মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব-৫৭+৫৮+৫৯

0
7

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৫৭
#ইশরাত_জাহান
🦋
হো হো করে হেসে দেয় সোনালী।রুদ্রকে স্ক্রল করে নেয় একবার।তারপর ব্যাঙ্গ করে বলে,”ভালোই দুষ্টুমি করতে শিখেছিস।কিন্তু এখন তো এসবের সময় না।যত রকমের অভিনয় পরে দেখা।এখন সর আমাকে আমার কাজ করতে দে।”

ফিচেল হেসে রুদ্র বলে,”একচুয়ালি ইউ আর রাইট।তোমাকে এখানে না সোজা আমার আস্তানায় নিয়ে যেতে হবে।তাহলে হয়তো বুঝতে পারবে কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা।”

এবার যেনো মুখের হাসি নিভে গেলো সোনালীর।রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে,”এসবের মানে কি?তুই কবে থেকে CID অফিসার হয়েছিস?”

এবার ব্যাঙ্গ ভাব আসে রুদ্রের চোখে মুখে।সোনালীর চোখে চোখ রেখে বলে,”যেদিন থেকে জানতে পেরেছি আমার আসল পরিচয় ঠিক সেদিন থেকে।”

ঘাবড়ে যায় সোনালী।রুদ্র নিজের পরিচয় জানে মানে কি?কিভাবে জানবে সে?যার জানার কথা তাকে তো শেষ করে দিয়েছে সোনালী।বিভান এবার তেড়ে আসে সোনালীর কাছে।সোনালীকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,”এগুলোর মানে কি সোনালী?এটা আবার কোন নাটক!”

আদ্রর দিকে তাকিয়ে রুদ্র আর আদ্র দুজনেই হেসে দেয়।তারপর রুদ্র বলে,”নাটক তো সাজিয়েছিলেন আপনারা আর শেষ করব আমরা।এই নাটকের শেষ আজ হবে।”

“দুদিনের শিশু আমাদেরকে টক্কর দেও।তোমাদের থেকে বড় বড় মাপের লোক আমার সাথে টক্কর দিয়ে হেরে গেছে।”(অহংকারের সাথে বলে বিভান)

মায়া রাগ বাড়ানোর জন্য বলে,”একটু ভুল করলেন।বড় বড় লোক আপনাদের সাথে টক্কর দিলেও আপনাদেরকে টুপি পরিয়ে এভাবে ঘোল খাওয়ায় না।যেটা আমরা খাইয়ে দিয়েছি।তাহলে বুঝুন কত ট্যালেন্টেড আমরা।”

বিভানের ইগোতে লেগেছে কথাটি।কিন্তু সে কিছু বলার আগে মোহন সরদার বলে,”রুদ্রর আসল পরিচয় মানে কি সোনালী?এসব কি বলছে রুদ্র? আর তুমি কবে থেকে জব করো?”(শেষের কথাটি রুদ্রকে বলে)

“আপনি কোনো দিন ছেলে সন্তানের জন্ম দিতে পারেননি মিস্টার মোহন সরদার।আপনাকে এতগুলো বছর ধরে ঘোরে রাখা হয়েছিলো।”(মায়া বলে)

সোনালী এবার মায়াকে ধমকে বলে,”হে ইউ!একদম চুপ।তুমি রুদ্রকে ভুলভাল বুঝিয়েছো।কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে? শোন রুদ্র এই মেয়ে তোকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।মনে নেই তোকে ড্রিংক করিয়ে মিথ্যা ভিডিও বানায়।তারপর ওই জেসিকে দিয়ে ভুয়া প্রেগনেন্ট বানিয়ে অপমান করে তোকে।আসলে ও চায় না তুই সরদার বাড়ির সম্পত্তির মালিক হ।ও তোকে বিভ্রান্ত করছে এসব বলে।”

রুদ্র কিছু বলতে যাবে ওমনি আদ্র বলে ওঠে,”ওহ রিয়েলি!তারমানে আমার ভাইকে আমি যেটা বলেছি সেটা ভুল আপনি পালিত মা হয়ে ঠিক।এতদিন তাহলে রুদ্রের মনে যে প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকে ওটা মিথ্যে।আমাদের মা বাবাকে যে আপনি আগুনে পুড়ে মেরেছেন ওটাও মিথ্যে?”

“হ্যাঁ হ্যাঁ সব মিথ্যে।এই মেয়ে যা বলেছে সব..”
কিছুক্ষণ চুপ করে সোনালী বলে ওঠে,”কি বললে তুমি!তুমি ওকে সব বলেছো আর তুমি ওর ভাই।মানে কি এসবের?”

“মিস্টার আহান এন্ড মিসেস অবনি চিনতে পারছেন?আমরা তারই সন্তান।আমি বড় সন্তান আর রুদ্র ছোট সন্তান।এবার নিশ্চয়ই সব ক্লিয়ার।”

আদ্রের কথা শুনে মোহন সরদার বলে,”এরা কারা সোনালী?রুদ্র তাহলে আমার সন্তান না?”

সোনালী এবার ঘাবড়ে যায়।যে করে হোক খেলা পাল্টে দিতে চায় সে।তাই রুদ্রর দুই গাল ছুঁয়ে বলে,”শোন রুদ্র এরা মিথ্যে বলছে।আসলে তুই আমার ছেলে।এই সরদার বাড়ির ছেলে।এদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই।শুধু মিথ্যে বলে উস্কে দিচ্ছে তোকে।তুই হিয়াকে নিয়ে লুকিয়ে থাক।আমি সবকিছু নিয়ে তোদের বিয়ে দিয়ে দিবো।এই কাটা গুলোকে উপড়ে ফেলতে হবে।এরা তো তোকে বদনাম করেছিলো।তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় এই রাজ।ওদেরকেও আমরা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো।আমি তুই হিয়া এরা রাজত্ব করব।”

সোনালীর দুই হাত ধরে গাল থেকে ছাড়িয়ে রুদ্র বলে,”আমাকে ওই বাড়ি থেকে প্ল্যান করে বের করে দেওয়া আমার ইচ্ছায় হয়।আসলে মায়ার উদ্দেশ্য ছিলো এটা।ও চেয়েছিলো আমার দ্বারা মোহন সরদারকে অপদস্থ করবে।ইনফ্যাক্ট সেটা করতে পেরেছে।আজ মোহন সরদার পুরো সমাজের সামনে কলঙ্কিত।তার মুখ দেখানোর কোনো জায়গা নেই।ওহ হ্যাঁ!সেদিন মায়া আমাকে কোনো ড্রিংক দেয়না।সেদিন যেটা মায়া আমাকে দেয় ওটা পানি থাকে।কিন্তু তুমি ভেবে নেও আমি ড্রিংক করে ওগুলো বলেছি।আসলে সবাইকে বোঝাতে চেয়েছিলাম মোহন সরদার আর সোনালীর সন্তান অবৈধ।এমনকি তারা চলেও তার মতো করে।মায়ার এই ইচ্ছাটা সাকসেস।আর আমাকে বাড়ি থেকে তাড়ানো হয় না আমিই বের হয়ে যাই।কেনো জানো?”

সোনালী মাথা নাড়িয়ে জানতে চায়।রুদ্র বলে ওঠে,”কারণ আমাকে লন্ডন যেতে হতো তাই।মানিকের খোঁজ পেতে আমি আমার লোক নিয়ে চলে যাই লন্ডন।তানাহলে তো আমরা মানিকের খোঁজ পাবো না।আমি আর জেসি মিথ্যে স্বামী স্ত্রী সেজে লন্ডনে গিয়েছিলাম।তোমরা যে আশ্রমে মানিককে রেখেছিলে ওখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মানিক বর্তমানে মিস্টার বিভানের কোম্পানিতে কাজ করে।ওকে ওখান থেকে উদ্ধার করতেই আমাকে যেতে হয়।ওকে উদ্ধার করার পর ওই জায়গার কিছু সিক্রেট হেল্পিং হ্যান্ডদের বের করে জেলে দেই।আমি তোমার কাছে কৌশলে জেনে নেই কে তোমার আরেক পার্টনার।তুমি আমাকে বলেও দেও।আমি ওটা মায়াকে টেক্সট করে দেই।আর তার ঠিক দুই মিনিট পর হাসির কল আসে মায়ার ফোনে।”

এবার মায়া বলে ওঠে,”এক্সাক্টলি তাই।আপনি যখন আমার সাথে কথা বলছিলেন তখন হাসির কল আসে।কল রিসিভ করার আগে ফোনের স্ক্রিনে কল এর সাথে আমি রুদ্রের এসএমএস দেখে নেই।তারপর আমি আমার মত করে প্ল্যান করি।যদি হাসি বেচে যায় তাহলে ওকে হসপিটালে সেন্সলেস রোগী বানিয়ে রাখব আর যদি মারা যায় তাহলে আপনাদের সামনে মিথ্যে অভিনয় করব।ইনফ্যাক্ট জানেন তো আপনাদের মিহির এখন কোথায়?”

