মেহেরজান পর্ব-১৬ এবং বোনাস পর্ব

0
3

#মেহেরজান
লেখনীতে- #সোহামণি
পর্ব ১৬

বাড়ির ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তীতে মাহবুব খানের নির্দেশে বড় একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর সেটা হলো শুধু ছেলেমেয়েরাই না বাড়ির সবাই মিলে একটা ভ্রমণে যাবে এবার।তবে সেটা আর কিছুদিন পরে। অফিসেও অনেকগুলো ইম্পর্টেন্ট মিটিং আছে।আজ সন্ধ্যায় পরিবারের সবাই একসাথে হয়েছে কোথায় যাবে এই বিষয়ে আলোচনা করতে।গিন্নিরা সবার জন্য সুস্বাদু খাবার বানাতে ব্যস্ত।বাড়ির ছেলেমেয়েরা একপাশের সোফায় তো বড়রা অন্যপাশে। গিন্নিরা বাদে শুধুমাত্র অনুপস্থিত হলো মেহরান।আজ অফিসে না গেলেও বিকেলের দিকে একটা কাজে গিয়েছে। মেহরানের প্রতি এতদিন যাবৎ অন্যকোনো অনুভুতি না থাকলেও গতকাল রাত থেকে আলাদা একটা টান অনুভব করছে রাউশি। এইযে এখানে সবাই উপস্থিত শুধুমাত্র মেহরান নেই সেজন্য মনটাও কেমন খচখচ করছে।সদর দরজার দিকেই বার বার তাকাচ্ছে।মানুষটা কখন আসবে।রাউশি ঠিক করেছে মেহরানকে সে এখনও তার অনুভুতির বিষয়টা বুঝতে দেবে না কিছুদিন যাক তারপর।ভাবতেই ঠোঁটে একটা হাসি ফুটে ওঠে।রাউশিকে এভাবে হাসতে দেখে নাহিন জিজ্ঞাসা করে উঠলো,
“এই রাউশি কি হয়েছে তোর?হাসছিস কেন একা একা?”

নাহিন আর মাইশা আজকে এসেছে এ বাড়িতে।তারাও ভ্রমণে যেতে চায় সবার সাথে।নাহিনের এমন প্রশ্নে রাউশি হতকচিয়ে ওঠে।আর আশেপাশে সকলের দিকে একবার তাকালো।যে যার মতো কথা বলাবলিতে ব্যস্ত।নাহিনের মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
“এমনিতেই।”
“এমনিতেই মানে?নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে।বল আমাদেরও বল আমরাও হাসি।”

নাহিনের জোরে কথা বলাতে এবার সবাই তার কথা শুনতে পেয়ে রাউশি আর নাহিনের দিকে তাকায়।সকলের দৃষ্টি এখন রাউশি আর নাহিনের দিকে।রাউশি ইতস্ততবোধ করলো।মাহমুদ খান মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেন,
“কি হয়েছে মা?কি বিষয়ে কথা বলছিস তোরা?”

রাউশি নাহিনের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায় একবার তারপর তার বাবাকে নিচু স্বরে জবাবে বলল,
“কিছু না বাবা।আমরা তো এমনিতেই মজা করছিলাম।”

আবারও সবাই সবার মতো কথা বলা শুরু করলো।মাইশা রাউশির পাশে এসে বসে জিজ্ঞাসা করলো,
“এই রাউশিপু কাউকে কি পছন্দ হয়েছে নাকি গো তোমার?”
“এমন মনে হলো কেন?”
“না তোমাকে অন্য দিনের তুলনায় আজ বেশিই উজ্জ্বল আর খুশি লাগছে।হাসিটাও কেমন লাজুক মনে হলো।”

চোখ ছোট করে রাউশি বলল,
“এমন কিছুই না।”
“আচ্ছা এটা বলোতো তোমাদের ডিপার্টমেন্টের সেই নুজাইশ স্যার কেমন আছেন?উনাকে অনেকদিন ধরে দেখছি না আমি।”

রাউশি ভাবলো নুজাইশের বিষয়ে।ওই লোকটাকে রাউশির অদ্ভুত মনে হয়।অন্য টিচারদের তুলনায় উনি একটি বেশিই চঞ্চল মনে হয়।রাউশি গালে হাত দিয়ে বললো,
“এটাতো জানিনা দুদিন হলো ভার্সিটি যায় নি।”
“আচ্ছা।মেহরান ভাইয়ের বন্ধু লোকটা।”

রাউশি চমকে গেলো।চোখ বড় করে বললো,
“কীইই?”
“হ্যা তুমি জানো না?”
“না তো।”
“উনি নাকি মেহরান ভাইয়ের ছোটবেলার বন্ধু।আমিও এটা জেনেছি স্যারের বায়োডাটা চেইক করে।”
“ওহ।আমরা তো ছোট ছিলাম এত কিছু কি জানতাম নাকি?”
“হ্যা তাইতো।”

এরই মাঝে বাড়ির গিন্নিরা গরম গরম সিঙ্গারা,সমুচা আরও নানা রকমের খাবার নিয়ে আসে।রোকসানা বেগম খাবারগুলো রাখতেই উজান গরম গরম একটা মুখে পুরে নিতেই গরম পেয়ে চেঁচিয়ে ওঠে।মাহবুব খান ছেলের এহেন কান্ডে ধমকে বলেন,
“এত বড় ছেলে হয়েছো অথচ এমন বাচ্চামো করো কেন?”

