ম্লান সন্ধ্যায় পর্ব-১৫+১৬

0
403

#ম্লান_সন্ধ্যায় (১৫)

আজকের অনিককে কোয়েলিয়া নতুন করে আবিষ্কার করলো। এতদিনের দেখা সেই উচ্ছৃঙ্খল মানুষটা মেয়েকে কাছে পেয়ে হুট করে যেন বদলে গেছে।বাবা মেয়েকে একসাথে দেখে অপলক চেয়ে থাকতেও ওর সংকোচ হলো না। মানুষের মস্তিষ্ক কিছু একটা ভাবলে তার ভেতর অন্য ভাবনা প্রবেশ করতে সময় নেয়না। কোয়েলিয়ার তাই হলো,ওদের খুনসুটির মূহুর্ত দেখে ওর মনটা খারাপ হলো। আচ্ছা ও কি এমন একটা সংসার আশা করতে পারেনা?এত বিলাসবহুল বাড়িতে থাকলেই কি ও সুখী? মোটেও না, বরঞ্চ মাঝেমাঝে ওর দম বন্ধ হয়ে আসে।
অনিকের এই উপেক্ষার পরিবর্তে তাও যদি ও মারতো কাটতো কিন্তু পুনরায় বুকে টেনে নিতো, তাহলে বোধহয় ওর জীবনটা এমন নিষ্প্রাণ হতো না। উপেক্ষা যে বড্ড অসহনীয়।ও তো কখনও অর্থের লোভ করেনি, না কখনো এতো সুদর্শন মানুষকে চেয়েছে। নিজের যোগ্যতার থেকে কাওকে ও কখনো কল্পনায়ও আনেনি।তবে ভালো থাকার এই কি পুরষ্কার?

বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতে চাইলেও ও আটকালো। কোথাও শুনেছে মানুষের নজরে সম্পর্ক নষ্ট হয়।বাবা মেয়ের ভেতরে ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠুক ও এটাই চায়।অনিক ভালো হয়ে নিজের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক,এই প্রার্থনা ও সকাল বিকেল করে।যদিও পরবর্তীতে কোয়েলিয়া কোথায় থাকবে তা ওর জানা নেই। তবুও এই কয়েকটা দিনের কথা ভেবে ও আজীবন অনিকের ভালো চাইবে।
এইযে ও এতো ভাবে অনিকের ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা করবে না, কিন্তু বেহায়া মনটা তো ওর ভাবনার তোয়াক্কা করেনা।চাতক পাখির ন্যায় বসে থাকে অনিকের আহ্বানের। কিন্তু না!অনিক ওকে চায় না। অকূল সমুদ্রে হাবুডুবু খাওয়া নাবিক যেমন নিজের জীবন মৃত্যু নিয়ে অনিশ্চত থাকে, তেমনি ও নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সর্বদা অনিশ্চয়তায় ভোগে।

সবাইকে খাবার দিয়ে কোয়েলিয়া চলে আসছিল।ঠিক সেই সময় সাফিয়া আদুরে গলায় বলল,
‘আন্টি তুমি আমাদের সাথে খাবেনা।’
তিনজোড়া চোখ একইসাথে কোয়েলিয়ার ওপর পড়তেই কোয়েলিয়া বিব্রতবোধ করলো।ও কোনোরকমে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বললো,
‘তুমি খেয়ে নেও। আমি এত তাড়াতাড়ি খাই না।’
কোয়েলিয়া চলে এলো।কেউ ওকে একবার ডাকলো ও না। আশা ছিল অনিক হয়তো বলবে,’আসুন , সাফিয়া যখন বলছে একসাথে ডিনার করি।’
কিন্তু অনিক পিছু ডাকেনা। ওদের সাথে এক টেবিলে বসে খাবার অধিকার ওকে দেওয়া হয়নি। একটা স্বাক্ষর ওকে শুধু এবাড়িতে অনিকের দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছে, তাকে এবাড়ির সদস্যের মর্যাদা দেওয়া হয়নি।এবাড়িতে ওর থেকে রুবিনার মূল্য ঢের বেশি। ওকে ওরা ধরে ঘরের অনান্য জড় পদার্থের নয়।যার ভালো মন্দ নিয়ে কারো মাথাব্যাথা নেই।

কোয়েলিয়া হঠাৎ চমকে উঠলো। আফসার শিকদার শুধুমাত্র টাকার জোরে ওকে কতো নিচে নামিয়ে দিয়েছে ।ওর এখন ও মনে আছে,ওর বড় কাকির বাড়িতে মাঝেমাঝে যাতায়াতের সূত্রে একদিন সামান্য বিষয় নিয়ে ইঙ্গিতে কিছু একটা বলেছিল, তারপর ও কখনো প্রয়োজনেও ও বাড়িতে পা রাখেনি। সেই কোয়েলিয়া আজ এতটা বদলে গেছে যে,একবাড়ি লোকের উপেক্ষার পরও ও চুপচাপ এখানে রয়েছে।নাহ্,আর নয়।এ বাড়ি থেকে খুব শীঘ্রই বের হবে।ওর পরিবারের সবাই উচ্ছন্নে যাক।নিজে বাঁচলে শেষে ওদের ভালো থাকার কথা ভাববে।
কোয়েলিয়া ভেতরে চেপে থাকা বিদ্রোহী সত্তা হঠাৎ জেগে উঠলো‌। ইদানিং থেকে থেকে এমনটা হচ্ছে।যদিও ও উপলব্ধি করতে পারছে,এর বহিঃপ্রকাশ ঘটালো অনেক খারাপ কিছু ঘটতে পারে। তবুও যেন ওর আজ সব বন্ধন ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে।ও তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে বোতল খুলে পানি খেয়ে নেয়।রাগ কোন কিছুর সমাধান নয়।যা ভাবতে হবে ঠান্ডা মাথায়। কিন্তু একটা জিনিস পরিষ্কার,ও এমন মেরুদন্ডহীন হয়ে আর থাকতে পারবে না।