বলেই মায়া আঙ্গুলটা উপরের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।আকাশের দিকে ইশারা করে বলে,”নিজের মায়ের খুনের হিসাব দিচ্ছে। আর আপনাদের বিষয়ে প্রমাণ তো আমি পেয়েছি হাসির করে রাখা ভিডিও দেখে।আমার এক মাকে বাঁচাতে আমার আরেক মাকে জীবন দিতে হয়েছে।এই সব আপনাদের জন্য।”

কথাগুলো বলেই মায়া তেড়ে যেতে থাকে।রাজ এসে মায়াকে আটকে বলে,”শান্ত হও মায়াবতী।আমার মায়াবতীর ইচ্ছা পূরণ হবে।তবে বাকিদের হিসাবটাও তো বুঝে নিতে হবে।”

মায়ার আরেক কাধে মালিনী হাত রেখে বলে,”একটু শান্ত হও।আমরা বুঝতে পারছি তোমার মনের অবস্থা।যার জন্য তোমার মায়ের এই অবস্থা তাকে দেখলে তোমার যেমন লাগছে ঠিক আমারও স্বামীর মৃত্যুতে সন্তান থেকে দূরে থাকা এমনকি বাবার মৃত্যুতে এমন লেগেছিলো।কিন্তু আমি অসহায় ছিলাম।ভাগ্য হয়তো তোমার হাত দিয়ে তোমার ইচ্ছা দ্বারা আমাদের স্বপ্ন পূরণ করবে।তাই বলছি একটু শান্ত হও।”

মালিনীর কথা শুনে মায়া শান্ত হয়।তার থেকেও বড় কথা মায়ার মাথাটা এখন রাজের বুকের সাথে মিশে আছে।যেটা মায়াকে খুব ভালোভাবে শান্ত করে দেয়।রাজের বক্ষে মায়ার শান্তি।মায়া শুধু ফোঁসফোঁস করতে থাকে।এদের এসবকিছু পাত্তা না দিয়ে সোনালী বলে,”তার মানে এই চক্রান্ত শুরু থেকে তোর?আমার পিঠ পিছে তুই এসব করেছিস!তোকে নিজের ছেলের জায়গা দিয়েছিলাম।বাবা মা মারা গেলেও আমি তোকে অনাথ করিনি।আর তুই আমাকে ধোঁকা দিলি।”

রুদ্র এবার রক্তচক্ষু করে সোনালীর কাছে এসে ওর গলা চেপে ধরে।সোনালী রুদ্রের হাত ধরে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে।রুদ্র বলে ওঠে,”লজ্জা করে না তোর একটা মায়ের কোল থেকে জন্ম নেওয়া সন্তান চুরি করতে?লজ্জা করে না নিজের জন্ম দেওয়া সন্তানকে ওই অন্ধকার রাতে অন্য শিশুর স্থানে রেখে দিতে?আর এই মিথ্যা লুকাতে তুই আবার খুন করেছিলি আমার বাবা মাকে।”

কথাগুলো বলে রুদ্র আরো জোরে গলা টিপে ধরে সোনালীর।ঘরে থাকা বাচ্চারা এমনি ভয় পেয়েছিলো এখন আবার খুশি হয়।কারণ সোনালী খারাপ ছিলো ও মায়াকে মারতে আসে।বাচ্চাদের কাছে মায়া মহান।তাই তো মায়াকে যারা মারতে চায় আর তাদেরকে মারতে দেখে বাচ্চারা খুশি হয়।আশেপাশে গার্ডগুলো এখন মায়ার লোকের দ্বারা আহত।তারা নিজেরাই উঠতে পারছে না।আধমরা হয়ে পড়ে আছে মাটিতে।মিলি কান্না করে দেয়।রুদ্রর এই রূপ আবার রুদ্রর কাছে ভিন্ন কথা।এই সোনালী কি কি করেছে তা যেনো একদিনে সব প্রকাশ হতে থাকে।মাথা ঘুরে উঠছে মিলির।মায়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।রাজের বুকে মুখ রেখে রুদ্রের এই দৃশ্য দেখে হাসতে থাকে মায়া।আদ্র এসে রুদ্রকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”আইনকে আইনের মত করে ব্যাবহার কর ভাই।নিজের হাতে আইন নিয়ে নিস না।যদি এমনটাই হতো তাহলে এতদিনে এই সোনালীকে আমি বা মায়ারাজ জীবিত রাখতাম না।কবেই শেষ করে দিতাম।”

চেঁচিয়ে ওঠে মোহন সরদার।আর্তনাদ নিয়ে বলে,”কি হচ্ছে টা কি?আমাকে স্পষ্ট করে সবকিছু বলো।”

আদ্র পকেটে হাত রেখে বলে,”মিসেস সোনালী যখন কনসিভ করেন তখন আপনি শর্ত দেন যে আপনার ছেলে সন্তান লাগবে।ছেলে হলে আপনি মিসেস সোনালীকে মেনে নিবেন।কিন্তু আপনাদের কোনো ছেলে হয়নি।আপনি আপনার উত্তরাধিকারী হিসেবে কোনো ছেলে পাননি।পেয়েছিলেন মেয়ে সন্তান। যখন মিসেস সোনালী নিজের মেয়েকে দেখেন তখন তিনি বুদ্ধি করে নার্স ও ডাক্তারকে টাকা দিয়ে বাচ্চা বদল করেন।ওইদিন একই হসপিটালে সদ্য জন্ম নেয় আমার ভাই রুদ্র।আমি আর বাবা তখন মায়ের পাশের বেডে ঘুমিয়ে ছিলাম।মাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয় সাথে আমাদের খাবারে ঘুমের ঔষধ।কিন্তু ওইদিন আমরা এগুলো কিছু বুঝে উঠতে পারি না।পরদিন যখন ভাইকে খুঁজে পাওয়া যায় না তখন মা আর বাবা হাসপাতালে ঝামেলা করে।নার্স আর ডাক্তারের একটাই কথা মা ওইদিন মেয়ে জন্ম দিয়েছিলো।আমিও মা বাবার সাথে তাল মিলিয়ে বলি যে আমার ভাই হয়।কিন্তু ডাক্তার হাসপাতালের রেপুটেশনের জন্য আমাদের মিথ্যা বলেন বারবার।ইনফ্যাক্ট একটা ফ্যাক রিপোর্ট ধরিয়ে দেয়।পুলিশ এসেও মিথ্যা রিপোর্ট দেখে আমাদের বকতে থাকে।কিন্তু আমার বাবা থেমে থাকেনি।মেয়েটিকে বাসায় আনার পর ওকে যত্ন করে মা।অন্যদিকে বাবা চলে যায় আরেক পুলিশের কাছে।তাকে সবকিছু ফুল ডিটেইলস বললে সে হেল্প করতে থাকে।কিন্তু যথাযত প্রমাণের অভাবে কেউ কিছু করতে পারে না।এদিকে রুদ্রের মুখের সাথে আমার মায়ের চেহারার মিল থাকে অনেক।যেটা মিসেস সোনালীর বড় বোন ধরে ফেলেন।কারণ তিনি আমার মায়ের বান্ধবী।চেহারার মিল ছাড়াও মায়ের কাছে শুনেছিলো ডেলিভারির রাতে রুদ্র হারিয়ে যায়।তার বদলে অন্য মেয়ে আসে।একই রাত একই হাসপাতালের নাম শুনে ওই আণ্টি বুঝে যান এই কাজ মিসেস সোনালী করেন।কারণ তার মতে মিসেস সোনালী মোহন সরদারের জন্য পাগল।তাকে পেতে এগুলো করতে পারে মিসেস সোনালী।রুদ্রকে কোলে নিয়ে তিনি রুদ্রের নাম ঠিক করেন।মূলত ওই আন্টির কাছে মা বলেছিলো আমার ছোট ভাইয়ের নাম রুদ্র দিবে।আদ্রর ভাই রুদ্র।তাই হলো।মিসেস সোনালী মেনে নিলেন।তারপর যেই আপনাকে মিসেস সোনালী বিয়ে করেন তার পরের দিন ওই আন্টি মাকে সব বলে দেন।অন্যদিকে মিসেস সোনালীকে বোঝাতে থাকেন যার সন্তান তাকে দিয়ে দিতে।মা নিজেও অনেকবার দাবি করেন।কয়েকবার আসতে চায় সরদার বাড়ির ভিতর কিন্তু মিসেস সোনালী রুদ্রের ক্ষতি করে দিবে বলে ভয় দেখায়।শুধু তাই না মা বাবা মিসেস সোনালীর দুই নাম্বার ব্যাবসার ব্যাপারে জেনে যান।সাথে জেনে যান মায়ার ব্যাপারে।তাই কোনো কিছু না পেরে যোগাযোগ করেন শাহানা আন্টির সাথে।”

অদ্রকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সোনালী বলে,”সবকিছু বুঝলাম কিন্তু আমার সেই মেয়ে কই?তাকে কি মেরে দিয়েছো তোমরা?”

আদ্র ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে দেয়।তারপর বলে,”ওসব নোংরা কাজ আপনি করতে পারেন আমরা না।এতগুলো মানুষের জীবন নষ্ট করেছেন আপনি।আমরা শুধু তারই ফল দিচ্ছি আপনাকে।কিন্তু এতগুলো বছর পর আপন সন্তানের খোঁজ যখন চাচ্ছেন তাহলে দেখিয়েই দেই সেই সন্তানকে।”

বলেই আদ্র আঙুল তাক করে দেখায়।সোনালী আর মোহন সরদার তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।সোনালীর মুখ থেকে বের হয়,”মৌ!”

আঙ্গুল সরিয়ে হাত পকেটে রেখে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আদ্র বলে,”হ্যাঁ আপনার আর মোহন সরদারের মেয়ে এই মৌ।যাকে কোলে পিঠে বড় করেছে শাহানা আণ্টি আর মায়া।”

মৌয়ের চোখে পানি।মুখটা এদিক ওদিক করছে সে।মায়া তাকিয়ে দেখছে মৌকে।মুখ ফুটে বলে,”কষ্ট হচ্ছে বোন?”

