মিশেছো আলো ছায়াতে পর্ব-৫০+৫১+৫২

0
423

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 50

🍁🍁🍁

সবাই দৌড়ে দ্রুতপায়ে সিমথির দিকে এগিয়ে যায়। সিমথি পেটের বাম দিকে হাত চেপে নিচে বসে পড়ে। পেট দিয়ে গলগলিয়ে রক্তপাত শুরু হয়। কালো শার্ট টা রক্তে ভিজে উঠে। সিমথি নীলয় খানের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যেকর হাসি হেঁসে উঠে। নীলয় খান পড়তে পড়তে উঠে দাঁড়ায়। হাতে রিভলবার। ঠোঁটের কোণায় পৈশাচিক হাসি।

আদি : স সিয়াজান। চ চোখ খোলো।

সিমথি : আ আমি ঠিক আআ আছি।

আচমকা আরেকটা গুলির শব্দে সবাই আঁতকে উঠে। সায়ন নিজের বুকে বাম হাত চেপে ধরে। মিম চেঁচিয়ে উঠে। ইফাজ & রোজ অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে নীলয় খানের দিকে তাকায়। এই লোকটাকে চিনতে আজ ওদের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। সায়ন আহত দৃষ্টিতে নীলয় খানের দিকে তাকায়।

সিমথি : ভা ভাইয়া।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে জাফর ইকবাল তার ফোর্স কে কল লাগায়। মুহুর্তের ব্যবধানে সবাই হতভম্ব হয়ে। সবার মস্তিষ্ক অচল হয়ে যায়। আদিরা একবার সিমথির দিকে তাকাচ্ছে আবার সায়নের দিকে তাকাচ্ছে। তরী, রোজ, আদিবা রা কেঁদে ওঠে।

ইশান : আরে এম্বুলেন্স কল লাগাও। সায়ন ভাইয়া, ভাবীর তো গুলি লেগেছে।

ইশানের কথায় সবাই হুশ ফিরে পায়। মিম সায়নের মাথা নিজের কোলে নিয়ে কেঁদে ওঠে। সায়ন নিভু নিভু চোখে নিজের বোনের দিকে তাকায়। মেয়েটা উঠে ওর দিকে আসার চেষ্টা করছে৷ হয়তো আর কখনো এই বন্ধ চোখ খুলে প্রাণ প্রিয় মানুষ গুলোকে দেখা হবে না৷ চোখ বন্ধের আগে একবার বিশ্বাস ঘা/ত/ক নীরব খানের দিকে তাকায়। এই মানুষ টায় তো ছোট থেকে আঁকড়ে রাখলো তাহলে আজ সেই রক্ষকই ভক্ষক কেনো হলো। সায়ন শত চেষ্টায় ও চোখ খুলে রাখতে পারে না।

মিম : আল্লাহ। সায়ন

মিমের কান্নার সুরে তুষার রা এগিয়ে যায়। সায়নকে কোলে তুলে বাইরে যেতে নিলে নীলয় খান তুষার, ইশানের দিকেও রিভলবার তাক করে। সিমথিসহ সবাই চমকে যায়। এতোগুলো মানুষের বিপদ হবে ওর জন্য এটা সিমথি মানতে পারবে না। ওকেই কিছু করতে হবে। কিন্তু গুলিটা পেটে ঢুকায় উঠে দাঁড়ানো দায় হয়ে পড়েছে। সিমথি জোরে একটা শ্বাস নেয়। পাশে আদিবা থাকায় আদিবার ওড়নার অর্ধেক টা ছিঁড়ে নেয়। আদিবা সিমথির দিকে তাকায় কাঁদতে কাঁদতে। সিমথি আদিকে ছাড়িয়ে উঠতে নিলে আদি আঁকড়ে ধরে। সিমথি আদির দিকে তাকায় অতঃপর আলতো হেসে উঠে দাঁড়ায়। ছেঁড়া ওড়নার টুকরোটা পেটে জোরে বেঁধে নেয় টাইট করে। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে। তবুও নিজে সামলে নিচ থেকে রিভলবার টা তুলে নেয়। অনিলের দিকে তাকাতেই অনিলের মলিন মুখ টা চোখে পড়ে। সিমথি অনিল কে কিছু একটা ইশারা করতেই অনিল সায় দেয়।

সিমথি : শ শাওন ভাইয়া শ শুনো।

শাওন : কি বল।

সিমথি : ওদের স সবাই কে নিয়ে উপরে যাও।

তুহা : কি বলছো এসব ভাবী।

সিমথি : ত তোমমমরা এখানে নি নিরাপদ না। প্লিজ ম মেহের ভা ভাবী উপরে যাও এদের নিয়ে।

আদির মা : কি যাতা বলছিস। তোদের এই অবস্থায় রেখে,,,

সিমথি : মা প্লিজ যাও। এখন কথা বাড়ানোর সময় নেয়। ত তুষার ভ ভাইয়া ভ ভাইয়া কে নিয়ে তোমরা বাইরে যাও। হসপিটালে গেলেই হবে বাকিটা তুহিন রা সামলে নেবে।

নীরব খান : পারলে বের করিয়ে দেখা। তোদের দুজনকেই আজ মা/র/বো।

সিমথি : একটা গুলিতে আমাকে দুর্বল ভাববেন না মিস্টার এন.কে। রিভলবার আমার হাতেও আছে।

জাফর : সিমথি সায়নকে আমি হসপিটালে পাঠাচ্ছি। তুই ও চল। একে আমি দেখে নেবো৷

সিমথি : আপনি আগে আমার বাড়ির লোকদের সেফ জোনে পাঠান। প্লিজ আঙ্কেল।

রোজ : আ আমরা কোথাও যাবো না। তোমাদের ছেড়ে।

সিমথি : রোজ যা বলছি।

আদি : কিন্তু,,,

সিমথি : কোনো কিন্তু নয় যান বলছি সবাই । আমার কসম লাগে।

সিমথির চেঁচানোতে সবাই ঘাবড়ে। সেই সঙ্গে সিমথির কথা কর্ণপাত হতেই আদি দু পা পিছিয়ে যায়। অশ্রুসিক্ত লোচনে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি মুখশ্রী জুড়ে রাগের আভাস বিদ্যমান।

আদি : কাজ টা ঠিক করিসনি। ভালোবাসি বলে এভাবে দুর্বল জায়গায় আঘাত করলি।

আদির কথায় সিমথি চোখ বুঁজে নেয়। আঘাত সত্যিই তো সিমথি আদিদের দুর্বল জায়গায় আঘাত করেছে। কিন্তু তাছাড়া উপায় কি। এতোগুলো মানুষের ক্ষতি কিভাবে চাইবে। এরা প্রত্যেকে যে সিমথির জীবনের ইম্পর্ট্যান্ট পার্ট। তারজন্য এতোটুকু কঠোরতা না করলে কিভাবে হবে।

সিমথি : অনিল তোমার স্যারদের উপরে নিয়ে যাও আর দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দিও।

