মুগ্ধতায় মুগ্ধ পর্ব-২৪

0
736

#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_24
.
🍁
ভার্সিটির অডিটোরিয়ামে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর তিথি।মূলত ওর সাথে আজ খুব করে ঝগড়া করবো বলেই ভার্সিটি পর্যন্ত টেনে নিয়ে এসেছি।আরেকটা কারণও আছে।সেটা তিথির জন্য সারপ্রাইজ বা মহা ধামাকা।বাসায় রাতুল ভাইয়া সম্পর্কে কোনোকথা বলেনি।তার উপর পরশুদিন বাসা থেকেও চলে গেছে নিজের বাড়ী।আর মাএ চারদিন পর ভাইয়ার ফ্লাইট।সো উনাকে কেন পছন্দ নয় সেই সব কথা জানতে চাই আমি।চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে তিথি।কোনোকথা নেই।এই পর্যন্ত বহুবার জিজ্ঞেস করেছি কাউকে ভালোবাসে কি না।বা উনাকেই ভালোবাসে না কেন…?কিন্তু কিছুই বলেনি। মোর বান্ধবীর এমন নীরবতার কারণ বুঝতে বেগ পেতে হচ্ছে আমায়।ওর মাথায় গাট্টা মেরে বলে উঠলাম আমি……

~~~ওই বান্দরনী এত চুপচাপ কেন….?
.
______কই না তো এমনি!
.
~~~তুই কি জানিস চারদিন পর রাতুল ভাইয়ার ফ্লাইট…..?
.
_______না তো!আর এটা আমি জেনেই বা কি করবো।
.
~~~কি করবি জানিস না…..?
.
______নাহ্!
.
~~~তবে রে!বলেই গাল টেনে দিলাম আমি।আচ্ছা এত ভনিতা না করে সরাসরি একটা কথা বলতো!
.
______কি কথা…?
.
~~~রাতুল ভাইয়াকে পছন্দ করিস কি করিস না….?হ্যাঁ অথবা না!এর বাইরে কোনোকথা বলবি না।
.
______মলিন মুখে ধুর চল ক্লাসে যাই।
.
~~~চোখ রাঙ্গিয়ে বললাম…..একদম এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবি না।রাতুল ভাইয়ার মতো ভদ্র ছেলে দুইটা হয় না।।তাছাড়া যদি তাঁকে ভালোই নাই বাসিস তাহলে সেটা বলছিস না কেন…?আর যদি বাসিস সেটাই বা একসেপ্ট করছিস না কেন….?হ্যাঁ মানছি প্রপোজ করলেই একসেপ্ট করতে হবে এমন নয়।রিজেক্ট ও করতে পারিস তাহলে।সত্যি বল তো ভালোবাসিস…..হ্যাঁ কি না বল।
.
আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তিথি।একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতে লাগলো……
.
______রাতুল ছেলেটা খারাপ নয় সেটা খুব ভালোভাবেই জানি আমি।ও কোনো রিলেশনে নেই সেটাও জানি আমি।অতি ভদ্র নম্র শান্ত শিষ্ট সবটাই জানি বুঝি!কিন্তু……
.
ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম আমি।”কিন্তু কি”….সেটা জানার জন্য উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছি আমি।
.
~~~কিন্তু উনাকে নিয়ে একটাই সমস্যা আমার…লোকটা মাএাতিরিক্ত ভীতু!যে সামান্য মনের কথাটা মুখে বলতে পারে না।সে আবার কেমন পুরুষ।আর তুই তো জানিস যাঁরা অতি মাএায় ভীতু তাঁদের একদমই সহ্য করতে পারি না আমি।লোকটা আমায় ভালোবাসে অথচ দেখ সেই কথাটা তিন মাস ধরে আমাকে বলতে গিয়েও বলতে পারে নি।কত বড় খচ্চর দেখ।ফাইনালি যাও কথাটা শুনলাম তাও কে জানালো আমায়…..মুগ্ধ ভাইয়া!আচ্ছা তুই ই বল ভাইয়ার বলা কথায় কি উনাকে একসেপ্ট করতে পারি আমি।যেখানে উনি নিজে কিছু বলেন নি।তখন ভাইয়ার কথার উপর হ্যাংলার মতো বলতাম হ্যাঁ আমিও আপনাকে ভালোবাসি।এরকমভাবে হয় না মুগ্ধতা।মনের কথাটা মনের মানুষকে নিজেকেই বুঝাতে হয়।হ্যাঁ অন্য কেউ জানাতেই পারে তাই বলে এভাবে হাত গুটিয়ে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে বসে থাকার কোনো মানে হয় না।
.