উজান মাথা নিচু করে কুকুর যেমন জিহবা বের করে কেমন একটা করে উজানও ঠিক তেমনটাই করছে।তার পাশে বসা তানজিম তো মুখ চেপে হাসছে।বাকিরাও হাসলো। উজান মাহবুব খানকে বলল,
“লোভ সামলাতে পারিনি।খুব পছন্দ আমার।”

মাহবুব খান কিছু বললেন না।আবারও ব্যবসায়ের কথা বলা শুরু করলেন তিন ভাই।উর্মিলা বেগম রাউশির পাশে বসে রাউশির মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।কপালে হাত রেখে দেখেন জ্বর আছে কিনা?রাউশি আদুরে বাচ্চার মতো বসে রইলো।মাহবুব খান স্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন,
“মেহরান কোথায়?”

দরজার দিকে তাকিয়ে উত্তরে উর্মিলা বেগম বললেন,
“বিকেল তিনটের দিকে কাজ আছে বলে বের হলো।”
“এখনও ফেরেনি?সাড়ে ছয়টা তো বাজতে চললো।”

তখনই গাড়ির আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়।রাউশি উৎসুক হয়।চঞ্চল হয় দৃষ্টি।সবাই দরজার দিকেই তাকিয়ে আছে।গম্ভীর পায়ের ধাপ ফেলে ভেতরে প্রবেশ করে মেহরান।সোফায় সবাইকে নিজের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে দেখে ভ্রুকুটি করে নেয়।একে একে সবাই চোখ সড়ালেও রাউশি তাকিয়ে থাকে মেহরানের দিকে। মেহরানও রাউশির দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়ে।রাউশি তৎক্ষনাৎ চোখ সড়িয়ে নেয়।ভদ্রমেয়ের মতো বসে থাকে।মাহবুব খান মেহরানকে বললেন,
“ফ্রেশ হয়ে এসো কথা আছে।”

মেহরানও কোনো কথা ব্যয় না করেই উপরে উঠে নিজের রুমে চলে যায়।বাকিরা আবারও নিজেদের মতো কথা বলতে থাকে।
রাউশির কয়েকঘণ্টার চোখের তৃষ্ণার সমাপ্ত হয়।বড় একটি শ্বাস ফেলে।মানুষটাকে আজকে অন্যদিনের তুলনায় একটু বেশিই সুদর্শন মনে হলো।উৎফুল্ল মেজাজে নাহিনের সাথে কথা বলা শুরু করে। তানজিম তাদের পাশে এসে বলে,
“এই রাউশি তোর জন্য আমার পক্ষ থেকে একটা সারপ্রাইজ আছে।”

রাউশি কপাল কুঁচকায়।তানজিম ভাই আবার এই অসময়ে তাকে কি সারপ্রাইজ দেবে?জিজ্ঞাসা করতেই তানজিম বলল,
“যেখানে ঘুরতে যাব সেখানে গিয়েই দেব।ওয়েট কর তুই।”
“ঠিক আছে।”

নাহিন বাচ্চাদের মতো করে বলে উঠলো,
“আমাদের জন্য সারপ্রাইজ নেই?”

তানিয়াও আবদারের সহিত তার ভাইকে বললো,
“হ্যা আমার জন্য নেই ভাইয়া?”
“আছে আছে সবার জন্য।চুপ থাক এখন তোরা।”

বাকিরা খুশি হয়ে যায়।উজান ফোনে মেসেজিং করছে কারও সাথে।আর ঠোঁট টিপে হাসছে।তানজিম উজানের পেছনে গিয়ে দেখছে আসলে কাহিনীটা কি? তখনই নজরে পড়ে উজান একটি মেয়ের সাথে চ্যাট করছে।মেয়েটি এইমাত্র একটা মেসেজ দিলো,

‘ I Love you Ujan.’

উজান হয়তো এই মেসেজটা পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছে।এদিকে তানজিমের খুব হাসি পেলো।উজান আর সে সমবয়সী।উজান এখন কি সেন্ড করে এটা দেখার অপেক্ষায় আছে তানজিম।তখনই দেখলো উজান একটা মেসেজ সেন্ড করেছে বাংলায় লেখা,

“নাটক কম করো পিও।”

এই মেসেজটা দেখে তানজিম এবার নিজের হাসি থামাতে পারলো না।খুব জোরে হেসে দিলো সবার সামনে।তানজিমের এমন পাগলের মতো হাসি দেখে সবাই চমকিত হয়।সিড়ি বেড়ে নামতে থাকা মেহরানও বুঝতে পারলো না এই ছেলের এমন পাগলের মতো হাসি।উজান ঠিকই বুঝতে পারলো কেননা তানজিম তার পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলো।হয়তো মেসেজটা দেখতে পেয়েছে।মাহতাব ছেলেকে ধমকে ওঠেন,
“কি হয়েছে তোমার?এভাবে একা একা পাগলের মতো হাসছো কেন?মানসিক রোগে আক্রান্ত হলে নাকি?”

