#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 47
🍁🍁🍁
ঘুমের মাঝে কপোলে তরল পদার্থের অনুভূত হতেই সিমথির ঘুম পাতলা হয়ে আসে। কিন্তু বেশখানিক সময় অশ্রু জড়ানোর ফলে মাথাটা ভার হয়ে আছে। সিমথি ঘাড় ঘুরিয়ে অন্য সাইডে মুখ ঘুরায়। চোখে সূর্যের তীর্যক রশ্মির আলো পড়তেই সিমথি চোখ মুখ কুঁচকে নেয়। চোখ পিটপিট করে খুলে পরিচিত রুমে নিজে আবিষ্কার করে। সিমথি ঘাড় বাঁকিয়ে দেখে আদি সিমথির পাশে বসে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। সিমথি ধপাস করে উঠে বসে।
সিমথি : এমন ভূ/তে/র মতো ডাগর ডাগর চোখে দেখবেন না তো। ঘুম থেকে উঠে এসব দেখলে ভয় লাগে।
আদি : হসপিটালে যাবে না।
সিমথি : কয়টা বাজে।
আদি : দশটা পয়ত্রিশ
সিমথি : ওহ আচ্ছা। এইই কিহহ
সিমথি হালকা চেঁচিয়ে দেয়ালে ঘড়ির দিকে তাকায়। সময় দেখে সিমথির চোয়াল ঝুলে যায়। এতো সময় লাস্ট কবে ঘুমিয়েছিলো সিমথির মনে নেই। সিমথি তাড়াহুড়ো করে উঠে নিচে নামতে নিলে শাড়িতে পা বাজিয়ে বিছানায় ধপাস করে পড়ে যায়। আদি মন খারাপের মাঝেও শব্দ করে হেঁসে দেয়। সিমথি চোখ মুখ কুঁচকে আদির দিকে তাকায়।
সিমথি : আদি হাসবা না। উঠাও।
সিমথির হাত টেনে আদি সিমথিকে উঠায়। সিমথি আদির বুকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে নিজে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
আদি : ধাক্কা মারলে কেনো।
সিমথি : ইচ্ছে হয়েছে তাই।
সিমথি আদির পাল্টা জবাব না শুনেই ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। আদি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিচে নেমে যায়। কাল রাতেও খায়নি এই মেয়ে।
আদির মা : কি রে উঠলো।
আদি : হা মাত্র উঠলো।
শাওনের মা : ঠিক আছে তো।
সিমথি : কার ঠিক থাকার কথা বলছো বড় মা। কারো কিছু হয়েছে।
সিমথির কথায় সবাই সিঁড়ির দিকে তাকায়। আজ ফ্রাইডে হওয়ায় সবাই বাড়িতেই আছে।
সিমথি : আরেহহ সবাই আমাকে দেখলে থমকে যাও কেনো আমি কি তোমার কথার মেশিন মিউট করে দেয় আজব।
তিন্নি : কাকিয়য়য়য়া।
সিমথি : ওলেলে আমাল মা টা আতো। কলো আতো।
সিমথি তিন্নিকে কোলে নিয়ে নাদুসনুদুস গালে টপাটপ চুমু খায়। তিন্নি খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। সবাই সিমথির দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ দেখলে বলবে এই মেয়ে কাল এতোকিছু করলো।
মেহের : খেতে আয়। দুপুর হয়ে যাচ্ছে কখন খাবি।
সিমথি : এখন খাবো না। একটু পর হসপিটাল যাবো।
আদির মা : কি খাবি না কাল রাতেও খাস নি। এখন খাবিনা। এই শরীরে খাওয়া নিয়ে এতো বাহানা কিসের তোদের।
সিমথি : শ্বাশুমা রাগো কেনো। খাবো তো। আমি কি না করেছি নাকি।
সিমথির কথায় আদির মা রাগের মাঝেও হেসে দেয়। সিমথি হাসতে হাসতে হঠাৎ মুখ মলিন করে ফেলে।
সিমথি : আব,,, কাল রাতের জন্য সরি মা, মেহের আপু, সবাই কে। আসলে আমি এ,,,
শাওনের৷ মা : এসব বাদ দে। খেতে আয়। মেহের, আদিবা, তুহা কেউই খায়নি ৷
সিমথি : হায় খোদা। এরা খাবার নিয়ে এতো অনিয়ম করে কেনো। শায়লা আপু কোথায়।
শাওনের মা : রবিবার ইনিমার পরীক্ষা। তাই সকাল সকালই বেরুতে হয়েছে। চিন্তা করিস না চলে আসবে ইনিমার বই-খাতা নিয়ে।
সিমথি : ওহহো।
সিমথিরা খেয়ে সবাই এসে ড্রয়িং রুমে জড়ো হয়। সিমথি আড়চোখে আদির দিকে তাকায়। বেচারার চোখ লাল হয়ে আছে। কি ব্যাপার কেঁদেছে নাকি সারারাত আমার বিরহে ঘুমায়নি।
আদির বাবা : বুঝলি সিমথি গ্রাম থেকে আমার আব্বু-আম্মা আসবে। কতদিন পর আসছে।
সিমথি : কবে আসবে।
শাওন : সামনের সপ্তাহে আসবে।
সিমথি : ওহোহ। শুধু দাদু – দাদিই আসবে আর কেউ না।
আদিবা : হুমম নাহ। মেহের ভাবীর বাড়ির লোকরা ও আসবে অনেকেই আসবে।
সিমথি : কোনো স্পেশাল ডে নাকি সামনে।
ইশান : স্পেশালই তো আমাদের তিন্নি রাণীর জন্মদিন।
সিমথি : ওমা তাই আমাদেল তিন্নি লাণী বুঝি আট বছলে পা দিবে।
সিমথির কথার স্টাইলে সবাই হেসে উঠে। সবাই মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে মেয়েটা স্বাভাবিক হবাই।
