মুগ্ধতায় মুগ্ধ পর্ব-২০

0
646

#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_20
.
🍁
বিছানায় আধশোয়া হয়ে একহাত মাথায় দিয়ে চোখ বুজে বসে আছে মুগ্ধ।মাথায় বড্ড যন্ত্রণা করছে তাঁর।এখন এক কাপ কফি হলে মন্দ হতো না।কিন্তু কে দেবে মুগ্ধতা তো এখানে ওকে রেখে বেপাওা।এসব ভাবতে ব্যস্ত তখনই রুমে ঢুকলো কেউ।ভিতরে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলে উঠলো মুগ্ধ……

~~~লাইট অফ করে চলে যাও মুগ্ধতা।আমি একটু ঘুমাবো।

মুগ্ধর কথায় রাগ স্পষ্ট।সেটা বুঝতে পেরে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে উঠলো মুগ্ধতা…….

_____কেন কি হয়েছে আপনার….?শরীর খারাপ লাগছে নাকি….?

মুগ্ধতার কথার জবাব দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করলো না সে।চুপচাপ যেভাবে ছিলো সেভাবেই শুয়ে রইলো।মুগ্ধতা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলো তাঁর সামনে।হাতের কফির কাপটা সেন্টার টেবিলে রেখে মুগ্ধর মাথায় হাত ছোঁয়ালো।মুগ্ধতার স্পর্শে কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো মুগ্ধ।কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।তাই আবারও বললো মুগ্ধতা……

~~~কই জ্বর তো নেই।তাহলে এই অবেলায় এভাবে বসে আছেন কেন….?আপনার জন্য কফি এনেছি খেয়ে নিন।

কপালে রাখা হাত সরিয়ে মুগ্ধতার মুখ বরাবর তাকালো মুগ্ধ।ও তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিলো মুগ্ধতা।যাক তাও ভালো ওর কথা কিছুটা হলেও মনে আছে মেয়েটার।মুগ্ধতার হাত থেকে কফি নিয়ে খেতে খেতে বললো মুগ্ধ……

~~~এসবের প্রয়োজন ছিলো না।আমার জন্য শুধু শুধু কষ্ট করতে হলো তোমায়।আচ্ছা তুমি খাবে না।

মুগ্ধর কথার পিঠে মুচকি হেঁসে ওর দিকে তাকালো মুগ্ধতা।মুগ্ধ কফিতে আলতো করে চুমুক দিচ্ছে।সেটা দেখতে দেখতে বললো…..

~~~নাহ্!আমি এখন খাবো না।একচুয়েলি ভালো লাগছে না।আপনি খেয়ে নিন।আচ্ছা মুগ্ধ আপনি আমার সাথে এভাবে ফর্মালিটি করে কথা বলছেন কেন…?

মুগ্ধতার কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মুগ্ধ।সেটা তুমি বুঝবে না সখি।এটা যে আমার অভিমানের ভাষা।কিন্তু আফসোস তুমি বুঝবে না অভিমানের কারণ ও খুজবে না।সত্যি যেখানে ভালোবাসা নামক বস্তুুই নেই।সেখানে অভিমান বড্ড বেমানান।

.
ড্রয়িংরুমে বসে আছে মুগ্ধ তখনই মুগ্ধর পাশের সোফায় বসলো অন্যান্য।অন্যান্য মেয়েটির হাবভাব একটুও ভালো না।যে-কোনো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই প্রেম করতে ইচ্ছে করে ওর।মুগ্ধ কে দেখেও যে এমন হচ্ছে না তা নয়।ওকে দেখে জেলাস ফিল হচ্ছে তাঁর।ওর এটা মানতে সমস্যা হচ্ছে ….এমন হ্যান্ডসাম একটা ছেলে ওর মতো কিউট মেয়ে রেখে কিনা একটা আশ্রিতাকে বিয়ে করলো।হাউ ইজ পসিবল!মুগ্ধর সামনে বসে ওকে উদ্দেশ্য করে বললো…….

~~~আচ্ছা মুগ্ধ তুমি কি জানো তোমার সাথে বিয়ে আগে মুগ্ধতা অন্য একটা ছেলেকে ভালোবাসতো….?

অন্যান্যার কথায় চোখ তুলে তাকালো মুগ্ধ।মৃদু হেঁসে বললো…..

______এটা না জানার কি আছে!এটা অতি সিম্পল একটা বিষয়।প্রেম ভালোবাসা কার লাইফে কখন আসে বলা যায় না।মুগ্ধতাও এক সময় অন্য একজনকে ভালোবেসেছে তাতে প্রবলেম নাই!

মুগ্ধর কথা শুনে ভারী রাগ হলো তাঁর!কোথায় রিয়াক্ট করবে তা না উল্টে ওর হয়ে কথা বলছে ডিজগাস্টিং!তবুও আবার বললো…..

