#মেঘ তুমি বৃষ্টি হয়ে নামো
#পর্ব- ২১
#শারমিন আঁচল নিপা
বৃষ্টি এডভোকেট তরুন রায়কে আঘাত করে বসলো। সে কাঠগড়া থেকে বের হয়েই তরুন রায়ের গলা চেপে ধরল। তরুন রায় নিজেকে কেনোরকম ছুটানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সে ব্যার্থ। বৃষ্টির শক্তির সাথে সে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। এরপর কয়েকজন মিলে বৃষ্টিকে তরুন রায়ের গলা থেকে ছাড়িয়ে আলাদা নিয়ে বসালো। সাথে সাথে আদালতের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেল। বৃষ্টিকে স্বাভাবিক করতে চায়লে সে আরও বিগরে যেতে লাগল। ফলস্বরূপ সেদিনের মতো কোর্ট মুলতবি ঘোষণা করা হলো। আর বৃষ্টিকে রিমান্ডে নিয়ে যাওয়ার পারমিশন চায়লেও সেটা নাকোচ করা হয়। কারণ বৃষ্টি গর্ভবতী।
বৃষ্টির এমন আচরণে সামির সাহেব এবং ডাক্তার আবির দুজনেই হতাশ। ডাক্তার আবির বুঝতে পারছে বৃষ্টি এনজাইটিতে ভুগছে। আর এসব রোগীর হুটহাট রেগে যাওয়াটা ভীষণ স্বাভাবিক। তার জীবনে যা ঘটেছে তাতে এ রোগটা হওয়াও খুব স্বাভাবিক। তবে বৃষ্টির এ আচরণের জন্য পরবর্তীতে বৃষ্টিকে নির্দোষ প্রমাণ করা এবং বৃষ্টির শাস্তি কমিয়ে আনা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।
সেদিনের মতো আদালতের শেষে সামির সাহেব বৃষ্টির কাছে গিয়ে বলল
“তুমি যদি মনে করো তুমি মেঘের খু/নী হয়ে শাস্তি পাবে তাহলে তোমার মন যা বলে করো। আর যদি মনে করো তুমি মেঘের খু/নী না এটা প্রমাণ করবে তাহলে দয়াকরে তোমার মনকে কনট্রোল করো। তোমার পেটে মেঘের সন্তান। তোমার এসব আচরণের প্রভাব তোমার বাচ্চাদের উপর পড়ছে। সে সাথে তুমি সবাইকে এতই বিভ্রান্তিতে ফেলছো যে সবাই তোমাকে উদ্ধত মনে করে খু/নী ভাবছে। নিজেকে যদি প্রমাণ করতে না পারো তাহলে আর আর কিছু বলার নাই। নিজের সন্তানের কাছে বাবার খু/নী হয়ে থাকবে নাকি নিজেকে প্রমাণ করবে একান্তই তোমার ব্যাপার। তোমার জন্য আমার চরিত্র নিয়েও কথা উঠছে।”
কথাগুলো বলে সামির সাহেব কোর্ট থেকে বের হতে লাগল। এডভোকেট মুমু সামির সাহেবকে পিছু ডেকে জিজ্ঞেস করল
“কোথায় যাচ্ছেন আপনি? ”
“কেন?”
“এমনি। আমার কিছু সাহায্য লাগবে। কেইসটা ভীষণ জটিল হয়ে গেল। বৃষ্টির এলোমেলো আচরণ আরও জটিল করে দিল। নেক্সট ডেইটে আমাদের অবশ্যই সবটা প্রমাণ করতে হবে। আমাকে একটু সাহায্য করুন। কিছু বিষয় উদঘাটনে সাহায্য দরকার। আইনীভাবে সেটা কখনও সম্ভব না। বেআইনিভাবে করতে হবে।”
সামির সহেব বিস্মিত গলায় জিজ্ঞেস করল
“কী? ”
“অফিসার মাহিরের বাসা থেকে কিছু ডকুমেন্টস চুরি করতে হবে। ডোম মিরাজের সাথে কথা বলতে হবে। ওকে ফাঁদে ফেলে সত্যটা জানতে হবে। কারণ মিরাজেই মেঘের প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্ট করে। ওকে একটু লোভের ফাঁদে ফেলে সত্যটা আনতে হবে। আর আমি বাকিটা দেখছি কী করা যায়। বিষয়গুলো জটিল। কারণ পুলিশ যেখানে আমাদের সাহায্য করার কথা ছিল সেখানে পুলিশ নিজেই এখানে জড়িত। তাই চাইলেও আমরা পুলিশের সাহায্য নিতে পারব না।”
সামির সাহেব এডভোকেট মুমুকে আশ্বাস দিয়ে বলল
“সময় মতো সব পেয়ে যাবেন।”
এদিকে ডাক্তার আবীর বৃষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তার জীবনে প্রেম এসেছিল তবে সেটা এমন ভাবে হারিয়ে যাবে বুঝতে পারেনি। বৃষ্টির ঐ দুটো চোখ তাকে এখনও ভীষণ টানে। সত্যিকারের ভালোবাসা হয়তো এমনই। ভালোবাসার মানুষটার বড়ো অন্যায়ও কিছু মনে হয় না। সব সময় মনে হয় সে নিষ্পাপ পবিত্র।
