মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব-৪৪+৪৫+৪৬

0
15

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৪৪
#ইশরাত_জাহান
🦋
ক্ষিপ্ত হয়ে বসে আছে সোনালী।মায়াকে একটা শিক্ষা দিতে মন চাচ্ছে তার।এই মায়া অনেক বার বেড়েছে।আজকে তার হাত মুচড়ে দিলো।ওকে তো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করবে সে।কিছু একটা ভেবে কাউকে কল দিলো।

রাতে খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই। মোহন সরদারকে ধরে ধরে সিড়ি দিয়ে নিচে আসছে আয়রা।ব্যালেন্স হারা হয়ে আয়রার গায়ের উপর ঝুঁকে যায় মোহন সরদার।রুদ্র এক টুকরো শসা গালে দিচ্ছিলো।বাবার এমন দৃশ্য দেখে হাত থেকে শসা পড়ে যায়।হা হয়ে তাকিয়ে দেখছে সবাই।রাজ নিজেও সেদিকে তাকিয়ে আছে।পাশে থাকা মাহমুদ সরদারকে দেখে রাজ হালকা হেসে নেয়।মাহমুদ সরদারের চোখের সামনে হাত রেখে বলে,”বুড়ো হয়েছো তো বাবা।এভাবে ভাইয়ের ইউনিক লাভ সীন দেখেতে হয় না।হিংসা হবে তো তোমার।”

রাজের হাত ঝাড়া দিয়ে মাহমুদ সরদার বলেন,”এই বয়সে এসে বাবার হাতে মার খেতে না চাইলে চুপ থাকবে।”

“ছিঃ বাবা পঁচা কথা।এই বয়সে আমি তোমার হাতে মার খাবো কেনো?এখন তো তোমার নাতি নাতনিকে মার দিবে।”

“বেশরম ছেলে আমার কপালেই জুটলো।”

সিয়া হিয়া আর মিলিও তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।হিয়ার পাশে রুদ্র ছিলো।হিয়ার কানে ফিসফিস করে রুদ্র বলে,”হা করে হবু শ্বশুরের প্রেম দেখছিস কেনো।পাশে তো আমি আছি।”

“শাট আপ রুদ্র ভাই।আপনি একজন নির্লজ্জ।বাবাকে নিয়ে এমন বলে?”

“বাবা করবে লীলাখেলা আমি বললে দোষ!”

সোনালী এসে আয়রাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে মোহন সরদারকে নিয়ে আসে।মালিনী এসব আর সহ্য করতে পারছে না।সংসার পুরো উচ্ছন্নে গেছে।নিরিবিলি পরিবেশ ছিলো তার।এখন কি শুরু হলো।এই মায়া আসাতে এত সমস্যা বাড়ছে।এমন ধারণা তার মস্তিষ্কে।এমনিতেও তিনি সোনালীকে পছন্দ করে না। কারো ঘর ভেঙ্গে তার জায়গা নেওয়াটা কোনো ভালো মেয়েদের পরিচয় না।তারপরও এখন সে এই পরিবারের বউ তাই সম্মানটা দেয়।

সবার খাওয়া দাওয়ার মাঝে হিয়া বলে,”বাবা আমি বাইরের ভার্সিটিতে ভর্তি হতে চাই। ঢাকায় পড়ালেখা করতে চাই না।”

রুদ্র থেমে যায়।ফট করে সোনালী বলে,”ঢাকা তে তো উন্নত ভার্সিটি আছে।শুধু শুধু বাইরে কেনো যাবে?”

“আসলে কাকিয়া আমি ভাইয়ার মত বাইরের জগৎ সম্পর্কে আইডিয়া নিতে চাই।”

এবার মাহমুদ সরদার বলেন,”ঠিক আছে।বাইরে বলতে ঠিক কোন জায়গায় যেতে চাও?”

“আপাতত আমি চট্টগ্রামে যেতে চাই। ওখানের ভার্সিটিতে পড়াশোনা করার ইচ্ছা আছে।”

“মানুষ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসে।তুমি ঢাকা থেকে উল্টো চট্টগ্রাম যেতে চাও কেনো?”
প্রশ্ন করেন মালিনী।

হিয়া উত্তর দেয়,”আসলে মা একটু বাইরের পরিবেশ জানতে ইচ্ছা করছে। আর সমস্যা নেই আমার যদি ভালো না লাগে আমিতো এখানে ট্রান্সফার হতে পারবো।”

মাহমুদ সরদার মেয়ের কথায় রাজি হয়ে বলেন,”আচ্ছা তুমি যেটা ভালো মনে করো।”

খাবার শেষ করে রুমে এসে বসে মায়া।রাজকে উদ্দেশ্য করে বলে,”হিয়াকে একটু আপসেট দেখালো মনে হলো।”

“প্রিয় মানুষদের থেকে দূরে থাকাটা তো কষ্টের মায়াবতী।আমার বোন তো তাও চেষ্টা করছে।”

মায়া তাকালো রাজের দিকে।রাজ হাসছে।মায়া বলে,”তুমি জানো সবকিছু!তাহলে বাধা দিচ্ছ না কেনো?”

“কি বলোতো মায়াবতী!আমার বোনেরা অনেক স্ট্রং।ওরা ওদের ভালোটা এমনি বুঝতে পারে।মাথা ঠাণ্ডা রেখে দুঃখগুলো লুকিয়ে রাখতে পারে তারা।আমাকে কিছু করতে হয় না।”

বলতে না বলতেই রাজের ফোনে কল আসে।রিসিভ করতেই পিয়াশ বলে,”রিমু সহ আরো দুজন মেয়েকে ধরে নিয়ে গেছে ওরা বস।ওদেরকে ফলো করছি আমরা।”

“লোকেশন অন রাখো আমি আসছি।”
বলেই ড্রয়ার থেকে গুলি নিয়ে দাদা পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকিয়ে নিলো রাজ।মায়াকে কিছু বলতে না দিয়ে চলে গেলো।

লাইব্রেরী থেকে উঠে রুমের দিকে যাচ্ছে হিয়া।বই পড়া শেষ।রুমের দরজা খুলতে যাবে ওমনি হেঁচকা টানে হিয়াকে ছাদে নিয়ে আসে রুদ্র।ছাদে এসেই ছাদের দরজা লাগিয়ে দেয়।হিয়া চিল্লিয়ে বলে,”এটা কেমন অসভ্যতা রুদ্র ভাই?আমাকে ছাড়ুন আমি…”

আর কিছু বলতে পারলো না হিয়া।রুদ্র পকেট থেকে গুলি বেড় করে হিয়ার মাথায় তাক করে বলে,”আর একটা কথা বলবি তো আমার থেকে পালানোর শখ মিটিয়ে দিবো।”

হিয়া ভয় পেয়ে যায়।চশমাটা একটু ঠিক করে বলে,”আ আমাকে যেতে দিন প্লিজ।”

“কেনো পালাই পালাই করিস?”