~~~আরে মুগ্ধ শুধু কি প্রেম নাকি!আরে ওই ছেলের সাথে আরো কতকিছু……..

_______স্টপ ওখানেই থামুন!প্লিজ মুগ্ধতা সম্পর্কে কোনো খারাপ কিছু বলবেন না।আমি জানি ও কেমন।আদনান নামের একটা ছেলেকে ভালোবাসতো।তার সাথে বিয়েও ঠিক হয়েছিলো কিন্তু আপনি সেই বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছেন।
.
মুগ্ধ কে কিছুতেই উল্টোপাল্টা কিছু বুঝাতে পারলো না।উল্টে মুগ্ধ অপমান করলো।তাই রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো।
.
.
❤️

ও বাড়ি থেকে ফিরেছে আজ চারদিন হলো।ওখান থেকে আসার পর থেকে মুগ্ধর মধ্যে অদ্ভুত চেঞ্জ নোটিশ করছে মুগ্ধতা।আগের মতো ওর সাথে কথা বলে না।পড়াশোনার বাহানা দেখিয়ে অর্ধেক রাত গেস্ট রুমে কাটায়।তাছাড়া রুমে থাকলেও প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা কথা বলে না।দুজনের মধ্যেই খাপছাড়া ভাব।তবে এতকিছুর মধ্যেও মুগ্ধতার প্রতি ওর কেয়ার এতটুকুও কমে নি।আগে যেভাবে কেয়ার করতো এখনও ঠিক সেভাবেই করে।ওর খাওয়া দাওয়া প্রয়োজন অপ্রয়োজনের প্রতি যথেষ্ট যত্নশীল।এত চাপের মধ্যে থেকেও সবকিছু টাইমলি ওকে মনে করিয়ে দেয়।মুগ্ধ এমন চুপচাপ মানতে নারাজ মুগ্ধতা। কেন জানে না ওর নীরবতা খুব পীড়া দেয় ওকে।ইচ্ছে করে এ নিয়ে কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দিক কিন্তু কি মনে করে আর বলা হয়ে উঠে না।একটা জিনিস লক্ষ্যনীয় ওর সাথে কথা না বলতে পারলে দম বন্ধ লাগে মুগ্ধতার।যখন রুমে থাকে না তখন বড্ড ফাঁকা লাগে তাঁর।কি যেন নেই অনুভব হয়।আবার যখন চোখের সামনে থাকে তখন অজানা খুশিতে আত্মাহারা থাকে।কিন্তু মুগ্ধ কে ঘিরে এগুলো কেন হয় সেই উওর অজানা তাঁর।
.
.
রাত প্রায় বারোটা। ঘুমের মধ্যে বুঝতে পারলো হাওয়ায় ভাসছে মুগ্ধতা।ভয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।পরে যাবে ভেবে কারো গলা জড়িয়ে ধরলো।তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারলো হাওয়ায় নয় তাকে কোলে নিয়ে হাঁটছে কেউ।সেই ব্যাক্তিটিকে দেখার জন্য ঝটপট চোখ খুলে তাকালো।চোখ খুলে তাকিয়েই অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালো মুগ্ধতা।মুগ্ধর কোলে আছে সে।।এতক্ষণে ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধ।এভাবে নিজেকে দেখে আপনাআপনি মুখ হা হয়ে গেলো।মুগ্ধ ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে কোল থেকে নামিয়ে দিলো।মুগ্ধতা কিছুই বুঝতে পারছে না।হঠাৎ এই মাঝরাতের বেলা ওকে এখানে আনার একচুয়াল কোনো কারণও খুঁজে পাচ্ছে না।মুগ্ধ কোনো কথা না বলে হঠাৎ সরে গেলো।মুগ্ধ যেতেই আপনাআপনি ছাঁদের লাইট নিভে গেলো তার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আবার রঙিন আলো ফুঁটে উঠলো চারিদিকে।পেছন থেকে ভেসে আসলো অনেকগুলো পরিচিত কন্ঠস্বর…..তাঁরা চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো…….

~~~~শুভ জন্মদিন মুগ্ধতা!

পেছনে তাকিয়ে বিস্মিত হলো মুগ্ধতা।মোহনা,মা,তিথি আর মুগ্ধর সব ফ্রেন্ডস দাঁড়িয়ে আছে পেছনে।আজ এত বড় সারপ্রাইজ পেয়ে চোখে পানি চলে এলো মুগ্ধতার।মুগ্ধ চোখের ইশারায় কাঁদতে বারণ করলো মুগ্ধতা কে।কিন্তু চোখের পানি কি কথা শুনে কারো।তাছাড়া এ অশ্রুকণা দুঃখের নয়।এই অশ্রুজল সুখের।মুগ্ধতা কে নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো মুগ্ধ। সামনের টেবিলে ইয়া বড় একটা কেক সাজিয়ে রাখা হয়েছে।কেকের উপরে খুব সুন্দর করে লিখা “শুভ জন্মদিন মুগ্ধতা”!
.
মুগ্ধ হাত ধরে কেকের সামনে নিয়ে গেলো ওকে।সেখানে নিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলো।মুগ্ধতা আলতো করে ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিলো।কেক কেটে একে একে সবাইকে খাইয়ে দিলো মুগ্ধতা।শুধু মুগ্ধ বাদে।মুগ্ধ কে সকলের সামনে কীভাবে খাওয়াবে ভেবেই লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে ওর।তবুও লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে মুগ্ধ কে খাইয়ে দিলো।
.
রুমে এসে বসে আছে মুগ্ধতা।মুগ্ধ এখনও রুমে আসেনি।সবকিছু গুছিয়ে আসছে হয়তো।এই বাড়ীতে আসার পর থেকে অনেক প্রাপ্তি ধরা দিয়েছে মুগ্ধতার কাছে।অনেক না পাওয়া গুলো পাওয়া হয়ে গিয়েছে।এর আগে কখনও কেউ এভাবে এত বড় করে ওর জন্মদিন পালন করে নি।ওই টুকটাক উইশ আর আঙ্কেলের দেওয়া গিফট তাও প্রতিবছর নয় মাঝেমধ্যে।রুমে বসে মুগ্ধর অপেক্ষায় আছে মুগ্ধতা।তখনই রুমে ঢুকলো মুগ্ধ।মুগ্ধ কে দেখে উঠে দাঁড়ালো মুগ্ধতা।মুগ্ধ কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওয়াশরুম ঢুকে গেলো মুগ্ধ।ওয়াশরুম থেকে বের হতে না হতেই বলে উঠলো মুগ্ধতা…….