সিমথির আদেশানুসারে অনিল আদিদের উপরে নিয়ে যায়। কেউই যেতে রাজি না হলেও সিমথির কথা মনে পড়তেই সবাই সিমথির রুমে যায়। ড্রয়িং রুমে আপাতত তুষার, ইশান, সিমথি, নীলয় খান, আহত সায়ন, জাফর ইকবাল এবং তার দুজন অফিসার।

আচমকা সিমথি নীলয় খানের পায়ে গু/লি করে। নীলয় খান পা ধরে নিচে বসে পড়ে কাতরাতে কাতরাতে। সিমথি তুষার দের দিকে তাকাতেই তুষার, ইশান বেরিয়ে পড়ে সায়ন কে নিয়ে। সায়নের শ্বাস ধীরে ধীরে চলছে। দুজনকে বের হতে দেখে একজন আর্মির অফিসার দৌড়ে এগিয়ে এসে গাড়ির দরজা খুলে দেয়। সায়ন কে নিয়ে ভেতরে বসতেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করে৷

রুমের ভেতর সবার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। রোজ, তরী, ইফাজ তিনজনই পাথরের মতো বসে আছে। মেহের তটস্থ দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায়। আদি মাথা নিচু করে বসে আছে। আদির মা, চাচীরা তিন্নিদের নিয়ে বসে আছে। তখনই আদ্র পিপপ্পি বলে কেঁদে উঠে আধো আধো গলায়। সবাই আদ্রর দিকে তাকায়। আদি মিমের দিকে তাকায়। মিম নির্জীব দৃষ্টিতে নিচে বসে আছে। আদি চোখে পানি মুছে আদ্র কে কোলে নিয়ে কপালে চুমু খায়। আদ্র মুখের ভেতর আঙ্গুল ঢুকিয়ে গোল গোল দৃষ্টিতে আদিকে দেখছে।

সিমথি : তোকে বলেছিলাম না সিমথির ইমোশনস নিয়ে খেললে তোকে আমি আমার সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ টা দর্শন করাবো।

নীলয় খান : প পা ছ ছাড় জ জ্বলে যা যাচ্ছে।

সিমথি : জ্বলছে। জ্বলুক। আমার বড্ড ব্যথা লেগেছিলো যখন আমার সামনে আমার ভাইয়ার বুকে শুট করেছিলি। আমি অতটা ভদ্র নয়।

কথাটা বলে সিমথি পায়ের ক্ষত স্থানে মরিচ ঢেলে জোরে পাড়া দিয়ে দাঁড়ায়। নীলয় খান পুনরায় চেঁচিয়ে ততক্ষণে আর্মি ফোর্স চলে আসে বাড়ির ভেতরে। জাফর ইকবাল ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথির মাঝে বহুবছরের পুরানো বন্ধু আহনাফের দেখা মিলছে। কিন্তু এখন সিমথি কে থামানো প্রয়োজন। ওর শরীর ঢুলছে। যেকোনো মুহুর্তে সেন্সলেস হয়ে যাবে। রক্তে ফ্লোর ভিজে উঠে। পেটে বাধা ওড়না থেকে টুপটুপ করে র/ক্ত ঝড়ছে।

জাফর : সিমথি মামণি ওকে এখন আমাদের হাতে তুলে দে। তোর ব্লিডিং হচ্ছে অনেক। অনিলকে দিয়ে আদিদের নিচে আনা। তোর এখন ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। গু/লি টা এখনো তোর গায়ে আছে।

জাফর ইকবালের কথায় সিমথি ঢুলুঢুলু শরীরে জাফর ইকবালের দিকে তাকায়। সেই মুহুর্তেই নীলয় খান হাত দিয়ে সিমথি পা সরিয়ে সিমথি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে কোনোমতে আধো করে উঠে। সিমথি সিঁড়ির রেলিঙের সাথে বারি খায়। রাগান্বিত দৃষ্টিতে নীলয় খানের দিকে তাকাতেই চোখে পড়ে ওর দিকে তাক করা রিভলবার। নীলয় খান সিমথির দিকে রিভলবার তাক করে পৈশাচিক হাসি দেয়। জাফর ইকবাল সহ সমস্ত অফিসার রা ভয় পেয়ে যায়। এগুতে নিলে এন.কে এর হুমকিতে থেমে যায়। সিমথি দু পা এগিয়ে যায়। হাতে থাকা রিভলবার টা নীলয় খানের দিকে তাক করে। দুজন দুজনের দিকে রিভলবার তাক করে তাকিয়ে আছে। একজনে চোখে হিংস্রতা অন্যজনের চোখে মুখে পৈশাচিক আনন্দ। অনিল ভয়ার্ত ও করুণ দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথির আদেশ ব্যতিত কোনো পদক্ষেপ অনিল নিতে পারবে না অথচ বাইরে গার্ডস রা সবাই প্রস্তুত। কিন্তু এই প্রথম অনিল সিমথির আদেশ অমান্য করলো। ছুটে গেলো আদিদের বন্ধ করে রাখা রুমে দিকে। এই মুহুর্তে স্যারকে প্রয়োজন যে বড্ড। জাফর ইকবাল পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। এনকাউন্টার ব্যতিত কোনো পদক্ষেপ নেই।

জাফর ইকবাল : সিমথি আমি বলছি গু/লি চালা।

সিমথি জাফর ইকবালের দিকে তাকায়। গুলি টা করতে আধো পারবে কিনা সিমথির জানা নেয়। হা কাঁপছে। সবটা সাজানো নাটকীয়তা হলেও এই মানুষটার মাঝে বাবার প্রতিচ্ছবি দেখেছিলো সিমথি। যাকে বাবা ডাকা যায় তাকে কি খু/ন করা যায়৷ স্বার্থের জন্য হলেও তো এই মানুষ টা এতোদিন ছায়ার মতো থেকেছিলো। হোক না এর পেছনে অন্য কারণ এটা তো তখন সিমঢিসহ সবার অজানা ছিল। ভরসার হাত হিসেবে এই মানুষটার হাত মাথার উপর পেয়েছিলো। সিমথিকে অন্যমনস্ক জাফর ইকবাল চেঁচাতে শুরু করে। আচমকা সিমথি একটা কাজ করে বসে। উপস্থিত সবাই চমকায়। নীলয় খান কিছু টা পিছিয়ে যায়। বুকে জায়গা করে নেওয়া মেয়েটার দিকে তাকায়।

সিমথি : কেনো এমন টা করলে বড় আব্বু। কিসের কমতি ছিলো আমাদের। শুধুমাত্র লোভের বশবর্তী হয়ে এতোগুলো মানুষের জীবন কেনো নিলে। জানো আজ থেকে তিন বছর আগে যখন আমি এসব জানতে পেরেছিলাম ভীষণ কষ্ট হয়েছিলো। তোমাকে তো আমি বড় আব্বু বলে ডাকতাম। বাবাইয়ের অনুপস্থিতিতে তো তুমিই আগলে রাখলে। সেই আগলে রাখার হাত টায় যে আমার মাম্মাম-বাবাই, ফুফি আম্মু, ফুফা, বড় আম্মুর র/ক্ত লেগে আছে এটা জানার পর আমার শ্বাসরোধ হয়ে এসেছিলো। কেনো করলে। এমনটা না করলে আজ আমাদের একটা সুন্দর ফ্যামিলি থাকতো। কারোর কমতি থাকতো না। আমার জীবনটা ও এমন হতো না। নিজের হাতে আমি তোমাকে কখনো মা/র/তে চাই নি। কিন্তু তুমি সেই পরিস্থিতি তৈরি করলে। ও বড় আব্বু বলো না কেনো করলে এমন টা। বলো না বলো না।