“পালানোর কি আছে?আমি আমার সপ্ন পূরণ করতে চাই।”

“তোর কোনো সপ্ন নেই হিয়াপাখি। মিথ্যা বলবি না একদম।”

হিয়া চুপ করে আছে।চোখ থেকে টুপটুপ করে পড়ছে পানি।চোখের পানিগুলো মুছে দিলো রুদ্র।হিয়ার হাত ধরে নিয়ে গেলো ছাদে থাকা দোলনার দিকে।দোলনায় হিয়াকে বসিয়ে দিয়ে হিয়ার কোলে মাথা গুঁজে দেয় রুদ্র।হিয়া বলে,”এখন অনেক রাত।আমাদের ঘরে যেয়ে ঘুমানো উচিত।”
গুলির ভয়তে ভালো ভালো কথা বলে ভুলিয়ে দিচ্ছে হিয়া।

“ঘুমাবো তো আমি।কিন্তু ঘরে না এখানে।”

“কিঃ!”

“হুম।বিরক্ত করবি না আমাকে।তাহলে তোকে মেরে তোর ভাইয়ের হাতে খুন হবো আমি।”

চুপ হয়ে যায় হিয়া।কথা বাড়ায় না আর।এই রুদ্র আসলেই পাগল।এখন তো আবার গুলি দেখালো।চুপ করে রুদ্রের কথা শুনতে হবে তাকে।নাহলে বাড়াবাড়ি করে দিবে রুদ্র।হিয়ার হাত নিজের মাথায় নিয়ে রুদ্র বলে,”আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দে।আমি ঘুমাবো একদম চালাকি করবি না।”

মুখ ভেংচি দিয়ে রুদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে হিয়া।

শুনশান নীরব রাস্তা।রাস্তার দুইপাশে জঙ্গল।পুরো অন্ধকার রাস্তাটা। প্রায় গ্রাম্য এলাকা।গাড়িতে বেধে রাখা হয়েছে পাঁচজন পুরুষকে।একপাশে দাড়িয়ে একে অপরকে জড়িয়ে আছে রিমু ও বাকি মেয়েরা।রাজ এসেছে মাত্র।এখন বেধে রাখা লোকগুলোকে রাস্তায় হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হলো।ওদের মুখ ও হাত পা বাঁধা।ওদের একেকজনকে দেখে রাজ বলে,”কে তোদের লিডার?”

সবাই তাকিয়ে আছে।রাজ আবার বলে,”কার আদেশে এগুলো করিস নাম বল।”

বলেই পিয়াশকে ইশারা করে রাজ। পিয়াশ একজনের মুখ খুলে দেয়।সে বলে,”আমরা জানি না সে কে।সে আমাদের সামনে মুখ বেঁধে আসে।তার চেহারা আমরা দেখতে পারি না।তবে যে আমাদের ইনস্ট্রাকশন দেয় সে আসল না।সেও কারো ইনস্ট্রাকশন মেনে চলে।”

“তারমানে তোরা ছোটখাটো চামচা তাই তো।তাহলে তোদের বাঁচিয়ে রেখে লাভ নেই।”
বলেই একেক করে শুট করতে থাকে রাজ।তিনজনকে শুট করার পর বাকি দুজনকে পিছন থেকে কেউ শুট করে দেয়।এবারও রাজ আর পিছনে তাকালো না।জানে কে আছে পিছনে।

মায়া আলতো হেসে বলে,”মায়া এতটাও কাচা খিলাড়ি না মন্ত্রী মশাই।মায়া তার উদ্দেশ্য সঠিকভাবে পালন করে।কেনো বারবার মায়াবতীকে রক্তবতী হওয়া থেকে দূরে রাখো তুমি?”

পিছনে তাকিয়ে মায়ার কাছে এসে রাজ বলে,”বউকে রক্ষা করা বরের আইনত অধিকার মায়াবতী।ভেবেছিলাম রাতে বাড়ি ফিরে জমিয়ে প্রেম করবো তাই তোমাকে রক্তবতী হতে দেইনি।রক্ত নিয়ে কি বউয়ের সাথে প্রেম করা যায়?কিন্তু আমার ভাগ্যটাই খারাপ।বউয়ের সাথে সুইট মোমেন্ট আসেই না।ভাবছি শালাগুলোকে একবারে শেষ করে তোমাকে নিয়ে দূরে হারিয়ে যাবো।একবারে বান্ডিল ভরা বাচ্চা নিয়ে হাজির হব।কি বলো আইডিয়া কেমন, পিয়ু বেবী?”

বেচারা পিয়াশ মনে মনে বলে,”ব্যাটা নিজে ফাসবি ভালো কথা।আমাকে কেনো ফাসাবি?”

পিয়াশের উত্তর না পেয়ে রাজ বলে,”কি হলো পিয়ু বেবী!কথা বলো না কেনো?”

