মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব-৪০

0
514

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৪০
#লেখিকাঃদিশা_মনি

রাফিদ তোহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। মেয়েটা বড্ড বোকা মনে হচ্ছে তার। তাকে বিশ্বাস করে যে তোহা ঠকতে চলেছে সেটা ও বুঝতেই পারছে না। রাফিদ এমন ভাবনার মাঝেই তারিকুল ইসলাম তাড়া দিয়ে বলেন,
‘দ্রুত এনগেজমেন্টটা সেরে নাও। আবার নতুন কোন ঝা’মেলা না এসে পড়ে।’

রাফিদ তোহার হাতে আংটি পড়াতে যাবে এমন সময় হঠাৎ করে একটি নারী কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
‘স্টস দিস রাফিদ। ইউ কান্ট ডু দিস।’

রাফিদ আচমকা চেনা কন্ঠস্বরটি শুনে চমকে গেল৷ অসাবধানতা বশত তার হাত হতে এনগেজমেন্ট রিংটি পড়ে গেল। তোহাও বিস্মিত হয়ে তাকালো। এক বিদেশি রমণীর আগমন ঘটেছে বাড়িতে।

ইভানা ও ফারহান পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিল। ফারহান ইভানাকে বলে,
‘এই মেয়েটার সাথেই কাল আমি রাফিদকে দেখেছিলাম।’

ইভানা হতবাক হয়ে যায়। এদিকে মারিয়া সরাসরি রাফিদের কাছে আসে। তার শার্টের কলার ধরে ইংরেজিতে বলে,
‘তুমি এটা কিভাবে করতে পারলে রাফিদ? তুমি না কাল আমাকে বলেছিলে এই বিয়েটা ভেঙে দেবে। তাহলে আজ এসব কি?’

‘মারিয়া ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড..’

‘জাস্ট সাট আপ।’

মারিয়া রক্তচক্ষু নি’ক্ষেপ করেছে রাফিদের দিকে। তোহা রাফিদকে প্রশ্ন করল,
‘এই মেয়েটা কে রাফিদ?’

রাফিদ কোন উত্তর দেয়না। রাফিদকে চুপ থাকতে দেখে তোহা উত্তেজিত হয়ে যায়। জোরে চিৎকার করে বলে,
‘কি হলো চুপ করে আছেন কেন? উত্তর দিন বলছি।’

মারিয়া তাদের মাঝে বলে ওঠে,
‘হি ইজ মাই বয়ফ্রেন্ড।’

তোহা বি’স্ফোরিত নয়নে তাকায়। মারিয়া একে একে সবকিছু বলে। এটাও জানায় যে তারা একসাথে লিভ ইনে আছে। সব শুনে তোহার মাথা ঘু’রে যায়।

তারিকুল ইসলাম রাফিদের কাছে আসে জানতে চায়,
‘ঐ মেয়েটা যা বলছে তা কি সত্যি?’

রাফিদ মারিয়াকে হাতছাড়া করতে চায় না। কারণ সে মারিয়াকে পছন্দ করে তার উপর মারিয়া অনেক ধনীও। তাই স্বীকার করে নেয় সবকিছু।
‘হ্যাঁ, ও যা বলেছে সবকিছু ঠিক।’

তোহা এভাবে ঠকে যাবে ভাবতে পারে নি। তার চোখে জল চলে আসে। দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায় সে। তারিকুল ইসলাম, হাশেম আলী সবাই মিলে রাফিদ ও তার পরিবারকে অনেক অপমান করে। অতঃপর মারিয়া, রাফিদ ও তার পুরো পরিবারকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন। তারা সবাই চলেও যায়।

এতসবকিছুর পর তারিকুল ইসলাম ফারহানের সামনে এসে বলে,
‘আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি বাবা। এর আগেও আমি তোমাকে জে’লে পাঠিয়েছিলাম বিনা অপ’রাধে আর আজ এভাবে এতকিছু বলে ফেললাম। অথচ তুমি আমাদের মেয়ের ভালোই চাইছিলেন।’

‘কোন ব্যাপার না আঙ্কেল। আমি কিছু মনে করি নি। আপনারা তোহাকে সামলাবেন। ওর মানসিক অবস্থা বেশি ভালো না।’