স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে পুনরায় বললেন,
“ছেলের পাবনা যাওয়ার ব্যবস্থা করো।”

রোকসানা বেগম ছেলের বিপক্ষে এমন কথা সহ্য করতে পারলেন না।তেঁতে উঠলেন,
“ছেলেকে এমন কথা বলতে খারাপ লাগছে না তোমার?”
“তোমার ছেলে যে দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছে সেই ব্যাপারে নিশ্চুপ কেন তুমি?এভাবে একা একা পাগলের মতো হাসছে।”
“তাই বলে কি তুমি এমন কথা বলবে।”
“তো কি ব_”

বাকিটুকু বলতে পারলেন না মাহবুব খানের কড়া চাহনীতে।মাহবুব খান তানজিমকে জিজ্ঞাসা করলেন,
“কি হয়েছে তানজিম?আজ তোমরা এতো কি নিয়ে হাসাহাসি করছো বলোতো?কোনো গন্ডগোল করেছো নাকি?”

তানজিম মাথা দুদিকে নাড়িয়ে বললো,
“না বড় বাবা এমন কিছুই না।”

মেহরান সেখানে এসে রাউশি বরাবর বসে পড়ে।রাউশির দিকে একবার তাকায়।মেয়েটা জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে এখন। তবে অন্যদিক মুখ ঘুরিয়ে ভাবটা এমন মেহরানকে সে দেখতে পায় নি।মেহরানকে কাছে মেয়ে মাহবুব খান এবার বলা শুরু করলেন,
“শোনো মেহরান, তুমি যে সিদ্ধান্ত নিলে আজকে ঘুরতে যাওয়ার সেটা ক্যান্সেল করেছি তা তো জানোই।গেলে সবাই একসাথেই যাবো।তবে কোথায় যাবো তারই বিষয়ে এখন আলোচনা করবো।”

আগামীকাল নুজাইশের বোন নুসফারের বিয়ে।নুজাইশ খুব করে যেতে বললো না গেলে খারাপ দেখাবে।আবার রাউশিকেও যেতে বলেছে নুজাইশ।মেহরান রাজি হয়েছে।রাউশিকে নিয়েই যাবে আগামীকাল নুজাইশের বোনের বিয়েবাড়িতে।মেহরান গলা উঁচিয়ে গম্ভীরভাবেই জবাবে বলল,
“দর্শনীয় স্থানে না গিয়ে আমরা বরঞ্চ আমাদের গ্রামে ঘুরে আসি।”

মাহবুব খান ভ্রু কুচকে বলেন,
“আমাদের গ্রাম মানে?”
“সিলেটের কথা বলছি।”

সিলেট উর্মিলা বেগমের বাপের বাড়ি।উর্মিলা বেগম ছেলের কথায় ভীষণ সন্তুষ্ট হন। মেহরান আবারও বলে,
“গ্রাম্য পরিবেশে গেলে সতেজ প্রকৃতিতে কিছুদিন থাকলে মনও সতেজ হয়ে উঠবে। তাছাড়া নানাজান মারা যাওয়ার পর নানীজান একাই আছেন সেখানে।দেখাশোনার মতো শুধু মামা আছে।একবার গিয়ে ঘুরে আসা উচিত।”

মাহবুব খান কিছুক্ষণ ভেবে-চিন্তে নিজেও সহমত প্রকাশ করেন।বাকিরাও খুশি হয়। রাউশি ভাবনার মত্ত হয় সিলেটে কখনো যাওয়া হয় নি এবারই প্রথম।সিলেটে অনেক সুন্দর জায়গা আছে।ঘোরা যাবে ভেবে নিজেও খুশি হয়ে মেহরানকে বারবার ধন্যবাদও বলে।তবে তাদের মাঝে উজান যেনো একটু বেশিই খুশি হয়।সে তো কয়েক মাস আগেই নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো।সেখানে নিজের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস ঠিক করেছে উজান।ভাবতেই আনমনেই হাসি ফুটে ওঠে ঠোঁটে।সবাই এই বিষয়ে বলাবলি করছিলো মাহবুব খান মেহরানকে জিজ্ঞাসা করে উঠলো,
“এখন এটা বলো কোথায় গিয়েছিলে তুমি?”