অনিকের অদ্ভুদ আচরণকে ও মাতলামি বলেই ধরে নেয়।ও অনিকের দৃষ্টিতে খুব কম মুগ্ধতা দেখেছে। অবশ্য ওর চেহারা দেখে কেনই বা মুগ্ধতা আসবে।কালো মেয়েদের জীবনে একজন ভালোবাসার মানুষ থাকে।ওর জীবনে যার আসার কথা সে অতীতে চলে গেছে। কোয়েলিয়া তার প্রস্তাবকে কখনো প্রশ্রয় দেয়নি। তবুও মানুষটা ওকে ভালোবেসেছে, জীবনসঙ্গী করতে চেয়েছে।যার মুগ্ধ দৃষ্টিতে নিজেকে নিজে চিনেছে,যার জন্য ও নিজের গায়ের রংকে পছন্দ করেছে।কিন্তু বিনিময়ে সেই মানুষটাকে সবসময় প্রত্যাখ্যানের বাণী শুনিয়ে এসেছে।ও স্পষ্ট বুঝতো লোকটা ওকে ভালবাসে, তবুও ও তা গ্রহণ করার পরিবর্তে দূরে ঠেলে দিয়েছিল। এমনকি ওদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলেও ও বেঁকে বসে ছিল। ভাগ্য ওকে এখানে টেনে আনবে বলেই হয়তো ও তাকে কখনো গুরুত্ব দেয়নি।
কোয়েলিয়া হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠলো। আজকাল থেকে থেকে ওর কান্না পায়। কেন অনিক ওকে ভালোবাসতে পারে না? ওরা দুজন দুইশ্রেণীর বলে।ঘরে রাখা জড় পদার্থের ওপর ও তো মায়া জন্মে যায়। ও তো রক্ত মাংসের মানুষ। তবুও অনিক ওকে ভালবাসা তো দূরে থাক, কামনার দৃষ্টিতেও দেখে না।ও এতটাই অযোগ্য!

দরজায় টোকা পড়লো। কোয়েলিয়া দ্রুত চোখ মুছে দরজা খুললে, রুবিনা জানায় আফসার শিকদার তার সাথে কথা বলতে চায়। রুবিনা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,
‘সব ঠিকঠাক আছে?কানতিছো কেন বৌ।’
‘কোথায় কাঁদছি। মাথা ধরেছে তো।’
‘আমারে মিছা কও। মানুষ চিনতে চিনতে চুল পাকাইলাম।এই পাষাণ বাড়িতে থাকলি কানতি তো হবেই।’
‘বাদ দেও খালা। আমার মতো অসুন্দরের কপালে এর থেকে ভালো কিছু নেই।’
‘ক্যাডা কইছে তুমি অসুন্দর।শুধু ধলা হলিই হবো। ফেসকাটিং ভালো থাকা লাগবে না!’
কোয়েলিয়া বুঝলো এবার এনার বকবকানির শেষ থাকবে না।ওর চেহারার বর্ণনা থেকে শুরু করে ওর বাবাকে বকাঝকাতে গিয়ে থামবে। কোয়েলিয়া মুচকি হেসে ড্রয়িংরুমে গেল।

আফসার শিকদার বিজনেস ম্যাগাজিন দেখছিল। কোয়েলিয়া সামনে গিয়ে দাড়াতেই ভ্রু কুঁচকে আপাদমস্তক ওকে নিরীক্ষণ করলো। আফসার শিকদারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কোয়েলিয়া অজানা আশঙ্কায় কুঁকড়ে গেল।ভদ্রলোকের দাড়ি গোঁফ কামানো চোয়ালদুটো শক্ত,বাতির আলোয় অর্ধটেকো মাথা চকচক করছে।ওর সচেতন মস্তিষ্ক অজানা বিপদ জানার চেষ্টা করলো। কিন্তু তেমন কিছু খুঁজে পেল না।
আফসার শিকদার গম্ভীর গলায় বলে,
‘সাফিয়াকে আন্টি ডাকতে শিখিয়েছো কেন?’
কোয়েলিয়া এহেন প্রশ্নে বিস্মিত হয়ে আফসার শিকদারের দিকে তাকালো।এটা কেমন ধরনের প্রশ্ন হতে পারে।
‘অনিকের সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে মানে, তুমি ওর স্ত্রী।ওর সন্তান তোমাকে মা ডাকবে, তাকে তুমি আন্টি হিসেবে পরিচয় দিয়েছো কেন?’
আফসার শিকদারের ধমকে কোয়েলিয়ার রাগ উঠতে শুরু করলেও নিজেকে সামলে নিলো। আজকাল কারো ধমকানি ওর ভালো লাগে না। এতোটা ও কিভাবে বদলালো!ও স্বাভাবিক গলায় বলল,
‘ওর মা বেঁচে থাকতে কেন আমাকে মা বলবে? আমি তো ওর মা নই।’
‘এখন থেকে তুমি ওর মা। ওকে নিজের মেয়ের মতো দেখতে হবে,ভালোবাসতে হবে, বুঝতে পেরেছ। তোমার স্নেহ আদরে ও যাতে ওর মাকে ভুলে যেতে পারে।’
‘আপনি কিভাবে এমন কথা বলতে পারেন।ওর নিজের মা’কে কেন ও ভুলে যাবে? তাছাড়া যে ওকে গর্ভে ধারণ করেছে এতো বছর আগলে রেখেছে, কেন তাকে ভুলে আমাকে মা হিসেবে মেনে নেবে?যদি তিনি মারা যেতেন সেটা ভিন্ন কথা ছিল।’

আফসার শিকদারের মুখ দেখে বোঝা গেল এই মেয়ের এমন উদ্যত আচরণ তার পছন্দ হয়নি। রাগে চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে গেল।বললো,
‘মুখে মুখে তর্ক করার সাহস তোমাকে দেওয়া হয়নি। বেশি বুলি ছোড়ার আগে নিজের পরিণতির কথা ভাববে।’
কোয়েলিয়ার আত্মসম্মানে আঘাত লাগলো।ও কিছু একটা বলতে যাবে,তার আগে সাফিয়া এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো।
‘আন্টি আমি তোমার সাথে ঘুমাবো।’
কোয়েলিয়া কথার খেই হারিয়ে তখনকার আসন্ন ঝড়ের গতিপথ ঘুরিয়ে দিলো। হয়তো এই ঝড় পরবর্তীতে বড় আকার ধারণ করবে।ও সাফিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
‘কেন? বাবার সাথে ঘুমাতে কি সমস্যা।’
‘না আমি ওখানে ঘুমাবো না।’
‘সাফিয়া,মা ঘুমাতে এসো।’
অনিকের ডাকে সাফিয়া কোয়েলিয়ার শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে বললো,
‘আমি আন্টির সাথে ঘুমাবো।’
অনিক পীড়াপীড়ি করলো, কিন্তু সাফিয়া রাজি হলো না, বরঞ্চ কোয়েলিয়ার সাথে আরও লেপ্টে থাকলো। কোয়েলিয়া হেসে বলল,
‘ইরা, তুমি রুমে যাও, আমি আসছি ।’
সাফিয়া চলে যাচ্ছিল,আফসার শিকদার ওর হাত ধরে থামিয়ে বললো,
‘সাফিয়া ভালো করে শোন, ইনি তোমার মা।এনাকে মা বলে ডাকবে।’
আফসার শিকদারের কথায় সাফিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
‘ওনাকে মা বলবো কেন? আমার তো মা আছে। মানুষের কি দুটো বাবা-মা থাকে।’
‘মানুষের একটা বাবা একটা মা থাকে।এইযে তোমার বাবা, আর তোমার এখন এখানে নেই।’
আফসার শিকদার রক্তচক্ষুকে কোয়েলিয়া তোয়াক্কা করলো না। সাফিয়া কে নিয়ে ও ভেতরে চলে গেল।ও জানেনা এভাবে মুখের সামনে দিয়ে আসার ফল কি হবে। তবে আর ও এদের ধমকানি শাসানি সহ্য করবে না।

