#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#part_19
দুপুরে ফ্রেশ হয়ে তারা বেরিয়ে পড়লে লঞ্চের উদ্দেশ্যে। তারা গেলো কক্সবাজারের প্রসিদ্ধ হোটেল পউষী হোটেলে। সেখানেই তারা অর্ডার করলো লইট্টা ফ্রাই, কাচকি ফ্রাই, গরুর কালা ভুনা, ভর্তা প্লেটার, রূপচাঁদা ফ্রাই আর ডাল। খাবার গুলো দেখেই তিন্নির জিভে জল এসে গেলো। এই খাবারগুলোর অনেক মজার সে আগে অনেক শুনেছিলো। আজ টেস্ট করে বুজলো আসলেই এগুলো অনেক টেস্টি।তিন্নির আজ মনে হচ্ছে সে একটু বেশি খেয়ে ফেলেছে।খাওয়া দাওয়া শেষ তারা রুমে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলো।
সন্ধ্যার পর সমুদ্রের তীরে বিশাল মেলা জমা হয়। সমুদ্রের তীরে বিশাল বড় মার্কেট। সেখানে শামুক,মতির বিভিন্ন গহনা বিক্রি হয়। এছাড়াও বিভিন্ন আচার পাওয়া যায়। আশপাশ থেকে শুটকির মৌ মৌ গন্ধ বের হচ্ছে। তারা একটু সামনে এগুতেই দেখতে পেলো সেখানে কাঁকড়া ফ্রাই বিক্রি হচ্ছে।তারা সেখানে কাঁকড়া অর্ডার করলো। তিন্নি এবার কিছুটা বিপদে পড়ে গেলো। সে এর আগে কখনোই কাকড়া খায় নি। তাই সে কাকড়ার খোসা কিছুতেই ছাড়াতে পারছিল না। তাই জিসান তাকে হেল্প করলো। সুচনাকে দেখি মনে হচ্ছে সে কাঁকড়া খাওয়া এক্সপার্ট। তারা আশপাশ থেকে টুকটাক শপিং করলো। আটটার মধ্যেই তারা ডিনার শেষ করে হোটেলে ফিরলো।
বাহিরে প্রচন্ড ঝড় হচ্ছে। তিনি আর জিসান দুজনে বসে বসে টিভি দেখছে। কিছুক্ষণ পরেই রিয়াজ আর সূচনা আসলে ওদের রুমে। সূচনা এসেই বললো
-“এই জিসান, তুই আমাদের রুমে যা।এই ফালতু লোকের সাথে আমি থাকতে চাই না। আমি এই রুমের ঘুমাবো তুই ওই রুমে যা।”
জিসান করুন চোখে রিয়াজের দিকে তাকালো।
আরে লক্ষী বউ আমার এতো মাথা গরম করে না।দাড়াও আইসক্রীম অর্ডার করছি।আইসক্রীম খেয়ে মাথা ঠান্ডা করো।
সূচনা বললো
-“জিসান তুই ওকে বলে দে আমার সাথে যেনো লাগতে না আসে।”
জিসান বেচারা আছে বিপদে। সিনিয়র ভাইকে না কিছু বলতে পারে।আর না সূচনাকে।তিন্নি ওদের কাহিনী দেখে খুব মজা পাচ্ছে। কিছুক্ষন এর মধ্যে আইসক্রিম চলে আসলো।আরো বেশ কিছক্ষন আড্ডা দেওয়ার পর রিয়াজ এক প্রকার জোর করে সূচনার নিয়ে গেলো।
রাতের আবহাওয়া এখানে খুবই ঠাণ্ডা। গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো তিন্নি একদম তার গা ঘেঁষে ঘুমিয়ে আছে। আজ পর্যন্ত সে যতবারই তিন্নির পাশে ঘুমিয়েছে এমনটা কখনো হয়নি। সে ঘুমের মাঝেও নিজেকে গুছিয়ে রাখে। হঠাৎ জিসানের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এলো। সে রুমের টেম্পারেচার আরো কমিয়ে দিলো। তার কিছুক্ষণ পরে জিসানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। কারণ তার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। টেম্পারেচার কমে যাওয়ায় তিন্নি জিসানকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। এই সুযোগে সে ও তার অর্ধাঙ্গিনী কে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরলো। কেমন সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে তার। ভালোবাসার মানুষকে জড়িয়ে ধরে শরীর অনেকটা সুখ পাওয়া যায়। তিন্নি তার জীবনে না আসলে সে কখোনই সুন্দর মুহূর্ত গুলো উপভোগ করতে পারত না।
