#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 53
🍁🍁🍁
আড্ডার মাঝেই হঠাৎ রোদেলার ফোন বেজে ওঠে। রোদেলা ফোন রিসিভ করে পাশে যায়। ফোনের ওপাশ থেকে কিছু শুনে রোদেলা হন্তদন্ত হয়ে সবার কাছে আসে। ব্যস্ত গলায় বলে,,,,,
রোদেলা : তুহিন চল
তুহিন : কোথায় যাবো আর কি হয়েছে তোর।
রোদেলা : উফফস এতো কথা বলিস না চল। দরকারি কাজ পড়ে গেছে।
মেঘা : কিসের দরকারি কাজ। আর কোথায়ই বা যাবি।
রোদেলা : আরেহ বললাম তো দরকারী কাজ। বিশ্বাস নেই নাকি আমার উপর তোদের। গেলে বল যাবি নয়তো আমি একা যেতে জানি। ( রেগে)
রোদেলার ধমকে তুহিন উঠে দাঁড়ায়।
তুহিন : সবগুলো এক ধাতুর তৈরি। ত্যাড়া বাঁকা কথা এদের র/ক্তে মিশে আছে চল।
মেঘা : আমি ও যাবো। তোকে আমি ঠিক লাগছে না।
রোদেলা : থাপ্পড় খেতে না চাইলে চুপ থাক ( ধমকে)
রোদেলার ধমকে মেঘা ঠোঁট উল্টে নেয়। রোদেলা অসহায় দৃষ্টিতে তন্ময়ের দিকে তাকায়। তন্ময় ও মুখ ফিরিয়ে নেয়। রোদেলা গাল ফুলিয়ে জোরে একটা শ্বাস নেয়। মেঘা সামনে বসে মেঘার হাত দুটো মুঠোয় নেয়। শান্ত স্বরে বলে,,,,
রোদেলা : আজ বাদে কাল তোর বিয়ে। এখন যদি কনে হয় বাইরে যাস আয়াশ ভাইয়ার ফ্যামিলির লোকেরা কি ভাববে। আমরা একটু হসপিটালে যাবো। একটা অপারেশন করতে হবে। আমি একাই যেতাম বাট আসতে আসতে রাত হয়ে যাবে তার জন্য তুহিন কে নিয়ে যাচ্ছি। তোর ওখানে না গেলেও চলবে। হয়েছে।
মেঘা : এটা তো বুঝিয়ে বললেই পারতি। শুধু শুধু ধমকালি কেনো। ( নিভু নিভু গলায়)
রোদেলা : আচ্ছা বাবা সরি জান। এই যে কান ধরছি। আমার ভুল হয়েছে।
_______
মেঘাকে চুপ দেখে রোদেলার খারাপ লাগে। বুঝিয়ে বললেই হতো। কেনো যে ধমকাতে গেলো। কিছু একটা ভেবে কান ধরে সুর তুলে বলে,,,
“মেঘা সোনা রাগ করে
তুই রাগলে চাঁদ হাসে না
তোর হাসি যে চাঁদের খণি
তুই তো আমার চোখের মণি। ”
মেঘা হেসে রোদেলার দিকে তাকায়। মেঘাকে হাসতে দেখে রোদেলা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। মেঘার গোছালো চুলগুলো এলোমেলো করে উঠে দাঁড়ায়। তন্ময়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তন্ময়ের মাথায় একটা গাট্টি মেরে চলে যায়।
তন্ময় : সব কটা হা/রা/মি।
______________
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। কিন্তু আদি, তুহিন, রোদেলা কারোরই ফেরার নাম নেই। তিনজনের নাম্বারে সবাই লাগাতার ফোন দিচ্ছে কিন্তু কেউ ধরছে না। মেঘা টেনশনে কেঁদে দেয়। ওর ভয় হচ্ছে। কিছু খারাপ হয়নি তো আবার। নাহলে এরা ফোন ধরবে না কেনো।
আদিবা : ও শাওন ভাইয়া এরা কেউ এখনো আসছে না কেনো। মেঘাপি তো কাঁদছে। ইশশ বেচারীর আজ মেহেদী আর দেখো কি অবস্থা।
মেহের : কেউ ফোন টা তো ধরবে। এরা কি যে পায় আমার টেনশন দিয়ে।
আপাতত এখানে সব ছোটরা আছে। বড়রা বিয়ের কাজে উপরে ব্যস্ত। ছোটরা বলতে আদিবা, শাওন, মেহের, তুহা, ইশান, তিন্নি, রিক, আয়াশ, সায়ন, মিম, আদ্র, তন্ময়, সিনহা, মেঘা, রাদিফ, তুষার, শায়লা, আয়াজ, ইফাজ, রোজ, তরী, সূর্য, আফিন, আহান। সূর্য এসেছে আদিবার উডবি সূত্রে। তাছাড়াও আয়াশের দাওয়াতে ওদের আসা।
সবাই মেঘাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে কিন্তু মেঘার কান্নার নাম নেই। হঠাৎ সবাই কেমন চুপ হয়ে যায়। চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে যায়। যেনো এখানে কেউ নেয়। কিন্তু তাতে মেঘার কি ও এখনো মাথা নিচু করে কাঁদতে ব্যস্ত। আচমকা ওর পাশে ধপাস করে কেউ বসে পড়ে।
_ কি ব্যাপার বলতো ইন্জিনিয়ার এক বাচ্চার বাপের বউ না হওয়ার জন্য কাঁদছিস নাকি।
অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত কন্ঠস্বরে মেঘার কান্না থেমে যায়। নিজের কানকে যেনো বিশ্বাস করতে ওর কষ্ট হচ্ছে। হতবাক দৃষ্টিতে পাশ ফিরে তাকাতেই দ্বিতীয় দফায় চমকায়। ছিটকে উঠে দাঁড়ায়। সামনের ব্যক্তিও উঠে দাড়ায়। মেঘা হতবাক হতবুদ্ধি। এটা কি স্বপ্ন হুমম স্বপ্নই হবে। এটা বাস্তব কিভাবে হবে। আচমকা সামনের ব্যক্তি ওর হাতে চিমটি কাটে।
মেঘা : আহ।
_ আরেহ এটা বাস্তব কল্পনা নয়।
আচমকা মেঘা সামনের ব্যক্তিকে ঝাপটে ধরে সর্বশক্তি দিয়ে। এতে করে সেই ব্যক্তি কয়েকপা পিছিয়ে সিঁড়ির রেলিঙের সাথে বারি খায়। ব্যথায় চোখ মুখ কুঁচকে নেয় তবুও হেসে মেঘার পিঠে হাত রেখে জড়িয়ে ধরে। কাঙ্ক্ষিত স্পর্শে মেঘা বাচ্চাদের মতো শব্দ করে কেঁদে দেয়।
মেঘা : স সিমথি।
সিমথি : তো কি আমার ভূ/ত আসবে। বাহ রে ম/র/লা/ম কখন।
মেঘা : ব বাজে ক কথা বলবি না। শ/য়/তান।
সিমথি : ন্নি হবে
মেঘা : কি
সিমথি : মানে আমি তো মেইল নয় ফিমেল তাই শ/য়/তা/ন নয় শ/য়/তা/ন্নি হবে।
মেঘা কিছু না বলে সিমথিকে আরো জড়িয়ে ধরে। সিমথিও চুপ হয়ে যায়। চোখ বুঁজে একটা প্রশান্তির শ্বাস ছাড়ে। এতোগুলো মানুষের ভালোবাসা পেয়েও হারানোর স্বার্থ ওর নেই। তাই হয়তো জীবন ওকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দিয়েছে।
