মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব-১৬

0
645

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফাহিম ও ইভানা একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল অনেক ক্ষণ। অতঃপর নীরবতা ভেঙে ফাহিম বলে উঠল,
‘আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলেছি। বারবার সে একই কথা বলছে। আমার মনে হয় ঐ আনহা নামের মেয়েটা মিথ্যা বলছে।’

‘আনহার সাথে আপনার ভাইয়ের কোন জন্মের শত্রুতা যে ও মিথ্যা বলবে? মিথ্যা বলে ওর লাভ কি? আমার মনে হয়, আপনার ভাইয়ের প্রতি অন্ধবিশ্বাস বেশি হয়ে যাচ্ছে।’

‘তোমার কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু এটাও ঠিক যে, সবসময় যুক্তি দিয়ে সবকিছু বিচার করা যায় না। কখনো কখনো বাস্তবে যা ঘটে সেটা আমাদের ধারণার বাইরে। তাই আমার মনে হয়, আমার একবার চেষ্টা করা উচিৎ। যদি আমার ভাইয়া নির্দোষ হয়, তাহলে তার শাস্তি পাওয়া তো অবিচার হবে। ইইতিমধ্যেই তার চাকরি চলে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। কেসটা হয়তো খুব শীঘ্রই কোর্টে উঠবে।’

ইভানা কিছুটা ভেবে বলল,
‘আপনি যা ইচ্ছা করুন। আমি কোন বাধা দেবো না। তবে আমার মনে হয় আপনার ভাই অপ’রাধী৷ যদি এটা প্রমাণিত হয় যে আপনার ভাই কোন দোষ করেনি তাহলে সেটা পরের ব্যাপার। কিন্তু আনহা মিথ্যা বলছে কেন সেটা তখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাড়াবে।’

ফাহিম বলল,
‘আমার মনে হয় আনহা নামের মেয়েটার কোন স্বার্থ আছে। নাহলে অযথা সে এতো মিথ্যা বলত না। এসব কিছু আমি খুজে বের করার চেষ্টা করব।’

‘আপনি নিজের মতো চেষ্টা করে যান। আমি আপনার পথে বাধা নই, কিংবা আপনার বিপক্ষেও নই। শুধু এই বিষয়ে আপনার পক্ষে থাকতে পারছি না। তবে আমি মন থেকে চাই আপনার ধারণা যেন মিলে যায়। কারণ এমনটা হলে আপনাদের পরিবারে যেই ঝড় উঠেছে সেটা থেমে যাবে।’

ফাহিম ইভানার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
‘আমি জানি তুমি আমার বা আমাদের খারাপ চাও না। তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে ইভানা।’

ফাহিমের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে খুশি হয় ইভানা। তার ঠোটের কোনেও হাসির রেখা ফুটে ওঠে। যা ফাহিমের চোখের আড়াল হয়না।

৩১.
ঘনঘন মেঘ ডাকছে। আজ আবহাওয়া বৃষ্টিমুখর। ফাহিম ঘরেই বসে আছে। আজ তার ফারহানের সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য তা সম্ভব হলো না।

ইভানা রুমে এসে ফাহিমকে উদ্দ্যেশ্যে করে বলল,
‘রাতের ডিনার প্রস্তুত। চলুন খেতে চলুন।’

ফাহিম কোন কথা না বাড়িয়ে ইভানার সাথে খেতে চলে যায়। এখন তারা ইভানাদের বাড়িতেই অবস্থান করছে। ফাহিম একবার তার মাকে ফোন করল। ফোন করে বলল,
‘আম্মু তুমি রাতে খাবার খেয়েছ তো? ঘুমানোর আগে ওষুধ খেয়ে নিবে। রহিমা চাচীকে(বাড়ির কাজের মহিলা) বলে দিয়েছি আজ উনি আমাদের বাড়িতেই থাকবে। এছাড়া কোন প্রয়োজন হলে আমাকে ফোন করো। তাছাড়া কাল সকালেই আমরা রওনা দেব।’

ফারজানা বেগম করুণ গলায় বললেন,
‘আমার ফারহানের কি হইবো? ও কি এই মিথ্যা অপবাদ থাইকা মুক্তি পাইবে না?’

‘তুমি এই নিয়ে কোন চিন্তা করো না আম্মু। সবসময় সত্যেরই জয় হয়। ঐ আনহা নামের মেয়েটা যদি মিথ্যা বলে থাকে তাহলে ওর পরাজয় ঘটবেই। সব সত্য ঠিকই সামনে আসবে। তুমি আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।’

‘সেই ভরসাতেই তো আছি।’

ফাহিম আরো কিছু কথা বলে ফোন রেখে দেয়। অতঃপর ডিনার করে নেয়। ডিনারের পর তারিকুল ইসলামের সাথে কিছুক্ষণ কথা বললো ফাহিম। ফাহিম একপর্যায়ে তারিকুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করল,
‘আচ্ছা ঐ আরহা নামের মেয়েটার সাথে কথা বলে আপনার কি মনে হয়েছে? ও কি সত্য বলছে নাকি মিথ্যা?’

‘আমার তো কোনভাবেই মনে হয়না ও মিথ্যা বলছে। দেখো ওর সাথে তো তোমাদের কোন শত্রুতা নেই। মিথ্যা বলে ওর কি লাভ?’