মৌ কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলে,”এদের মতো বাজে বাবা মায়ের জন্য কখনও কষ্ট হয় না আমার।”

কথাগুলো শুনে অনুতপ্ত হলো মোহন সরদার।তার মেয়েরা আজ তাকে ঘৃণা করে।মোহন সরদার বলে,”ছিঃ সোনালী ছিঃ।এতগুলো অভিনয় করলে তুমি।আমার সন্তানেরা আজ আমাকে ঘৃণা করছে।”

“ওহ হেলো মোহন সরদার।তোমাকে কেউ আমার জন্য ঘৃণা করেনি।কি বলো তো।তুমি আগে যেমন লোক ছিলে তাতে মৌকে মেনে নিতে না।বরং অস্বীকার করে আমাকে আর মৌকে পথে বসিয়ে দিতে।দেখ মা আমি যা করেছি তাতে তোর ভালো হয়েছে।এই লোক কখনোই নিজের স্বার্থ ছাড়া বোঝেনি।আজ নাটক করছে ভালো সাজার।কারণ ওর কাছে তো কোনো অপশন নেই।”

“অপশন আজ তোমার কাছেও নেই সোনালী।আমি যে ফিরে এসেছি।জলজ্যান্ত প্রমাণ হয়ে।আর তোমার সব সত্যতা ফাঁস করতে।”
মায়ের কণ্ঠ পেয়ে পিছনে ঘুরে দাঁড়ায় মায়া।শাহানা পারভীনকে দেখে মায়া যেনো থমকে আছে।বিশ্বাস হচ্ছে না তার চোখকে। দৌড়ে যেয়ে মায়া জড়িয়ে ধরে শাহানা পারভীনকে।এতগুলো বছর পর মা মেয়ে আজ এক হলো।সেই কালো বর্ণের যুবতীকে আজ বয়স্ক মহিলা রূপে দেখছে মোহন সরদার।মায়া ওর মাকে জড়িয়ে বলে,”তুমি কখন সুস্থ হলে?আমাকে কেউ জানায় নি কেনো?”

পিছন থেকে সিয়া বলে,”আসলে আজকে সকালে আমি যে রুমে ছিলাম ওই রুমে গ্লাস ভাঙার শব্দ পাই।সন্দেহ হয় তাই আমি আন্টির ঘরে যাই।দেখতে পাই আয়রা ওয়াশরুমে তাই আন্টি পানি খেতে উঠতে চেষ্টা করে।আদ্র আমাকে বলেছিলো আন্টি যেকোনো মুহূর্তেই সুস্থ হয়ে যাবেন।কারণ আন্টিকে নতুনভাবে আদ্র যেভাবে অপারেশন করেছিলেন তাতে আদ্র 95% শিওর ছিলো খুব তাড়াতাড়ি রিকোভার করবে আন্টি।আমি অদ্রকে বারবার কল করি এই জন্য।কিন্তু ওর কোনো খোঁজ পাই না।মনে পড়ে কাল রাতে তুমি ফোনে কাকে বলেছিলে আজ আশ্রমে আসবে।আমি তো এগুলোর কিছু জানতাম না তাই তোমাকে খোঁজ দিতে আসি যে আন্টি উঠে বসেছেন।কিন্তু এখানে আসার আগে তো আয়রাকে বলেছিলাম আন্টির সাথে থাকতে।”

শাহানা পারভীন এবার সবাইকে দেখতে থাকেন।মোহন সরদারের দিকে চোখ যেতেই তার ঘৃণা বেড়ে যায়।তারপরও সে চোখ সরিয়ে নেয়।সেই দৃষ্টিগুলো বুঝে যায় মোহন সরদার। তিনিও কিছু না বলে মাথা নত করে।আশেপাশে মালিনী ও বিভানের লোকগুলোর দেহ পড়ে আছে।শাহানা পারভীন ওদের দেখে বলেন,”আমার মেয়েটা কত বড় হয়ে গেছে।মায়ের অন্যায়ের বিচার করতে শিখেছে।আমার শাহমীর বাবাটাও অনেক বড় হয়ে গেছে।”

মায়া মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে বলে,”সে যাই হোক।তুমি এখানে আসতে গেলে কেনো?”

শাহানা পারভীন মায়ার মুখে হাত রেখে বলেন,”শোনো মেয়ের কথা!আমার মেয়ে এত বড় মিশনে এসেছে আমি তার পাশে থাকব না?আমি আজ সুস্থ হয়েই আয়রার কাছে শুনলাম তোর কথা।তাই ওর বারণ না শুনেই এখানে ছুটে এসেছি।”

পিছনে পিছনে দৌড়ে আসে আয়রা।হাঁফাতে থাকে সে। আয়রাকে দেখে বিভান বলে ওঠে,”এই মেয়ে জেল থেকে ছাড়া পেলো কিভাবে?”

সোনালীর মন চাচ্ছে এবার বিভানকে মেরে ফেলতে।রাগ দেখিয়ে বলে,”বোকার মতো কথা বলো না।রুদ্রের মত একজন অফিসার থাকতে তার আর কিছু লাগে? আর যার জন্য জেলে ঢোকানো হয় সে এখনও জীবিত।ভিকটিম তো সে নিজেই।যত্তসব অকর্মা লোক। স্বাদে কি আর আজ এই অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়।”

রুদ্র এবার সোনালীকে খোচা মেরে বলে,” এই না হলে ডাইনির বুদ্ধি।আসলে এই বুদ্ধি নিয়েই তো এতগুলো মানুষের জীবন নিয়েছো।”

মাহমুদ সরদার এবার রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলেন,”সেসব কথা বাদ।আসল কথায় আসা যাক।তুমি কবে থেকে এসব জানো আর জানো যখন আমাদের বলো নি কেনো?”

রুদ্র কিছু বলার আগে সোনালী বলে,”আর এই আদ্র বেচে গেলো কিভাবে?ওকে তো ওখানেই শেষ করে এসেছিলাম।”

চলবে…?

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৫৮
#ইশরাত_জাহান
🦋
পুরোনো অতীত,
রোহিনী আর মিনারের মৃত্যুর পর মালিনীর বিয়ে হয় মাহমুদ সরদারের সাথে।তার কিছুদিন পর সোনালী টার্গেট করে মোহন সরদারকে।কিন্তু এর ভিতর ব্যাবসার কাজে শাহানা পারভীনের সাথে মোহন সরদারের বিয়ে হয়ে যায়।সোনালী না পেরে মোহন সরদারকে তখনই সিডিউস করতে থাকে।একদিকে শাহানা পারভীন প্রেগনেন্ট হয়ে তার কিছু মাস পর সোনালী প্রেগনেন্ট হয়।মোহন সরদারের কথামত মেয়ে সন্তান না হওয়ায় সোনালী বাচ্চা বদল করে।রুদ্রের বাবা মা মিস্টার আহান আর মিসেস অবনি দিন রাত এক করে চেষ্টা করতেন রুদ্রকে নিজেদের কাছে আনতে।সোনালী তাদের ভয় দেখাতো।রুদ্রের ক্ষতি করে দিবে বলে। যখনই মাহমুদ সরদার বা মোহন সরদারের কাছে এনারা আসার চেষ্টা করত সোনালী খোঁজ পেয়ে যেত।মাহমুদ সরদারের আর মোহন সরদারের পিছনেও লোক লাগিয়ে রাখে সোনালী।এভাবে চলতে চলতে রুদ্র বড় হতে থাকে।মায়া আর রুদ্র কয়েক মাসের ছোট বড়।মায়ার জন্মের কিছু মাস পরে রুদ্রের জন্ম হয়।সোনালী কিছুদিন রুদ্রকে নিয়ে আলাদা থাকতো।মোহন সরদার তার ব্যাবসার কথা বলে সোনালীকে বিয়ে করে অন্য বাসায় রেখে দেয়।অন্যদিকে মালিনী চেষ্টা করে বিভান আর সোনালীর মুখোশ উন্মোচন করতে।কিন্তু সোনালীর মুখোশ উন্মোচন না হয়ে মারা গেলো রাজের নানু আর দাদু।মালিনী এই ঘটনার পর আরো বেশি ভয় পেয়ে যায়।মানিকের কথা ভেবে চুপ হয়ে যায় সে।মানতে থাকে সোনালীর সকল আদেশ নিষেধ।এর পরে মায়া যখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে তখন সোনালীর মনে হতে থাকে এরা কাজের কাজ কিছুই করতে পারবে না।অন্তত শাহানা পারভীন আর মায়াকে ওই বাড়ি থেকে বের করলে সে এই বাড়িতে আসতে পারবে।মোহন সরদার তার বাবার কথা ভেবে ভয়তে চুপ থাকতেন।কারণ তখনও ব্যাবসার অংশ তিনি ভাগে পাননি।মালিনী যখন তার বাবা আর শ্বশুরকে(রাজের নানু আর দাদু)সব বলে দেয় তখন বিভান ওদের খুন করে। আর এই সুযোগ কাজে লাগায় সোনালী।রাজের দাদু মারা যাওয়ার পর পরই সোনালী রীতিমত রুদ্রকে নিয়ে মোহন সরদারের কাছে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে।যার ফলে মোহন সরদার বাধ্য হয়ে পুরো পরিবারের সামনে সোনালীকে আনে।বাবা মারা যাওয়ায় এখন আর তার ভয়ের কিছু নেই।শাহানা পারভীন ওই বাসা থেকে চলে এসেছে এই খবর পেয়ে যায় মিস্টার আহান।তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে খবর দেন শাহানা পারভীনকে।শাহানা পারভীন সেই দিনই চলে আসেন ঢাকায়।মায়ার বয়সী মৌকে দেখে শাহানা পারভীনের অন্তর আত্তা কেপে ওঠে।বাকি সবার কথা বাদ কিন্তু নিজের পেটে যাকে নয় মাস রেখেছে যার দ্বারা মাতৃত্বের অনুভব সোনালী পেয়েছে সে কিভাবে এই বাচ্চাকে ফেলে দেয়।ভেবেই শাহানা পারভীন কান্না করে দেন।মৌকে জড়িয়ে ধরে শাহানা পারভীন বলেন,”আমি একে মানুষ করব।আমার মায়ার মত করে ওকে প্রতিষ্ঠিত করব।আজ থেকে আমার দুই মেয়ে।ওই মোহন সরদার আর সোনালীর কর্মের বদলা নিবে আমার দুই মেয়ে।”