“জি বস আপনি ঠিক।”

“দেখেছো মায়াবতী তুমি আর বাবা ছাড়া সবাই আমাকে বুঝে। যাই হোক চলো এবার প্রেমের রাজ্যে পারি দেই।”

বলেই মায়াকে নিয়ে চলে যেতে নেয় রাজ। পিয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে,”মেয়েগুলোকে ওদের বাসায় সেফলি পাঠিয়ে দেও।”
বলেই গাড়িতে ওঠে মায়া ও রাজ।

অন্ধকার ঘরে পিটপিট পায়ে হাঁটছে আয়রা।উদ্দেশ্য তার মোহন সরদারের রুমে যাওয়া।মোহন সরদারের ঘরে ঢুকে দেখতে পায় সোনালী ও মোহন সরদার দুজনে ঘুমে বিভোর। আয়রা একটা ইনজেকশন নিয়ে পুশ করে মোহন সরদারের হাতে।তারপর বেড়িয়ে এসে কল করে বলে,”আমার কাজ কমপ্লিট স্যার।মোহন সরদার এত তাড়াতাড়ি রিকোভার করবে না।”

ওপাশ থেকে স্মিত হাসে আদ্র।বলে,”গুড এটাই তো চাই।তোমার অ্যাকাউন্ট চেক করো।”
বলেই কল কেটে দেয় আদ্র।

*****
সকালে মোহন সরদারের পায়ের ব্যাথা যেনো বেড়েই চলেছে।সবাই জড়ো হয়েছে সেখানে। আয়রাকে প্রশ্ন করা হলে সে বলে,”হয়তো রাতে ওনার ওয়াইফের ধাক্কা লেগে বা ভারে এমন হয়েছে।এই সময় সামান্য ভার ওনার উপর দেওয়া যাবে না।সেখানে তো রাতে ওনার সাথে ওনার বউ থাকে।”

সোনালী তেড়ে এসে বলে,”আমার বরের সাথে আমি থাকবো না তো কি তুমি থাকবে মেয়ে?”

রাজ লাজুক ভঙ্গিতে বলে,”এভাবে ছেলে মেয়েদের সামনে সতীন সতীন খেলতে নেই কাকিয়া।আমার বউ সহ বোনেরা এগুলো শিখতে থাকবে তো।”

মুখ টিপে হাসতে থাকে সিয়া আর হিয়া।মোহন সরদারের চিল্লানিতে ঘুম ভেংগে যায় রুদ্রের।ছাদ থেকে সোজা এই রুমেই চলে আসে তারা।রুদ্র বলে,”লিসেন মম ড্যাডকে এখন নার্স ভালো ট্রিটমেন্ট করবে।শুধু শুধু নিজেকে কেনো থার্ড পারসন বানিয়ে ঝামেলা করছো?”

“হোয়াট!আমি তোমার ড্যাড আর এই নার্সের ভিতরে থার্ড পারসন?”

“বলি কোনদিকে যাও কোনদিকে?আমি বলেছি ট্রিটমেন্টের নজরে।তুমি তো যাচ্ছো অন্য দিকে।”

এবার রাজ বলে ওঠে,”আচ্ছা কাকিয়া তোমার সমস্যাটা ঠিক কোথায়?তুমি কি চাও না তোমার স্বামী সুস্থ হোক?”

“অবশ্যই চাই।”

“তাহলে নার্সকেই বুঝতে দেও ব্যাপারটা।”

“এই মেয়ে নার্স কম জ্বালা বেশি।”

“সতীনের নজরে দেখা বন্ধ করো।দেখবে জ্বালা মনে হবে না।”

মাহমুদ সরদার চোখ রাঙিয়ে বলেন,”বাচ্চারা তোমাদের কাজে যাও। আর আয়রা যেহেতু নার্স ও এখানে যা বলবে ওটা মানতে হবে।না করবেনা সোনালী।”
বলেই চলে যান মাহমুদ সরদার।সবাই যে যার কাজে যায়।মায়া বেড় হতে নিলে তার চোখ গেলো মালিনীর দিকে।মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে মায়ার প্রতি বিরক্ত।কিন্তু কিছু না বলে মায়া বেড় হয়ে আসে।মালিনী মায়াকে পছন্দ না করলেও খারাপ কিছু এখনও বলেনি বা করেনি।

ল্যাপটপে বিভিন্ন কলেজ সম্পর্কে ঘাটাঘাটি করছে হিয়া।উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া।হঠাৎ কেউ ল্যাপটপটা ঠুষ করে বন্ধ করে দেয়।হিয়ার ধারণা ছিলো এটা রুদ্র।কিছুটা রাগের সাথে পিছনে তাকালো হিয়া।না এখানে রুদ্র না এখানে আছে মায়া।মায়াকে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসলো হিয়া।

চলবে…?

#মায়াবতীর_ইচ্ছামায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৪৫
#ইশরাত_জাহান
🦋
কিছু বলবে ভাবী?”

হিয়ার পাশে বসলো মায়া।হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”এভাবে নিজ পরিবার থেকে পালিয়ে যেতে নেই হিয়া।যাকে সহ্য করতে পারো না তার মুখোশ টেনে বেড় করো।”

“দিতেই তো চেয়েছিলাম।কিন্তু উপায় তো পাচ্ছি না।”

“আমি হেল্প করব?”

“পারবে তুমি?ওই নষ্ট পুরুষের মুখোশ সবার সামনে আনতে।ওর নষ্টামি দূর করতে।”

“হুম পারবো।তবে আমার কাজগুলোর সাক্ষী থাকতে হবে তোমাকে। আর এখান থেকে তোমাকে যেতে হবে না।এমনি ট্যুর দিয়ে এসো তারপর নাহয় ক্লাস করলে।”

“ওকে।”

মায়া ও হিয়া মিলে কিছু প্ল্যান করে নিলো।তারপর দুজনে খাবার টেবিলে গেলো।সকালের খাবার খেতে হবে।সবাই নাস্তা করতে থাকে তখন মোহন সরদার বলেন,”আমি চাই আমাদের ব্যাবসাটা এবার রুদ্র দেখুক।”

রুদ্র হেয়ালি করে বলে,”নট ইন্টারেস্টেড ড্যাড।”

ক্ষিপ্ত হন মোহন সরদার।রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলেন,”তোমার বাবার অবস্থাটা একবার দেখো।সে নড়াচড়া করতে অক্ষম।তোমার একটা বোন আছে মা আছে।তাদেরকে দেখতে হবে।নিজের কথা না ভাবো পরিবার নিয়ে তো ভাবতে পারো।”