সিমথির কথাগুলো শুনে উপস্থিত সবার চোখে পানি চলে আসে। জীবনের অন্তিম পর্যায় এসে হলেও নীলয় খানের অনুতাপ হচ্ছে। সত্যিই তো কিসের কমতি ছিলো ওদের। যে এই পাপের পথ বেঁচে নিলো। নিজের আদরের ভাই কে মা/র/লো। নিজের স্ত্রী কে মা/র/লো। সিমথি, সায়ন, ইফাজ, রোজের মতো চারটা সন্তান কে হারালো। কোলে করে মানুষ করা বাচ্চাগুলো আজ বড় হলো কিন্তু নিজের পাপের কারণে সবার চোখে ভালোবাসার বদলে ঘৃণা দেখতে হচ্ছে। কি পেলো এসব করে। কিন্তু ওই যে লোভ কখনো মানুষ কে ভালো হতে দেয় না। তার জলজ্যান্ত প্রমাণ বোধহয় নীলয় খান।

সিমথি : আম সরি বড় আব্বু।

নীলয় খান : আম সরি প্রিন্সেস।

সেই মুহূর্তে পর পর কয়েকটা গু/লি/র আওয়াজ হয়। আদিরা এতোক্ষণ সিড়িতে দাঁড়িয়ে ছিলো। গু/লি/র আওয়াজে সবাই চমকে যায়। আতঙ্কিত দৃষ্টিতে দুজনের দিকে তাকায়। দুজন দুদিকে চিটকে পড়ে ফ্লোরে। দুজনের হাতের থাকা রিভলবার গুলোও চিটকে পড়ে। দুজনের গায়ে রক্তের স্রোত বইতে শুরু করে। সবার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। কি হয়েছে এটা বুঝতেই শাওন রা দৌড়ে সিমথির কাছে যায়। আদি ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। সবাইকে নিজের দিকে দৌড়ে আসতে দেখে সিমথি ব্যথাতুর হাসে। এতো সুন্দর পরিবারের সাথে জীবনের শেষ কয়েক মাস কাটাতে পেয়েছে এটাই সিমথির জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ইফাজ সিমথি মাথা নিজের কোলে তুলে শব্দ করে কেঁদে দেয় । নীলয় খান ব্যথাতুর দৃষ্টিতে নিজের ছেলে-মেয়েদের দিকে তাকায়। অন্যায় করলে বুঝি শেষ সময় সন্তান রা ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।

ইফাজ : বোন চোখ খোল। এই সোনা চোখ খোল। ভাইয়ার কথা শুনবি না৷

সিমথি : ভ ভাইইইয়া,,

ইফাজ : আরেহ কেউ গাড়ি বের করো।

কারোর সাড়াশব্দ না পেয়ে ইফাজ সিমথির মাথা ফ্লোরে রেখে নিজেই এলোমেলো পায়ে এগিয়ে যায় বাইরের দিকে। অনিলের ডাকে আদির হুশ ফিরে দৌড়ে গিয়ে সিমথির মাথা নিজের কোলে তুলে রক্তাক্ত দেহটা জড়িয়ে ধরে।

আদি : স সসস সিয়া জান চোখ খোলা রাখ। ত তোর ককিচ্ছু হবে। আমি আছি না।

সিমথি : আ আআআদি

আদি : চ চুপ একদম চুপ। কথা বলবি ন না।

সিমথি : এ এমনি ত তেই চ চুপ হ হয়ে যাবো।

সিমথির এ কথায় আদিবারা সবাই ডুকরে কেঁদে দেয়। আদি সিমথিকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

আদি : এভাবে বলিস না জান। আ আমি শেষ হ হয়ে যাবো। তুই না ব বলেছিলও আ আমার সাথে বৃদ্ধ হবি। তখন আ আমাকে জ জ্বালাবি৷ ত তাহলে এ এখন কে কেনো ফাঁকি দিতে চ চাইছিস। ত তুই ন না ত তোর ক কথার খেলাপ করিস না ত তাহলে আ আমার ব বেলায় কেনো করিস।

আদির প্রতিটা কথা সিমথির বুকে ঝড় তুলছে। কিন্তু শরীরের অবস্থা ভালো না। হার্টে তিনটা গু/লি লেগেছে।
বাঁচা অসম্ভব। একজন ডাক্তার হয়ে সিমথি এতোটুকু বুঝতে পারছে ওর আয়ু ফুরিয়ে এসেছে। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। শাওন, মেহেররা কাঁদতে কাঁদতে তিন্নিকে আঁকড়ে ধরে। মেয়েটা সমানে কাঁদছে।

সিমথি : ব বলেছিলাম ন না জজীবনের শ শশশেষ ন নিঃশ্বাস আ আমি তোমমার ক কোলে ফেলললবো। ক ককথা র রেখখখেছি। তিন্নি ক স সোনা কাঁদে না। ক ককাকিয়ার কষ্ট হয় না। আ আআর ম মমা তত তোমার ভা ভালো ব বউ মমা হহতে পারলাম না। ত তোমার ম মনের মতো মমেয়ে ববিয়ে ককরিও। ততোমার ছেললের ব ব বয়স এএখনো আ আছে ব বিয়ের।

আদি : সিয়া মা/র খাবি। কি সব বলছিস। বউ এমন করিস না। আমি তোকে ছাড়া শেষ হয়ে যা যাবো। আরেহ কেউ গাড়ি বের করো না কেনো।

আদি সিমথি কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে। সিমথি বহুকষ্টে আদিকে আঁকড়ে ধরে। কানের কাছে ঠোঁট ছোঁয়ায় সবার অগোচরে। বহু কষ্টে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,,,,

সিমথি : এই জন্মের দূরত্ব টা পরের জন্মে ঘুচিয়ে দেবো। এই জন্মের অপূর্ণতা পরের জন্মে পুষিয়ে দেবো। আমি কেবল তোমারই হবো৷ যতবারই জন্মাবো সিমথির প্রতিটা শ্বাস আদির নামে পড়বে। মনে থাকবে।

সিমথির কথাগুলোই আদি সিমথিকে আরো জোরে আঁকড়ে ধরে। ঘাড়ে মুখ গুঁজে কেঁদে ওঠে চিল্লিয়ে। আদির মা-বাবা সবাই ছেলে-মেয়ের অবস্থা দেখে দিশেহারা হয়ে পড়ে।

সিমথি : ভ ভালোবাসি জজ জামাইজানন। ভ ভীষণ ভা ভালোববাসি।

আচমকা সিমথির হাত দুটো আদির পিঠ ছাড়িয়ে নিচে পড়ে যায়। সবাই চমকে যায়। আদি মুখ তুলে সিমথির দিকে তাকায়। ওর সিয়াজান চোখ বুঁজে আছে কেনো। মেহের, রোজ, তরী, আদিবারা সবাই পিছিয়ে যায়। ইফাজ দরজার কাছেই থমকে যায়। হঠাৎ যেনো সবাই থমকে গেছে।

” যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে ”

চলবে,,,,,

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 51

🍁🍁🍁

হসপিটালের সামনে এসে তিনটা গাড়ি থামে। শাওন গাড়ি থেকে বেরিয়ে সিমথিকে কোলে নিয়ে হসপিটালের দিকে রওনা হয়। আদির অবস্থা ভালো নয়। হসপিটালের সামনে আসতেই একঝাঁক জার্নালিস্টের মুখোমুখি হয়। মেঘাদের এখনো কিছু জানানো হয়নি। ইফাজ রা জার্নালিস্ট দের কোনো মতে কাটিয়ে ভেতরে যায়। শাওনের কোলে রক্তাক্ত সিমথি কে দেখে নার্স ওয়ার্ড বয় রা ছোটাছুটি শুরু করে। স্টেচার নিয়ে আসতেই শাওন সিমথিকে স্টেচারে শুইয়ে দেয়। তুষার, ইশান হসপিটালের করিডোরেই বসা ছিলো। একটু আগেই সায়নের অপারেশন সাকসেস হয়েছে। রিসেপশনের দিকে চেচামেচিতে দুজনই উঠে দাঁড়ায়। কিছুটা এগুতেই দুজন থমকে যায় সিমথির অবস্থা দেখে। মেঘা একটু আগেই সিনহার ডেলিভারি করিয়ে কেবিনে যায়। কয়েকজন প্রেশেন্ট পেন্ডিং থাকায় তুহিন, রোদেলা, মেঘা তিনজনই কাজগুলো এগিয়ে রাখার জন্য যার যার কেবিনে যায়৷ প্রেশেন্ট দেখা কালীন বাইরে চেঁচামেচির শব্দে মেঘা বিরক্তি নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়। মেঘা বেরুতেই তুহিন আর রোদেলার মুখোমুখি হয়।

রোদেলা : এতো চেঁচামেচি কিসের বলতো।

তুহিন : তুই যেখানে আমিও সেখানে।

মেঘা : তর্ক না করে চল।

মেঘার ধমকে দুজনই চুপ হয়ে যায়। তিনজন একসাথে রিসেপশনের দিকে এগিয়ে যায়। অন্যদিকে তন্ময় মেঘার কেবিনের দিকে আসার সময় চেঁচামেচি শুনে পথ বদলে রিসেপশনের দিকে এগিয়ে যায়। দুদিক থেকে চারজন এগিয়ে এসে স্টেচারের শুইয়ে থাকা ব্যক্তির দিকে চোখ যেতেই চারজন যেনো থমকে যায়। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকায়। চারজনই এগুনোর বদলে পিছিয়ে যায় ৷ র/ক্তে পুরো শরীর লাল হয়ে আছে। পাশে ড. নিহা পালস চেক করছে। মেঘা জোরে জোরে শ্বাস নেওয়া শুরু করে। রোদেলা পাশ থেকে মেঘাকে সামলানোর বদলে তুহিনের সাথে ধাক্কা খায়।

ড.নিহা : সরি সী ইজ নো মোর।

ড.নিহার কথা কানে আসতেই সবাই সিমথির নিথর দেহটার দিকে তাকায়। মেঘারা দৌড়ে ভীড় ঠেলে সিমথির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রোদেলা ড.নিহার বাহু খামছে চেঁচিয়ে বলে,,,,

রোদেলা : কিসব বলছেন। ওর কিচ্ছু হয়নি আপনি ভালো করে চেক করুন। ওর কি হবে। একটু আগেও ওকে সুস্থ দেখে এসেছি। কয়েক ঘন্টায় কেউ কিভাবে।

ড.নিহা : দেখো রোদেলা।

তুহিন : কিসের দেখা দেখি ড.নিহা। এসব বাজে কথা আর কখনো বলবেন না। ওর কি হবে। আর কি এমন হয়েছে যে আপনি এসব বলছেন। এই সিমথি দেখ অনেক ফাজলামো হয়েছে এবার উঠ। নয়তো মা/র খাবি এখন।

ড.নিহা : ড.সিমথি জাহান সিয়ার শরীর থেকে ইতোমধ্যে অনেক ব্রিডিং হয়েছে সেই সাথে উনি একটা ছোট খাটো হার্ট অ্যাটাক ও করেছেন।

শাওন : এতো অল্প বয়সে।

ড.নিহা : দেখুন মিস্টার. বর্তমানে যেকোনো জেনারেশনের মানুষজন হার্ট অ্যাটাক করে। মূলত অধিক মানুষিক চাপের জন্য উনার এই হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।

মুহুর্তের মধ্যে হসপিটালের করিডোর যেনো সমাবেশে পরিণত হয়েছে। আশেপাশের সব প্রেশেন্ট সহ তাদের বাড়িরলোক, নার্স, ওয়ার্ড বয়রা এসে ভীড় জমায়। তুহিন, রোদেলার কথায় আদিবারা ডুকরে কেঁদে ওঠে। আদির মা মুখে আঁচল চেপে আদির দিকে তাকায়। ছেলেটা কেমন নির্জীব হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে দেহ থেকে আত্মা টায় যেনো বেরিয়ে গেছে এখানে কেবল দেহ টা পড়ে আছে।

তন্ময় ধীর পায়ে এগিয়ে এসে সিমথির পাশে দাঁড়ায়। গালে হাত দিয়ে ধীর গলায় ডাকতে শুরু করে,,,

তন্ময় : সিমথি বোন দেখ সবাই কাদছে। উঠ এবার। তুই না বলেছিলি আমার বাচ্চাকে তুই আগে কোলে নিবি৷ সিনহা এখনো বাচ্চা টাকে আমার কোলে দেয়নি। নিজেও কোলে নেয় নি। তোর কোলে প্রথম দেবে বলে সিনহা কাউকে বাচ্চাটাকে কোলে দেয়নি। সিনহা কে আমি এখন কি বলবো বল। এই হারামি উঠ না। আমাদের কাঁদাতে তোর ভালো লাগে তাই না৷ এই মেঘা, তুহিন বল না ওকে উঠতে। সিয়া আমাদের শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে প্লিজ দোস্ত উঠ।

তন্ময় কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ে। তুহিন এপ্রোনের হাতা দিয়ে চোখ মুছে তন্ময়ের পাশে হাঁটু গেড়ে বসে।

রোদেলা : সিয়ু আদি ভাইয়ার অবস্থা টা একবার দেখ। কি করছিস এসব। তোর এভাবে ফাঁকি দেওয়ার কথা ছিলো না তো। তুই না বলেছিলি তুই আমার দজ্জাল ননদ হবি। আমার ননদ হবার আগেই যদি চলে যাস তাহলে আমি কিভাবে ননদের জ্বালা বুঝবো বল। এই ইফাজ তোমার বোনকে বলো না উঠতে।

