মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব-৬৬ এবং শেষ পর্ব

0
5

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#শেষ_পর্ব
#ইশরাত_জাহান
🦋
[প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে হিয়াকে কল দিলো মায়া।সিয়া এখনও ব্যাস্ত।বাসায় পৌঁছেছে সবাই।হিয়া নিজেই কল করে মায়াকে।তাই হিয়ার কল দেখে মায়া এখন ব্যাক করলো।সোফায় বসে বসে হিয়ার সাথে কথা বলছে মায়া।ঠিক তখন রাজ এসে মায়ার কাছে বসে।মায়ার থেকে ফোন নিয়ে রাজ বলে,”এই তোদের বরের কি বিরক্ত লাগে না?আমারই তো বিরক্ত লাগছে আমার বউ আমাকে সময় না দিয়ে সবাইকে সময় দেয় তাই।”

হিয়া মুখটা বাচ্চাদের মত করে বলে,”এই তোমার ট্রেইনিং পেয়ে ওই নষ্ট পুরুষটাও এখন লাগামহীন।উল্টা পাল্টা বকতে থাকে।”

“বরকে নষ্ট পুরুষ বলতে নেই বোন।আল্লাহ গুনাহ দেয়।”

চোখ ছোট ছোট করে মায়া বলে,”রিয়েলী মন্ত্রী মশাই!”

চোখ টিপ দিয়ে মায়াকে রাজ বলে,”বর শুধুই ভালোবাসার পুরুষ।নারীর একমাত্র শখের পুরুষ তার স্বামী।”

হিয়া টুক করে কল কেটে দেয়।কারণ এখন রুদ্র এসেছে।একবার যদি রুদ্র রাজের সাথে কথা বলতো তাহলে আজকের বাসরের সবকিছু রাজের থেকে আইডিয়া নিয়ে নিতো
।এটা হিয়া শিওর।দুজনেই যে লাগামহীন।কল কাটাতে রাজ ঠোটটা বাচ্চাদের মত করে বলে,”কি হলো!ফোন কাটলো কেনো?”

“লাগামহীন ভাইয়ের ফোন থাকলে এভাবেই কাটতে হয়।”

“আচ্ছা আসো।”

“কোথায়? আর কেনো?”

“বাবুর ঘুমের সময় আর তার বাবার প্রেমের সময় তাই।ভয় নেই আমার শখের বাথরুম বিলাস হবে না এখন।”
বলেই মায়াকে নিয়ে ঘুমাতে যায় রাজ।

*******
বাসরে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে সিয়া।অপেক্ষায় আছে আদ্র আসার।একটু আগে হাসপাতাল থেকে কল এসেছে।বেশিরভাগ মানুষ শুভ কামনা করছে তাকে।অবশেষে সিয়ার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রুমে এলো আদ্র।রুমে এসেই পকেটে থাকা বন্দুক বেড় করে।সিয়া ঘোমটার ভিতর থেকে দেখেই ভয় পায়।শুকনো ঢোক গিলে বলে,”আপনি কি বাসরে খুন করবেন?”

ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে আদ্র।সিয়ার পাশে বসে।বন্দুকটা পাশের টেবিলে রেখে বলে,”এটা সেফটির জন্য ছিলো।আশেপাশে অনেক শত্রু ঘোরাফেরা করে তাই।”

“বিয়েতে এটা আপনি সাথে করে রেখেছিলেন?”

“শুধু আমি একা না।রুদ্রও তাছাড়া তোমার ভাই রাজ ভাবী মায়াও বন্দুক ক্যারি করে।”

“কই আমি তো করি না বন্দুক ক্যারি।”

“এই জন্যই তো তুমি আমার প্রেয়সী।”
বলেই সিয়ার ঘোমটা উঠিয়ে দেয়। সিয়াকে দেখে আদ্র বলে,”মাশাআল্লাহ।আমার ভালোবাসা আমার প্রেয়সী।”

বলেই সিয়ার ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো।সিয়া লাজুক হাসি দিয়ে নিচে তাকিয়ে আছে।আদ্র সিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”তো!আমরা বাবু নিবো কবে?”

সিয়ার এবার লজ্জাটা দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।আদ্র আবারও বলে,”তুমি স্টাডি কমপ্লিট করার পর বাবুর প্লানিং করি।কি বলো?”