ছোট মৌ তখন শাহানা পারভীনের আদর পেয়ে খুশি হয়।ছোট হলেও মৌ তখন জেনে যায় তাকে তার মা ছেড়ে দিয়েছে।শাহানা পারভীন সবসময় সত্যি কথা বলেই মৌকে বড় করেছে।কিন্তু মৌ যে মোহন সরদারের আসল মেয়ে এটা গ্রামের কাউকে বলে না।সবাইকে বলতো মৌকে তিনি দত্তক নিয়েছেন।মৌ প্রথম দিকে কষ্ট পেলেও শাহানা পারভীন যখন মায়া ও মৌ দুইজনকে একসাথে আদর যত্ন করত তখন তফাৎ খুঁজে পেতো না।মৌ আস্তে আস্তে বুঝতে পারে শাহানা পারভীন যা করছে তার পরিচয় গোপন রাখতে করছে।অন্যদিকে শাহানা পারভীন তার বাবার পরিচিত ডাক্তার দিয়ে সাহায্য করে মিস্টার আহান আর মিসেস অবনীকে।মাহমুদ সরদারের কাছেও মৌয়ের বিষয় বলে না শাহানা পারভীন।কারণ তার ভাষ্যমতে এখন সরদার বাড়িতে রুদ্র ও মৌয়ের বিষয় না জানানো মঙ্গল।এই সোনালী খুব ভয়ংকর।যে একটু আচ পেলে ক্ষতি করে দিবে সবার।তাই মাহমুদ সরদার এই বিষয় কিছু জানতে পারেন না।তিনিও জানতেন মৌ আশ্রম থেকে দত্তক নেওয়া।শাহানা পারভীনের ডাক্তার যখন প্রমাণ জোগাড় করে পুলিশ দিয়ে সোনালীর থেকে ঘুষ নেওয়া ডাক্তারকে ধরে নেয় ঠিক তখন সোনালীর নার্স সোনালীকে সবকিছু গোপনে বলে দেয়।সব জানতে পেরে সোনালী তার বড় বোনকে খুন করে।কারণ সেই সবকিছু আড়ালে জানিয়ে দিতো।তারপর দ্রুত রুদ্রকে পাঠিয়ে দেয় লন্ডনে।এদিকে মিস্টার আহানের বাসায় মাঝরাতে নিজের দলবল নিয়ে আসে সোনালী।ঘুমন্ত আদ্র তখন কিছুই বুঝতে পারে না।গুলির শব্দ পেয়ে আদ্রর ঘুম ভেংগে যায়।ঘুম থেকে উঠে দৌড় দেয় আহান আর অবনীর ঘরে।ঘুমন্ত মিস্টার আহানের বুক বরাবর শুট করে সোনালী।গুলির শব্দে ঘুম ভেংগে যায় মিসেস অবনীর।মিস্টার আহান গুলির আঘাতে ধড়ফড়িয়ে ওঠে।বুকে ব্যাথা পেয়েও স্ত্রীর জন্য উঠে বসে।পাশে থাকা ফোন হাতে নিবে ঠিক তখনই সোনালী ওনার হাতে শুট করে দেয়।সোনালীর লোকজন মিলে ধরে রাখে মিস্টার আহান আর মিসেস অবনীকে।সোনালী বলে,”প্রমাণগুলো কোথায়?আমি যে মেয়ে আর ড্রাগ সাপ্লাই করি এগুলোর যে যে প্রমাণ তোরা পেয়েছিস সেগুলো দিয়ে দে।আর রুদ্রের কথা ভুলে যা।ও ভালো আছে।কিন্তু ততক্ষণে ভালো থাকবে যতক্ষণ ও আমার সন্তানের পরিচয়ে থাকবে।তাই ভালোয় ভালোয় বলছি প্রমাণ দিয়ে দে।”

মিস্টার আহানের একটাই কথা,”মরে গেলেও আমি প্রমাণ দিবো না।”

“কি মনে করিস তোরা?আমি মাত্র আমার বোনকেই খুন করে এসেছি। আর তোদের মারতে পারব না।প্রমাণ না পাই মেরে ফেলে আমি নিজেকে তো বাঁচাতে পারবো।”

কেউ কিছু বলার আগে মিসেস অবনীর নজরে আসে দরজার পাশে লুকিয়ে থাকা আদ্র।অদ্রকে দেখে মিসেস অবনী বলেন,”তাড়াতাড়ি পালা বাবা।এরা তোকে মেরে ফেলবে।তুই তোর বাবা মায়ের জন্য নিজের জীবন দিবি না।বরং তুই তোর ভাইকে এই নোংরা মহিলার থেকে আলাদা করবি।ওকে জানতে হবে ওর আসল পরিচয় কি।ও এই নরপশুদের সন্তান না এটা যেনো রুদ্র জানতে পারে।এই মহিলা নিজ স্বার্থে তার বোনকে খুন করেছে।এখন আমাদের মেরে ফেলবে।পালা বাবা পালা। তোর বাবা মায়ের দোহাই পালা।”

মায়ের কথামত পালাতে থাকে আদ্র।প্রথমে মাথা নাড়িয়ে না বলে।সে তার বাবা মাকে ছেড়ে যাবে না।কিন্তু রুদ্রের কথা মনে পরতেই আদ্র দৌড়ে পালায়।সোনালীর ইশারা পেয়ে ওর লোকেরা আদ্রর পিছনে ছুটে যায়।কিন্তু আদ্র অনেক দূরে রাস্তার মোরে এসে সাহায্যের জন্য লোকজন খুঁজতে থাকে।কাউকে না পেয়ে আদ্র যখন দেখে পিছনে সোনালীর লোকজন আসছে তখন আদ্র গাছের পিছনে লুকিয়ে যায়।এদিকে সোনালী যখন দেখে এরা কেউ প্রমাণগুলো দেবে না।তখন তার লোকদের বলে,”এই বাড়ির চারিদিকে কেরোসিন ঢেলে দে। বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিবি।”

বলেই বের হয় সোনালী।চারপাশে ভালোভাবে লক করে দেয়।জাতে করে মিস্টার আহান আর মিসেস অবনী পালাতে না পারে।যখন সবাই বের হয়ে যায় মিসেস অবনী কল করেন শাহানা পারভীনকে।ঘুমন্ত শাহানা পারভীন ফোনের শব্দ পেয়ে উঠে রিসিভ করে কল।ওপাশের কথাগুলো কাটা কাটা আসতে থাকে।কিন্তু সোনালীর ফোনে কিছু ছবি আসে মিস্টার আহানের ফোন থেকে।ঠিক তার পর পরই জোরে ব্লাস্ট হওয়ার শব্দ হয়।শাহানা পারভীন আতঙ্কে বলেন,”হেলো হেলো।কি হয়েছে?হেলো।”

কিন্তু কল কেটে যায়।মায়া আর মৌ উঠে পড়ে।মায়া জিজ্ঞাসা করে,”কি হয়েছে মা?”

শাহানা পারভীন মৌকে দেখে নেয় একবার।তারপর বলেন,”তোর আহান আংকেল আর অবনি আন্টির কিছু হয়েছে।কেমন বিকট শব্দ হলো।”

কান্না করে দেয় মৌ।ছোট থেকে ওনাদের বাবা মা বলে এসেছে।মায়া তখন মৌকে কোলে নিয়ে আদর করে বলে,”কান্না করে না বোন।ও মা চলো আমরা এখন ঢাকা যাই।”

কিছুটা চিন্তিত হয়ে শাহানা পারভীন বলেন,”কিন্তু এত রাতে কি উচিৎ হবে?”

“যদি কোনো বিপদ হয়।আমাদের সাহায্য লাগলে তখন? আর শিবচর থেকে ঢাকা তো বেশ দূরে।প্রায় ভোর হয়ে যাবে।”

শাহানা পারভীন কিছুক্ষণ ভেবে হাসিকে ডেকে মৌকে রেখে যায়।মায়া জেদ করে তাই মায়াকে নিয়ে যেতে হয়।অন্যদিকে মিসেস অবনী যখন শাহানা পারভীনের সাথে কথা বলে মিস্টার আহান তখন তার বাবা মাকে কল করে জানান।তারা কিছু না বুঝলেও এটা শিওর হন যে তার সন্তান বিপদে।তারাও বের হয়ে যায় বাসা থেকে।

চোখের সামনে পুড়ে যাওয়া বাড়ির সামনে কান্নারত চোখে তাকিয়ে আছে আদ্র।একটু আগেই সিলিন্ডার ব্লাস্ট হয়েছে।জানালা দিয়ে হাত নাড়ছেন মিস্টার আহান আর মিসেস অবনী।কিন্তু কোনো লাভ নেই।কেউ বাঁচাতে পারবে না।কোনদিকে কাউকে না পেয়ে আদ্র নিজেই দৌড়ে যায় বাড়ির দিকে।বাবা মাকে পুড়ে যেতে দেখতে পারবে না সে।কিন্তু বাড়ির কিছুটা কাছে আসতেই সোনালী আর তার লোকেরা হাজির।একজন গার্ড বলে,”একে কি করব ম্যাম?”