ড্রিম লাইটের আলোয় সাফিয়ার মায়াজড়ানো ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ও ঘোরের মধ্যে চলে গেল। এমন একটা সন্তান তো সেও চায়। কিন্তু কখনো কি ওর সংসার হবে, এমন একটা বাচ্চা থাকবে? অনিকের সাথে ওর সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে ও সাফিয়া কে নিজের মা বলে পরিচয় দিতো। তাছাড়া ওর মা নিশ্চয়ই মেয়েকে ভালোবাসে।ও কি করে এই অবুঝ বাচ্চাকে নিজের মা’কে ভুলতে দিতে পারে।ও নিজেও তো একজন মাতৃহীনা।যেদিন সাফিয়া বুঝতে শিখবে তখন স্বেচ্ছায় মা ডাকলে ডাকবে। অবশ্য ততদিন হয়তো এ বাড়িতে থাকতে পারবে না।যতদিন আছে,ও কিছুতেই এই মেয়ের সাথে তার মায়ের দূরত্ব হতে দেবে না।

দরজায় কড়াঘাতের শব্দে ওর ঘোর ভাঙলো।অনিক হয়তো মেয়েকে নিতে এসেছে। সাফিয়ার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ও উঠে দরজা খুললো। অনিকের চোখদুটো টকটকে লাল, কেমন অপ্রস্তুত দেখাচ্ছে। কোয়েলিয়ার অবচেতন মন জিজ্ঞেস করল,
‘আপনার কিছু হয়েছে নাকি?’
‘না।মাথাটা ধরেছে।’
‘অনেক?’
‘সেরকম কিছু না। সাফিয়া ঘুমিয়েছে? ওকে নিতে এসেছি।’
‘আসুন।’
কোয়েলিয়া দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়।অনিক আলগোছে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে বের হলো। কোয়েলিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, বাইরে গেল। ইদানিং ঘুম আসতে অনেক দেরী করে।

*
পরের দুটো দিন স্বাভাবিকভাবেই কাটলো।এর মধ্যে সারাহ সরফরাজ সাফিয়ার আগমনের খবর পেয়ে এসেছিল। সাফিয়া কে পেয়ে আফসার শিকদারের থমথমে মুখ খেয়াল করার সুযোগ পায়নি।তবে সকালবেলা ওর নামে আসা পার্সেল রিসিভ করে ঘরে ঢোকার সময় নাজমাকে দেখে ও একটু ভয় পেল। নাজমা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘এটা কে পাঠিয়েছে? এদিকে দেও‌।’
কোয়েলিয়া কাঁপা কাঁপা হাতে ব্যাগটা নাজমার দিকে বাড়ালো।প্যাকিং খুলে একটা ফোনের বক্স বের হলো।সেটা কোয়েলিয়ার ব্যবহৃত অ্যানড্রোয়েড। ফোনের ব্যাককভার খুলতেই তিনটে হাজার টাকার নোট। নাজমা কড়া গলায় বলল,
‘এসব কি?’
কোয়েলিয়া মাথা নিচু করে বললো,
‘আমার ফোনের দরকার ছিল,তাই বাড়ি থেকে আনিয়েছি।’
‘বাড়ি থেকে এসব এনে কি প্রমাণ করতে চেয়েছ, আমাদের কিছু দেবার সামর্থ্য নেই।’
নাজমার ধমকানি ওর ভালো লাগলো না। আজকাল এদের আচরণ ওর সহ্য হচ্ছে না।ও বিরক্তি নিয়ে বললো,
‘আমি আপনাদের ব্যাপারে কাওকে কিছু বলিনি।ফোনটা আমার দরকার ছিল,তাই দিতে বলেছিলাম। তাছাড়া কিছু চেয়ে নিতে আমার ভালো লাগে না।’
নাজমা কটমট করে ওর দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিলো।ও কিছু না বলে নিজের ঘরে গেল।ফোন অন করে রেণুকে কল দিলো।ওর কাছ থেকে অনেক কিছু জানার আছে।

*
রাতে সাফিয়াকে অনিকের ঘর থেকে নিয়ে বের হবার সময় সাফিয়া জেদ ধরলো কোয়েলিয়ার কোলে উঠবে। কোয়েলিয়া খুশিমনেই ওকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছিল, হঠাৎ শাড়িতে বেঁধে দু’জনেই পড়ে গেল। আচমকা পতনে সাফিয়া কেঁদে উঠলো, কোয়েলিয়াও বেশ ভালোই ব্যাথা পেয়েছে।ও সাফিয়া কে সামলে নিয়ে উঠতেই দেখলো আফসার শিকদার আর নাজমা যমের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। নাজমা সাফিয়া কে নিয়ে সরে যেতেই আফসার শিকদারের ধমকানি শুরু হলো,
‘ও পড়লো কিভাবে?’
‘আসলে শাড়িতে বেঁধে পড়ে গিয়েছি।ও কোলে ছিল , বুঝতে পারিনি।’
‘তুমি জেনেশুনে ওকে ফেলে দিয়ে, মিথ্যে বলছে।’
কোয়েলিয়া অবাক হয়ে শশুরতুল্য লোকটার দিকে তাকালো।এই লোকটা একজন ব্যবসায়ী, একজন সম্ভ্রান্ত লোক!ও বললো,
‘আপনি আমার ওপর মিথ্যা দোষারোপ কেন করছেন!’
‘এটা মিথ্যা দোষারোপ নয়। তুমি ওকে মেনে নিতে পারছো না,এটা স্পষ্ট। অবশ্য আমার ই বোঝা উচিত ছিল,সৎমা কখনো মা হয়না।’
‘আপনি যথেষ্ট বলেছেন। আপনার এই মুহূর্তের আচরণের জন্য আপনাকে গুরুজন তুল্য সম্মান দিতে পারছি না।যেখানে আপনার ছেলে আমাকে স্ত্রী হিসেবে মানেই না, সেখানে তার সন্তানের সৎমা কিভাবে হই! তাছাড়া একটা বাচ্চার সাথে আমি কেন খারাপ আচরণ করবো?’
‘মুখে মুখে তর্ক করার ফল কিন্তু ভালো হবে না।এর জন্য পস্তাতে হবে।’
মূহুর্তে কোয়েলিয়ার ভেতরে চেপে থাকা বিদ্রোহী সত্তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।ও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
‘সত্যি বলাটা যদি মুখে মুখে তর্ক করা হয়, তবে আমি তার জন্য অনুতপ্ত নই।রোজ উঠতে বসতে আপনি মনে করিয়ে দেবেন, আপনি আমাকে কিনে এনেছেন, আপনার সমস্ত হুকুম মেনে নিতে হবে। কেন? এখনও কি দাসপ্রথার যুগ রয়েছে? আমার কোন ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই? আমি কি আপনার কিছু টাকার জন্য ভালোভাবে নিঃশ্বাস নেওয়ার অধিকার হারিয়েছি?’