বলেই ফারহান তোহাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। ফারহান বের হওয়ার পর ফাহিম ইভানাকে বলল,
‘এখানে পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তুমি থাকো। তোমার আপুর এখন তোমাকে প্রয়োজন।’

বলে ফাহিমও চলে এলো।

৭৯.
আজ সকাল থেকেই আবহাওয়া বেশ সুন্দর। এক মৃদুমন্দ হাওয়া বইছে। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ৷ ফারহান গাড়ি চালিয়ে ঝর্ণাদের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিয়েছে। আজ ঝর্ণার বিয়ে। যদিও পারিবারিক ভাবে তাদেরকে দাওয়াত দেয়নি তবুও ঝর্ণা একান্তভাবে ফারহানকে দাওয়াত দিয়েছে। তাই আজ ফারহান ঝর্ণাদের বাড়িতে যাচ্ছে। ঝর্ণার কাছে ক্ষমা চাওয়াও তো এখনো বাকি তার।

ঝর্ণাদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো ফারহান। বিয়ে বাড়ির পরিবেশ বেশ জাকজমক। ফারহান শুনেছে ঝর্ণার শ্বশুরবাড়ি নাকি বিশাল বড়লোক। তার হবু শ্বশুর রাজনীতি করেন এবং একজন সংসদ সদস্য। আর হবু বর পারিবারিক ব্যবসা সামলায়। সবমিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে এই পরিবারে ঝর্ণা রাজরানী হয়ে থাকবে।

ফারহান দোনোমোনো করছিলো ভেতরে যাবে কিনা ভেবে। সে বাড়ির গেটের কাছেই দাঁড়িয়েছিল। হঠাৎ করে ঝর্ণার বাবার নজরে আসে সে। তিনি ফারহানের কাছে এসে বলেন,
‘তুমি এখানে?’

ফারহান মাথা নিচু করে বলে,
‘ঝর্ণা দাওয়াত দিয়েছিল।’

‘ও হ্যাঁ ভেতরে এসো। ঝর্ণা তোমার কথা বলেছিল।’

ফারহান ভেতরে গেল। ঝর্ণার মা ফারহানকে দেখে বেশ রেগে গেলেন। কথা শোনাতেও ভুললেন না। ফারহানকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললেন,
‘সামান্য ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে তো মাটিতে পা পড়ে না। আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়েছিল৷ এখন আমার মেয়ে রাজরাণী হবে।’

এছাড়াও আরো নানান বা’জে কথা। ফারহান সব হজম করে নেয়। এতটুকু সে ডিজার্ভ করে। অতঃপর সে ঝর্ণার সাথে দেখা করতে যায়। ঝর্ণা বউ সেজে বসে আছে। একটু পরেই হয়তো পাত্রপক্ষ চলে আসবে। ফারহানকে আসতে দেখেই ঝর্ণা উচ্ছ্বসিত হয়। বলে,
‘ফারহান ভাইয়া এসো। তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম।’

ফারহান ঝর্ণার জন্য আনা গিফট তার হাতে দিয়ে বলে,
‘এটা তোর জন্য। আশা করি তোর ভবিষ্যত জীবন সুখের হবে।’

‘সবই আল্লাহর ইচ্ছা। যাইহোক তুমি আসায় আমি সত্যি খুব খুশি হয়েছি। এসেছ যখন খেয়ে যেও কেমন?’

ফারহান নিজের অনুশোচনা কমানোর জন্য ঝর্ণার সম্মুখে করজোড়ে ক্ষমা চায়। বলে,
‘তোকে সেদিন আমি অনেক খা’রাপ কথা বলে ফেলেছিলাম। তার জন্য আমি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ক্ষমা চাচ্ছি। পারলে আমায় ক্ষমা করে দিস।’

‘ছি ছি ভাইয়া। এভাবে ক্ষমা চেয়ে আমায় লজ্জা দিও না। আমার মনে তোমার জন্য কোন ক্ষো’ভ নেই। তুমি সেদিন আমাকে ফি’রিয়ে দিয়েছিলে জন্যই তো আজ আমি এত ভালো একজন জীবনসঙ্গী পাচ্ছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি তুমিও উত্তম জীবনসঙ্গী পাও।’