মেঘা : ও উঠবে না। কে কেনো উঠবে না৷ ড.নিহা আপনি বলুন কি হয়েছে ওর। একটু র/ক্ত বের হলে বুঝি কেউ চলে যায়। কোথায় আমরা তো এতো এতো রক্ত অন্যের শরীর থেকে বের করি ওদের তো কিছু হয়না।

কথাগুলো বলতে বলতে মেঘার গলা ধরে আসে। চোখের পানি বাঁধ ভাঙ্গে। চার বন্ধুই শব্দ করে কেঁদে ওঠে। ইতোমধ্যে হসপিটালে সবাই জানে সিমথি – মেঘাদের বন্ধুত্বের কথা। ওদের কান্না দেখে সবার চোখে আপনাআপনি পানি চলে আসে। সিনহা ওর শ্বাশুড়ির সাহায্য নিয়ে বাইরে আসে কিসের চেঁচামেচি এটা দেখার জন্য। নরমাল ডেলিভারি হবায় আজই ডিসটাজ করে দেবে জানিয়েছে মেঘা। বাচ্চা টাকে নার্সের হাতে দিয়ে এখানে এসেছে। কিন্তু সিনগার পেছন পেছন নার্সটা ও চলে আসে বাচ্চা কে কোলে নিয়ে। সিনহা ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যায়। তন্ময়কে তুহিনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে দেখে অবাক হয়। এই ছেলে এভাবে কাঁদছে কেনো। পাশে মেঘা রোদেলাও আছে। আচমকা চোখ যায় নিথর দেহে পড়ে থাকা সিমথির দিকে। সিনহা ওর শ্বাশুড়ির দিকে তাকায়। দুজনের চোখে মুখেই অবিশ্বাস।

সিনহা : ত তন্ময় স সিমথি আপু এ এভাবে শুয়ে আ আছে কেনো।

সিনহার কাঁপা কাঁপা গলায় তন্ময় সিনহার দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকায়। তন্ময়ের দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে সিনহা থমকায়। আচমকায় হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। এই মেয়েটা সিনহার জন্য অনেক করেছে। নরক জীবন থেকে একটা সুন্দর জীবন সিনহাকে দিয়েছে। তন্ময়ের মতো একজন ভালোবাসার মানুষ পেয়েছে। সেই সাথে পেয়েছে শ্বশুর শ্বাশুড়ি নামক আরেক মা-বাবা।

ইশান : ম মেহের ভা ভাবী এ এসব ক কিভাবে হ হলো। আ আমরা ত তো কেবল প পেটে গ গুলি ল লাগতে দ দেখে এ এসেছিলাম।

মেহের : ও ওর বুকে গ গুলি লেগেছে। তোমরা আসার পর অনেক কিছু হয়ে গেছে।

প্রেস – মিডিয়া তাদের রসালো খবর ইতোমধ্যে নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছে। খবর পেয়ে আয়াশ, রিক ও ছুটে আসে। করিডোরে এসে সবাই কে দেখে দুজনের বুক ধক করে উঠে। খবরটা সত্যি নয়তো। দুজনই এগিয়ে যায়। আদিকে নির্জীবের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর দিকে এগিয়ে যায়। আদির দৃষ্টি অনুসরণ সামনে তাকাতেই দুজনের হৃদয় কেঁপে ওঠে। আয়াশ আদির কাঁধে হাত রাখে। আদি আয়াশের দিকে তাকায়।

আদি : ইশান সায়ন কোথায়।

আদির কথায় সবাই কান্না থামিয়ে আদির দিকে তাকায়। আদির দিকে তাকাতেই সবার বুক মোচড় দিয়ে উঠে। কিছুক্ষণের ব্যবধানের ছেলেটার চোখ-মুখের কি হাল হয়েছে।

ইশান : সায়ন ভাইয়াকে একদিনের অবজারভেশনে রাখা হয়েছে।

আদি আর কিছু না বলে এগিয়ে যায়। সিমথি রক্তে ভেজা হাত টা হাতে নিয়ে চুমু খায়। ধীর কন্ঠে বলে উঠে,,,

আদি : তুই তোর কথা রাখিসনি। আমার ক্ষেত্রে তোর এই খামখেয়ালি আমি আর সহ্য করবো না। তুই দূরত্ব বাড়িয়েছিস না। আমি ও আর দূরত্ব কমাবো না। তোর উপর আমার এক আকাশ সম অভিযোগ জমা রইলো। সব বলবো তোকে। উপসংহারে যদি বিচ্ছেদই থাকে তবে সূচনা এতো রঙিন কেনো হলো। আমার না ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ইচ্ছে করে নিজেকে শেষ করে দেয়। বিশ্বাস করো আত্মহত্যা যদি মহাপাপ না হতো তাহলে আমি আর সেকেন্ড ও অপেক্ষা করতাম না। সমস্যা নেই জানপাখি তুই বলেছিস না পরের জন্মে তুই আবার আমার হবি। আমি অপেক্ষায় থাকবো। সেই সময় কথা রাখিস।

আদি উঠে দাঁড়ায়। বুকের ভেতর ক্রমাগত কেউ ছুড়ি চালাচ্ছে মনে হচ্ছে। আদির চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে সিমথি-আদির কাটানো মুহুর্ত গুলো। শরীরে শক্তি মনে হচ্ছে সব ফুরিয়ে গেছে। এক পা পিছাতেই আদি নিচে পড়ে যায়। সবাই চমকে উঠে। আয়াশরা দ্রুত আদিকে ধরে কিন্তু ওর চোখ বন্ধ দেখে সবাই ঘাবড়ে যায়। আয়াশ, শাওন দুজন মিলে আদিকে পাশের কেবিনে নিয়ে যায়। তন্ময়, তুহিন, মেঘা, রোদেলা উঠে দাঁড়ায়। চারজনের দৃষ্টি সিমথির দিকে। অথচ চোখের সামনে ভাসছে একে একে কাটানো মুহূর্ত গুলো। জীবনের শেষ মুহূর্তটা বুঝি এতোই কষ্টের হয়। কানে বাজছে সিমথির সেই উক্তি টা,,,

_ দেখবি যেদিন চলে যাবো সেদিন আমার জন্য কাঁদবি। কিন্তু সেদিন আমিও মুখ ফিরিয়ে তাকাবো না হুহহ

____________________

মেঘাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে রোদেলা, তন্ময়, তুহিন, আয়াশ, রিক। ভেতরে মেঘাকে ছেলে পক্ষ দেখতে এসেছে।

আয়াশ : বুঝতে পারছি না ও কখন আসবে।

রিক : আরে চলে আসবে।

রিকের কথার মাঝে একটা গাড়ি এসে ওদের সামনে থামে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে একজন। কয়েক মাসের ব্যবধানে সুদর্শন ছেলেটার উজ্জ্বলতা যেনো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। হাসি-খুশি থাকা ছেলে টা একরাতেই কেমন নীরব, গম্ভীর হয়ে গেছে। কারো সাথে প্রয়োজন ব্যতিত কথা বলে না। সারাক্ষণ কাজের মাঝে ডুবে থাকে। আচ্ছা এভাবে একটা যন্ত্র মানবে পরিণত হওয়ার মাঝে কি আধো বেঁচে থাকা যায়।