‘অনিক ওকে থামতে বলো। নয়তো খুব খারাপ হবে।’
কোয়েলিয়া চমকে উঠে পেছনে তাকালো।অনিকের উপস্থিতি ও এতক্ষণ খেয়াল করেনি। সন্তানের সামনে পিতাকে কেউ কিছু বলছে এটা সহজে কেউ মেনে নিতে পারেনা। এমনিতেই ওর মাথাটা ধরেছিল, তার ওপর এমন ঘটনা ওর রাগকে বাড়িয়ে দিয়েছে।অনিক কঠোরস্বরে বললো,
‘আপনি আমার বাবার সাথে যথেষ্ট বলেছেন। এখন নিজের ঘরে যান।’
‘কেন আমি নিজের ঘরে যাব। আপনারা সবাই মিলে আমার জীবনে অন্ধকার ডেকে এনেছেন। আপনার বাবা উঠতে বসতে এমনভাবে আপনার খেয়াল রাখার কথা বলেন যেন আপনি রাজপুত্র আর আমি আপনার দাসী! তবে শুনে রাখুন আপনি বিশেষ কেউ হতে পারেন, কিন্তু আমি আপনার মতো মাতাল কাউকে ডিজার্ভ করি না। হতে পারি আমি দেখতে কালো, কিন্তু আপনার মতো মাতালের সাথে সংসার করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই।’

কোয়েলিয়া আরও কিছু বলার পূর্বে অনিকের বলিষ্ঠ হাতের চড় ওর গালে পড়লো। অনিক চেঁচিয়ে বললো,
‘আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে তখন থেকে আমার বাবাকে কথা শুনিয়ে যাচ্ছেন দেখছি।এত সাহস কি করে হয়!’
‘আপনার বাবা আমার ওপর মিথ্যা দোষারোপ করবে,আর আমি চুপ করে থাকবো। কারণ আপনাদের টাকার জোর আছে, তাই।আপনাদের ক্ষমতার দাপটকে না কোয়েলিয়া কেয়ার করে না।’
‘আপনি থামবেন নয়তো এখানে খারাপ কিছু হয়ে যাবে।’
‘কি করবেন আপনি?গায়ে হাত তুলবেন? তুলুন। অবশ্য আপনার মতো লোকের সাথে এসবই যায়।’
অনিক নিজের রাগ দমাতে ওর পাশে থাকা ফ্লাওয়ার ভেসে লাথি মারলো। তবুও রাগটা কমতে চায় না।ও বললো,
‘আপনাকে ভালো মনে করেছিলাম। কিন্তু আমার ভুল ভেঙ্গে গেল।’
‘কেন!চুপ করে আপনাদের সবকথা মেনে নিলেই আমি ভালো।আমি গরিব ঘরের মেয়ে,তাই সব আমাকে সহ্য করতে হবে? কিন্তু আমি এসব পারবো না।এ বাড়িতে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। এভাবে বেঁচে থাকা যায় না। আমি একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ চাই।’

আফসার শিকদারের রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছিল। তিনি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘তোমাকে এ বাড়িতে আর এক সেকেন্ড ও থাকতে দেওয়ার ইচ্ছে নেই। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে কথা শোনানো।’
কোয়েলিয়া কড়া একটা জবাব দিতে চাচ্ছিল,তবে অতিরিক্ত রাগ আর জেদে ওর মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বের হলো না।
ওর সামনে দাঁড়িয়ে আফসার শিকদার মোতালেবের নাম্বারে ডায়াল করলো। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই, ভদ্রলোক গম্ভীর গলায় বললো,
‘আপনার মেয়েকে বেয়াদবির শাস্তি হিসেবে আপনার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি।বাকি হিসাব নিকাশ পরে হবে।’
কোয়েলিয়া চুপ করে শুনলো। আফসার শিকদারের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা ওর মনে একবারও এলো না। নাজমা সবটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল,ও বললো,
‘দাদাভাই,রাগের মাথায় উল্টোপাল্টা সিদ্ধান্ত নিও না।’
‘কোনোকিছু ভাবাভাবি নেই।ও যে সাহস দেখিয়েছে, এবার তার ফলভোগ করুক।’
আফসার শিকদারের মুখে ক্রুর হাসি। কোয়েলিয়া সে হাসি লক্ষ্য করলো।ও আফসার শিকদারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট বুঝতে পারলো।মনে মনে সেও অদৃশ্য চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলো।যত যাই হোক ও এবাড়িতে আর ফেরত আসবে না।অনিক যদি ওকে ভালবেসে থাকে,তবে সে হার মানবে। কিন্তু ও কিছুতেই এবাড়ির সদস্যদের সামনে নত হবে না।
ড্রাইভার দরজার কাছে এসে যাওয়ার তাগাদা দিলো। কোয়েলিয়া নিজের ফোনটা নিয়ে ড্রাইভারের সাথে এগোলো। প্রচন্ড রাগ জেদের কারণে একবার পেছন ফিরে তাকানোর ও প্রয়োজন মনে করলো না।পিছু তাকালে হয়তো অনিকের করুন দৃষ্টি দেখতে পেত। আচ্ছা অনিক কি সত্যিই ওকে ভালবাসে? তবে ওকে যাওয়া থেকে কেন আটকালো না? ভালোবাসা স্বীকার করলেই কি মানুষ দূর্বল হয়ে যায়!