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো সিয়া।আসলে সিয়া নিজেও এটাই চায়।ওর স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া।আদ্র খুব ভালো করেই জানে।তাই তো এখন সিয়াকে এগুলো বলতে থাকে।হঠাৎ আদ্র সিয়ার হাত ধরে নিজের অতি নিকটে এনে বলে,”বাবু আনবো দেরি করে কিন্তু বউকে দূরে রাখি কি করে?প্রেম ভালোবাসা চলতেই থাকবে।”

“যদি বাবু হয়?”

আদ্র হেসে দেয়।বলে,”আল্লাহর ইচ্ছাকে কবুল করতে হবে।তবে বাবু না হওয়ার চেষ্টা করবো।হয়ে গেলেও বা কি?আমরা আছি তো।”
বলেই সিয়াকে নিয়ে মত্ত হয় আদ্র।

******
রুদ্রের ঘরে এসে হিয়া অবাক হয়ে যায়।বড় একটি বুকশেলফ।যেটাতে নতুন নতুন উপন্যাসের বই।খাট থেকে রজনীগন্ধার সুভাষ আবার বুকশেলফ থেকে নতুন বইয়ের।হিয়ার তো আনন্দের শেষ নেই।রুদ্র এসে দরজা লাগিয়ে দিলো।আজ থেকে হিয়া আর রুদ্র এক ঘরে থাকবে।ভাবতেই অন্যরকম অনুভূতি কাজ করলো হিয়ার মনে।রুদ্র ধীরে ধীরে হিয়ার কাছে এগিয়ে আসে।হিয়া হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছে।হিয়ার মাথায় ঘোমটা নেই।ও এতক্ষণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিলো ওর বুকশেলফ।রুদ্র ওর ওষ্ঠ হিয়ার নিকটে নিতে আসতেই হিয়া হাত দিয়ে আটকে দেয়।রুদ্র ভ্রুকুটি করে।হিয়া বলে,”আমি ধূমপান শোষণ করতে রাজি নই রুদ্র ভাই।”

হিয়ার কোমর শক্ত করে ধরে রুদ্র হিয়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।কোনো দূরত্ব রাখে না।হিয়া হাসফাস করছে।রুদ্র দেখছে।রুদ্রের বুকের দিকে হিয়ার নাক।যার ফলে হিয়ার নিশ্বাসের গরম আভাস পাচ্ছে রুদ্র তার বক্ষে।রুদ্র এবার নেশাতুর হয়ে হিয়াকে বলে,”আজকে আমি আমার হিয়াপাখিকে শোষণ করব তাই ধূমপান শোষণ করিনি।বউয়ের ওষ্ঠকে আঁকড়ে নিতে পারলে ধূমপানের প্রয়োজন হয় না হিয়াপাখি।”

মনে পড়ে যায় পুরোনো কথা।কত কিছু বলতো রুদ্র।আজ আবারও মনে পড়ল।রুদ্র এবার দেরি না করে হিয়ার ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো।নিজের ইচ্ছামত শখ মিটিয়ে নিলো রুদ্র।হিয়া বাধা দিলো না।শুধু চোখ বন্ধ করে আছে।হিয়ার এবার দম বন্ধ হয়ে আসার মত অবস্থা।রুদ্র উপলব্ধি করলো।তাই ছেড়ে দিলো হিয়াকে।এখনও চোখ বন্ধ করে আছে হিয়া।লজ্জা লাগছে তার।রুদ্র দেখছে তার হিয়াপাখিকে।হিয়ার দুই গাল ছুঁয়ে দাড়িয়ে আছে রুদ্র।হিয়া বুঝলো তার রুদ্র সরে গেছে।তাই চোখ খুলল।রুদ্র বলে,”আজ রাত জাগবী হিয়াপাখি?”

হিয়া কিছু বলে না।রুদ্র বলে,”ওই দেখ তোর আর আমার চায়ের সাথে প্রেমের সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধির ব্যাবস্থা করেছি।”

রুদ্রের চোখের ইশারা পেয়ে হিয়া বিছানার পাশের টেবিলের দিকে তাকালো।ওখানে দুইটি কাপ ও একটি ফ্ল্যাক্স আছে।হিয়া এবার দাঁত বের করে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,”চায়ের সাথে চন্দ্র বিলাস?”