‘কিন্তু আমি শুনলাম ঐ মেয়েটা নাকি সাক্ষী দিয়েছে ভাইয়া মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিস। তো ও কিভাবে বুঝল যে ভাইয়া মদ্যপ ছিল? বাইরে থেকে দেখে কি বোঝা যায়?’

‘এব্যাপারে তো আমি ঠিক বলতে পারব না। আমি হাসপাতালের একজন ডাক্তার হিসেবে কয়েকবার ওর সাথে দেখা করেছি। যিনি ওর চিকিৎসার দায়িত্বে আছেন তার কাছে শুনেছি ওর পায়ে নাকি এই এক্সিডেন্টের ফলে অনেক সমস্যা হয়েছে। যার জন্য অপারেশন করতে হবে। অনেক টাকার প্রয়োজন। মেয়েটার সৎ মা, বাবাও অসুস্থ। এখন এত টাকার ব্যবস্থা যে কি করে হবে!’

ফাহিমের চোখ চকচক করে উঠল। যেন সে রহস্যের সমাধান প্রায় করেই ফেলেছে। ফাহিম বললো,
‘ধন্যবাদ এতো ইনফরমেশন দেওয়ার জন্য। বাকিটা আমি দেখে নেব।’

তারিকুল ইসলাম কিছু বুঝলেন না। ফাহিমও রুমের দিকে পা বাড়ালো।

ফাহিম রুমে এসে দেখলো ইভানা বই পড়ছে। ফাহিমের একটু সন্দেহ হলো৷ সে সামনে এগিয়ে এসে দেখল ইভানা বইয়ের মধ্যে ফোন রেখে টিপছে। ফাহিম ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলল,
‘পড়া বাদ দিয়ে এসব কি হচ্ছে?’

ইভানা থতমত খেয়ে বলে,
‘আসলে,,মানে,,,’

ফাহিম ফোনের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় ইভানা এতক্ষণ আনহার সাথে কথা বলছিল। ফোনে এখনো নাম্বারটা ডায়েল করা আছে। নাম্বারটা স্বভ থাকায় বুঝতে অসুবিধা হয়নি। ফাহিম কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে প্রশ্ন করে,
‘আনহার সাথে কি কথা বললে?’

ইভানা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। নিজেকে সামলে বলে,
‘তেমন কিছু না। সাধারণ কথাবার্তা।’

‘১০ মিনিট ধরে সাধারণ কথা বললে!’

ইভানা চুপ করে রয়৷ তার এই নীরবতা ফাহিমকে অনেক কিছু বুঝিয়ে দেয়।

৩২.
কে’টে গেলো আরো একটি দিন। আজ সকাল সকাল ফাহিম ইভানাকে নিয়ে বিদায় নিলো তার বাপের বাড়ি থেকে। ইভানাকে নিজের বাড়িতে রেখে এসেই সরাসরি ফারহানের সাথে দেখা করতে চলে এলো ফাহিম।

কিছু সময় অপেক্ষা করে দেখা করার সুযোগ পেল। ফারহান ফাহিমকে দেখমাত্রই বলল,
‘আমাকে নিরপরাধ প্রমাণ করার কিছু পেলি? তোকে যে একজন উকিলের কন্ট্রাক্ট নাম্বার দিয়েছিলাম তার সাথে যোগাযোগ করেছিস?’

‘তুই শান্ত হ ব্রো। আমি সব করেছি। তবে ভালো উকিল দিয়েই শুধু তোকে নিরপরাধ প্রমাণ করা যাবে না। সেইজন্য আমাদের প্রমাণের দরকার।’

‘প্রমাণ কই পাবি?’

‘প্রমাণ তো এখনো হাতে পাইনি তবে অনেক কিছুই আন্দাজ করতে পেরেছি।’

‘আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না ঐ আনহা নামের মেয়েটার সাথে আমার কি শত্রুতা যে ও আমার নামে মিথ্যা বলল।’

‘এখানে শত্রুতার কোন ব্যাপার নেই। ও হয়তো কারো প্ররোচনায় এমনটা করেছে।’

‘মানে কি বলছিস তুই!’

‘এক্সিডেন্টের ফলে আনহার অনেক ক্ষতি হয়েছে। ওর চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আমার মনে হয় কেউ ওকে টাকা দিয়ে,,,’

ফারহান উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠে,
‘আনহা তো ইভানার বান্ধবী। আমার মনে হয় ইভানাই রয়েছে এসবের পেছনে। ও আমার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আনহাকে ব্যবহার করেছে।’

ফাহিম প্রতিবাদ করে বলে,
‘কোন কিছু না জেনে এমন বলা ঠিক না। ইভানা আমার স্ত্রী। আমি ওকে বিশ্বাস করি। ও এমন কিছু করে নি।’

‘নিজের ভাইয়ের থেকে দুদিনের বিয়ে করা বউকে বিশ্বাস করিস?’

‘হ্যা করি। কারণ ওকে অবিশ্বাস করার মতো কিছু ও। ইভানা অনেক ভালো মেয়ে। ও এমন কিছু করে নি।’

‘তাহলে কে করেছে?’

‘সেটাই আমাকে জানতে হবে। খুব শীঘ্রই সত্য উদঘাটন হবে।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