সিমথি : মেঘা এবার থাম বোন। নয়তো পদ্মা নদীতে পানি কম পড়বে। নৌকা চলাচল ব্যাহত হবে। কতগুলো মাছ মা/রা যাবে। ভাবতে পারছিস।
মেঘা সিমথিকে ছেড়ে ওর বাহুতে থাপ্পড় মারে। সিমথি হেসে মেঘার চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।
সিমথি : তুই আমার সামনে কখনো কাঁদবি না। সহ্য হয় না আমার।
মেঘা হেসে দেয় কিন্তু চোখ দিয়ে পানি উপচে পড়ছে। সিমথি বাকি সবার দিকে তাকায়। কি আজ সবাই এমন থমকানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কেনো। সবাই সিমথির দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে চোখের সামনে ভূত দেখেছে। অসহায় দৃষ্টিতে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আদি, তুহিন, রোদেলার দিকে তাকায়। তিনজনের মুখে হাসি উপচে পড়ছে। সিমথি কপাল চাপড়ে গুটিগুটি পায়ে সায়নের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। সায়নের গাল ধরে জোরে টেনে ধরে।
সায়ন : আহ পরী।
সিমথি হেসে দেয়। ভ্রু নাচিয়ে বলে,,,
সিমথি : এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেনো। আমাকে জড়িয়ে ধরবি না।
সায়ন এক মুহুর্ত বিলম্ব না করে সিমথি কে জড়িয়ে ধরে।
সায়ন : এ এসব কখন হলো। আ আমাদের জানালি না।
সিমথি সায়নের বুকে থেকেই হেসে উঠে। ভাইয়ের গলা কাঁপছে। সিমথি বিড়ালের মতো মুখ উঁচু করে ইফাজ, রোজ, তরীর দিকে তাকায়। তিনজনই ছুটে এসে সায়ন সহ সিমথিকে জড়িয়ে ধরে। রোজ আর তরী তো কেঁদেই ওঠে। চার ভাই-বোনের ভালোবাসায় সিমথি আরেকটা প্রশান্তির শ্বাস নেয়। ইফাজ সিমথির মাথায় স্নেহের পরশ বুলায়। এদিকে রোজ, তরী নাক টেনে কেঁদে যাচ্ছে। সিমথি দেয় এক ধমক।
সিমথি : ওই কান্না থামা। বেঁচে গে/লে কাঁদে। ম/র/তে যখন বসেছিলাম তখনও কাঁদে। আরে কান্না জমিয়ে রাখ এখনই তো আর বিয়ে দিচ্ছি না।
সিমথির কথায় তরী আর রোজ গাল ফুলায়। বাকিরা ধ্যান ভেঙে হেসে উঠে। সিমথি তরী আর রোজের গালে স্নেহের হাত রাখে।
সিমথি : কাঁদিস না। আমার সহ্য হয় না। তাই বকেছি। সরি।
ব্যস আর কি দরকার প্রিয় বোনের আদর মাখা কথায় রোজ আর তরী হেঁসে দেয়।
সিমথি এবার ইশানের কাছে যায়।
সিমথি : দেবর জ্বি কি ব্যাপার বলোতো।
এতো দিন পর দেবর জ্বি ডাকটা শুনে ইশানের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে। ইশানের হাসি দেখে সিমথি ও হেঁসে দেয়। অতঃপর বাচ্চাদের দিকে তাকায়। তিনজনের উদ্দেশ্য বলে উঠে,,,,
সিমথি : আমার বাচ্চা সেনাবাহিনীরা এতো চুপচাপ কেনো। কাকিয়া, মামণি কে ভুলে গেছে নাকি।
সিমথির কথায় আয়াজ, ইনিমা, তিন্নি কাকিয়া, মামণি বলে দৌড়ে এসে সিমথিকে ঝাপটে ধরে। সিমথি কিছু টা পেছনে হেলে পড়ে যেতে নিলেও নিজেকে সামলে বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরে।
তিন্নি : কোথায় ছিলে তুমি এতোদিন।
ইনিমা : জানো মামণি আমরা মাকে বাপিকে সবাই কে জিজ্ঞেস করতাম তোমার কথা কিন্তু কেউ বলতো না।
আয়াজ : মা দমক ( ধমক) মালতো ( মারতো)
তিনজনের কথায় সিমথির মন টা খারাপ হয়ে যায়। তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে তিনজনের কপালে চুমু খায়।
সিমথি : কাকিয়া কাজে ছিলাম সোনা। এই যে এসে গেছি।
তিন্নি : আবার চলে যাবে
সিমথি : কোথায় যাবো। তোমাদের ছেড়ে আর যাবো না।
তিনজনই খুশিতে লাফিয়ে উঠে। সিমথি আদ্রকে কোলে নিয়ে আদর করে। আদ্র এতোদিন পর পিপপি কে দেখে গোল গোল চোখে তাকিয়ে থাকে। আধো আধো স্বরে বলে উঠে,,,,
_ পিপপি।
সিমথি : কি রে তন্ময় তোর বাচ্চা কই।
তন্ময় : ______
সিমথি : আরেহ মেয়েদের মতো গাল ফুলিয়ে আছিস কেনো।
তন্ময় : রোদ, তুহিন জানতো। ( গাল ফুলিয়ে)
সিমথি : কি
তন্ময় : নাটক করিস না।
সিমথি : আমি কি কোনো অভিনেত্রী যে নাটক করবো। সাত মাসে পা/গ/ল হয়ে গেলি নাকি ভাই। ইশশ রে সিনহার ভবিষ্যৎ টা অন্ধকার হয়ে গেলো। সিনহা আম সরি বোন আমি বুঝিনি ও এভাবে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে।
সিমথির কথা বলার ভঙ্গিমায় সবাই হেসে দেয়। তন্ময় রেগে তাকায়। গটগট পায়ে এগিয়ে সিমথির মাথায় আস্তে করে থাপ্পড় মারে। সিমথি ভ্রু কুঁচকায়। তন্ময় গাল ফুলিয়ে আচমকায় জড়িয়ে ধরে। তন্ময়ের দেখাদেখি মেঘাও এসে জড়িয়ে ধরে।
রোদেলা : বাহ রে বাহ আমরা দুজন বাদ
তন্ময় : হুম তোরা বাদ।
তুহিন : ওই ওই সর দুজন জায়গা দে আমাকে ছাড়া কোনো গ্রুপ হাগ হবে না।
রোদেলা : হা/রা/মি আমাকে নয় আমাদের বল। ইংলিশ গ্রামারে ব্যাপক দুর্বল তুই সিঙ্গুলার প্লুয়ার্ল বুঝিস না। ছ্যা ছ্যা।
তুহিন চোখ গরম করে তাকায়। রোদেলা ভেংচি কেটে দ্রুত পায়ে মেঘার সাইড থেকে সিমথিকে জড়িয়ে ধরে। তুহিন মাথা চুলকে তন্ময়ের দিক থেকে জড়িয়ে ধরে। বন্ধুত্বের এতো সুন্দর বন্ধন দেখে সবার চোখ জুড়িয়ে তন্ময় : তখন এটার জন্য ই এভাবে চলে গিয়েছিলি।
তুহিন : হুমম।