“হ্যাঁ।আমার আর হিয়াপাখির বাসর হবে খুবই স্পেশাল ভাবে।আমি আমার হিয়াপাখির মনের মত করে তার রাজত্ব সাজিয়েছি।তোর না তোমার আর আমার একত্রে গড়ে উঠবে এই রাজত্ব।”

বলেই হিয়াকে নিয়ে চলে যায় ব্যালকনিতে।ওখানে একটি টেবিল ফ্যান ও কিছু ফুল আছে। ফ্লোরে খুব সুন্দর করে বিছানা পাতা।হিয়াকে বসিয়ে দিয়ে রুদ্র ঘরে যায়।চায়ের ট্রে নিয়ে আসে।ফ্যানের পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে চা ঢালে কাপে।হিয়াকে একটি কাপ দিয়ে রুদ্র নিজেও একটি কাপ নেয়।দুজনে চাঁদ দেখার সাথে চা উপভোগ করছে।রুদ্র নিজের কাপের চা অতি দ্রুততার সাথে শেষ করলো।তারপর হিয়ার কাপ নিয়ে চুমুক দিলো।হিয়া বলে ওঠে,”পুরোনো অভ্যাস এখনও গেলো না আপনার রুদ্র ভাই?”

তেতে উঠলো রুদ্র।হিয়ার দিকে ঘুরে জোরে ঝাড়ি মেরে বলে,”কোন বালের ভাই লাগি আমি তোর?সেই ধরে সাইয়াকে বলে যাচ্ছিস ভাইয়া।স্বামী হই আমি তোর।ওগো হেগো এসব বলবি।ভাইয়া বলবি না একদম।”

রুদ্র যে রেগে আছে বুঝতে পারল হিয়া।মুখটা ভোঁতা করে বসে আছে হিয়া।রুদ্র এবার হিয়াকে দেখে নিলো আড়চোখে।বুঝলো একটু বেশীই বলেছে।হিয়ার বাহু ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে রুদ্র বলে,”এভাবে স্বামীকে ভাইয়া ভাইয়া বললে তো আমাদের বাবুরা কনফিউজড হয়ে যাবে।কখনও আমাকে বলবে মামা কখনও তোমাকে বলবে ফুফু।বাবা মা হয়ে এসব শুনতে কি ভালো লাগবে বলো?”

“ভালো ভাবেও বলা যেতো।এভাবে কেউ বকে?তাও কি না বাসর রাতে।”

রুদ্র মেকি হাসি দিয়ে বলে,”বাসরে বকেছি বলে রাগ করেছো বউ?”

রুদ্রের শয়তানি বেড়েছে।বুঝলো হিয়া।হেসে দিলো নিজেও।রুদ্রের বক্ষে মাথা রেখে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকে।রুদ্র নিজেও হিয়াকে বক্ষে রেখে চাঁদ দেখছে।এভাবেই কাটাতে চায় আজ তাদের বাসর।

*******
কেটে গেলো কয়েক মাস।আজ মায়াকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত।তাড়াহুড়া লাগিয়েছে হাসপাতালে যাবে বলে।পেটের ব্যাথা বেড়েছে মায়ার।গাড়িতে করে মায়াকে উঠিয়ে রাজ পাশে বসে থাকে।এই কয়েক মাসে মায়ার রাগ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।গরু খাটানো খাটিয়েছে রাজকে।রাতে ঘুম থেকে উঠিয়ে মায়ার জন্য রান্না করা মিটিং বাদ দিয়ে মায়াকে সেবা করানো কোনো কিছু বাদ যায়নি রাজের।এখনও দৌড়াদৌড়ি করছে রাজ।এই তো মায়াকে কেবিনে ঢুকিয়ে অন্যদিকে কাজ করছে।লোক দিয়ে অগ্রিম রক্ত এনে রেখেছে।বেশি বেশি ফল ও খাবার কিনে এনেছে।কিন্তু মায়ার খোঁজ নেই।অপারেশন চলছে ভিতরে।বাইরে দাঁড়িয়ে আছে পুরো পরিবার।চিন্তায় আছে মায়ার জন্য।রাজ তো এখন মাহমুদ সরদারের পাশে ছাড়া কোনো জায়গায় যাচ্ছেই না।মন খারাপের সময় বাবা একমাত্র আস্থা রাজের জন্য।মাহমুদ সরদার রাজের হাত ধরে বসে আছেন।বারবার শান্তনা দিচ্ছেন,”আল্লাহ আছেন।তিনি দেখছেন।তুমি চিন্তা করোনা।যেটা হবে ভালোর জন্যই হবে।নিরাশ হতে নেই।”