আদি : এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস। ভেতরে চল।

রিক : এতোক্ষণ লাগে আসতে।

রিকের কথার প্রতিত্তোরে আদি কিছু না বলে ভেতরের দিকে হাঁটা লাগায়। ওর সিয়াজানের অসম্পূর্ণ কাজ টা সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব তো সিয়াজানের জামাইজানের ই। এই যে মেঘার হুট করে বিয়ে ঠিক হলো এটা কি সিমথি থাকলে সিমথি মানতো। কখনো নাহ। নিজের বুদ্ধি দ্বারা ঠিকই মেঘার বাবাকে ইমপ্রেস করতো।

কয়েক জোড়া পায়ের শব্দে ড্রয়িংরুমের সবাই দরজার দিকে তাকায়। সবার সাথে আদিকে দেখে মেঘা যেনো আঁধারে ঘেরা আকাশে রঙধনুর দেখা পায়। আদিকে দেখে মেঘার বাবা – মা এগিয়ে আসে। যতই হোক সিমথির বর বলে কথা। কিন্তু আয়াশকে দেখেই মেঘার বাবা মুখ বিকৃত হয়ে যায়। আদি সেসবে তোয়াক্কা না করে ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে পড়ে।

আদি : আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল আন্টি।

আদির সালামের জবাব দেয় মেঘার মা-বাবা।

মেঘার বাবা : তা বাবা হঠাৎ আসলে।

আদি : আসতে তো হতোই আঙ্কেল। শুনলাম মেঘার বিয়ে ঠিক করেছেন।

মেঘার বাবা : হুম। এই তো সামনের সপ্তাহে।

আদি : তা মেঘার মতামত আছে নাকি।

মেঘার বাবা : আমার কথায় ওর কথা৷

মেঘার বাবার কথায় আদি তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,,,

আদি : ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আঙ্কেল। সংসার কি আপনি ওকে শিখিয়ে দেবেন ৷ না আপনিই ওর বদলে সংসার করবেন

আদির কথায় সবাই থতমত খেয়ে যায়। আয়াশ আর রিক মুখ চেপে হাসে।

মেঘার বাবা : ম মানে।

আদি : দেখুন আঙ্কেল কথার মারপেঁচ আমার পছন্দ নয়। যা বলার ডিরেক্ট বলছি। সিমথি যদি আজ থাকতো তবে আপনি কি মেঘার বিয়ে অন্য কোথাও ঠিক করার সাহস টা দেখাতেন।

আদির কথায় মেঘার বাবা চপ হয়ে যায়। কথাটা ঠিক। সিমথি থাকলে হয়তো আজ আয়াশের সাথেই বিয়ে দিতে হতো। তবুও মেঘার বাবা উপরে রাগ দেখিয়ে বলে,,,

মেঘার বাবা : তোমার কি মনে হয় আমি ওকে ভয় পেতাম।

আদি : নাহ তো আঙ্কেল। ভয় কেনো পাবে। সিয়া বড়দের যথেষ্ট সম্মান করতো। আপনি ওর সম্মান আর বুদ্ধির কাছে হার মেনে রাজি হতেন।

মেঘার বাবা মাথা নত করে নেয়। আদি উঠে দাঁড়ায়। মেঘার বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,,,

আদি : আঙ্কেল প্রত্যেক মা-বাবা সন্তানের ভালো চায়। আপনি ও চান। কিন্তু আপনার কাছে মনে হচ্ছে মেঘার বিয়ে তিশান ( মেঘার হবু জামাই) এর সাথে হলে ভালো হবে মেঘা সুখী হবে। কিন্তু আঙ্কেল এটা কখনো হবে না। মেঘা আয়াশ একে অপরকে ভালোবাসে। আপনি ওদের ভালোবাসার মাঝে শুধু শুধু বাঁধা কেনো হচ্ছেন। সংসার টা ওরা দুজন করবে। আমি বা আপনি কেউ করবো না। জুটি তো উপর থেকেই সেট করা আমরা কেনো এর জুটি ওকে ওর জুটি একে দেবো। তাই বলছি আপনি ওদের মেনে নেন। আয়াশ কোন দিক দিয়ে খারাপ। ভালো ভদ্র মার্জিত একটা ছেলে। টাকার প্রশ্ন তুললে বলবো টাকা সবাই কে সুখ দেয় না। আঙ্কেল টাকা তো আমার কাছে ও আছে তাই বলে কি আমি সুখী। নাহ আঙ্কেল৷ দিনশেষে সেই সুখী হয় যার কাছে ভালোবাসার একজন মানুষ আছে যে একান্ত তার। আমার কাছে তো সেই মানুষ টা নেই। তার না বলা কথাগুলো যে বুঝে নেবে। ভালোবাসলে কেনো শুধু কষ্ট পেতে হবে আঙ্কেল। ভালোবেসে সুখটা তো ওদের প্রাপ্য। টাকা দিয়ে সেই সুখ কেনা যায় না আঙ্কেল। আমি আপনাকে ভালোভাবে বুঝাতে এসেছি আঙ্কেল। আশা করি আমার কথার মান রাখবেন। নিজের মেয়ে সুখ টা দেখেন।

আদির কথায় ড্রয়িং রুমে পিনপনে নীরবতা নেমে আসে। মেঘার বাবা মাথা নুইয়ে নেয়। কথা ঠিক। মেঘারা আহত দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায়। এই মানুষ টা ভালোবেসে সুখ কষ্ট দুটোই পেয়েছে। তাই হয়তো ভালোবাসার মানে টা উনার কাছে অন্যরকম। এক মিশ্রিত অনুভূতি।

মেঘার বাবা : আমার ভুল হয়ে গেছে। তিশান বাবা আমি দুঃখিত। আমার মেয়ে যাকে ভালোবাসে আমি তার হাতে ওকে তুলে দেবো। আমায় মাফ করো।

তিশান : না আঙ্কেল ইট’স ওকে। মা – বাবা চলো।

তিশান ওর মা-বাবা কে নিয়ে বেরিয়ে যায়। আয়াশ-মেঘার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে। আদি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আয়াশ খুশিতে আদিকে জড়িয়ে ধরে।

আয়াশ : Thank you ভাই৷

আদি : ছাড়। তোর মা-বাবা কে নিয়ে আসিস। বিয়ের ডেট ফিক্সড করে জানাস। আঙ্কেল আন্টি আসছি।

মেঘার মা : সেকি কিছু খেয়ে যাও। এই প্রথম আসলে খালি মুখে কিভাবে যেতে দেয়। তুমি সিমথির বর। সিমথি আমার মেয়ের মতো ছিলো।

আদি : আন্টি যার পরিচয়ে আপনাদের কাছে পরিচিত সেই তো নেই তাহলে এসব ফর্মালিটির কোনো প্রয়োজন হবে না। আর বিয়েতে তো আসবোই। তখন নাহয় খাবো আজ আসি।

আদি বেরিয়ে যায়। তন্ময়রা ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এই কয়েকমাসে এই দীর্ঘশ্বাস সবার নিত্যদিনে সঙ্গী।