“বড় বাবা আছে বিগ ব্রো আছে এই ফ্যামিলির জন্য।আমি এখনও এসবের জন্য প্রস্তুত নই। আর এসব ব্যাবসা আমার কর্ম না।আমার দ্বারা যেটা সম্ভব আমি সেটাই করব।”

টেবিলের উপর করে হাত রেখে শব্দ করে মোহন সরদার বলেন,”তোমার মতো অকর্মা তো খালি বসে বসে অন্য ধ্বংস করে।কোন কাজে আসো তুমি আমার?বাবা মা আর ছোট বোন আছে তার দিকে তাকাও না।বিয়ে করে বউকে কি খাওয়াবে?বয়স তো কম না তোমার।”

“আমার বিয়ে হোক তখন আমি বুঝব। আর তাকে খাওয়ানোর চিন্তা আমি তখন করব।”

বলেই হিয়ার দিকে তাকালো রুদ্র।হিয়া দেখলো এই চাহনি।তারেক এসেছে এখন।মায়া ডেকেছে তাকে।তারেককে দেখে মিলি উঠে দাড়ায়।তারপর তারেকের জন্য সে খাবার সার্ভ করে।তারেক বলে,”আমি খেয়ে এসেছি।এখন লাগবে না।”

সবাই তাকিয়ে দেখতে থাকে।মায়ার কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে আছে।মিলির চোখ মুখে আনন্দের ছাপ।তারেককে দেখে তার ভিতর সুখের উজ্জ্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে।মায়া সেদিকে তাকিয়ে রাজের কানে কানে বলে,”মিলি ইজ ইন লাভ।”

রাজ ভ্রু কুঁচকে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”কাকে?”

“টু মাই অ্যাসিসট্যান্ট।”

এবার রাজ তাকালো মিলির দিকে।মিলি তারেককে বলে,”আমাদের বাসায় কেউ এসে এভাবে খালি মুখে থাকে না।এটা আমাদের ভদ্রতা। আর মেহমান হয়ে আমাদের দেওয়া নাস্তা খাওয়াটা মেহমানের ভদ্রতা।”

বলেই মিলি চোখের ইশারায় দেখিয়ে দেয়।তারেক নিলো প্লেট।রাজ এবার মায়ার কানে কানে বলে,”সামথিং ইজ ফিশি।”

“এটা পিওর লাভ মন্ত্রী মশাই।আমি মিলির চোখে তারেকের প্রতি এই ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি।আমার ব্যাক্তি জীবনে কাটানো অভিজ্ঞতা দিয়ে বলতে পারি মিলি কোনো ছলনা করছে না।”

“তাহলে ওদের বিয়ে দিতে বলছো?”

“তারেক কি চাইবে ওকে বিয়ে করতে?ওর একটা অতীত আছে।যেখানে ও ওর ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছে।খুব বাজে ভাবে হারিয়েছে।সেদিক থেকে ওর মনে দ্বিতীয় নারী আসবে কি না এটা ওর কাছেই শুনতে হবে।”

“যদি ওরা দুজন দুজনকে ভালোবেসে সুখে থাকতে চায় তাহলে কাকাইকে বলে দেখবো।”

“আমার মনে হয় না মানবে উনি।”

“ভাগ্যের উপরে ছেড়ে দেও।আগে ওরা নিজেদের ভালোবাসা একে অপরকে ভালোভাবে প্রকাশ করুক তারপর।”

আয়রা এসে মোহন সরদারকে খাইয়ে দিতে থাকে।সোনালী সেদিক তাকিয়ে বলে,”নার্স হলে কি অন্যের বরকে খাইয়ে দিতে হয়?”

“আর ইউ জেলাস মিসেস সোনালী?”

প্রশ্ন করে আয়রা।সোনালী হকচকিয়ে যায়।সবাই মিটিমিটি হাসতে থাকে।মাহমুদ সরদারের এবার মনে হচ্ছে এই বাড়ির একেক জনের একেক বৈশিষ্ট্য আছে।ছেলে দুটো লাগামহীন হয়েছে।মনে যা আসে ঝরঝর করে বলে দেয়।বউমা পেয়েছে রক্তবতী।ভাই তো হয়েছে বুড়ো বয়সেও নারীবাজি।ভাইয়ের বউ কম না।এখন আবার এই নার্স।শুধু তার জীবনটাই এসব দেখতে দেখতে কোনো রকমে কেটে যাচ্ছে।

বেশ রাত করে বাসায় ফিরেছে রুদ্র।রাজ আজ বাইরে।ওর নিজস্ব কাজে ব্যাস্ত।রুদ্রকে দেখে মায়া আসে রুদ্রের সামনে।মায়াকে দেখে রুদ্র বলে,”কি ব্যাপার ভাবী জি!আজ আমার সামনে?”

দুই হাত ভাঁজ করে মায়া বলে,”কেনো আসতে পারি না?দেবরের ভালো মন্দ জানতে চাইতে পারি না?”

“তা অবশ্য পারো।কিসের খোঁজ নিতে চাও বলো।”

মায়া এবার একটা বোতল দেখিয়ে বলে,”লেটস ইনজয় দ্যা ড্রিংক?”

“শিওর আই লাভ ইট।লেটস গো।”

বলেই মিটিং রুমে এসে বসে রুদ্র।মায়া নিজেও এসেছে সেখানে।দুটো বোতলে ড্রিংক ঢেলে মায়া একটা গ্লাস এগিয়ে দেয় রুদ্রের দিকে।রুদ্র এক ঢোকে গিলে ফেলে ড্রিংক।মায়া সেদিকে তাকিয়ে ডেভিল হাসি দেয়।নিজের হাতের ড্রিংক সেভাবেই রেখে দেয়।রুদ্র ড্রিংক শেষ করে মাথা ঝাকিয়ে নেয়।মায়া বলে,”আরো নিবে?”

“ইয়াহ।”
মায়া আবারও দিলো রুদ্রকে।এভাবে আরো কয়েক গ্লাস ড্রিংক করার পর রুদ্র পুরো নেশাক্ত হয়ে উঠেছে।দুলে দুলে পড়ছে রুদ্র।মায়া রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে,”তো আজকে কোথায় গিয়েছিলে?”