_____________
আচমকা পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরায় আদি চমকে যায়। কানে ফোন নিয়েই পেছন ফিরে। সিমথিকে দেখে সিমথির হাত টেনে নিজের সামনে এনে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে পুনরায় কথা বলায় মনোযোগী হয়। সিমথি দুষ্টু হেসে আদির বুকের মুখ ডুবিয়ে জোরে শ্বাস নেয়। অতঃপর অধর ছোঁয়ায়। আদি চমকে সিমথির দিকে তাকায়। বেচারা ফোনে একটা জরুরি মিটিংয়ের সম্পর্কে কথা বলছে আর এই মেয়ে দুষ্টামি শুরু করেছে। আদি চেয়েও কিছু বলতে পারছে না। যদি মেয়েটার মন খারাপ হয় পুনরায়। সিমথি আদির থেকে পাত্তা না পেয়ে পা উঁচু করে মুখে ফুঁ দেয়। আদি চোখ বুঁজে সিমথিকে রেলিঙের সাথে ঠেস দিয়ে ধরে। দুহাত পেছনের দিকে নিয়ে চেপে ধরে কথা বলায় মনোনিবেশ করে। সিমথি ঠোঁট ফুলিয়ে আদির দিকে তাকায়। আদি সিমথির নাকের ডগায় চুমু খেয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। আচমকা সিমথি আদির পেটে জোরে চিমটি কাটে।
আদি : আহ
আদির এহেন আর্তনাদে ফোনের ওপাশের মানুষ ঘাবড়ে যায়। আদি চোখ বড়বড় করে একবার ফোনের দিকে তাকায় অতঃপর সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি শব্দ করে হাসতে নিলে আদি মুখ চেপে ধরে।
আদি : রহিত এখন রাখছি। পরে এটা নিয়ে ডিসকাশন করবো।
আদি ফোন কেটে সিমথির দিকে তাকায়।
আদি : এমন করছো কেনো।
সিমথি : তো করবো না। আমি কখন থেকে তোমার এটেনশন পেতে চেষ্টা করছি আর তুমি আমার সতীনের সাথে রাসলীলা করছো।
আদি : আরেহহ মিটিং নিয়ে কথা বলছিলাম।
সিমথি : ফ্রাইডে তে কিসের মিটিং। একটা দিন তো আমার জন্য রাখবে।
আদি : হাহ। নিজেই তো একটু পর চলে যাবে।
সিমথি : ওটি আছে ( ঠোঁট উল্টে)
আদি সিমথিকে সামনে ফিরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
আদি : আহ জানি তো। তোমার এই হসপিটাল তো আমার সতান।
আদির কথায় সিমথি হেসে উঠে। আচমকা হাসি থামিয়ে মলিন কন্ঠে বলে,,,
সিমথি : সরি জামাইজান।
সিমথির কথায় আদি ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
আদি : কেনো
সিমথি : কালকের জন্য। আমি ইচ্ছে করে তোমাকে ধাক্কা দেইনি। আসলে নিজেকে কন্ট্রোল,,
আদি : হুশশ। আমি জানি জান। কালকের কথা বাদ দাও। আমি বা কেউই কিছু মনে করেনি। আমি সরি তোমাকো হার্ট করার জন্য আমরা
সিমথি : আচ্ছা ওসব বাদ দাও। অতীত নিয়ে ভেবে লাভ নেই বর্তমান নিয়ে ভাবো। কালকের কাহিনি ডিসমিস হুমম।
সিমথির কথায় আদি হেসে দেয়। আচমকা সিমথি আদিকে জড়িয়ে ধরে বুকে নাক ঘষে নিচু কন্ঠে বলে,,,,,,
সিমথি : ভালোবাসি জামাইজান
আদি হেসে সিমথিকে জড়িয়ে ধরে চুলের ভাজে অধর ছোঁয়ায়।
________________
আজকের দিনটা কেমন গুমোট ভাব ধরে আছে। না আকাশে সূর্য উঠেছে আর না বৃষ্টির কোনো দেখা মিলছে। হালকা উষ্ণতা হালকা শীতলা বিরাজ করছে। সকাল থেকে আকাশ গুম মেরে আছে। আজ সিমথির মা-বাবার আঠারোতম মৃত্যু বার্ষিকি। সকাল সকালই আদি – সিমথি সিমথিদের বাড়ি যায়। আজ সিমথির মা-বাবার মৃত্যু বার্ষিকি উপলক্ষে ওদের বাড়িতে ছোটখাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে গরীবদের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। আদিরা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই আদিদের বাড়ির সবাই ও যায়৷ সায়ন বার বার বলে দিয়েছে ওদের সবাই কে যেতে। দুপুরের অনুষ্ঠান শেষে সব গুছাতে গুছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
সায়নরা সবে এসে সোফায় গা হেলায়। ক্লান্তিতে মুখ ভার হয়ে আছে প্রত্যেককের। হঠাৎ করেই সায়ন বলে উঠে,,,,
সায়ন : কি রে সিমথি কোথায়।
সায়নের কথায় সবার হুশ ফিরে।
ইফাজ : সত্যিই তো সিমথি কোথায় গেলো।
_ হে গাইস আম হেয়ার।
চলবে,,,,
#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 48
🍁🍁🍁
মিম : কোথায় ছিলিস তুই৷
সিমথি : উহুমম ছিলাম কোথাও একটা।
সায়ন : হুটহাট এমন করিস কেনো টেনশন হয় তো নাকি।