শয়তানি হাসি হেসে সোনালী বলে,”এটাকে জীবিত রাখলে ক্ষতি।সোজা মা বাবার সাথে পাঠিয়ে দেওয়া হোক।”
বলেই বন্দুক বের করে অদ্রকে শুট করে দেয়।আদ্র ওখানেই অজ্ঞান হয়ে যায়।

সবাই ঢাকায় পৌঁছায় সকাল বেলা।মায়া আর শাহানা পারভীন বাড়ির এই দৃশ্য দেখে আতকে ওঠেন।আদ্রর দাদা দাদী এসে ছেলে বউমার শোকে কি করবে বুঝতে পারে না।অদ্রকে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।বাড়িতে আগুন লাগায় প্রতিবেশীরা ছুটে আসে।অদ্রকে বাড়ির সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে পুলিশ কল করে।তারপর হসপিটালে নিয়ে যায়।

পোড়া বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে শাহানা পারভীন মায়া আর আদ্রর দাদা দাদী।ছেলের জন্য কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে তারা।মায়া প্রথমে চোখ মুখ খিচে শাহানা পারভীনের পিছনে লুকিয়ে পড়ে।কিছুক্ষণ পর সাহস করে তাকায় বাড়িটির দিকে।পুলিশ আছে ভিতরে।মর্গে থেকে লোক এসেছে।তারা মিস্টার আহান আর মিসেস অবনীর লাশ নিয়ে বাইরে রেখেছে।শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পুড়ে ছারখার।যেগুলো দেখে ওখানেই ভয়তে বমি করে মায়া।যে কেউই এগুলো সহ্য করতে পারবে না।শাহানা পারভীন মুখে আচল গুঁজে কান্না করে দেন।মায়াকে সামলাতে থাকেন তিনি।মিডিয়াতে ছড়িয়ে যায় মিস্টার আহান আর তার স্ত্রী সন্তান মারা গেছে।ধারণা করা হয়েছে সিলিন্ডার ব্লাস্ট হয়ে।এটা শাহানা পারভীন পুলিশকে দিয়ে মিথ্যা নিউজ দেন।কারণ তিনি চান না সোনালী জানুক আদ্র বেচে আছে।

আদ্রর জ্ঞান ফিরতেই সে ছোটাছুটি করে।মা বাবার কাছে যাবে বলে। আদ্রর এমন ব্যবহার দেখে ভয় পেয়ে যায় আদ্রর দাদা দাদী।শাহানা পারভীন তখন আদ্রকে সামলায়।আদ্রর কাছে এসে শাহানা পারভীন বলেন,”মা বাবাকে যারা মেরে ফেলেছে তাদের শাস্তি দিতে চাও না তুমি?তোমার ভাইয়ের জন্য তোমার মা বাবা জীবন দিয়েছে।ওই নোংরা লোকদের কর্মের শাস্তি কি তুমি দিবে না?যাদের জন্য তুমি তোমার ভাই বাবা মা হারালে ওদেরকে কষ্ট দিবে না?”

শাহানা পারভীনের কথাগুলো শুনে আদ্র চুপ করে থাকে।কিছুক্ষণ ফোঁসফোঁস করে তারপর বলে,”আমি আমার ভাইকে ফিরিয়ে আনব।বাবা মায়ের খুনের প্রতিশোধ নিবো।”

আদ্রকে একটু শান্ত হতে দেখে শাহানা পারভীন আদ্রকে বালিশে শুইয়ে দেন।তারপর বলেন,”কিন্তু তোমার বাবা মায়ের মত ভুল করা যাবে না।সোনালীকে ঘায়েল করতে হলে আড়ালে আবডালে ওকে হারাতে হবে।তার আগে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে শক্ত পোক্ত পরিচয় করে নিতে হবে।ওই সোনালীর সমস্ত খারাপ কাজ একসাথে ফাঁস করতে হবে। দেখলেই তো আগে সোনালীর লোকদের প্রকাশ্যে শাস্তি দিতে গিয়ে কত বড় ভুল হয়ে গেলো।”

শুয়ে থাকা আদ্র শাহানা পারভীনের দিকে তাকিয়ে বলে,”এখন আমাকে কি করতে হবে?”

“তুমি এখন মন দিয়ে পড়াশোনা করো।তোমার ভাইকে আড়ালে আবডালে খুঁজে বের করো।তাকে তোমার বাবা মায়ের প্রতি হওয়া সমস্ত অন্যায়ের কথাগুলো বলো।”

“বলব আমি সব বলে দিবো ওকে।ও একটা বাজে মানুষের কাছে আছে।এগুলো ভাইকে জানাবো।”

“এই তো লক্ষী ছেলে।তোমার বাবা মা তোমাকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখতো ওটা তোমাকে পূরণ করতে হবে।”

মিস্টার আহান ও মিসেস অবনীর ইচ্ছা ছিলো আদ্র ডাক্তার হবে আর রুদ্র বড় কোনো পুলিশ বা আর্মি।আদ্র লোকদের সেবা করবে আর রুদ্র আসামিদের বের করে ভালো মানুষদের জীবন রক্ষা করবে।তাই শাহানা পারভীনের কথায় রাজি হয় আদ্র।পিছন থেকে সব কথা শুনে নেয় মায়া।মায়ার মনে হতে থাকে তাহলে ঐ সোনালী খুব খারাপ।সে নিজের কাজ পূরণ করতে ভালো মানুষদের খুন করে।আদ্র আজ অনাথ হয়েছে কয়েকদিন আগে মায়া নিজেও অনাথ হয়ে যায়।বাবা না থাকার কারণে তাকেও কতজনের কথা শুনতে হয়।তাই মায়া নিজেকে নিজে প্রমিস করে,”আজ থেকে আমিও ওই মোহন সরদার আর সোনালীর ক্ষতি করব।ওদেরকে আমি ভালো থাকতে দিবো না।তার আগে আমিও ভালোভাবে পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হবো।ওদের খারাপ কাজ আমি এক এক করে বের করব।”

এরপর থেকে আদ্র ওর দাদা দাদীর কাছে থাকতো।ইন্টার কমপ্লিট করে জানতে পারে রুদ্র লন্ডনে আছে।শাহানা পারভীন খোঁজ নিয়ে বলেছে।রুদ্রর খোঁজ শাহানা পারভীন পেয়ে যান মাহমুদ সরদারের কাছ থেকে।সেই ইনফরমেশন অদ্রকে দিতেই আদ্র বলে,”আমিও যাবো লন্ডনে।আমি ওখানকার মেডিকেলে পড়ব। আর ভাইকে খুজবো।তুমি আমাকে বলে দিবে ভাই কোন কলেজে পড়ে আর ভাইয়ের ছবি দিবে আমাকে।”

শাহানা পারভীন সব কিছু জেনে জেনে আদ্রকে বলে দেয়।এদিকে মায়া নিজের মতো পড়াশোনায় মন দেয়। আর মৌকে সব সময় সোনালীর বিষয়ে বলতে থাকে।মৌয়ের মনে সোনালীর প্রতি ঘৃণা জন্ম নিতে থাকে।মা বলতে ঘৃণা লাগে মৌয়ের এখন।একদিকে মৌকে নিয়ে মায়া জীবন পার করে অন্যদিকে আদ্র খুঁজে বেড়ায় রুদ্রকে। আর রাজ তার রাজনীতিতে আসার জন্য চেষ্টায় থাকে।রুদ্রের খোঁজ করতে করতে একদিন আদ্র জানতে পারে রুদ্র বারে যাওয়া আসা করে।এটা জেনে আদ্রর রাগ উঠে কিন্তু রুদ্রর গার্জিয়ান হিসেবে সোনালী যা করেছে তাতে রুদ্র এমন হবে এটা স্বাভাবিক।রুদ্রকে ফলো করে আদ্র একদিন বারে আসে। রুদ্রর আশেপাশে যখন কেউ ছিল না ওই সুযোগ পেয়ে আদ্র আসে রুদ্রের কাছে।তারপর সবকিছু প্রমাণ স্বরুপ বলতে থাকে।রুদ্র প্রথমে বিশ্বাস না করলেও আদ্র যখন সোনালীর থেকে প্রমাণের ছবিগুলো নিয়ে দেখায় তখন রুদ্র বিশ্বাস করে।রুদ্র তখন ভেঙ্গে পরে।আদ্র সামলাতে থাকে রুদ্রকে।রুদ্র যখন জানতে পারল ওর বাবা মায়ের স্বপ্ন ওকে ভালো কোনো অফিসার বানানো তখন রুদ্র মন দিতে থাকে তার পড়াশোনায়। আর অভিনয় করে সোনালীর আদর্শ ছেলে হওয়ার।রুদ্র মনে মনে নিজের লক্ষ্যকে পূরণ করতে থাকে।অন্যদিকে সরদার বাড়িকে দেখায় সে হুবহু মোহন সরদারের মত হয়েছে।রুদ্র সবাইকে জানায় সে রাজের মত ভালো রেজাল্ট করতে পারেনি।টেনেটুনে পাশ। আশাহত হতে থাকে মোহন সরদার।সোনালী যে কারণে রুদ্রকে নিয়ে সরদার বাড়িতে আসে রুদ্র তার উল্টো কাজটাই করে।সারাদিন পার্টি করা মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করা যেনো রুদ্রের নেশা।এমনটাই রুদ্র দেখাতো সোনালীকে।কিন্তু বারে রুদ্র যেতো কিছু আসামিকে ধরতে।যেটা হিয়ার চোখে অন্যভাবে প্রকাশ পায়।রুদ্রের যেমন উদ্দেশ্য থাকে তার বাবা মায়ের খুনিকে নিজের হাতে শেষ করে দেওয়া ঠিক তেমন রুদ্র ভালোবাসে হিয়াকে।অন্যদিকে আদ্র লন্ডনেই থাকে আর ভালবাসতে থাকে তার প্রেয়সী সিয়াকে।আদ্র বাংলাদেশে আসেনা কারণ ততদিনে শাহানা পারভীনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না।আদ্র চেয়েছিলো বাংলদেশে এসেই শাহানা পারভীনের কাছে আসবে। মায়ার ব্যাপারে বেশি একটা অবগত থাকে না আদ্র।কিন্তু রুদ্র মায়ার শোরুম উদ্বোধনের দিন মায়ার চোখ মুখে রহস্য দেখে মায়ার পিছনে স্পাই লাগায়।অন্যদিকে মোহন সরদারের পিছনে স্পাই রুদ্রের লোক লাগাতে থাকে।এই সব ইনফরমেশন আদ্রকে দিতে থাকে রুদ্র।আদ্র যখন জানতে পারে মায়া মোহন সরদারের কোম্পানির সমস্ত খাবারে পয়জন মিশিয়ে দেয় তখন আদ্রর সন্দেহ হয়।মায়ার সম্পর্কে খোজ নিয়ে আদ্র কনফার্ম হয় এই সেই মায়া।শাহানা পারভীনের মেয়ে।চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পর রুদ্র যখন মায়ার সাথে কথা বলতে যাবে তখন রাজ বিয়ে করে বাড়িতে আনে মায়াকে।রুদ্র তখন সুযোগ বুঝে মায়াকে সবকিছু বলে দেয়।মায়া আর রুদ্র প্ল্যান করতে থাকে কিভাবে মোহন সরদারকে ডাউন করা যায়। আর সোনালীর সমস্ত গ্যাং এক করা যায়।রুদ্র সব সময় তার লোক দিয়ে খোঁজ রাখতো সোনালী কোথায় যায় কার সাথে কথা বলে অন্যদিকে মোহন সরদারের এক্সিডেন্ট করায় আদ্র।আয়রাকে দিয়ে মোহন সরদারকে আরো ডেমেজ করে দেয়।