রুদ্র হো হো করে হাসতে থাকে।নেশা ধরে গেছে তার।কিছুক্ষণ হেসে রুদ্র বলে,”আমি তো বারে ছিলাম।কচি কচি জামা পরা মেয়েদের দেখছিলাম।”

“হিয়াকে ভালোবাসো?”

“নো আমি বাসিনা ভালো।ওটা তো একটা ট্র্যাপ।হিয়াকে ফাঁসিয়ে এই সম্পত্তি নেওয়া।”

মায়া এবার তাকালো দরজার দিকে।ওখানে হিয়া আছে। আরি পেতে আছে হিয়া।হিডেন ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করা হচ্ছে।রুদ্রের মুখে এমন কথা শুনে কান্না আসতে থাকে হিয়ার।মিথ্যা এক লোকের প্রতি ভালোবাসা জন্মেছে তার মনে।হিয়া ঠোঁট চেপে ফুফিয়ে কান্না করতে থাকে।মায়া এটা দেখে নিজেই দুর্বল হয়।হিয়ার ভালোবাসা একদম শুদ্ধ।এখানে কোনো ভেজাল নেই।একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের দুঃখ সহ্য হয় না মায়ার।রুদ্রকে প্রশ্ন করে,”কেনো মিথ্যা অভিনয় করো ওর সাথে?”

“মম চায় তাই।লিসেন জারা ব্যার্থ ব্রোকে ফাঁসাতে।বাট আমি নই।আমি তো হিয়াপাখিকে আমার করে আলিশান বাড়িতে রাজত্ব করব।”

বলেই হাসতে থাকে রুদ্র।মায়া আর কিছু না বলে বেড়িয়ে আসে।হিয়ার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে হিয়াকে নিজের ঘরে নিয়ে আসে মায়া।রাজ নেই তাই আজকে রাত হিয়াকে কাছে রাখবে মায়া।হিয়ার কষ্টগুলো সহ্য করতে পারছে না।সেও যে তার মন্ত্রী মশাইয়ের প্রতি এমন ভাবেই দুর্বল।

সকালবেলা রাজ আসে বাড়িতে।ঘরে এসে বউ আর বোনকে একসাথে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে খুশি হয়।গায়ে লেপ্টে থাকা রক্ত পরিষ্কার করতে হবে এখন তার।সাদা পাঞ্জাবিতে তাজা রক্ত লেগে আছে।এই রক্ত কাউকে খুন করে এসেছে রাজ।নারী পাচার করতে আরো দুজন লোক পাঠানো হয়েছিলো।যাদের ধরতে পেরেছে রাজের লোক।রাতের আধারে লোকজনের অগোচরে ওদের শেষ করে দিচ্ছে।সবার সামনে প্রকাশ্যে খুন করলে শত্রুরা এলার্ট হবে।তাই রাজ চায় না এখন কেউ জানুক যে দেশে নারী পাচারকারী বৃদ্ধি পাচ্ছে।যেই যেই জায়গা রিস্কে আছে সেই জায়গাগুলো রাজ কড়া গার্ড দিয়ে রাখছে।বস্তি এলাকাগুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছে।

ওয়াশরুমের শব্দে চোখ মেলে তাকালো মায়া।রাজ এসেছে বোঝা যাচ্ছে।মায়ার কোলে হিয়ার হাত আছে।মায়া উঠতেই হিয়া উঠে পড়ে।চোখ ডলতে থাকে হিয়া।মায়া বলে,”তোমার ভাই এসেছে।”

হামি তুলতে তুলতে হিয়া বলে,”আচ্ছা ভাবী।আমি তাহলে যাই ফ্রেশ হতে হবে।”

“হ্যাঁ যাও। আর কালকের বিষয় নিয়ে দুঃখ পাবে না।একদম স্ট্রং থাকবে।”

“হুম।”

বলেই বেড় হয় হিয়া।রাজ ফ্রেশ হয়ে বেড় হতেই দেখলো মায়া উঠেছে আর হিয়া নেই।মায়ার কাছে এসে মায়ার ওষ্ঠে ভালোবাসা দিয়ে রাজ বলে,”মর্নিং সুইট আদায় করে নিলাম।অনুমতির কথা ভুলেও বলবে না।এটা আমার হক।”

মায়া আলতো হেসে বলে,”আসল আসামি কে মন্ত্রী মশাই?কারা এসব করছে?”

“সময় হলে জানতে পারবো।শুধু এমনভাবে ওদেরকে হারাতে হবে যাতে শত্রু নিজে এসে ধরা দেয়।”

“তোমার কথায় আমি চুপ আছি।”

“আই নো মায়াবতী।সবকিছুই হবে।তবে একটু সময় লাগবে।আচ্ছা চলো ফ্রেশ হবে।বউকে নিয়ে সকালের বাথরুম বিলাস করব।”

ভ্রু কুঁচকে মায়া বলে,”বাথরুম বিলাস?”

“হুম বাথরুম বিলাস।চাঁদের সামনে দাড়ালে চন্দ্রবিলাস হয় বৃষ্টিতে ভিজলে বৃষ্টিবিলাস হয় রোদের ভিতর দাড়ালে রৌদ্র বিলাস হয় তাহলে বাথরুমে শাওয়ার নিলে কেনো বাথরুম বিলাস হবে না?”

“ওহ মন্ত্রী মশাই তুমিও না।”
বলেই হেসে দেয় মায়া।রাজ মায়াকে কোলে নিয়ে চলে যায় বাথরুম বিলাসে।

হলরুমে সবাইকে এক করেছে মায়া।সবাই এসে হাজির সেখানে।মাহমুদ সরদার এবার মায়াকে বলেন,”কি হয়েছে মা?আমাদের এক করলে হঠাৎ?”

“আপনাদের কিছু দেখাবো। এই পরিবারে রুপধারি কিছু লোক আছে।ওদের মুখোশ খোলার সময় হয়েছে।”

অবাক হয় সবাই।হিয়া এগিয়ে এসে একটি পেনড্রাইভ দিলো মায়ার হাতে।মায়া ওটা অন করতে যাবে ওমনি সদর দরজা দিয়ে একটি মেয়ে ঢুকে বলে,”আমি আমার অন্যায়ের বিচার চাই।”

সবাই অবাক হয়ে তাহলে দরজার দিকে।হিয়া তাকালো মায়ার দিকে।মায়ার কাছে এসে বলে,”এই মেয়েটা কে ভাবী?”