ফারহানের বুক থেকে পা’থর নেমে যায়। সে ঝর্ণাকে বিদায় জানিয়ে চলে আসে জরুরি কাজের কথা বলে। ফারহান যাওয়ার পর ঝর্ণার চোখ থেকে দুফোটা অশ্রু বের হয়। তা কারো দৃষ্টিগোচর হওয়ার আগেই সাবধানে মুছে নেয় সে। মনে করে, তাহাজ্জুদের নামাজের সময় সে চেয়েছিল একজন উত্তম জীবনসঙ্গীকে। আজ তা পেতে যাচ্ছে। এমনটা ভেবে সে স্বগোতক্তি করে,
‘আমি যা চেয়েছিলাম আল্লাহর কাছে আল্লাহ তার থেকেও বেশি কিছু দিয়েছেন আমায়। আমি খুব খুশি। জানি প্রথম অনুভূতি হয়তো এতো সহজে ভুলতে পারব না তাও আমি নিজের যথাসাধ্য চেষ্টা করব মানিয়ে নেওয়ার।’

৮০.
ফারহান আজ বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। তার মন থেকে অনেক বড় ভাড় সরে গেছে। এখন ফারহান চায় জীবন সামনের দিকে এগিয়ে নিতে।

★★★
তোহা মন খারাপ করে ঘরে বসে আছে। সকাল থেকে কিছু খায়ও নি। ইভানা খাবার নিয়ে তার রুমে প্রবেশ করল। অতঃপর বলল,
‘আর কতক্ষণ এভাবে থাকবি আপাই? এবার তো কিছু খেয়ে নে।’

‘তুই খাবারটা রাখ এখানে। আমি খেয়ে নেবো’

‘নে হা কর, আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি।’

তোহা হা করে। ইভানা নিজের বোনকে খাইয়ে দেয়। সাথে এও বলে,
‘ঐ শ’য়তান রাফিদের কথা ভেবে আর কষ্ট পাস না আপাই। তুই ভালো কিছু ভাব।’

‘মানে?’

‘ফারহান ভাইয়াকে তুই এর আগে কিভাবে কষ্ট দিয়েছিলি মনে আছে? এরপরেও কিন্তু উনি তোর ভালো চেয়েছেন। ঐ রাফিদের সত্যটা জানিয়ে তোকে বাঁচাতে চেয়েছেন। তুই আজ ওনাকে এত অপমান করলি তবুও উনি যাওয়ার সময় আব্বুকে তোর খেয়াল রাখতে বলেছেন।’

‘এসব তুই আমায় বলছিস কেন?’

‘আমি তোকে এটাই বোঝানোর চেষ্টা করছি যে ফারহান ভাইয়া সত্যি তোকে ভালোবাসে। হ্যাঁ, মানছি উনি আমার সাথে অন্যায় করেছিলেন কিন্তু সেখানে আমিও কিন্তু দায়ী ছিলাম। আমি ওনার উপর প্র’তিশোধ নিতে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। তাছাড়া উনি যেভাবে অপ’মানিত হয়েছিলেন সেটাও তো ভাবতে হবে। প্লিজ এবার তুই ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভাব।’

কথাগুলো বলে ইভানা চলে যায়। তোহা ইভানার বলা কথাগুলো ভাবতে থাকে। এমন সময় হঠাৎ তার ফোন বেজে ওঠে। তোহা ফোন রিসিভ করতেই ফারহান বলে ওঠে,
‘আপনি এখন ঠিক আছেন তো তোহা?’

‘ফারহান আপনি?’

‘হুম। আপনার খোঁজ নিতে ফোন করলাম। সাথে শে’ষবারের মতো একটা প্রশ্ন করব।’

‘কি প্রশ্ন?’

‘আপনি কি আমাকে বিয়ে করবেন তোহা? সময় নিয়ে উত্তর দেবেন। যদি আপনি না বলেন তাহলে আর কখনো আপনার সামনে যাবো না।’

তোহা ভাবতে থাকে কি উত্তর দেবে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

[আপনারাই বলুন তোহার সাথে ফারহানের মিল হলে ভালো হবে নাকি না হলে।]