#মেন্টাল_হাসবেন্ড
[চতুর্থ ও শেষ পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
হঠাৎ করে পার্কের একটা যায়গায় ইরার চোখ আঁটকে যাই। ইরা সেখানে দেখতে পায় তার বেস্ট ফ্রেন্ড নীলাকে। নীলাকে এখানে দেখেই ইরা দৌড়ে চলে যায় নীলার কাছে। নীলার সাথে একটা ছেলেও আছে। ইরা নীলার কাছে গিয়ে বলল,
— নীলা তুই এখানে?
— আরে ইরা! তুই এখানে কি করছিস?
— আমি তো আমার হাসবেন্ড এর সাথে এখানে এসেছি ঘুরতে। কিন্তু তুই এখানে কি করছিস?
— আমি আমার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে এসেছি। ও জয় আমার বয়ফ্রেন্ড।
জয় ইরাকে হায় বলল। ইরাও উত্তরে হ্যালো বলল। নীলা আর ইরা নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষণ কথা বলে নীলা ইরাকে বলল।
— তোর হাসবেন্ড কই? তাকে তো দেখতে পারছিনা।
— ঐ-যে। দাঁড়িয়ে আছে ওখনে।
নীলা তূর্যর দিতে তাকিয়ে চিনে ফেলে। কারণ তূর্য নীলার এক্স বয়ফ্রেন্ড। তূর্যর অদ্ভুত আচরণের জন্য নীলা তূর্যের সাথে ব্রেক আপ করে নতুন রিলেশনে যায়। ইরা তূর্যকে ডেকে এখানে আসতে বলে। তূর্য নীলাকে দেখে তেমন একটা রিয়াক্ট করে না। সে এসে ইরার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। ইরা নীলাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
— ও আমার হাসবেন্ড তূর্য।
— ওহ! আমি বুঝিনা তুই একটা মেন্টালকে কীভাবে বিয়ে করতে পারিস?
— মানে? তুই কি ওনাকে আগে থেকেই চিনিস?
— হ্যাঁ। তূর্য আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড। একটা মেন্টালের সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না বলে আমি ব্রেক আপ করে দিয়েছি। আর এই পা’গ’লটাকে তুই বিয়ে করলি। তোর রুচির এতোটা খারাপ আগে জানতাম না।
— নীলা এবার বেশি বেশি হচ্ছে। উনি আমার স্বামী। ওনার নামে আর একটা খারাপ কথা বলবিনা।
— পা’গ’লকে পা’গ’ল বলা যাবেনা? তুই যেমন স্বামী ও পেয়েছিস তেমন। আর তোর ও রুচির প্রশংসা না করে থাকতে পারছি না। এমন একটা মেন্টালের সাথে কীভাবে আছিস তুই?
এবার তূর্য বলল — এখান থেকে চলো। এদের সাথে অহেতুক কথা বলে সময় নষ্ট করে লাভ নেই।
— হ্যাঁ হ্যাঁ, ইরা চলে যা। এই মেন্টাল দেখবি কিছুদিন পরে তোকেও মেন্টাল করে দিবে। তোকেও বা এসব বলে লাভ কি? তুইও আগে থেকেই এমন। তোদের খুভ ভালো মানিয়েছে। হিহিহি।
— সেট আপ।
শব্দটা শুনে এবার ইরা আর নীলা দু’জনেই তাকাল তূর্যের দিকে। কারণ এটা তূর্য বলেছে।
— অনেক হয়েছে নীলা। এবার থাম। তুই যে কেমন মেয়ে সেটা আমিও জানি। তুই আমার সাথে রিলেশনে থাকা অবস্থায় আরো কতো গুলো রিলেশন করছিস সেগুলোও আমার জানা ছিলো। আমি মেন্টাল নই। জাস্ট আমি নিজের জন্য পারফেক্ট মানুষ টা খুজছিলাম। আমার পাগলামি গুলো সহ্য করবে আমি এমন মানুষ চেয়েছিলাম। আর আমি তাকে পেয়েও গিয়েছি। আমি চাইনি এতো তাড়াতাড়ি ইরা আমার ব্যাপারে জানতে পারুক। কিন্তু আজ আর আমি সহ্য করতে পারছিনা। তোর থেকে ইরা হাজার গুন ভালো। আমি মেন্টাল জেনেও আমাকে মেয়েটা বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। আর তুই নাকি আমাকে ভালোবাসিস। আমি তোকে পরিক্ষা করার জন্য মেন্টাল হওয়ার অভিনয় করেছি। যাইহোক তোর সাথে কথা বলার কোনো রুচি বা সময় আমার নেই। চলো ইরা।
এই কথা বলে তূর্য ইরার হাত ধরে নীলার সামনে থেকে চলে এলো। ইরা হতবাক হয়ে তূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। ইরা যেনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।
তূর্য ইরাকে নিয়ে বাসায় চলে এলো। ইরা কোনো কথা বললনা। ইরা যেনো এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। বাসায় এসে ইরা চুপচাপ খাটের উপরে বসে আছে। তূর্য ইরার কাছে এসে বলল,
— ইরা। আই এম সরি।
ইরা চোখ তুলে শুধুই তাকিয়ে রইলো তূর্যের দিকে। কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো কথা বলতে পারেনা। তূর্য আবার বলল,
— আমি চাইনি এতো তাড়াতাড়ি আমার ব্যাপারে জানতে পারো। কিন্তু তোমার অপমান আমি কেনো জানি মেনে নিতে পারিনি। তাই আজ সত্যিটা তোমার সামনে চলে আসছে। তুমি খুব ভালো একটা মেয়ে। আমি তোমার মতো একজনকে আমার লাইফে ছেয়েছিলাম। আর তোমাকে আমি পেয়েছি। আমি চাইনা আমার জন্য কেউ তোমাকে অপমান করুক বা কথা শোনাক।
ইরা আচমকা তূর্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তূর্য ও ইরাকে জড়িয়ে ধরে। ইরা এবার তূর্যকে বলল,
— আমার একটা জিনিস লাগবে দিবেন?