সকালের নাস্তা শেষ করে তারা বেরিয়ে পড়লো হিমছড়ি পাহাড়ে। হিমছড়ি যাওয়ার জন্য তারা একটা টমটম ভাড়া করলো। আশেপাশের ভিউ দেখে তিন্নি মুগ্ধ হচ্ছে। এক পাশে সমুদ্র আর অন্যপাশে পাহাড়ের ছোট ছোট টিলা। এর মাঝে ছোট ছোট ঝরনার দেখা পেল তারা। বেশ কিছুক্ষণ পর তারা হিমছড়ি পাহাড় এর পৌঁছলো। জিসান দেখতে পেলো তিন্নি ভীষণ এক্সাইটেড।
সূচনা বায়না করলো এই সিঁড়ি বেয়ে সে পাহাড়ে উঠবে। রিয়াজ তাকে সাথে সাথে মানা করে দিলো। কারণ সে জানে রাতে তাকেই আবার সূচনার পা টিপে দিতে হবে।
সূচনার সাথে সাথে এবার তিন্নির পাহাড়ে উঠতে চাইলো। জিসান তাকে বুঝানো এ পাহাড়ে উঠতে গেলে অনেকগুলো সিড়ি পার হতে হবে।তারা জিসান বা রিয়াজের কোনো কথাই শুনলো না।
বেশকিছু সিঁড়ি উঠার পরে দুজন হাঁপিয়ে উঠলো। রিয়াজ সূচনা কে উদ্দেশ্য করে বললো
-“বলেছিলাম পারবে না। কিন্তু তুমি তো কখনোই আমার কথামত চলবে না। এখন এই সিঁড়িতে বসে থাকো।
-“এই তুমি একদম ফালতু কথা বলব না। দেখছো আমি দম নিতে পারছিনা। একটু হেল্প করবে তা না কথা শোনাচ্ছ।”
তিন্নি বেচারীর অবস্থা খুবই খারাপ। আবার সে কাউকে কিছু বলতেও পারছেনা। জিসান তিনি অবস্থা বুঝতে পেরে আর এক মিনিটও দেরি করলো না।সে সোজা তিন্নিকে কোলে তুলে নিলো। আকর্ষিক ঘটনায় তিন্নি হতবম্ব হয়ে গেলো।তিন্নি মনে হয় বার বার তার হার্টবিট মিস করছে।
জিসান এই কাজ দেখে সূচনা রাগান্বিত চোখে রিয়াজের দিকে তাকালো।রিয়াজের চেহারা মুহূর্তেই মলীন হয়ে গেলো।
সে জিসানকে বললো
-“ব্যাটা হিরোইজম দেখানোর আর জায়গা পাওনা।আমার বউয়ের সামনেই এইগুলা করতে হবে?আমার কি তোর মত ফিট বডি আছে নাকি?আর না আছে পেনসিল সাইজের বউ।”
রিয়াজের কথা শুনে তিন্নি ভীষণ লজ্জা পেলো।সে বার বার বলছে তাকে নিচে নামিয়ে দিতে।
শান্ত কন্ঠে জিসান বললো
“তোমার কিছু হয়ে গেলে বাবার কাছে আমি কি জবাব দিব?তোমাকে আমি নিজ দায়িত্বে নিয়ে এসেছি।তাই তোমার সকল সুবিধা অসুবিধা দেখার দায়িত্ব আমার।”
সূচনা আবার বেশ ক্ষিপ্ত হলো রিয়াজের উপর।সে রাগান্বিত হয়ে রিয়াজকে বললো
“তুমি আমাকে ইনডাইরেক্টলি মোটা বললে?আমি মোটা তাই আমাকে কোলে তুলে নিতে পারব না?এটাই শোনার বাকি ছিল।আমি আজই বাবাকে বলবো যে সে ঠিক ছিল আর আমি ভুল।”
সূচনা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে গেলো।আর রিয়াজ তাকে বুঝাতে লাগলো।
জিসান আর সেখানে দাড়ালো না।সে তিন্নিকে নিয়ে সোজা উপরে উঠে গেলো।উপরে এসে তিন্নি আসে আসে দেখতে লাগলো।পাহাড়ের উপরে উঠে সমুদ্রের আসল সুন্দর্যের উপলব্ধি পাওয়া যায়।তিন্নি একদম পাহাড়ের সাইডে আসে দাড়ালো।সে পাহাড় থেকে নিচে দেখতে চায়।জিসান তিন্নির হাত ধরে রাখলো।এই মুহূর্তে তিন্নির নিজেকে খুব সেভ মনে হচ্চে। আজকাল জিসান এই স্পর্শ তিন্নির মনে শিহরন জাগিয়ে তোলে।
সে জিসানের দিকে একবার তাকালো।সামনের মানুষটাকে ভীষণ হেন্ডসাম লাগছে।কিছু একটা ভেবে তিন্নি আশেপাশে চোখ বুলালো। যা ভেবেছে তাই।কয়েকটা মেয়ে জিসানের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে।এই বিষয়টা তিন্নির এক দিকে ভালো লাগলো,আবার আরেক দিক দিয়ে বিরক্তও লাগলো।ভালো লাগলো এইটা ভেবে যে অতি সুদর্শন এই যুবকটিকে তার পাশে দেখে কতো মেয়ে জ্বলছে।আর খারাপ লাগলো মেয়েরা এমন করে কেনো জিসানকে দেখছে।জীবনে কি সুন্দর ছেলে দেখেনি?