সিমথি : আমি কি বাচ্চা নাকি। যায় হোক সর সামনে থেকে টিভি চালাবো৷
সিমথির কথায় সবাই হতভম্ব। সিমথি গিয়ে নীলয় খানের পাশে ধপাস করে বসে পড়ে। নীলয় খান চমকে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি টেডি স্মাইল দেয়।
সিমথি : উহুমম ভয় পেলে নাকি বড় আব্বু।
নীলয় খান থতমত খেয়ে যায়।
নীলয় খান : ন নাহ তো। ভয় কেনো প পাবো।
সিমথি : তাও ঠিক তুমি কেনো ভয় পাবে।
সিমথি হেঁসে রিমোট নিয়ে টিভি চালায়। চ্যানেলে পাল্টে নিউজ চ্যানেলে দেয়। সায়ন রা হতবাক হয়। আচমকা মেয়েলি আওয়াজে সবাই টিভির দিকে তাকায়।
” আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পেরিয়ে একটা নতুন দিনের আগমন ঘটতে চলেছে। আজকের দিনের সকল ব্যর্থতা, গ্লানি কাল মুছে যাবে৷ সেই সাথে আপনাদের জন্য আছে আজকে শেষ তাজা সংবাদ। আগামী বিশ বছর ধরে যেই গ্যাং ছিলো অধরা। যাদের সম্মুখে কেউই চিনতে পারতো না। এই গ্যাং কে ধরতে গিয়ে অনেক পুলিশ অফিসার আর্মি, অফিসার নিহত হয়েছেন। অনেকে হারিয়েছেন তাদের আদরের সন্তান , কেউ হারিয়েছে নিজেদের স্বামী। কেউবা হারিয়েছে নিজেদের মাথার উপর সবচেয়ে বড় আশ্রয় মা-বাবা কে। আজ আঠারো বছর পর সেই গ্যাং এর সদস্যদের ধরতে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা রা সক্ষম হয়েছে। এন.কে নামক আগন্তুকের কালো ব্যবসায় জড়িত এন.কে গ্যাং এর পঁচিশ জন সদস্যকে নিরাপত্তা বাহিনী আটক করেছে। বর্তমানে সবাই পুলিশ কার্স্টেরীতে। এখনো গ্যাং এর আসল সদস্য অর্থাৎ যার আন্ডারে গোটা সামরাজ্য চলছে তিনিসহ আরো দুইজন সদস্যকে পুলিশ আটক করতে ব্যর্থ হয়েছেন। চলুন একনজরে দেখে নেবো সেই পঁচিশ জন আসামীকে।
আমি মারিয়া খাতুন। বিডি নিউজ চ্যানেল।
স্কিনে ভেসে ওঠে একে একে পঁচিশ জনের মুখ। আদি চমকে সিমথির দিকে তাকায়। সেই মুহূর্তে সিমথিও আদির দিকে তাকায়। আদির দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়। আদি যা বুঝার বুঝে নেই৷
নিউজ চ্যানেল জুড়ে যেনো ঝড় উঠেছে। কিছুক্ষণের বাকি দুইজনকেও আটক করা হয়। নীলয় খান ঘামতে শুরু করে। সিমথি সেদিকে একনজর তাকিয়ে হাসে ৷
তখনই সায়নদের বাড়িতে ছয়-সাত জন লোকের প্রবেশ ঘটে। প্রত্যেকের গায়ে আর্মির ড্রেস দেখে কারো বুঝতে বাকি নেই ওরা কারা।
ওদের মধ্যে একজন বয়স্ক লোক এগিয়ে আসে সিমথির দিকে। সিমথি উঠে দাঁড়ায়।
সিমথি : আসসালামু আলাইকুম স্যার।
বয়স্ক লোক হেসে সিমথির সালামের জবাব দেয়।
জাফর : বোস। দাঁড়ালি কেনো।
সিমথি : না না ঠিক আছে আপনি বসুন
সায়ন : জাফর আঙ্কেল আপনি।
জাফর : মাই সান চিনেছো আঙ্কেল কে।
সায়ন : কি বলেন আঙ্কেল আপনাকে চিনবো না কেনো। এতোবছর পর আজ হঠাৎ।
জাফর : বলছি বলছি বসো।
আর্মি অফিসার জাফর ইকবাল। মেজর আহনাফ খানের টিম মেম্বার। আহনাফ খানের মৃত্যুর পর পুরো টিমের দায় ভার এসে উনার উপর বর্তায়।
জাফর : ইফাজ, রোজ, তরী সবাই কেমন আছো।
_ ভালো আঙ্কেল।
সায়ন : রুবি আপু নাস্তার আয়োজন করো।
জাফর : আরে না না ডিউটি টাইমিং। তোর বাবার সাথে থাকতে থাকতে আমিও নিরামিষ হয়ে গেছি। ডিউটি টাইমে নো খাওয়া।
অফিসার জাফরের কথায় সায়ন স্মিত হাসে। অফিসার জাফর নীলয় খানের দিকে তাকায়।
জাফর : তা আপনার ব্যবসা বানিজ্যের কি খবর বড় ভাই।
অফিসার জাফরের কথায় নীলয় খান চমকে যায়। জোরপূর্বক হেসে মাথা নাড়ায়।
জাফর : সবাই স্বাভাবিক হোন। আমি একটা দরকারি কাজে এসেছি। সিমথি মা বাচ্চাদের ভেতরে পাঠাও।
সিমথি : রুবি আপু ইনিমা, আয়াজ, আদ্র কে ভেতরে আমার রুমে নিয়ে যাও।
সিমথির কথায় রুবিনা তিনজনকে নিয়ে উপরে নিয়ে যায়।
জাফর : ওকে পাঠালে না যে ( তিন্নিকে দেখিয়ে)
সিমথি : ওর একটু কাজ আছে।
জাফর : ওহ। শারাফ বাচ্চাদের কাছে যাও।
অফিসার জাফরের কথায় একজন অফিসার রুবিনার পেছন পেছন যায়। জাফর ইকবাল গম্ভীর কণ্ঠে বলে,,,,
জাফর : সিমথি আঠারো বছর পূর্ণ হয়েছে। তুই বলেছিলি সময় মতো চিপ টা আমাদের হাতে তুলে দিবি। এখন সেই সময় টা এসেছে।
