন উনি।”
সবাই একটু আশার আলো দেখলো।আদ্র কথাগুলো বলেই হাঁটতে শুরু করে।ওটির সামনে এক কোনায় দাঁড়িয়েছিলো হিয়া ও সিয়া।আদ্র হাঁটতে যেয়ে হঠাৎ করে সিয়ার বাহুর সাথে নিজের বাহুর ধাক্কা খায়।সিয়া আড় চোখে তাকালো আদ্রের দিকে।সিয়ার দিকে তাকিয়ে আদ্র বলে,”সরি।”
বলেই মিষ্টি হাসি দিয়ে চলে যায় আদ্র।
রাতে,
রাজ তার কাজ শেষ করে বাসায় আসে মাত্র।মায়া রাজকে দেখেও না দেখার মতো করে থাকে।নিজের মতো ল্যাপটপ নিয়ে ব্যাস্ত থাকে মায়া।মায়াকে দেখে রাজ বলে,”আমি কোথায় বউকে কাছে পাবো বলে কাজ শেষ করে লাফাতে লাফাতে চলে আসি। আর বউ আমার বাড়িতেও কাজ করতে থাকে।”
“দিন দিন বউ পাগল হয়ে যাচ্ছেন আপনি।”
“কি করবো বলো!বিয়ে করেও সতীত্ব রক্ষা করে রেখেছি আমি।না নিজের সতীত্ব হরণ হয়েছে আর না বউয়ের সতীত্ব হরণ করেছি।কয়টা বর পারে এমনভাবে চলতে?”
“একমাত্র মেহেরুন জাহান মায়ার বর পারে এমন চলতে।”
রাজ এবার মায়ার কাছে এসে বলে,”শুনো মায়াবতী!অনেক হয়েছে এই এই বউ রেখেও সতী স্বামী সেজে থাকা।এবার একটু এই মন্ত্রী মশাইকে অসতী করে দেও।”
“কথার কি শ্রী?”
“বউ কাছে থেকেও বউয়ের ভালোবাসা পাই না।এর থেকে তুমি কথার শ্রী দেখছো?”
“আপনার সাথে কথা বলা বেকার।কাজ করতে দিন আমাকে।নতুন মডেল দেখতে হবে।”
“কই দেখি আমাকেও দেখতে দেও তোমার নতুন নতুন হট মডেলদের।”
ক্ষেপে গেলো মায়া।মাথায় যেনো এখন বোমা ফাটিয়ে দিয়েছে রাজ।অবশ্য মায়াকে জেলাস করাতেই এমন বলেছে রাজ।কাজেও লেগেছে।রাজের কলার ধরে সোফায় রাজকে এলিয়ে দিয়ে বলে,”খুব শখ হয়েছে না ছোট ছোট ড্রেস পরা মেয়েদের দেখার?”
“তুমি চাইলে আমি ওদের জামা বড় করে দিয়ে দেখতে পারি।”
“শাট আপ।আপনার চোখকে লাগাম দিন।”
“তাহলে বউয়ের সতীত্ব হরণ করতে পারবো?”
“আপনি শুদ্রাবেন না তাই না?”
“আমি তো শুদ্রে আছি।এই যে বউ পেয়েও নিজেকে সেফ রেখেছি।”
বলেই মায়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসে রাজ।মায়ার কাছে আসতে না আসতেই রাজের ফোন ভাইব্রেট শুরু হয়।রেগে গিয়ে রাজ বলে,”এই ফোন কে আবিষ্কার করেছিলো যেনো?ধুর বউকে কাছে না পেলে কিছুই মনে পরে না।এর ভিতর আবার বাজতে শুরু করে মোবাইল।”
বলেই ফোন হাতে নিয়ে দেখতে পেলো পিয়াশের কল।ব্যালকনিতে যেয়ে রিসিভ করেই রাজ বলে,”হ্যা বলো আমার প্রেমের দুশমন। রিভেঞ্জ নিচ্ছো আগে রাতে কল করতাম বলে?আরে তখন তো তোমার বউকে কনফার্ম করতাম যে আমি মায়াবতীর খোঁজ নেওয়ার জন্য দিওয়ানা হয়ে আছি। যাতে মৌ এই সবকিছু মায়াবতীকে বলে দেয়।এটুকু তো তুমি জানোই।তাহলে আমার সুইট নাইটে কল করো কেনো?”