বেশ কিছক্ষন পর রিয়াজ আর সূচনা আসলো পাহাড়ের উপর।দুজনেই হাপিয়ে গেছে।জিসান তাদের দিকে পানি এগিয়ে দিলো। সূচনা জিসানকে বললো
“নেক্সট টাইম এই জায়গাতে আসলে আগে তুই আমাকে কোলে করে উপরে তুলবি।তার পর তোর বউকে তুলবি।”
তিন্নির ভীষণ হাসি পাচ্ছে সূচনার কথা শুনে।
জিসান বললো
-“আমি কেনো তোকে তুলতে যাবো?তোর জামাইকে বল তুলতে।”
-“এই ব্যাটা তুলবে আমাকে? এর গায়ে কোনো শক্তি আছে?আমাকে দিয়ে খালি রান্না করাবে আর তা খেয়ে খেয়ে ফুলে উঠবে। মটকু একটা।”
-“এখন থেকে জিম এ পাঠাবি।”
রিয়াজ বললো
-“এই পাহাড়ে আমি আর জীবনেও আসছি না।”
তার পর তারা সেখানে কিছুক্ষণ সময় কাটলো।
আজ তারা যাবে ছেড়া দ্বীপ সেন্টমার্টিন। সমুদ্রের মাঝে এই দ্বীপ অপরূপ সুন্দর্যের অধিকারী। সেন্টমার্টিনে পৌঁছে তিন্নি আবারো মুগ্ধ হলো।ছোট বড় পাথরের ঘেরা দ্বীপের তীরে।
এই সময় গুলি তিন্নি ভীষণ উপভোগ করছে জিসানের সাথে সে এখন অনেকটা স্বাভাবিক হতে পেরেছে। মানুষটা তার ভীষণ খেয়াল রেখেছে।এই মানুষটাকে আর আগের মত অসহ্যকর লাগে না।
আজ ওরা সবাই ঢাকা ফিরে এসেছে। এই কয়েকটা দিন জিসানের জন্য অনেক স্পেশল ছিলো। তিন্নির সাথে খুব ভালো সময় কাটাতে পেরেছে।
বাসার দরজা খুলে অবনী রহমান বেশ অবাক হলেন। চিৎকার দিয়ে বললেন
-“এই তোদের অবস্থা কেন? দুজনই তো পুড়ে ছাই হয়ে গেছিস। কক্সবাজারে যে কি তোরা সানস্ক্রিম ইউজ করিস নি?”
তিনি মুচকি হেসে বললো
-“পুড়েছে তো ভালোই হয়েছে। এমনিতেই সাদা চামড়া বেশি ভালো লাগে না।”
-“এই তুই আমার সাথে ফাইজলামি করিস?”