আদি : সিয়াজান আমার ভীষণ কষ্ট হয় রে তোকে ছাড়া। তুই সত্যিই কঠিন মনের। পাথরের মন তোর নয়তো আমাকে এতোটা কষ্ট দিস। প্রতিনিয়ত আমাকে তোর শূন্যতা অনুভব করাস। শূন্যতার মাঝেও আমি রাতের আঁধারে তোকে খুঁজে বেড়ায়। নিজের রুমে আমি থাকতে পারিনা। মনে হয় সবজায়গায় তুই চলাফেরা করছিস। তোর হাসির, রাগ, হুটহাট জ্বালানো গুলো বড্ড মিস করি রে। জানিস তিন্নি টা প্রতিদিন তোর কথা বলে কিন্তু ওকে কিভাবে বলি বল তুই আমার সাথে দূরত্ব বাড়িয়েছিস। সিয়াজান তুই বলেছিলি না তোর মানসিক শান্তি প্রয়োজন। আজ আমার মানসিক শান্তি প্রয়োজন রে। আমি হাঁপিয়ে গেছি। ভালোবাসায় এতো কষ্ট আগে জানলে এসবে জড়াতাম না। সারাজীবন একাই থাকতাম।

চলবে,,,,

( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 52

🍁🍁🍁

রাত বারোটা বেজে চল্লিশ মিনিট। ড্রয়িং রুমে শাওন রা সবাই বসে আছে। এখন আর এই ড্রয়িং রুম হাসি-খুশীতে মজে থাকে না। সিমথি কিছু বললে আদির মা তেড়ে আসে না। হুটহাট ভাবী জ্বি নামেও ইশান কাউকে ডেকে উঠে না। আর না কেউ ইশানকে দেবর জ্বি বলে। সিমথি যে প্রতিটা বাড়ির প্রাণ ছিলো তা ওর শূন্যতায় সবাই বুঝতে পারছে। শাওন দরজার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এই ছেলে আজোও মধ্যরাতে আসবে।

আদির মা : ছেলে টা আমার কোনো কথা শুনে না। এতো রাত তো আগে করতো না। এখন যেনো বাড়ি ফিরতেই ওর মন চাইনা।

শাওন : আগে তো সিমথি ছিলো মেঝো মা।

শাওনের কথায় আদির মা কেঁদে ওঠে।

আদির মা : আল্লাহ এমন কেনো করলো বলতে পারিস৷ আমার ছেলেটাকে কতদিন হলো হাসি খুশি দেখিনা। তোদের মাঝেও প্রাণোচ্ছল কোনো ভাবমূর্তি নেই। সবাই এভাবে ঘুমরে থাকলে আমরা বুড়ো-বুড়িরা কোথায় যাবো বলবি।

ইশান : মেঝো মা। তোমরা রুমে যাও। কয়েকটা দিন যেতে দাও দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।

আদির মা : সব ঠিক হয়ে যাবে হয়ে যাবে করতে করতে সাত টা মাস গেলো। আর কবে আদি ঠিক হবে বলবি।

আদির মায়ের কথায় সবাই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এই কথার উত্তর সত্যিই ওদের জানা নেই।

আদিবা : মা, বাবা, বড় মা তোমরা সবাই রুমে যাও। রাত হয়েছে ঘুমাও। শুধু শুধু ওর জন্য জাগছো। ও সেই মধ্যরাতেই বাড়ি ফিরবে।

মেহের : হুমম। মা, মেঝো মা তোমরা যাও প্লিজ।তোমাদের দেখলে ভাইয়ার আরো মন খারাপ হবে।

আদির মা কাদতে কাদতে নিজের রুমে চলে যায়। পেছন পেছন আদির বাবা ও যায়। শাওনের মায়েরা ও নিজ নিজ রুমে চলে যায়।

শাওন : তিন্নি কোথায়।

মেহের : অনেক কষ্টে ঘুম পাড়িয়েছি। প্রতিদিন শুধু সিমথি কোথায় জানতে চাই। মেয়েটাকে কিভাবে বলি বলোতো।

মেহেরের কথার বিপরীতে শাওন সোফায় গা হেলিয়ে চোখ বুঁজে নেয়।

রাত দুইটায় আদি বাড়ি ফিরে। দরজা খুলে সোফার দিকে তাকাতেই চোখে আসে শাওনের কাঁধে মাথা হেলিয়ে রাখা মেহের ঘুমন্ত মুখটা। চোখের সামনে ভেসে ওঠে কটেজে নিজের বুকে সিমথির ঘুমন্ত মুখটা। আদির বুকের ব্যথা বেড়ে যায়। বুকে আঙ্গুল ঘষে দরজা আস্তে করে লাগিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। সোফার অন্যপাশে আদিবা, ইশান ও ঘুমিয়ে ছিলো এটা আদির দৃষ্টি এড়ায়নি। নিজের রুমে আসতেই বুকের ভেতর টা আবারো কামড়ে উঠে। এই রুমটায় তো একসময় সিমথি ও ছিলো ওর সিয়াজান। তাহলে আজ রুমটা শূন্য কেনো। আদি ড্রেসিং টেবিলের সামনে এগিয়ে যায়। হাত ঘড়ি খুলে টেবিলে রাখতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এই জায়গায় টায় তো ওদের কত সুন্দর মুহুর্ত কেটেছিলো অথচ আজ সবকিছু ই স্মৃতি। আদি ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। ঝরনা চালিয়ে নিচে বসে পড়ে। ঝরনা পানি আর চোখের পানি মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। রুমে প্রতিটায় কোণায় সিয়াজানের স্মৃতি কিন্তু সেই মানুষ আজ নাকি,,,,।

শাওয়ার সেড়ে রুমে আসে। দরজা লাগিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। হাতে সিগারেটের প্যাকেট। দোলনায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এই সিগারেট হাতে যদি ওর সিয়াজান ওকে দেখে তাহলে নির্ঘাত ওর গর্দান যাবে। কিন্তু কিভাবে দেখবে এটা তো অসম্ভব।

আদি : তুমি আমার এমনই একজন, যারে একজনমে ভালোবেসে ভরবে না এমন।

ঠোঁটের ফাঁকে সিগারেট ঢুকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে। একসময় এই সিগারেট ছেড়েছিলো সিমথির জন্য এখন আবারো সিমথির জন্যই হাতে নিলো। আদি মনে পড়ে ইন্টারে পড়ুয়া বাচ্চা সিমথির সেই কথাটা।

_ তুমি আর কখনো সিগারেট ছুঁবে না। তোমার ওই গোলাপি ঠোঁট গুলো আমার ভীষণ প্রিয়। ওখানে সিগারেটের অস্তিত্ব ও আমার সহ্য হয়। বুঝলে আদি তোমার দেহের সর্বত্র জুড়ে কেবল আমার বিচরণ চাই। এসব সিগারেট ফিগারেট আরেক দিন খেতে দেখলে সেদিনই তোমায় বিয়ে করে নেবো। তারপর ওই ঠোঁটে কেবল আমার বিচরণ হবে।

ওইদিন সিমথির কথায় আদি উপরে বিরক্তি দেখালেও ভেতরে কোথাও একটা ভালো লাগা কাজ করেছিলো। অতীতের কথা মনে করে আদি আনমনে হেসে উঠে। মুহুর্তেই হাসিটা মিলিয়ে যায়। মন বলে উঠে,,