মেঘা : আমাদের বললি না কেনো।
রোদেলা : সিমথি বারণ করেছিলো।
সিমথি : রোদ – তুহিন বারণ করেছে।
দুজনের দুরকম কথায় চারজন সিমথিকে ছেড়ে ছিটকে সরে দাঁড়ায়। রোদেলা, তুহিন রাগী দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। মেঘা আর তন্ময় ও রাগী দৃষ্টিতে তিনজনের দিকে তাকায়। সিমথি মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে ধরে। মাথা দুপাশে নাড়িয়ে একে একে চারজনের দিকে তাকায়। চারজনের দৃষ্টি দেখে সিমথি শুকনো হাসে। সিডর, আয়লা, ঘূর্ণিঝড়, সুনামি সবই ওর উপর আসতে চলেছে। বুঝতে সিমথি বাকি নেই। সিমথি জোরে একটা শ্বাস নেই। চারজনই চেচিয়ে সিমথির উপর ঝাপিয়ে পড়ে। ততক্ষণে সিমথি মাথা নুইয়ে ওদের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আয়াশের পাশে এসে দাঁড়ায়। ফলস্বরূপ চারজনই মেঝেতে পড়ে একজন আরেকজনের উপর। চারজনের অবস্থা দেখে সবাই শব্দ করে হেসে উঠে। একদম প্রাণখোলা হাসি।
সিমথি : পারফেক্ট গা/ধা-গা/ধীর বাচ্চা।
চারজনই একসাথে সিমথির নাম ধরে চেঁচিয়ে উঠে।
ওদের হাসাহাসির শব্দে মেঘা-আয়াশের ফ্যামিলির সবাই নিচে আসে। সিমথি কে দেখে হতভম্ব দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকিয়ে থাকে। সিমথি সবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে উপরে এসে হাফ ছাড়ে। মাগো মা পুরো দেড় ঘন্টা। সিমথি যেতেই সায়নরা আদির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়। মুহূর্তেই আদির হাসি হাসি মুখটা নিভে যায়। এখন ওর বারোটা বাজবে। সায়ন কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে নিলে আদি বলে উঠে,,,,
আদি : আসি সিয়াজান। তোর বোন ডাকছে। সী নিডস মি। বাই বাই।
আদি এক দৌড়ে উপরে চলে যায়। নিচে সবাই হতভম্ব দৃষ্টিতে আদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। সিমথি কখন ডাকলো ওকে। আদির মিথ্যাচার ধরতে পেরে সবাই শব্দ করে হেঁসে উঠে। আদি উপরে এসে দেখে সিমথি গুনগুনিয়ে চারপাশ টা দেখছে। আদি দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে পূর্ণ দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। বুকের ভেতর রঙবেরঙের প্রজাপতি উড়ছে ওর। এতোদিনের শূন্য বুকটা আজ পূর্ণ হয়েছে। এই মেয়েটা না থাকলে আদি নির্ঘাত মা/রা যেতো। সাতটা মাসে আদি তা ঢেড় বুঝতে পেরেছে। সিমথি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে আদি ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সিমথি আদির দিকে তাকিয়ে হাসে। আদি দরজা লাগিয়ে সিমথির কাছে এসে দাঁড়ায়। সিমথি ফট করে বলে উঠে।
সিমথি : আমার তো কোনো জামা-কাপড় আনা হয়নি। আমি শাওয়ার নেবো। শরীর ম্যাচ ম্যাচ করছে।
আদি হেঁসে সিমথির কোমড় আঁকড়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
আদি : মাইন্ড ডিভাইভ করতে চাইছো।
সিমথি : না না। আ আর মাইন্ড কেনো ড ডিভাইভ করবো।
আদি : সিয়াজান
সিমথি : হ হুমম।
আদি : আর কখনো ছেড়ে যাস না। সত্যি বলছি ম/রে যাবো সেদিন।
হুট করে সিমথিকে আদিকে জড়িয়ে ধরে।
সিমথি : যাবো না তো। এই যে চলে এসেছি।
আদি : সত্যি।
সিমথি : তিন সত্যি। কিন্তু আপনার এই হাল কেনো। ঠোঁট কালো হয়ে গেছে কেনো। চোখ দেখে তো মনে হচ্ছে গর্তে ঢুকে গেছে।
ঠোঁটের কথা শুনে আদি ঘাবড়ে যায়। সিমথি ভ্রু কুঁচকায়। আদি কথা কাটাতে দুষ্টুমি করে বলে,,,,
আদি : বাহ আমার বউয়ের নজর ডিরেক্ট ঠোঁটে এসে পড়লো।
সিমথি : ছিহ আদি। তুমি একটা যাতা।
আদি : তোরই তো।
সিমথি : কেনো অন্য কারো হবার ইচ্ছে ছিলো নাকি। লাইক শ্রেয়া।
আদি চোখ মুখ কুঁচকে নেয়। সিমথি আদির রিয়াকশন দেখে হেসে দেয় শব্দ করে। আদি মুগ্ধ দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। কতদিন পর এই হাসি হাসি মুখটা দেখলো। সিমথি আদির দিকে তাকায়। দুজনের মাঝে কিছুক্ষণ দৃষ্টি বিনিময় হয়। আচমকা সিমথি নাক টেনে টেনে কিছু খোঁজার চেষ্টা করে। আদি শরীর শুকে। গন্ধ টা আদির শরীর থেকে আসছে মনে হচ্ছে।
সিমথি : তোমার শরীর থেকে কেমন একটা গন্ধ আসছে। এটা কিসের স্মেল
আদি থতমত খেয়ে যায়। গায়ের গন্ধ টা যে সিগারেটের এটা বুঝতে আদি বেগ পেতে হয়নি। আদি তৎক্ষনাৎ সিমথিকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ায়। সিমথি ভ্রু কুঁচকায়।
আদি : ফ ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি আসছি তোমার জামা-কাপড় নিয়ে।
আদি দ্রুত পায়ে চলে যায়। সিমথি ঠোঁট উল্টে ওয়াশরুমে চলে যায়।
চলবে,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)
#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 54
🍁🍁🍁
সেদিন আদি জ্ঞান হারানোর পর ডক্টর চেক করে জানায় অতিরিক্ত মানসিক প্রেশারে জ্ঞান হারিয়েছে। আদিকে ঘুমের ইনজেকশন পুষ করে কেবিনে শিফট করে দেওয়া হয়। বাইরের পরিবেশ তখনও কান্নারত। আচমকায় সিমথি জোড়ে শ্বাস নিয়ে উঠে। হাত-পা কাপতে শুরু করে। সবাই চমকে সিমথির দিকে তাকায়। ডক্টর নিহা দ্রুত সিমথির পালস চেক করে।