বর্তমান,
অতীতের কথাগুলো শুনে ভেংগে পড়ে মিলি।সোনালীকে উদ্দেশ্য করে বলে,”ছিঃ মা ছিঃ।তুমি একজন নিকৃষ্ট মহিলা।এরা যা করেছে একদম ঠিক করেছে।আজ এদের জায়গায় আমি হলে আমিও এমন করতাম।”

সোনালীর মধ্যে কোনো অনুতপ্ত দেখা যায় না।সে এখনও সেই একই রূপে আছে।বিভান সবার পিছনে যেয়ে কাউকে কল করতে যায়।ফোন নিয়ে কানে ধরতেই বিভানের হাত ছিদ্র করে গুলি চলে যায়।সবাই পাশে তাকিয়ে দেখে রাজ শুট করেছে বিভানকে।মৃদু হেসে রাজ বলে,”আজ তোমার খেলা চলছে না মামা।আমার বউ মাঠে নেমেছে আজ।তাকে হারতে দেই কিভাবে বলো!আমি আবার বউ ছাড়া থাকতে পারি না।তাই তো বউয়ের শত্রুদের আমি জিততে দেই না।তোমাকে আমার বউয়ের হাতেই শেষ হতে হবে মামা।”

বিভান তার হাত ধরে ওখানে বসে পড়ে।হাত থেকে রক্ত পড়ছে।মৌ এসে পিয়াশের পা বেঁধে দেয়।মায়া একটি আংটি নিয়ে সোনালীর সামনে দাঁড়ায়।সোনালীকে উদ্দেশ্য করে বলে,”এই আংটি আপনার খুব পছন্দের তাই না মিসেস সোনালী?”

সোনালী চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।মায়া রহস্যের হাসি দিয়ে বলে,”এটা আসলে আমার শাশু মায়ের আংটি না আমি খুব ভালো করেই জানতাম।কেনো জানেন?কারণ এই আংটির সাইজ দেখে।আমি যখন মামীকে এই আংটির সাথে দেখি তখন খুব ভালো করে দেখি আংটির সাথে সুতো বাধা।আংটিতে সুতো বাধা থাকে কারণ আঙুলের সাথে ফিট হওয়ার জন্য। আর আংটি যে উনি আগে পড়তেন না এটা আমি আরো শিওর হই তো সেই রাতে যে রাতে আপনি গহনার লকার থেকে এই আংটি নিয়ে নিজের আঙ্গুলে দেন। আর পরে ফোন করে কাউকে বলেন যে আংটি নিয়ে সোজা এয়ারপোর্টে আপনার লোক যাবে।এরপর যখন মামী আপনাদের কথামত আমাকে বলে এটা আমার শাশু মায়ের আংটি আপনি ভেবে নেন আমি ক্ষিপ্ত হয়েছি।একচুয়ালি আপনি যে চান আমি আমার সন্দেহের লিস্টে আমার শাশু মা আর মামীকে রাখি। আর তারপর আমিও কোনো ব্ল্যান্ডার করে দিবো।এই যেমন আমার শাশু মাকে মেরে ফেলা তারপর মন্ত্রী মশাই।একেক করে সমস্ত নিরপরাধ ব্যাক্তিকে আমি মারবো এটাই তো আপনি চেয়েছেন।কিন্তু পারলেন না।সো সেড!”

সোনালী এবার নিজের হাত দুটো মায়ার গলায় চেপে ধরে।শরীরের সমস্ত শক্তি এখন মায়ার গলায় প্রয়োগ করছে সোনালী।মায়া মুখে ভিলেনি হাসি দিয়ে বলে,”এভাবে খুন করতে পারবেন না আমাকে।বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছেন।”

বলতে না বলতেই মায়া সোনালীর গলায় আঘাত করে।হাতের কনুই দিয়ে গলা বরাবর আঘাত করায় মাথা ঘুরে গেল সোনালীর।কিছুটা পিছিয়ে যায় সে।ঠিক তখনই সোনালীর পায়ে শুট করে দেয় রাজ।মায়াকে ফ্লাইং কিস দেখিয়ে বলে,”আমার বউয়ের গলা আমি এখনও ঠিকভাবে স্পর্শ করতে পারলাম না তুই দুদিনের ফকিন্নি সোজা টিপে ধরলি!তোকে তো রিমান্ডে পাঠানো উচিত।ফকিন্নির ঘরে ফকিন্নি এমনিতেই কাজ না পেয়ে নারী পাচার করে পেট চালাস আবার আমার বউকে মারতে আসিস।”

চলবে…?

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৫৯
#ইশরাত_জাহান
🦋
রাজের কথা শুনে হো হো করে হেসে দেয় রুদ্র।মাহমুদ সরদার রাজের পাশে এসে বলেন,”মুখে লাগাম দিতে শিখনী তুমি?”

রাজ তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,”মুখে লাগাম দিলে সংসার করবো কিভাবে বাবা?”

“শাট আপ।”

“এই তুমি আর আমার বউ কি শুরু করেছো বলোতো!সব সময় সেই এক ইংলিশ।শাট আপ।এটা ছাড়া কি তোমরা শশুর বউমা কোনো ইংলিশ শিখতে পারো নি?”

মায়া আর মাহমুদ সরদার একসাথে বলে ওঠে,”শাট আপ।”

রাজ দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,”নেও শশুর বউমা এখন কম্পিটিশন শুরু।ভাই রুদ্র এখন তোমার লোক ডাকো।এদের নিয়ে যেতে হবে তো।”

রুদ্র মাথা নাড়িয়ে বলে,”ওরা এসে গেছে।”
বলেই ইশারা করে দরজার দিকে।সবাই দেখলো সেদিকে। জেসিকে উদ্দেশ্য করে রুদ্র বলে,”মিস জেসি।”

“ইয়েস স্যার?”

“নতুন কেস ফাইল কর।ওয়ান ডিউটি অফিসারের সামনে নিরপরাধ ব্যাক্তির গায়ে হাত তোলা।”

সোনালী এবার রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে,”বাবা রুদ্র। আর যাই হোক আমি তো তোকে মানুষ করেছি।আমার সন্তান হিসেবে তোকেই সম্পত্তি দিতাম আমি।পাগলের মত করিস না।আমি যা পাবো তার হাফ শেয়ার তুই পাবি।”

ফিচেল হেসে রুদ্র বলে,”ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন আমি যে পজিশনে আছি এটা নিম্ন কোনো পদ না। আর আমার বাবা দাদারা কোনো ফকির না যে আপনার সম্পত্তির দিকে তাকাতে হবে।আমি এমনিতেই এনাফ।”

পুলিশ হ্যান্ডকাপ পরিয়ে দেয় বিভান আর সোনালীকে।মহিলা পুলিশ এসে সোনালীকে ধরে আর পুরুষ পুরুষ বিভানকে।সবাই তাকিয়ে দেখছে দুজন আসামিকে যেতে।রাজ্যের হাসি বিরাজ করছে সবার মুখে।ঠিক তখনই মহিলা পুলিশের পায়ে নিজের হিল পরা পা দিয়ে জোরে আঘাত করে সোনালী।মহিলাটি আঘাত পেয়ে ঝুঁকে বসে।এই সুযোগে কোমড়ে থাকা বন্দুক বের করে সোজা রাজের দিকে শুট করে দেয় সোনালী।সোনালীর এমন কাজে সবাই দিশেহারা হয়ে যায়।হঠাৎ এমন কাজ করবে কেউ বুঝতে পারেনি।ভাগ্য বশত গুলি রাজের বাম হাতের পাশ দিয়ে যায়।সবাই এগিয়ে আসে রাজের কাছে।মায়া দেখছে রাজের হাতের রক্ত।রাজের হাতের রক্ত যেনো মায়ার মাথায় চেপে বসেছে।হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে রক্তচক্ষু নিয়ে রুদ্রকে বলে,”ওয়ান ডিউটি অফিসারের সামনে কি একজন নারী তার আসামির সাথে হিসাব মিটাতে পারে মিস্টার রুদ্র?”