_ ইশশ আবারো যদি সিয়াজান দেখতো ওর হাতে সিগারেট তখন যদি এই কথাটা বলতো তাহলে আদি ওর সিয়াজানকে বুকের খাঁচায় বন্ধী করে রাখতো।

কিন্তু হায় সেই দীর্ঘশ্বাস এসে জানান দিলো তোর সিয়াজান তোর কাছে নেই। ও তোর কথা শুনছে কিন্তু তবুও চুপ করে আছে। তোকে শাস্তি দিচ্ছে ভালোবাসার।

__________

সকালে খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে।

শাওন : কাল কখন বাড়ি ফিরলো তোরা কেউ টের পেয়েছিস।

আদিবা : নাহ রে। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

আদিবার কথায় সবাই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আদির মা অনেক আমতা আমতা করে বলে উঠে,,,,

আদির মা : আ আমি একটা কথা বলতে চাইছিলাম।

আদির মায়ের কথায় সবাই উনার দিকে তাকায়।

শাওনের মা : বল।

আদির মা : বলছিলাম আ আদির আ আরেকটা বিয়ে দিলে হয় না।

আদির মায়ের কথায় সবাই হতভম্ব দৃষ্টিতে আদির মায়ের দিকে তাকায়। আচমকা কোনো কিছু পড়ার শব্দে সবাই আঁতকে ড্রয়িংরুমের দিকে তাকায়। ফ্লোরে ফ্লাওয়ার ভার্স টা পড়ে থাকতে দেখে সামনে তাকিয়ে আদিকে দেখে সবাই আঁতকে যায়।

আদি : কি বললে তুমি আবার বলো।

আদির বাবা : আদি তোর মায়ের কথা ধরিস না তো।

আদির মা : কেনো আমার ছেলের ভালো কি আমি চাইতে পারিনা। কতদিন একা একা থাকবে। কি আছে ওর জীবনে যাকে আঁকড়ে থাকবে।

আদি : না তুমি আমার ভালোর বদলে খারাপ চাইছো। এটা তুমি নিজেও ভালো করে জানো। আমার নিঃশ্বাস নিয়ে কেউ খেলবে সেটা আমি সহ্য করবো। আমার জীবনে কেবল একজন মেয়েই থাকবে আর সে হলো সিমথি জাহান সিয়া। ফিজিক্যালি ও আমার কাছে নেই মানে যে ও আমার মন থেকে উবে গেছে এটা ভাববে না। নেক্সট টাইম এসব বললে আমাকে আর খুজে পাবে না।

কথাগুলো বলে আদি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। শাওনরা একে অপরের দিকে তাকায়। আদির মা কেদে দেয়।

আদির বাবা : তুমি এমন টা কিভাবে ভাবলে সিমথির জায়গা অন্য কেউ ছিহ৷

শাওনের মা : মেঝো তুই ভুল ভাবছিস। আদিকে স্বাভাবিক একজনই করতে পারে সে হচ্ছে সিমথি কিন্তু ও তো,,,

মেহের : এসব বাদ দাও তো। শাওন তিন্নিকে নিয়ে যাও।

করিডোর দিয়ে যাওয়ার সময় সিমথির কেবিনের সামনে এসে থেমে যায় তুহিন৷ একবার বন্ধ কেবিনটার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। একটা সময় এই কেবিনে কত আড্ডা হতো আর এখন সময়ই স্মৃতি। তন্ময়ের বাচ্চা টার ও সাত মাস চলছে। নীলয় খান সেদিনই ওই জায়গায় স্পট ডেইথ হয়েছিলো। তারপরের দিন সীমা বেগমের ফা/সি হয়। আহনাফ খান & তানহা খানে খুনীরা তাদের যোগ্য শাস্তি পেয়েছে।

_____________

গতকাল মেঘার গায়ে হলুদ । আগামীকাল সবাই রিসোর্টে এসেছে। সেদিনের পরেরদিনই দুই পরিবার মিলে সামনের সপ্তাহে বিয়ে ঠিক করে। আবারো দুজন ভালোবাসার মানুষ এক হবে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তির আর কিছু হতে পারে নাকি। বিয়ে উপলক্ষে রিসোর্ট বুক করা হয়েছে। আদিদের রিকদের পরিবারের সবাই কে দাওয়ার দিলেও তারা গায়ের হলুদের দিন আসবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু বাচ্চারা দুদিন আগেই আসবে। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেনো আয়াশ তো ওদের বন্ধু। বন্ধুর বিয়ে খামতি থাকলে চলবে নাকি।

সবাই খোলা ছাঁদে মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে। কিন্তু সবার মাঝে মিসিং দুইজন মানুষ।

রোদেলা : এখন যদি সিমথি থাকতো তাহলে কি বলতো জানিস।

রোদেলার কথায় মেঘা শুকনো হাসে।

মেঘা : বলতো ” কিরে এক বাচ্চার বাপকে বিয়ে করতে পারিস বলে মন খারাপ। আরে ইয়ার প্যারা নাই। ”

পরিবেশ থমথমে ভাব ধারণ করে। মেঘা মাথা নুইয়ে নেয়। মূলত চোখের পানি আড়াল করার পন্থা। তন্ময় আর তুহিন উঠে এসে মেঘাকে টেনে তুলে। তন্ময় মেঘার চোখের পানি মুছিয়ে বলে,,,

তন্ময় : কাঁদিস কেনো। আচ্ছা সত্যি কথা বলতো তুই এক বাচ্চার বাপকে বিয়ে না করতে পারা শোকপ কাঁদছিস না তো।

তন্ময়ের কথায় সবাই হেসে উঠে। মেঘা তন্ময়ের বুকে কিল বসিয়ে দেয়।

মেঘা : ফা/জি/ল একটা।

তুহিন : কাঁদিস না মেঘপরী। তুই কাঁদলে আমাদের ভালো লাগে না।

তুহিনের কথায় মেঘা চোখের পানি মুছে নেয়।

মেঘা : কোথায় কাঁদছি। কাঁদছি না তো। আচ্ছা আদি ভাইয়া কোথায়।

আয়াশ : আমাদের সাথেই তো আসলো। কিন্তু আসার পর আর দেখতে পেলাম না তো।

সায়ন : চল গিয়ে দেখি কোথায়।

রাদিফ : আদি ভাইয়া মনে হয় রুমে একা বসে আছে।

শাওন : না রুমে নেয়। আমি আসার সময় দেখে আসলাম।

শাওনের কথায় সবাই পেছনে তাকায়। শাওন তিন্নিকে নিয়ে এদিকেই আসছে।

ইশান : তাহলে কোথায় গেলো।

শাওন : জানিনা।

রিক : ফোন করে দেখি। এই ছেলে আমাদের পা/গ/ল বানিয়ে ছাড়বে।

রিক আদিকে ফোন দেয় কিন্তু নো রেসপন্স। এবার সবার মনেই ভয় ঢুকে যায়। এই ছেলে কিছু করে বসবে না তো আবার।

চলবে,,,,

( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)