এতক্ষণ ধরে তিথির কথাগুলো বেশ মনোযোগ সহকারে শুনে যাচ্ছিলাম আমি।এবার বুঝতে পারলাম উনাকে একসেপ্ট না করার মেইন রিজন কি!তিথির কথাগুলো ফেলে দেওয়ার মতো নয়।যুক্তি আছে কথায়।অযৌক্তিক কোনো কথা বলছে না।ও নিজের জায়গায় একদম ঠিক।কিন্তু তিথি তো জানে না আজ ওর অপেক্ষার অবসান হচ্ছে।তবে এটা ভেবে ভালো লাগছে আজ আবারও দুটো ভালোবাসার মানুষ এক হবে।সাক্ষী হবো আমরা সবাই।
.
.
আধঘন্টা ধরে রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে তিথি আর রাতুল।সকলে প্ল্যান করে মুগ্ধতা কে দিয়ে এখানে আনিয়েছে ওকে।ওকে রেখে পাঁচ মিনিটে আসছি বলে প্রস্থান করলো মুগ্ধতা।পুরো রেস্টুরেন্ট ফাঁকা।শুধু তিথি আর রাতুলের ওনারে বুক করেছে মুগ্ধ।মুগ্ধ, মুগ্ধতা, হৃদয়,স্নেহা সকলে আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু আজকেও অর্ধেক বলে আর এগুতে পারছে না রাতুল।সেটা দেখে রাগে গজগজ করছে তিথি কিন্তু মুখে প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক।অথচ মনে মনে রাতুলের চৌদ্দগুষ্টিকে উদ্ধার করা শেষ বেচারা জানতেই পারলো না।হঠাৎ একটা গোলাপ হাতে নিয়ে এক নিশ্বাসে চেঁচিয়ে বলে উঠলো রাতুল…….
.
~~~আমি জানিনা তোমার সামনে আসলেই আমার কি হয়।সব গুলিয়ে যায়।ছন্দ হারিয়ে ফেলি।কথাগুলো বলতে গিয়ে থমকে যাই।গলায় আটকা পড়ে যায়।কিন্তু কেন এতটা নার্ভাস হই নিজেই জানিনা।আমি তোমাকে ভালোবাসি তিথি।জানি বলার উপমা আরো সুন্দর হতে পারতো কিন্তু আমি পারিনি।তোমায় আমি ভালোবাসি।আমাকে কি ভালোবাসবে তুমি……?
.
পেঁচার মতো মুখ করে বসে আছে তিথি।ওর মুখ দেখে বুঝার জোঁ নেই ও আদৌও কি বলবে।সকলের মাঝে পিনপতন নীরবতা।সকলের দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু এখন তিথি।কিন্তু মুখে কোনোকথা নেই ওর।হতাশ চোখে তিথির দিকে তাকিয়ে আছে রাতুল।প্রায় পাঁচ মিনিট হতে চললো কিন্তু হ্যাঁ না কিছুই বললো না।তাই হতাশ হয়ে মাথা নিচু করে হাতে থাকা ফুলটা টেবিলে রেখে সামনে এগুতেই কর্কশ কন্ঠে বললো……
.
______ওই বান্দরের মতো মুখ করে কই যাস!এই একটা কথা বলতে তোর একঘন্টা সময় লাগলো।তোরে এখন আমার পঁচা পানিতে একঘন্টা চুপাইতে ইচ্ছে করছে।শালা হাঁদারাম!আবার ভাব দেখাইয়া চলে যাচ্ছিস।তোর কপাল ভালো এখানে হাতের কাছে তোকে মারার জন্য কিছু নাই নইলে আমার উওর শোনার আগে যাওয়ার অপরাধে পিটাইয়া তোর চামড়া উঠাইয়া ফেলতাম।
.
তিথির কথা শুনে হা হয়ে গেলো সবাই!কি মুখের ভাষা!এ যেন অন্য কোনো তিথিকে আবিষ্কার করলো সবাই।রাতুল গোমড়া মুখে তিথির মুখ পানে তাকিয়ে রইলো।কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাথানিচু করেই বললো……
.
~~~দাঁড়িয়েই তো আছি!কই তোমার উওর তো এখন জানালে না।
.
কথাটা শুনে যেন আরো রেগে গেলো তিথি।শার্টের কলার চেপে বললো…..
.
_____ওই আমার মুখ দেখে বুঝস না।যে মেয়ে একঘন্টা লেইট হওয়ার অপরাধে এতগুলো কথা বললো সেই মেয়ের উওর কি হবে বুঝস না।
.