জাফর ইকবালের কথায় সায়নরা চমকে সিমথির দিকে তাকায়।
সায়ন : চিপ কিসের চিপ।
জাফর : তোমার মা-বাবার মৃত্যু হয়েছে যেই চিপকে ঘিরে।
সায়ন হতবাক হয়ে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি একপলক সায়নের দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসে।
ইফাজ : কিন্তু চিপ টা তো ছোট বাবার কাছে ছিলো। বোনের কাছে কিভাবে আসবে।
সিমথি : বাবাই বাড়ি ছাড়ার আগে চিপ টা আমাকে দিয়ে গিয়েছিলো।
সিমথির কথায় সায়ন চমকায়। নীলয় খান হাতে হাত ঘষতে শুরু করে।
ইফাজ : মানে বুঝলাম না হেয়ালি না করে বুঝিয়ে বল।
সিমথির মা-বাবা যেদিন কেসের গোপন তদন্তের জন্য বাইরে যায় তার আগের দিন রাতে দুজনই সিমথির রুমে আসে।
আহনাফ : প্রিন্সেস
বাবাইয়ে আদর মাখানো কন্ঠের ডাকে সিমথি খেলা ছেড়ে দৌড়ে গিয়ে আহনাফের কোমড় জড়িয়ে ধরে।
সিমথি : বলো বাবাই। খেলবে
আহনাফ : না মামনি। বাবাইয়ের কাজ আছে। তোমার সাথে আমি একটা অন্য গেইম খেলবো।
সিমথি : অন্য গেইম। কিন্তু কেমন
তানহা : সোনা মা এই গেইমের কথা কিন্তু খুব সিক্রেট।
সিমথি : সিক্রেট
তানহা : হুমম। আগে মাম্মাম- বাবাইকে প্রমিস করো এই গেইমের কথা আমরা তিনজন ব্যতিত কাউকে বলবে না।
সিমথি : ভাইয়া কে ও না।
আহনাফ : না মামণি। তোমার ভাইয়া তো অনেক সহজ সরল। ওকে বললে ও ভয় পাবে। তুমি কি চাও তোমার ভাইয়া ভয় পাক।
সিমথি : নাহ নাহ। আচ্ছা কাউকে বলবো না টপ সিক্রেট রাখবো। গড প্রমিস।
তানহা – আহনাফ একে অপরের দিকে তাকিয়ে সন্তুষ্ট জনক হাসি দেয়। আহনাফ পকেট থেকে একটা চেইন বের করে সিমথির গলায় পড়িয়ে দেয়। সিমথি অবুঝ দৃষ্টিতে একবার বাবার দিকে তাকায় তো একবার মায়ের দিকে তাকায়।
আহনাফ : এই চেইন টা সবসময় নিজের কাছে রাখবে। আমরা যদি কখনো না ফিরি তখনও এটা সিক্রেট রাখবে। কখনো কাউকে চেইনটার কথা বলবে না। এই চেইনের লকেটে তোমার বাবাইয়ের এতোবছরের সফলতার ফল আছে মামণি।
সিমথি : লকেটে বুঝি ফসল ফলে।
সিমথির বোকা বোকা কথায় আহনাফ – তানহা দুজনই হেসে দুদিক থেকে সিমথিকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খায়।
তানহা : এই লকেটে একটা মেমোরি জাতীয় জিনিস আছে। ওখানে তোমার বাবাই যেই দুষ্টু লোকগুলোকে শায়েস্তা করেছে তাদের সম্পর্কে সব তথ্য আছে। এটা যদি হারিয়ে যায় তোমার বাবাই – মাম্মামের নামে বদনাম রটবে। তাই এই চিপটা তুমি ততদিন নিজের কাছে সুরক্ষিত রাখবে যতদিন না তোমার বয়স ২৫ হয়। যতদিন না তুমি ভালো-মন্দের ফারাক টা এক দেখায় বুঝতে পারবে ততদিন। যেদিন তুমি তেইশে পা দেবে তখন চিপটার ভেতরের সব তথ্য তুমি দেখতে পারবে। ততদিন পর্যন্ত এটা তোমার হেফাজতে। যেদিন তোমার মনে হবে এবার এই গেইমের সমাপ্তি টানা দরকার সেদিন তুমি তোমাদের জাফর আঙ্কেলের হাতে চিপ টা তুলে দেবে।
আহনাফ : সোনা মা এই গেইম টা কখনো কারো কাছে শেয়ার করবে না। এটা কেবল আমাদের তিনজনের মাঝে থাকবে। মনে রাখবে সবসময়। একটা কথা সবসময় মনে রাখবে তুমি মেজর আহনাফ খানের মেয়ে তোমার মাঝে বিচক্ষণতা আছে। সেটাকে যথাসময় কাজে লাগাবে। আমরা তোমার পাশে থাকি বা না থাকি নিজেকে এমন ভাবে গড়ে তুলবে সবাই যেনো তোমার মাঝে তোমার বাবাইয়ের কঠোরতা দেখতে পায়। অন্যায়ের সাথে কখনো আপোস করবে না। আপন মানুষ সবসময় আপন হয় না। পিঠ পিছে অনেকে আপন মানুষের ছদ্মবেশে ছু/ড়ি চালায়। কথায় আছে না ” শস্যের মাঝেই ভূত লুকিয়ে থাকে “।
তানহা : তোমার ভাইয়াকেই এই দায়িত্ব দিতে পারতাম কিন্তু তোমার ভাইয়া অনেক ইমোশনাল। নিজেদের মানুষের এই হিংস্রতা সে কখনো সহ্য করতে পারবে না। কিন্তু তুমি কঠিন মনের তৈরি হবে। কেউ যেনো তোমার দুর্বলতা না বুঝে। কেউ যেনো নিজের লক্ষ্য থেকে তোমাকে সরাতে না পারে। তোমাকে একদেখায় যেনো সবাই বলতে পারে মেজর আহনাফ খানের যোগ্য মেয়ে। আহনাফ খানের সব গুণ তোমার মধ্যে আছে। মাম্মামের মতো কখনো নরম মনের হবে না। এতে করে তোমার সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে। আমরা যদি তোমার কাছে নাও থাকি যেখানেই থাকি না কেনো আমরা এটা ভেবে নিশ্চিত থাকবো আমাদের দুই ছেলে-মেয়ে দুইজনের রক্ষা কবচ। মানবে তো মাম্মাম-বাবাইয়ের কথা।