মায়ার জন্য চিন্তায় শেষ রাজ।মায়াবতীর কিছু হলে সে কিভাবে থাকবে?এমনি মায়ার ব্রেইনের সমস্যা আছে।ছোট থেকেই মায়ার মাথায় চাপ পড়লে সবকিছু এলোমেলো করে দেয় সে।রাজের সাথে সংসার হওয়ার পর এই সমস্যাগুলো আর দেখা দেয় না।রাজ যেনো মায়ার ঔষধ।কিন্তু প্রেগনেন্ট হওয়ার পর মুড সুইং এত ছিলো যে টিভিতে কোনো মেয়ে খবর পাঠ করছে তার দিকেও রাজ তাকাতে পারবে না।কারণ মায়া এখন দেখতে আগের মত নেই।খবর পাঠিকা বেশী সুন্দরী।রাজ অনেক বলেও বোঝাতে পারেনি যে তার চোখে তার মায়াবতী সেরা।এই অতিরিক্ত রাগের জন্য অধিক মাত্রায় ঔষধ দিতে হয় মায়াকে।সাথে করে বাচ্চার ব্যাপার তো আছেই।সব মিলিয়ে রাজ এখন নার্ভাস।একজন মন্ত্রী নার্ভাস হয়ে বসে আছে।দুইদিন পর তার ইলেকশন।কিন্তু সে সব ছেড়ে তার মায়াবতীকে নিয়ে ব্যাস্ত।রাজ এক মনে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে মায়ার কথা ভাবছে।এর মধ্যেই অপারেশন রুমের দরজা খুলে যায়।মালিনী আর শাহানা পারভীন এগিয়ে যায়।রাজ এখনও নিচে তাকিয়ে।মাহমুদ সরদার রাজকে হালকাভাবে ধাক্কা দিয়ে বলে,”অপারেশন কমপ্লিট রাজ।”

রাজ ফ্লোরের দিকে তাকিয়েই বলে,”মায়াবতীর কি অবস্থা?”

সাধারণত নার্স দরজা খোলার সাথে সাথে সবাই বাচ্চার খোঁজ করে।কিন্তু রাজ তার বাচ্চার খোঁজ না নিয়ে মায়াবতীর খোঁজ নিচ্ছে।ডাক্তার পাশে ছিলেন।তিনি হালকা হেসে বলেন,”আপনার ওয়াইফ একদম ঠিক আছেন।এখন রেস্ট নিচ্ছেন।বাবুকে দেখবেন না?”

মায়াবতী ঠিক আছে শুনে কলিজা ঠান্ডা হলো রাজের।বাবুর কথা মনে পড়তেই উঠে দাড়ালো।বাচ্চাটা কান্না করছে না।কিন্তু ছোট্ট ছোট্ট হাত পা গুলো ছোটাছুটি করছে।রাজ এগিয়ে এসে দেখলো ওর ছোট্ট বাবুটাকে।ফর্সা দেহে রক্ত জমাট হওয়ায় লাল লাল আভাস।ডাক্তার বলেন,”ছেলে বাবু হয়েছে আপনার।মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর।”

রাজ বাবুকে নিতে ভয় পাচ্ছে।বলে,”ও যদি ব্যাথা পায়।আমি নিতে পারব তো?”

শাহানা পারভীন এসে বাবুকে নিয়ে রাজের কোলে দিলেন।তারপর বলেন,”ভয়ের কিছুই নেই।প্রথম প্রথম এমন মনে হয়।নে এবার বাবুর কানে কানে আজান দে।”

রাজ নিলো আর বাচ্চাকে।দুই হাত ধরে বাচ্চাকে নিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে আজান দিতে থাকে।তারপর বলে,”মাশাআল্লাহ আমার বাচ্চাটা।আমার মেহরাজ।আমার আর মায়াবতীর কলিজা।আজ থেকে তোমার নাম মেহরাজ সরদার।”

মেহেরুন জাহান মায়া আর শাহমীর রাজের মিলনে মেহরাজ নাম ঠিক করে রেখেছিলো মায়ারাজ।সবাই খুশি হলো।রাজ কিছু একটা ভেবে বলে,”ও কান্না করছে না কেনো?”