মেহরান জবাব দেওয়ার আগে উজান মুখ ফুটে বলে ফেলে,
“মিস. আরিয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো।”

সবাই চোখ বড় বড় করে তাকায় মেহরানের দিকে।মাহবুব খান প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন মেহরানের দিকে।রাউশির মন কেমন করে উঠলো যেন।আরিয়া? এই মেয়েটার সাথে মেহরানের কি সম্পর্ক? সেদিনই তো সব শেষ হয়ে গিয়েছিলো। তাহলে আজ কেন আবারও আরিয়ার সাথে দেখা করতে গেলো মেহরান।নিমিষেই রাউশির মুখ কালো হয়ে যায়।মেহরান খেয়াল করে বিষয়টা।মনে মনে আচ্ছামতো গালি দেয় উজানকে।উজান মুখে হাত দিয়ে বসে আছে।রাউশির দিকে সেও একবার তাকিয়ে দেখলো।বুঝতে পারলো বিষয়টা। অতি উত্তেজনায় যে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারলো এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।রাউশি হঠাৎ উঠে চলে গেলো নিজের রুমে।রাউশির পুরো বিষয়টা জানতে ইচ্ছে করলো না শুধু এটা ভেবে খারাপ লাগলো মেহরান আবারও কেন ওই মেয়েটার সাথে দেখা করতে গেল? রাউশির হিংসাও কম হচ্ছে না।আরিয়াই নিশ্চয় ডেকেছে? এই মেয়েটাকে রাউশি নিজেই একটা উচিত শিক্ষা দেবে ভেবে নেয়।

মেহরান রাউশির যাওয়া দেখে।উজানের দিকে একবার তাকাতেই ছেলেটার আত্মা কেঁপে ওঠে।রাতে খাওয়া দাওয়ার সময় রাউশিকে দেখা গেলো না।মেহরান বিষয়টা খেয়াল করতেই তানিয়াকে পাঠায় রাউশিকে ডাকার জন্য।মেহরান ভেবেছিলো রাউশি আসবে না তবে তানিয়ার পিছু পিছুই মেয়েটা এসে পড়লো।মাহবুব খান ইদানীং একটা বিষয় লক্ষ্য করছেন মেহরানের ওপর।ছেলেটা রাউশির বিষয়ে খুবই পজেসিভ। মূল ঘটনাটা উনি অনেক আগেই বুঝতে পেরেছেন।ছেলের আরিয়াকে না করে দেওয়ার সময় কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলেন।মাহবুব খান বিষয়টাই নিজেও খুশিই হন। উনার এ বিষয় দ্বিমত নেই।রাউশিকে উনারও পছন্দ। মেয়েটাকে নিজের ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার মতো একটা পবিত্র বন্ধনের কথা অনেক আগেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন।তবে পরিস্থিত এমন হলো যে ঘটনা পুরো উলটো হয়ে গিয়েছিলো।তবে সেই সুবর্ণ সুযোগ যদি এবার ফিরে আসে তবে খারাপ হবে না।ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকবে।

রাউশি আসতেই তানিয়া যেই চেয়ারের বসা ছিলো সেই চেয়ারে বসতে নিতেই তানিয়াই বসে পড়ে।এখন চেয়ার মাত্র একটাই খালি মেহরানের পাশের চেয়ার। রাউশি না চাইতেও সেখানেই বসে পড়ে।রাউশি বসতেই মেহরান রাউশির পাতে বিরিয়ানি তুলে দেয়।বাকিরা এই বিষয় খেয়াল না করলেও মাহবুব খান,উজান,তানজিম ঠিকই লক্ষ্য করলো।মাহবুব খান মনে প্রাণে খুবই তৃপ্ত হন। সন্তুষ্টি চিত্তে খেতে শুরু করেন।উজান আর তানজিম দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসা শুরু করে। রাউশি মেহরানের দিকে আড়চোখে তাকায়।মেহরান খাচ্ছে। আজ কাচ্চি বিরিয়ানি রান্না হয়েছে।রাউশির খুবই প্রিয়। মেহরান নিজের পাতের গোস্তটাও রাউশির প্লেটে দিয়ে দেয়।মেহরান জানে রাউশি মাংস পছন্দ করে।মেহরানের এমন যত্নশীল রূপ দেখলে রাউশি সত্যিই অভিভূত হয়ে যায়।না চাইতেও মেহরান রাউশির মনে খুব সন্তপর্ণে ধীরেসুস্থে জায়গা করে নিচ্ছে।

এদিকে তানজিম আর উজান মিটিমিটি হাসছে। উজান আফসোসের সুরে খাওয়ার সময়ই গান গেয়ে উঠলো,
“ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়? এমনই হয়?”

উজান ভুলে গিয়েছিলো এখানে বাড়ির বড়রাও আছে। মুখে কুলুপ এঁটে খাওয়া শুরু করে আবারও।তার এই গানের মানে বাকিরা বুঝতে না পারলেও তানজিম মেহরান বুঝতে পারলো।মেহরান নিশ্চুপ খেয়ে যাচ্ছে তানজিম খেতে খেতেই হাসছে।তানজিম বলে উঠলো,
“কবে যে আমাদেরও হবে।”

মাহতাব খান ছেলেকে আবারও ধমকে উঠলেন,
“কি হওয়ার কথা বলছো এই খাওয়া সময়ে?”
“কিছু না বাবা।তুমি এসব বুঝবে না।”
“তা আর বুঝবো কিভাবে?পাগলের প্রলাপ কি কেউ বোঝে নাকি?”