সেদিন সিমথি ওদের মা-বাবার কথার সব মানে না বুঝলে ও সেদিন বুঝেছিলো যেদিন চিপটা দেখেছিলো।।
সব শুনে সায়ন ধপাস করে সোফায় বসে পড়ে। সিমথি মুখ ফুলিয়ে শ্বাস নেয়। মাম্মাম – বাবাই ঠিকই বলেছিলো ওর ভাই সরল মনের।
সিমথি : এভাবে জান ছেড়ে দিচ্ছিস কেনো। তোর বোন ম/র/ছে আজব।
আদি : সিয়া ( ধমকে)
সায়ন : পরী ( ধমকে)
আদি, সায়ন বোকার মতো একে অপরের দিকে তাকায়। সিমথি মাথা নাড়িয়ে শ্বাস ছাড়ে।
জাফর : চিপটা কোথায় সিমথি। ওই চিপের মাধ্যমেই এন.কে মানুষ টাকে খুঁজে পাবো।
সিমথি : চিপ আছে।
নীরব খান : কোথায় কোথায় ( উত্তেজিত হয়ে)
সিমথি : আছে কোথাও একটা। কিন্তু তুমি এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেনো। হাই প্রেশারের রোগীর জন্য এটা সাংঘাতিক।
নীরব খান দমে যায়। সিমথি তিন্নির দিকে এগিয়ে যায়। মেহেররা একে অপরের দিকে তাকায়। সিমথি তিন্নির সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে।
সিমথি : তিন্নি সোনা।
তিন্নি : হুম বলো।
সিমথি : তোমার গলার চেইন টা আমাকে একটু দেবে।
তিন্নি : কিন্তু তুমি তো বলেছিলে এটা যেনো কখনো কাউকে না দেয়।
সিমথি : কাউকে না দিতে বলেছি কিন্তু কাকিয়াকে না দিতে তো কখনো বলিনি।
সিমথি হেসে তিন্নির গলা থেকে চেইন খুলে হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। সবার দিকে একপলক তাকিয়ে চেইনের লকেটের ভেতর থেকে একটা ছোট্ট চিপ বের করে অফিসার জাফরের দিকে তাকায়। ড্রয়িং রুমের উপস্থিত সবাই ছোট বড় একটা ধাক্কা খায়। অফিসার জাফর হেসে উঠে দাঁড়ায়।
অফিসার জাফর : বুদ্ধির তারিফ করতে হয় তোর। এমন জায়গায় রাখলি যেনো কারো ব্রেনেও না আসে।
চলবে,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)
#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 49
🍁🍁🍁
জাফর : কি ব্যাপার বড় ভাইয়া আপনি ঘামছেন কেনো।
জাফরের কথায় সবাই নীরব খানের দিকে তাকায়। নীরব খান কপালের ঘাম টুকু মুছে আমতা আমতা করে বলে,,,,
নীরব খান : ক কোথায় ঘা ঘামছি।
সায়ন : কিন্তু আঙ্কেল মা-বাবার খু/নী কে এটার কি হলো।
সিমথি : খু/নী তো সামনেই আছে।
ইফাজ : কিহ।
জাফর : শান্ত হও সবাই। সিমথি চিপ টা অন কর।
সিমথি মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।
সিমথি : তরী তিন্নিকে আমার রুমে রেখে আয়।
তরীর কথানুযারী তিন্নিকে তরী সিমথির রুমের দিকে নিয়ে যায়। সিমথি চিপ টা হাতে নিয়ে টিভির দিকে এগিয়ে যায়। চিপটা লাগিয়ে টিভির রিমোট হাতে নিয়ে অন করার আগেই মাথায় কিছু ঠেকানোতে সিমথির হাত থেমে যায়। সবাই চমকে সিমথির দিকে তাকায়।
নীলয় খান : যে যেখানে আছো সেখানেই থেমে যাও। নয়তো গু/লি চলে যাবে।
ইফাজ : আব্বু কি করছো তুমি। সিমথির মাথায় রিভলবার ঠেকালে কেনো।
নীলয় খান : কাজ টা আমার আগেই করা উচিত ছিলো। কিন্তু,,,
সিমথি : চিপটার জন্য আটকে ছিলেন তাই তো মিস্টার এন.কে অরফে নীলয় খান।
সিমথির মুখে এন.কে ডাকটা শুনে উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। সিমথি পেছন ঘুরে নীলয় খানের দিকে তাকায়। ফলে রিভলবার গিয়ে সিমথি কপালে ঠেকে।
রোজ : আ আব্বু গ গুলি লেগে যাবে।
সিমথি : এখন কি করবেন।
নীলয় খান : চিপ টা দাও।
সিমথি : আপনি কি ভাবেন আপনি বাঁচতে পারবেন।
নীলয় খান : অবশ্যই বাঁচবো। হয় বাঁচবো নয়তো
মা/র/বো৷
সিমথি : মে/রে ফেলা টা আপনার রক্তে মিশে গেছে।
জাফর : এন.কে রিভলবার সরাও। পুরো বাড়ি আর্মি ফোসে ঘিরে ফেলেছে। তোমার বাঁচার কোনো পথ নেই।
নীলয় খান : আমি বাঁচবো। বাঁচার জন্যই তো আহনাফ আর তানহা কে মা/র/লাম।