ড.নিহা : ইট’স এ্যা মিরাকেল সিমথি ম্যামের পালস চলছে। একটু আগেও উনার পালস পাওয়া যাচ্ছিলো না। নার্স আপনারা দ্রুত উনাকে ওটিতে নিয়ে যান।
ড.নিহার কথায় সবার মাঝেই আশার আলো দেখা যায়। এবার হয়তো সিমথি বেঁচে যাবে। সব ঠিকঠাক হবে। সবাই মনে প্রাণে উপরওয়ালা কে ডাকতে আরম্ভ করে। উপরওয়ালা ওদের কথা শুনে। সিমথির জীবন তো বাঁচিয়ে দেয় কিন্তু বাহ্যিক কার্যাবলি বন্ধ হয়ে যায়। টানা আড়াই ঘন্টা পর যখন ওটির দরজা খোলা হয় তখন সবাই একবুক আশার আলো নিয়ে ড.নিহারসহ রোদেলার দিকে তাকায়। দুজনের চোখ-মুখ দেখেই সবাই ভয় পেয়ে যায়৷ রোদেলা সবাই কে পাশ কাটিয়ে চেয়ারে গিয়ে বসে দুহাতে মুখ গুঁজে কেঁদে ওঠে। ড.নিহা রোদেলার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে নিজেই সবটা ক্লিয়ার করে।
ড.নিহা : দেখুন উনার তিনটে গুলি হার্টের থেকে ইঞ্চি খানেক নিচে লেগেছিলল। আপাত দৃষ্টিতে যা দেখে সবাই ভাববে গুলিট হার্টে লেগেছে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। হার্টে কিছুটা নিচে লাগায় উনি প্রাণে তো বেচে গেলেন কিন্তু অতিরিক্ত ব্লিডিং এর জন্য উনি কোমায় চলে গেছেন। উনি যখন গু/লি খেয়ে নিচে পড়ে তখন উনার মাথায় আঘাত লাগে ফলে ব্যাড ইফেক্ট হয়ে ব্রেন আপাতত অচল হয়ে পড়েছে। ফলস্বরূপ বাহ্যিক কার্যাবলি উনার বন্ধ হয়ে গেছে। এখন উনি কোমা থেকে কবে ফিরবে সেটা ঠিক বলা যাচ্ছে না। কারণ এমন প্রেশেন্টরা সাধারণত কোমা থেকে ফিরে না। তবে আমরা বাইরের ডক্টরদের সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করছি। ভেঙে পড়বেন না। কিছুক্ষণ পরই উনাকে কেবিনে শিফট করা হবে। এক্সকিউজ মি।
ড.নিহার কথায় সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। প্রায় ঘন্টা খানেক পর আদির জ্ঞান ফিরলে সিমথিকে না দেখে পা/গ/লামি করলে শাওন আদিকে সিমথির ব্যাপারে জানায়। সবটা শুনে আদি থম মেরে যায়। আদিকে হঠাৎ চুপ হয়ে যেতে সবাই ঘাবড়ে যায়। আচমকা আদি ওর মায়ের কোলে মুখ গুঁজে কেঁদে ওঠে।
আদি : ও মা তোমার মেয়ে আমার সাথে সবসময় অবিচার করে কেনো। ওকে তুমি বকে দেবে। ও সবসময় আমার সাথে এমন করে। এখন দেখো কিভাবে ঘুমাচ্ছে অথচ আমার ঘুম আসবে না মা। ও মা ও এমন কেনো। কি হতো সবটা পুলিশের হাতে ছেড়ে দিলে। কতগুলো র/ক্ত গেলো। ওর রক্ত এখনো আমার শরীরে মা। ও মা আমার না শ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ওকে বলো না যেনো তাড়াতাড়ি ফিরে আসে। ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না মা। মা গো ওকে এনে দাও না মা। ও মা দাও না।
বাচ্চাদের মতো আদিকে কাঁদতে দেখে সবাই সেদিন কেঁদে ছিলো। একপর্যায় আদি চুপচাপ হয়ে যায়। কান্না ও থেমে যায়। সিমথিকে কেবিনে শিফট করা হলে আদি সিমথির কেবিনে যায়। সিমথি নির্জীব শরীরটার দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসে। পেটের উপর রাখা হাত টা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ভালোবাসার পরশ বুলায়। হাতটা গালের সাথে লাগিয়ে সিমথির দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।
আদি : তুই ফিজিক্যালি আমার সাথে নেই তো কি হয়েছে। তুই বলেছিলি না আমরা মেন্টালি এক। মনের দিক দিয়ে আমরা দুজন মিলে একজন। আমি জানি সিয়াজান তুই ফিরবি। আমার জন্য তোকে ফিরতে হবে। আমরা এক ছাঁদের নিচে থাকতে না পারি এক আকাশের নিচে তো শ্বাস নিচ্ছি। এটাই আমার জন্য অনেক। আমি তোর জন্য অপেক্ষা করবো জান। ফাঁকি দিস না প্লিজ। তাহলে সেদিন আমিও চলে আসবো তোর কাছে এটা তোর জামাইজানের প্রমিস।
আচমকা পেছন থেকে দুটো হাত জড়িয়ে ধরায় আদির ধ্যান ভাঙ্গে। হাত দুটো ধরে নিজের সামনে নিয়ে আসে। সিমথি হেসে আদির দিকে তাকায়। কিন্তু মুহূর্তেই আদি চোখে পানি দেখে হাসি ঘায়েব হয়ে যায়। ব্যস্ত স্বরে বলে উঠে,,,,
সিমথি : জামাই জান কি হয়েছে। কাঁদছো কেনো।
আদি : কাঁদছি না তো চোখে ধুলো পড়েছে।
সিমথি : আমাকে বুঝাতে আসো। কি হয়ে বলো।
আদি : কিছু না।
সিমথি : বলবে না তো। ঠিক আছে। বলতে হবে না।
সিমথি রাগ দেখিয়ে চলে যেতে নিলে আদি সিমথির হাত টেনে ধরে। সিমথিকে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে,,,,
আদি : এতো রাগ দেখাস কেনো আমার সাথে।
সিমথি : তো কি পাশের বাড়ির রফিকের সাথে দেখাবো।
আদি : এই রফিক টা আবার কে।
সিমথি : জানিনা। কথার কথা।
আদি : ওহ। তোকে আজ সুন্দর লাগছে।
সিমথি : আগের থেকে কালো হয়ে গেছি, চুল অর্ধেকই নেই আর আপনি বলছেন আমাকে সুন্দর লাগছে। ফ্লাটবাজ
সিমথির কথায় আদি সিমথির দিকে তাকায়। কথা ঠিক। ফর্সা মুখ আগের থেকে কিছুটা উজ্জ্বলতা হারিয়ে গেছে। সিল্কি চুলগুলোও কেমন হয়ে গেছে। আদি সিমথির কপালে নিজের কপাল ঠেকায়।