“আমি নিজেও জানি না।”

মেয়েটি সবার সামনে এসে বলে,”আপনাদের বাড়ির ছেলে আমাকে চিট করেছে।আমার সাথে প্রেমের অভিনয় করে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।আমি এর বিচার চাই।”

মাহমুদ সরদার মেয়েটির কাছে এসে বলে,”তুমি কার কথা বলছো?”

মেয়েটি তাকালো রাজের দিকে।তারপর বলে,”কেনো এই বাড়ির কোন ছেলে আমাকে চিট করবে বলে আপনার মনে হয়?নিজের ছেলের প্রতিও বুঝি বিশ্বাস নেই আংকেল!”

মেয়েটির দিকে এগিয়ে এলো মায়া।মেয়েটির হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে বলে,”কথা না পেচিয়ে বলো কার কথা বলছো তুমি?”

ফিচেল হেসে মেয়েটি বলে,”সাবধানে কথা বলো আমার সাথে।আমি প্রেগনেন্ট।এই সময় এভাবে হুট হাট টান লাগলে আমার আর আমার বেবীর সমস্যা হবে।”

অবাক হলো বাসার সবাই।এই মেয়ে হঠাৎ করে এসে বলছে যে সে প্রেগনেন্ট।

চলবে…?

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৪৬
#ইশরাত_জাহান
🦋
সবাই এদিক ওদিক তাকাতে থাকে।তখনই মেয়েটি বলে,”আপনাদের বাড়ির ছোট ছেলে রৌদ্রদ্বীপ রুদ্রের সন্তানের মা হতে চলেছি আমি।”

বুকের ভিতর মোচড় দিলো হিয়ার। হ্যাঁ সে চেয়েছিলো রুদ্রের আসল রূপ সবার সামনে প্রকাশ করতে কিন্তু ভালোবাসার মানুষ আজ অন্য কারো।ঘৃণা এক জিনিস আর ভালোবাসার মানুষকে অন্যের পাশে দেখা আরেক জিনিস।হিয়া পিছিয়ে যেতে নেয়।মায়া তাকালো হিয়ার দিকে।সাথে সাথে এসে হিয়াকে আকড়ে নেয় মায়া।রাজ হাত মুঠ করে নিলো।বোনের দুঃখ সহ্য হচ্ছে তার নিজেরও।কিছু করার আগে মাহমুদ সরদারের দিকে তাকালো।বাবার চোখের ইশারা পেয়ে চুপ থাকলো রাজ।

সোনালী এগিয়ে এলো মেয়েটির দিকে।বলে,”এই মেয়ে উল্টা পাল্টা কথা বলবে না।কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে?”

মেয়েটি এবার সোনালীর দিকে ঘুরে বলে,”প্রথমত আমার নাম জেসি। আর দ্বিতীয়ত আমি প্রমাণ ছাড়া চলি না।আমাদের প্রত্যেকটা মোমেন্টের ছবি আছে আমার কাছে।চাইলে দিতে পারি।”

মোহন সরদার তাকালো রুদ্রের দিকে।রুদ্র নিশ্চুপ।কোনো কথা বলছে না সে।মোহন সরদার সেদিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি না হিয়াকে ভালোবাসো?বলেছিলে তো ওকে বিয়ে করবে।তোমার মাও এই কথাটি বলেছিলো।তাহলে আজ এই মেয়ে কোথা থেকে উদয় হলো?”

রুদ্র কোনো উত্তর দিলো না।জেসি একটি কাগজ এগিয়ে দিলো সোনালীর দিকে।বলে,”এখানে আমার প্রেগনেন্সি রিপোর্ট আর আমার সাথে রুদ্রর কিছু পিক আছে। আশা করি এগুলো দেখে স্বীকার করতে অসুবিধা হবে না।”

ছবি আর রিপোর্টগুলো দেখতে থাকে বাড়ির সবাই।মালিনী ঘুরে তাকালো সোনালীর দিকে।সোনালী হতবম্ব হয়ে আছে।মাহমুদ সরদার এবার রুদ্রের কাছে এসে বলেন,”এগুলো করার আগে আমাদের কথা ভাবলে না?তোমার বাবা তো আমাদের মুখে চুনকালি দিয়েই রেখেছে এবার তুমি।এই বংশের সম্মানটা ধুলোয় মিশিয়ে দিলে বাবা।”

রুদ্র তাকালো মাহমুদ সরদারের দিকে।মাহমুদ সরদারের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারবে না রুদ্র।হাজার হোক মাহমুদ সরদারকে অনেক ভালোবাসে রুদ্র।তিনি ছোট থেকেই রুদ্রকে আদর যত্ন করেছে।রুদ্র মাথা নিচু করে আছে।মায়া এবার জেসির কাছে এসে বলে,”কি চাও তুমি?”

“আমার সন্তানের পরিচয়।যেটা আমাকে আপনারা দিতে পারবেন।”

“যার সন্তান সে কি পরিচয় দিবে?”

জেসি মায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,”ওটা আপনাদের বাড়ির ছেলেকে জিজ্ঞাসা করেন।”

মায়া তাকালো রুদ্রের দিকে।রুদ্রকে জিজ্ঞাসা করে,”স্বীকৃতি দিবে তো তোমার বাচ্চাকে?”

রুদ্র বলে ওঠে,”কখনই না।”

মায়া এবার রুদ্রের কাছে এগিয়ে এসে বলে,”তাহলে ওর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিলে কেনো?”