চলবে……

#মেহেরজান
লেখনীতে- #সোহামণি
বোনাস পার্ট

বাড়ির সবাই রেডি হতে ব্যস্ত।শাহ পরিবারের সাথে খান পরিবারের সম্পর্ক বহুদিনের।নওয়াজ শাহ আর মাহবুব খানের বন্ধুত্ব অনেকদিনের।তাইতো নওয়াজ শাহ মেয়ের বিয়েতে খান পরিবারকেই আগে ইনভাইট করেছে।এটা শুধু বড়রাই জানতো ছোটোরা জেনেছে আজ।রাউশি আজ সারাদিন ঘুমিয়েই কাটিয়েছে।এতকিছু জানা নেই তার।অবশ্য তার মা অনেকবার ডেকে গিয়েছেন রাউশিকে, রাউশি ততটা গুরুত্ব দেয় নি।রেডি হতে বললে মানা করে দিয়েছে।বারান্দায় দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে ফোনালাপ করছে রাউশি।রুনা ফোন দিয়েছে।ভার্সিটি যাচ্ছে না কেন এই বিষয়ে নানারকম প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছে।রাউশি সেসবই বলছে রুনাকে।সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে।পক্ষীগুলোও নিজ নিজ নীড়ে ফিরে যাচ্ছে।লাল আভায় আকাশটা কেমন আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে। রাউশির রুমের বারান্দাটা বিশাল।বিশাল বারান্দার কার্ণিশে গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো এমন সময় পেছনে কারও উপস্থিতি টের পায়।সাথে টের পেলো মানুষটা তার খুব নিকটেই দাঁড়িয়ে।কড়া ফারফিউমের ঘ্রাণ নাকে আসতেই বুঝতে পারলো মেহরান দাঁড়িয়ে।তাৎক্ষণিক পেছনে ফিরে তাকাতেই মেহরানের থুতনির সাথে রাউশির মাথা বারি খায়।মেহরান কপাল কুঁচকায়।রাউশি মাথায় যে স্থানে ব্যাথাটা লেগেছে সেই স্থানে হাত দিয়ে ঢলতে থাকে।মেহরান পর্যবেক্ষণ করে সামনে দাঁড়ানো কাঙ্ক্ষিত সেই নারীকে।চোখ দুটো ফুলোফুলো লাগছে আজ।বেশি ঘুমানোর ফলে।মেয়েটা এতো ঘুমায় কিভাবে?যেখানে বাড়ির সবাই এখন রেডি হতে ব্যস্ত সেখানে রাউশি বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলায় ব্যস্ত।এটা কেমন লাগলো মেহরানের।তবে ফোনে এতো কার সাথে কথা বলছে এটা নিয়ে কিছুটা ভাবুক হলো।মুখটা গম্ভীর করে বলল,
“ফোনে এতো কার সাথে কথা বলিস?”

রাউশি চোখ তুলে মেহরানের দিকে একবার তাকায়।মেহরান দূর আকাশপানে তাকিয়ে আছে।রাউশি স্বাভাবিক স্বরে জবাব দেয়,
“বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম।”
“ছেলে না মেয়ে?”

কেমন যেন ধমকের মতোই শোনালো মেহরানের কণ্ঠ।রাউশি নিজেও কপাল কুঁচকে জবাবে বলল,
“মেয়ে ছেলে দুইটাই।”

মেহরানের মুখায়ব এবার কিছুটা পরিবর্তন হলো।নিজের দুই হাত রাউশির দুপাশে গ্রিলের ওপর রাখলো।রাউশি ঈষৎ পিছু হটলো সাথে মেহরানও রাউশির দিকে কিছুটা ঝুকে গেলো।মেহরান শান্ত একদম স্থির দৃষ্টিতে রাউশির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।রাউশি কি ভয় পায় নাকি মেহরানকে?সেও একইভাবেই তাকিয়ে। মেহরান বলল,
“বারণ করেছিলাম, মনে আছে?নাকি ভুলে গেছিস?ভুলে গেলেও সমস্যা নেই, মনে করিয়ে দেওয়ার মতো ট্রিকস আছে আমার।”

রাউশির বুক কেঁপে উঠলো।তার মনে হয় মেহরান আজকাল একটু বেশিই অনুভুতি মিশিয়ে কথা বলে তার সাথে।চোখ নামিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
“যা ভাবছেন এমন কিছুই না।”
“কি ভাবছি?”
“জানি না।”
“কি জানিস না?”
“কিছুই জানি না।”

মেহরান আরেকটু ঝুকে রাউশির কাছে।রাউশি হতচকিত হয়ে চোখ বড় বড় করে।নিজেও সড়ে যায় কিছুটা।বুকের ভেতর ঢোল বেজে চলেছে একাকার।ধুকপুকানির কথা নাহয় অজানাই থাকুক।মেহরান রাউশির কানের কাছে মুখ নিয়ে আসে।ফিসফিস করে বলল,
“জানতে হবে।সবকিছুই জানতে হবে। জানতে বাধ্য তুই।”