আদি : আমার কাছে তুমি সব সময় সুন্দর সিয়াজান। আমি তোর রূপের প্রেমে পড়িনি পাগলামির প্রেমে পড়েছি। তোর কথার প্রেমে পড়েছি। রূপ সারাজীবন থাকে না সোনা। কিন্তু তোমার পাগলামি, কথাগুলো সারাজীবন থাকবে। আর আমি প্রতিবারই তোমার প্রেমে পড়বো।
সিমথি : কাব্যিক কথা রাখেন। আমার উত্তর তো দিলেনই না। সমস্যা নেই। আমি তোমার চোখের ভাষা বুঝি। তাই লুকিয়ে লাভ নেই। আপনি সেদিনে ক,,
আদি : হুশশশ। এসব কথা মনে রাখতে চাইনা সিয়াজান। তুই ব্যতিত দিনগুলো আমার কাছে কেমন তা কেবল আমি জানি। এতোকিছুর পর তোকে ফিরে পেয়েছি আবার হারালে আমি সত্যি ম,,
সিমথি : বাজে কথা বলবে না আদি। সাত মাসে কেমন সন্ন্যাস হয়ে গেছেন দেখেছো। মনে হচ্ছে প্রেমে ছেঁকা খেয়ে বেকা হয়ে গেছেন।
আদি : প্রেম করতে দিলে কই।
সিমথি : করার শখ আছে।
আদি : ছিলো বাট এখন
সিমথি : এখন
আদি : এখন মন চাইছে তোর সাথে একটু রোমান্স করতে।
সিমথি : ধ্যাত ছাড়ুন। সবসময় এসবই মাথায় ঘুরে তাই না।
আদি : আরে ফাজলামো না সত্যি।
আদি সিমথির ঠোঁটের দিকে এগোয়। সিমথি মাথা নাড়িয়ে বলে উঠে,,,
সিমথি : আ আদি একদম না। যখন তখন ধ্যাতত।
আদি : আমাকে সিডিউস করতে পারবা আর আমি এগুলেই দোষ।
সিমথি : আমি কখন করলাম।
আদি : একটু আগে জড়িয়ে ধরলি যে।
সিমথি : এএএটা আমার দোষ। ফাজিল আপনার দোষ। সামান্য জড়িয়ে ধরেছি আর আপনি। ধ্যাতত,, উহুমমম
সিমথি চোখ বড় বড় করে আদির দিকে তাকায়। আড়চোখে দরজার দিকে তাকায়। দরজা খোলা দেখে সিমথি আদিকে গুতাতে শুরু করে। আদি সিমথির এক হাত চেপে ধরে। আচমকা রুমের কাছে কয়েক জোড়া পায়ের শব্দ আসায় আদি সিমথিকে ছেড়ে দেয়। সিমথি ঠোঁট মুছে রাগী দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায়। আদি ঠোঁট মুছতে মুছতে সিমথিকে চোখ টিপ দেয়। তখনই দরজার সামনে এসে সায়নরা দাঁড়ায়।
সায়ন : কি রে নিচে আয়।
সায়নের গলার আওয়াজ শুনে সিমথি পেছন ফিরে তাকায়। সায়নের সাথে আয়াশ, রিক, ইশান, রাদিফ সবাই কে দেখে বেচারি লজ্জায় পড়ে যায়। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে হাতের বাম পাশ থেকে সোফার কুশন নিয়ে আদির দিকে ছুঁড়ে মারে। অতঃপর দৌড়ে বেরিয়ে যায়। আদি কুশন হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে বিছানা শুয়ে পড়ে। বাকিরা বেক্কল বনে যায়। তবে আদিকে প্রাণ খোলা ভাবে হাসতে দেখে সবার ভালো লাগে।
রোদেলা : আচ্ছা মেঘা কাল তো গায়ে হলুদ। কাল আমরা কোন থিমের শাড়ী পড়বো।
মেঘা : আমাকে বলছিস কেনো। এসব তো তোরা ঠিক করবি।
তুহিন : ছেলেরা এক থিম আর মেয়েরা এক থিম নাকি।
তন্ময় : ভাই এই মেয়েদের সাজগোছের মাঝে কথা বলিস না। মান ইজ্জত থাকবে না।
তন্ময়ের কথায় সব ছেলেরা হেসে দেয়। মেয়েরা গাল ফুলিয়ে তাকায়৷
মেঘা : এই সিমথির বাচ্চা কথা বল
মেঘার কথায় সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকায়। অতঃপর চারপাশে কিছু খোঁজার চেষ্টা করে।
তুহিন : কি খুঁজিস
সিমথি : আমার বাচ্চা।
সিমথির কথায় সবাই আকাশ থেকে পড়ে।
মেহের : বাচ্চা মানে কিসের বাচ্চা
সিমথি : এই যে একটু আগে মেঘা বললো সিমথির বাচ্চা কথা বল। তো আমার বাচ্চা কোথায়
সিমথির কথায় সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। অতঃপর মেঘা ব্যতিত সবাই হেসে উঠে।
মেঘা : তুই এ জীবনে শুধরাবি না
সিমথি : পরের জন্মে শুধরে যাবো। আর তোকে আমি অভিয়াসলি তোর না হওয়া ইন্জিনিয়ার ছেলের এক বাচ্চার মা বানাবো নিজ দায়িত্বে। পাক্কা
মেঘা : এই ওকে কে বলেছে রে ওই ইন্জিনিয়ারের কথা।
সিমথি : ওদের দিকে তাকাস কেনো। আমার দিকে তাকা।
মেঘা : দেখ সিম,,,
সিমথি : সেসব বাদ দে। যা বলছিলি তা বল। এক কথার মাঝে বাংলাদেশ ছেড়ে ইন্ডিয়ার রাস্তা ধরিস না।
রোদেলা : হ হুম হুম। আচ্ছা সবাই কমলা পড়লে কেমন হয়।
সিমথি : তোর বিয়েতে কমলা পড়িস। চয়েজ এতো বাজে তোর ছিহ।
রোদেলা : আসলেই আমার চয়েজ বাজে নয়তো তোর মতো হা/রা/মি কে বেস্টফ্রেন্ড বানাই।
সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকায়। অতঃপর মাছি তাড়ানোর মতো বলে,,,,
সিমথি : দেবর জ্বি মা – বাবারা আসবে না।
ইশান : না তো। কাল আসবে।
সিমথি : ওদের জানিয়েছো আমার ব্যাপারে।
ইশান : ফোন দিয়েছিলাম। ধরেনি। দাঁড়াও এখন দেখি।
সিমথি : না থাক।
ইশান : কেনো
সিমথি : সামনা সামনি দেখুক। এখন জানাতে হবে না।
সিমথির কথায় সবাই সায় দেয়। বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে সবাই রাতে ডিনার করতে নিচে নেমে যায়।
চলবে,,,,,
#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 55
🍁🍁🍁
ঘুমের মাঝে পাশে হাতড়ে সিমথিকে না পেয়ে আদি ধরফড়িয়ে উঠে বসে। চারপাশে চোখ বুলায়। না সিমথি কোথাও নেই। তবে কি আদি এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো। সিমথি এখনো সুস্থ হয়নি। কথাগুলো মাথায় আসতেই আদির বুক মুচড়ে উঠে। কিন্তু পরক্ষণেই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে উঠে নাহ ওর সিয়াজান ওর পাশেই ছিলো। এসব ভাবার মাঝেই সিমথি রুমে আসে। আদিকে বসে থাকতে সিমথি হেসে এগিয়ে যায়।