“এতক্ষণ কান্না করছিলো।মায়া ম্যাম ওকে কোলে নিয়ে শান্ত করে।আমরা দিতে চাইনি।ওয়াশ করার পর বাইরেই আনতে চেয়েছি বাবুকে।কিন্তু মায়া ম্যাম জোর করলেন।তিনি তো ঘুমের ঔষধটা নেননি।তাই জেগে আছেন।আবার অবাস করে নেননি তার পেটের দিকটা।তার কথা তিনি অনুভব করবে এই বাচ্চা আসার ব্যাথাটা।”

মেহরাজকে মাহমুদ সরদারের কোলে দিয়ে রাজ বলে,”আমি আমার মায়াবতীর সাথে দেখা করবো।”

“ওকে।”

রুমের ভিতর আসলো রাজ।মায়ার হাতে কেনোলা।শরীরে রোগীদের পোশাক।দুইপাশে বিনুনি করা।বিনুনি করে দিয়েছিলেন শাহানা পারভীন।সকালের দিকে মায়ার মাথায় তেল দিয়ে বিনুনি করে দেন।মায়ার এই গর্ভাবস্থায় শাহানা পারভীন মায়ার চুলের যত্ন নেন।আগের সেই কাধের ছোট ছোট চুল এখন মাজা অব্দি লম্বা।বিনুনি ঝুলে আছে নিচের দিকে।রাজ এসে মায়ার দুই গাল ছুঁয়ে মায়ার ললাটে ভালোবাসার ছোঁয়া দেয়।মায়া বলে,”তুমি ডিপ্রেশনে ছিলে মন্ত্রী মশাই।”

রাজ এখনও কাপছে।চিন্তার রেশ কাটতে সময় লাগবে।মায়া হার্টবিট শুনতে পাচ্ছে।পাবে না কেনো?রাজ যে তার খুব কাছে।রাজ মায়ার ঠোঁটজোড়া স্পর্শ করতে করতে বলে,”আব্বে এই মায়াবতী!কি ভাবো তুমি এই মন্ত্রীকে?এই মন্ত্রীর বক্ষের রাণীর কিছু হলে সে কি আদৌ ঠিক থাকতে পারে?”

মায়া সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে রাজকে।রাজ এবার শান্তি পায়।বুকটা এবার হালকা হালকা লাগে।বাড়ির সবাই এসেছে মায়াকে দেখতে।সাথে এনেছে মিষ্টি।একেক করে সবাই এখন ওখানেই হাজির হয়।বাচ্চাকে সাথে নিয়ে কিছু ছবি তুলে নেয়।

তিনদিন পর আজ মেহরাজ ও মায়াকে নিয়ে বাড়িতে ফিরলো সবাই।হলরুমে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।ছোট্ট প্রলয় গুটি গুটি পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে খেলছে।বেলুন দিয়ে চারপাশ সাজানো।প্রলয় এদিক ওদিক বেলুনগুলো নিয়ে খেলছে।মৌ মাঝে মাঝে আটকাচ্ছে আবার মাঝে মাঝে ওকে খেলতে দিচ্ছে।প্রলয়ের এখন দশমাস বয়স চলে।মেহরাজকে কোলে নিয়ে মায়া বসে তার আসনে।মেহরাজ কান্না করে দেয়।মেহরাজ হয়েছে খুবই দুষ্টু।ওকে কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করলে খুশি হয় কিন্তু বসে পড়লেই কান্না করে।এই যে এখন কান্না করছে।মায়া কান্না থামানোর চেষ্টায় আছে।রাজ নিজেও মায়ার পাশে বসে মেহরাজকে নিয়ে খেলা করতে শুরু করে।কিন্ত সে বসে থাকবে না বলে কান্না করছে।অনেক জোরে জোরে কান্না করছে বলে প্রলয় খেলা বাদ দিয়ে তাকালো মেহরাজের দিকে।দেখতে পেলো ছোট্ট বাবু কান্না করছে।নিচে হামাগুড়ি দিয়ে মেহরাজের কাছে আসে প্রলয়।সবাই দেখেও চুপ আছে।বাচ্চারা কী করে এটা দেখতে চায়।প্রলয় এসে তার ছোট হাত উচু করে না বোঝা কণ্ঠে বলে,”বা বা ব ব।বাব্য কা।(বাবু কান্না করে)”