রাউশি চোখ বন্ধ করে শুধু শুনলো কথাগুলো।ঠান্ডা হাওয়া এসে গা ছুয়ে দিলো দুজনের।মেহরান সড়ে আসে।রাউশির মাথায় একটা টোকা মেরে বলল,
“রেডি হয়ে নে।সবাই রেডি হচ্ছে।”

রাউশি চোখ খুলে দেখে মেহরান চলে যাচ্ছে।মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“আমি যাব না মেহরান ভাই।”

মেহরানের চলন থামে উল্টো আরও কড়া সড়ে বলে যায়,
“যা বলেছি তাই কর।”

মেহরান চলে যেতেই রাউশিও মুখ বেঁকিয়ে একই কথা পুনরায় বলে।রুমে আসতেই বিছানায় খপ করে বসে পড়ে।এই অসময়ে কার বিয়ে হচ্ছে?যে বাড়ির সবাই ড্যাংড্যাং করে সেখানে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।এরই মাঝে রাউশির গতকালকে উজান ভাইয়ের বলা কথা মনে পড়ে।মেহরান গতকাল আরিয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো।কিন্তু কেন এটা জানে না।রাউশির কেন যেন মেহরানকে অবিশ্বাস করতে মন চায় না।নিশ্চয় কোনো কারণ আছে?তবে আবার কৌতুহলও হয় জানার, কি সেই কারণ?রাউশি ভাবতে থাকে কি পড়ে যাবে?তার সাজগোজ তেমন ভালো লাগে না।শাড়ি পড়তেও মন চায় না তার।তাই মনমতো একটি জামা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।বের হতেই বিছানায় তানিয়াকে রেডি হয়ে বসে থাকতে দেখে রাউশি বলল,
“তুই এখানে?”

তানিয়া তাকালো রাউশির দিকে।রাউশি সবুজ রঙা একটি থ্রিপিস পড়েছে।সাধারণের মাঝেই অসাধারণ লাগলো তানিয়ার।মেহরান তানিয়াকে পাঠিয়েছে রাউশিকে ডাকার জন্য।রাউশি ড্রেসিং আয়নায় সামনে গিয়ে নিজের চুল আচড়াতে থাকে।চুলগুলো লম্বা নয় রাউশির ঘাড় সমান হতে একটু লম্বা।প্রসাধনীহীন মুখে শুধু গোলাপী রঙের লিপস্টিক লাগায়।এতেও বোঝা গেলো না লিপস্টিক লাগিয়েছে কিনা?তবে দেখতে সুন্দর লাগছে।তানিয়া শাড়ি পড়েছে।তাকে সুন্দর লাগছে।রাউশি জিজ্ঞাসা করলো,
“আচ্ছা আমরা কার বিয়েতে যাচ্ছি?”
“নওয়াজ আঙ্কেলের মেয়ের বিয়েতে।”

‘নওয়াজ’ নামটা একবার আওড়ালো।চেনে না রাউশি।তানিয়ার সাথেই নিচে নেমে গেলো।দুজনে নিচে নামতেই সোফায় মেহরান সহ বাড়ির কর্তারা বসে আছে। রাউশিকে দেখে মেহরান কপাল কুঁচকায়। নুজাইশের বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছে সাজগোজ না করাটাই সবচেয়ে ভালো মনে হলো মেহরানের কাছে।বহুল মানুষের আনাগোনা হবে।মেহরান অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু চায় না। বাড়ির কর্তীরাও এলো নিচে।রাউশিকে দেখে রোকসানা বেগম বললেন,
“একি মা তুই এই জামা পড়ে যাবি?”

রাউশিও সহজ সরল উত্তর দিলো,
“হ্যা।”
“কিন্তু_”

আর বলতে পারলো না মেহরান বলে উঠলো,
“থাক ছোট মা।যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই যাক ও।”

মাইশা এসে রাউশিকে জড়িয়ে ধরলো।বলল,
“খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে আপু।”

তাজবিরও কাছে এসে তাল মেলালো,
“হ্যা রাউশিপু তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।”

তাজবির ও রাউশির কাছে এসে বললো,
“হ্যা রাউশিপু খুব সুন্দর লাগছে তোমায়।”