বৃষ্টি জেলে বসে আছে। নিজেকে সামলে নেওয়ার ভীষণ চেষ্টা করছে। কিন্তু মনের বিরুদ্ধে গিয়ে সে পারছে না। মেঘের স্মৃতিগুলো তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে৷ কী থেকে কী হয়ে গেল সেটাই সে ভাবছে। ভালোবাসার জন্য একটা সহজ সরল মেয়েও যে হিংস্র হতে পারে এটার জলজ্যান্ত প্রমাণ সে। যে মানুষটা এক সময় রক্ত দেখলে ভয় পেত। সে মানুষটায় তিন তিনটে মানুষ খু/ন করে ফেলল।
তিনটে খু/ন সে এমনি এমনি করে নি। মেঘের বাড়িতে ঢুকতেও তাকে ভীষণ কষ্ট করতে হয়েছে। যে মেয়েটা দেয়াল টপকাতে পারত না ঠিক করে সে মেয়েটা ঠিকই দেয়াল টপকে বাড়িতে প্রবেশ করে।
হাতে একটা বোতলে ছিল তার। বোতলে ছিল মরিচের গুড়া মিশ্রিত পানি। সে প্রথমেই মেঘদের বাড়িতে ঢুকে। তারপর তার সাথে থাকা বড়ো ছুড়িটা বের করে। যেটা সে সামির সাহেবের বাসা থেকে নিয়ে এসেছিল। মেঘের পরিবার বৃষ্টিকে দেখে যখন অবাক হয়ে বৃষ্টিকে ধরতে আসে, তখন সে প্রথমে মরিচ গুড়াটা তাদের চোখে ছুড়ে দেয়। তারপর এলোপাতারি ছুড়ি চালায়। তাদের শব্দ পেয়ে সুরাইয়া যখন রুমে আসে তখন সুরাইয়াকে বেঁধে ফেলে। ততক্ষণ পর্যন্ত সে ছুড়ি দিয়ে মারতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়েছে।
বৃষ্টি এসব চিন্তা করেই ভাবছে ভালোবসা তাকে কত দুঃসাহসী করে তুলল সে তিন তিনটে খু/ন করে ফেলেছে। লম্বা একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল সে। তারপর চোখ বন্ধ করে পুরনো স্মৃতিগুলো মনে করে নিজের মনটাকে শান্ত করতে লাগল।
এদিকে সামির সাহেব অফিসার মাহিরের অনুপস্থিতিতে তার বাসায় পুলিশের লোক সেজে যায়। সে ভেবেছিল অফিসার মাহিরের বউকে কনস্টেবল পরিচয় দিবে। এরপর গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস নেওয়ার কথা বলে মূল কাগজ গুলো নিয়ে নিবে। কিন্তু সে সময় তার বাসায় তার বউ ও ছিল না। ফলে সে অন্য গল্প সাজায়। আর এ সুযোগটায় সে কাজে লাগায়। দরজা ভেঙে পুরো বসা খুঁজে মেঘের সকল ডকুমেন্টস নিয়ে তার ছবি তুলে নেয়। এরপর সেটা যথাস্থানে রেখে দেয়। আলমারি থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে সে চলে আসে। যাতে অফিসার মাহির এ পরিকল্পনার কথা বুঝতে না পারে৷ সে যেন ভাবে এটা সাধারণ একটা চুরি। আর পরবর্তীতে সেটাই হয়েছিল অফিসার মাহির ভেবেছিল তার বাসায় চুরি হয়েছে। তাই সে বিষয়টিকে জটিল করে ভাবেনি।
কেটে গেল কয়েকটা দিন। আবারও কোর্টে হাজির করা হলো বৃষ্টিকে। এডভোকেট তরুন রায় জাজকে উদ্দেশ্য করে বলল
“মহামান্য আদালত গতবার আপনি স্বচক্ষে তার আচরণ দেখে বুঝতে পেরেছেন সে কতটা হিংস্র। এতেই নিশ্চিত হয় এ মানুষটা মেঘকেও রাগের বশে খুন করেছে।”
এডভোকেট তরুন রায়ের কথায় ব্যাগরা দিয়ে মুমু বলে উঠলেন
“এডভোকেট তরুন রায় প্রমাণ ছাড়ায় শুধুমাত্র একটি আচরণের ভিত্তিতে আপনি আমার মক্কেল কে মেঘের খু/নী বানিয়ে দিতে পারেন না। আমার মক্কেল খু/ন করেছে সেটা পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে। তবে মেঘকে না। আমাদের সবারেই রাগ আছে। আর রাগ উঠলে আমরা এরকম উদ্ভট আচরণেই করি। বৃষ্টিও মানুষ। আর তার উপর দিয়ে অনেক ঝড় ঝাপটা গিয়েছে। এত ঝড়ের মধ্যেও যে বেঁচে আছে এটাই অনেক। ওর এ অবস্থায় হুট করে রেগে যাওয়া রিয়েক্ট করা স্বাভাবিক। তাহলে এটাকে কেন বড়ো করে দেখা হচ্ছে?
যাইহোক মহামান্য আদালত আপনি অনুমতি দিলে আমি কিছু প্রমাণ পেশ করতে চাই। যা প্রমাণ করে দেয় বৃষ্টি মেঘের খু/নী না। ”
আদালত তাকে অনুমতি প্রদান করল। এরপর এডভোকেট মুমু এমন এমন কিছু তথ্য দিল। যা পুরো কেইসটাকে নতুন মোড় দিল।
চলবে।