জিসান পরিস্থিতি ঠান্ডা করার জন্য বললো
-“আম্মু সানস্ক্রিন টা ইউজ করেছিলাম আমরা। কিন্তু তবুও এমন হয়েছে। সমস্যা নেই কয়েক দিন এর মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।”
তিন্নির বাবা এসে বললো
-“এখনই কি শুরু করেছো? বাচ্চাগুলোকে আগে বাসায় ঢুকতে দাও।”
বাচ্চার খেতাব পেয়ে জিসান কিছুটা লজ্জা পেলো। তারা সবাই একসাথে সকালের নাস্তা করলো। জিসান আজ থেকেই অফিসে জয়েন করতে হবে। তাই সকালে নাস্তা শেষ করে অফিসে চলে গেলো।
মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তিন্নির বাবার মুখে প্রশান্তির হাসি বেরিয়ে আসলো। তিন্নি যে এই ট্রিপ টা ভীষণ এনজয় করেছে সেটা তার চেহারা দেখেই বোঝা যায়। তার বিশ্বাস একমাত্র জিসান পারবে তার মেয়েকে সম্মান করতে এবং গভীরভাবে ভালবাসতে।
#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#part_20
সময় কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময় তার নিজস্ব গতিতে প্রবাহমান চলতে থাকে। কক্সবাজার থেকে আসার পর তিন্নি এবং জিসান দুজনেই ব্যস্ত সময় পার করছে। তিন্নির ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। নতুন পরিবেশ আর নতুন বন্ধু-বান্ধবের মাঝে সে এখন মহাব্যস্ত। আর জিসান ও বেশ কয়েকটা কেস নিয়ে অনেক বেশি ব্যস্ততার মধ্যে আছে।
মেডিকেল কলেজে এসে সবার আগে তিন্নির যার সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে সে হলো সীমা। তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়েছে মূলত সীমার কারণে। সীমা সবার সাথে খুব সহজেই মিশতে পারে। তা না হলে তিন্নির মতো গম্ভীর মেয়ে এত সহজে কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে পারে না। এছাড়াও আরো দুটো মেয়ের সাথে তার খুব ভালো সম্পর্ক হয়েছে। একজন হচ্ছি সুমাইয়া আর আরেকজনের নাম হচ্ছে রত্না। সুমাইয়া ও ম্যারিড। সুমাইয়া কে দেখে ধারণা করা যায় সে তার দাম্পত্য জীবনে অনেক বেশি সুখী। সুখী হবে নাই বা কেন তাদের তিন বছরের সম্পর্কের পূর্ণতা যে পেয়েছে। সুমাইয়ার হাসবেন্ড আদনান তাকে যে খুব চোখে হারায়। তিন্নির সাথে দু’একবার দেখা হয়েছিল আদনান এর। আদনানকে এক ঝলক দেখে তিন্নি বুঝে গিয়েছিল এই লোক বউ পাগল।
তিন্নিও ম্যারিড একথা তারা সকলেই জানে। এ কথা অবশ্য তিন্নি তাদের জানায়নি। একথা জানিয়েছে তিন্নির বাবা আনিসুর রহমান। একদিন তিন্নিকে কলেজের ড্রপ করতে এসে তিনি সকলের সাথে দেখা করেন। কথার মাঝে তিনি সকলকে এই কথাটা জানিয়েছে। সবাই অবাক চোখে কিছুক্ষণ তিন্নির দিকে তাকিয়ে ছিল। বাবার আকস্মিক এই কথাটা জানানোতে তিন্নিই কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেলো। অনেকটাই অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল।
তিন্নির বাবা বাড়িতে এসে মেয়ের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে মেয়েকে বলেছিলেন
-“মা এ কথা কিন্তু তোমার তাদের জানানো উচিত ছিলো।”
-“পাপা তুমিতো জানো কেন আমি আমার বিয়ে সম্পর্কে সবাইকে জানাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না।”
-“তুমি এত ভয় কেন পাচ্ছো? জিসান খুবই ভালো ছেলে। দেখো মা, সে কখনো তোমার অসম্মান করবে না।”
-“আমি জানি পাপা। এই কয়েকদিনে আমি বুঝতে পেরেছি তিনি মেয়েদের যথেষ্ট সম্মান করেন। তার সাথে আমার সময়টা ভালই কাটে। কিন্তু কারো স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। প্লিজ পাপা আমাকে কোন কিছুতে জোর করোনা।”
আনিসুর রহমান মেয়ের দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকালেন। তার সামনে বসা অতি সুন্দরী মায়াবতী মেয়েটা যে কতটা কঠোর মনের অধিকারী সেটা কি সবাই জানেন? আর কেউ জানুক বা না জানুক জিসান নিশ্চয়ই এতদিনে এটা বুঝে গেছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিন্নির বাবা তিন্নির রুম থেকে বেরিয়ে আসলেন।
জিসান আজ প্রায় 25 দিনের মত হলো রাজশাহী এসেছে। কয়েকটা দিন ধরে সে কাজে একদম মন বসাতে পারছে না। তিনদিন ধরে তিন্নি তার কল রিসিভ করছে না। সবকিছু তো ঠিক ঠাকই চলছিলো। তাহলে হঠাৎ তিন্নির কি হলো। তাই সে বাধ্য হয়ে তিন্নির বাবাকে কল করলো।
-“জিসান কেমন আছো বাবা?”