চলবে…
®️ সুমি খানম

#ম্লান_সন্ধ্যায় (১৬)

সকাল সকাল কোয়েলিয়াকে দেখে দরিয়া বেগম আকাশ থেকে পড়লেন।এ এখানে কি করছে?কখন এসেছে?চোখে ভুল কিছু দেখছে না তো? খরখরে গলায় বলল,
‘অ্যাই, তুই এহানে কি করিস?কহন আইলি।’
সকালের মনোরম পরিবেশে এই মহিলার কথার উত্তর দিতে কোয়েলিয়ার ইচ্ছে হলো না।তাই ও হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির পেছনের ইটে বাঁধানো রাস্তার দিকে গেল। পেছন থেকে দরিয়ার চেঁচামেচি ওকে থামালো না । ওদের বাড়ির পাশে একবাড়ি প্রতিবেশী। আশেপাশে বাড়িগুলো কিছুটা দূরে।তাই কনকনে শীতের সকালে কারোর সামনে পড়ার সম্ভাবনা নেই।অনেকদিন বাদে চিরপরিচিত স্থানে ফিরে কোয়েলিয়ার মন খারাপেরা উবে গেল। অতীত এবং ভবিষ্যতের চিন্তা ঝেড়ে ফেলে ও প্রাণভরে প্রশ্বাস নিলো।গ্রামে শীতটা বেশিই পড়েছে।শীতের রিক্ততায় কামিনী গাছে ফুল নেই।ওই গাছটার দিকে চেয়ে থাকতে কেন যেন ওর ভালো লাগে।

কোয়েলিয়া ধীর পায়ে শিশিরে ভেজা রাস্তা ধরে এগোচ্ছে।চারপাশ কুয়াশার আবরণে ঢাকায় সুবিধাই হয়েছে।রাস্তা দিয়ে কেউ গেলে সহসা ওকে চিনতে পারবে না।প্রত্যেক গ্রামে স্বল্পসংখ্যক কৌতুহলী বাসিন্দা থাকে,যাদের কাজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সমস্ত কাহিনী উপাখ্যান জানা। এধরণের মানুষের ভয় ও আগে না পেলেও এখন পাচ্ছে। কারণ ওর শশুরবাড়ির প্রসঙ্গ তুললে ও নিজেও জানে না কি বলতে কি বলে ফেলবে।ও আর এগোলে না, উল্টো পথ ধরে তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে রওনা হলো।

গতরাত তিনটে নাগাদ আফসার শিকদারের ড্রাইভার ওকে এখানে নামিয়ে দিয়েছিল।মনে আতঙ্ক নিয়ে বাড়িতে প্রবেশের সময় মনে হয়েছিল এই রাতের নির্জনতা ফুড়ে এ বাড়িতে দক্ষযজ্ঞের ঝড় উঠবে। কিন্তু দোরগোড়ায় মোতালেব কে বসা দেখে বুঝেছিল ওর আসার খবর দরিয়া জানেন না। মোতালেব কিছু জিজ্ঞেস করেনি, শুধু শুষ্ক গলায় বলেছিল,
‘এহন ঘুমাইগে।কাইল দেহা যাবেনে।’
রেণু ঘুমিয়েছিল। ওকে কল করে জাগিয়ে,শেষ রাতে দুবোন বেশ কিছুক্ষণ ফিসফিসিয়ে আলোচনার পর একটু ঘুমিয়েছিল।তবে পুরোনো অভ্যাসমতো সূর্যোদয়ের আগেই ও জেগে গিয়েছে।

ওকে ফিরতে দেখে দরিয়া বেগম ক্ষেপে গেলেন। কোয়েলিয়া বুঝলো এখন একটা ঝড় উঠবে।তাই ও টুল এনে উঠোনে বসলো। মোতালেব ভোরে উঠে বাজারে গিয়েছিল, এখন ও ফেরেনি। দরিয়া বললো,
‘তুই কি কইরা আইছিস,সত্যি কইরা ক।রাত বিরেতে শশুরবাড়ির তে তো এমনি এমনি খেদায়নি। তুই কি ভাবছিস, আমি কিছুই জানি না।খালি খালি ফোনে অটো কল রেকর্ড অন কইরে রাখি নাই।’
কোয়েলিয়া ভাবলেশহীন সুরে বললো,
‘তা তুমি জেনে কতটা লাভবান হয়েছে? এতগুলো টাকা নেওয়ার পরও বড়গলায় কথা বলো কিভাবে?’

দরিয়া রাগে অগ্নিমূর্তি ধারণ করলো।যে মেয়ে দশ কথায় রা করতো না,আজ মুখে মুখে কথা বলছে।ও তেড়ে এসে কোয়েলিয়ার চুলের মুঠি ধরলো। কোয়েলিয়া ব্যাথাতুর শব্দ করে উঠলেও ছাড়লো না। হিসহিসিয়ে বললো,
‘এক্ষনি শশুরবাড়ি যাবি।নলি তোরে মাইরে গাঙ্গে ভাসাবো।’
‘যাবো না।যা করার করো।’
‘তাই করতাছি।’
দরিয়া বেগম ওর মুখে জোরে চড় কসালো।এই মেয়েকে কোনোদিন ও দুচক্ষে দেখতে পারেনা।তার ওপর আজ মুখে মুখে তর্ক করেছে, এমনকি ওর টাকা নেওয়ার বিষয়টাও জেনে গেছে। ইচ্ছেমতো কয়েকটা চড় থাপ্পড় মেরে ওকে ছেড়ে দিয়ে হাঁপাতে লাগলো। ঘুমন্ত বাড়িতে ভোরবেলা ঘটে যাওয়া এমন ঘটনা কেউ দেখলো না।অন্যসময় হলে কোয়েলিয়া ফুঁপিয়ে কাঁদতো।আজ ও মোটেও কাদলো না।বড় বড় চোখ মেলে দূরের আমগাছে বসা ফিঙে গুলোর দিকে তাকিয়ে রইল।কুলগাছের কুল গুলো অনেকটা বড় হয়ে গেছে।

এর মধ্যে মোতালেবকে ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে ফিরতে দেখে দরিয়ার রাগ আরো বেড়ে গেল। মোতালেবের থেকে ব্যাগ কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলে,ব্যাগে থাকা মাছ তরকারি সব ছড়িয়ে পড়লো।
‘মাইয়ে চুনকালি মাহায় ফিরসে।তারে এহন খাতের কইরে খাওয়াবে।তোর মাইয়ারে বাইর করবি,নয় আমরা চইলে যাবো‌।’
‘যা,চইলে যা।তোরে রাহার ইচ্ছা নাই। তুই যে কাম করছিস,ভাবছিস তুই একলাই পরের কথা শুনতি পারিস। এতদিন কিচ্ছু কই নাই।আইজ কচ্ছি, তুই বাড়ির থেইকে বাইর হ‌।’
দরিয়া হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।ও যে নিজের জালে নিজেই ফেঁসে গেছে।মূহুর্তের মধ্যে বাড়ির পরিবেশ বদলে গেল। দরিয়ার আহাজারি শুনে সিজু রেণুর ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে আশেপাশে যারা ছিল,সবাই উপস্থিত হলো। কোয়েলিয়া এবার বিপাকে পড়লো। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যাচ্ছে, প্রতিবেশীরা রীতিমতো ওকে জেরা শুরু করেছে।ও তাড়াতাড়ি ঘরে গিয়ে বোরকা পরে নিলো।সিজুকে দিয়ে মোতালেবকে ঘরে ডাকলো। মোতালেব অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে ওর সামনে দাঁড়ায়। কোয়েলিয়ার খুব মায়া হলো।ও বললো,
‘আব্বা আমি চলে যাচ্ছি। দয়া করে ও বাড়িতে যাওয়ার কথা আমাকে বলতে আসবে না।’
ও পার্সে টাকা আর ফোন নিয়ে রেণুর সাহায্যে বাড়ির পাশ দিয়ে বাজারের কাছে গেল।এবাড়িতে ও একটুও শান্তি পাবেনা।যেখানে একটু মানসিক শান্তির জন্য ও নিজের আজীবনের ঠিকানা ছেড়েছে, সেখানে এবাড়ি ছাড়তে ওর কষ্ট হবে না।