বেচারা পিয়াশ।কি করবে নিজেও কনফিউজড থাকে।বস কোনো কাজ দিলে তার খোঁজ দেরি করে দিলে বউয়ের থেকে রাখবে দূরে আবার এখন সাথে সাথে খোঁজ দিতে চায় তাও বস যায় রেগে।আসলে এই বস চায় কি?মাথা ঝেড়ে পিয়াশ বলে,”আসলে বস মায়া ম্যামের ফ্যাক্টরির আশেপাশে কিছু লোকজন ঘোরাঘুরি করছে।ইনফ্যাক্ট দুজন অচেনা ছেলে ম্যামের ফ্যাক্টরির কর্মরত মেয়েদের ফলো করে।এমন তথ্য মাত্র আমাকে দেওয়া হয়েছে।”
“এটাই স্বাভাবিক।মায়াবতীর ফ্যাক্টরিতে কম বয়সী গরীব মেয়েদের ছোট ছোট পোস্টে কর্মের জন্য নেওয়া হয়। আর ওদের দিকেই শকুনের নজর বেশি পরে।”
“এখন আমরা তো অফিস পর্যন্ত মেয়েদের সেফ রাখতে পারবো।এর বাইরে তো সম্ভব না।”
“অলিতে গলিতে এখন পুলিশের গার্ড বাড়িয়ে দেও।আমার দাদু আর নানু নারীদের রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবন শেষ করেছে।তখন আমি বিদেশে ছিলাম।কিন্তু এখন তার নাতি হয়ে আমি সবাইকে রক্ষা করবো আর আসামিদের শাস্তি দিবো।নিজের হাতে শাস্তি দিবো তাদের।আমার ভাই আমার মা আমার দাদু প্রত্যেকের খুনের শাস্তি আমি দিবো।”
শেষের কথাটা শুনে অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে মায়া।ওর দাদু আর মায়ের খুনের শাস্তি মানে?দাদুকে কেউ খুন করেছে?মা আবার কিভাবে মারা যায়?সে তো বাসায়। আর ভাইয়ের মৃত্যুর শাস্তি মানে তো মায়াও জড়িত।মায়া খুন করেছে নিজের অজান্তে তাজকে।তারমানে কি রাজ মায়াকে শাস্তি দিবে? আর এই জন্য কি ডিভোর্স পেপার নিয়ে কোনো কথা তোলেনি রাজ? আর ভাবতে পারছে না মায়া।মায়ার মাথা খালি ঘুরছে।রাজ যদি তাজের খুনিকে ধরে তারমানে সে ধরা পড়বে আর তাকেই রাজ কঠিন শাস্তি দিবে।
বাসায় এসে ফোন হাতে নিয়ে ফেইসবুকে ঢুকলো সিয়া। সার্চ অপশনে যেয়ে টাইপ করলো অহর্নিশ আদ্র লিখে।কয়েকটা আইডি পরই কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির আইডি খুঁজে পেলো সে।আইডিতে ঢুকেই পোস্টে ক্লিক করে আদ্রের বিভিন্ন পিক দেখতে থাকে সে।আদ্রকে দেখেই মনে ধরেছে সিয়ার।এখন তো সেও মেডিকেল ভর্তি হবে।তার শুধু একটাই চাওয়া।যেনো আদ্রের মেডিকেলটাতেই যেনো সে চান্স পায়।তাহলে আদ্রের জন্য সে কিছু চেষ্টা করবে। মানে আদ্রকে কিভাবে পটানো যায়।তার আগে তাকে জানতে হবে এই অহর্নিশ আদ্র সিঙ্গেল নাকি বিবাহিত।