রুদ্র কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে দেয়।মায়া বড় বড় কদম ফেলে এগিয়ে গেলো সোনালীর দিকে।চোখ দিয়ে ইশারা করতেই পাশের কর্মীরা সরে দাঁড়ায়।মায়া তার উচু হিল সহ পা উচু করে সোজা লাথি মারে সোনালীর বুকের উপর।মুখ থুবড়ে সোনালী পড়ে যায় মাটিতে।সোনালীর কাছে এগিয়ে এসে মায়া হাঁটু গেঁড়ে নিচু হয়ে বসে।তারপর সোনালীর চুলের মুঠি ধরে দাড় করিয়ে বলে,”আমার স্বামীর গায়ে একটা আছর আমি কাউকে লাগতে দেই না। আর তুই তার হাতে ক্ষত বানিয়ে দিলি।তোকে তো এখন ভোগ করতেই হবে।”

বলেই মাটি থেকে বন্দুক উঠিয়ে নেয় মায়া।সোনালীর হাত থেকে অনেক আগেই পড়ে যায় বন্দুক।সেটা উঠিয়ে মায়া শুট করে দেয় সোনালীর হাতে।সোনালী ছিটকে যায়।মায়া একবার শুট করে সোনালীর চোখের দিকে ভয়ানক দৃষ্টি রেখে আবারও শুট করতে থাকে।পরপর তিন চারটা শুট করে মায়া থেমে যায়।রুদ্রের ইশারা পেয়ে জেসি এই বিষয়টা কেস থেকে স্কিপ করে দেয়।সোনালীর বিষয়ে রুদ্র উপর মহল থেকে শুট করার পারমিশন পেয়েছিলো।শুধু সোনালী না বিভান ও যে যে আসামী এই কাজের সাথে জড়িত তাদেরকে ওয়ান ডিউটি থাকা কালীন শুট করা যাবে।মায়াকে থেমে যেতে দেখে রুদ্র ইশারা করে পুলিশদের।ওরা সোনালী আর বিভানকে নিয়ে যাবে ঠিক তখন বিভান ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় পাশের পুলিশকে।তারপর তার কাছে থাকা বন্দুক মায়ার দিকে তাক করে বলে,”এই মায়া না থাকলে আজ আমার দিন খুব ভালো মতো যেতো। মায়ার জন্য আমি আমার সব হারিয়েছি।তোকে তো আমি ছাড়বো না।”

কথাগুলো বলে যেই শুট করে মায়ার দিকে সবাই দৌড়ে আসতে নেয়।বিশেষ করে রাজ।কিন্তু সবাই যেনো ওখানেই স্তব্ধ হয়ে যায়।সবাইকে অবাক করে দিয়ে হুইল চেয়ার টেনে মায়ার সামনে এতগুলো বছর পর ঢাল হয়ে আসে মোহন সরদার।মায়া এখনও হাঁটু গেঁড়ে বসে থাকার কারণে মোহন সরদার মায়ার সামনে আসায় গুলি সোজা এসে লাগে মোহন সরদারের কপাল বরাবর।কপাল ছিদ্র হয়ে রক্ত পড়ছে।মায়া মূর্তির মত বসে দেখছে।সব যেনো চোখের পলকে হয়ে গেল।রুদ্র এবার বিভানের কাছে আসে আর জেসি আসে সোনালীর কাছে।বিভাবের হাতে লাথি মেরে বন্দুক ফেলে দেয় রুদ্র।ওদেরকে ভালো করে দেখে নেয় আর কোনো অস্ত্র আছে কি না।ফলস্বরূপ কোনো অস্ত্র পায় না ওরা।পুলিশ সোনালীকে ওঠানোর চেষ্টায় থাকে সবার চোখ তখন মোহন সরদারের দিকে।মোহন সরদার মায়া আর মৌয়ের দিকে তাকাচ্ছে বারবার।আফসোস হলেও এটা সত্যি যে মায়া আর মৌয়ের চোখে এক ফোঁটা ভালোবাসা দেখা গেলো না।মিলি কান্না করছে।ও দৌড়ে আসে মোহন সরদারের কাছে।ঠিক তখনই আরো একটা বন্দুকের শব্দ আসে সবার কানে।সবাই পাশে তাকিয়ে দেখে সোনালী নিজেকে নিজের মাথায় শুট করেছে।যে মহিলা পুলিশ সোনালীকে উঠাতে চেয়েছিলো তার সাথে থাকা বন্দুক চোখের আড়ালে নিয়ে হাতে হ্যান্ডকাপ সহ সোনালী নিজেকে শুট করে।হালকা হেসে সোনালী বলে,”হেরে যখন গেছি সোজা মৃত্যুকে গ্রহণ করে নেই।তিলে তিলে মরার চেয়ে একেবারে মৃত্যু ভালো।”

মিলি মুখে ওড়না চেপে মাটিতে বসে পড়ে।একদিনে বাবা আরেকদিকে মাকে একই অবস্থায় দেখে তার সহ্য হয় না।ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরে আছে রাজ।আশ্রম কর্মী একটি মেডিসিন দেয় রাজের হাতে।হাতের কোনা দিয়ে গুলি চলে যায় তাই তেমন কোনো সমস্যা নেই।মোহন সরদার দুর্বল হয়ে পড়েছে। শ্বাস টানছে জোরে জোরে।মায়া তার দিকে তাকিয়ে বলে,”এই মায়া নিজেকে রক্ষা করতে জানে মোহন সরদার।তার বাবার দরকার হয় না।যে সময়টায় দরকার ছিল তখন যখন বাবার দায়িত্ব পালন করেননি আজ না করলেও পারতেন।”

মোহন সরদার হাঁফাতে হাঁফাতে মায়ার দিকে মলিন দৃষ্টি দিয়ে বলে,”পৃথিবীতে নিকৃষ্ঠ বাবা হয়ে যদি কেউ থাকে তাদের মধ্যে আমি একজন।হাজার শাস্তি ফিকে পড়ে যাবে এই অন্যায়কারী বাবার অতীতের কর্মের জন্য।তাই ভাবলাম মৃত্যুকে গ্রহণ করে মুক্তি দেই আমার মোহ মাকে।”

দুই ঠোঁট একসাথে করে অন্যদিকে ঘুরে দাড়ালো মায়া।চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে।কিন্তু চোখ বেয়ে পানি আসছে না।এই চোখের পানি অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে।বৃষ্টি যেমন আকাশে দীর্ঘ সময় পর থেমে যায়।চোখের পানিও তেমন আস্তে আস্তে করে থেমে যায়।মোহন সরদার এখনও মায়ার দিকে তাকিয়ে।মায়াকে উদ্দেশ্য করে মোহন সরদার বলে,”একবার বাবা বলে ডাকবি মোহ মা?”

মায়া কোনো কথা বলে না।কিছুক্ষণ চুপ থাকে।শাহানা পারভীন এসে দাঁড়ায় মায়ার কাছে।মায়ার মাথায় হাত রাখে শাহানা পারভীন।মাকে দেখে মায়া বলে,”আপনার প্রতি বাবার অনুভূতি আমি পাই না।জোর করে আমাকে দিয়ে কোনো কিছু করানো সম্ভব না।আমি যার প্রতি টান অনুভব করি না তাকে হাজার চাইলেও আপন করতে পারব না।হোক সে আমার রক্তের কেউ।”

মোহন সরদারের বুক ফেটে যাচ্ছে।তিনি মৌয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”অন্তত তুই আমাকে বাবা বল।যাত্রা পথে আপন সন্তানের থেকে বাবা ডাক শুনতে চাই।”

মৌ কিছু বলতে পারছে না।অনেক কষ্টে ও ওর পেটের দিকে তাকালো।ওখানে একজন বেড়ে উঠছে।শাহানা পারভীনের দিকে তাকাতেই শাহানা পারভীন মাথা নাড়িয়ে কিছু বুঝিয়ে দিলেন।মৌ চোখের পানি মুছে বলে,”বাবা।”

মায়া চোখ বন্ধ করে নেয়।শাহানা পারভীন এবার মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,”তুই কেনো বলছিস না?”