~~~আপনি কি করে জানলেন আজ আমার জন্মদিন….?

মুগ্ধতার কথায় চোখ ছোট ছোট করে তাকালো মুগ্ধ।মুখে হাসির রেখা টেনে বললো…..

_____””ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়”” কথাটা শুনেছো নিশ্চয়।জানার ইচ্ছে ছিলো তাই জানি।

মুগ্ধ বেশ হেয়ালি করছে।যেটা মোটেও ভালো লাগছে না তাঁর।বিরক্তিমাখা কন্ঠে বললো…..

~~~এত হেয়ালি না করে বলুন না কি করে জানতে পারলেন….?

_______কথার প্রসঙ্গে আফিফ ভাইয়ার কাছ থেকে জানতে পেরেছি।হইছে এবার শান্তি।

মৃদু হাসলো মুগ্ধতা।আজ অনেক খুশি আমি।সেই খুশির তাল সামলাতে না পেরে আচমকা মুগ্ধ কে জড়িয়ে ধরলো মুগ্ধতা।মুগ্ধতার এমন বিহেভে ফ্রিজড হয়ে আছে মুগ্ধ।মুগ্ধ কে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো……

~~~জানেন মুগ্ধ আজকের মতো খুশি এর আগে কখনও হইনি আমি।জন্মদিন সেলিব্রেইট করেছেন বলে নয়।আসলে এর আগে এতটা ইম্পর্টেন্স আমাকে কেউ দেয় নি।যেটা আপনি দিয়েছেন।এতদিন….

এক জীবনে হাজারো অপ্রাপ্তি ছিলো আমার
আর প্রাপ্তি সে তো শূন্যের কোঠায়…!!

কিন্তু আজ বুঝতে পারছি প্রাপ্তিগুলোও কম নয়।এই জীবনে এত অপ্রাপ্তির ভিড়ে প্রাপ্তির সংখ্যা হোক না নগন্য।তবুও দিন শেষে আমি ধন্য।এত সুন্দর একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ মুগ্ধ।
.
নিজেকে স্বাভাবিক করে এক হাতে ওকে জড়িয়ে অন্য হাত মাথায় বুলাতে বুলাতে বললো……

_______ধন্যবাদ দিতে হবে না পাগলী!আমি সব সময় চাই তুমি হ্যাপি থাকো।তোমার মুখে এই হাসিটাই যেন আজীবন অম্লান থাকে।
.
.
#চলবে…….