-“আলহামদুলিল্লাহ বাবা ভালো আছি। বাসার সবাই ভালো আছে?”
-“হ্যাঁ বাসার সবাই ভালো আছে। তোমার কাজ কতদূর এগুলো?
-“শেষের দিকে। চলে আসবো খুব জলদি ঢাকাতে।বাবা তিন্নি ভালো আছে?আসলে ওকে কল করছিলাম কিন্তু রিসিভ হচ্চে না।”
আনিসুর রহমানের মুখটা মলিন হয়ে গেলো।মেয়েটা এত জেদি কেনো?জিসানের জন্য খুব খারাপ লাগলো।সে কি ছেলেটার জীবনটা কোনো জটিল গোলক ধাঁধায় ফেলে দিলো?
তিনি বললেন
-“তিন্নি ভালো আছে বাবা।আসলে নতুন ক্লাস তো তাই অনেক টায়ার্ড হয়ে যায়।তুমি কিছু মনে করো না।আমি ওকে বলছি।”
-“না বাবা সমস্যা নেই।আমি জাস্ট টেনশনে পড়ে গেছিলাম তাই। ওকে কিছু বলা লাগবে না।”
অবনী রহমান রুমে এসে দেখে আনিসুর রহমান চিন্তিত মুখে বসে আছে।তিনি বললেন
-“তোমাকে এত চিন্তিত লাগছে কেনো?কি হয়েছে?”
-“তিন্নি আর জিসানের বিয়ে দিয়ে কি আমি কোনো ভুল করেছি?”
-“কি বলছো এসব?ভুল কেনো করবে?বরং তুমি ঠিক করেছ।”
-“আমারও তাই মনে হয়।”
-“বরং তোমার মেয়ের বেশি জেদি।মেয়েটা এত শক্ত মনের কেনো?”
-“তুমি যাই বলো।আমি জানি আমার মেয়েটার ভেতরটা তুলোর মত নরম।”
____________________
তিন্নি আর তার ফ্রেন্ডরা ক্যান্টিনে বসে কফি খাচ্ছে।রত্না বললো
-“তিন্নি এটা কিন্তু ঠিক না?”
-“কেনো কি হয়েছে?”
-“আমরা সুমাইয়ার হাজবেন্ডকে দেখেছি।কিন্তু তুই একজন তোর জামাইকে দেখতে দিলি না।”
-“সে তো ঢাকাতে নাই।আসলে দেখিস।”
এমন সময় একটা ছেলে এসে তিন্নির পাশের চেয়ারটাতে বসলো।এতে তিন্নি অবাক হলনা। এটা তাদের সিনিয়র ভাই। কলেজ ভর্তি হবার পর থেকে সে খেয়াল করেছে এই ছেলেটা তাকে ফলো করে।তবে কখনো সামনে আসে না।ছেলেটা যে তাকে পছন্দ করে টা তিন্নি আগেই বুঝতে পেরেছে।ছেলেটা বললো
-“হাই গার্লস!!আমি রাব্বি।তোমাদের সিনিয়র।”
রত্না হেসে সালাম দিলো। ছেলেটা তিন্নিকে উদ্দেশ্য করে বললো
-“তোমাদের কোনো অসুবিধা বা কোনো হেল্প লাগলে আমাকে বলতে পারো।আমি সব সময় তোমাদের হেল্প করবো।সিনিয়র হিসেবে কিছু দায়িত্ব আছে আমাদের।”
তিন্নি মুচকি হেসে বললো
-“আপনি একদম চিন্তা করবেননা ভাইয়া।আমরা মেনেজ করতে পারবো। আর বিশেষ সমস্যা হলে আপনারা আছেন ছোট বোনদের হেল্প করতে।”
ছেলেটা অনেকটা থতমত খেয়ে গেলো।এই মেয়েটা তাকে এতো ভাইয়া ভাইয়া ডাকছে কেনো?কিছুটা কষ্ট নিয়ে ছেলেটা চলে গেলো।
সুমাইয়া বললো
-“এটা কি হলো?ছেলেটা এসেছে তিন্নিকে সাইয়া বানাতে।আর তিন্নি ভাইয়া বানিয়ে দিলো?”