তাজবির কয়েকদিনের জন্য নানুবাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলো আজই সকালে এলো।রাউশি তাজবিরের গাল টেনে দেয়।সবাই বেড়িয়ে পড়লো।তানজিম ওপর থেকে এসে মাইশাকে ধাক্কা দিয়ে উজানের কাছে চলে গেলো।মাইশা মুখ ভ্যাংচালো।বাড়ির কর্তারা একটি গাড়িতে উঠলো আর ড্রাইভ করার জন্য ড্রাইভার আছে।উর্মিলা বেগমরা অন্য একটি গাড়িতে উঠলো।রাউশি গিয়ে সেই গাড়িতে ওঠার আগেই তানজিম জোর করে তানিয়াকে সেই গাড়িতে পাঠিয়ে দিলো।রাউশি মুখ বেজার করে তাকালো তানজিমের দিকে।তানজিম দাত কেলিয়ে হাসলো।পরের গাড়িতেও নাহিন,মাইশা, তানজিম,তাজবির,উজান বসে পড়লো।রাউশির জন্য বিন্দুমাত্র জায়গা নেই।রাউশি চোখ ছোট ছোট করে পেছনের গাড়ির দিকে তাকালো মেহরান বসে আছে ড্রাউভিং সিটে। চোখ বন্ধ অবস্থায়।রাউশি হাত ঝাড়া মেরে মেহরানের গাড়ির দরজা খুলে বসে পড়ে মেহরানের পাশে।রাউশি বসতেই মেহরান গাড়ি স্টার্ট দেয়।রাউশি মনে মনে বেজায় খুশি তবে ভাবটা এমন রেখেছে যেন সে খুশি নয়।মেহরান নিজমনে গাড়ি চালাচ্ছে খুবই ধীরে।যেন গাড়ি চলছেই না।রাউশি বলে উঠলো,
“একটু জোরে চালান না মেহরান ভাই।”
“কেন?এত তাড়া কিসের তোর?”

রাউশি চাপা ক্ষোভে আওড়ালো,
“এমন কিছুই না।”

আবারও নিরবতায় ছেয়ে গেলো পরিবেশ।কিছুক্ষণ পর মেহরানই বলল,
“ওখানে গিয়ে তুই আমার চোখের সামনেই থাকবি সবসময়।”
“কেন?”

মেহরান চোয়াল শক্ত করলো।অসন্তোষে জবাব দিলো,
“আমি বলেছি তাই।”

রাউশি চুপ করে গেলো।মেহরান আড়চোখে একবার তাকালো রাউশিকে।মেয়েটাকে আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে মনে হলো।ঠোঁটের দিকে চোখ যেতেই ভ্রু কুঁচকালো।গাড়ি সাইডে দাড় করাতে রাউশি পাশে মেহরানের দিকে তাকালো।তখনই মেহরান রাউশির ঠোঁটে বুড়ো আঙুল ছুয়ে দিলো।আচমকা মেহরানের এহেন কাজে আর আকস্মাৎ স্পর্শে হতচকিয়ে গেলো সাথে কেপে উঠলো দেহ।মেহরান বুড়ো আঙুল দিয়ে রাউশির ঠোঁটজোড়ায় লাগানো সেই গোলাপী লিপস্টিক মুছে দিলো। এবার ঠোঁটজোড়া আরও সুন্দর লাগছে মনে হলো মেহরানের।খুব করে একটা চুমু খেতে মন চাইলো।তবে নিজেকে সংযত রাখলো।সড়ে এলো কাছ থেকে।এদিকে রাউশি যেন প্রাণে বাঁচলো।এই লোকের আশেপাশে থাকা মানেই ভয়ানক কিছু।বারকয়েক ঘন করে শ্বাস নিলো।চোখ বুজে সিটে হেলান দিতেই মেহরানের শীতল অনুভুতিতে টালমাটাক করা গকার আওয়াজ শুনতে পেলো,
“চুম্বক নাকি তুই?এত কাছে টানিস কেন?অতিদ্রুত চুমু খাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করবো।”

.

দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলো জাকজমকপূর্ণ বিয়েবাড়ি অনুষ্ঠানে।কোলাহলের মাঝে কথা শুনতে পাওয়াটা দুষ্কর হয়ে যাবে। রাউশি এখনও জানে না বিয়েটা হচ্ছে কার? আর মেহরানের কোন বন্ধুর বোনেরই বা বিয়ে হচ্ছে?রাউশি গাড়ি থেকে নেমে যায়।বাকিদের খুজতে থাকে তবে পায় না।ভ্রু কুঁচকে মেহরানের দিকে তাকায়,মেহরানও ততক্ষণে নেমেছে।কোথা থেকে যেন তিনজন ছেলে এসে দাঁড়ায় তাদের সামনে।এদের মধ্যে একজনকে চেনা চেনা লাগলো রাউশির।ভার্সিটিতে দেখেছে।ছেলেগুলো আসতেই মেহরানের সাথে হ্যান্ডশেক করে।একটি ছেলে মেহরানকে রসিকতা করে বলল,
“কি মামা তোমার অবস্থা তো দেখছি খুবই ভালো।”

সাঈদ রাউশির সামনে এসে বলে,
“কেমন আছো রাউশি?”

রাউশি চমকায় তবে মুখে তা না ফুটিয়ে হাসিমুখে জবাব দেয়,
“ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?”