কথাটা শুনেই খুশিতে চকচক করে উঠলো রাতুলের চোখ জোড়া।সাথে সকলেই তৃপ্তির হাসি হাসলো।যাক অবশেষে তিথি হ্যাঁ বলবে।তিথিকে কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে বললো……
.
~~~~তার মানে তুমি রাজি!
.
এবার বেশ লজ্জায় পরে গেলো তিথি।মুচকি হেসে মাথা নিচু করে ইশারায় সম্মতি জানালো।কিন্তু রাতুল নাছোড়বান্দা সে তিথির মুখেই শুনবে।অতঃপর রাতুলের জোড়াজুড়িতে একপ্রকার বাধ্য হয়েই বলতে হলো……
.
_____”আমিও তোমাকে ভালোবাসি”!
.
.
আংটি হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে মুগ্ধতার সামন আছে মুগ্ধ।তিথির পালা শেষ হতে না হতেই মুগ্ধর উপর হামলে পরেছে সবাই।সকলের জোড়াজুড়িতে রাজি না হয়ে থাকতে পারে নি মুগ্ধ।সকলের সামনে প্রপোজ করতে রাজি হয়।দুজনকে দাঁড় করিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে ব্যাপারটা এনজয় করছে সবাই।মুগ্ধতার মুখমন্ডলের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো……..
.
_________তোমায় যেদিন প্রথম দেখেছিলাম থমকে গিয়েছিলাম আমি।হুশ হারিয়ে ফেলেছিলাম তোমাতে।তোমার ওই আঘাতটুকু আকঁড়ে ধরেছিলাম ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে।তোমাকে যখনই দেখতাম চোখ বন্ধ করে অনুভব করতাম।লুকিয়ে চুরিয়ে হলেও রোজ দেখতেই হতো তোমায়।নইলে নিজেকে বড্ড অসহায় লাগতো আমার।তোমার ওই নীরবতা বড্ড পোঁড়াতো আমায়।তাই বার বার সামনে গিয়েও যাই নি যদি মন খারাপ হয় তোমার।বুঝতাম ইগনোর করছো কিন্তু তবুও বেহারার মতো তোমার সামনে দাঁড়াতাম।তোমাকে একনজর দেখার জন্য একটু কথা বলার জন্য আকুল হয়ে থাকতাম।

ওই কাজল কালো দুটি আঁখিতে….
খুন হয়েছি আমি……
মুগ্ধতায় মুগ্ধ হয়ে….
আটকা পরেছি আমি
ভালোবাসি বলা হয়নি…..
তবুও ভালোবাসি….!!

সারাজীবন হাত দু’টি ধরে
থাকবে তো পাশাপাশি
রাখবে কি কাছে খুব বেশি
ভালোবাসবে কি আমায় বেশি বেশি!
.
মুগ্ধতার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ।লজ্জায় মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধতা।মুগ্ধর বলা প্রতিটি কথা সত্যি।প্রত্যেকটা ছন্দ মুগ্ধতা কে ঘিরে।কোনোটাই মিথ্যে নয় সেটা মুগ্ধর চোখে দেখেই স্পষ্ট বুঝতে পারছে মুগ্ধতা।মুগ্ধতার কাছেও আজ কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই।আজ অনায়াসে বলতে পারে সেও মুগ্ধ কে ভালোবাসে।আনন্দে চোখের কোণে পানি জমে গেছে মুগ্ধতার।তবে এ কান্না দুঃখের নয়,এ কান্না সুখের। আজ নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে।এমন একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসাবে পেয়ে গর্বিত আমি।নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে বললো মুগ্ধতা……
.
~~~~হুম!আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।আমৃত্যু আপনার সাথে থাকবো।আর কিছু বলতে পারলো না মুগ্ধতা।কথাগুলো গলায় আটকে রইলো।চোখের ভাষায় অনেক কিছু বুঝিয়ে দিতে চাইছে কিন্তু মুগ্ধ….সে কি বুঝলো মুগ্ধতার অবুঝ মনের ভাষা।তাঁর মনের কোণের না বলা অব্যক্ত মনের কথা।
.
একটা মুচকি হাসি দিয়ে মুগ্ধতার হাতে আংটি পরিয়ে দিলো মুগ্ধ।সাথে সাথে শুরু হলো করতালি।করতালির আওয়াজ শুনে উঠে দাঁড়ালো মুগ্ধ।আংটিটাকে খুব কাছ থেকে দেখছে মুগ্ধতা।এটা তাঁর স্বামীর দেওয়া প্রথম উপহার।যাঁর মূল্য টা তাঁর কাছে অনেক বেশি।এটাকে খুব করে যতন করে আগলে রাখবে সে…..!!
.
.
#চলবে…..