সবাই এক সাথে হেসে উঠলো।
এমন সময় সীমা আসলো।সে মুচকি মুচকি হাসছে।
রত্না বললো
-” কীরে এতো ব্লাস করছিস কেনো?”
সীমা মুচকি হেসে বললো আমার ক্রাশ বয়কে দেখেছি।
রত্না বললো
-” কে তোর ক্রাশ বয়?”
আরে তোদের বলেছিলাম না আমাদের পাশের বাসায় এক আংকেল ড্রাগ নিতো।তার বাসায় ইনভেস্টিগেশন এর সময় একটা অফিসারকে দেখে ক্রাশ খাইছি। এর পর আর দেখিনাই।আজ দেখি আমাদের কলেজের সামনে দাড়িয়ে আছে।
সুমাইয়া বললো
-“একাই দেখবি?আমাদের দেখাবিনা?”
রত্না বললো “ওই আমিও দেখবো?”
তিন্নি বললো “ক্রাশ বয়কে দেখেছিস ভালো কথা।যা প্রেম কর। এখানে বসে রয়েছিস কেনো?”
রত্না বললো “মোটেই না।আগে আমরা দেখবো পছন্দ হলে তবে ও প্রেম করতে পারবে।তার আগে না।”
সীমা বললো ” এক্ষনি চল।না হলে আবার কোথাও হারিয়ে যাবে।”
তিন্নি বললো
-“আমি এসবে নেই।তোরা যা।”
সুমাইয়া বলে উঠলো
-“এই আমরা ম্যারিড বলে কি এদের কোনো গতি করে দিবো না।চল ওর একটা লাইন করিয়ে দেই।”
তারা সবাই চলে গেলো কলেজ গেট। গেট এর সামনে একটা গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে একটা অতি সুদর্শন ছেলে।রত্না ছেলেটাকে দেখে বলে
-“সীমা বোন আমার।তুই এই ছেলেকে একজন থেকে দুলাভাইয়ের নজরে দেখবি।এই আগুনটা আমার।”
সীমা রেগে রত্নার দিকে তাকালো।আর বললো
-” খবরদার তুই এর দিকে নজর দিবিনা।এটা তোর দুলাভাই।ইসস!! কেনো যে এই পেত্নীকে দেখাতে গেলাম?”
সুমাইয়া বললো
-“ইসস!! তিন বছর আগে কেনো দেকলাম না।তাহলে আদনানকে ক্যান্সেল করে দিতাম।”
তিন্নি অবাক হয়ে এদের কথা শুনছে।এই পাগল গুলা কিনা তার ফ্রেন্ড?তিন্নি আর চোখে একবার সামনে তাকালো।এইরকম হিরো সেজে এইখানে আসার মানে কি?আমার ফ্রেন্ডদের ইমপ্রেস করতে চাইছে?কিন্তু আমার এমন খারাপ লাগবে কেনো?
হঠাৎ রত্না বলে উঠলো
-“ছেলেটা তো মনে হয় আমার দিকেই আসছে।”
সীমা রেগে বললো
-“মোটেই না।সে আমার দিকে আসছে।”
সুমাইয়া বিরক্ত হয়ে বললো
-“এই তোরা থামবি?”
এমন সময় ছেলেটা এসে তিন্নিকে উদ্দেশ্য করে বললো
-” কি সমস্যা কল রিসিভ করনা কেনো?”
তারা সবাই অবাক হয়ে একবার তিন্নির দিকে তো আরেকবার সামনের ছেলেটার দিকে তাকাচ্ছে।
এবার ছেলেটা তাদের উদ্দেশ্য করে বললো
-” হেলো!! আমি আবরার জাওয়াদ জিসান।তিন্নির হাসবেন্ড।”
তারা সকলে বিস্ময়ের চরম সীমায় পৌছে গেছে।সীমা আর রত্নার মুখের অবস্থা দেখে সুমাইয়া হেসে দিলো।