রাতের খাবার নিয়ে হসপিটালে এসেছে হিয়া।বাবা কাকা ও রুদ্রের জন্য খাবার এনেছে।রাতে মোহন সরদারের সাথে মাহমুদ সরদার থাকতে চান।রুদ্র চেয়েছিলো থাকতে কিন্তু মাহমুদ সরদার থাকতে না করে দিয়েছে।এমনিতেও কাল তাকে রিলিজ করানো হবে। আর বাসায় পার্মানেন্ট নার্স রাখবে।যতদিন না মোহন সরদার সুস্থ হন।আদ্র সপ্তাহে সপ্তাহে যেয়ে মোহন সরদারকে দেখে আসবে নিজ দায়িত্বে।
খাবার নিয়ে হিয়া হসপিটালে পৌঁছেছে। রুদ্রের দিকে না তাকিয়ে সোজা মাহমুদ সরদারের দিকে চলে যায়।রুদ্র বিষয়টি দেখেও না দেখার মতো করে থাকলো।মাহমুদ সরদার খাবার বেড়ে তার ভাইকে খাইয়ে দিতে থাকেন আর নিজেও খান।রুদ্রকে খেতে বললে রুদ্র বলে,”আমি বাসায় যেয়ে খাবো।তোমরা খাও বড়বাবা।”
বাসায় যেয়ে খাওয়া মানে হিয়াকে আবার খাবার গরম করতে হবে।সার্ভেন্ট কি এত রাত জাগতে পারে?হিয়া এমনিতেও নিজের কাজ নিজে করে সার্ভেন্টদের কম কাজ করায়।ওর মতে প্রত্যেক মানুষের কষ্ট আছে।সার্ভেন্ট টাকার বিনিময়ে কাজ করলেও ওদের খাওয়া ঘুম সময়মত করা উচিত। যারা টাইম মেইনটেইন করে চলে না ওদের জন্য রাত জেগে আবার সকালে বড়দের জন্য কষ্ট করে রান্না করা এতে করে ওদের শারীরিক কষ্ট দেওয়া ছাড়া কিছুই না।মাহমুদ সরদার এই সবকিছু সিয়া ও হিয়াকে শিখিয়েছেন।তিনি বলেন,”গরিবরাও মানুষ।আমরা আমাদের মতো বিলাসিতা করি মানে এই না যে তাদেরকে এসবের জন্য ঘুম কামাই দিয়ে রাত জাগিয়ে রেখে দিবো।তার থেকে আমরা একটি নির্দিষ্ট সময় দিয়ে তাদের কাজ করাবো এবং নিজেদের সাধ্য মতো নিজেরা কিছু করবো।ওদেরকেও বিশ্রাম করার সুযোগ করে দেওয়া উচিত।”
বাবার কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তার সন্তানেরা। কথায় আছে যেমন শিক্ষা দিয়ে বড় করা তেমন ফলাফল লাভ করা হয়।মাহমুদ সরদার ঠিক তেমনটাই পেয়েছেন। আর মোহন সরদার উনি ওনার কর্মের ফল পাচ্ছেন।
আজ মোহন সরদারের আফসোস হচ্ছে তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে।তার মোহনা তো অনেক ভালো আর বুদ্ধিমত্তা ছিলো।সেও যদি মোহনাকে এভাবে বুঝিয়ে বুঝিয়ে বড় করতো তাহলে আজ তার ব্যাবসা বাণিজ্য মোহনা আর সে দেখতো।সবকিছু নিজের হাতে শেষ করে দিলেন তিনি।মাহমুদ সরদারের হাতে খাবার খেতে খেতেই কান্না করে দিলেন নিজের লোভ লালসা আর হিংসার জন্য।তবে এবার তিনি কঠোর হবেন।রুদ্রকে তার ব্যাবসা বাণিজ্য দেখার জন্য জোর করবেন। আর কত এভাবে রাত বিরাতে বাইরে বাইরে পার্টি আর ফুর্তি করবে?বয়স তো কম না তার।
চলবে…?