সিমথি : ঘুম ভাঙ্গলো তোমার।
আদি কথার জবার না দিয়ে বিছানা থেকে নেমে সিমথিকে ঝাপটে ধরে। আচমকা আদির এহেন আচরণে সিমথি থমকায়। আদির বুক উঠানামা করছে। সেটা সিমথি স্পষ্ট টের পাচ্ছে। কি হলো। ভয় পেলো নাকি।
সিমথি : কি হলো আদি।
আদি : কোথায় ছিলে তুমি। আমি উঠে পায়নি তোমায়।
সিমথি : নিচে গিয়েছিলাম। একটু পরই মায়েরা আসবে।
আদি : ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম জান।
সিমথি ভ্রু কুঁচকায়। খানিক পর আদির কথা সারমর্ম বুঝে হাসে তৃপ্তির হাসি। একটা সময় এই মানুষ টার মুখে একটু ভালোবাসার কথা শোনার জন্য সিমথি হাসফাস করতো আর এখন প্রতিক্ষণে মানুষ টা ওকে ভালোবাসে। এতোটা ভালো কবে বাসলো আদি ওকে৷
সিমথি : ভয়ের কি আছে। আমি বলেছি তো আর হারাবো না। উপরওয়ালা ব্যতিত আপনার কাছ থেকে কেউ আমাকে দূরে সরাতে পারবে না।
আদি : তোর আগে আমার শ্বাসরোধ হোক। তুই ব্যতিত আমি একদন্ড সুখ পায়না।
সিমথি : উফফস আদি। এবার ছাড়ো। ওয়াশরুমে যাও। নিচে যাবো। সবাই ব্রেকফাস্টের জন্য বসে আছে।
আদি সিমথিকে ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। সিমথি হেঁসে আদি তাড়াতাড়ি নিচে আসতে বলে পাশ কাটিয়ে বিছানা ঘুচিয়ে নিচে যায়। আদি শিস বাজাতে বাজাতে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
সিমথি ততক্ষণে নিচে এসে আদির মা-বাবার আওয়াজ শুনতে পায়। আহা কতদিন হুহু কতগুলো মাস পেরিয়ে গেলো মায়ের সেই ঘ্রাণ পাওয়া হলো না। সিমথি পা টিপে টিপে ধপাস করে আদির মায়ের পাশে বসে পড়ে। আচমকা এমন হওয়ায় আদির মাসহ সবাই হকচকিয়ে তাকায়। সিমথিকে দেখে আদির মায়েরা হতবাক হয়ে যায়। শাওনের মা হতভম্ব দৃষ্টিতে শাওনদের দিকে তাকায়। সবার মুখ হাসি হাসি।
আদির মা : সিমথি ( অস্পষ্ট সুরে)
সিমথি : হা আমি। সারপ্রাইজড্ কেনো খুশি হওনি। ( ভ্রু কুঁচকে)
আদির বাবা : তুই মানে কোথা থেকে আসলি মানে কবে ইয়ে মানে
আদির বাবার সব তালগোল পাকিয়ে যায়। তা দেখে সিমথি হাসে।
সিমথি : থামো বাবা। কালই আমি কোমা থেকে ফিরেছি।
শাওনের বাবা : আমাদের জানালি না যে। শাওন তোরা ও তো কিছু বলিস নি।
শাওন : তোমাদের আদরের মেয়ে না করেছে।
ইশানের মা : হাউ ফাজিল হয়েছে গার্লটা সী।
ইশানের মায়ের কথায় সবাই হেঁসে দেয়। আদির মা সিমথির গালে হাত দিয়ে শুকনো মুখটার দিকে তাকায়।
আদির মা : কতটা শুকিয়ে গেছিস, কালোও হয়ে গেছিস। বাড়ি চল শুধু বেশী বেশি খাবি।
সিমথি : কেনো কেনো কালো বউ পছন্দ হচ্ছে না। কি কপাল শ্বাশুড়ির আমার গায়ের রঙ নিয়ে সমস্যা।
সিমথির কথায় আরেক দফা হাসির রোল পড়ে যায়। আদির মা রেগে গিয়ে হেসে সিমথিকে জড়িয়ে ধরে। সিমথি ও আদির মায়ের বুকে মুখ গুঁজে মায়ের ঘ্রাণ নেয়।
সিড়ির পাশ থেকে আদি এসব দেখে প্রশান্তির হাসি দেয়। ওর জীবনটা আবারো রঙিন হবে। ওর জীবনে বসন্ত এসে গেছে। এখন চারদিকে কেবল রঙের খেলা।
রাত আটটা বাজে। আর কিছুক্ষণ পরেই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। ছেলেরা সবাই এসে গেলেও। মেয়েদের এখনো আসার সময় হয়নি। এদিকে আয়াশ বারংবার সিঁড়ির দিকে চোখ দিচ্ছে। কি আজব এতো সাজা লাগে। আয়াশ কি ওকে আজ নতুন দেখবে নাকি। কতবড় ফা/জি/ল। দুপুর থেকে ঘায়েব তারউপর এখনো আসার নাম নেই। আয়াশ বিরক্তির শ্বাস ফেলে পাশে তাকাতেই মাগো বলে চেঁচিয়ে দূরে সরে যায়। বুকে হাত চেপে জোরে জোরে শ্বাস নেই। আয়াশের অবস্থা দেখে আদিরা সবাই শব্দ করে হেসে দেয়। আয়াশ তেতে উঠে, ,
আয়াশ : এভাবে ভূতের মতো তাকিয়ে ছিলি কেনো।
সায়ন : না দেখছিলাম
আয়াশ : কি
রিক : আমার বউ পাগল বন্ধুকে।
রিকের কথায় আয়াশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। রিক মাছি তাড়ানোর ভান করে পাশে সূর্যের কাধে হাত রেখে ভাবুক স্বরে বলে উঠে,,,,
রিক : আমি ভাবছি আমার বন্ধু সবগুলো এতো বউ পা/গ/ল কিভাবে।
রিকের কথায় ওর বন্ধুমহল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।
আদি : মানে কি বলতে চাইছিস।
রিক : ভাই তুই আর মানে মানে করিস না। দেখলাম তো সাতমাসে তোর দেবদাস রূপ।
আদি : পিন্চ মারবি না। আমার জায়গায় থাকলে বুঝতি।
রাদিফ : ভাই আমাদের বুঝাবুঝি বাদ দেন। আগে নিজের টা বুঝে নেন
আদি : মানে
রাদিফ : ভাবী যদি জানে ভাবীর বারণ স্বত্বেও আপনি সিগারেট ছুঁয়েছেন তবে কি হবে এটা ভাবুন।
রাদিফের কথা আদি এবার শুকনো ঢোক গিলে। কথাটা ঠিক। তবে ও যদি না বলে কিংবা ওরা না বললে কিভাবে জানবে। ও তো আর সিমথির সামনে খাবেনা।
আদি : তোরা না বললে ও কিভাবে জানবে।
_ কি জানাজানির কথা বলছেন।