চোখ বন্ধ রেখেই মায়া বলে,”আমার দ্বারা সম্ভব না মা।”

“একজন মৃত্যু পথযাত্রী ব্যাক্তির ইচ্ছা পূরণ করবি না মোহ মা?”(মোহন সরদার বলে)

মায়া বলে ওঠে,”আপনাকে হাসপাতালে নেওয়া হবে। ডক্টর আদ্র কল করেছেন তো।এম্বুলেন্স আসবে এখন।”

মায়ার কথাতে প্রকাশ পায় সেও মোহন সরদারকে মারতে চায় না।কিন্তু বাঁচিয়ে রেখে তার পাপের শাস্তি দিতে চায়।মৃদু হাসলো মোহন সরদার।ভাইয়ের পাশে বসে আছেন মাহমুদ সরদার।যতই হোক ভাই তো তার আপন।অপেক্ষায় আছে এম্বুলেন্স আসার।কিন্তু আজকে যেনো এম্বুলেন্স আসতেও দেরি করছে।করারই কথা।আশ্রম থেকে হাসপাতাল তো দূরে।এদিকে রাজ রুদ্র আদ্র বাইকে করে আসে আর মায়ার গাড়ি চলে গেছে।মায়া কল করলে তারপর আসবে।আশেপাশে মায়ার ড্রাইভার থাকা মানে তাদের জীবন ঝুঁকিতে তাই।সিয়া আর শাহানা পারভীন এনারা নিজেরাও ভাড়া করা অটোতে এসেছিলো।আজকেই যেনো যত বিপদ বেড়ে গেলো।কোনো উপায় না পেয়ে মাহমুদ সরদার বলেন,”ভাইকে নিয়ে বাইকে উঠো রুদ্র।কোনো রকমে এগোতে থাকি।”

মোহন সরদার বাধা দিতে থাকে।হাত দিয়ে থামিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে বলে,”কোনো কিছুতে লাভ নেই।আমার মাথার গভীরে যন্ত্রণা বেড়ে গেছে।আমি বুঝতে পারছি আমি বাঁচব না।দুই এক মিনিটের জন্য কেনো দৌড়া দৌড়ি করে সময় নষ্ট করবে?অন্তত তোমাদের কাছে থেকে সময়টা পার করি।”

শাহানা পারভীন এবার মায়াকে বলে ওঠে,”এভাবে মুখ ফিরিয়ে রাখিস না মা। হ্যাঁ আমিই চেয়েছিলাম তুই এই লোককে শাস্তি দে।কিন্তু একজন মৃত যাত্রী ব্যাক্তির ইচ্ছা পূরণ কর।আজ সে অন্তত যেতে যেতে পথে তার ভুল বুঝতে পেরেছে। আর এমন ব্যক্তিকে এতটাও অবজ্ঞা করতে নেই।খোদা মেনে নিবে না যে।”

এবার চোখ খোলে মায়া।চোখ খুলে এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা তাকালো শাহানা পারভীনের দিকে।শাহানা পারভীনকে দেখতে থাকে মায়া।সেই কালো চামড়ার নারীটি।যাকে শুধু সে একাই ভালোবাসে।মা বলেই হয়তো নারীর টান অনুভব করে ভালোবাসার জন্ম।কালো ব্যক্তিতে রক্তের মানুষ ছাড়া কেউ ভালোবাসে না।লোক দেখানো কিছু মানুষ থাকে।দুদিন পর তাদেরকেও পাওয়া যায় না।শাহানা পারভীনের দিকে তাকিয়ে মায়া বলে,”বাবা ডাকটা কি এতই সহজ মা?হয়তো সহজ কিন্তু আমার জন্য তো কঠিন।আমি তো বাবা ডাকতে পারছি না।বাবা ডাকটা আমাকে বোবা করে দিয়েছে।আসে না তার জন্য এই ডাক।আমার কি দোষ?আমার ইমোশন তো উনিই খুন করে দিয়েছে আমার ছোটবেলায়।”

বলেই শাহানা পারভীনকে জড়িয়ে ধরে মায়া।শাহানা পারভীনের বুকে মুখ গুঁজে কান্নাগুলো লুকাতে থাকে।মায়া তার কান্না কাউকে দেখাতে চায় না।মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে শাহানা পারভীন বলে,”এখন তো দুঃখের দিন শেষ মা।সুখ তো তুই নিজে আদায় করেছিস।সে নিকৃষ্ট থাকলে আমি তোকে বলতে বলতাম না।আমার জন্য তার মধ্যে যাই থাকুক তোদের জন্য এখন সে অনুতপ্ত।মায়ের কথা শোন মায়া।মনের বাইরে যেয়ে একবার বলে দে বাবা।অন্তত সে এটা বুঝুক আমরা এতটাও নিকৃষ্ঠ না।”

মায়া শাহানা পারভীনের চোখের দিকে দেখে মোহন সরদারকে দেখে।মোহন সরদারের দিকে তাকিয়ে কোনো অনুভূতি হলো না মায়ার।শুধু তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,”ভেবে নিবেন না আমি আপনাকে মন থেকে বলছি।আমার মা আদেশ করেছে তাই বলছি শুধু।বাবা।”

মায়ার মুখে বাবা ডাক শুনে আলতো হাসলো মোহন সরদার।কান্না করে দেন মাহমুদ সরদার।ভাইকে দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ভাই কতটা কষ্ট পাচ্ছে।তবে বেচে থাকতে মায়া আর শাহানা পারভীন যা পেয়েছে তার কাছে এগুলো কিছুই না।মানুষ জন্মানোর সাথে সাথে মৃত্যুকে ভাগ্যের সাথে লিখে নিয়ে আসে।তার মৃত্যুটাও তো তার ভাগ্যে রাখা আছে।মানুষ মরণশীল।মোহন সরদারের শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।সোনালী নিজেও এখন বিদায় নিয়েছে।তার রুহু ঘুরছে শুধু চারদিকে।কিন্তু তার শরীর পড়ে আছে মাটিতে।মিলি তার বাবা মায়ের দুই লাশের মাঝে মাটিতে বসে কান্না করছে।এম্বুলেন্স এসেছে।কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে এখন।মায়া সেদিকে তাকিয়ে বলে,”এটাকেই বলে ভাগ্য।কিছু প্রতিশোধ মানুষ নিজ কর্মেও পেয়ে থাকে।আমরা হাজার প্ল্যান করলেও খোদার ইচ্ছার বাইরে যেতে পারি না।”

সবাই নীরব দর্শক হয়ে বসে আছে।চোখ ভিজে এসেছে মাহমুদ সরদারের।রুদ্র নিজেও কান্নারত চোখে দেখতে থাকে মোহন সরদারকে।গালাগালি করলেও তার উন্নতির জন্য করতো।লোকটা যেমনই হোক রুদ্রের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে চাইতো।মিলি বলে ওঠে,”আমার বাবা মা একদিনে সবাই চলে গেলো।আমি অনাথ হয়ে গেলাম।আজকেই তাদের সব সত্যি জানতে পারলাম আর আজকেই তারা এভাবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলো।”

হাউমাউ কান্না করছে মিলি।তারেক এসে মিলির পাশে বসে পড়ল।রাজ এসে দাড়ালো মায়ার পাশে।মায়ার হাতের সাথে নিজের ডান হাত রাখলো রাজ।মায়া তাকালো রাজের দিকে।মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়ে তোলে মায়া।রাজ চোখ দিয়ে আশ্বাস দিলো,”আমি আছি তোমার কাছে।সবসময়ের জন্য আমার মায়াবতী।”

শাহানা পারভীন একটু পিছনে চলে যান।কষ্ট তার নিজের মধ্যেও হচ্ছে।সে যে কারণেই হোক।আজ সুখের মাঝে কিছু দুঃখের ছোয়া দেখা দিলো।বিভানকে নিয়ে চলে গেছে পুলিশ।রুদ্র সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,”লাশগুলোকে নিয়ে যেতে হবে।এভাবে বসে থেকে সময় নষ্ট না করাই ভালো।আশ্রমের বাচ্চারা ঘাবড়ে যাচ্ছে।”

মায়া দেখলো বাচ্চাগুলোকে। ছোট হাসির দিকেও মায়ার চোখ গেলো।রুদ্রের কথাকে সম্মতি দিয়ে মায়া বলে,”বাচ্চারা আসলেই ভয় পেয়েছে খুব।যেটা হবার তাতো হয়েছে।এখন লাশ দুটো এম্বুলেন্স করে নিয়ে যেতে হবে।”

সবাই আস্তে আস্তে উঠে দাড়ালো।মায়া এসে মিলিকে সামলাচ্ছে।সিয়া সামলাতে থাকে মৌকে।মৌকে এখন অতিরিক্ত চাপে রাখা যাবে না।রুদ্র তার লোককে কল দিয়ে বলে,”হিয়াপাখিকে ছেড়ে দেও। আর সেফলি সরদার বাড়িতে নিয়ে আসো।”

ওপাশ থেকে বলে,”ওকে বস।”

********
মাত্র বাসায় এসে পৌঁছালো হিয়া।এসেই দুটো লাশ দেখে অবাক হয়।আশেপাশে সবাই নিরব হয়ে আছে।হিয়া দৌড়ে যায় তার বাবার কাছে।বলে,”কি হয়েছিলো বাবা।ভাবী কিছু করেছে?”

মালিনী এসে হিয়াকে বলে,”না রে মা তোর ভাবী কিছু করেনি।”

মালিনীকে দেখে অবাক হয়ে হিয়া বলে,”তুমি সুস্থ আছো মা।আমি একটু শান্তি পেলাম।কিন্তু তোমাকে যে ভাবী মেরেছিলো।”

“ওগুলো নাটক ছিলো।সে অনেক ব্যাপার। তোর কাকা কাকি মারা গেছে।তাদের জন্য দোয়া কর।ওসব কথা পরে হবে।”

হিয়া আশেপাশে তাকালো।বাবা মায়ের মৃত্যুতে রুদ্রকে দেখতে পাচ্ছে না।রুদ্রকে কি তাহলে কেউ জানায়নি।আসলে হিয়া জানে না রুদ্র কি করে।এখন রুদ্র তার অফিসে।বিভানকে নিয়ে ব্যস্ত আছে সে।এই অবস্থায় কেউ এখন রুদ্র সম্পর্কে হিয়াকে কিছু বলতে পারবে না।তাই হিয়া চুপ করে আছে।মনে মনে রুদ্রর প্রতি রাগ বাড়ছে হিয়ার।বাকি সব কিছু বাদ বাবা মায়ের মৃত্যুতে তার নষ্ট পুরুষ নেই।এটা যেনো রুদ্রর প্রতি ঘৃণা আরো বাড়িয়ে দিলো।

চলবে…?