— কি লাগবে?
— আমি এই তূর্যকে চাইনা। আমাকে আমার আগের তূর্যকে ফিরিয়ে দেন।
তূর্য এবার ইরাকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে বলল,
— ছিহ আপনি একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরতে লজ্জা করলোনা? আমি এখন মাকে ডেকে সব বলে দেবো কিন্তু।
এই কথা বলে তূর্য একটা মুচকি হাসি দিতেই ইরাও একটা মুচকি হাসি দিয়ে আবার তূর্যকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– আমার এই তূর্যকেই লাগবে।
কিছু সময় পার হওয়ার পরে রাতে খাওয়ার জন্য ডাক দিলেন আমেনা বেগম। তূর্য আর ইরা খাবার খাওয়ার জন্য খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে দেখে মা-বাবা দু’জনে বসে আছে। ইরা আর তূর্য খেতে বসে। খাবার খেতে খেতে তূর্য তার বাবাকে বলল,
— বাবা আমি কাল থেকে অফিসে যাবো।
তূর্যের মুখে এমন কথা শুনে তূর্যের মা-বাবা দু’জনেই খাওয়া বন্ধ করে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলো।
— এভাবে তাকিয়ে থাকার কিছু নেই। আমি তোমাদের ছেলে কোনো ভূত না। এমন ভাবে সবাই তাকিয়ে আছে যেনো আমি আকাশ থেকে নেমে এসেছি।
আমেনা বেগম ইরার দিকে তাকালো। ইরা মুচকি একটা হাসি দিলো। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারেনি আমেনা বেগম।
তূর্য আবার বলল — বাবা কাল থেকে তোমাকে আর অফিসে যেতে হবে না। কাল থেকে অফিস আমি সামলাবো। তুমি এবার রেস্ট নাও। তুমি আমাদের জন্য অনেক করেছো।
ছেলের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছেনা রায়হান সাহেব। এই ছেলের হঠাৎ করে আবার কি হয়ে গেলো।
ইরা এবার সব কিছুই সবাইকে খুলে বলল। ইরার কথা শুনে সবাই খুশি হলো। উপস্থিত সবার মুখে একটা হাসির ফুটে ওঠে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ইরা আর তূর্য নিজেদের রুমে গেল। তূর্য ইরাকে বলল,
— ইরা গতকাল রাতে তো বিড়াল মারা হয়নি। বিড়াল টা কিন্তু আজকে মারতে হবে।
— আপনাদের বাসায় তো কোনো বিড়াল নেই। তাহলে মারবেন কি?
তূর্য একটা হাসি দিয়ে বলল — বিড়াল মারতে বিড়ালের প্রয়োজন হয়না।
— তাহলে?
— দাড়াও দেখাচ্ছি।
এই কথা বলে তূর্য লাইট অফ করে দিলো। তারপর দে কি বিড়াল মারছে তারা জানে। আমি জানিনা। পরের দিন সকালে তূর্য অফিসে চলে যায়। অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে তূর্য ইরার জন্য ফুল কিনে নিয়ে আশে। বেলি ফুলের মালা নিয়ে ইরার কাছে গিয়ে বলল,
– ইরা তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি।
— দেখি কি জিনিস?
— চোখ বন্ধ করো আগে।
ইরা চোখ বন্ধ করতেই তূর্য বেলি ফুলের মালা ইরার কানের কাছে গুজে দিল। ইরা হাত দিয়ে ফুল দেখে অনেক খুশি হলো।
— আজকে অফিস কেমন লেগেছে।
— বোরিং।
— কেন?
— তোমাকে সারাদিন দেখতে পায়নি।
— তাই নাকি?
— হুম। এখন তুমি আমার সামনে বসে থাকো। সারাদিনের টা পোষায় নেবো।
— পাগল একটা।
— হুম তোমার পাগল আমি।
— হু আমার মেন্টাল হাসবেন্ড আপনি। খুভ ভালোবাসি আপনাকে।
এভাবেই চলতে থাকে তাদের নতুন জীবন। হাসিখুশিতে ভরপুর হয়ে উঠলো তাদের সংসার।
সমাপ্ত