ড্রয়িংরুমে এবার দ্বিতীয় বিস্ফোরণ ঘটে। সায়ন দুপা পিছিয়ে সিঁড়ির সাথে লেগে যায়। ইফাজ, রোজ সহ সবাই অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে নীলয় খানের দিকে তাকায়। আচমকা পেটে ঘুষি খেয়ে নীলয় খান মুখ থুবড়ে ফ্লোরে পড়ে যায়। সিমথি জ্যাকেটের পেছন থেকে রিভলবার বের করে নীলয় খানের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে। চোখে-মুখে হিংস্রতা ফুটে উঠে। নীলয় খান শুকনো ঢোক গিলে। সিমথি হেসে রিভলবার দিয়ে নীলয় খানে পুরো মুখে স্লাইড করতে করতে বলে,,,
সিমথি : বলেছিলাম না আপনার জীবনের আয়ু দুই মাস সাত দদিন ষোলো ঘন্টা তেরো মিনিট বাইশ সেকেন্ড পর মিডিয়া সমেত পুরো শহর কাঁপবে। ইশান ভাইয়া টিভি টা চালাও। আর হুম অবশ্যই নিউজ চ্যানেলে দেবে।
সিমথির কথায় ইশান টিভি চালিয়ে নিউজ চ্যানেলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে ভেসে আসে এন.কে গ্যাঙের একের পর এক সদস্যসহ সকল কালো ব্যবসায়ের নিউজ একের পর এক ভেসে আসছে। সিমথি ভ্রু নাচিয়ে নীলয় খানের দিকে তাকায়। নীলয় খান আতঙ্কিত দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকিয়ে টিভির দিকে নজর দেয়। টিভিতে নীলয় খানের ছবি ভেসে ওঠেছে। সায়নরা স্তব্ধ দৃষ্টিতে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে। নীলয় খানের পাশে সায়নের মা-বাবার ছবি ও আছে। সবার কানে এখনো একটা কথায় বাজছে ” মেজর আহনাফ কান আর এডভোকেট তানহা খানে মৃত্যুর জন্য দায়ী এন.কে অরফে নীলয় খান। ”
সিমথি : না করেছিলাম বেশী উড়বেন না। মুখ থুবড়ে পড়বেন। পড়লেন তো। আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি ঠিক সময় শহর জুড়ে তুফান তুলেছি।
নীলয় খান : আ আমাকে ছাড়।
সিমথি : ছেড়ে দেবো। আপনাকে। এতো সহজেই
নীলয় খান : তুই আ আমাকে মা/র/তে পারবি না।
সিমথি : আমি যদি আপনাকে মিডিয়ার সামনে আনতে পারি তাহলে আপনাকে আমি মা/রতে ও পারি। বলেছিলাম না আমার ইমোশান নিয়ে যে খেলে তাকে আমি ছাড় দেইনা। আপনি আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতাকে নিয়ে খেলেছেন। দুজন মৃত ব্যক্তি জীবিত আছে বলে আমার সাথে মাইন্ড গেইম খেলেছেন। আমার শৈশব কেড়ে নিয়েছেন। নিজের পাপ ডাকতে বড় মাকে আগুনে পুড়িয়ে মে/রে এক্সিডেন্টের নাম দিয়েছেন। তরীর মা-বাবা কে মে/রেছেন। তাছাড়া ও আন্ডারগ্রাউন্ডের কৃতকর্মের তো অন্ত নেই আপনার। আর এই সবকিছু তে আপনার সঙ্গী ছিলো মিসেস সীমা বেগম। আপনার সঙ্গী মিসেস সীমা বেগম কাল নিজের শাস্তি পাবে আর আপনি আজ।
ড্রয়িংরুমে একের পর এক ঝড় তুলছে সিমথি। ইফাজ আর রোজ আহত দৃষ্টিতে নীলয় খানের দিকে তাকায়। নীলয় খান চমকে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি বাঁকা হেসে নীলয় খানের বুক বরাবর রিভলবার তাক করে। নীলয় খান ভয় পেয়ে যায়। সায়নরা নির্জীব দৃষ্টিতে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। রহিমা বেগম মুখে আঁচল চেপে কেঁদে দেয়।
রহিমা বেগম : ছিহ বড় খোকা তুই নিজের ভাই কে কিভাবে মা/র/তে পারলি। তানহা কে আমি সহ্য করতে না পারলেও কখনো মা/র/তে চাইনি। আর তু,,,
সিমথি : তুহিন মিসেস বেগম কে রুমে দিয়ে আয়।
সিমথির কথামতো তুহিন রহিমা বেগম কে রুমে নিয়ে যায়। সিমথি সেদিকে একপলক তাকিয়ে রোজের দিকে তাকায়। বাচ্চা মেয়েটা এতো বড় ধাক্কা টা নিতে পারেনি। ইফাজ & সায়ন ও কেমন নিস্কিয়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে তিনজনের কারোর দেহেই বুঝি প্রাণ নেই। সিমথি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রিভলবার টা নীলয় খানের বুকে চেপে ধরে।
নীলয় খান : আ আমার ভু ভুল হয়ে গেছে ছেড়ে দাও।
নীলয় খানের কথায় সিমথি ব্যতিত সবাই নীলয় খানের দিকে ঘৃণিত দৃষ্টিতে তাকায়। এতোকিছু কেড়ে নেবার পর কিভাবে কেউ বলতে পারে মাফ করে দিতে। ইফাজ রোজকে আঁকড়ে ধরে এক সাইড থেকে। অন্য সাইডে সায়ন আঁকড়ে ধরে। প্রাণপ্রিয় দুই ভাইয়ের সংস্পর্শে রোজ হুহু করে কেঁদে ওঠে। নীলয় খান আহত দৃষ্টিতে রোজের দিকে তাকায়। সব কিছু যেমন তেমন নিজের মেয়েকে ওনি প্রচন্ড ভালোবাসে।