হেয়ালি করে রুদ্র বলে,”এমন তো না যে আমি একা ইন্টারেস্টেড ছিলাম।ও নিজেও তো আমার কাছে এসেছিলো।ইনফ্যাক্ট আমাকে প্রেম প্রস্তাব ওই আগে দেয়।”

জেসি এবার রুদ্রর কাছে এগিয়ে এসে বলে,”লুক রুদ্র ওটা পাস্ট।তোমার আমার সম্মতিতে আজ আমাদের এই অবস্থা।আমি চাই তুমি আমাদের বেবীকে একসেপ্ট করো।”

“নট পসিবল। কার না কার বাচ্চা কে জানে!তোমার সাথে আমি একা সম্পর্ক করেছি নাকি?তোমার ইন্টেনশন তো বড়লোক বাড়ির ছেলেরা।দেখো ওখান থেকেই কারো তরফ থেকে বাচ্চা যুটিয়েছো।বাবা কে শিওর না তাই আমাকে ফাঁসাতে চাও।”

রাজ এবার তেড়ে আসে রুদ্রের দিকে।বলে,”এতটা চিপ মেন্টালিটি কিভাবে হয় রুদ্র?একটা মেয়েকে সম্মান করতে হয়।অন্তত তোর বাচ্চার মা সে।”

“সরি টু সে আমি মানতে পারছি না।”

কান্না করে দেয় জেসি।রুদ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,”তাহলে বিয়ে করেছিলে কেনো আমাকে?বিয়ে করে আমার সাথে এতদিন ভালোবাসার অভিনয় কেনো করেছিলে?”

সোনালী এবার অবাক হলো।বলে ওঠে,”বিয়ে করেছে মানে?তুমি তো বললে তোমার সাথে প্রেমের অভিনয় করেছে শুধু?”

“প্রেমের অভিনয় করেই তো রেজিস্ট্রি করে আমাকে।তারপর আমাকে নিয়ে কিছুদিন ঘুরে এখন আমাকে ভুলেই গেছে। কাল যখন বললাম যে আমি মা হতে চলেছি ও অস্বীকার চলে আসে।আমি কি করবো বলুন তো?বাসা থেকে বকাঝকা করছে আমাকে।”

হিয়া কাপছে থরথর করে।রুদ্র গোপনে বিয়ে করেছে আবার তার সাথেও ফ্লার্ট করতে থাকে।হিয়ার কান্না দেখছে মায়া।মায়া এবার নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারলো না।কোনো ধোঁকাবাজকে মায়া সহ্য করতে পারে না।কখনও কাউকে ধোঁকা দেওয়া মায়ার স্বভাব না।এবার মায়া সোজা ডাইনিং টেবিল থেকে একটা ছুরি নিয়ে আসে।ওটা জেসির হাতে দিয়ে বলে,”যে তোমার বাচ্চার স্বীকৃতি দিবে না কিন্তু মেয়েদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারে তাকে দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দেও।যাও তোমার অধিকার বুঝে নিতে।”

জেসি অবাক হলো।ভীত হয়ে বলে,”ছুরি দিয়ে কি করবো?”

“মেরে বালি চাপা করে দিবে ওকে।কাপুরুষ হয়েছে একটা।এদের কাজ মেয়েদের ফাঁসিয়ে তাদের জীবন নিয়ে খেলা করা।একবারও ভেবে দেখে না যে মেয়েটি তাকে ভালোবেসে আত্মত্যাগ করছে।”

জেসি ছুরি ফেলে দিয়ে বলে,”আমি এগুলো করতে পারবো না।আমি শুধু আমার বাচ্চার প্রাপ্য সম্মান চাই।রুদ্রকে বলুন আমাকে মেনে নিতে।বিয়ে তো হতেই গেছে আমাদের।এখন এটা পাবলিকলি স্বীকৃতি দিলেই হবে।”

কেউ কিছু বলার আগে বাইরে থেকে হইহুল্লোড় শব্দ আসে।মিডিয়ার লোক জড়ো হয়েছে আশেপাশে।রাজ সহ বাড়ির সবাই যায় সেদিকে।মিডিয়ার লোকদের সাথে জেসির বাবা আছে।তিনি চিৎকার করে বলেন,”আমার মেয়েকে ব্যাবহার করেছে এই রুদ্র।মোহন সরদারের একমাত্র ছেলে।চাকরির নাম করে আমার মেয়েকে এতদিন পাবলিক না করে শুধু ফুর্তি করেছে।এখন আমার মেয়ে তার সন্তানের মা হবে সে তার সন্তানকে অস্বীকার করছে।এটার বিচার চাই আমরা।”

মিডিয়ার লোক একেক করে প্রশ্ন করছে।বিশেষ করে প্রশ্নগুলো সব রাজকে করা হচ্ছে।এই বাড়ির প্রধান এখন রাজ।সে একজন মন্ত্রী।আর তার পরিবারের এক সদস্যের এমন বাজে কাজ ধরা পড়েছে।মিডিয়ার লোকেরা বলে,”কিছুদিন আগে আপনার কাকার রিলেশন ধরা পড়ে।খোঁজ নিয়ে জানা যায় আজ থেকে বহুবছর আগে আপনার কাকা তার বউ বাচ্চা থুয়ে পিএ মানে আপনার বর্তমান কাকীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।সেখানকার অবৈধ সন্তান এই রুদ্র।আজ আবার তারও একটা লুকায়িত সম্পর্ক প্রকাশ পেলো।আপনাদের ফ্যামিলিতে পরপর মেয়েদের এভাবে ঠকানো হয়।এটা কি কোনমতে আপনাদের বাবা ছেলের পাওয়ারে চলে?”

শেষের কথাতে মাথা গরম হয়ে যায় রাজের।মিডিয়ার সামনে কিছু বলতে যাবে তার আগে মায়া এসে রাজের হাত ধরে আটকে দেয়।সাংবাদিক এবার মায়াকে প্রশ্ন করে,”আপনি আপনার শশুর বাড়ি নিয়ে কি মতামত দিতে চান ম্যাম?”