সাঈদও হাসিমুখেই জবাব দিলো।রাউশি চিনলো না মানুষটাকে।এদিকে এহসান আবারও রসিকতা করে বলল,
“মামা তুমি আমাদের থেকে বেশিই ফার্স্ট।”

মেহরান এবার গম্ভীর মুখে জবাব দিলো,
“চুপ থাকাটা শ্রেয় মনে কর।ভেতরে চল।”

রাউশি শুনলো।বুঝতে পারলো মেহরানের এই বন্ধুগুলো একেকটা ভয়ানক দুষ্টু হবে।মেহরান রাউশির দিকে তাকালো চোখ দিয়ে বোঝালো ‘আয়’।রাউশিও মেহরানের পেছনে যায়।বাকিরা রাউশিকে দেখে আর মিটিমিটি হাসে।এহসান মেহরানকে বলে,
“আপনার হুকুম শিরধার্য মি. মেহরান।”

হাসলো সবাই। রাউশিও হাসলো।মেহরান হাটা শুরু করে। রাউশিও পেছন পেছন যাচ্ছে।বাকিরাও গেলো পিছু পিছু।

নুজাইশ খুবই ব্যস্ত আজ।একমাত্র বোনের বিয়ে।আর একটুপর তাদের ছেড়ে চলে যাবে।হ্যা হয়তোবা আসবে মাঝেমধ্যে তবে আগের মতো খুনসুটি আর হবে না ভাইবোনের মাঝে।রান্নার তদারকি করছিলো সে ফোনে কল আসায় একটু সাইডে যায়। সেখান থেকে বাড়ির ভেতরে প্রবেশের রাস্তাটা স্পষ্ট দেখা যায়।ফোনে কথা বলার মাঝে নজরে পড়লো চিরচেনা অনাকাঙ্ক্ষিত পছন্দের সেই নারীকে।খুবই সাধারণ তার সাজ।অথচ আশেপাশের নারীদের দেহ জৌলুশপূর্ণ আস্তরণে আবদ্ধ। নুজাইশ চোখ নামায়।পাশে এসে দাঁড়ায় আলভি,
“এখানে দাঁড়িয়ে আছিস যে?আঙ্কেল তোকে ডাকছে।”

নুজাইশের হুশ ফিরে।না চাইতেও কেমন রাগ লাগছে হুট করে।চাপা ক্ষোভে আওড়ালো,
“ডাকুক।”

সামনে হাটা ধরলো।উদ্দেশ্য মেহরান আর মৌরিন।পেছন পেছন আলভিও এলো। মেহরানের পেছনে তুষার,সাঈদ,এহিসানও এলো।নুজাইশ মেহরানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।রাউশি পরিবারের লোকজনদের খুজছিলো।কিন্তু ওপাশে থাকা কিছু মেয়েদের দেখে যারা কয়েকটা ছেলের সাথে গায়ে পড়ে কথা বলছে, মেহরানের হাটা থেমে যাওয়ায় সেও হাটা থামিয়ে সামনে তাকাতেই নুজাইশকে দেখে।এবার একটু অবাক হয়।এই ব্যাটা আবার এখানে কি করছে?আবার নুজাইশের বোনেরই বিয়ে নয়তো?নুজাইশ রাউশির দিকে একবার তাকিয়ে মেহরানের সাথে কোলাকুলি করে আর বলে,
“ভেবেছিলাম সবাই আসলেও তুই আসবি না।”
“এসে পড়লাম।”

তুষার চোখ ছোট ছোট করে নুজাইশ, মেহরান আর রাউশিকে দেখে চলেছে বার বার।রাউশি শিক্ষক হিসেবে সৌজন্যমূলক সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
“কেমন আছেন স্যার?”

বিয়েবাড়িতে এসে স্যার ডাকছে?এটাতে নুজাইশ অসন্তোষ হলো তবে প্রকাশ করলো না।হেসেই জবাব দিলো,
“ভালো না থাকলেও থাকার প্রচেষ্টায়।তোমার ব্যাপারে বলো মৌরিন?”

রাউশির মনে হলো নুজাইশ আগের তুলনায় কিছুটা গম্ভীর হয়েছে।আর উত্তরটাও কেমন যেন?সেও সুন্দর করে জবাব দিলো।এহসান এই রাস্তার মাঝেই বন্ধুদের নিয়ে মজা করে বলে উঠলো,
“এত রমণীর ভিড়ে তুষার জান তোমার একটা পছন্দ করা উচিত।চিরজীবন তো আর এভাবে কুমার হয়ে থাকতে পারবে না। মেহরানকে দেখো,”
একটু আস্তে করেই বললো,”প্রেয়সীকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”

এহসানের কথায় খুব মজা পেলো বাকিরা। রাউশি তাদের পাশেই ছিলো। তারা হয়তো ভুলে গেছে তাদের সাথে রাউশিও আছে। মেহরান কথাটা শুনলো কপাল কুঁচকে গম্ভীর মুখে শুধু দাড়িয়েই আছে।ফোনে কাউকে কল করলো।তখনই তানজিম আসলো সেখানে।মেহরানের বন্ধুদের সাথে কুশল বিনিময় করে রাউশিকে নিয়ে চলে গেলো।তুষার মজা করে বলে,
“আহা এতো কেয়ারিং।”

সাঈদ বললো,
“খুবই শখের কিনা।”

মেহরান তাদের কথার মাঝে বলল,
“শুধুই শখের না অনেক ধৈর্যেরও।”

চলবে…..