ইফাজ : কাঁদিস না। এসব মানুষের জন্য চোখের পানি ফেললে ও উপরওয়ালার গায়ে লাগবে। পাপ হবে এতে।
সিমথি : রেড রোজ হয় কান্না থামা নয়তো রুমে যা। ( শান্ত গলায়)
রোজ : আ আমি চ চলে গ গেলে এই ম মানুষ নামে অ/মানুষ টার আ আসল রূপ টা জানবো কিভাবে সিমথি আপু৷
রোজের কান্না মিশ্রিত কন্ঠস্বরে সিমথির রাগ আরো বাড়িয়ে দেয়। রোজ সিমথির সবচেয়ে আদরের। এই মেয়েটার সামান্য কষ্ট ও সিমথির সহ্য হয় না।
সিমথি : কান্না থামা রেড রোজ।
নীলয় খান : সিমথি ছাড় আমাকে।
সিমথি : বাহ রে ধরলাম কোথায় যে ছাড়ার প্রশ্ন আসছে।
নীলয় খান : রিভলবার সরা।
সিমথি : কেনো ভয় লাগে। উহুমম আমি তো ভাবছি আপনাকে জ্বলন্ত আগুনে ছেড়ে দেবো। বড় মা কে যেভাবে গ্যাসের সিলিন্ডার ব্রাস্ট করিয়ে ছিলেন।
নীলয় খান : আমি ওকে মা,,
সিমথি : ওই চুপ। আপনার কৈফিয়ত চাইনি আমি। আপনার বানানো গল্প নিজের কাছে রাখুন। এতোদিন নিজে বলেছেন করেছেন মেনে নিয়েছি। আপনাকে আমি লাস্ট ওয়ার্নিং ও দিয়েছিলাম আমার ইমোশনে আঘাত না করতে। কিন্তু কথায় আছে না কু/ত্তার লেজ কখনো সোজা হয় না। লাইক ইউ।
নীলয় খান : সিমথি ( চেঁচিয়ে)
সিমথি : ওইইই ( দ্বিগুণ চেঁচিয়ে )
সিমথির চেঁচানো তে সবাই ঘাবড়ে যায়। জাফর ইকবাল সিমথি কে কিছু বলতে নিলে সিমথির তাকানো দেখে ঘাবড়ে যায়।
সিমথি : আপনার ডিউটির হিসেব পরে মিটিয়ে নেবেন। আগে আমাকে আমার হিসেব মেটাতে দেন। একে আমি জানে মা/র/বো না। আমাকে হেফাজতে কেবল মাত্র একদিন রাখবো তারপর আপনার টিমের হাতে তুলে দেবো।
জাফর ইকবাল : কি করবি এই একদিন।
সিমথি : আমার কাজের কৈফিয়ত আমি কাউকে দেয় না।
জাফর ইকবাল সিমথির গম্ভীর কণ্ঠে দমে যায়। বিড়বিড়িয়ে বলে উঠে,,,
_ বাপের সবগুলো গুণ আয়ত্ত করেছে। এক আহনাফ চলে গেলে কি হবে বংশে আরেক টা রেখে গেছে। ভাই তুই ধন্য।
ইফাজ : আমাদের মাকে কেনো মা/র/লেন
নীলয় খান : আমি মা/রিনি
সিমথি : আবার মিথ্যা। ওই সত্যি টা নিজে নিজে স্বীকার করুন বলছি ( ধমকে)
নীলয় খান দমে যায়। এখন না বললে সিমথি যখন তখন হামলা করতে পারে এটা নীলয় খান জানে। সিমথির রাগান্বিত চোখ মুখ দেখে নীলয় খান ভয় পেয়ে ঘাবড়ে যায়। সিমথিকে আজ হুবহু আহনাফের কার্বন কপি মনে হচ্ছে। সেই তেজ, সেই গাম্ভীর্যতা সব আহনাফের সাথে মিলে গেছে।
নীলয় খান : আ আমিই এন.কে গ্যাংয়ের বস। তোদের মা হঠাৎ এটা জেনে যায় যে আমি আহনাফ আর তানহার পেছনে গুন্ডা লাগিয়েছি। তোদের মা আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলে আমি না করি তখনই ও আমাকে শাসায়। আহনাফ আসলে সব জানিয়ে দেবে। সেই সঙ্গে এটা ও বলবে আমি এন.কে গ্যাংয়ের সদস্য। আমি ওকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করি আমি যা করছি আমাদের ভালোর জন্য। কিন্তু তোর মা মানতে চাইনি। তখনই প্ল্যান করে সীমাকে দিয়ে কিচেনে কেরোসিন ঢেলে দেয় আর গ্যাসের পাইপ লাইন কেটে দেয়। যখন তোদের মা রান্নাঘরে গ্যাস জ্বালাতে আসে তখনই ব্রাস্ট হয়। আর তোদের মা,,,,
সব শুনে ইফাজ ঘৃণায় মুখ সরিয়ে নেয়। রোজ ইফাজকে আরো জোরে আঁকড়ে ধরে। বাকিরা স্তব্ধ হয়ে যায়।
তরী : আ আর আমার ম মা – বাবাকে
নীলয় খান : তোদের মা সবটা জেনে যায় আর এটা ও জেনে যায় যে রেহানার ( ইফাজের মা) মৃত্যুর জন্য আমি দ্বায়ী। যদি ও আমি কেবল তোর মাকে মা/র/ তে চেয়েছিলাম কিন্তু তোর বাবা আর সিমথি মাঝ খান দিয়ে চলে আসে। ওই দিন গাড়িটা তোর মা/কে মা/রতে ধেয়ে আসছিলো কিন্তু মাঝ রাস্তায় সিমথি চলে যাওয়ায় তোর মা-বাবা দুজনই সিমথি কে বাঁচাতে ছুটে যায় তবে নিজেরাই স্পট ডেথট হয়।
তরী মুখ চেপে কেঁদে দেয়। সিমথি চোখ বুঁজে জোরে একটা শ্বাস নেয়।