আচমকা সিমথির কন্ঠস্বরে সবাই চমকে যায়। আদি ঘাবড়ে পেছনে তাকায়। যতটা ভয় নিয়ে পেছনে তাকিয়েছিলো তার জায়গায় হানা দেয় একরাশ মুগ্ধতা। নীল শাড়িতে দারুণ লাগছে মেয়েটাকে। আদির থমকানো দৃষ্টি দেখে আয়াশ, তুহিনরা হাসে। কিন্তু সিমথির দৃষ্টি এখনো ওর কোলে থাকা তুরান ( তন্ময়ের ছেলে) এর দিকে। কারো আওয়াজ না পেয়ে সিমথি চোখ তুলে তাকায়। সবাই কে চুপ দেখে বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। হাতের ডায়পার টা তন্ময়ের হাতে ধরিয়ে দেয়। অতঃপর তুরানকে তুহিনের কোলে দিতে দিতে বলে,,,,
সিমথি : ওর ডায়পার চেঞ্জ করে দে। ড্রেস টা বদলে অন্য ড্রেস পড়িয়ে দিস। ভিজিয়ে ফেলেছে। দেরী করিস না যেনো ঠান্ডা লেগে যাবে।
তন্ময় : আমি কেনো সিনহা কোথায়।
তন্ময়ের কথায় সিমথি হালকা তেঁতে বলে,,
সিমথি : ছাঁদে নাচছে। নাচবি তুই তাহলে উপরে যা।
তন্ময় : আরে চেঁতে আছিস কেনো।
সিমথি : তোদের সবার কেনো মনে হচ্ছে আমি চেতে আছি। আশ্চর্য।
তুহিন : তো এভাবে কথা বলছিস কেনো।
সিমথি : তুই সিগারেট খেয়েছিস।
আচমকা সিমথির এহেন প্রশ্নে সবাই হকচকিয়ে যায়। সিমথি এখনো উত্তরের আশায় চেয়ে আছে। তুহিন হালকা কাশে। কে খেলো আর কে ফাঁসলো।
তুহিন : আ আমি কেনো এসব খাবো। আর তোর কেনো মনে হলো।
সিমথি : আরে আমি যখনই তোদের কাছে আসি তখনই সিগারেটের স্মেল পাচ্ছি। কে খায় এসব। সামনে পাই একবার থাপ্পড়ে সোজা করে দেবো।
সিমথির কথায় আদির হাত অটোমেটিক নিজের গালে চলে যায়। বাকিরা ও হালকা করে কেশে উঠে।
সায়ন : হতে পারে কোনো বৃদ্ধ লোক খাচ্ছে।
সিমথি : বৃদ্ধ রা সবাই উপরে বাট স্মেল টা আসছে নিচ থেকে। স্পেশালি তোদের কাছ থেকে।
তুহিন : তুই জানিস আমাদের মধ্যে কে খায়।
তুহিনের কথায় সিমথি এবার এমনভাবে তাকায় তা দেখে তুহিন তন্ময়ের পেছনে চলে যায়। সিমথি বিড়বিড়িয়ে গালি দেয়। পেছন ফিরে চলে আসতে নিলে আদিকে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়।
সিমথি : আপনার আবার গালে কি হলো।
সিমথির কথায় আদি হকচকায়। গাল থেকে হাত নামিয়ে এলোমেলো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
আদি : ক কই কিছু না তো।
সিমথি শব্দ করে শ্বাস ছেড়ে উপরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। যেতে যেতে চুড়ির রিনিঝিনি আওয়াজে আদি বুকে হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়ে। বাকিরা হাফ ছেড়ে বাঁচে।
তন্ময় : দুলাভাই বুকে ব্যথা করছে নাকি।
তন্ময়ের মুখে দুলাভাই শুনে আদি ধপ করে চোখ মেলে তাকায়। চোখের সামনে ভেসে আসে কয়েক জড়ো ফাজিল দৃষ্টি।
আদি : তোরা থাক আমি একটু আসছি।
ইফাজ : কোথায় যাচ্ছো।
আদি যেতে উত্তর করে,,,
আদি : আপাতত আমার তোমার বোনকে প্রয়োজন। প্রেম প্রেম পাচ্ছে। এখন সেটার জন্য বউ রূপী প্রেমিকার বড্ড প্রয়োজন।
সবাই হতবিহ্বল হয়ে যায় আদির স্পষ্ট জবাবে। সায়ন আড়ষ্ট স্বরে বলে,,,
সায়ন : শা/লার এই জন্যই আমি কোনো বন্ধু কে বোন জামাই বানাতে চাইনি। বোনের জামাই স্বরূপ বন্ধুর সাথে কেউ ফাজলামি করে কিভাবে। কিন্তু শালা আমার বোনকেই বিয়ে করলো। আবার আমার সামনে আমার বোনের সাথে ওর প্রেমের সঙ্গা দিচ্ছে।
রোদেলা : কি চাই দুলাভাই
আদি : আপাতত বউ চাই শ্যালিকা।
আদির কথায় সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকায়। পার্লারের মেয়েগুলো হেসে দেয় নিঃশব্দে।
মেঘা : এখন বউ পাবেন না। বউ ব্যস্ত আছে।
আদি : ভাবী হয়ে এমন করবেন না। তাহলে বাসর রাতে আর জামাই রুমে পাবেন না।
আদির কথায় মেঘা হকচকিয়ে যায়। আয়নার আদির প্রতিবিম্বের দিকে প্রশ্নবোধক চাহনি দেয়। তা দেখে আদি হাসে।
আদি : বন্ধুর বউ তো ভাবীই হয় তাই না। দেখেন না আয়াশ মাঝে মাঝে সিয়াকে বউমণি বলে।
মেঘা মিনমিনে স্বরে বলে,,
মেঘা : তাই বলে আপনি ভাবী বলবেন।
আদি : হ্যাঁ। আর শ্যালিকা, ভাবী, সমুন্দি বউ গণ দের বলছি সাজগোছ তাড়াতাড়ি করেন। বাইরে বেচারা বর এবার বউ না দেখার শোকে জ্ঞান হারাবে।
আদির কথায় মেঘা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায়। বাকিরা মেঘাকে নিয়ে মজা উড়ায়। আদি এই ফাঁকে সিমথিকে টেনে বাইরে নিয়ে আসে। সিমথি মুখ খুলতে নিলে আদি সিমথির মুখ চেপে ধরে।
আদি : হুশশ কথা বলবে না।
আদি সিমথিকে নিজে সোজা রুমে যায়। দরজা লাগিয়ে সিমথির মুখ ছেড়ে দেয়।
সিমথি : এটা কি হলো।
আদি : কি হলো।
সিমথি : এভাবে টেনে আনলে কেনো।
আদি : মন চাইলো।