*
কোয়েলিয়ার খালা অঞ্জনা ভাগ্নিকে পেয়ে খুব খুশি হলো।এটিকে কোলেপিঠে মানুষ করেছে কিনা।অঞ্জনার মেয়ে তিনটের বিয়ে হয়ে গেছে।বড় ছেলে চাকরি করে,ছোটছেলে সেলিম এখন বাড়িতেই ঘোরাফেরা করছে এবং সে কোয়েলিয়ার থেকে মাত্র এক বছর তিনমাসের বড়। ভাগ্নি আসার খুশিতে অঞ্জনা উৎফুল্ল হয়ে রান্নাঘরে ঢুকেছে।আজ একেবারে এতবছরের জমিয়ে রাখা ভালোবাসা রান্নায় ঢেলে দেবে।কথায় কথায় কোয়েলিয়া যতটুকু বলার মতো বললো। অঞ্জনা আক্ষেপ নিয়ে বললো,
‘পাললাম পুষলাম আমি।আর তোরে বাপে বিয়া দেওয়ার আগে একবারের জন্যি কইলো না।’
‘থাক খালামণি যা হবার হয়ে গেছে।’
‘তোর কোন চিন্তা নেই।তোর খালা এহনো বাইচে আছে।তোর বাপে জেদাজেদি কইরে তোরে নিয়া না গেলি, তুই আমারই থাকতি।এহন থেকে তুই এহানেই থাকবি।’
অঞ্জনা পুরোনো কথা তুলে একপর্যায়ে কেঁদে দিল। কোয়েলিয়া জানে,ওর খালা ওকে কতটা ভালোবাসে। পৃথিবীতে আপনজন বলতে এই খালাই আছে,তাইতো সাতসকালে খালার বাড়িতে ছুটে এসেছে।এই বাড়িতেই তো ওর প্রথম বেড়ে ওঠা।ওই খালার মুখ থেকেই তো প্রথম বুলি শেখা।খালুর হাত ধরে লিখতে পড়তে শিখেছে।

এর মধ্যে সেলিমকে দেখা গেল। সকাল সকাল এয়ারগান নিয়ে পাখি শিকারে বেরোলেও পাখি আনার পরিবর্তে জুতোভর্তি কাঁদা নিয়ে এসেছে। কোয়েলিয়াকে দেখে কৃত্রিম অবাকের ভঙ্গিতে বলল,
‘আরে ইনি কোন দেশ থেকে আসলো!বসন্তের কোকিল শীতকালে কি করছে!’
‘তোর জন্য একটা মেয়ে ঠিক করেছি।’
‘তাই নাকি! নিশ্চয়ই এক চোখ কানা।তোর যা পছন্দ!’
দুজনে কিছুক্ষণ খুনসুটিতে মেতে উঠলো।আস্তে আস্তে সেলিম সবকিছু জানার পর বললো,
‘তোর ওখানে যেতে হবে না।তোর কি কোনো সম্মান নেই, নাকি!মা বাড়িতে কেউ এসে যেন ওকে অহেতুক প্রশ্ন না করে।’
‘ওরে কেউ কিছু বলে দেহুক।’
কোয়েলিয়া অনেকদিন পর মন খুলে কথা বললো‌। ওবাড়ির কেউ এই কোয়েলিয়াকে দেখলে হয়তো অবাক হতো। আজকের কোয়েলিয়া নিজের শিকড়ের কাছে এসে হাস্যোজ্জ্বল এক কিশোরী বনে গেছে।

দুপুরের দিকে ওর খালু জাফর শেখের সাথে দেখা হলো।ওর হঠাৎ উপস্থিতিতে ভদ্রলোককে খুশি দেখায়।এবাড়িতে যিনি কোয়েলিয়াকে পছন্দ করতেন না তিনি অঞ্জনার শাশুড়ি বছর পাঁচেক আগে পরপারে পাড়ি জমিয়েছে।খালু হেসে বলল,
‘তা আমাদের চানবানু কি সূর্যাস্ত আইনের সফরে এসেছেন?’
কোয়েলিয়া হাসলো।এ বাড়িতে আসলে বেশিরভাগ সময় বিকেলেই চলে যেতে হতো,তাই ব্রিটিশদের সূর্যাস্ত আইনের স্মরণে খালু ওর বেড়াতে আসার নামকরণ করেছে।ও বললো,
‘না হে বাপু। এবার চিরায়ত বন্দোবস্ত করে এসেছি, অনেকদিন বিরক্ত করবো।’
‘সে তো দেখাই যাবে। তোর যা মতি,দেখা গেল সকালে উঠে তোকে আর দেখবো না।’
‘আর যখন দেখবে, তখন বিরক্ত হবে না?’
‘আগে থাক, তারপর ভাববো বিরক্ত হবো কিনা।তা তোর পিতৃরত্ন এসে ঝামেলা করবে না?’
‘সেসব তুমি সামাল দেবে। আমি বেড়াতে এসেছি , মাথায় কোন চিন্তা আনতে চাইনা।’
জাফর হাসলো। সেই পুরনো সময়ের মতো কোয়েলিয়া ওনার সামনে দস্তরখানা বিছিয়ে খাবার এনে দিলো,হাত ধোয়ার পানি দিয়ে চিলুমচি ধরে রাখলো।জাফরের হঠাৎ মনে হলো, ছেলেমেয়েগুলো অনেক তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায়।