সিমথি : মা- বাবাকে মে/রে আপনি মাঝ রাস্তায় ফেলে ওদের উপর দিয়ে চলন্ত গাড়ি চালিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর মা-বাবা কে তাদের গাড়িতে উঠিয়ে পুরোটা কাহিনি কে এক্সিডেন্ট বলে চালিয়ে দেন। তারপর কয়েক বছর চুপ থাকলেও আপনি আবারো এসবে জড়ান। আমি বড় হয়ে মাফিয়ায় যোগ হওয়াতে আপনার ব্যবসায় লালবাতি ধরে। তারজন্যই সেদিন আমাকে গাড়ি এক্সিডেন্ট করিয়ে মা/র/তে চেয়েছিলেন তাই তো। তারপর সাজেকেও আপনি আপনার লোকদের পাঠিয়েছিলেন কিন্তু সেখানে আমার লোকেরা তাকায় আপনি কিছু করতে পারেননি। বাট এসবের আগে আপনি বাই এনি চান্স উইদ এনি ক্লু আপনি জানতে পারলেন চিপ টা আমার কাছে আছে। তার পর আপনি মা-বাবা জীবিত আছে এই জগন্য গেইম টা খেললেন। সেদিন রেস্টুরেন্টে ওই ছেলেটাকে আপনিই পাঠিয়েছিলেন। আবার ছেলেটাকে দিয়ে নিজের কার্যসিদ্ধি করে মে/রে ও দিলেন। তারপর আমাদের বাড়িতে ওই পেনড্রাইভ পার্সেল করে পাঠিয়েছিলেন। যেখানে মা-বাবা জীবিত থাকার ভিডিও ছিলো।
নীলয় খান : হ্যাঁ সব আমি করেছি কিন্তু আ,,
সিমথি : কিন্তু আপনার চালে ভুল ছিলো আপনি যতই সর্তকতা অবলম্বন করুন না কেনো এতো বছর আগের ভিডিও টা এতোটা নতুন করতে পারেননি। যার জন্য আমি দুদিনেই জেনে যায় সবকিছু আপনার নাটক। কেবল মাত্র চিপ টা পাওয়ার জন্য। আরেহহ আপনার তো এতোটুকু জানা উচিত ছিলো আপনি যার পেছনে লেগেছেন তার বাবা অনেক আগেই আপনাকে বেঁধে ফেলেছিলো।
______
সিমথি : ওয়াট এভার। অনিল
সিমথির ডাকে একটা ছেলে ভেতরে আসে। সবাই ছেলেটার দিকে তাকায়।
অনিল : জ্বি ম্যাম বলুন।
সিমথি : ওয়েট করো একটু কিছুক্ষণ।
আচমকা গুলির আওয়াজে সবাই চমকে যায়। সবাই আঁতকে উঠে। নীলয় খান এক হাতে নিজের বাহু চেপে ধরে। সিমথি বাঁকা হেসে পুনরায় ট্রিগারে চাপ দেয়। নীলয় খান শুয়ে চেঁচিয়ে উঠে। ডান হাত দিয়ে বাম হাত চেপে ধরে তবুও রক্তপাত হচ্ছে অবিরাম। সবাই আঁতকে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথির চোখ-মুখ স্বাভাবিক। সায়নরা শুকনো ঢোক গিলে। সিমথি সিটি বাজিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যায়। মরিচের কৌঠা দেখে সবাই ঘাবড়ে যায়। সিমথি কিলার স্মাইল দেয়। নীলয় খানের সামনে বসে। সযত্নে ক্ষত হাত টা নিজের কোলে নেয়। অতঃপর অনুতাপের স্বরে বলে, ,,
সিমথি : আহা রে চাচাজি কষ্ট হচ্ছে। ব্যাপার না আমি থাকতে আপনাকে এতোটুকু কষ্ট কিভাবে দেয় আফটার অল ইউ আর মাই চাচাজ্বি।
আচমকা নীলয় খান গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে উঠে। ক্ষত জায়গা জ্বলে যাচ্ছে। সিমথি পুরো ক্ষত স্থানটা মরিচে আবৃত করে অনিলের দিকে হাত বাড়ায়। অনিল তখনই হাতে ব্যান্ডেজের সরঞ্জাম দেয়। সিমথি তুষ্ট হেসে অনিলের দিকে তাকায়। অনিল শুকনো ঢোক গিলে। সিমথি গুনগুনিয়ে নীলয় খানের হাতটা ব্যান্ডেজ করে দেয়।
নীলয় খান : প প্রিন্সেসসসস,,
সিমথি : হুশশশ,,, ডোন্ট কলড মি প্রিন্সেস। এটা আমার বাবাইয়ের ডাক। আপনার মুখে আমি এটা শুনতে চাইনা। হুশশশশ।
নীলয় খান : আম আমার হাত জ্ব জ্বলে যাচ্ছে। দ দয়া ক কর ম মা।
সিমথি হেসে দেয়।
সিমথি : দয়া আপনাকে। উহুমম করলাম তো। সামনে আমার দুটো ফ্যামিলির মানুষ আছে তারজন্য এখনো জীবিত রেখেছি। এটা কি কম দয়া। আমার অত্যাচার তো এখনো বাকি রইলো। সময় আসুক। তারপর আমার এতোবছরের যন্ত্রণা সবটা শুধে আসলে উসুল করবো।
নীলয় খান : স স সিমথি
আচমকা সিমথির ফোন বেজে উঠে। সিমথি উঠে দাঁড়ায়। ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করে কানে লাগায়।
সিমথি : হুমম তন্ময় বল।
_____
সিমথি : ওহহ৷ আচ্ছা টেনশন নিস না। আমি ওদের পাঠাচ্ছি। তুই যা।
____
সিমথি : আরে চিন্তা করিস না। ওদের পাঠাচ্ছি আমিও আসবো। বাই।
সিমথি ফোন কেটে মেঘাদের দিকে তাকায়।
সিমথি : তোরা তিনজন হসপিটালে যা কুইক। সিনহা পেইন উঠেছে।
মেঘা : কিন্তু তুই
সিমথি : একজন গাইনোলকজিস্ট হিসেবে এটা তোর কর্তব্য মেঘা। সো গো
অগত্যা মেঘা বেরিয়ে যায়। তুহিনদের দিকে তাকাতে ওরাও মেঘার পেছন পেছন যায়। ওরা চোখের আড়াল হতেই সিমথি পুনরায় হসপিটালে কল লাগায়। কথার মাঝেই হঠাৎ গু/লির আওয়াজে সবাই আঁতকে উঠে। সিমথির হাত থেকে ফোন পড়ে যায়। সবাই ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়।
আদি : সিয়াজাননন
সায়ন : পরী
চলবে,,,,,