মায়া মাইকের সামনে এসে বলে,”আসলে আমার কাকা শশুর আর আমার শশুর এদের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ।আমার শ্বশুর একজন মাটির মানুষ।তার ভিতরে এসব নোংরামি নেই।উল্টো আমরাই ঠকছি।তার প্রমাণ আছে আমার কাছে।”

বলেই মায়া পেনড্রাইভ তার ল্যাপটপে চালু করে।দেখিয়ে দিলো রাতের করা ভিডিও।স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রুদ্র হিয়াকে ঠকাচ্ছে।কিছু জায়গা মায়া কেটে দিয়েছে।যেখানে তাকে শো করা হয়েছে।ভিডিও দেখে পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে রুদ্রের দিকে এগিয়ে আসলো রাজ।রুদ্রের কলার চেপে ধরে বলে,”এই পরিবারে কোনো অপদার্থ থাকবে না।যার জন্য আমরা ঠকছি আবার আমরাই অপদস্থ হচ্ছি সে থাকবে না এই বাড়িতে।তার স্থান এই বাড়ির বাইরে।”

বলেই ঘাড় ধাক্কা দেয় রুদ্রের।হিয়া আতকে ওঠে।কিন্তু নিজেকে শক্ত রাখতে দেওয়ালের সাথে নিজেকে চেপে রেখেছে।ভালোবাসার মানুষকে এভাবে এক্সপোজ হতে দেখতে হিয়ার সহ্য হচ্ছে না।সে তো চেয়েছিলো রুদ্রকে শুধু তার বাড়ির লোকেদের সামনে এক্সপোজ করবে।তারপর এদের বিচার বাড়ির লোক করবে আর সে তার মতো বাইরে পড়াশোনা করবে।কিন্তু রুদ্র তো তার চাওয়ার থেকেও বেশি শাস্তি পাচ্ছে।

রাজ এসে দাড়ালো জেসির সামনে।বলে,”তোমার বাচ্চার বাবা এখন এই বাড়ির বাইরে।তাই তোমার দাবিদার ওদিকটায় যেয়ে মিটিয়ে নেও।আমাদের এই বাড়ির পরিবেশ নষ্ট করবে না।”

রাজের রক্তিম চোখ দেখে জেসি চুপ করে থাকে।কোনো কথা না বলে বেড়িয়ে আসে।রুদ্র তাকালো হিয়ার দিকে।হিয়ার চশমা সহ চোখ জোড়া ভিজে আছে।টুপটুপ করে পড়ছে পানি।হিয়ার চাহনি সোজা রুদ্রের দিকে।রাজ এসে হিয়ার কাধে হাত রাখে।হিয়া তাকালো রাজের দিকে।রাজ বলে,”আমার বোন দুর্বল মন মানসিকতার নয়।সে নিজেকে সামলে চলতে পারে রাইট?”

হিয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে দিলো।সিয়া এসে জড়িয়ে ধরে হিয়াকে।মিলি কি করবে বুঝতে পারছে না।ভাইয়ের দুর্দিন দেখে যেমন কষ্ট হচ্ছে তেমন ভাইয়ের প্রতি রাগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।হিয়াকে নিয়ে ভিতরে যেতে থাকে সিয়া।হঠাৎ রুদ্র ডেকে ওঠে,”হিয়াপাখি।”

হিয়ার পা সেখানেই থেমে গেলো।সিয়া হাত ধরে টানতে থাকে কিন্তু হিয়ার পা চলছে না।পিছনে ঘুরে তাকালো হিয়া।রুদ্র বলে,”আমি আবার ফিরে আসবো।আর সেদিন তুইও আমাকে চাইবি।যেখানে খুশি যা কিন্তু এই রুদ্রের কথাগুলো মাথায় রাখবি।তোর জীবনে যেনো অন্য পুরুষের আগমন না দেখি।”

বলেই হালকা হেসে চলে যায় রুদ্র।হিয়া হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে সেখানে।হাউমাউ করে কেঁদে দেয় এবার।এতক্ষণ রুদ্রের সামনে নিজেকে আড়াল রাখলেও এবার আর পারলো না।মাহমুদ সরদার মালিনী রাজ ও মায়া তাকিয়ে আছে।ভালোবাসা না পাওয়ার দুঃখটা সবাই বুঝে।হিয়ার কান্না দেখে মায়া এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে হিয়াকে।হিয়া এবার ফোফাতে ফোফাতে বলে,”ভালোবাসা এমন অবাধ্য কেনো?আমরা না চাইতেও ভুল মানুষকে ভালোবাসি।কেনো আমাদের মন ভুল মানুষের দিকে চলে যায়।হাজার চাইতেও এই ব্যার্থ ভালোবাসায় নিজেকে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে হয়।ভালোবাসা কেনো বুঝেশুনে মনের ভিতর বিরাজ করে না?”

এই প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর নেই।আসলেই তো ভালোবাসা কেনো ভুল মানুষের প্রতি আসে।আমরা জেনে শুনে তো ভালোবাসি না।এই যে বীর সেও ভালোবাসলো।যাকে ভালোবাসলো তাকে পেলো না।পাবে না বলেই নিজেকে হার মানিয়ে বিদায় নিলো।যেখানে সে লড়াই করতো অন্যায়ের বিরুদ্ধে।এক নিষিদ্ধ প্রেমের কারণে নিজের জীবনটা শেষ করে দিলো।জারা যে কি না অন্যের সংসার ভাঙতে এত চেষ্টা করে।দিন শেষে সেও একজনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে হসপিটালে ভর্তি।আর আজ হিয়া।এক নষ্ট পুরুষের প্রতি আসক্ত হয়ে ভেঙ্গে পড়েছে।এদের কাছে ভালোবাসা নিজে থেকে এসেছে।এরা তো ডেকে ডেকে আনেনি ভালোবাসা।

আজ মিডিয়াতে মোহন সরদার ও সোনালীকে নিয়েও কথা উঠেছে।মোহন সরদার পুরো ভেঙ্গে পড়েছে।পুরনো পাপ আবারও ফুটে উঠেছে।আজ তার ছেলের জন্য তার পাপের বোঝা বেড়ে গেলো।এই ছেলের জন্যই তো সে তার বউ আর মেয়েকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।সবাই মিলে ভিতরে চলে যায়।জেসি তার গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।গাড়ির কাছে এসে পিছনে ঘুরে দাড়ালে দেখতে পেলো আয়রাকে।আয়রা জেসিকে দেখে তার চোখ টিপ দিলো।জেসি নিজেও আলতো হেসে গাড়িতে উঠে পড়ে।

চলবে…?