মায়া প্রলয়কে কোলে নিতে যায়।রাজ বলে,”তুমি নিও না।আমি ওকে কোলে নিচ্ছি তুমি মেহরাজকে নেও।”

বলেই মেহরাজকে কোলে নিয়ে মায়ার দিকে এগিয়ে দেয়।প্রলয় তার হাত দিয়ে মেহরাজের হাত ধরে। মেহরাজ এতক্ষণ চোখ খিচে কান্না করতে থাকে।কিন্তু নতুন কোনো স্পর্শ পেয়ে কান্না থামিয়ে চোখ মেলে তাকালো।প্রলয় এখনও ঠোঁট উচু করে বলে,”বা বু,বা বু।”

হেঁসে দেয় মেহরাজ।প্রলয় নিজেও হাসে।শাহানা পারভীন ওদের পাশেই দাড়িয়ে ছিলেন।দুই ভাইয়ের এই ভালোবাসা দেখে বলেন,”ভাইয়ে ভাইয়ে মিলে গেছে। আর কিছু লাগে না এখন।এরা দুই ভাই দুইজনের ছায়া হয়ে থাকবে।সরদার বাড়ির দুই রাজপুত্র।প্রলয় আর মেহরাজ।”

সবাই মিলে আনন্দ করতে থাকে।হিয়া ওর পেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।যদিও কিছু বোঝা যাচ্ছে না।যাবে কিভাবে?মাত্র তো দুই মাস।সিয়া এখনও বাবু নিচ্ছে না।এই আট মাসে বাবু নেওয়ার চেষ্টা ওরা কেউই করেনি।ডাক্তারি পড়া শেষ করেই বাবু নিবে।হিয়া এসে মেহরাজকে কোলে নিতেই মেহরাজ তার ছোট্ট ছোট্ট পা দিয়ে লাথি দেয় হিয়ার পেটে।নরম তুলতুলে পা তাই ব্যাথা পায় না হিয়া।কিছুক্ষণ পর প্রলয় হাত দিয়ে আটকায়।এতে করে ছোট্ট মেহরাজ নাক শিটকাতে থাকে।বুঝিয়ে দিলো সে রেগে আছে।রাজ এবার মায়ার কানে কানে মুখ দিয়ে বলে,”আমাদের ছেলেটা হিয়ার পেটে ওভারে লাথি দিছে কেনো?ও কি কিছু ইঙ্গিত করলো?”

মায়া চোখ রাঙিয়ে বলে,”আমাদের ছেলেটার মাত্র চারদিন বয়স।তোমার এখনই ভাবা শেষ!”

“বলা যায় না মায়াবতী।হয়তো আমাদের ছেলে এখন থেকেই ছক্কা মারতে চাইছে।আমার থেকেও দ্বিগুণ বউ পাগল হবে হয়তো।”

“এই জন্য হিয়ার পেটে লাথি দিবে।এই শিক্ষা পেলে উচ্ছন্নে যাবে ও।”

“আরে হয়তো নতুন অতিথির আগমনের অপেক্ষা সহ্য হচ্ছে না তাই।বি পজেটিভ।দেখে নিও হিয়ার বাবুর সাথে আমাদের মেহরাজ সবথেকে বেশি মিশবে।”

রাজের কোলে থাকা প্রলয় তার নিজের ছোট ছোট আঙুল কামড়াতে কামড়াতে তাকালো রাজের দিকে।রাজ এবার প্রলয়কে দেখে বলে,”কি হলো তোমার বাপ?তুমিও কি কিছু বুঝেছো?”