*
রাতে অঞ্জনা কোয়েলিয়ার সাথে ঘুমালো। সারাটা দিন ওর আজ আনন্দে কেটেছে।এমন জীবন ও সবসময় চাইতো, কিন্তু ভাগ্য ওকে দান করেছে অন্যরকম জীবন। অঞ্জনা শোয়ার পর পরই ঘুমিয়ে গেল। কিন্তু কোয়েলিয়া ঘুমাতে পারলো না।রাতের নিস্তব্ধতায় ওর অনিকের কথা মনে পড়লো।বৈধ সম্পর্কের আলাদা টান থাকে,যা ও দূরে এসে বুঝতে পারছে।রাগ করে এসেছে ঠিকই, কিন্তু ওর স্বামীকে ও তো ভালোবেসে ফেলেছে‌।দূরে রাখুক, অবহেলা করুক, তবুও কোয়েলিয়ার খারাপ লাগতে শুরু করলো।কি করছে সে এখন?ওর কথা কি একবারও ভাবছে? সাফিয়ার সাথে কয়েকটা দিনের পরিচয় হলেও ও মেয়েটাকে বড্ড আপন করে নিয়েছে।
ও ঘুমানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু অনিকের কথা মনে পড়তেই ওর বুকে চিনচিনে ব্যথা শুরু হলো।ও এপাশ ওপাশ করলেও ঘুমেরা ওর সাথে লুকোচুরি খেললো।আজ ঘুমেরা ওর সাথে বেইমানি করছে কেন?তবে কি অনিকের শূন্যতা ওকে পোড়াচ্ছে!
পরমূহুর্তে মনে হলো,অনিক ওকে ভালবাসেনা,ওর গায়ে হাত তুলেছে। আসার সময় ওকে একবার আটকায়নি।ওর বাবার কথার প্রতিবাদ করেনি।ও কিছুতেই আফসার শিকদারকে এই চ্যালেঞ্জে জিততে দেবে না।যতদিন ওরা ওকে নিতে আসবে না, ততদিন ও যাবেনা। বিচ্ছেদের অঙ্গারে পুড়ে পুড়ে ছাই হলেও ও ফিরবে না।

*
‘স্যার আর খাবেন না প্লিজ।’
‘শাট আপ। আরও এক পেগ।’
‘স্যার, আপনার বাবার নিষেধ আছে।’
‘বাবা,বাবা এখানের খোঁজ কিভাবে পেল।’
‘জানি না, কিন্তু কয়েকদিন আগে একরকম হুমকি দিয়ে গিয়েছে।’
‘ধ্যাৎ কিসের বাবা। আমার জীবনে কারো নাক গলানোর অধিকার নেই।জলদি বোতল নিয়ে এসো, নয়তো খুব খারাপ হবে।’
অনিকের কড়া ধমকে সিয়াম বেশ ভয় পেল। একদিকে বাবার নিষেধাজ্ঞা,অন্যদিকে ছেলের হুমকি,কার হুকুম পালন করা উচিত,এনিয়ে ওকে বিভ্রান্ত দেখালো।তবে ওর কাছে আপাতত অনিকের আদেশ পালন করাই উপযুক্ত মনে হলো। কেননা অনিকের রাগ সমন্ধে এখানকার প্রত্যেকেই অবগত।

অনিকের আজ নেশা হয়ে গেছে।এত খেয়েও নিজের আত্মগ্লানি দূর করতে পারছে না। বিবেকের দংশনে ওর ভেতরটা বিষে জর্জরিত হয়ে যাচ্ছে।ও কিভাবে পারলো, মেয়েটার গায়ে হাত দিতে! কেন ও ওকে যাওয়ার থেকে আটকালো না? কোয়েলিয়া কেন চলে গেল?ও কি জানে না,অনিক সারাটা রাতদিন অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করেছে।ওর মস্তিষ্ক জুড়ে সারাক্ষণ সে বিচরণ করছে। কোনো কিছুতেই ও তাকে ভুলে থাকতে পারছে না। সারাদিনে কতবার ভেবেছে কোয়েলিয়াকে ফিরিয়ে আনবে, কিন্তু সেই তো নিজের ইগো ধরে রাখতে আর এগোয়নি। কিন্তু ও তো কোনো কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছেনা।অ্যালকোহল ওর ভেতরে স্বস্তি আনতে পারছে না।কিসে ওর শান্তি মিলবে?

অনিককে কখনো মাতাল হতে সিয়াম দেখেনি। পারিবারিক টানাপোড়েনে এ বারে ও গত আড়াই বছর ধরে চাকরি করছে। আরও কয়েকজন কাস্টমারের মতো এই লোকটাকে কখনো উল্টোপাল্টা আচরণ করতেও দেখেনি।আজ হঠাৎ ওর কি হলো! আফসার শিকদারের সতর্কবাণী মাথায় আসতে বললো,
‘স্যার, অনেক রাত হয়ে গেছে।আর খাবেন না প্লিজ।’
‘আমি কিভাবে ওর গায়ে হাত তুললাম? কেন আমি নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।বলো।’
‘স্যার আপনার নেশা হয়ে যাচ্ছে। দয়া করে আর খাবেন না।’
‘আরে কিসের নেশা।ওই মেয়ের ভিতরে কি আছে,যেজন্য আমি ঘুমাতে পারছি না।এত অস্বস্তি লাগছে কেন? আমি এখন কি করবো?’
অনিকের মাথা টেবিলের ওপর হেলে পড়লো। সিয়াম নিষ্পলক নেত্রে চেয়ে রইল।এত টাকা থাকার পরও এই লোকটা অসুখী, অথচো ওদের মতো মানুষদের ভালোভাবে বাঁচতে টাকা প্রয়োজন। টাকার অভাব ওদেরকে পুরোপুরি সুখী করে তোলেনি। এই লোকটা আজ যে টাকা বারে খরচ করলো,তা দিয়ে সিয়াম অনায়াসে দশদিন চলতে পারবে।এরা এখানে টাকা ওড়াতে আসে আর সিয়ামের মতো কর্মচারীরা এখানে পরিশ্রম করে সংসার চালায়।তাও যথোপযুক্ত সম্মান মেলে না, মাঝেমাঝে সামান্য ত্রুটির জন্য কাস্টমারের হাতের প্রহার মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। এলাকার কাউকে লজ্জায় বলতে পারেনা,সে বারে চাকরি করে।