আদির উত্তরে সিমথি শ্বাস ছাড়ে। এমনিতেই ওকে রুমে আসতে হতো। কানে কোনো দোল পড়া হয়নি। মেঘা না খেয়াল করলে আর পড়া হতোও না। সিমথি আদিকে পাশ কাটিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কানে ঝুমকো দিয়ে চেক করতে থাকে। আদি দেয়ালে হেলান দিয়ে সিমথির দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। গায়ে নীল শাড়ি জড়ানো। শাড়ির আঁচল হাতে রাখা, হাতে নীল চুড়ি। মুখে হালকা প্রসাধনী, ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক। গলায় আদির দেওয়া একটা প্যানডেড। এতো হালকা সাজেও কাউকে এতটা সুন্দর লাগে বুঝি। সিমথি কাজের ফাঁকেই আদির দিকে তাকায়। আদির তাকানো দেখে সিমথির ভেতর নড়ে উঠে। তবুও তা বাইরে প্রকাশ না করে নিজেকে স্বাভাবিক রাখে। কানে ঝুমকো পড়ায় মনোনিবেশ করে। কিন্তু আদির নেশাগ্রস্ত চাহনিতে সিমথি ঝুমকো পড়তেও হাত কাঁপা আরম্ভ হয়। একপর্যায়ে হাত থেকে ঝুমকো পড়ে যায়। আদিকে এগিয়ে আসতে দেখে সিমথির শরীর অসার হয়ে আসে। আদির দৃষ্টি সিমথিকে বাধ্য করছে লোমকূপে শিহরণ জাগাতে। আদি সিমথি কিছুটা কাছে আসতেই সিমথি এলোমেলো পায়ে দরজার দিকে অগ্রসর হয়। হাতে হেঁচকা টানে সিমথি দেয়ালে আদির হাতের মাঝে আটকে যায়।
আদি : পালাচ্ছো।
সিমথি : প পা পালাবো কক কেনো। স সরো ন নিচচে যাবো।
আদি : কার জন্য এভাবে সেজেছো সিয়াজান।
সিমথি নিশ্চুপ। কার জন্য সেজেছে মানে কি। এই ছেলে নিজেও পা/গ/ল হবে আমাকে ও পাগল বানাবে।
আদি : তোমার জন্য সব রঙ বয়কট ঘোষণা করা উচিত। এতোটা মাতাল না করলে হয়না। শেষে আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এতোটা সুন্দর হওয়া তোমার উচিত হয়নি। যেই রঙ গায়ে জড়াও তাতেই আমি শেষ হয়ে যায়। আমার তো মনে হয় হাজারো ছেলে তোমার দিকে তাকায় মুগ্ধতা নিয়ে। আমার ভীষণ জেলাস হয়। আমি তোমাকে কারো সাথে শেয়ার করতে চাইনা। কিন্তু ছেলেগুলো মুগ্ধতা নিয়ে কেনো তোমায় দেখবে। তোমায় সর্বাবস্থায় কেবল আমি দেখবো। আমার সম্পত্তির উপর অন্যের হস্তক্ষেপ আমি বুকে পাথর চেপে সহ্য করি। তোমায় যদি লুকিয়ে রাখা যেতো তবে বুকের ভেতর একটা ঘর বানাতাম সেখানে সংগোপনে রেখে দিতাম। কিন্তু আমি হেল্পলেস। নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে সিয়াজান। ইচ্ছে করছে শাড়িটা খুলে ফেলি। অন্যকোনো শাড়ি গায়ে জড়িয়ে দেয় বাট আই নো ভেরী ওয়েল সেই রঙে ও তোমায় নজরকারা সুন্দর লাগবে।
সিমথি চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। আদির ঘোরলাগা কন্ঠে কথাগুলো সিমথির বুকের ভেতর ধপাস ধপাস করতে যথেষ্ট। সিমথির লাজুক মুখ টা দেখে আদি শুকনো ঢোক গিলে। গলার তিলে নজর পড়তেই নিয়ন্ত্রণ হারায় নিজের উপর। গলা শুকিয়ে আসে। মুখ ডুবায় সিমথির গলার তিলে। সিমথি শ্বাস থেমে যায়। আচমকা গলায় চিনচিনে ব্যথায় চোখের কার্নিশে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
সিমথি : ল লাগছে আ আদি।
বেশ খানিক পর আদি মুখ উঠিয়ে সিমথির দিকে তাকায়। চোখ খিঁচে রেখেছে। অধর জোড়া ছোঁয়ায় মুখের সর্বত্র। অতঃপর আবারো দৃষ্টি রাখে সিমথির মুখশ্রীতে। এবার দূরত্ব কম। সিমথির লাজুক ভাব গুরুতর হয়। এভাবে কেউ তাকায় নাকি। শত বউ হোক। লজ্জা লাগেনা বুঝি। লাজুক হেঁসে সরে আসতে নিলে শাড়ির আঁচলে টান লাগায় থেমে যায়। আদির শাড়ির আঁচল হাতে পেছিয়ে সিমথিকে নিজের দিকে টান দেয়। সিমথি হুমড়ি খেয়ে আদির সামনে দাড়ায়। মিনিট খানে পরও আদির কোনো কথা না শুনে সরে আসতে নিলে পেটের উন্মুক্ত স্থানে শীতল হাতের স্পর্শে সিমথি র সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠে। সিমথি চোখ বুঁজে নেয় শ্বাস গলায় পুনরায় আটকে যায়। পেটে চাপ অনুভূত হতেই সিমথি আদির বুকে পিঠ ঠেকায়। সিমথির কাঁপন আদি স্পষ্ট টের পাচ্ছে। চুলে নাক ডুবায়। আচমকা বাইরে সাউন্ড বক্সে বেজে ওঠে,,,
” তুমি ছুঁয়ে দিলে হা, আমার কি যে হয়ে যায়! ”
তৎক্ষনাৎ সিমথি ছিটকে সরে আসে। পেছন না ফিরে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। আদি সিমথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেঁসে দেয়। নিজেও নিচে পা বাড়ায়।
মেঘাকে এনে স্টেজে বসানো হয়। এতোক্ষণে বউকে দেখে আয়াশ বেচারা স্বস্তি পায়। বলা তো যায় যেমন অসুর নামক শ্বশুর কখন আবার মত ঘুরিয়ে দেয়। মেঘা বসতেই আয়াশ চাপা স্বরে বলে,,,
আয়াশ : এতোক্ষণ লাগে সাজতে। আমি কি নতুন দেখছি নাকি তোমায়।
মেঘা : কনে সাজে তো নতুনই
আয়াশ : তো কি। এতো সাজা লাগবে কেনো৷ আমি কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম জানো।
আয়াশের অস্থিরতায় মেঘা লাজুক হাসে। ছেলেটা এমনই এই রাগ তো এই ঠিক। কিছুক্ষণের মাঝেই হলুদ ছোঁয়ার অনুষ্ঠান শুরু হয়। একে একে বড়রা হলুদ লাগিয়ে দেয়। তারপর শুরু হয় ছোটদের। মুহুর্তেই দুজনের শরীর হলুদে গোসল করে যাওয়ার যোগাড় হয়। আয়াশ, মেঘা অসহায় দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকায়। ওদের এমন দৃষ্টি দেখে সবাই শব্দ করে হেসে দেয়।
আদি : মনে পড়ে ভাই আমার বিয়ে তে কি করেছিলি।
আয়াশ : শা/লা শোধ তুললি।
আদি : কিছুটা সেরকম।
হঠাৎ করেই অনুষ্ঠানের মাঝে আদি চারপাশে সিমথিকে খুঁজে। সেসময় যে রুম থেকে বের হলো এখনো কথা হয়নি দুজনের। আদি চারপাশে ভালোভাবে দেখে না কোথাও নেই। আশ্চর্য একটএ আগেই তো হলুদ ছোয়ালো কিছুক্ষণের মাঝে কোথায় গেলো।
চলবে,,,,,