প্রলয় ছোট মানুষ।সে কি আদৌ কিছু বুঝতে পারে?উহুম।কিন্তু তারপরও রাজের কথা শুনে হেসে দেয় প্রলয়।রাজ এই হাসি দেখে বলে,”তো পিয়ু বেবী।তোমার বাচ্চাটাও আমার সাথে ফ্রী হয়ে গেলো।কিন্তু তুমি আজও আমাকে বুঝলে না।”

পিয়াশ এখন আর রাজের কথাতে লজ্জা পায় না।বরং তাল মিলিয়ে হাসতে থাকে। মেহরাজকে ওর দোলনায় শুইয়ে দিয়ে নিচে রাখে।প্রলয় খেলা করছে ওর সাথে।দুই ভাই খুব ভালোভাবে মিশে আছে।বাকিরা ওদের দেখতে দেখতেই অনুষ্ঠান শেষ করে।

মেহরাজকে ফিডিং করিয়ে নিজেও ঘুমিয়ে গেছে মায়া।রাজ এসেছে মাত্র। কাল ইলেকশন ছিলো।জিতেছে সে।রাজ জিতবে এটা নিয়ে রাজের একটা আলাদা অনুমান ছিলো।রাজ সবার থেকে আলাদা।দেশের দরিদ্র ব্যাক্তির কথা চিন্তা করে সবার পাশে দাড়ায় রাজ।কখনও কারো খারাপ অফারে রাজি না হয়ে বরং অসহায় লোকের হয়ে লড়াই করেছে।কয়েকমাস আগে দেশের কৃষিকাজে নতুন ফর্মুলা দিয়ে আরো বেশী উপকার করেছে।এমন মন্ত্রীকে তো জনগণ আশা করে।তাই এবারও ভোটে জিতে গেলো রাজ।এখন আরো একটা মামলা দেখে আসলো সে।এসেই দেখলো মায়া ঘুমিয়ে আছে।ডান হাত মেলানো।ওখানে ঘুমিয়ে আছে মেহরাজ।মেহরাজের গালে চুমু একে রাজ মেহরাজকে সরিয়ে পাশে রাখল।তারপর মায়ার সারা মুখে ওষ্ঠ বিচরণ করতে লাগলো।রাজের এহেন কাজে মায়ার ঘুম ভেংগে গেলো।একটু নড়ে উঠতেই রাজ বলে,”দুষ্টুমি করতে নেই মায়াবতী।আমি ভালোবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছি তোমায়।দুষ্টুমি করলে ভালোবাসার বেঘাত ঘটবে।”

ঘুম ঘুম চোখে মায়া বলে,”শুরু হয়ে গেছে তোমার?এখনও এক মাস বাকি আছে।এই একমাস আমার কাছে আসতে পারবে না।”

হাতে থাকা ঘড়ি খুলে পাশের টেবিলে রেখে মেহরাজকে দেখে নেয় রাজ।তারপর বলে,”হ্যাঁ জানি।ওই একমাস হয়ে গেলে আমি আবারও শুরু করবো।”
“কি?”
“বাথরুম বিলাস।”
“এহ!”
“এহ না হ্যাঁ।এখন আমি তোমাকে নিয়ে টানা দুই কি তিন বছর বাথরুম বিলাসে মেতে থাকবো।আমার লাখ টাকার বাথটাবের স্থান ফাঁকা রাখলে চলবে না।ওকেও সাক্ষী থাকতে হবে আমাদের প্রেমের।তারপর আমরা আবারও একটা বাবু নিবো।”

“লাগামহীন মন্ত্রী মশাই।”

মায়ার নাকে নাক ঘষে রাজ বলে,”আমার মায়াবতীর একমাত্র লাগামহীন মন্ত্রী মশাই।”

তারপর বালিশে মাথা রেখে দুইহাত দুইদিকে এলিয়ে দিয়ে মায়াকে বলে,”আমার বক্ষে তোমাকে স্বাগতম মায়াবতী।”

মায়া মাথা রাখে রাজের বক্ষে।মায়ার মাথায় ওষ্ঠ ছুঁয়ে রাজ পাশে থাকা মেহরাজের মাথায় হাত বোলায়।বিড়বিড় করে বলে,”শেষমেষ পূরণ হলো আমার #মায়াবতীর_ইচ্ছা।”

মায়া মাথাটা দুলিয়ে বুঝিয়ে দিলো। হ্যাঁ পূরণ হয়েছে মন্ত্রী মশাইয়ের #মায়াবতীর_ইচ্ছা।

সমাপ্ত