ও ঘড়ির দিকে তাকালো,রাত প্রায় দুটো বাজতে চলেছে। অনিক কখনোই এতো রাত অব্দি থাকে না।ও বললো,
‘আপনার এখন বাড়ি ফেরা উচিত।’
অনিক মূহুর্তেই সোজা হয়ে বসে।জড়ানো গলায় বলে,
‘তাইতো, আমার ফেরা উচিত।’
অনিক টলতে টলতে উঠে দাঁড়ায়।এক হাতে বোতল নিয়ে আরেকহাতে কোটটা নিলো।অ্যালকোহলের প্রভাবে শীতটা ঠিক লাগছে না, বরং স্বস্তি আনার জন্য শার্টের দুটো বোতাম খুলে রেখেছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপাল ছুঁই ছুঁই,ফর্সা মুখ লালচে হয়ে গেছে ,মদের নেশায় কালো চোখদুটো বারবার মুদে আসতে চাইছে। সিয়ামের শুধু মনে হয় এত সুন্দর লোকটা সবকিছু ছেড়েছুড়ে কেন মদের নেশায় আসক্ত হলো!এ লোক যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় এক্টিভ হতো তাহলে হয়তো অনেকের রোল মডেল বনে যেত। বেশভূষায় সবকিছুতেই শৌখিনতা, তবুও একে অ্যালকোহলে ডুবতে হবে।
সিয়াম বললো,
‘স্যার আপনাকে ড্রপ করে দেব।’
‘ প্রয়োজন নেই।’
‘আপনি এই অবস্থায় গাড়ি ড্রাইভ করতে পারবেন না।’
বিরক্তিতে অনিকের ভ্রু কুঁচকে গেল।ও পাশে থাকা টেবিলে লাথি মেরে বললো,
‘একদম আমার পেছন পেছন আসবে না, নয়তো খুব খারাপ হবে।’
সিয়াম তবুও মাথা নিচু করে বলে,
‘কিন্তু আপনার কিছু হলে স্যার আমাকে ছাড়বে না।তাই এটা আমার দায়িত্ব।’
‘উফ,এই বাবা আমার সবকিছুতেই ইন্টারফেয়ার করে আমার জীবনটা অসহ্য করে তুলেছে। আমি কি এখনও অবুঝ শিশু! ওনাকে বলে দিও আমি তাকে আনতে গিয়েছি।’
‘কাকে স্যার?’
অনিক কিছুক্ষণ ইতস্তত করে। তারপর সামনের দিকে এগিয়ে জড়ানো গলায় বলে,
‘কোয়েলিয়া, আমার স্ত্রী।’
অনিক টলতে টলতে বেরিয়ে গেল। সিয়াম কি করবে বুঝতে না পেরে আফসার শিকদারের নাম্বারে কল করলো।

অনিকের হঠাৎ সবকিছু ভালো লাগছে।সমস্ত যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাকে ওর কাছে যেতেই হবে। শুধুমাত্র সেই পারবে ওর মনে প্রশান্তির বৃষ্টি আনতে।সে থাকলেই ও ভালো থাকবে।সে যে মদের নেশা থেকেও ভয়ঙ্কর।কাছে না এসেও দূরত্ব রেখে সে ওকে মায়াজালে আটকে ফেলেছে যার থেকে বেরোনোর সাধ্যি ওর নেই। এমন অবস্থায় গাড়ি চালানোয় ঝুঁকি আছে জেনেও বিপুল উদ্যমে ও ড্রাইভ করছে।আজ যেভাবেই হোক কোয়েলিয়ার কাছে ওকে পৌঁছাতে হবে।সমস্ত ইগো বিসর্জন দিয়ে নিজের অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চাইবে।পারলে আজীবন মনের খাচায় বেঁধে রাখবে। এই গভীর রাতে আরও একবার প্রতিজ্ঞা করলো,আর কখনোই ও রাগ করবে না। মেয়েটাকে বুঝবে,ভালোবাসবে।ও যে তাকে ছাড়া বাঁচার মতো বাঁচতে পারবে না।

*
অঞ্জনা সকাল সকাল মাটির চুলায় ভাপা পিঠা বানাতে বসেছে। চারপাশে এখনও পরিষ্কার হয়নি, সেলিম রোজকার মতো বিলের ধারে চলে গিয়েছে।এই ছেলেটার অষ্টাদশ শতকে জন্মানো উচিত ছিল, তাহলে হয়তো শিকারের খোরাক মিটতো। যেহেতু এই আধুনিক যুগে পা রেখেছে,তাই আপাতত বক শিকারেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
খালু সকাল সকাল চালের আড়তে চলে গেছে।এককালে সৈনিক ছিলেন কিনা,তাই মোরগডাকা ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যায়।

পিঠা সিদ্ধ হলে অঞ্জনা কোয়েলিয়াকে খেতে দেয়। নারকেল গুড়ে তৈরি গরম পিঠার গন্ধে কোয়েলিয়ার ক্ষিদেটা জেগে উঠলো।ও সবেমাত্র এক কামড় দিয়েছে, তখনই শুনলো বাইরে থেকে পরিচিত এক কন্ঠ ওকে খুঁজছে।প্লেটটা রেখে বিস্ময়ে ও রান্নাঘর থেকে বের হলো। ততক্ষনে পরিচিত কন্ঠ উঠোনে এসে দাঁড়ায়। কোয়েলিয়া নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। নাজমা কিনা এখানে চলে এসেছে।ও বিস্ময় নিয়ে বললো,
‘ফুফু আপনি এখানে?’
অঞ্জনা নিজেও রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এসে পরিষ্কার শাড়ি পরা মহিলাকে দেখে অবাক হলো।বললো,
‘আপনি কে?’
কোয়েলিয়া পরিচয় দিয়ে ঘর থেকে চেয়ার এনে বসতে দিলো।
‘আমি এখানে বসতে আসিনি। কোয়েলিয়া চলো।’
কোয়েলিয়া জবাব দেওয়ার আগেই অঞ্জনা বললো,
‘ও যাবে না।’
‘বোঝার চেষ্টা করুন। ওকে যেতেই হবে।’
‘মাফ করবেন।ও যাবে না। আপনি মেহমান,বসেন খাওয়া দাওয়া করেন।’
নাজমা কোয়েলিয়ার হাত ধরে বললো,
‘তুমি জেদ করে থেকো না। মানছি দাদাভাই তোমার সাথে অন্যায় করেছে, কিন্তু এখন তোমার যাওয়া জরুরি।’
নাজমার মুখটা অসহায় দেখাচ্ছে। কোয়েলিয়া যেন কিছুই মেলাতে পারছে না।দাম্ভিক মহিলার কন্ঠে অনুনয়ের সুর ওর ভালো লাগলো না।ও হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
‘তিনি যখন খুশি আমাকে বের করে দেবেন আবার যখন খুশি ডাকবেন। আমি এতটাও ফেলনা নই।’
‘তাহলে তুমি যাবে না।’
‘না।’
নাজমা হতাশ হয়ে বললো,
‘অনিক কার এক্সিডেন্ট করেছে এখন হাসপাতালে,এটা শুনেও যাবে না।’
কোয়েলিয়ার বুকটা ধুক করে উঠলো। তবুও নাজমা মিথ্যে বলছে ভেবে ও বললো,
‘আপনি মিথ্যে কেন বলছেন?’
‘আমি কখনো মিথ্যা বলিনা সেটা তুমিও এতদিনে বুঝেছ।’
নাজমার কন্ঠে রাগের আভাস।পরমূহুর্তে নিজের রাগ দমিয়ে বললো,
‘তুমি একবার চলো।ও গতরাতে তোমাকে নিতেই আসছিল।ড্রাংক ছিল, এক্সিডেন্ট করেছে।’
কোয়েলিয়ার চারপাশটা হঠাৎ শুন্য লাগলো।ও ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো। নাজমার বলা আর একটা কথাও ওর কর্ণকুহরে প্রবেশ করলো না। হঠাৎ এ কি হয়ে গেল!

চলবে…
®️ সুমি খানম